ভারতীয় দর্শন সম্প্রদায়গুলির শ্রেণীবিভাগঃ সংক্ষেপে - WB Class 11 New Syllabus Philosophy Suggestion 2025 - Chapter 2
ভারতীয় দর্শন সম্প্রদায়ের শ্রেণিবিভাগ
কোন এক সুদূর অতীতে আর্যরা ভারতবর্ষে এসে বসবাস শুরু করেন। ক্রমে ক্রমে তাদের সংস্কৃতি ভারতীয় সংস্কৃতি এবং তাদের দর্শন ভারতীয় দর্শন অভিহিত হয়। মুনি ঋষিদের বাণী গুলি শিষ্য পরম্পরায় লোকমুখে প্রচারিত হতো। একেই বলা হয় বেদ। শুনে শুনে মনে রাখতে হতো বলে একে শ্রুতিও বলা হয়। এই বেদ কে কেন্দ্র করে ভারতীয় দর্শন গড়ে উঠেছে। যারা বেদকে অভ্রান্ত বলে মনে করেন তাদের বলা হয় আস্তিক দর্শন বা বৈদিক দর্শন। আবার যারা বেদকে অভ্রান্ত বলে মনে করেন না তাদের বলা হয় নাস্তিক দর্শন অবৈদিক দর্শন।
আস্তিক দর্শন ছয় প্রকার। এই জন্যই কি ষড়দর্শনও বলা হয়। এই দর্শন হলো - ন্যায় দর্শন, বৈশেষিক দর্শন, সাংখ্য দর্শন, যোগ দর্শন, মীমাংসা-দর্শন এবং বেদান্ত দর্শন।
ন্যায় দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি গৌতম। বৈশেষিক দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি কণাদ। যোগ দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন পতঞ্জলি। মীমাংসা দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা করেন জৈমিনি। এবং বেদান্ত দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন বাদরায়ন ব্যাস।
নাস্তিক দর্শন তিন প্রকার, যথা - চার্বাক দর্শন, বৌদ্ধ দর্শন ও জৈন দর্শন। এদের মধ্যে চার্বাকরা হলেন চরমপন্থী নাস্তিক এবং বৌদ্ধ ও জৈনরা হলেন নরম পন্থী নাস্তিক। এছাড়াও আরও এক প্রকার দর্শন আছে যার সঙ্গে বেদের কোন সম্পর্ক নেই। এগুলি হল - শৈব দর্শন, শাক্ত দর্শন ও বৈষ্ণব দর্শন।
ভারতীয় দর্শনের সাধারণ বৈশিষ্ট্য :
বিশাল বটবৃক্ষের মতো ভারতীয় দর্শনে অসংখ্য শাখা প্রশাখা। তবুও বট বৃক্ষে অসংখ্য শাখা-প্রশাখা থাকলেও এর মূল যেমন এক তেমনি ভারতীয় দর্শনে অসংখ্য শাখা-প্রশাখা থাকলেও এদের মধ্যে একটি মূল সুর আছে এদের মধ্যে কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায়, এগুলি হল -
প্রথমত, ভারতীয় দার্শনিকরা আধ্যাত্মবাদ। এরা বলেন এই পরিদৃশ্যমান জগতের পেছনে একটি অদৃশ্য শক্তি আছে যা আমাদেরকে পরিচালনা করে। এই জন্য ভারতীয় দর্শন কে আধ্যাত্মবাদী দর্শন বলা হয়।
