নীলধ্বজের প্রতি জনা
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
(১) নিচের বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
১.১ "নীলধ্বজের প্রতি জনা" পত্রকবিতার উপাদান আছে মহাভারতের - অশ্বমেধ পর্বে
১.২ রাজকেতু বলতে কী বোঝ? - রাজ পতাকা
১.৩ কার মৃত্যুর প্রতিহিংসা গ্রহণ করা রাজ্ঞী জনার ঈচ্ছা? - পুত্র প্রবীর
১.৪ বিধাতার কোন্ বিধির কথা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে? - জন্মে মৃত্যু
১.৫ নীলধ্বজ কোথাকার রাজা ছিলেন? - মাহেশ্বরী পুরীর
১.৬ কুন্তীকে এই কবিতায় কী বলে উল্লেখ করা হয়েছে? - স্বৈরিণী
১.৭ কাকে এই কবিতায় কু-কুলের কুলাচার্য্য বলে অভিহিত করা হয়েছে? - ব্যাসদেব
১.৮ কে কখনোই দাবানল নেভাতে পারে না? - কুরঙ্গীর অশ্রুবারি
১.৯ নীলধ্বজের প্রতি জনা রচনাটি কোথা থেকে গৃহীত? - বীরাঙ্গনা কাব্য
১.১০ বীরাঙ্গনা কাব্য-এ মোট কতগুলি পত্র আছে? - ১১টি
১.১১ কী কারণে পার্থ ও প্রবীরের যুদ্ধ হয়েছিল? - অশ্বমেধযজ্ঞ
১.১২ মহারথী প্রথা কী? - নিরস্ত দুর্বলকে আঘাত না করা
১.১৩ কৃতান্তনগর বলতে কোন্ স্থানের কথা বলা হয়েছে? - যমালয়
১.১৪ বিবর কথার অর্থ কী? - গর্ত
(২) নিচের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
২.১ "এই তো সাজে তোমারে" - কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত নীলধ্বজের প্রতি জনা পত্রে উদ্ধৃত এই তো সাজে তোমারে অংশে এ কথা রাজার যুদ্ধ প্রস্তুতি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে।
২.২ "জন্মে মৃত্যু - বিধাতার এ বিধি জগতে।" - কোন্ প্রেক্ষিতে জনা এই মন্তব্য করেছেন?
উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত নীলধ্বজের প্রতি জনা পত্রকবিতায় পুত্র প্রবীরের মৃত্যু প্রসঙ্গে জনা এই মন্তব্য করেছেন।
২.৩ "কি কহিবে, কহে, / যবে দেশ-দেশান্তরে জনরব লবে / এ কাহিনী" - এখানে কোন্ কাহিনীর কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ এখানে পুত্রহন্তা পার্থের সঙ্গে স্বামী নীলধ্বজের সখ্যের কাহিনির কথা বলা হয়েছে।
২.৪ "আছিলা মান, - তাও কি নাশিলি?" - এই কথার মাধ্যমে জনা কী বলতে চেয়েছেন?
উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত নীলধ্বজের প্রতি জনা পত্রকবিতায় এই কথার মাধ্যমে জনা সন্তান হারানোর সঙ্গে সঙ্গে মাতৃত্বের গৌরবও হারিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
২.৫ "দহিল খান্ডব দুষ্ট কৃষ্ণের সহায়ে" - কে কেন খান্ডব দাহণ করেন?
উত্তরঃ কৃষ্ণকে সঙ্গে নিয়ে অর্জুন খান্ডব বন দাহন করেছিলেন অসুখ সারানোর জন্য অগ্নিকে সাহায্য করার জন্যে।
২.৬ "ভীরুতার সাধনা কি মানে বলবাহু" - জনা ভীরুতার সাধনা বলতে কী বুঝিয়েছেন?
উত্তরঃ জনা ভীরুতার সাধনা বলতে অর্জুনের মতো কুশলী, সুযোগসন্ধানী অথচ বীরধর্মহীনের সঙ্গে সখ্যকে বুঝিয়েছেন।
২.৭ "আশার লতা তাই রে ছিঁড়িলি?" - এই আশার লতা কে?
