চার্বাক কর্তৃক অনুমান প্রমাণ খন্ডন - WB Class 11 New Syllabus Philosophy Suggestion 2025 - Chapter 4
চার্বাক কর্তৃক অনুমান প্রমাণ খন্ডন
চার্বাক কথাটি কোথা থেকে এসেছে? তাই নিয়ে দার্শনিকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। কারো কারো মতে এরা চারুবাক বা সুন্দর কথা বলতে বলে এই দর্শনের নাম চারুবাক বা অপভ্রংশের চার্বাক দর্শন। কেউ কেউ বলেন এরা শুধু চর্ব বা খাওয়ার কথা বলতেন বলে এই দর্শনের নাম চার্বাক দর্শন। আবার কারও মতে এই দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা চার্বাক ঋষির নাম অনুসারে এই দর্শনের নাম চার্বাক দর্শন।
এই দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কে তাই নিয়ে মতবিরোধ আছে। কেউ কেউ বলেন দেবগুরু বৃহস্পতি হলেন এই দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা। আবার কারও মতে চার্বাক ঋষি হলেন এই দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা। যাই হোক না কেন এই দর্শন ভারতীয় দর্শনে এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। এরা ঈশ্বর মানে না, আত্মা মানে না, স্বর্গ-নরক মানেনা, বেদ পুরোহিত মানে না, এক কথায় কিছুই মানে না। চার্বাকদের আলোচনা কেউ পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা -
1.চার্বাক জ্ঞানতত্ত্ব
2.চার্বাক জড়তত্ত্ব
3.চার্বাক নীতি তত্ত্ব
4.চার্বাক ঈশ্বরতত্ব
5.চার্বাকদের বেদ বিরোধিতা
চার্বাক জ্ঞানতত্ত্ব : ভারতীয় দর্শনে যথার্থ জ্ঞানের নাম প্রমা। প্রমার অর্থ যথার্থ জ্ঞান। প্রমার কারণকে বলা হয় প্রমাণ। ভারতীয় দর্শনের চারটি প্রমাণ স্বীকার করা হয়। যথা - প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান ও শব্দ। চার্বাকরা শুধুমাত্র প্রত্যকেই প্রমাণ বলে স্বীকার করেন। চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক এই পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে যে জ্ঞান হয় তাই একমাত্র যথার্থ জ্ঞান। চার্বাকরা অনুমানের স্বীকার করে না। কারণ একটি অনুমান করতে হলে আর একটি অনুমান করতে হয় আবার তার জন্য আরেকটি। কাজেই অনুমানে অনাবস্থার দোষ ঘটে। উপমানও তাই। চার্বাক শব্দকে প্রমাণ বলে স্বীকার করেন না। কারণ যিনি 100 কথা সত্য বলেছেন তার 101 তম কথাটি সত্য নাও হতে পারে। কাজেই প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ।
চার্বাক জড়তত্ত্ব : যেহেতু প্রত্যক্ষ একমাত্র প্রমাণ সেহেতু চার্বাকরা দেহ অতিরিক্ত আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করেননি। কারণ একে প্রত্যক্ষ করা যায় না। আরবদের মধ্যে ক্ষিতি, অপ, তেজ এবং মরুৎ (চার্বাকরা ব্যোমকে স্বীকার করে না কারণ একে প্রত্যক্ষ করা যায় না) চারটি মহা ভূত নিজেদের স্বভাব অনুযায়ী আকস্মিকভাবে মিলিত হয়ে চৈতন্য বিশিষ্ট উৎপন্ন করে। চৈতন্য দেহের গুন। এই চৈতন্য বিশিষ্ট দেহই হলো আত্মা। চার্বাকদের এই মতবাদকে বলা হয় দেহাত্মবাদ বা জড়বাদ।
