LightBlog
ভারতীয় আর্যভাষার স্তরবিন্যাস আলোচনা কর । HS Sanskrit Suggestion 2023 WBCHSE
Type Here to Get Search Results !

ভারতীয় আর্যভাষার স্তরবিন্যাস আলোচনা কর । HS Sanskrit Suggestion 2023 WBCHSE

Higher Secondary Sanskrit Suggestion 2023

HS Sanskrit Suggestion 2023 WBCHSE

সংস্কৃত ভাষাতত্ত্ব

 

প্রশ্নঃ- ভারতীয় আর্যভাষার স্তরবিন্যাস আলোচনা কর।

উত্তরঃ-

**কথামুখঃ- চলমান সভ্যতার পাশাপাশি ভাষাও পরিবর্তনশীন। কালের গতির সাথে তাল মিলিয়ে ভাষার যে পরিবর্তন হয়েছে তা এক বাক্যে স্বীকার করতেই হয়।ভারতীয় আর্যভাষাও বহু পরিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমান রূপ লাভ করেছে।

**স্তরবিন্যাসঃ-

ভারতীয় আর্যভাষার প্রধান তিনটি স্তর নিম্নে বিশদে আলোচনা করা হল--

১)প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা(1500-1000 খ্রীঃ পূঃ):- প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা বলতে বোঝায় প্রাচীন বৈদিক,বৈদিক,অর্বাচীন প্রভৃতি,বেদ,ব্রাহ্মণ,আরণ্যক,সুত্র সাহিত্য ও সুক্ত।আর ধ্রুপদী সংস্কৃত সাহিত্য হল রামায়ণ,মহাভারত,সংস্কৃত গাঁথা সমূহ,নাটক,গল্প,কাব্য ইত্যাদি।বৈদিক ও সংস্কৃতের অন্তর্বর্তীকালীন যুগকে অবক্ষয় যুগও বলা হয়।

>>বৈশিষ্ট্য:- এর ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

a)প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষার প্রতিটি স্বরবর্ণ হ্রস্ব,দীর্ঘ,প্লুত ভেবে তোদের উচ্চারণ সহ ব্যবহারও বজায় রেখেছে।যেমন- লক্ষ,স্বামী ইত্যাদি।

b)শব্দরূপ,ধাতুরূপ,প্রত্যয় যোগে নতুন শব্দগঠনের ক্ষেত্রে পরিবর্তন অবশ্যই ঘটে।গঙ্গা>গাঙ্গেয়,সভা>সভ্য প্রভৃতি।

c)বিশেষণের তারতম্য বোঝাতে ইয়সুন,ইস্টন প্রভৃতি প্রত্যয় ব্যবহৃত হয়।যেমন-গুরু>গরিয়>গরিষ্ঠ।

আবার স্ত্রী প্রত্যয় ব্যবহার করে পুংলিঙ্গবাচক শব্দকে স্ত্রীলিঙ্গে রূপান্তরিত করা হয়।যেমন-ছাত্র>ছাত্রী।

d)এখানে 6 টি কারক,7 টি বিভক্তি ও 3 টি লিঙ্গ ও বচন বর্তমান আছে।তাছাড়াও অব্যয় ও অযোগ্য লিঙ্গ ব্যবহারের ব্যাপক স্বাধীনতা আছে।

e)শব্দরূপের ন্যায় ধাতুরূপ গঠনেও আছে ব্যাপক বৈচিত্র।পরস্মৈ পদ,আত্মনেপদ ও উভয়পদ ভেঙে ধাতু ও ক্রিয়াপদের বিভিন্ন রূপ দৃষ্ট হয়।আর ক্রিয়ার কাল ও ভাব নির্নয়ে 10 টি '' কার আছে।

f)এই ভাষার আর একটি বৈশিষ্ট্য হল উপযোগে ধাতুর অর্থ পরিবর্তন ও নতুন শব্দ গঠন।যেমন- ধাতু 'দা'>আদান,প্রতিদান,সম্প্রদান ইত্যাদি।

g)সমাসের ব্যবহারও এই ভাষাকে চমৎকারীত্ব প্রদান করেছে।সমাস-পদ্য পদ যোগে কবি সাহিত্যিকগণ বিভিন্ন বিষয় বর্ননায় চমৎকারীত্ব দেখিয়েছেন।তবে সমাসের ব্যবহার তাঁরা প্রাচীন সংস্কৃত কবিদের তুলনায় অনেক বেশী উৎকর্ষতা দেখিয়েছেন।

h)ছন্দ ও অলঙ্কারের ব্যবহারে বৈদিক ও ধ্রুপদী পন্ডিতগণও অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।অক্ষর ও মাত্রার ভিত্তিতে ছন্দ নির্নয় করা হত এবং কাব্য মণ্ডনে ব্যবহৃত হত অলঙ্কার।