উত্তরঃ মধুসূদন দত্তের লেখা নীলধ্বজের প্রতি জনা পত্রকবিতায় জনার অভিযোগের কারণ হল পুত্রহন্তাকে তাঁর স্বামী নর-নারায়ণ জ্ঞানে আরাধনা করছেন।
২.৮ "মিথ্যা কথা, নাথ।" - কোন্ কথাকে মিথ্যা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ সকলে অর্জুনকে যে রথিকুল-পতি অর্থাৎ বীরশ্রেষ্ঠ বলে জানে, তাকেই জনা মিথ্যা কথা বলেছেন।
২.৯ "এই তো সাজে তোমারে" - কীসের কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তিতে নীলধ্বজের যুদ্ধসাজের কথা বলা হয়েছে।
২.১০ "তব সিংহাসানে বসিয়ে পুত্রহা রিপু" - এই রিপু বা শত্রু কে?
উত্তরঃ প্রশ্নোদ্ধৃত উদ্ধৃতিতে এই রিপু বা শত্রু হলেন তৃতীয় পান্ডব পার্থ।
২.১১ "সেবিছ যতনে তুমি অতিথি-রতনে" - এই অতিথি রত্নটি কে?
উত্তরঃ প্রশ্নোদ্ধৃত অতিথি-রত্নটি হলেন তৃতীয় পান্ডব পার্থ।
২.১২ পার্থ ছদ্মবেশে রাজাদের কোথায় ছলনা করেছিলনে?
উত্তরঃ পার্থ দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভায় রাজাদের ছলনা করেছিলেন।
২.১৩ "ক্ষত্রিয়ধর্ম্ম এই যে, নৃমণি?" - কাকে ক্ষত্রিয়ধর্ম বলা হয়নি?
উত্তরঃ প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তিতে পুত্রহন্তার সঙ্গে বন্ধুত্বকে ক্ষত্রিয়ধর্ম বলা হয়নি।
২.১৪ "চন্ডালের পদধূলি ব্রাহ্মণের ভালে?" - কাকে চন্ডাল বলা হয়েছে?
উত্তরঃ প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তিটিতে চন্ডাল বলতে পার্থকে বোঝানো হয়েছে।
২.১৫ নীলধ্বজের প্রতি জনা বীরাঙ্গনা কাব্যে'র কত সংখ্যক পত্র?
উত্তরঃ নীলধ্বজের প্রতি জনা বীরাঙ্গনা কাব্যে'র একাদশ সংখ্যক পত্র।
See More : Full Class 11 Bengali Suggestion 2023
(৩) নিচের বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
(১) নীলধ্বজের প্রতি জনা কবিতায় জনা চরিত্রটি আলোচনা করো।
উত্তরঃ নীলধ্বজের প্রতি জনা কবিতায় জনাই হল মুখ্য চরিত্র। তাঁর চরিত্রের যেসব বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়েছে তা নিচের আলোচনা করা হল -
ক্ষত্রধর্মঃ জনা যেহেতু ক্ষত্রিয়কুলবধূ এবং ক্ষত্রিয়কুলবালা, তাই তিনি স্বামীকে বারবার উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন পুত্রহন্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের আয়োজন করার জন্য।
প্রতিশোধস্পৃহাঃ অর্জুনের হাতে প্রবীরের মৃত্যুর পরে পুত্রশোকের আকুলতা সত্ত্বেও জনা তাঁর চোখের জলকে রূপান্তরিত করেছেন ক্রোধের আগুনে।
বেদ-পুরাণ-শাস্ত্রে জ্ঞানঃ জনার আর একটি গুণ হল শাস্ত্র বেদ পুরাণ সংক্রান্ত জ্ঞান। স্বামীকে র্ভৎসনার সময় অর্জুনের বংশগরিমার অসারতা প্রমান করে এবং মহাভারত রচয়িতা ব্যাসদেবের নিলর্জ্জতাকে অনায়াসে খুব দক্ষতায় বিবৃত করেছেন জনা।
প্রেমিকা সত্তাঃ প্রতিবাদী সত্তার পরিচয় পাওয়া গেলেও জনার প্রেমিকা সত্তার স্পষ্ট পরিলক্ষিত হয়। তাঁর আহত প্রেমই তাঁকে অভিমানী করে তুলেছে -
"তুমি পতি, ভাগ্যদোষে বান মম প্রতি"
মাতৃসত্তাঃ পুত্রের হত্যাকারীর সঙ্গে স্বামী যখন বন্ধুত্ব স্থাপন করেছেন, প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধে যখন বিচারের বাণী মাথা কুটে মরেছে তখন অসহায় জনা আর কোনো পথ খুঁজে না পেয়ে নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছেন।