দ্বিতীয়ত, ভারতীয় দর্শন ব্যবহারিক দর্শন। ভারতীয় দার্শনিকের মতে "সর্বম্ দুঃখম্ এই জীবন দুঃখময়"। সাংখ্যকার কপিল বলেন মানুষ তৃপ্ত তাপে দগ্ধ। আধিভৌতিক, আধিদৈবিক এবং আধ্যাত্মিক দুঃখ। এই দুঃখ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিভিন্ন উপায়ে নির্দেশ করে। কাজেই ভারতীয় দর্শন ব্যবহারিক দর্শন।
তৃতীয়ত, বারবার দুঃখের কথা বলার জন্য ভারতীয় দর্শনকে অনেকে দুঃখবাদী দর্শন নামে অভিহিত করেন। কিন্তু একথা ঠিক নয়। কারণ ভারতীয় দার্শনিকরা শুধু দুঃখের কথা বলেননি কিভাবে দুঃখ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তাই নিয়েও আলোচনা করেছেন। কাজেই ভারতীয় দর্শন দুঃখবাদী দর্শন নয় বরঞ্চ আশাবাদী দর্শন।
চতুর্থত, অনেকে ভারতীয় দর্শনকে হিন্দু দর্শন নামে অভিহিত করেন। কারণ দুঃখ শুধু হিন্দু নয় সমগ্র মানবজাতির সমস্যা। কাজেই ভারতীয় দর্শন শুধু হিন্দুর নয় বরং সমগ্র মানবজাতির দর্শন।
পঞ্চমত, ভারতীয় দার্শনিকদের মতে এই জগতে একটি নৈতিক রঙ্গমঞ্চ। এখানে যে যেমন কাজ করবে তার ঠিক তেমনি ফল লাভ হবে। ভালো কাজের ফল পূর্ণরূপে এবং খারাপ কাজের ফল পাওয়া রূপে সঞ্চিত হয়। যদি এ জন্মে ফল ভোগ না হয় তবে তা পরের জন্মে ফল ভোগ করা হয়।
ষষ্ঠত, এই প্রসঙ্গে আসে জন্মান্তর বা পুনর্জন্মের কথা। দার্শনিকরা মনে করেন আত্মা অমর। জীর্ণ বসন্ত করে যেমন আমরা নতুন বস্ত্র পরিধান করি ঠিক তেমনি জীর্ণ দেহত্যাগ করে আমরা নতুন দেহ ধারণ করি এবং পূর্ব জন্মের কর্মফল ভোগ করি।
সপ্তমত, ভারতীয় দার্শনিকরা চর্যা নয় চর্চায় বিশ্বাসের।
অষ্টমত, ভারতীয় দার্শনিকরা চারটি প্রমাণ স্বীকার করেন, যথা - প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শব্দ।
নবমত, ভারতীয় দার্শনিকরা চারটি পুরুষার্থ স্বীকার করেন, যথা - ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ। এদের মধ্যে মোক্ষ হলো পরম পুরুষার্থ।
** বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
(১) ভারতীয় দর্শনের মূল ভিত্তিতে রয়েছে -
(ক) গীতা
(খ) বেদ
(গ) উপনিষদ
(ঘ) রামায়ণ
(২) নাস্তিকদের উপসম্প্রদায় হল -
(ক) একটি
(খ) দুটি
(গ) তিনটি
(ঘ) চারটি
(৩) নাস্তিক শিরোমণি বলা হয় -
(ক) বৌদ্ধকে
(খ) জৈনকে
(গ) চার্বাককে
(ঘ) বৈষ্ণবকে
