Higher Secondary Bengali Suggestion 2023
আন্তর্জাতিক কবিতাঃ- পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন
প্রশ্নঃ- "পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন" কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা আলোচনা কর।
উত্তরঃ-
নামকরণ হল সাহিত্যের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা আভরণ তুল্যও বটে। সাহিত্যে নামকরণ
হয় বিষয়বস্তু ভিত্তিক, চরিত্র ভিত্তিক ও
ইঙ্গিতপূর্ণ ব্যঞ্জনাপ্রধান। প্রখ্যাত কবি বের্টোল্ট ব্রেখট তার এই কবিতাটির নামকরণ
"Questions
from a Worker Who Reads" করেছে শ্রমজীবী
মানুষের দাবীর উপর ভিত্তি করেই।আর কবিতাটি "পড়তে জানে এমন এক মজুরের
প্রশ্ন" নামে অনুবাদ করেছেন কবি শঙ্খ ঘোষ। আর এই কবিতায় ইতিহাস সচেতনতাও
স্পষ্ট ভাবে সার্বিক মননশীলতায় হয়েছে ব্যক্ত।
একজন শ্রমজীবী মানুষ তথা
মজুরের মনে ঐতিহাসিক যে সকল প্রশ্ন যেগে উঠেছিল সেগুলো নিম্নরূপ -
রাজা ক্যাডমাস প্রতিষ্ঠিত সাত
দরজাওয়ালা থীবস যা গ্রীসে অবস্থিত। কিন্তু রাজা তো স্বয়ং পাথর ঘাড়ে করে এনে এটি
নির্মাণ করেননি,তাহলে কারা এনেছিল?
রাজা হামুরাবির বিশাল
সাম্রাজ্যের রাজধানী ব্যাবিলন ধ্বংস করেন সেনাকবির। নেবুকাডনেজার আবার নতুন নগরী
নির্মান করলেও তা পুনরায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। তাহলে প্রশ্ন একটাই, এতবার ব্যাবিলনকে গড়ে তুলল কারা?
পেরুর রাজধানী লিমা হল
স্বর্ণগরিমায় উজ্জ্বল প্রাসাদবহুল এক শহর। কিন্তু সেই প্রাসাদের কারিগররা কোন্
বাসায় থাকত?
চীনের চৌ
বংশের শি-হুয়াং-তি হুণ আক্রমণ রোধ করার জন্য বিখ্যাত চীনের প্রাচীর নির্মান
করেন। কিন্তু কাজ শেষ হবার ওর সেই মিস্ত্রিরা কোথায় গিয়েছিল?
জয়তোরণে ঠাসা শহর রোমের
প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়াস সিজাস। কিন্তু তিনি কাদের জয় করেছিলেন? ক্রীতদাস ও তাদের বিদ্রোহকে কেন?
গ্রীক বণিকদের দ্বারা তৈরী
বাইজানটিয়াম সভ্যতার এই শহর নির্মান করেছিল যে সব কারিগর তারা সকলেই কি প্রাসাদে
থাকত।
সমুদ্রে সলিল সমাধি হবার সময়, আটলান্টিসের মত উন্নত সভ্যতার জন্মদাতা কি ক্রীতদাসদের
ডেকেছিল?
গ্রীসের ম্যাসিডোনিয়ার বীর
দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডার কি একাই ভারত জয় করেছিলেন?
সম্রাট সিজার লুণ্ঠনকারী
গলদের দীর্ঘ আট বছরের যুদ্ধে পরাজিত করেন। একটা রাঁধুনিও কি ছিল না তার? তিনি কি একাই সব করেছিলেন।
স্পেনের যুদ্ধতরী আর্মাডা
ডুবলে দ্বিতীয় ফিলিপসের অশ্রু ইতিহাসে স্থান করে নিলেও কোনো সেনার পরিবারের কেউ কি
কাঁদেনি?
সপ্তবষব্যাপী যুদ্ধে যেতেন
রাজা দ্বিতীয় ফ্রেডারিক। কিন্তু তা কি তার একার কৃতিত্ব ছিল?
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, সভ্যতার নিজস্ব বয়ান আছে। আর সবথেকে বড় কথা হল সভ্যতার ধারক
ও বাহল হল এই শ্রমজীবী সম্প্রদায়। অথচ ক্ষমতা ও বাহুবলের সন্দর্ভ থেকে সৃষ্টি হওয়া
ইতিহাসে তারা অপাংক্তেয়।
একজন অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন মজুর তথা মানুষের মনে জেগে ওঠা প্রশ্নগুলো নিয়ে এই কবিতাটির বুনন ঘটেছে।
ইতিহাস সাক্ষী, সারা পৃথিবী জুড়ে যেসকল কৃতিত্বের খবর ছড়িয়ে আছে, সেই কৃতিত্বের পিছনে আছে শ্রমজীবী মানুষের অসামান্য অবদান। তাই তাদের মনে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। তাই কবিতাটির নামকরণ সার্থল ও সুসংগত হয়েছে একথা নির্দিধায় বলা যেতে পারে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