ন্যায় দর্শনের অনুমান সম্পর্কে বক্তব্য - WB Class 11 New Syllabus Philosophy Suggestion 2025 - Chapter 7
ন্যায় দর্শনের অনুমান সম্পর্কে বক্তব্য
ন্যায় দার্শনিকদের মতে অনুমান দুই প্রকার। যথা - স্বার্থনুমান এবং পরার্থানুমান। নিজে বোঝার জন্য যে অনুমান করা হয় তাকে বলে স্বার্থনুমান। আর যখন অপরের জন্য অনুমান করা হয় তখন তাকে বলে পরার্থানুমান। স্বার্থ নোমানের ক্ষেত্রে অনুমান টিকে যথাযথভাবে ব্যপ্ত করার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু পরার্থানুমানের ক্ষেত্রে অনুমানকে যথাযথভাবে ব্যক্ত করার প্রয়োজন আছে। যথাযথভাবে ব্যক্ত করার অর্থ হল অনুমানে বা ন্যায় শাস্ত্রসম্মত রূপটি প্রকাশ করা। ভারতীয় ন্যায় পাঁচটি অবয়ব বিশিষ্ট। যথা - প্রতিজ্ঞা, হেতু, উদাহরণ, উপনয় এবং নিগমন। নিচে একটি দৃষ্টান্তের সাহায্যে বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করা হলো -
পর্বত বহ্নিমান - প্রতিজ্ঞা
পর্বত ধূমমান - হেতু
যেখানেই ধুম সেখানেই বহ্নি, যেমন রান্নাঘর - উদাহরণ
পর্বত ধূমমান - উপনয়
অতএব, পর্বত বহ্নিমান - নিগমন
উপরের প্রথম বচনটি হলো প্রতিজ্ঞা বা প্রতিপাদ্য। এই বিষয়টিকে প্রমাণ করতে হবে। দ্বিতীয় বচনটি হলো হেতু। হেতুই প্রতিজ্ঞার কারণ নির্দেশ করে। তৃতীয় বচনে সাধ্য এবং হেতুর মাধ্যমে ব্যাপ্তি বা নিয়ত অভ্যবিচারী সম্বন্ধ সেটিকে প্রকাশ করে এবং পরিচিত দৃষ্টান্তের দ্বারা এই ব্যক্তি সম্বন্ধকে সমর্থন করা হয়। চতুর্থ বচনটি হলো উপনয়। উপনয় হল সামান্য বচন থেকে বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা। পঞ্চম বা সর্বশেষ বচন টি হল নিগমন। পূর্ববর্তী বচনগুলোর ভিত্তিতে বা বচন গুলির দ্বারা সমর্থিত হয়ে যে সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় সেটি হল নিগমন। এই অবয়ব সমূহের সমষ্টিকে ন্যায় নামে অভিহিত করা হয়।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে কাকে অনুমান করছি? কার মধ্যে অনুমান করছি? এবং কার মাধ্যমে অনুমান করছি? যার মধ্যে কোন বিষয়কে অনুমান করছি অর্থাৎ পর্বত এটি হলো পক্ষ। যে বিষয়টিকে অনুমান করছি অর্থাৎ বহ্নি তাহলো সাধ্য এবং যার মাধ্যমে অনুমান করছি অর্থাৎ ধূম হলো হেতু।
পক্ষ : যে অধিকরণে কোন বস্তু অনুমান করা হয় তাকে বলে পক্ষ। এখানে পর্বত হলো পক্ষ। কারণ পর্বতের বহ্নির অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে। সিদ্ধান্তে উদ্দেশ্যই হলো পক্ষ।
সাধ্য : অনুমানের সাহায্যে যাকে আমরা জানতে চাই বা প্রমাণ করতে চাই তা হল সাধ্য। উপরের অনুমানে বহ্নিই হল সাধ্য। যেহেতু পর্বতে বহ্নির অস্তিত্বই আমরা প্রমান করতে চাই। সিদ্ধান্তের বিধায়কে বলা হয় সাধ্য।
