LightBlog
ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী সম্পর্কে বিশদে আলোচনা কর । HS Sanskrit Suggestion 2023 WBCHSE
Type Here to Get Search Results !

ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী সম্পর্কে বিশদে আলোচনা কর । HS Sanskrit Suggestion 2023 WBCHSE

Higher Secondary Sanskrit Suggestion 2023

HS Sanskrit Suggestion 2023 WBCHSE

সংস্কৃত ভাষা সাহিত্যের ইতিহাস

 

প্রশ্নঃ- ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী সম্পর্কে বিশদে আলোচনা কর।

উত্তরঃ-

*কথামুখ:- পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের ব্যবহৃত ভাষাসমূহের মধ্যে সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সেই সকল ভাষার শ্রেণীবিভাগ ও নামকরণ প্রসঙ্গে পাশ্চাত্য ভাষাবিদ ও পন্ডিতগণ চিরকালই অগ্রদূতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছোন।এমনকি ষোল শতকের প্রাথমিক পর্বে ইউরোপীয় পরিব্রাজক ও ধর্মপ্রচারকগণ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরতে ঘুরতে সংস্কৃত ভাষার গুরুত্ব বোঝেন এবং তা শিখতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

     ষোল শতকের অন্তিমভাগ থেকে পরবর্তী শতাব্দীর সূচনাপর্বে পাশ্চাত্য পরিব্রাজকগণ সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করেন।Filippo Sasstri নামে এক খ্রীস্টান ধর্মযাজক সংস্কৃত ভাষার সাথে ইউরোপীয় অনেক ভাষার মিল লক্ষ্য করেন।এরপর স্যার উইলিয়াম জোনস 1783 সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রধান অধ্যাপক হয়ে এসে দ্যা রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।

     এই সব ভাষাতাত্ত্বিকগণ সংস্কৃত ভাষার সন্দর্ভ সন্ধানে গভীরভাবে গবেষণা করেন এবং পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার সাথে এর অনেক সাদৃশ্য আবিষ্কার করেন। গ্রীক, ল্যাটিন, জার্মান, পারসিক, গথিক, কেলটিক, সংস্কৃত প্রভৃতি যেসকল ভাষার মধ্যে আন্তঃ সাদৃশ্য বিদ্যমান সেগুলিকে একটি শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত করে তার নাম দেন "ইন্দো-ইউরোপীয়" ভাষাগোষ্ঠী।

*শ্রেণীবিভাগ:-

মূল ভাষার কণ্ঠ-তালব্য বর্ণের উচ্চারণ ভেদে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীকে দুটি প্রধান উপভাষাগত বিভাগের অন্তর্গত করা হয়েছে-- কেন্তুম্ ও শতম্।

কেন্তুম্ ভাষাগোষ্ঠী:-

কেন্তুম্ গোষ্ঠীর উপভাষাগুলি হল কেলটিক, জার্মানিক, ইতালিক, গ্রীক, হিট্টাইট ও তুঘারীয়।

কেলটিক:- অতীতের দক্ষিণ ও পশ্চিম ইউরোপে এই ভাষার বহুল প্রচলন থাকলেও কালক্রমে জার্মানিক ও ইতালিক ভাষার প্রেসারের ফলে এই ভাষা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়।তবে বর্তমান উঃ পশ্চিমে ফ্রান্স ও স্কটল্যান্ডের পাহাড়ি অঞ্চলে কিছু লোক ও অধিকাংশ আইরিশ এই ভাষায় কথা বলে।কেলটিক ভাষার তিনটি শ্রেণি হল- গলিক,নব্য গলিক ও ব্রিটানীয়।কেলটিক ভাষার শাখাগুলির মধ্যে আইরিশই সর্বাপেক্ষা সমৃদ্ধ যা গলিকের একটি শাখা

জার্মানিক:- জার্মানিক হল ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর সবচেয়ে প্রাচীন ও বহুলপ্রচলিত শাখা।এর তিনটি উপগোষ্ঠী হল- পূর্ব জার্মানিক,পঃ জার্মানিক ও উত্তর জার্মানিক।গথিক হল পূঃ জার্মান উপশাখার প্রাচীনতম নিদর্শন যা আধুনালুপ্ত।এই গথিক থেকে খুব সম্ভবত বুর্গোডীয়,লম্বাডিয় ইত্যাদি ভাষাগুলি উৎপন্ন হয়েছে।

