বুদ্ধিবাদ - ডেকার্ট, স্পিনোজা, লাইবনিজ - WB Class 11 New Syllabus Philosophy Suggestion 2025 - Chapter 2.2
বুদ্ধিবাদ
বুদ্ধিবাদ অনুসারে বুদ্ধি জ্ঞানের একমাত্র উৎস। এই মতবাদের মূল প্রবক্তা হলেন - সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টোটল প্রমুখ। বুদ্ধিবাদীরা বলেন অভিজ্ঞতায় যেসব জ্ঞান আমরা পাই তা প্রায় ভ্রান্ত হয়। কারণ ইন্দ্রিয় যেকোনো সময় আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারে। কিন্তু যে জ্ঞান সহজাত তা কখনোই আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারে না। যেমন আজ গরম পড়েছে এর বিরুদ্ধ কথা ভাবা যায় যে আজ গরম পড়েনি। কিন্তু ২+২=৪ এর বিরুদ্ধে ভাবা সম্ভব নয়। ডেকার্ট বলেন সঠিক জ্ঞানের লক্ষণ হলো স্বচ্ছতা এবং স্পষ্টতা। সেদিন থেকে গণিতের জ্ঞানই হলো আদর্শ জ্ঞান এবং গণিতের জ্ঞান সহজাত।
বুদ্ধিবাদের জনক ফরাসি দার্শনিক রেনে ডেকার্ট তিন প্রকার ধারণার কথা বলেন। যথা আগন্তুক ধারণা, কৃত্তিম ধারণা এবং সহজাত ধারণা। যেসব ধারণা আমরা অভিজ্ঞতা থেকে পায় সেগুলো হলো আগন্তুক ধারণা। যেমন সোনা, পাহাড় ইত্যাদি। দুটি আগন্তুক ধারণার মিশ্রণে তৈরি হয় কৃত্রিম ধারণা। যেমন - সোনার পাহাড়। বলাবাহুল্য এই দুটি ধারণাই ভ্রান্ত ধারণা। কিন্তু যে ধারনা সহজাত একমাত্র তাই আমাদের সঠিক জ্ঞানের ঠিকানা দিতে পারে। যেমন - দিক দেশ-কাল আত্মা ইত্যাদি।
ডেকার্ট আধুনিক দর্শনের সূচনা করেন সন্দেহ দিয়ে। তিনিও সবকিছুকে সন্দেহ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু সন্দেহ করতে করতে তিনি শেষ পর্যন্ত নিজের অস্তিত্বকে আর সন্দেহ করতে পারে না। তিনি বলেন Cogito-Argo-Sum বা 'আমি সন্দেহ করি, তাই আমি আছি'। এইভাবে ডেকার্ট আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করেন এবং আত্মার সাহায্যে অন্যান্য অপ্রত্যক্ষ দ্রব্যকেও স্বীকার করেন। দ্রব্যের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন যা স্বনির্ভর তাই দ্রব্য এবং স্বনির্ভর বলতে তিনি ঈশ্বর, জড় ও চেতনাকে স্বীকার করেন। তার মতে ঈশ্বর হলেন মুখ্য দ্রব্য এবং সচেতন হলো গৌণদ্রব্য। এই দুই প্রকার দ্রব্যকে স্বীকার করার জন্য ডেকার্ট কে দর্শণের ইতিহাসে দ্বৈতবাদী বলা হয়।
পরবর্তী দার্শনিক বি ডি স্পিনোজা ডেকার্টকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করলেও তিনি বলেন যে স্বনির্ভরতায় যদি দ্রব্যের একমাত্র লক্ষণ হয় তবে কিংবা চেতনা নয় একমাত্র দ্রব্য হলেন ঈশ্বর বা প্রকৃতি। তার মতে ঈশ্বর হলেন জগতের আত্মা এবং জগত হলেন ঈশ্বরের দেহ। শুধুমাত্র ঈশ্বরকে স্বীকার করার জন্য ঈশ্বরের নেশায় পাগল এই দার্শনিককে দর্শনের ইতিহাসে অদ্বৈতবাদী বলা হয়।
