Higher Secondary Sanskrit Suggestion 2023
সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস
প্রশ্নঃ- প্রাচীনভারতের জ্যোতির্বিদ্যা ও গণিত চর্চায় আর্যভট্ট ও বরাহমিহিরের
অবদান আলোচনা কর।
উত্তরঃ-
*কথামুখ:-
জ্যোতির্বিদ্যায় 'জ্যোতিষ' শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়।বিভিন্ন জ্যোতিঃ পদার্থ তথা
গ্রহ-নক্ষত্রাদি সম্পর্কে তথ্যানুসন্ধান করা।বেদাঙ্গ জ্যোতিষের উদ্ভবই ঘটেছিল
বৈদিক যাগযজ্ঞের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান,অমাবস্যা পূর্ণিমার বিভাগ,দিনরাত্রি ইত্যাদি পর্যালোচনা হেতু।ছয়টি বেদাঙ্গের অন্যতম বেদাঙ্গ জ্যোতিষে
চন্দ্র-সূর্যের গতি,উত্তরায়ণ ও
দক্ষিণায়ন,ঋতুবৈচিত্র,গ্রহণ, মাস-পক্ষ-তিথি
নির্ণয় প্রভৃতি বিশদে বর্নিত আছে।আবার ফলিত জ্যোতিষের প্রধান আলোচ্য বিষয় হল-
জ্যোতিঃ পদার্থের আবর্তন,অবস্থান ভেদে
মানবজীবন ও পৃথিবীর উপর তাদের অনুসন্ধান ও তজ্জনিত শুভাশুভ ফলাফল।
অন্যদিকে গণিত শব্দটির অর্থ
হল গণনা দ্বারা নির্মিত পদ্ধতি।আর এর মূলে থাকে সংখ্যা বা অঙ্ক।অর্থাৎ অংক বা
সংখ্যার দ্বারা গননা করা হয়।যেহেতু 'গণ' কথার অর্থ হল সমষ্টি,ব্যষ্টি ও
সমষ্টির দ্বারা নির্নয় করা পদ্ধতির নামই হল গণিত।গণিতের মূল দুটি শাখা হল-- সংখ্যা
গণিত,যার মধ্যে আছে পাটীগণিত ও বীজগণিত এবং আকৃতিগণিত তথা
জ্যামিতি।এমনকি বেদাঙ্গ জ্যোতিষের উক্তি হতে গণিত সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়--
"বেদাঙ্গ শাস্ত্রানাং গণিতং মূর্ধাণি স্থিতম্।"
**প্রাচীন ভারতের গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যার বিদগ্ধ পণ্ডিত আর্যভট্ট ও বরাহমিহির
সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল-
★আর্যভট্ট★
*পরিচয়:-
জ্যোতির্বিদ সমাজে প্রথম আর্যভট্ট,বৃদ্ধ
আর্যভট্ট ও সর্বসিদ্ধান্তগুরু নামে পরিচিত এই মহান পণ্ডিত 476 খ্রীঃ অর্থাৎ পঞ্চম শতকে পাটলিপুত্রে জন্মগ্রহণ
করেন।অলবিরুনীর রচনা থেকে যদিও জানা যায় যে তিনি ছিলেন কসুমপুরের অধিবাসী।'ভূ-ভ্রমণবাদ' তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেন ও দিনরাত্রি কারণ স্বরূপ আহ্নিকগতির তত্ত্ব
প্রতিপাদন করেন।যদিও পাশ্চাত্য মনিষী কোপারনিকাস অনুরূপ সিদ্ধান্ত প্রতিপাদন করে
বিশ্ববিখ্যাত হন।
*গ্রন্থাবলী:-
তিনি খ্রীঃ পঞ্চম শতকের অন্তিমভাগে তার গ্রন্থ রচনা করেন বলে অনুমান করা হয়।তার
রচিত গ্রন্থত্রয় সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল--
১)আর্যভটীয়:-
তার তরুণ বয়সের রচনা বলে মনে করেন অনেকেই।গ্রন্থটির অপর নাম কোথাও কোথাও 'আর্যভট্টতন্ত্র' হিসাবে উল্লিখিত।
২)আর্যাষ্টশতক:-