পঃ জার্মানিক শাখার তিনটি শাখা হল- দঃ জার্মান,মধ্য জার্মান ও উঃ জার্মান।দঃ জার্মানিক শাখা ক্রমশ মধ্যদেশীয় ভাষায় পরিণত হয় এবং এর থেকে উৎপন্ন হয় আধুনিক জার্মান ভাষা।প্রাচীন জার্মান ভাষা তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত- প্রাচীন প্রূরুশীয়,মহাদেশীয় স্যাক্সন ও অ্যাংলো স্যাক্সন।

উঃ জার্মানিক শাখার দুটি প্রধান উপশাখা আছে- পশ্চিম ও পূর্ব।

ইতালিক:- ইতালিক লাতিউম প্রদেশের ভাষা লাতিন একসময় প্রাধান্য লাভ করে রোমের ভাষায় পরিণত হয়।এই ভাষায় লিখিত সাহিত্যিক নিদর্শন পাওয়া যায় খ্রীঃ তৃতীয় শতক থেকে।তবে এই ভাষার অস্তিত্ব খ্রীঃ পূঃ কাল থেকেই বিদ্যমান ছিল।ইতালি,সিসিলি,কর্সিকা,ভূ-মধ্যসাগরীয় ও  আরও কিছু দ্বীপে এই ভাষা ব্যবহৃত হয়।এর তিনটি উপভাষা হল- ওস্কান,উম্বীয় ও লাতিন ফালিস্কান।আবার অনেকের মতে,প্রাচীন ইতালীয় ভাষার প্রধান তিনটি উপভাষা হল- ওস্কান,উম্বিয়ান ও লাতিন;যাদের মধ্যে লাতিন প্রধান।

     ধ্রুপদী লাতিন রূপতত্ত্ব এবং প্রত্যয় বিভক্তির বিচারে গ্রীক ভাষার মত বৈচিত্র্যময় ও ঐশ্বর্যবান ছিল না।এর বাক্য গঠনে গ্রীক ভাষার প্রভাব আছে।কারণ,সমকালীন রোমক শিক্ষাসভ্যতার ক্ষেত্রে গ্রীক দেশই শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিললাতিন ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন খ্রীঃ পূঃ ষষ্ঠ শতকের সমগ্র পঃ ইউরোপব্যাপী রোমক সাম্রাজ্য বিস্তারের সাথে সাথে লাতিন ভাষাও বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে।এই কথ্য লাতিন ভাষা থেকেই পঃ ইউরোপীয় রোমান্স ভাষাগুলির উৎপত্তি হয়েছে।

গ্রীক:- এই ভাষার অপর নাম হেলেনিক।কেন্তুম্ গোষ্ঠীর ভাষাগুলির মধ্যে গ্রীক সবথেকে বেশী উল্লেখযোগ্য।গ্রীস,এশিয়া-মাইনরের  উপকূল,সাইপ্রাস,ক্রীট,ঈজিয়ান দীপপুঞ্জের বিভিন্ন অংশে গ্রীক ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া যায়।নবম-দশম শতকে অন্ধকবি হোমার রচিত ইলিয়াড ও ওডিসি মহাকাব্যে প্রাচীন গ্রীকের নিদর্শন মেলে।এর প্রধান দুটি শাখা হল- পঃ বা প্রতীচ্য গ্রীক ও পূঃ বা প্রাচ্য গ্রীক।পঃ গ্রীকের একটি প্রধান শাখা হল দোরিক।পূঃ গ্রীকের কোন কোন মতানুসারে,মধ্যদেশীয় এ্যাওলিক(Aeolic) এবং তার তিনটি শাখা হল- আত্তিক-আইয়োনীয়,এ্যাওলিও বা এ্যাওলো- আইয়োনিক ও আর্কাদো-সাইপ্রীয়।

