Higher Secondary Sanskrit Suggestion 2023
**সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস**
প্রশ্নঃ- প্রাচীন ভারতের চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তরঃ-
প্রাচীন ভারতের চিকিৎসাবিজ্ঞান মূলতঃ আয়ুর্বেদ নির্ভর ছিল। আর তৎকালিন চিকিৎসা
সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে যে দুজন ব্যক্তির দুটি চিকিৎসা গ্রন্থ সম্পর্কে আলোচনা
করা আবশ্যক তাঁরা হলেন - চরক ও শুশ্রূত। তাই এখানে মূলতঃ চরকের
"চরকসংহিতা" ও শুশ্রূতের "শুশ্রূতসংহিতা" চিকিৎসা গ্রন্থদুটির
বিষয়বস্তু বিশদে আলোচনা করব।
★চরকসংহিতা★
*কথামুখ:-
ভারতীয় বৈদিক গ্রন্থ "অথর্ববেদ" কে চিকিৎসাশাস্ত্রের সন্দর্ভস্থান
হিসাবে গণ্য করা হয়। আর আমাদের এই পূণ্য ভারতভূমিতে অতিপ্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ
তথা চিকিৎসা বিদ্যার অনুশীলন হয়ে আসছে। তবে প্রাচীনকালে আচার্যদের মতামত সংরক্ষণের
কোন দৃঢ় ব্যাবস্থা গৃহীত হয়নি। কিন্তু পরবর্তীকালে প্রাচীন মনীষীদের এই মহার্ঘ্য
মতামত সংকলন হেতু একাধিক সংকলন গ্রন্থের উদ্ভব ঘটে।
কায় চিকিৎসক মহর্ষি আত্রেয় তাঁর প্রবর্তিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে
অভিজ্ঞ ছয়জন শিষ্যের উল্লেখ করেছেন যাঁদের মধ্যে মহর্ষি অগ্নিবেশ
অগ্রগণ্য। অগ্নিবেশসংহিতার বিশুদ্ধ রূপই হল "চরকসংহিতা"। এই গ্রন্থের
কোথাও কোথাও মহর্ষি আত্রেয় বক্তা ও অগ্নিবেশ শ্রোতা।
আয়ুর্বেদোত্তর কাল থেকে উপনিষদ যুগের অন্তিমভাগ পর্যন্ত
"অগ্নিবেশতন্ত্র" ই ছিল আয়ুর্বেদ শিক্ষার প্রধান গ্রন্থ। কথিত আছে
পূর্ণাঙ্গ আয়ুর্বেদ চর্চার অভাবে সমাজের জরাজীর্ণ, রোগগ্রস্ত, ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা দেখে অহিপতি শেষনাগ চরক রূপে পৃথিবীতে
আবির্ভূত হয়ে "অগ্নিবেশতন্ত্র" এর সংস্কার সাধন ঘটান।যদিও মূল
"চরকসংহিতা" পরবর্তী আচার্য দৃঢ়বল নামে দ্বিতীয় চরক কর্তৃক পরিশোধিত হয়।
*রচনাকালঃ-
চরক কর্তৃক সংকলিত "চরকসংহিতা" খ্রীঃ প্রথম শতকে রচিত বলে মনে করা হয়।
*বিষয়সারঃ-
এই আয়ুর্বেদ গ্রন্থে আটটি স্থান ও তিরিশটি অধ্যায় বর্তমান--
১)সূত্রস্থান:-
দ্রব্যের গুণাগুণ হল এই স্থানের বিষয়বস্তু। এখানে আয়ুর্বেদের লক্ষণ ও প্রয়োজন, মানসিক দোষসমূহ, বিভিন্ন
ব্যাধির উৎপত্তি ইত্যাদি বর্ণিত আছে। পৃথিবীর বস্তুরাশিকে চরক খনিজ, প্রাণীজ ও উদ্ভিজ্জ - এই তিনটে শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন। তাছাড়াও
এই স্থান থেকে আমরা জানতে পারি যে, সেযুগে
রোগের উৎপত্তির মূলে জীবাণুর ভূমিকা অজানা ছিলনা।
২)নিদানস্থান:-