গ্রন্থটি তিনটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত।প্রথম পরিচ্ছেদ গণিতপাদে পাটীগণিত আলোচিত
হয়েছে।দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ কালক্রিয়াপাদ সময়গণনা সংক্রান্ত আলোচনায় ঋদ্ধ।এবং সবশেষ
পরিচ্ছেদ গোলকপাদে আছে জ্যোতির্বিজ্ঞানের খুঁটিনাটি বিষয়ের বিবরণ।
৩)দশগীতিকাসূত্র:-
এই গ্রন্থে আর্যভট্ট তার মহাকাশ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন।তিনি পৃথিবীর পরিক্রমণ কাল
365 দিন 6 ঘন্টা 12 মিনিট বলে উল্লেখ করেছেন।
**কথান্তে:- প্রাচীন ভারতের Scientific Astronomy তথা সিদ্ধান্ত জ্যোতির্বিদ্যার প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা রূপে সর্বজন বিদিত আর্যভট্ট
প্রথম কলিযুগের সূচনাকাল নির্ণয় করেন।তাঁর মতে 3102 খ্রীঃ পূঃ ফেব্রুয়ারি মাসের 17/18 তারিখের মধ্যরাত্রি থেকে কলিযুগের সূচনা ঘটে।তিনিই প্রথম গ্রহণের
বিজ্ঞানসম্মত কারণ ব্যাখ্যা করেন।গণিতের ক্ষেত্রে বর্গমূল,ঘনমূল,দ্বিঘাত সমীকরণ
সমাধান,ব্যাসের অনুপাত,বৃত্তের
পরিধি তার অবিস্মরণীয় কীর্তি রূপে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত।তিনি প্রাচীন বেদাঙ্গ
জ্যোতিষের প্রচলিত পদ্ধতির সংস্কার সাধন ঘটিয়ে স্বকীয় সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা
করেন।তাছাড়া তিনি সংস্কৃত বর্ণমালার অক্ষরগুলির নির্দিষ্ট মান বিন্যাস করে তার
দ্বারা সংখ্যা গননার এক অভিনব পন্থা আবিষ্কার করে নিজ গ্রন্থে তার প্রয়োগ
ঘটান।তাঁর মহান শিষ্যদের মধ্য উল্লেখযোগ্য ছিলেন লাটদেব,প্রথম ভাস্কর,শঙ্কু,প্রভাকর যাদের মধ্যে অনেকেই আবার ছিলেন তাঁর টীকাকার।
★বরাহমিহির★
*পরিচয়:-
ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে আর্যভট্টের পর যার নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিত আছে
তিনি হলেন বরাহমিহির।খ্রীঃ ষষ্ঠ শতকের কোন সময়ে তিনি কাম্পিল্য অর্থাৎ বর্তমান
জলন্ধর জেলার কাল্পীতে জন্মগ্রহণ করেন ও পরে প্রয়োজনের তাগিদে উজ্জয়িনীতে বাস করতে
থাকেন।
*গ্রন্থাবলী:-
বরাহমিহির পাঁচটি গণিতজ্যোতিষ রচনা করেন যা পঞ্চসিদ্ধান্তিকা নামে পরিচিত।এখানে
তৎকালীন পাঁচটি সিদ্ধান্ত তথা সূর্যসিদ্ধান্ত বা সৌরসিদ্ধান্ত, রোমকসিদ্ধান্ত, পৌলিশসিদ্ধান্ত, পৈতামহসিদ্ধান্ত ও
বশিষ্ঠসিদ্ধান্ত বা বাসিষ্ঠসিদ্ধান্ত আলোচিত হয়েছে।গ্রন্থটি ভারতীয়
জ্যোতিষশাস্ত্রের অমূল্য সম্পদ;যদিও সিদ্ধান্ত
গুলি তার মৌলিক রচনা নয়,সংকলন মাত্র।
১)সূর্যসিদ্ধান্ত:-
এটি হল পঞ্চসিদ্ধান্তিকার শেষাংশ এবং সমস্ত সিদ্ধান্তের মধ্যে সর্বাপেক্ষা
গুরুত্বপূর্ণ।এই সিদ্ধান্ত মতে,365 দিন 6 ঘন্টা 12 মিনিট 36 সেকেন্ড হল এক নক্ষত্র বছরের মোট সময়কাল।এখানে গ্রহণের