(৪) বেদ-স্বতন্ত্র আস্তিক বলা হয় -
(ক) সাংখ্যকে
(খ) চার্বাককে
(গ) মীমাংসাকে
(ঘ) বেদান্তকে
(৫) বেদানুগত আস্তিক হল -
(ক) সাংখ্য
(খ) যোগ
(গ) মীমাংসা
(ঘ) ন্যায়
(৬) ন্যায়সূত্রের রচয়িতা হলেন -
(ক) মহর্ষি কপিল
(খ) মহর্ষি গৌতম
(গ) মহর্ষি কণাদ
(ঘ) মহর্ষি পতঞ্জল
(৭) বৈশেষিক সূত্রের রচয়িতা হলেন -
(ক) মহর্ষি কপিল
(খ) মহর্ষি গৌতম
(গ) মহর্ষি কণাদ
(ঘ) মহর্ষি পতঞ্জল
(৮) যোগসূত্রের রচয়িতা হলেন -
(ক) কপিল
(খ) গৌতম
(গ) পতঞ্জল
(ঘ) কণাদ
(৯) মীমাংসাসূত্রের রচয়িতা হলেন -
(ক) বাৎসায়ন
(খ) কপিল
(গ) জৈমিনি
(ঘ) অক্ষপাদ
(১০) বেদান্তসূত্রের রচয়িতা হলেন -
(ক) বাদরায়ন
(খ) কপিল
(গ) জৈমিনি
(ঘ) অক্ষপাদ
(১১) কেবলাদ্বৈতবাদের প্রবক্তা হলেন -
(ক) শংকর
(খ) রামানুজ
(গ) নিম্বার্ক
(ঘ) মধ্ব
(১২) বিশিষ্টাদ্বৈতবাদের প্রবক্তারূপে উল্লেখ করা হয় -
(ক) আচার্য শংকরকে
(খ) আচার্য রামানুজকে
(গ) আচার্য মধ্বকে
(ঘ) আচার্য নিম্বার্ককে
(১৩) নাস্তিকদের মধ্যে জড়বাদী সম্প্রদায় বলা হয় যাঁদের তাঁরা হলেন -
(ক) চার্বাক
(খ) বৌদ্ধ
(গ) জৈন
(ঘ) এদের সবগুলিই
(১৪) ‘আস্তিক’ কাদের বলা হয় -
(ক) ঈশ্বরে বিশ্বাসীদের
(খ) বেদের প্রামাণ্যে বিশ্বাসীদের
(গ) পুরুষার্থে বিশ্বাসীদের
(ঘ) পরলোকে বিশ্বাসীদের
(১৫) ‘নাস্তিক’ কাদের বলা হয় -
(ক) বেদের প্রামাণ্যে অবিশ্বাসীদের
(খ) ঈশ্বরে অবিশ্বাসীদের
(গ) মোক্ষে অবিশ্বাসীদের
(ঘ) পরলোকে অবিশ্বাসীদের
(১৬) আস্তিক অথচ ঈশ্বরে অবিশ্বাসী কোন্ সম্প্রদায়?
(ক) সাংখ্য
(খ) যোগ
(গ) ন্যায়
(ঘ) বৈশেষিক
(১৭) ভারতীয় দর্শনে আস্তিক সম্প্রদায়ের সংখ্যা কয়টি?
(ক) তিনটি
(খ) সাতটি
(গ) ছয়টি
(ঘ) চারটি
(১৮) যোগদর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কে?
(ক) বুদ্ধদেব
(খ) শংকরাচার্য
(গ) রামানুজ
(ঘ) পতঞ্জলি
(১৯) ‘পৌরুষেয়’ শব্দের অর্থ হল -
(ক) পুরুষের রচনা
(খ) পুরুষের পৌরুষ
(গ) পুরুষের সাধনা
(ঘ) পুরুষের ঘটনা
(২০) বেদের শেষ বা উপনিষদকে বলা হয় -
(ক) সাংখ্য
(খ) মীমাংসা
(গ) যোগ
(ঘ) বেদান্ত
(২১) পুরুষার্থ কী?
(ক) জীবের কাম্যবস্তু
(খ) সচেতন আত্মার কাম্যবস্তু
(গ) সমস্ত মানুষের কাম্যবস্তু
(ঘ) আর্য ঋষিদের কাম্যবস্তু
(২২) ভারতীয় দর্শনে যথার্থ জ্ঞানকে কী বলে?
(ক) প্রমা
(খ) প্রমাণ
(গ) প্রমেয়
(ঘ) প্রমাতা
(২৩) প্রমাণ কাকে বলে?
