দর্শন শব্দের অর্থ - WB Class 11 New Syllabus Philosophy Suggestion 2025 - Chapter 1
দর্শন শব্দের অর্থ
দর্শন চিন্তার প্রাচীনতম স্থান হলো ভারতবর্ষ। সে কারণেই ভারতীয় দর্শনকে দর্শন চিন্তার প্রাচীনতম অধ্যায় রূপে গণ্য করা যায়। যিশুখ্রিস্টের জন্মের প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বে এই ভারতবর্ষেই জীবন ও জগৎ সম্পর্কিত বিভিন্ন রকম দার্শনিক চিন্তার ও জিজ্ঞাসা উদয় হয়। এই সময়েই ভারতবর্ষে আর্যদের আগমন ঘটে। এর অল্প কিছু পরেই রচিত হয় রিক সংগীতার বিভিন্ন স্তোত্র। স্বাভাবিকভাবেই বলা যায় যে ভারতীয় দার্শনিক চিন্তাধারার শিকড় অত্যন্ত প্রাচীনকালেই প্রথিত।
ভারতীয় দর্শনের যথাযথ ধারণাটিকে উল্লেখ করতে হলে তার ব্যুৎপত্তিগত অর্থটিকে উন্মোচিত করা প্রয়োজন। ব্যুৎপত্তিগত অর্থে দর্শন শব্দটি দৃশ ধাতুর সঙ্গে অনট প্রত্যয় যোগ করে উদ্ভূত হয়েছে। দৃশ ধাতুর অর্থ হল দেখা। কিন্তু এই দেখা আমাদের শুধু চক্ষু নামক এমডি এর বাহ্য দেখা নয়। এই হল অন্তর দর্শন মূলক সত্যের উপলব্ধি বা দেখা। ভারতীয় দর্শন তাই চিরকাল সত্যের উপলব্ধি করতে চেয়েছেন। ভারতীয় আর্য ঋষিগণ তাদের এরূপ উপলব্ধিগত সত্যকেই ভারতীয় দর্শনের মধ্যে প্রতিফলিত করেছেন। ভারতীয় আর্য ঋষিদের উপলব্ধিগুলির অবশ্যই ভিন্ন ভিন্ন এবং সে কারণেই ভারতীয় দর্শনের মধ্যে বিভিন্ন রকম সম্প্রদায়ের আবির্ভাব হয়েছে। ভারতীয় দর্শনে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আবির্ভাব হলেও এ কথা বলা ভালো যে ভারতীয় দর্শন হলো বিভিন্ন রকম ভারতীয় সম্প্রদায়ের এক শৃঙ্খলা বদ্ধ সমষ্টি। ভারতীয় দর্শন তাই জীবন ও জগৎ সম্পর্কিত এক সামগ্রিক উপলব্ধি।
দর্শন শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ফিলোসফি। এই ফিলোসফি শব্দটি প্রথম উল্লেখ করেন প্রখ্যাত গ্রিক দার্শনিক পিথাগোরাস। দর্শন শব্দটিকে বোঝাতে তাই সাধারণত ফিলোজফি শব্দটিরই উল্লেখ করা হয়। এই ফিলোসফি শব্দটি দুটি গ্রিক শব্দের সমন্বয়ে উদ্ভূত হয়েছে। এই দুটি শব্দের একটি হল ফিলোস এবং অপরটি হল সোফিয়া। ফিলোস শব্দটির অর্থ হল অনুরাগ বা ভালোবাসা এবং সোফিয়া শব্দের অর্থ হল জ্ঞান বা নলেজ। সুতরাং শব্দতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখ করা যায় যে জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ বা ভালোবাসায় হলো ফিলোসফি। আর যিনি জ্ঞানের প্রতি অনুরাগেই তিনিই হলেন দার্শনিক বা ফিলোসফার। সাধারণভাবে আমরা দর্শন শব্দটির প্রতিশব্দ রূপে ফিলোজফি শব্দটি উল্লেখ করে থাকি। কিন্তু দর্শন ও ফিলোজফি শব্দ দুটি কখনোই সমার্থক রূপে গণ্য হতে পারে না। কারণ এই দুটি শব্দের শব্দগত বিশ্লেষণই তা প্রমাণ করে দেয়। কারণ দর্শন যেখানে সত্যবুদ্ধির কথা ঘোষণা করে সেখানে ফিলোসফি শুধুমাত্র জ্ঞানের প্রতি অনুরাগের কথা বলে। এই দুটি বিষয়ের প্রকৃতি তাই ভিন্ন ভিন্ন। তা সত্ত্বেও আমরা আলোচনার বিষয়বস্তু আলোচনার পদ্ধতি এবং মানুষের জীবনের ক্ষেত্রে এদের একই রকম প্রভাব লক্ষ্য করে শব্দ দুটিকে পারস্পরিকভাবে প্রতিশব্দ রূপে গ্রহণ করে থাকি।
