অভিজ্ঞতাবাদ - লক, বার্কলে, হিউম - WB Class 11 New Syllabus Philosophy Suggestion 2025 - Chapter 2.1
জ্ঞানের উৎস
অভিজ্ঞতাবাদ
দর্শনের অন্যতম শাখা জ্ঞান বিদ্যা আলোচনা করা হয় জ্ঞান কাকে বলে? জ্ঞানের স্বরূপ কি? জ্ঞান আদৌ সম্ভব কিনা? জ্ঞানের সম্ভাব্যতা নিয়ে প্রথম প্রশ্ন তোলেন ইমানুয়েল কান্ট। এইজন্য কান্টেকে জ্ঞান বিদ্যার জনক বলা হয়। জ্ঞানের উৎস নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে পাশ্চাত্য দার্শনিক কে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যান। কারো কারো মতে আমাদের যাবতীয় জ্ঞান হয় অভিজ্ঞতা থেকে। আবার কারও মতে আমাদের যাবতীয় কেন সহজাত। যাদের মতে আমাদের যাবতীয় জ্ঞান হয় অভিজ্ঞতা থেকে তাকে বলে অভিজ্ঞতাবাদ বা Emperialism। আবার যাদের মতে আমাদের যাবতীয় জ্ঞান সহজাত বা বুদ্ধি থেকে তাদের মতবাদ কে বলা হয় বুদ্ধিবাদ বা Rationalism।
অভিজ্ঞতাবাদ অনুযায়ী অভিজ্ঞতাই জ্ঞানের একমাত্র উৎস। এই মতবাদের মূল প্রবক্তা হলেন প্রোটোগোরাস, গর্জিয়াস, এপিকিউরাস, অ্যারিস্টোপাস প্রমুখ। আধুনিক যুগে ব্রিটিশ দার্শনিক জন লক অভিজ্ঞতাবাদ কে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন ঈশ্বর যদি আমাদের জন্মের সময় সমস্ত জ্ঞান দিয়ে দেন তাহলে আমরা সবাই সমান বুদ্ধির অধিকারী হতাম বা সব বিষয়ে সহমত পোষণ করতাম। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয়। বরঞ্চ জন্মের সময় মানুষের মন থাকে সাদা কাগজের মতো (TabulaRasa) । বিভিন্ন অভিজ্ঞতার ছাপ সেই কাগজের উপর পড়ে আমাদের অভিজ্ঞতা হয়। তাই লকের মতে কোন ধারনাই সহজাত নয়।
লকের মতে ধারণা দুই প্রকার। যথা - সরল ধারণা ও জটিল ধারণা।
সরল ধারনাগুলি মনে প্রবেশ করার সময় কোন নিষ্ক্রিয় থাকে। মন সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং বিক্রিয়া করে একটি জটিল ধারণার সৃষ্টি করে। এই জটিল ধারণার সঙ্গে বস্তুর হুবহু মিল হলে বস্তু সম্পর্কে আমাদের সঠিক জ্ঞান হয়, নতুবা জ্ঞানটি ভ্রান্ত হয়। লক সরাসরি বলেন বুদ্ধিতে এমন কিছু নেই যা পূর্বে ইন্দ্রিয়তে ছিল না।
লক অভিজ্ঞতাবাদী হয়েও ঈশ্বর, আত্মা ও দ্রব্যকে স্বীকার করেন। তিনি বলেন ঈশ্বর হলেন জগতের পরিচালক। আত্মা হলো বিভিন্ন ক্রিয়ার আধার এবং দ্রব্য হল বিভিন্ন গুণের আধার। লক দ্রবের গুণকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন, যথা - মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণ।
মুখ্য গুণ : যে গুণগুলি বস্তুগত বা স্থায়ী গুণ কাকে বলে মুখ্য গুণ। যেমন - বিস্তৃতি, আকার, আয়তন, জ্ঞান, পরিমাণ ইত্যাদি।
গৌণ গুণ : যে গুণগুলি ব্যক্তিগত বা পরিবর্তনশীল তাকে বলে গৌণ গুণ। যেমন - রূপ, রস, গন্ধ ইত্যাদি।
পরবর্তী দার্শনিক জর্জ বার্কলে লকের গুণ এর শ্রেণীবিভাগকে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন সব গুনই আসলে গৌণ গুণ। কারণ সব গুণই পরিবর্তনশীল। বার্কলে সরাসরি বলেন Esse-Est- Percipi বা আমি প্রত্যক্ষ করি তাই আছে। অর্থাৎ বস্তুর অস্তিত্ব আমার দেখার উপর নির্ভর করে। এইজন্য বার্কলে ঈশ্বর বা দ্রব্যের অস্তিত্ব স্বীকার করেননি। তার মতে দ্রব্য হল ব্যক্তি মনের ধারণা মাত্র অর্থাৎ শুধুমাত্র আমি আছি এবং আমার ধারণা আছে। প্রশ্ন উঠে যখন আমি বস্তুকে প্রত্যক্ষ করি না তখন বস্তুর অস্তিত্ব কোথায়। অর্থাৎ বস্তুর অস্তিত্ব ধারাবাহিকতা কিভাবে সম্ভব। এর উত্তরে বাকলে বলতে বাধ্য হন যখন আমি বস্তুকে প্রত্যক্ষ করি না তখন তাকে ঈশ্বর প্রত্যক্ষ করেন। এইভাবে বার্কলে অভিজ্ঞতাবাদী হয়েও ঈশ্বর এবং আত্মাকে স্বীকার করেন।