(ক) যথার্থ জ্ঞানকে
(খ) যথার্থ জ্ঞানের উপায়কে
(গ) যথার্থ জ্ঞানের বিষয়কে
(ঘ) যথার্থ জ্ঞানের অন্বেষণকে
(২৪) প্রমেয় কাকে বলে?
(ক) জ্ঞানকে
(খ) জ্ঞানের বিষয়কে
(গ) জ্ঞানের উপায়কে
(ঘ) জ্ঞানের পদ্ধতিকে
(২৫) ভারতীয় মতে প্রমাতা হল -
(ক) কর্ম
(খ) জ্ঞাতা
(গ) জ্ঞান
(ঘ) প্রমেয়
(২৬) অনুভব কাকে বলে? -
(ক) জ্ঞানের বিষয়ের অবহিতি
(খ) বিষয়ের প্রকার
(গ) বিষয়ের প্রমাণ
(ঘ) বিষয়ের পদ্ধতি
(২৭) “কাম-ই হল মুখ্য পুরুষার্থ” - কাদের মত?
(ক) চার্বাকদের
(খ) বৌদ্ধদের
(গ) জৈনদের
(ঘ) সাংখ্যদের
(২৮) চতুর্বর্গ কী?
(ক) ধর্ম, অর্থ, বুদ্ধি ও মুক্তি
(খ) বুদ্ধি, শক্তি, মুক্তি ও ধর্ম
(গ) বুদ্ধি, মুক্তি, শক্তি ও কাম
(ঘ) ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ
(২৯) স্মৃতি কাকে বলে?
(ক) মনে রাখাকে
(খ) সংস্কার থেকে উৎপন্ন জ্ঞানকে
(গ) বিপর্যয় থেকে উৎপন্ন জ্ঞানকে
(ঘ) তর্ক থেকে উৎপন্ন জ্ঞানকে
(৩০) ভারতীয় দর্শনে কয়টি পুরুষার্থ স্বিকার করা হয়েছে?
(ক) একটি
(খ) দুটি
(গ) তিনটি
(ঘ) চারটি
(৩১) ‘তর্ক’ -কে বলা হয় -
(ক) সংশয়
(খ) বিপর্যয়
(গ) প্রমা
(ঘ) অপ্রমা
(৩২) সংস্কার থেকে উৎপন্ন জ্ঞানকে বলা হয় -
(ক) অনুভব
(খ) স্মৃতি
(গ) অনুমান
(ঘ) কল্পনা
(৩৩) একটি বেদবিরোধী দর্শন হল -
(ক) ন্যায়
(খ) অদ্বৈত বেদান্ত
(গ) বৌদ্ধ
(ঘ) বৈশেষিক
(৩৪) ‘বেদ’ শব্দটি যে অর্থে ব্যবহৃত তা হল -
(ক) ব্রহ্মজ্ঞান
(খ) ব্রহ্মের স্বরূপ
(গ) ব্রহ্মের উপাদান
(ঘ) ব্রহ্মের আলোচনা
(৩৫) ‘ষড়দর্শন’ হল ভারতীয় -
(ক) নাস্তিক সম্প্রদায়
(খ) আস্তিক সম্প্রদায়
(গ) সংশয়বাদী সম্প্রদায়
(ঘ) বিচারবাদী সম্প্রদায়
(৩৬) কর্মবাদে বিশ্বাসী নাস্তিক সম্প্রদায় হল -
(ক) চার্বাক
(খ) জৈন
(গ) বৌদ্ধ
(ঘ) সবগুলিই সঠিক
উত্তরসহ পিডিএফ (PDF) পেতে এইখানে ক্লিক করুন ঃভারতীয় দর্শন সম্প্রদায়গুলির শ্রেণীবিভাগ - Chapter 2
অন্যান্য অধ্যায় একত্রে দেখতে ঃ Click Here...
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