দর্শন শব্দটির প্রকৃত অর্থের মাধ্যমে আমরা জগত ও জীবনের চরম সত্য তথা তথ্যকে উপলব্ধি করতে চাই। ভারতীয় দার্শনিকদের কাছে তাই দর্শন শব্দটির অর্থ হল সত্য দর্শন বা তত্ত্ব দর্শন। এরূপ বিষয়কে শুধুমাত্র বুদ্ধি বা প্রতিবার দ্বারা অনুভব করতে হয়। এরূপ অনুভবগত উপলব্ধি হলো দর্শন। আমাদের জীবন এবং জগতের প্রকৃত স্বরূপ কে বোঝানোর জন্য প্রয়োজন এই ধরনের সত্য দর্শন বা তত্ত্ব দর্শন। যিনি জীবন ও জগতের এরূপ সত্য বা তথ্যকে দর্শন বা উপলব্ধি করতে সক্ষম তিনি হলেন দার্শনিক। সে কারণেই বলা যেতে পারে যে একজন চক্ষুহীন অন্ধ ব্যক্তিও তার বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে জীবন ও জগতের সত্য বা তত্ত্বকে উপলব্ধি করতে পারেন। এবং তিনিও দার্শনিক রূপে গণ্য হতে পারেন।
আমরা যে জগতে বাস করি সেই জগত বৈচিত্র্যপূর্ণ। এই বৈচিত্র্যময় জগতে বিস্ময়ের কোন শেষ নেই। আমরা দেখি আমাদের মাথার উপর দিগন্ত বিস্তৃত নক্ষত্র ঘটিত আকাশ দেখি নানা রকম বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রাকৃতিক ঘটনা রাজি এবং তাদের সংঘাতপূর্ণ আচার-আচরণ। এই বৈচিত্র্যময় জগতে তাই বিস্ময়ের কোন অন্ত নেই। মানুষ যেদিন সভ্যতার প্রথম স্পর্শ লাভ করে, সেদিন থেকেই তার মন অত্যন্ত বিস্ময়ে ভরে ওঠে। জগতের বিভিন্ন ঘটনা ও দৃশ্যাবলী মানুষের মনে জাগায় গভীর বিস্ময় বোধক। এই বিস্ময়বোধ মানুষের মনে জাগিয়ে তোলে অত্যন্ত জিজ্ঞাসা। এই সমস্ত জিজ্ঞাসা উত্তর খোঁজার মধ্য দিয়েই শুরু হয় দার্শনিক চিন্তন। প্রখ্যাত গ্রিক দার্শনিক প্লেটোকে অনুসরণ করে তাই বলা যায় “বিস্ময়ই হল দর্শনের জনক”।
** বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
(১) দর্শনের উৎপত্তি হয়েছে -
(ক) বুদ্ধি থেকে
(খ) অভিজ্ঞতা থেকে
(গ) ব্যবহারিক জীবন থেকে
(ঘ) বিস্ময় থেকে
(২) ‘Philosophy’ শব্দটি প্রথম উল্লেখ করেন -
(ক) থেলস
(খ) পিথাগোরাস
(গ) জেনো
(ঘ) অ্যারিস্টট্ল
(৩) ভারতীয় দর্শন চিন্তা শুরু হয় জিশুখ্রিস্টের জন্মের প্রায় -
(ক) এক হাজার বছর পরে
(খ) এক হাজার বছর আগে
(গ) দুই হাজার বছর পরে
(ঘ) দুই হাজার বছর আগে
(৪) রামায়ণ ও মহাভারত রচিত হয়েছে -
(ক) বৈদিক যুগে
(খ) মহাকাব্যিক যুগে
(গ) সূত্র যুগে
(ঘ) সম্প্রদায় যুগে
(৫) ভারতীয় দর্শনে যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যায় তা হল -
(ক) রামায়ণ
(খ) মহাভারত
(গ) উপনিষদ
(ঘ) বেদ
(৬) যাঁরা বেদ-এ বিশ্বাসী তাঁরা হলেন -
(ক) আস্তিক
(খ) নাস্তিক
(গ) সন্দেহবাদী
(ঘ) ঈশ্বরবাদী
(৭) ভারতীয় ‘হিন্দু’ শব্দটির উদ্ভব ঘটেছে যে শব্দ থেকে তা হল -
(ক) বিন্দু
(খ) সিন্ধু
(গ) আর্য
(ঘ) অনার্য
(৮) ভারতীয় হিন্দুদের বলা হয় -
(ক) আর্য
(খ) অনার্য
(গ) ধনাঢ্য
(ঘ) বর্ণাঢ্য
(৯) আর্য দর্শনের অপর নাম হল -
(ক) বৈদিক দর্শন
(খ) অবৈদিক দর্শন
(গ) সিন্ধু দর্শন
(ঘ) মায়া দর্শন
(১০) ভারতীয় দর্শনকে হিন্দু দর্শন বললে তার ব্যাপ্তি -
(ক) বেড়ে যায়
(খ) কমে যায়
(গ) একই থাকে
(ঘ) এদের যে-কোনো একটি
(১১) “মানুষ জন্মসূত্রেই দার্শনিক” - বিবৃতিটি হল -
(ক) সত্য
(খ) মিথ্যা
(গ) সংশয়াত্মক
(ঘ) কোনোটিই নয়
(১২) ঈশ্বর বিশ্বাসী হলেই আস্তিক হবে - এরূপ বিষয়টি হল -
(ক) যথার্থ
(খ) অযথার্থ
(গ) সংশয়পূর্ণ
(ঘ) স্বতঃসত্য
(১৩) ‘দর্শন’ শব্দটির অর্থ কী?
