জ্ঞানলাভের ছয়টি পদ্ধতি - প্রমাণ সম্পর্কে ভারতীয় তত্ত্বসমূহ - WB Class 11 New Syllabus Philosophy Suggestion 2025 - Chapter 3
জ্ঞানলাভের ছয়টি পদ্ধতি - প্রমাণ সম্পর্কে ভারতীয় তত্ত্বসমূহ
প্রমাণ শব্দের অর্থ হল যথার্থ জ্ঞান। ভারতীয় জ্ঞানতত্ত্বে প্রমাজ্ঞান কে স্বীকার করে নেওয়ার কারণে তার উৎস হিসাবে প্রমাণকে মেনে নেওয়া হয়েছে।
(১) চার্বাক মতে প্রমাণ হল একটি (প্রত্যক্ষ)
(২) বৌদ্ধ ও বৈশেষিক মতে প্রমাণ হল দুটি (প্রত্যক্ষ, অনুমান)
(৩) সাংখ্য, যোগ ও জৈন মতে প্রমাণ হল তিনটি (প্রত্যক্ষ, অনুমান ও শব্দ)
(৪) ন্যায় মতে প্রমাণ হল চারটি (প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান ও শব্দ)
(৫) প্রভাকর মীমাংসা মতে প্রমাণ হল পাঁচটি (প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান, শব্দ ও অর্থাপত্তি)
(৬) ভাট্ট মেমাংসা ও বেদান্ত মতে প্রমাণ হল ছয়টি (প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান, শব্দ, অর্থাপত্তি ও অনুপলব্ধি)
প্রত্যক্ষ : ভারতীয় দর্শনে প্রমা তথা যথার্থ জ্ঞান এর উপায় হিসেবে যে সমস্ত প্রমাণকে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলো প্রত্যক্ষ। প্রত্যক্ষ কে দুই ভাগে ভাগ করা যায় যথা লৌকিক প্রত্যক্ষ ও অলৌকিক প্রত্যক্ষ। ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে সরাসরি যে প্রত্যক্ষ করা হয় তাকে লৌকিক প্রত্যক্ষ বলে। লৌকিক প্রত্যক্ষ আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা বাহ্য লৌকিক প্রত্যক্ষ ও মানস লৌকিক প্রত্যক্ষ। বাহ্য ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে প্রত্যক্ষ করা যায় বলে একে বাহ্য লৌকিক প্রত্যক্ষ বলে। আবার মানস ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে যে প্রত্যক্ষ করা হয় তাকে মানস লৌকিক প্রত্যক্ষ বলে। বাহ্য প্রত্যক্ষ আবার পাঁচ প্রকার যথা - চাক্ষুষ, শ্রোবণ, নাসিক্য, রাসন এবং স্পর্শন। অলৌকিক প্রত্যক্ষ আবার তিন প্রকার যথা সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ, জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ এবং যোগজ প্রত্যক্ষ।
অনুমান : প্রত্যক্ষের পরেই প্রমাজ্ঞানের উৎস হিসেবে যে প্রমাণকে মেনে নেয়া হয়েছে তা হল অনুমান। অনুমানকে তাই দ্বিতীয় প্রমাণ রূপে গণ্য করা হয়েছে। একমাত্র চার্বাক সম্প্রদায় ছাড়া ভারতীয় দর্শনের আর সমস্ত সম্প্রদায়ী অনুমানকে প্রমাণ হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে।
বিশেষ বিশেষ জ্ঞাত সত্যের উপর ভিত্তি করে যখন অজ্ঞান কোন বিষয়ের জ্ঞানলাভ করা হয় তখন তাকেই বলা হয় অনুমান। যেমন রান্নাঘরে উনানে ধোঁয়া দেখেছি এবং আগুনও দেখেছি। যজ্ঞবেদিতে ধোয়া দেখেছি এবং তাতে আগুনে দেখেছি। অতএব অনুমান করা যায় যে যেখানে যেখানে ধোয়া থাকে সেখানে সেখানে আগুন থাকে।