হেতু : সেতুর অপর নাম লিঙ্গ। কারণ এটি হলো একটি চিহ্ন যা আমরা প্রত্যক্ষ করি না, তাকে নির্দেশ করি। হেতু সাধ্যপদ বা মধ্যপদ কারণ এই পদের মাধ্যমেই পর্বতের বহ্নিরর অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায়।
ভারতীয় ন্যায় অনুমানের দুটি ভিত্তি। যথা - পক্ষধর্মতা এবং ব্যপ্তি। পক্ষে সেতুর অবস্থানকে বলা হয় পক্ষধর্মতা। উপরের উদাহরণে দ্বিতীয় বাক্যটি অর্থাৎ হেতুতে পক্ষধর্মতা দেখতে পাওয়া যায়। হেতু এবং সাধ্যের মধ্যে নিহত সহচর সম্পর্ককে বলা হয় ব্যপ্তি। সার্বিক বচন ছাড়া অনুমান সম্ভব নয়। আবার ব্যক্তি জ্ঞান ছাড়া সার্বিক বচন সম্ভব নয়। কাজেই অনুমানে ব্যপ্তি অবশ্যই প্রয়োজনীয়। ব্যাপ্তি দুই প্রকার, যথা - সমব্যপ্তি এবং অসমব্যপ্তি। যে ক্ষেত্রে হেতু এবং সাধ্যের ব্যাপকতা সমান তাকে বলে সমব্যপ্তি। যেমন - পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গের নাম মাউন্ট এভারেস্ট। আবার যখন হেতু ও সাধ্যের ব্যাপকতা সমান নয় তখন তাকে বলে অসমব্যপ্তি। যেমন - কোন কোন মানুষ হয় চোর।
প্রশ্ন হলো ব্যাপ্তি জ্ঞান হয় কিভাবে? এর উত্তরে নৈয়ায়িকরা ছয়টি পথ নির্দেশ করেন, যথা -
- অন্বয়
- ব্যতিরেক
- উপাধি নিরাস
- ব্যভিচার আগ্রহ
- তর্ক
- সামান্য লক্ষণ
ব্যাপ্তি বিশিষ্ট পক্ষধর্মতা জ্ঞানকে বলা হয় পরামর্শ। ন্যায় অনুমানের চতুর্থ বাক্যে এই পরামর্শ জ্ঞান বা লিঙ্গ পরামর্শ আছে। এই পরামর্শই হলো অনুমানের মূল ভিত্তি। এই জন্যই বলা হয় " পরামর্শ জন্যম জ্ঞানম অনুমতি"।
** বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
(১) ন্যায়দর্শন কোন্ ধরণের দর্শন?
(ক) জড়বাদী
(খ) অধ্যাত্মবাদী
(গ) ভাববাদী
(ঘ) কোনোটিই নয়
(২) স্মৃতি কোন্ ধরণের জ্ঞান?
(ক) প্রমা
(খ) অপ্রমা
(গ) অনুভব
(ঘ) প্রত্যাভিজ্ঞা
(৩) তর্কসংগ্রহ গ্রন্থের লেখক কে?
(ক) বিশ্বনাথ
(খ) বাৎস্যায়ন
(গ) অন্নম্ভট্ট
(ঘ) শংকরাচার্য
(৪) রজ্জুতে সর্পভ্রমের জ্ঞান হল -
(ক) প্রমা
(খ) সংশয়
(গ) বিপর্যয়
(ঘ) তর্ক
(৫) ন্যায় মতে করণ হল -
(ক) ব্যাপারবিশিষ্ট কারণ
(খ) অব্যাপারবিশিষ্ট কারণ
(গ) সাধারণ কারণ
(ঘ) লৌকিক কারণ
(৬) ন্যায় মতে কারণ -
(ক) একপ্রকার
(খ) দুইপ্রকার
(গ) তিনপ্রকার
(ঘ) চারপ্রকার
(৭) ন্যায় মতে, ব্যাপারবিশিষ্ট কারণকে বলে -
(ক) করণ
(খ) কারণ
(গ) সহকারী
(ঘ) ব্যাপার
(৮) পরার্থানুমানের অবয়ব বাক্য কয়টি?
(ক) তিনটি
(খ) চারটি
(গ) পাঁচটি
(ঘ) ছয়টি
(৯) “পরামর্শজন্যং জ্ঞানম্ অনুমুতিঃ’’- কাদের মত?
(ক) নব্য ন্যায় মত
(খ) প্রাচীন ন্যায় মত
(গ) মীমাংসক মত
(ঘ) বেদান্ত মত
(১০) “ব্যাপ্তি জ্ঞান অনুমিতির করণ” - কাদের মত?
(ক) নব্য ন্যায়
(খ) প্রাচীন ন্যায়
(গ) মীমাংসা
(ঘ) যোগ
(১১) যে বাক্য পক্ষে সাধ্যব্যাপ্য হেতুর উল্লেখ করা হয় তাকে কী বলা হয়?