এখানে বিভিন্ন ব্যাধির লক্ষণ, ভেদ, পর্যায় প্রভৃতি আলোচিত হয়েছে।
৩)বিমানস্থান:-
দর্শন ও মনোবিজ্ঞানের আকর হল এই বিমানস্থান। রোগের মূলে দেহের সাথে আছে মনের
তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ।
এছাড়াও কটু, অম্লাদি
বিভিন্ন রসের কার্যকারিতা ও ঔষধি গুণাগুণ এখানে বর্ণিত হয়েছে।
৪)শারীরস্থান:-
শরীর তথা অ্যানাটমির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণই হল এই স্থানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।
৫)ইন্দ্রিয়স্থান:-
রোগের উৎপত্তিতে বিভিন্ন ইন্দ্রিয়ের ভূমিকা এখাবে বিশদে বিবৃত আছে।
৬)চিকিৎসাস্থান:-
এখানে আছে বিভিন্ন অসুখের কারণ ও তা নিরাময়ে ব্যবহৃত ঔষধের দীর্ঘ বিবরণ।
৭)কল্পস্থান:-
এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল দ্রব্যের গুণাগুণ বিচার এবং বিভিন্ন গাছ-গাছড়া থেকে ঔষধ
প্রস্তুতির বিবরণ।
৮)সিদ্ধিস্থান:-
এখানে বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের উপায় ও ঔষধ সেবন পদ্ধতির বিশদ বিবরণ আছে।
*কথান্তেঃ-
"চরকসংহিতা" আয়ুর্বেদশাস্ত্রের ইতিহাসে এক মহা যুগান্তকারী নাম।হিমালয়ের
মত জ্ঞানভান্ডার এই গ্রন্থ সম্পর্কে উপসংহারে বলা হয়েছে--
"চিকিৎসা বহ্নিবেশস্য স্বস্থাতুরহিতং প্রতি।
যদিহাস্তি তদন্যত্র যন্নেহাস্তি ন তৎ ক্বচিৎ।।"
**"চরকসংহিতা" গ্রন্থের কয়েকজন প্রখ্যাত টীকাকার হলেন - চক্রপাণি দত্ত, গঙ্গাধর, ঈশ্বর সেন, শিবদাস প্রমূখ।
★শুশ্রূতসংহিতা★
*কথামুখ:-
ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির পরিচায়ক প্রাচীন মহাকাব্য দ্বয়ের অন্যতম মহাভারত
গ্রন্থে শুশ্রূত সম্পর্কে বলা হয়েছে। তিনি মহর্ষি বিশ্বামিত্রের পুত্র ও নবরত্নের
অন্যতম রত্ন শল্য চিকিৎসক দিবোদাস রূপে আবির্ভূত ধন্বন্তরির শিষ্য।দেবরাজ ইন্দ্রের
আদেশে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের পণ্ডিত ধন্বন্তরি কাশীধামে দিবোদাস নামক ক্ষত্রিয় রূপে
জন্মগ্রহণ করেন। মহর্ষি বিশ্বামিত্র ধ্যানবলে তা জানতে পেরে নিজ পুত্র শুশ্রুতকে
তাঁর কাছে আয়ুর্বেদ শাস্ত্র শিক্ষার জন্য প্রেরণ করেন।আয়ুর্বেদশাস্ত্রের ইতিহাসে
চরকসংহিতার পরেই এই চিকিৎসা গ্রন্থের স্থান। যদিও পরবর্তীতে শুশ্রুতের রচনা
নাগার্জুনের হাতে সংস্কৃত সাধিত হয়ে "শুশ্রূতসংহিতা" নামে পরিচিতি লাভ
করে।
*রচনাকাল:-
আনুমানিক খ্রীঃ ৫ম-৬ঠ শতকে শুশ্রূতসংহিতা রচিত হয় বলে মনে করা হয়।
*বিষয়সার:-
শুশ্রূতসংহিতায় মোট নিম্নলিখিত ছয়টি অধ্যায় বর্তমান-
১)সূত্রস্থান:-
এতে ছেচল্লিশটি অধ্যায় আছে। রোগের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, শল্যচিকিৎসা বিষয়ক শব্দাবলীর অর্থ, ভেষজের শ্রেণীবিভাগ, বিভিন্ন রোগ
