Higher Secondary Bengali Suggestion 2023
গল্পঃ- ভারতবর্ষ
প্রশ্নঃ- "ভারতবর্ষ" গল্পের বিষয়বস্তু আলোচনা কর।
উত্তরঃ-
ধর্ম হল এমন একটি বিষয় যা ধারণ করে আমরা আত্মতুষ্টি অনুভব করি। এখানে জাতি বা
সম্প্রদায়ে কোন ভেদাভেদ থাকেনা। কিন্তু কুটকৌশলী মানুষ কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে
মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টিকারী ধর্মের জন্ম দিয়েছে।কবিগুরুর মতে, যারা আমাদের মুখে দুমুঠো অন্ন সংস্থানের জন্য পৃথিবীতে
এসেছেন তাদের আমরা স্পর্ধা সহকারে জাতে ঠেলে দিয়েছি। আর এই স্পর্শকাতর বিষয়কে
উপজীব্য করেই সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের অসামান্য কাহিনী "ভারতবর্ষ"।
ধর্মের উৎপত্তির সন্দর্ভ
সন্ধান করতে গেলে দেখা যায় এর পশ্চাতে মূল কারণ ছিল জনকল্যাণ। কিন্তু কালচক্রের
বহ্নিশিখায় তা ক্রমে মানবসভ্যতা ধ্বংসকারী রক্তবীজে পরিণত হয়েছে। মহান মনিষীগণের
শোনানো সৌভ্রাত্রের বাণী আজ ক্রমে বিফলতায় পর্যবসিত হচ্ছে। বর্তমান গল্পে এই মূল
হৃদয়বিদারক সত্যটিই তুলে ধরা হয়েছে। দাঙ্গা, ধর্মীয় হানাহানি, ব্যক্তি-ধর্মীয়-রাজনৈতিক
স্বার্থ এসবই আজ সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারতবর্ষ সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের
দেশ, এদেশ গণতন্ত্র মেনে চলে। নানা জাতি, নানা ধর্ম, নানা সম্প্রদায়ের
মানুষ একসাথে বাস করে এখনে। তবে কখনও কখনও কারনে অকারণে বেঁধে যায় দ্বন্দ্ব বিবাদ, যার অন্তিম পরিণতি হয় দাঙ্গাফাসাদে। গল্পে ভারতবর্ষের একটা
ছোট্ট জনপদের একটা চায়ের দোকানে আড্ডার পরিবেশ দিয়ে কাহিনীর সূত্রপাত ঘটেছে। তবে
বেশীরভাগ মানুষই কৃষি নির্ভর শীতকালের সময় দিনকতক ধরে অসময়ের বৃষ্টির দাপট, যাকে বলে ফাঁপি; তাতে ফসলের নিদারুণ
ক্ষতি হচ্ছে। দুশ্চিন্তিত লোকগুলো তখন আল্লা আর ভগবানের উদ্দেশ্যে গালি দিতে
লাগল।হাঠাৎ গল্পের মোড় ঘুরিয়ে সেখানে রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ করে জনৈকা থুরথুরে কুঁজো
ভিখিরি বুড়ি।তার গলা শুনে সকলে মন্তব্য করে, বুড়ির শরীর
গেলেও গলার জোর এখনও আছে। সে বীরদর্পে চা খায় আর পয়সা দেয়। সকলের মনে দানা বাঁধে
হাজার প্রশ্ন। সেখানে থেকে তখন বুড়ি চলে যায়।
দিন পাঁচেক পর আবহাওয়া ভালো
হয়ে রৌদ্রময় হয়ে উঠলে সকলে দেখতে পায় যে গ্রামের বটতলার গুঁড়ির খোঁদলে বুড়ি অসাড় হয়ে
পড়ে আছে। তাকে হিন্দু মৃতদেহ মনে করে চৌকিদারের পরামর্শমত গাঁয়ের হিন্দু লোকেরা
মাঁচায় বেঁধে ফেলে আসে নদীর ধারে। বিকালে কিন্তু দৃশ্যের পরিবর্তন ঘটে। তাকে
মুসলমানরা নদীর ধার থেকে তুলে নিয়ে আসে।সমস্যার কেন্দ্রবিন্দুতে একটিই প্রশ্ন
বর্তমান- বুড়ি হিন্দু নাকি মুসলমান। তার সৎকার কাদের ধর্মীয় পদ্ধতি মেনে হবে তা
নিয়ে প্রবল মতানৈক্যের সূত্রপাত ঘটে। প্রায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রূপ নেয় আর
কি। মৌখিক নানা প্রমান দেওয়া-নেওয়া চলে, তবুও সমস্যা
অমিমাংসীতই থেকে যায়। এমতাবস্থায় হঠাৎ মৃত ভেবে যাকে নিয়ে এত সমস্যা সেই বুড়ি জেগে
ওঠে।সকলে জিজ্ঞেস করে-"বুড়ি! তুমি মরনি!"। সে বলে - "তোরা মর!তোরা মর্
মুখপোড়ারা!" এভাবে গালাগালি দিয়ে শাপশাপান্ত করে দূরে মিলিয়ে যায়।
ক্রমে রোদের আলোয় তার মূর্তি আবছা হয়ে আসে। আর তার সাথে সাথে অস্পষ্ট হয়ে আসে আমাদের ভারতবর্ষ।অস্পষ্ট করে দিল আমাদের আমাদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মান্ধতাকে।
eta noi
উত্তরমুছুন