প্রশ্ন ওঠে ক্ষিতি, অপ, তেজ ও মরুৎ এই চারটি জড়পদার্থ তাহলে এদের মিশ্রণে কিভাবে চৈতন্য উৎপন্ন হয়। চার্বাকরা এর উত্তরে বলেন পান, চুন, সুপারি এবং খয়ের এর কোনটির মধ্যে লাল রং নেই কিন্তু এদের মিশ্রণে লাল রং উৎপন্ন হয়। ঠিক তেমনি ক্ষিতি, অপ, তেজ ও মরুৎ এই চতুর্ভুজ এর মধ্যে চৈতন্য না থাকলেও এদের মিশ্রণে চৈতন্য উৎপন্ন হয়। এরপরেও প্রশ্ন ওঠে চৈতন্য যদি দেহেরই গুণ হয় তবে তা সর্বদা দেহতে দেখা যায় না কেন। চার্বাকরা এর উত্তরে বলেন চাল জলে রেখে দিলে কিছুদিন পর তাতে মাদকীয়তা আসে। এই মাদকীয় তা পূর্বে ছিল না। পরে উপযুক্ত কারণ আশাতেই মাদকীয়তা দেখা যায়। কাজেই চৈতন্য দেহের গড়ন হলেও তা সর্বদা দেহতে দেখা যাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই।
চার্বাক নীতি তত্ত্ব : যেহেতু দেহ অতিরিক্ত আত্মার কোন অস্তিত্ব নেই সেহেতু চার্বাকরা জন্মান্তর বা পরলোকের অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। কৃচ্ছতা সাধন এর মাধ্যমে পরলোক বা পরজন্মে সুখ প্রাপ্তির এদের কাছে অবান্তর। চার্বাকরা বলেন যেহেতু মৃত্যুতেই সব শেষ, দেহ বিনষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আত্মাও বিনষ্ট হয়। সেতু চার্বাকরা বলেন যা কিছু সুখ ভোগ তা এই জীবনেই করতে হবে। ভারতীয় দর্শনের চারটি পুরুষার্থ স্বীকার করা হয়। যথা - ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ। চার্বাকরা এর মধ্যে কাউকেই চরম পুরুষার্থ বলে স্বীকার করেন। অর্থ হল গৌণ পুরুষার্থ। সাধারণ মানুষও এই মতে বিশ্বাসী বলে চার্বাক দর্শনকে লোকায়ত দর্শন বলা হয়। সুখবাদ প্রসঙ্গে চার্বাকদের সুবিখ্যাত নীতিটি হলো -
"যাবৎ জীবেৎ সুখং জীবেৎ,
ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ।"
ওদের এই মতবাদের সঙ্গে গ্রিক দার্শনিক এরিস্টোপাশের অসঙ্গত আত্ম সুখবাদের সাদৃশ্য আছে।
চার্বাক ঈশ্বরতত্ব : চার্বাকরা ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। কারণ ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষ করা যায় না। চার্বাকরা বলেন ক্ষিতি অপ তেজ মরুৎ এই চতুর্ভুজ নিজেদের স্বভাব অনুযায়ী আকস্মিকভাবে মিলিত হয়ে এই জীবন ও জগৎ সৃষ্টি করেছে। এইখানে ঈশ্বরের কোন ভূমিকা নেই। চার্বাকদের জগত তত্ত্ব কে বলা হয় যদৃচ্ছাবাদ। ধূর্ত, ভন্ড, নিশাচর ব্রাহ্মণ পুরোহিত নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাতে ঈশ্বর কে সৃষ্টি করেছে। প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের কোনো অস্তিত্বই নেই।