গ্রীক ভাষার চারটি স্তর পরিলক্ষিত হয়- প্রাচীন,ধ্রুপদী,অন্তর্বর্তীকালীন ও আধুনিক।মহাকবি হোমার তার কালজয়ী অমর মহাকাব্য ইলিয়াড এ্যাওলো - আইয়োনিক ভাষাতেই রচনা করেছিলেন বলেই ভাষাবিজ্ঞানীদের অভিমত।উল্লেখ্য এই যে,গ্রীক ভাষার অত্যন্ত প্রাচীন রূপের নিদর্শনের সাথে সংস্কৃত ভাষার অনেক সাদৃশ্য আছে।

এরা উভয়েই ছিল মাতৃতান্ত্রীক ও স্বরপ্রধান।কিন্তু কালক্রমে প্রস্বর প্রাধান্য লাভ করেছে,শব্দের বহুরূপতাও ছিল বিদ্যমান।

হিট্টাইট:- বিংশ শতকের প্রথম দশকে এশিয়া- মাইনরের আংকারা অঞ্চলের প্রায় 9 মাইল পূর্বে বোঘাসকোইতে, সুমেরীয়, আক্কাদিও কিলকাক্ষরে লিখিত বেশ কিছু শিলালেখ ও লিখিত নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে।1906 সালে পণ্ডিত হুব ইউংলার প্রথম এই ভাষাটি আবিষ্কার করেন এবং বাইবেল ও হিব্রু উৎস থেকে জানা যায় যে এটিই হল হিট্টাইট ভাষা।

তুষার বা তোখারীয়:- সম্প্রতি পাশ্চাত্য পন্ডিতদের প্রয়াসে চীনা তুর্কীস্তানের তুরফান প্রদেশে ব্রাহ্মী ও খরোষ্ঠী লিপিতে লিখিত বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কিত কিছু প্রাচীন গ্রন্থ ও পত্র আবিষ্কৃত হয়েছে।মহাভারতে এবং গ্রীক পুরাণে প্রাপ্ত প্রাচীন তুষার তোখারীয় জাতির নামানুসারে এই ভাষার নামকরণ হয়।

ভাষার বিশেষ লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল- এতে পূর্ব কণ্ঠধ্বনি পূর্বাঞ্চলের ভাষাগুলির মত 'শ/স' - এ পরিণত না হয়ে পাশ্চাত্য কণ্ঠধ্বনিতে পরিণত হয়েছে।ফলতঃ একে কেন্তুম্ বর্গভুক্ত বলা হয়েছে।এই ভাষায় স্বরের জটিলতা কম হলেও সংস্কৃতের মত সন্ধির ব্যবহার বর্তমান।

 

শতম্ ভাষাগোষ্ঠী:- শতম্ ভাষাগোষ্ঠী চারটি প্রধান ভাষাগুচ্ছে বিভক্ত- আলবেনীয় বা ইলিরীয়,বালটোস্লাভিক,আর্মেনীয় এবং ইন্দো- ইরানী বা আর্য।

আলবেনীয়:- একদা বহুল পরিচিত ইলিরীয় শাখার অবশিষ্টাংশ হল আলবেনীয় ভাষা যা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে খুবই নগন্য।সপ্তম শতকের পূর্বে এই ভাষার কোন নিদর্শন মেলেনি।তাছাড়া এই ভাষায় লিখিত কোন সাহিত্য নিদর্শনও দুর্লভ।তবে আবিষ্কৃত কিছু শিলালেখ থেকে এর অস্তিত্ব জানা সম্ভব।অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের পূঃ উপকূলের কিছু লোক এই ভাষা ব্যবহার করত।

বালটোস্লাভিক:- এর তিনটি শাখা বিদ্যমান- প্রাচীন প্রুশীয়,লিমুয়ানীয় এবং লাতিক।প্রাচীন প্রুশীয় এখন বিলুপ্ত হলেও লুথনীয়র প্রচলন আছে।বালটোস্লাভিক ভাষা দুটি প্রধান উপভাষায় বিভক্ত- বালটো ও স্লাব।বালটো উপশাখায় দুটি ভাষাই প্রধান- লিথুনীয় ও লেট।লিথুয়ানীয়ায় প্রচলিত লিথুয়ানীয় ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া যায় ষোড়শ শতকে।সুতরাং বলাই যায় যে,ভাষাটি আধুনিক।ধ্বনি পরিবর্তন অপেক্ষাকৃত কম হয় এই ভাষায়- এটি ভাষাবিজ্ঞানীদের মত।অপর শাখা লেট লাটভিয়ায় প্রচলিত।