পরবর্তী দার্শনিক ডেভিড হিউম ছিলেন চরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদী। তিনি অভিজ্ঞতার বাইরে একপাও যেতে রাজি হননি। সেই জন্য তিনি ঈশ্বর আত্মা দ্রব্য কোন কিছুতেই স্বীকার করেননি। তার মতে ঈশ্বরের কল্পনা হলো একটি দুর্ভেদ্য উদ্ভট কল্পনা, আত্মা হলো বিভিন্ন ক্রিয়ার সমষ্টি মাত্র এবং দ্রব্য হল বিভিন্ন গুণের সমষ্টি মাত্র। হিউম সবকিছুকে সন্দেহ করার নির্দেশ দেন এমনকি সন্দেহ করতে করতে তিনি শেষ পর্যন্ত নিজের অস্তিত্ব কেউ সন্দেহ করে। এইজন্য দর্শনের ইতিহাসে তাকে সংশয়বাদী দার্শনিক বলা হয়।
** বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
(১) একটি আপতিক বচনের উদাহরণ হল -
(ক) লাল লালই
(খ) লাল নয় লাল
(গ) সবুজ হয় হলুদ
(ঘ) মানুষ স্বার্থপর
(২) উদ্দেশ্য থেকে বিধেয় পাওয়া না গেলে তা হবে -
(ক) বিশ্লেষক
(খ) পরতঃসাধ্য
(গ) পূর্বতঃসিদ্ধ
(ঘ) আপতিক
(৩) কার মতে আমাদের কোনো ধারণাই সহজাত নয়?
(ক) স্পিনোজা
(খ) ব্রাডলি
(গ) বার্কলে
(ঘ) লক
(৪) “ইন্দ্রিয়জ হল ধারণার উৎস” - কার অভিমত?
(ক) লক
(খ) বার্কলে
(গ) হিউম
(ঘ) কান্ট
(৫) “প্রত্যক্ষণ হল দু-প্রকার - ইন্দ্রিয়জ ও ধারণা” - কার মত?
(ক) হিউম
(খ) বার্কলে
(গ) ব্রাডলি
(ঘ) লক
(৬) কার মতে “গণিতের জ্ঞান আরোহমূলক”?
(ক) দেকার্ত
(খ) মিল
(গ) স্পিনোজা
(ঘ) কান্ট
(৭) অভিজ্ঞতাবাদ কাকে বলে?
(ক) বুদ্ধি যেখানে জ্ঞানের উৎস
(খ) অভিজ্ঞতা যেখানে জ্ঞানের উৎস
(গ) ইন্দ্রিয় সংবেদন যেখানে অচল
(ঘ) যে মতবাদে অতীন্দ্রিয় সত্তার কথা বলা হয়
(৮) “জন্মের সময় মানুষের মন থাকে সাদা কাগজের মতো” - একথা বলেছেন -
(ক) দেকার্ত
(খ) স্পিনোজা
(গ) লাইবনিজ
(ঘ) লক
(৯) হিউমের অভিজ্ঞতাবাদকে বলা হয় -
(ক) চরমপন্থী
(খ) নরমপন্থী
(গ) মধ্যপন্থী
(ঘ) কোনোটিই নয়
(১০) “অতীন্দ্রিয় সত্তার জ্ঞান সম্ভব নয়” - একথা বলেছেন -
(ক) দেকার্ত
(খ) স্পিনোজা
(গ) লাইবনিজ
(ঘ) কান্ট
(১১) জন লক হলেন -
(ক) ব্রিটিশ অভজ্ঞতাবাদী
(খ) ফরাসি অভিজ্ঞাতাবাদী
(গ) গ্রিক বুদ্ধিবাদী
(ঘ) জার্মান বুদ্ধিবাদী
(১২) হিউম হলেন -
(ক) স্বজ্ঞাবাদী
(খ) বুদ্ধিবাদী
(গ) সংশয়বাদী
(ঘ) প্রতিভাবাদী
(১৩) “সহজাত ধারণার ধারণা অবান্তর”- একথা বলেছেন -
(ক) লক
(খ) বার্কলে
(গ) হিউম
(ঘ) কান্ট
(১৪) “আবশ্যিক জ্ঞান বলে কিছুই নেই” - একথা বলেছেন -
(ক) লক
(খ) মিল
(গ) বার্কলে
(ঘ) হিউম
(১৫) “ধারণা গঠনের ক্ষেত্রে আমাদের মন নিষ্ক্রিয় থাকে” - একথা বলেছেন -
(ক) দেকার্ত
(খ) স্পিনোজা
(গ) লক
(ঘ) হিউম
(১৬) “বুদ্ধিতে এমন কিছুই নেই যা আগে ইন্দ্রিয়ের মধ্যে ছিল না।” - একথা বলেছেন -
(ক) লাইবনিজ
(খ) লক
(গ) হিউম
(ঘ) দেকার্ত
(১৭) মনাড বা চিৎ পরমাণুর অস্তিত্ব মেনেছেন -
(ক) দেকার্ত
(খ) চারটি
(গ) লাইবনিজ
(ঘ) হিউম
(১৮) ‘জানা’ ক্রিয়াপদের অর্থ হল -
(ক) তিনটি
(খ) চারটি
(গ) পাঁচটি
(ঘ) ছয়টি
(১৯) কোন্টি কর্মকৌশোল অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?