বেদ বিরোধিতা : চার্বাকরা চূড়ান্তভাবে বেদের বিরোধিতা করেন। এরা বেদের কোন কথা কে স্বীকার করেননি। তারা বলেন ধূর্ত ভন্ড নিশাচর ব্রাহ্মণরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সাধারণ মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য বেদের অর্থহীন শব্দ এবং অর্থহীন কলাপ ব্যবহার করা হয়েছে।
চার্বাকদের অনেক কথাই গ্রহণযোগ্য নয়। এই মতবাদ চরম এবং একদেশদর্শীর মতবাদ। বৈদিক যুগে চার্বাকরা যে এদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার সাহস ও সত্যনিষ্ঠ দেখিয়েছেন তা আমাদের মনকে নাড়া না দিয়ে পারে না।
** বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
(১) চারবার শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে -
(ক) চারুবাক থেকে
(খ) জড়বাদ থেকে
(গ) ঘি খাওয়া থেকে
(ঘ) ভোগবাদ থেকে
(২) চার্বাক দর্শন যে ধরনের নাস্তিক তা হলো
(ক) চরম নাস্তিক
(খ) নরম নাস্তিক
(গ) মধ্যপন্থী নাস্তিক
(ঘ) আধা নাস্তিক
(৩) চার্বাক মতবাদকে বলা হয়
(ক) আত্ম সুখবাদ
(খ) অসুখবাদ
(গ) পরম সুখবাদ
(ঘ) সর্ব সুখবাদ
(৪) নাস্তিক শিরোমনি যাদের বলা হয়
(ক) জৈনদের
(খ) চার্বাকদের
(গ) বৌদ্ধদের
(ঘ) বৈশেষিকদের
(৫) ভারতীয় দর্শনের ইতিহাসে যেটি লোক আয়ত দর্শন নামে খ্যাত
(ক) বৌদ্ধ দর্শন
(খ) ন্যায় দর্শন
(গ) চার্বাক দর্শন
(ঘ) জৈন দর্শন
(৬) বেদের প্রামাণ্য অস্বীকার করে যারা
(ক) ন্যায়রা
(খ) রোগীরা
(গ) চার্বাকরা
(ঘ) বৈশেষিকরা
(৭) চার্বাকরা হলেন আদ্ধাত্ববাদী - কথাটি হল
(ক) সত্য
(খ) মিথ্যা
(গ) সংশয়াত্মক
(ঘ) আপতিক
(৮) “বেদবাক্য গুলি হল ধূর্ত ব্রাহ্মণদেরই” - একথা বলেছেন -
(ক) ন্যায়রা
(খ) বৈশেষিক
(গ) সাংখ্যরা
(ঘ) চার্বাকরা
(৯) চার্বাকদের উপসম্প্রদায় হলো -
(ক) দুটি
(খ) তিনটি
(গ) চারটি
(ঘ) ছয়টি
(১০) চার্বাক দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা রূপে অনুমান করা হয়
(ক) মধ্যকে
(খ) পতঞ্জলিকে
(গ) জৈমিনিকে
(ঘ) বৃহস্পতিকে
(১১) জন্মান্তরবাদ এর বিষয়টি চার্বাকদের কাছে
(ক) সত্য
(খ) মিথ্যা
(গ) আপতিক
(ঘ) স্বত সত্য
(১২) চার্বাকগন কর্মবাদকে স্বীকার করেছেন বিবৃতিটি হল
(ক) সত্য
(খ) স্বত সত্য
(গ) মিথ্যা
(ঘ) সংসাত্মক
(১৩) কর্মবাদ এবং জন্মান্তরবাদ উভয়ই চার্বাক মতে
(ক) যুক্তি যুক্ত
(খ) অযৌক্তিক
(গ) নিয়ম নিঃসৃত
(ঘ) নিয়ম বহির্ভূত
(১৪) জন্মান্তরবাদ এর অর্থ হল এক জন্মের পর আর এক জন্মকে স্বীকার করে নেওয়া এটি হল -
(ক) যথাযথ
(খ) যথাযথ নয়
(গ) আজগুবি
(ঘ) অবান্তর
(১৫) চার্বাকরা যে ধরনের সুখের কথা বলেন তা হলো
(ক) ইন্দ্রিয় সুখ
(খ) অলৌকিক সুখ
(গ) মানসিক সুখ
(ঘ) লৌকিক অথবা অলৌকিক সুখ