পরবর্তী দার্শনিক উইলিয়াম লাইবনিজ ছিলেন চরমপন্থী বুদ্ধিবাদী। তিনি সব ধারণাকেই সহজাত বলে স্বীকার করেন। লাইবনিজ বলেন জন্মের সময় আমাদের মন থাকে প্রস্তরখন্ডের মত যার মধ্যে মূর্তি নিহিত থাকে। তিনি বলেন জন্মের সময় আমরা অসংখ্য মনাড বা চিত পরমানু নিয়ে জন্মায়। এগুলি হল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গবাক্ষ হীন প্রকোষ্ঠ। অর্থাৎ বাইরের কোনো সংবেদন আমাদের মনে প্রবেশ করতে পারে না। অসংখ্য মনাডকে দ্রব্য বলে স্বীকার করার জন্য লাইভনিজকে বহুত্ববাদী বলা হয়। লক অভিজ্ঞতাবাদের সমর্থক হয়েও লক বলেছিলেন বুদ্ধিতে এমন কিছু নেই যা পূর্বে ইন্দ্রিয়তে ছিলনা লাইভনিজ একেই ঘুরিয়ে বলেন বুদ্ধিতে এমন কিছু নেই যা পূর্বে ছিল না কেবলমাত্র বুদ্ধি ছাড়া।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা দেখি যে অভিজ্ঞতাবাদ ও বুদ্ধিবাদ উভয়ই চরম এবং একদেশদর্শী মতবাদ। অভিজ্ঞতাবাদ শুধু অভিজ্ঞতার কথা বলে আর বুদ্ধিবাদ শুধু বুদ্ধি কথা বলে। কিন্তু বিচার করলে দেখা যায় অভিজ্ঞতা বা বুদ্ধি কোনটি এককভাবে জ্ঞানের উৎস হতে পারে না। জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট তার বিচার বাদে অভিজ্ঞতাবাদ এবং বুদ্ধিবাদকে সমন্তি করেন। তিনি তার বিচারবাদে বলেন যে জ্ঞানের জন্য অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধি উভয়েই প্রয়োজন। অভিজ্ঞতা হলো জ্ঞানের উপাদান এবং বুদ্ধি হল তার আকার।
** বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
(১) জ্ঞানের উৎসকে কী বলা হয়?
(ক) প্রমা
(খ) প্রমাণ
(গ) প্রমেয়
(ঘ) প্রমাতা
(২) “আমি জানি যে একাদশ শ্রেণির পর দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ নিতে হয়।” - এখানে ‘জানা’ কোন্ অর্থে ব্যবহৃত?
(ক) বাচনিক অর্থে
(খ) পরিচিতি অর্থে
(গ) কর্মকুশলতা অর্থে
(ঘ) বিশ্বাস অর্থে
(৩) ‘জানা’ শব্দের সবল অর্থ কী?
(ক) যে জ্ঞানকে পুনরায় পরীক্ষা করার প্রবনতা থাকে
(খ) যে জ্ঞানকে পুনরায় পরীক্ষার প্রবনতা থাকে না
(গ) জ্ঞান তৈরি হওয়া মাত্রই ভুলে যায়
(ঘ) যে জ্ঞান আদৌ সম্ভব নয়
(৪) বচনে পদের সংখ্যা হল -
(ক) একটি
(খ) দুটি
(গ) তিনটি
(ঘ) চারটি
(৫) “সে সাঁতার কাটতে জানে” - এখানে জানা শব্দটি যে অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে -
(ক) পরিচিতি অর্থে
(খ) সামর্থ্য অর্থে
(গ) বাচনিক অর্থে
(ঘ) এই তিনটির অতিরিক্ত অর্থে
(৬) জ্ঞানের শর্ত কয়টি?
(ক) একটি
(খ) দুটি
(গ) তিনটি
(ঘ) চারটি
(৭) “আমার পড়ার টেবিলটি হয় চতুষ্কোণ।” - বচনটি কোন্ ধরনের?
(ক) সংশ্লেষক
(খ) বিশ্লেষক
(গ) সংবেদনলদ্ধ
(ঘ) বুদ্ধিলব্ধ
(৮) “বিশ্বাসের মধ্যে জানার বিষয়টি লুকিয়ে থাকে” - এটি হল -
(ক) সত্য
(খ) মিথ্যা
(গ) সংশয়াত্মক
(ঘ) সত্য অথবা মিথ্যা
(৯) বচনের বৈশিষ্ট্য হল -
(ক) সত্য হওয়া
(খ) মিথ্যা হওয়া
(গ) সত্য বা মিথ্যা হওয়া
(ঘ) কোনোটিই নয়
(১০) “বচনের সত্যতা স্বতঃসিদ্ধতার মাপকাঠিতে বিচার করা উচিত” - একথা বলেন -
(ক) হিউম
(খ) কান্ট
(গ) দেকার্ত
(ঘ) বার্কলে
(১১) “বচনের সত্যতা অন্যান্য বচনের সঙ্গে সামঞ্জস্যতার মাপকাঠিতে বিচার্য হওয়া উচিত” - একথা বলেছেন -
(ক) দেকার্ত
(খ) স্পিনোজা
(গ) কান্ট
(ঘ) হিউম
(১২) “বচনের বিধেয় হল উদ্দেশ্য সম্পর্কে কোনো-না-কোনো ঘোষণা” - এটি -
(ক) মিথ্যা
(খ) সত্য
(গ) আপতিক
(ঘ) স্বতঃমিথ্যা
(১৩) বাচনিক জ্ঞানের পর্যাপ্ত শর্ত কী?