(ক) আমি রামকে জানি
(খ) আমি সাঁতার কাটতে জানি
(গ) আমি জানি যে পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে
(ঘ) রহিম জানে যে ৭ + ৫ = ১২
(২০) “ফুলটি হয় লাল” - বচনটি হল একটি -
(ক) মূল্য নিরূপক বচন
(খ) বর্ণনাত্মক বচন
(গ) প্রশ্নসূচক বচন
(ঘ) নর্দেশমূলক বচন
(২১) “প্রাকৃতিক দৃশ্যটি সুন্দর” - বাক্যটি হল -
(ক) বর্ণনাত্মক
(খ) প্রশ্নসূচক
(গ) মূল্যসূচক
(ঘ) আবেগসূচক
(২২) “প্রকৃত জ্ঞান হল আবশ্যিক ও তথ্যবিষয়ক” - একথা বলেন -
(ক) দেকার্ত
(খ) লক
(গ) কান্ট
(ঘ) রাসেল
(২৩) “বুদ্ধিতে এমন কিছুই নেই যা আগে ইন্দ্রিয়ে ছিল না” - উক্তিটি হল লাইবনিজের এটা -
(ক) সত্য
(খ) মিথ্যা
(গ) সংশয়াত্মক
(ঘ) কোনোটিই নয়
(২৪) “ইন্দ্রিয়জ ছাড়া ধারণা হতে পারে না” - বিবৃতিটি হল -
(ক) সংশয়াত্মক
(খ) মিথ্যা
(গ) সত্য
(ঘ) কোনোটিই নয়
(২৫) “এমন কোনো জ্ঞান নেই যা অভিজ্ঞতাপ্রসূত নয়” - বলেছেন -
(ক) মিল
(খ) বেন্থাম
(গ) লক
(ঘ) স্পিনোজা
(২৬) ২ + ২ = ৪ - এটি যে বিষয়ক জ্ঞান, তা হল -
(ক) ধারণার সম্বন্ধ বিষয়ক
(খ) তথ্য বিষয়ক
(গ) বিবৃতি বিষয়ক
(ঘ) ঘটনা বিষয়ক
(২৭) “কোনো ত্রিভুজ নয় বৃত্ত” - এরূপ বাক্যটি হল -
(ক) পূর্বতঃসিদ্ধ বিশ্লেষক
(খ) পূর্বতসিদ্ধ সংশ্লেষক
(গ) পরতঃসাধ্য সংশ্লেষক
(ঘ) পরতঃসাধ্য বিশ্লেষক
(২৮) “সব কাক হয় কালো” - এরূপ বাক্যটি হল -
(ক) পূর্বতঃসিদ্ধ বিশ্লেষক
(খ) পূর্বতঃসিদ্ধ সংশ্লেষক
(গ) পরতঃসাধ্য সংশ্লেষক
(ঘ) পরতঃসাধ্য বিশ্লেষক
(২৯) অভিজ্ঞতাবাদীরা সহজাত ধারণাকে -
(ক) স্বীকার করেছেন
(খ) অস্বীকার করেছেন
(গ) গ্রহণ করেছেন
(ঘ) এদের কোনোটিই নয়
(৩০) জানার সবল ও দুর্বল অর্থের মধ্যে পার্থক্য করেছেন -
(ক) বার্কলে
(খ) হিউম
(গ) জনসন
(ঘ) জন হসপার্স
(৩১) “সমস্ত মানুষের মনে সহজাত ধারণার কোনো অস্তিত্ব নেই” - একথা বলেছেন -
(ক) মিল
(খ) হিউম
(গ) কান্ট
(ঘ) লক
(৩২) “সকল মানুষ হয় মরণশীল” - বাক্যটি হল -
(ক) পরতঃসাধ্য
(খ) সংশ্লেষক
(গ) অবশ্যম্ভব
(ঘ) পরতঃসাধ্য-সংশ্লেষক-অব্যশ্যম্ভব বচন
উত্তরসহ পিডিএফ (PDF) পেতে এইখানে ক্লিক করুন ঃ অভিজ্ঞতাবাদ - লক, বার্কলে, হিউম
অন্যান্য অধ্যায় একত্রে দেখতে ঃ Click Here...
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