কিভাবে রোগীর স্বাস্থ্যের ওপর নঞর্থক প্রভাব ফেলে তা এখানে আলোচিত হয়েছে।
২)নিদানস্থান:-
এতে ষোলোটি অধ্যায় আছে। বিভিন্ন রোগের কারণ ও লক্ষণ এখানে বিশদে বর্ণিত হয়েছে।
৩)শারীরস্থান:-
দশটি অধ্যায়ে বিভক্ত এই স্থানে মানবদেহের তথা অ্যানাটমির বিবরণ ও ভ্রূণতত্ত্বের
বর্ণনা আছে।
৪)চিকিৎসাস্থান:-
চল্লিশটি অধ্যায়ে বিভক্ত এই বিশাল অংশে বিভিন্ন চিকিৎসার বিবরণ আছে।
৫)কল্পস্থান:-
আটটি অধ্যায়ে বিভক্ত এই স্থানে বিভিন্ন বিষ, তাদের প্রতিক্রিয়া ও চিকিৎসা পদ্ধতির বর্ণনা রয়েছে।
৬)উত্তরতন্ত্র:-
ছেষট্টিটি অধ্যায় বিশিষ্ট এই স্থান মনে করা হয় নাগার্জুনের রচনা যেখানে
প্রক্ষিপ্তরূপে পরবর্তীতপ বিভিন্ন বিষয় সংযোজিত হয়।
*শুশ্রূতসংহিতা
অনুসারে শল্য চিকিৎসার প্রকারভেদঃ-
১)ছেদন(Amputation):- এই পদ্ধতিতে রোগীর যন্ত্রনা প্রতিরোধ হেতু অস্ত্রোপচারের
মাধ্যমে কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়।
২)ভেদন(Incision):- এটি শল্যচিকিৎসার সর্বাধিক নিরাপদ পদ্ধতি। এর মাধ্যমে ত্বকের
ছোট অংশ বা টিস্যু ছেদ করে রোগীকে আরোগ্য দানের প্রয়াস করা হয়।
৩)লেখন(Scraping):- শ্রবণেন্দ্রিয়ের কোন সমস্যা নিরাময়ের উদ্দ্যেশ্যে এবং
গর্ভাবস্থায় বিস্তার ও নিরাময় পদ্ধতি হিসাবেবএটি ব্যবহৃত হয়।
৪)আহরণ(Extraction):- উপশমের জন্য এই পদ্ধতিতে অতিরিক্ত রস রোগীর দেহ থেকে
নিষ্কাশিত করে তা পরীক্ষা করা হয়।
৫)ব্যধন(Punctaring):- কোন রোগীর ত্বকে তীক্ষ্ণ বস্তুর আঘাতে গহ্বরের ন্যায় ক্ষতের
সৃষ্টি হলে এই পদ্ধতি অনুসৃত হয়।
৬)ত্রষণ(Probing):- শল্যচিকিৎসার এই বিশেষ অংশে চিকিৎসার যন্ত্র দ্বারা রোগীর
দেহের ক্ষত অথবা সাইনাসের দিক অন্বেষণ করা হয়। বিশেষত তদন্ত কমিটিতে এই পদ্ধতির
বহুল প্রচলন আছে।
৭)স্রবণ(Blood
Letting):- এই বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে উচ্চ
রক্তচাপযুক্ত রোগীর দেহ থেকে অতিরিক্ত রক্ত প্রত্যাহার করে রক্তের ভারসাম্য বজায়
রাখা হয়।
৮)সীবন(Stitching):- এটি শল্যচিকিৎসার সর্বশেষ পর্যায় যেখানে শরীরের কর্তিত
অংশকে শরীরের সাথে যুক্ত করার জন্য গ্রহণ করা হয়।
**কথান্তেঃ-
এই গ্রন্থে
জটিল শল্যচিকিৎসার এমন বিস্তৃত ও পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ নিঃসন্দেহে গ্রন্থটির
জনপ্রিয়তাকে প্রমাণ করে।তৎকালীন সময়ে গ্রন্থটি যে শল্যচিকিৎসাকে উন্নতির চরমতম
শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল তা বললে সত্যিই অত্যুক্তি হয় না।
**শুশ্রূতসংহিতার কয়েকজন উল্লেখযোগ্য
টীকাকার হলেন-- শ্রীমাধব, চক্রপাণি, কৌপালিক প্রমূখ।