(ক) দেখা
(খ) সত্য উপলব্ধি
(গ) সত্যের প্রতি অনুরাগ
(ঘ) জ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা
(১৪) “Philosophy” শব্দটির অর্থ কী?
(ক) সত্যের প্রতি অনুরাগ
(খ) সত্যদর্শন
(গ) তত্ত্বদর্শন
(ঘ) জীবনের উপলব্ধি
(১৫) ‘বেদ’ শব্দের অর্থ কী?
(ক) ব্রহ্মজ্ঞান
(খ) ব্রহ্মের স্বরূপ
(গ) ব্রহ্মের অস্তিত্ব
(ঘ) ব্রহ্মের আলোচনা
(১৬) বেদ কয়টি?
(ক) একটি
(খ) দুইটি
(গ) তিনটি
(ঘ) চারটি
(১৭) ঋক,যজু, সাম ও অথর্ব - এই চারটি বেদের বিভাগকর্তা কে?
(ক) ব্যাসদেব
(খ) কামদেব
(গ) গৌড়পাদ
(ঘ) গোবিন্দপাদ
(১৮) ব্যাসদেবের অপর নাম কী?
(ক) বেদব্যাস
(খ) ঔলুক্য
(গ) বাৎস্যায়ন
(ঘ) ভার্গব
(১৯) কাকে বেদান্ত বলা হয়?
(ক) শারীরিক ভাষ্যকে
(খ) শ্রীভাষ্যকে
(গ) উপনিষদকে
(ঘ) শ্রীমদ্ভগবদ্ গীতাকে
(২০) ‘উপনিষদ’ শব্দটির অর্থ কী?
(ক) গুরুর সামনে বসা
(খ) ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করা
(গ) ব্রহ্মজ্ঞানের জন্য গুরুর সামনে নিবিষ্টচিত্তে বসা
(ঘ) গুরুর ভজন করা
(২১) ভারতীয় দর্শনে সম্প্রদায়গুলিকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায়?
(ক) দুটি
(খ) তিনটি
(গ) চারটি
(ঘ) ছয়টি
(২২) ‘’বৈদিক’ শব্দটির অর্থ হল -
(ক) বেদ বিরুদ্ধ
(খ) বেদ স্বতন্ত্র
(গ) বেদ সম্মত
(ঘ) বেদ বহির্ভূত
(২৩) ‘অবৈদিক’ শব্দটির অর্থ হল -
(ক) বেদ সম্মত
(খ) বেদ নিঃসৃত
(গ) বেদ বিরুদ্ধ
(ঘ) বেদ অন্তর্ভুক্ত
(২৪) একটি বৈদিক দার্শনিক সম্প্রদায়ের উদাহরণ হল -
(ক) চার্বাক
(খ) বৌদ্ধ
(গ) জৈন
(ঘ) মীমাংসা
(২৫) বেদের ‘মন্ত্র’ অংশের অপর নাম হল -
(ক) যন্ত্র
(খ) সংহিতা
(গ) মধুমিতা
(ঘ) সহিষ্ণুতা
(২৬) ‘দর্শন’ শব্দের ব্যুৎপত্তি হল -
(ক) দৃশ+অনট
(খ) দৃশ+সনট
(গ) দৃশ+টনট
(ঘ) দৃশ+ভনট
উত্তরসহ পিডিএফ (PDF) পেতে এইখানে ক্লিক করুন ঃ দর্শন শব্দের অর্থ - Chapter 1
অন্যান্য অধ্যায় একত্রে দেখতে ঃ Click Here...
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