সময়কাল নির্ণয়ের বিবিধ গননা পদ্ধতি এবং সময় ও ছায়ার দৈর্ঘ্য নির্ণয় হেতু ব্যবহৃত
বিভিন্ন যন্ত্র যেমন শঙ্কুযন্ত্র,জলযন্ত্র,গোলযন্ত্র ইত্যাদির উল্লেখ মেলে।
২)রোমকসিদ্ধান্ত:-
বরাহমিহির এই সিদ্ধান্তে পাশ্চাত্য জ্যোতির্বিজ্ঞানের সময়ের চাকাকে ভারতীয়
পদ্ধতিতে বিন্যাস ঘটিয়েছেন।এটি মূলতঃ পাশ্চাত্য গণিতজ্যোতিষের সংকলন।এখানে গ্রীক
জ্যোতিষী হিপার্কাসের থেকে টলেমির গণিতজ্যোতিষ রচনাকাল তথা 150 খ্রীঃ পূঃ থেকে 150 খ্রীঃ পর্যন্ত
সময়ের মধ্যবর্তী কালের গ্রীক ও মিশরীয় গণিতজ্যোতিষের কিছু গননার সূত্র সংগ্রহ করে
এই সিদ্ধান্তটি রচিত।
৩)পৌলিশসিদ্ধান্ত:-
পঞ্চসিদ্ধান্তিকার প্রথম অধ্যায় এটি।এই সিদ্ধান্ত ঋদ্ধ হয়েছে অহর্গণ তথা দিন গননার
পদ্ধতি,অধিমাস ও তিথি বলয়ের সংখ্যা নির্ণয়,রবিপথ ও চন্দ্রপথের ভিন্নতা,সূর্যের বার্ষিক পথ ও চন্দ্রপথের মধ্যে কৌণিক ব্যবধান প্রভৃতি আলোচনায়।যবনপুর
থেকে উজ্জয়িনী ও বারাণসীর দেশান্তর গননাও ছিল বরাহমিহিরের এই অধ্যায়ের এক অতি
উল্লেখযোগ্য বিষয়।
৪)পৈতামহসিদ্ধান্ত:-
এই সিদ্ধান্তে বারোটি অধ্যায় ও পাঁচটি সূত্র বর্তমান।এই পাঁচটি সূত্রে মূলতঃ
ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের মূল নির্যাস বিধৃত হয়েছে।এখানে বছরকে 365 দিন মতান্তরে 366 দিন,প্রতিটি যুগকে 60 টি সৌরমাসে ও 62 টি চন্দ্রমাসে ভাগ
করা হয়েছে।তাছাড়াও এখানে আলোচিত হয়েছে দিনরাত্রির হ্রাসবৃদ্ধির কারণ।
৫)বশিষ্ঠসিদ্ধান্ত:-
পঞ্চসিদ্ধান্তিকার এই দ্বিতীয় সিদ্ধান্তটি বরাহমিহির 12 টি আর্যা শ্লোকে ব্যাখ্যা করেছেন।চন্দ্রের অবস্থান
নির্ণয়ের নিয়মাবলী,দিবারাত্রির পরিমাণ
নির্ণয়ের সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি,চন্দ্র কোন
নক্ষত্রের পটভূমিতে অবস্থিত তা নির্ণয় পদ্ধতি,শঙ্কুছায়ার
দৈর্ঘ্য বির্নয় ইত্যাদি আলোচনায় সমৃদ্ধ এই অধ্যায়।
*অন্যান্য
গ্রন্থ:- তাছাড়াও বরাহমিহির বৃহৎসংহিতা, বৃহৎবিবাহপটল, পল্লববিবাহপটল, বৃহজ্জাতক ও লঘুজাতক নামে পাঁচটি গ্রন্থ রচনা করেন।প্রথম
দুটি গ্রন্থ জ্যোতিষশাস্ত্রানুসারে বিবাহের শুভাশুভ সময়কাল নির্ণয় করে আর বাকি
দুটি হোরা শাস্ত্র সম্পর্কিত।
*কথান্তে:-
বেদাঙ্গজ্যোতিষের সময়ে ফলিতজ্যোতিষের কোন আলাদা স্বত্বা ছিলনা।একই সাথে আলোচিত
হত।তার গ্রন্থই ফলিতজ্যোতিষের পৃথক অস্তিত্ব মর্মে মর্মে উপলব্ধি
করায়।জ্যোতিষশাস্ত্রের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হল তার বৃহৎসংহিতা।তিনি তাঁর ফলিত
জ্যোতিষ,গণিত ও গণিতজ্যোতিষকে তন্ত্র,হোরা ও সংহিতা নামক ভাগে ভাগ করে আলোচনা করেছেন।
** পৌলিশসিদ্ধান্ত ও রোমকসিদ্ধান্তের
টীকা রচনা করেন লাটদেব এবং বৃহজ্জাতকের টীকাকার হলেন ভট্টোৎপল।
পূজা দাস
উত্তরমুছুন