২)মধ্যভারতীয় আর্যভাষা(500 খ্রীঃ পূঃ-100 খ্রীঃ):- ব্যাপক অর্থে মধ্যভারতীয় আর্যভাষা বলতে বুঝি পালি,প্রাকৃত ও অপভ্রংশকে।অবশ্য সংস্কৃত ও প্রাকৃত আলাদা আলাদা নয়- একই ভাষার একটু ভিন্ন রূপ।বলা যেতে পারে,প্রথমটা শিষ্ট্য সাধুভাষা ও পরেরটি কথ্য ভাষা।

>> স্তরবিন্যাস:- এই আর্যভাষা আবার তিনটি স্তরে বিভক্ত-

*প্রথম স্তর:-এই স্তর খ্রীঃ পূঃ 600 অব্দ থেকে 200 খ্রীঃ এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ।এখানে ছিল অশোকের শিলালিপি,অশ্বঘোষের নাটকে ব্যবহৃত প্রাকৃত,হীনযানী বৌদ্ধ আগমের পালি,জৈন আগমের অর্ধ-মাগধী এবং বৌদ্ধ মিশ্র বা সংস্কৃত।

*দ্বিতীয় স্তর:- এই স্তর 200 থেকে 600 খ্রীঃ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ।এখানে আছে প্রথম থেকে তৃতীয় খ্রীঃ এর শিলালিপি,জৈন সাহিত্যের প্রাকৃত;ভাস,কালিদাস ও তাঁদের পরবর্তীকালে নাট্যকারদের নাটকে ব্যবহৃত নাটকে প্রাকৃত,বৃহৎকথা ও অন্যান্য প্রাকৃত সাহিত্য ও ব্যাকরণে ব্যবহৃত ভাষা,বহির্ভারতীয় প্রাকৃত ইত্যাদি।

*তৃতীয় স্তর:- এই স্তর 600-1000 খ্রীঃ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ।এখানে আছে অপভ্রংশ।

এবার আমরা পালি,প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষা সম্পর্কে আলোচনা করব-

>>> পালি ভাষা:- সাধারণভাবে বৌদ্ধ আগমে গৌতম বুদ্ধের বচন যে ভাষায় লিপিবদ্ধ,তাই পালিভাষা নামে পরিচিত।তবে 'পালি' শব্দের বিভিন্ন অর্থ করা হয়েছে-

i)পঙ্ক্তি অর্থাৎ বুদ্ধ বচনের বিভাগ।

ii)পল্লীবাসীদের কথ্য ভাষা।

iii)'পল' অর্থাৎ ক্রমবাচক বা পর্যায়ক্রমিক।

iv)পাটলি তথা পাটলিপুত্র।

>>> প্রাকৃত ভাষা:- প্রাকৃত ভাষাও ছিল একটি লেখ্য সাধুভাষা।অশোকের অনুশাসনের প্রাচীনতম প্রাকৃত সাহিত্যের নিদর্শন মেলে।ভাষাতাত্ত্বিকগণ প্রাকৃতকে চারটি উপভাষায় বিভক্ত করেছেন- প্রাচ্যা,প্রাচ্যামধ্যা,উঃ পশ্চিমা এবং দঃ পশ্চিমা।খ্রীঃ পূঃ 400-150 অব্দ পর্যন্ত যাবতীয় শিলালিপি ও মূদ্রালিপি প্রাকৃত ভাষায় লিখিত ছিল।

প্রখ্যাত বৈয়াকরণ বররুচি এর চারটি শ্রেণি উল্লেখ করেছেন- মহারাষ্ট্রি,মাগধী,শৌরসেনী ও পৈশাচী।অন্যদিকে ভারতীয় নাট্যশাস্ত্রে আবার 7 টি প্রাকৃত উপভাষার নাম পাওয়া যায়।যেমন- মাগধী,শৌরসেনী,অর্ধ-মাগধী,প্রাচ্যা,অবন্তিযা,বাহ্লীক ও দাক্ষিণাত্যা।

