Higher Secondary Bengali Suggestion 2023
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস
চিত্রকলা
প্রশ্নঃ- চিত্রকলার ইতিহাসে যামিনী রায়ের অবদান আলোচনা কর।
উত্তরঃ-
ভারতীয় চিত্রকলার ইতিহাস খুঁজলে যে সকল ব্যক্তিবর্গের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিত
পাওয়া যায় যামিনী রায় তাদের মধ্যে অন্যতম। বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় গ্রামে জন্মগ্রহণ
করেন তিনি। গ্রামে মৃৎশিল্পীদের সাহচর্য তাকে এই শিল্পী জীবনে প্রবেশের অনুপ্রেরণা
যুগিয়েছিল।
গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুলে
শিক্ষা গ্রহণান্তে তিনি ফাইন আর্টস বিভাগে ইউরোপীয় অ্যাকাডেমিক রীতির চিত্রকলা
শেখেন।উল্লেখ্য এই যে, 1918-19 থেকে তার চিত্র
ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে। 1934 সালে তার ছবি সর্বভারতীয় প্রদর্শনীতে ভাইসরয়ের স্বর্ণপদক
লাভ করে।
বলা বাহুল্য, ব্রিটিশ অ্যাকাডেমিক স্বাভাবিকতাবাদী রীতি অনুসরণ করে তিনি চিত্রচর্চা শুরু করেন। আবার কিছুদিন তিনি ফরাসী ইম্প্রেশনিস্ট চিত্রশিল্পীদের মতো চিত্রচর্চা করেছিলেন। অবশ্য এরপরেই তার জীবনে আসে নতুন মোড়, তিনি অনুভব করেন যে এসব চিত্রশিল্প তার নিজস্ব ক্ষেত্র নয়। তখন তিনি বাংলার লোকশিল্পের অভিমুখে তার সৃজনশীলতার ক্ষেত্রকে নিয়ে যান। গ্রামবাংলার নিসর্গচিত্র, আদিবাসী জীবন ও জীবিকা, ধর্মীয় অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মকাহিনীনির্ভর ছবি আর পটচিত্র অঙ্কণে তিনি অনবদ্য সৃজনশীলতার পরিচয় প্রদান করেন। বিশেষ করে পটশিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে এ বিষয়ে গবেষণা ও পরীক্ষানিরীক্ষা করার জন্য তিনি মেদিনীপুর, কালিঘাট, বেলিয়াতোড় প্রভৃতি অঞ্চল থেকে পট সংগ্রহ শুরু করেন এবং কালিঘাটের পটুয়াদের দ্বারা তিনি বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। তার চিত্রে স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করতেন। দীর্ঘকাল যাবৎ গভীর অনুশীলনের ফলে তিনি ক্রমে তার চিত্রাভাষা অর্জনে সক্ষম হন। তার ছবিগুলো ছিল সমতল রঙে আঁকা। তার ছবিতে মানুষ, পশুপাখির চিত্র ছিল পূর্ণ পটজুড়ে অঙ্কিত। লীলায়িত স্বচ্ছন্দ স্থল তাদের শরীরের বহিরেখা তথা বর্ডার। ফরাসী চিত্রকরদের মধ্যে যারা সরলরেখার পরিবর্তে কার্ভ ব্যবহার করতেন তাদের চিত্রকলার প্রতি তিনি বিশেষ অনুরক্ত ছিলেন। আর্ট স্কু্লে গিলার্ডি সাহেবের কাছে তেলরঙে আঁকায় অভ্যস্ত হলেও পরবর্তীতে তিনি জলরঙেই তাঁর অসামান্য সব ছবি আঁকেন।তার ছবির সমতল ব্যাকগ্রাউন্ডে দেখা যেত ছোটবড় অলংকরণ। 1955 সালে তিনি পদ্মভূষণ উপাধিতে ভূষিত হন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