(ক) যে-কোনো একটি আবশ্যিক শর্ত
(খ) যে-কোনো দুটি আবশ্যিক শর্ত
(গ) তিনটি আবশ্যিক শর্তের সমষ্টি
(ঘ) কোনোটিই নয়
(১৪) বাচনিক জ্ঞানের তিনটি শর্তকে পৃথক পৃথকভাবে বলা হয় -
(ক) পর্যাপ্ত শর্ত
(খ) অনিবার্য শর্ত
(গ) অনিবার্য-পর্যাপ্ত শর্ত
(ঘ) একান্ত শর্ত
(১৫) “আমি চিন্তা করি, অতএব আমি আছি” - অভিমতটি কার?
(ক) দেকার্তের
(খ) স্পিনোজার
(গ) ব্রাডলির
(ঘ) কান্টের
(১৬) “বুদ্ধিতে এমন কিছুই নেই যা আগে ইন্দ্রিয়ানুভবে ছিল না, শুধু বুদ্ধি ছাড়া” - কার উক্তি?
(ক) দেকার্তের
(খ) লাইবনিজের
(গ) কান্টের
(ঘ) লকের
(১৭) একজন নরমপন্থী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হলনে -
(ক) ব্রাডলি
(খ) কান্ট
(গ) হিউম
(ঘ) ভলফ
(১৮) বুদ্ধিবাদ কাকে বলে?
(ক) যে মতবাদে বুদ্ধিই জ্ঞানের একমাত্র উৎস
(খ) যে মতবাদে অভিজ্ঞতাই জ্ঞানের এমনাত্র উৎস
(গ) যে মতবাদে গণিতের জ্ঞান হয়
(ঘ) যে মতবাদে জ্যামিতির জ্ঞান হয়
(১৯) দেহ ও মন ঈশ্বরের পরস্পরবিরোধী দুটি গুণ” - একথা বলেছেন -
(ক) দেকার্ত
(খ) স্পিনোজা
(গ) লাইবনিজ
(ঘ) হিউম
(২০) মুখ্য ও গৌণ গুণের পার্থক্য করেছেন -
(ক) দেকার্ত
(খ) লক
(গ) কান্ট
(ঘ) হিউম
(২১) বিচারবাদ কাকে বলে?
(ক) যে মতবাদে বিচারমূলক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়
(খ) যে মতবাদ নৈতিক বিচার করা হয়
(গ) যে মতবাদ অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়
(ঘ) যে মতবাদে বিতর্কের সূচনা করা হয়
(২২) পরিচিতি অর্থে জানা বলতে বোঝায় -
(ক) সাক্ষাৎ পরিচয়
(খ) জানার কৌশল
(গ) জানার বিষয়
(ঘ) কোনোটিই নয়
(২৩) পর্যাপ্ত শর্তরূপে উল্লেখ করা হয় -
(ক) সত্যতার শর্তকে
(খ) বিশ্বাসের শর্তকে
(গ) বিশ্বাসযোগ্যতার শর্তকে
(ঘ) এই তিনটিকে একত্রে
(২৪) জ্ঞানলাভের পদ্ধতি হিসেবে বুদ্ধিবাদীরা যে পদ্ধতির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তা হল -
(ক) অবরোহ পদ্ধতি
(খ) আরোহ পদ্ধতি
(গ) যৌথ পদ্ধতি
(ঘ) কোনোটিই নয়
(২৫) জ্ঞানের ক্ষেত্রে বিশ্বাসের শর্তটি যেরূপ শর্তরূপে গণ্য তা হল -
(ক) পর্যাপ্ত শর্ত
(খ) আবশ্যিক শর্ত
(গ) বিরোধী শর্ত
(ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তরসহ পিডিএফ (PDF) পেতে এইখানে ক্লিক করুন ঃবুদ্ধিবাদ - ডেকার্ট, স্পিনোজা, লাইবনিজ
অন্যান্য অধ্যায় একত্রে দেখতে ঃ Click Here...
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