(২) নীলধ্বজের প্রতি জনা কাব্যাংশে নীলধ্বজ চরিত্রটি আলোচনা করো।
উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা নীলধ্বজের প্রতি জনা কবিতায় জনার মুখ থেকে নীলধ্বজের যে চারিত্রিক গুনগুলি পায় তা হল -
পান্ডবদের অশ্বমেধের ঘোড়া আটকানোয় পান্ডবদের সঙ্গে প্রবীরের যুদ্ধ হয় এবং যুদ্ধে প্রবীর পরাজিত ও অর্জুনের হাতে নিহত হয়। যুদ্ধের পরে অগ্নির পরামর্শে কৃষ্ণভক্ত নীলধ্বজ অর্জুনের সঙ্গে সন্ধিস্থাপন করলে পুত্রশোকাকুলা জনা নীলধ্বজকে তীব্র ভাষায় ভর্ৎসনা করেন।
জনা প্রত্যাশা করেছিলেন যে পুত্রের মৃত্যুর পরে রাজা নীলধ্বস তাঁর ক্ষত্রিয়ধর্ম অবশ্যই রক্ষা করবেন। কিন্তু পরবর্তিতে অর্জুনের প্রতি রাজা নীলধ্বসের আকুতি-মিনতী এবং রাজসভায় নর্তকীকে নাচতে দেখে দেখা যায়। সেই সঙ্গে গায়ককে গান করতে শোনা যায়, আর রাজসভা থেকে ভেসে আসে বীণাধ্বনি। অর্থাৎ প্রতিশোধ গ্রহণের বদলে নীলধ্বসকে দেখা যায় যত্নের সঙ্গে পুত্রহত্যাকারীকে সেবা করেন।
নীলধ্বজের এই কাপুরুষত্বা, ক্ষত্রিয়ধর্মের অপমান বলে মনে করেন জনা। জনা সংশয় প্রকাশ করেছেন যে নীলধ্বজের এই আচরণ দেশ-দেশান্তরে অগৌরবের বার্তাই বহন করে নিয়ে যেতে পারে।
জনার দৃষ্টিতে নীলধ্বজ কিন্তু এক শ্রদ্ধার আসনেই উপবিষ্ট ছিলেন। জনা কিছুতেই তাঁর বর্তমান আচরণকে মেনে নিতে পারছেন না। তাই স্ত্রী জনার কাছ থেকে ক্ষোভ ও অভিমানের প্রকাশ আর ব্যঙ্গই এই কাব্যাংশে নীলধ্বজের একমাত্র পাওনা।
(৩) "মহারথী-প্রথা কি হে এই, মহারথি?" - বক্তার এই ধরনের মন্তব্যের কারণ আলোচনা করো।
উত্তরঃ আলোচ্য অংশটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা নীলধ্বজের প্রতি জনা কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে রানি জনা নীলধ্বজের উদ্দেশ্যে মন্তব্যটি করেছেন।
পান্ডবদের অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়ার গতিরোধ করার জন্য মাহেশ্বরী পুরীর যুবরাজ প্রবীর অর্জুনের হাতে নিহত হন। রাজমাতা জনা চেয়েছিলেন, রাজা নীলধ্বজ নিশ্চয় পুত্রহত্যার প্রতিশোধ নেবেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায় যে, রাজা নীলধ্বজ পুত্রঘাতক পার্থর সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপণ করেছেন।
ক্ষুদ্ধ ও লজ্জিত জনা জনা নীলধ্বজের উদ্দেশ্যে এরপর একের পর এক যুক্তি দিয়ে বলেছেন অর্জুন কখনও কোথাও কোনোরকম মহারথী প্রথা মানেননি। ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে দ্রৌপদীকে লাভ, কৃষ্ণের সাহায্যে খান্ডব বন দহন, শিখন্ডীর সাহায্যে ভীষ্মবধ, দ্রোণাচার্য বধ বা কর্ণবধ - এই কোনোকিছুই অর্জুন একক কৃতিত্বে করেননি।
সবক্ষেত্রেই তিনি অপরের সাহায্য নিয়ে বা সৌভাগ্যক্রমে পেয়েছিলেন বলেই পার্থ কিছুতেই মহারথী বলে সম্বোধিত হওয়ার যোগ্য নন। তাই জনা পার্থকে কখনও মহাপাপী, কখনও নরাধম, আবার কখনও বর্বর বলে উল্লেখ করেছেন। অর্জুনের আচরনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বামীর উদ্দেশ্যে তাঁর প্রশ্ন, "মহারথী-প্রথা কি হে এই, মহারথি?"
See More : Full Class 11 Bengali Suggestion 2023
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