স্লাব বা স্লাবিক শাখা বেশী প্রসারিত ও উন্নত মান তিনটি ভাগে বিভক্ত- পূর্ব,পশ্চিম ও দক্ষিণ স্লাবিক।রুশ ভাষা সমূহ হল পূঃ স্লাবিক ভাষা সপ্তম খ্রীঃ থেকেই এই আদর্শ ভাষায় সাহিত্য চর্চা হতে থাকে।পঃ স্লাবিক উপভাষার অন্তর্গত হল চোখ,পোলিশ ও দঃ স্লাবিক উপশাখার অন্তর্গত হল বুলগোরীও ও শর্বক্রভশিত।তাছাড়া পঃ রাশিয়াতে রাশিও ভাষা ব্যবহৃত হত।

 

আর্মেনীয়:- আর্মেনীয়তে এত বহুল পরিমাণে ইরাণীয় শব্দ ভাণ্ডারের অনুপ্রবেশ ঘটেছে যে বহুকাল ধরেই এই ভাষাকে ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করা হত।তবে এই ধারনা এখন পরিত্যক্ত।

ইরানীয় রীতি প্রচলিত থাকলেও শব্দ বা বাক্য গঠনে গোষ্ঠীতে একটি রীতি অনুসৃত হয়।যে কারণে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীতে একটি নিজস্ব স্থান করে নিয়েছে এই ভাষা।আর্মেনীয় ভাষা লেটস্লাভিক ও আর্যভাষার মধ্যে মূলতঃ একটি সংযোগ স্থাপনকারী ভাষা।ধ্বনিতত্ত্ব ও ব্যাকরণগত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে এর দুটি উপভাষা বিদ্যমান- আরারাৎ ও স্তাম্বুল।

আর্মেনীয় ভাষার নিদর্শন খ্রীঃ পঞ্চম শতক থেকে মেলে যদিও রচনার বিষয় সবই খ্রীস্টান ধর্ম বিষয়ক।

আর্য:- ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার যে শাখাটি এই ভাষা সাম্রাজ্যের পূঃ সীমান্তে অবস্থিত,সেই শাখার নাম ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগুচ্ছ বা আর্য।বস্তুত এখানে দুটি প্রধান ভাষার নাম আছে- একটি ইন্দো তথা ভারতীয় এবং অন্যটি ইরাণী ভাষা।এই উভয় শাখার ভাষা ব্যবহারকারীরা নিজেদের আর্য বলে অবিহিত করত বলেই এই ভাষাকে আর্যভাষা বলে।

খ্রীঃ পূঃ চতুর্দশ শতাব্দীর হিত্তী প্রত্নলেখে কিছু কিছু ভারতীয় দেবতার নাম আছে (নশত্তিয়ণ = নাসত্য নাম, ইন্দর = ইন্দ্র, মি-ই-র = মিত্র, উরুবন = বরুণ প্রমূখ)। ব্যক্তি নাম ও সংস্কৃতের তুল্যশব্দ পাওয়া যাওয়ায় অনুমিত হয় যে এই সময়ের পূর্বেই ভারতীয় ভাষা এবং ইরানী ভাষার বিচ্ছেদ ঘটেছিল।

শতম্ গোষ্ঠীতে এর গুরুত্ব সর্বাধিক।খ্রীঃ পূঃ 15-1 খ্রীঃ এদের একটি শাখা পারস্যদেশের ভূখণ্ডে পামীর মালভূমির আশেপাশে ছড়িয়ে থাকে,তাদের বলা হয় ইন্দো-ইরাণী।আর অপর দল হিন্দুকুশ পর্বত পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করে,এদের বলা হয় ইন্দো-ইরানীয় বা এরিয়ান বা আর্য।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

LightBlog

AdsG

close