(১৬) চার্বাক মতে মানব জীবনের মূল লক্ষ্য
(ক) ধর্ম
(খ) অর্থ
(গ) কাম
(ঘ) মোক্ষ
(১৭) চার্বাক কথাটির অর্থ হল
(ক) সুন্দর কথা
(খ) ধর্মের কথা
(গ) দর্শণের কথা
(ঘ) আইনের কথা
(১৮) চার্বাক মতে প্রমাণ কয়টি
(ক) একটি
(খ) দুটি
(গ) তিনটি
(ঘ) চারটি
(১৯) চার্বাক মতে প্রমাণ কোনটি
(ক) অনুমান
(খ) প্রত্যক্ষ
(গ) শব্দ
(ঘ) উপমান
(২০) কারা অনুমানের প্রমান্য খন্ডন করেন
(ক) চার্বাকরা
(খ) বৌদ্ধরা
(গ) বৈশেষিকরা
(ঘ) ন্যায় দার্শনিকরা
(২১) চার্বাকগণ আকাশ বা ব্যোমকে অস্বীকার করেন কেন
(ক) আকাশ অনুমান লব্ধ
(খ) আকাশ অপ্রত্যক্ষ যোগ্য
(গ) আকাশ শব্দ লব্ধ
(ঘ) আকাশ উপমান লব্ধ
(২২) চার্বাক মতে প্রত্যক্ষ কি
(ক) ইন্দ্রিয়ার্থ সন্নিকর্ষ
(খ) চক্ষুর সন্নিকর্ষ
(গ) বাহ্য রূপের প্রত্যক্ষ
(ঘ) আন্তর প্রত্যক্ষ
(২৩) চার্বাক দেহত্ত্ববাদের অপর নাম কি
(ক) ভূত চৈতন্যবাদ
(খ) ভূত জড়বাদ
(গ) মানস বাদ
(ঘ) যদৃচ্ছা বাদ
(২৪) চৈতন্য বিশিষ্ট দেহই হলো আত্মা এটি কাদের মতবাদ
(ক) চার্বাকদের
(খ) বৌদ্ধদের
(গ) ন্যায় দার্শনিকদের
(ঘ) বৈশেষিকদের
(২৫) চার্বাক জড়বাদ হল
(ক) আধ্যাত্ম্যাদের সমর্থক
(খ) আধ্যাত্মবাদের বিরোধী
(গ) মোক্ষবাদের পরিপূরক
(ঘ) মোক্ষবাদের সমর্থক
(২৬) চার্বাক মতে অনুমানের ভিত্তি হল
(ক) পরামর্শ
(খ) পক্ষতা
(গ) ব্যাপ্তি
(ঘ) শব্দ
(২৭) চার্বাক মতে জড় ভূত কয়টি
(ক) একটি
(খ) তিনটি
(গ) চারটি
(ঘ) ছয়টি
(২৮) ক্ষিতি অপ তেজ এবং মরুৎ এই চারটিকে একসঙ্গে কি বলা হয়
(ক) জড় ভূত
(খ) অজড় ভূত
(গ) চতুর্ভূত
(ঘ) ত্রিভূত
(২৯) যদৃচ্ছাবাদের কথা কারা বলেন
(ক) বৌদ্ধ সম্প্রদায়
(খ) চার্বাক সম্প্রদায়
(গ) ন্যায় সম্প্রদায়
(ঘ) জৈন সম্প্রদায়
(৩০) স্বভাববাদের অনিবার্য পরিণতি কি
(ক) অলৌকিকতাবাদ
(খ) যদৃচ্ছতাবাদ
(গ) দেহত্ববাদ
(ঘ) অনাত্মবাদ
(৩১) চার্বাক দর্শনে কোন জড়ভূতটি স্বীকার্য নয়
(ক) ক্ষিতি
(খ) অপ
(গ) ব্যোম
(ঘ) তেজঃ
(৩২) চার্বাক মতে চেতনা যার গুণ তা হলো
(ক) মনের
(খ) দেহের
(গ) ইন্দ্রিয়ে
(ঘ) আত্মার
(৩৩) দেহের মৃত্যুকে মুক্তি বা মোক্ষ বলেছেন
(ক) নৈয়ায়িকরা
(খ) বৈশেষিকরা
(গ) চার্বাকরা
(ঘ) বৌদ্ধরা
(৩৪) অনুমান প্রমাণ নয় এ কথা বলেছেন
(ক) ন্যায়
(খ) অদ্বৈত বেদান্ত
(গ) চার্বাক
(ঘ) বৌদ্ধ
(৩৫) চার্বাক মতে পরমতত্ত্ব হলো
(ক) ঈশ্বর
(খ) সগুন ব্রহ্ম
(গ) নির্গুণ ব্রহ্ম
(ঘ) এদের কোনোটিই নয়
(৩৬) আপ্ত পুরুষের বাক্যকে বলা হয়
(ক) প্রত্যক্ষ
(খ) অনুমান
(গ) শব্দ
(ঘ) উপমান
(৩৭) যাবজ্জীবেৎ সুখং জিবেত বলেছেন
(ক) চার্বাকরা
(খ) বৌদ্ধরা
(গ) জৈনরা
(ঘ) বৈশেষিকরা
উত্তরসহ পিডিএফ (PDF) পেতে এইখানে ক্লিক করুন : চার্বাক কর্তৃক অনুমান প্রমান খন্ডন
অন্যান্য অধ্যায় একত্রে দেখতে ঃ Click Here...
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