>>> অপভ্রংশ:- মধ্যভারতীয় আর্যভাষার অন্তিম স্তর হল অপভ্রংশ।একে অবহট্ট ভাষাও বলা হয়।তাছাড়া এর অপর নাম অপভ্রষ্ট,বিদ্ভ্রষ্ট,লৌকিক,দেশভাষা ইত্যাদি।ভরতমুনির নাট্যশাস্ত্রে অপভ্রংশের প্রাচীনতম ক্ষীণ উল্লেখ মেলে।আর ব্রজবুলি সাহিত্য খুব সম্ভবত এরই সাহিত্যরূপ।উদাহরণ হিসাবে কুমারপালের 'কুমারপালচরিত' এর নাম করা যেতে পারে।

৩)নব্যভারতীয় আর্যভাষা(100 খ্রীঃ- আধুনিক কাল):-

*কথামুখ:- ভারতের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষা সমূহ এই আর্যভাষার অন্তর্গত।প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা থেকে তিনটি স্তরের মাধ্যমে এই ভাষা ক্রমবিবর্তিত হয়ে এক হাজার বছরেরও কিছু অধিককাল থেকে আধুনিক ভারতীয় ভাষাগুলি সরলতম রূপ ধারণ করেছে।

*স্তরবিন্যাস:- ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলভেদে এই ভাষাগুলি সেই সেই অঞ্চলের নাম বা আদিবাসীদের সঙ্গে সংগতি রেখে বিবর্তিত রূপ ধারণ করেছে।এর স্তরগুলি নিম্নরূপ-

১)উঃ পশ্চিমা গোষ্ঠী:- এই গোষ্ঠী আবার দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত-- লাওন্ডা ও সিন্ধি।লাওন্ডা ভাষা পঃ পাঞ্জাবে প্রচলিত এবং এর লোকগীতির কিছু সম্ভার সুলতানি ভাষার মাধ্যমে এই ভাষা সিন্ধির সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত।সুফি বৈশিষ্ট্যে কিছু সাহিত্য সিন্ধি ভাষায় পাওয়া যায়।

২)দক্ষিণা গোষ্ঠী:- এই গোষ্ঠী আবার দুটি শ্রেণীতে বিভাজিত-- মারাঠি ও সিংহলী।মারাঠি ভাষার আবার তিনটি উপভাষা আছে- প্রভু,কোনকন ও গোয়ানীজ।

মারাঠি ও সিংহলীর মধ্যে যথেষ্ট ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে।প্রভু উপভাষাটি দপ্তরি ভাষা;মুখ্যতঃ শিক্ষিত,সম্ভ্রান্ত ও সংস্কৃতি সম্পন্ন ব্যক্তিরাই ব্যবহার করেন।কোনকন ও পশ্চিমঘাট অঞ্চলের লোকেরা কোনকন উপভাষাই ব্যবহার করেন।আর গোয়ার ব্যবহৃত ভাষা হল গোয়ানীজ।সিংহলী হল সিংহল অর্থাৎ শ্রীলঙ্কাবাসীদের ভাষা।আবার এই ভাষাতে কিছু কিছু বৌদ্ধ গ্রন্থও পাওয়া যায়।

৩)পূর্বা গোষ্ঠী:- এই গোষ্ঠী আবার চারটি উপভাষায় বিভক্ত-- বিহারী,ওড়িয়া,বাংলা ও অসমীয়া।বিহারী ভাষার দুটি শাখা আছে- মৈথিলী ও ভোজপুরি।তবে এদের মধ্যে কিছু কিছু বৈসাদৃশ্যও দেখা যায়।মৈথিলী বেশ উন্নত হলেও ভোজপুরি মূলতঃ উপজাতি সম্প্রদায়ে ভাষা।ওড়িশার ভাষা হল ওড়িয়া এবং এই ভাষাতে বেশ কিছু সাহিত্যও মেলে।

এই গোষ্ঠীর সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভাষা হল বাংলা,যা বিভিন্ন দিক থেকে অনবদ্য।সাহিত্য-সংস্কৃতি সবকিছুরই কেন্দ্রবিন্দু হল এই ভাষা।অসমীয়া ভাষার উপভাষা হল ঝড়িয়া।এটি একটি উপজাতি ভাষা যা বাংলা,ওড়িয়া ও অসমীয়ার সংমিশ্রণে তৈরী।

৪)মধ্যবর্তী গোষ্ঠী:- এটি পূর্বীয়া হিন্দি -অর্ধ মাগধী থেকে উদ্ভূত বহিঃ ও অন্তঃ ভাষা সমূহের সংযোগসাধনকারী ভাষা।এই ভাষায় তুলসী দাসের 'রামচরিত মানস' রচিত।এর একটি শাখা অবধী উপভাষায় রচিত 'পদ্মাবৎ' একটি উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকীর্তি।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

LightBlog

AdsG

close