(ক) উপনয়
(খ) নিগমন
(গ) উদাহরণ
(ঘ) হেতু
(১২) যাকে অনুমানে প্রমাণ করা হয় তাকে বলা হয় -
(ক) হেতু
(খ) পক্ষ
(গ) সাধ্য
(ঘ) অনুমিতি
(১৩) পরার্থানুমানের ক্ষেত্রে সাধ্যকে নির্দেশ করে যে বাক্যটি সেটির নাম হল -
(ক) প্রতিজ্ঞা
(খ) উদাহরণ
(গ) উপনয়
(ঘ) হেতু
(১৪) পরার্থানুমানের যে বাক্যে সবকটি পদ উপস্থিত থাকে, তাকে কী বলা হয়?
(ক) উপনয়
(খ) নিগমন
(গ) উদাহরণ
(ঘ) হেতু
(১৫) পঞ্চাবয়বী ন্যায় কাকে বলে?
(ক) পাঁচটি অবয়বযুক্ত ন্যায়কে
(খ) পাঁচটি অবস্থানযুক্ত ন্যায়কে
(গ) পাঁচটি শর্তযুক্ত ন্যায়কে
(ঘ) পাঁচটি প্রকারযুক্ত ন্যায়কে
(১৬) ব্যাপ্তিবিশিষ্ট পক্ষধর্মতার জ্ঞানকে বলা হয় -
(ক) ব্যাপ্তি সম্বন্ধ
(খ) পরামর্শ
(গ) পক্ষধর্মতা
(ঘ) অলৌকিক সন্নিকর্ষের জ্ঞান
(১৭) ব্যাপ্তি জ্ঞান কয় প্রকারের?
(ক) তিন প্রকারের
(খ) দু-প্রকারের
(গ) এক প্রকারের
(ঘ) চার প্রকারের
(১৮) ন্যায় অনুমানে কয়টি ও কী কী পদ থাকে?
(ক) দুটি পদ - সাধ্য ও পক্ষ
(খ) একটি পদ - সাধ্য
(গ) একটি পদ - পক্ষ
(ঘ) তিনটি পদ - সাধ্য, পক্ষ ও হেতু
(১৯) ন্যায় মতে অনুমান কয় প্রকারের?
(ক) দুই
(খ) ছয়
(গ) তিন
(ঘ) এক
(২০) হেতুর সাথে সাধ্যের নিয়ত সহচরকে বলা হয় -
(ক) ব্যাপ্তি
(খ) পরামর্শ
(গ) তর্ক
(ঘ) পক্ষতা
(২১) পঞ্চ-অবয়ব বাক্যের প্রথম অবয়বটি কী?
(ক) হেতু বাক্য
(খ) উপনয় বাক্য
(গ) নিগমন বাক্য
(ঘ) প্রতিজ্ঞা বাক্য
(২২) স্বার্থানুমিতিকে বলা হয় -
(ক) দ্বিবয়বী ন্যায়
(খ) ত্রিবয়বী ন্যায়
(গ) চতুর্বয়বী ন্যায়
(ঘ) পঞ্চাবয়বী ন্যায়
(২৩) পরার্থানুমিতিকে বলা হয় -
(ক) ত্রিবয়বী ন্যায়
(খ) ষড়বয়বী ন্যায়
(গ) পঞ্চবয়বী ন্যায়
(ঘ) অবয়বহীন ন্যায়
(২৪) শব্দ থেকে পাওয়া জ্ঞান হল -
(ক) প্রত্যক্ষ
(খ) অনুমিতি
(গ) উপমিতি
(ঘ) শাব্দ
(২৫) ন্যায়দর্শনে শব্দজ্ঞানকে বলা হয় -
(ক) আপ্ত
(খ) রপ্ত
(গ) শক্ত
(ঘ) উক্ত
(২৬) ন্যায় মতে ব্যাপ্তিবিশিষ্ট পক্ষধর্মতার জ্ঞানকে বলা হয় -
(ক) ব্যাপ্তি
(খ) পক্ষতা
(গ) পরামর্শ
(ঘ) অনুমিতি
(২৭) হেতু সাধ্য ছাড়া ব্যাপ্তি সম্পর্ক দেখা যায় -
(ক) হেতু ও পক্ষের মধ্যে
(খ) পক্ষ ও সাধ্যের মধ্যে
(গ) ব্যাপ্য ও ব্যাপকের মধ্যে
(ঘ) কোনোটিই নয়
(২৮) ন্যায় মতে মোক্ষকে বলা হয় -
(ক) মুক্তি
(খ) অপবর্গ
(গ) নিঃশ্রেয়স
(ঘ) নির্বাণ
(২৯) দৃষ্টার্থক ছাড়া আর যে প্রকারের শব্দপ্রমাণ আছে, তা হল -
(ক) শক্যার্থক
(খ) অশক্যার্থক
(গ) শ্রুতার্থক
(ঘ) অশ্রুতার্থক