উপমান : ভারতীয় দর্শনের স্বীকৃত প্রমাণ গুলির অন্যতম হলো উপমান। এই উপমান প্রমাণের মাধ্যমে আমরা যে জ্ঞান লাভ করি তাকে বলা হয় উপনীতি। অর্থাৎ বলা যায় যে উপমান হল উপমিতি জ্ঞানের কারণ। উপমান এবং উপমের মধ্যে সাদৃশ্য জ্ঞানের ভিত্তিতে যে জ্ঞান উঠে আসে তাকে বলা হয় উপমান। এই হল নির্ভরযোগ্য অভিজ্ঞ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বর্ণনা অনুযায়ী এক ধরনের সাদৃশ্য জ্ঞান। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে কোন এক ব্যক্তি কোনদিন চর্মী গরু দেখেনি। তাকে চর্মী গরু দেখা কোন অভিজ্ঞ ব্যক্তি চর্মী গরুর বর্ণনা দিয়ে বলেন যে চর্বি গরু হল গরুর মতো দেখতে এক প্রাণী। যা শান্ত স্বভাবের এবং ঘন ও লম্বা লম্বা লম্ব বিশিষ্ট। এরূপ বর্ণনা শুনে যখন কোন ব্যাক্তি অরণ্যে গিয়ে গরুর সদৃশ্য এমন কোন প্রাণীকে দেখে জানতে পারে যে এটি হলো চর্মি গরু তখন তাকে বলা হয় উপনীতি জ্ঞান যার কারণ হলো উপমান।
শব্দ : ভারতীয় দর্শনের শব্দকে একটি অন্যতম প্রমাণ রূপে স্বিকার করে নেয়া হয়েছে। শব্দ এর অর্থ হল কোন বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান বা গ্রন্থের বাণী বা বাক্য। শব্দকে বলা হয় আপ্তবাক্য বা আগম। কোন বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি গ্রন্থ বা প্রতিষ্ঠানের শব্দ বা উক্তির মাধ্যমে যখন কোন অপ্রত্যক্ষ বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা হয় তখন তাকে বলা হয় শব্দ। একেই বলা হয় আগম। শব্দ বা আগমের মাধ্যমে যে ধরনের জ্ঞান উঠে আসে তাকেই বলা হয় শব্দ বা শব্দ জ্ঞান। এই শব্দ বা শব্দজ্ঞানের কারণকেই বলা হয় শব্দ বা আগম। যেমন আমরা ইতিহাস পড়ে জানতে পারি যে হুমায়ুনের বাবার নাম হলো বাবর। ভূগোল পড়ে জানতে পারি যে, পৃথিবী আকৃতি চ্যাপ্টা কমলালেবুর মতো।
অর্থাপত্তি : ভারতীয় দর্শনে প্রত্যক্ষ অনুমান অপমান এবং শব্দের পর যে প্রমাণটি স্বীকার করে নেয়া হয়েছে তা হলো অর্থপত্তি। ভারতীয় দার্শনিক সম্প্রদায়ীগুলির মধ্যে কেবল মীমাংসা এবং বেদান্ত সম্প্রদায়ের অর্থ অর্থাপত্তিকে একটি স্বতন্ত্র প্রমাণ হিসেবে মেনে নিয়েছে। কোন বিষয় বা ঘটনা যখন কোন প্রত্যক্ষজাত কারণ দ্বারা প্রমাণ ব্যাঘাত হয় না তখন যদি কোন অজ্ঞাত অনুমানলপ্ত কারণ দ্বারা তার ব্যাখ্যা করা হয় তখন তাকে বলা হয় অর্থাপত্তি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় - সুস্থ সবল এবং স্থূলকারী সমিরকে দিনে আহার করতে না দেখে যদি অনুমান বা কল্পনা করা যায় যে সে রাত্রে আহার করবে তখন তাকে বলা হয় অর্থাপত্তি।
অনুপলব্ধি : অনুপলব্ধিকে ভারতীয় দর্শনের জানার একটি অন্যতম উপায় হিসেবে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। সে কারণেই বলা হয় যে অনুপলব্ধি হল এমনই এক জ্ঞান লাভের প্রক্রিয়া, যার দ্বারা আমরা কোন বস্তুর অনুপস্থিতি বা অভাব সম্পর্কে সরাসরি ভাবে জ্ঞান লাভ করি। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, আমার লেখার টেবিলে যদি তাকিয়ে দেখি যে সেখানে আমার লেখার কলমটি নেই তাহলে তখন আমার ওই কলমের অভাব তথা অনুপস্থিতি জনিত জ্ঞানের উদ্ভব হয়।
** বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
(১) ভারতীয় দর্শনে মূল প্রমাণের সংখ্যা হল মোট -
(ক) তিনটি
(খ) চারটি
(গ) পাঁচটি
(ঘ) ছয়টি
(২) চার্বাক মতে প্রমাণ হল -
(ক) একটি
(খ) দুটি
(গ) তিনটি
(ঘ) চারটি
(৩) বৌদ্ধ মতে প্রমাণ হল -
(ক) একটি
(খ) দুটি
(গ) তিনটি
(ঘ) চারটি
(৪) জৈন মতে প্রমান হল -
(ক) দুটি
(খ) তিনটি
(গ) চারটি
(ঘ) পাঁচটি
(৫) সাংখ্য মতে প্রমাণ হল -
(ক) দুটি
(খ) তিনটি
(গ) চারটি
(ঘ) পাঁচটি
(৬) যোগ মতে প্রমাণ হল -
(ক) তিনটি
(খ) চারটি
(গ) পাঁচটি
(ঘ) ছয়টি
(৭) বৈশেষিক মতে প্রমাণ হল -
(ক) একটি
(খ) দুটি
(গ) তিনটি
(ঘ) চারটি
(৮) ন্যায় মতে প্রমাণের সংখ্যা হল -
(ক) দুটি
(খ) তিনটি
(গ) চারটি
(ঘ) পাঁচটি
(৯) প্রভাকর মীমাংসায় প্রমাণের সংখ্যা হল -
(ক) দুটি
(খ) তিনটি
(গ) চারটি
(ঘ) পাঁচটি
(১০) জ্ঞাত সত্য থেকে অজ্ঞাত কোনো মতে উপনীত হওয়াকে বলা হয় -
(ক) প্রত্যক্ষ
(খ) অনুমান
(গ) উপমান
(ঘ) শব্দ
(১১) সাদৃশ্য জ্ঞানের ভিত্তিতে যে জ্ঞান উঠে আসে, তা হল -
(ক) প্রত্যক্ষ
(খ) অনুমান
(গ) উপমান
(ঘ) শব্দ
(১২) প্রত্যক্ষ জ্ঞানের প্রকার হল -
(ক) একটি
(খ) দুটি
(গ) তিনটি
(১৩) নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিকে বলা হয় -
(ক) আপ্ত
(খ) ব্যাপ্ত
(গ) রপ্ত
(ঘ) সপ্ত
(১৪) নিজের জন্য কৃত অনুমানকে বলা হয় -
(ক) অনুমান
(খ) স্বার্থানুমান
(গ) পরার্থানুমান
(ঘ) ন্যায়পল্লব
(১৫) অপরের জন্য কৃত অনুমানকে বলা হয় -
(ক) অনুমান
(খ) স্বার্থানুমান
(গ) পরার্থানুমান
(ঘ) ন্যায়পল্লব
(১৬) জ্ঞানলাভের উপায় সম্পর্কে চার্বাকদের মতবাদ হল -
(ক) ব্যাপক
(খ) অত্যন্ত ব্যাপক
(গ) অতিসংকীর্ণ
(ঘ) বহুমুখী
(১৭) বৌদ্ধদর্শনের অর্থাপত্তি হল -
(ক) প্রমাণ
(খ) প্রমাণ নয়
(গ) প্রমা
(ঘ) জ্ঞান
(১৮) অনুপলব্ধি যে বিষয়ের জ্ঞানকে সূচিত করে, তা হল -
(ক) ভাব বিষয়ক
(খ) অভাব বিষয়ক
(গ) সন্দেহ বিষয়ক
(ঘ) স্বজ্ঞা বিষয়ক
(১৯) দ্রব্যের অভাবে হয় -
(ক) দ্রব্যাভাব
(খ) গুণাভাব
(গ) কর্মাভাব
(ঘ) সামান্যাভাব
(২০) গুণের অভাবে যা হয়, তা হল -
(ক) দ্রব্যাভাব
(খ) গুণাভাব
(গ) কর্মাভাব
(ঘ) সামান্যাভাব
(২১) কর্মের অভাবে যা হয়, তা হল -
(ক) বিশেষাভাব
(খ) সমবায়াভাব
(গ) কর্মাভাব
(ঘ) গুণাভাব
(২২) সামান্যের অভাবে দেখা যায় -
(ক) সামান্যাভাব
(খ) গুণাভাব
(গ) দ্রব্যভাব
(ঘ) কর্মাভাব
(২৩) মুরারি মিশ্রের মীমাংস সম্প্রদায় যাদের অনুগামী, তাঁরা হলনে -
(ক) সাংখ্যদের
(খ) নৈয়ায়িকদের
(গ) প্রভাকরদের
(ঘ) ভাট্টদের
(২৪) অনুপলব্ধি নামক প্রমাণটি হল -
(ক) প্রথম প্রমাণ
(খ) দ্বিতীয় প্রমাণ
(গ) পঞ্চম প্রমাণ
(ঘ) ষষ্ঠ প্রমাণ
(২৫) অনুমান নির্ভর করে যে প্রমাণের ওপর, তা হল -
(ক) উপমান
(খ) শব্দ
(গ) আগম
(ঘ) প্রত্যক্ষ
উত্তরসহ পিডিএফ (PDF) পেতে এইখানে ক্লিক করুন ঃ জ্ঞানলাভের ছয়টি পদ্ধতি - Chapter 3
অন্যান্য অধ্যায় একত্রে দেখতে ঃ Click Here...
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