(৩০) বিশ্বাসযোগ্য ব্যাক্তির বাক্যকে বলা হয় -
(ক) আপ্ত
(খ) রপ্ত
(গ) সুপ্ত
(ঘ) গুপ্ত
(৩১) হেতুর দোষের অপর নাম হল -
(ক) হেত্বাভাস
(খ) জ্ঞানাভাস
(গ) সংশয়াভাস
(ঘ) প্রমাভাস
(৩২) দুটি বিষয়ের একত্র উপস্থিতিকে বলা হয় -
(ক) ব্যতিরেক
(খ) অন্বয়
(গ) অন্বয়
(ঘ) শর্তযুক্ত
(৩৩) দুটি বিষয়ের একত্র অনুপস্থিতিকে বলা হয় -
(ক) ব্যতিরেক
(খ) অন্বয়
(গ) অন্বয়-ব্যতিরেক
(ঘ) শর্তহীন
(৩৪) যে অনুমিতিকে ভাষায় প্রকাশ করতেই হয়, তাকে বলে -
(ক) স্বার্থানুমিতি
(খ) পরার্থানুমিতি
(গ) প্রকাশ অনুমিতি
(ঘ) অপ্রকাশ অনুমিতি
(৩৫) ধূম ও অগ্নির মধ্যে ব্যাপ্তি সম্বন্ধটিকে বলা হয় -
(ক) সমব্যাপ্তি
(খ) বিষমব্যাপ্তি
(গ) নিত্যব্যাপ্তি
(ঘ) অনিত্যব্যাপ্তি
(৩৬) যে পদার্থকে অনুমান করা হয় তাকে কী বলে?
(ক) উপমান
(খ) পক্ষ
(গ) সাধ্য
(ঘ) হেতু
(৩৭) অপরের জন্য করা অনুমানকে বলা হয় -
(ক) পরামর্শ
(খ) ব্যাপ্তি
(গ) স্বার্থানুমান
(ঘ) পরার্থানুমান
(৩৮) ন্যায় মতে, স্বার্থানুমানের অবয়ব হল -
(ক) একটি
(খ) দুটি
(গ) তিনটি
(ঘ) পাঁচটি
(৩৯) “ব্যাপ্তি জ্ঞানকরণকং জ্ঞানম্ অনুমিতি” - অভিমতটি হল -
(ক) নৈয়ায়িকদের
(খ) প্রাচীন নৈয়ায়িকদের
(গ) নব্য নৈয়ায়িকদের
(ঘ) এদের সকলেরই
(৪০) ‘সকল ধূমবান বস্তু হয় বহ্নিমান’ - এটি হল যার উদাহরণ, তা হল -
(ক) সমব্যাপ্তি
(খ) বিষম ব্যাপ্তি
(গ) সাধারন ব্যাপ্তি
(ঘ) দৈবাৎ
(৪১) ব্যাপ্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের একত্রে উপস্থিতিকে বলা হয় -
(ক) অন্বয়
(খ) বিষম ব্যাপ্তি
(গ) অন্বয়-ব্যতিরেক
(ঘ) দৈবাৎ
(৪২) ব্যাপ্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের একই সঙ্গে অনুপস্থিতিকে বলা হয়
(ক) অন্বয়
(খ) ব্যতিরেক
(গ) অন্বয়-ব্যতিরেক
(ঘ) হঠাৎ
(৪৩) দুটি বিষয়ের একত্র উপস্থিতির ক্ষেত্রে কোনো ব্যতিক্রম না থাকাকে বলা হয় -
(ক) আগ্রহ
(খ) বিগ্রহ
(গ) ব্যভিচার
(ঘ) ব্যভিচারাগ্রহ
(৪৪) ‘সাধ্য পক্ষে আছে’ - এরূপ ঘোষণাটি করা হয় যে বাক্যে, তা হল -
(ক) উদাহরণ
(খ) হেতু
(গ) প্রতিজ্ঞা
(ঘ) উপময়
(৪৫) ন্যায়দর্শনে অনুমিত পদার্থটি যে নামে পরিচিত, তা হল -
(ক) অনুমিতি
(খ) পরার্থানুমিতি
(গ) স্বার্থানুমিতি
(ঘ) ব্যবসায়ত্মক জ্ঞান
উত্তরসহ পিডিএফ (PDF) পেতে এইখানে ক্লিক করুন ঃ ন্যায় দর্শনের অনুমান সম্পর্কে বক্তব্য
অন্যান্য অধ্যায় একত্রে দেখতে ঃ Click Here...
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