গ্যালিলিও
সত্যেন্দ্রনাথ বসু
(১) নিচের বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
১.১ যে বিষয়ের ওপর গ্যালিলিওর পিতা একাধিক বই লিখেছিলেন তা হল - সংগীততত্ত্ব
১.২ গ্যালিলিও ডাক্তারিতে ভরতি হলেন - ১৫৮১ খ্রিস্টাব্দে
১.৩ গ্যালিলিও-র পিসা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যায়নার বেতন ছিল - ৬০ স্কুডি
১.৪ দূরবিনের প্রথম পরিকল্পনা করেন যে ব্যক্তি, তাঁর দেশ ছিল - হল্যান্ড
১.৫ গ্যালিলিওকে প্রথমে নজরবন্দি করে রাখা হয়েছিল - সিয়েনায়
১.৬ গ্যালিলিওযখন মারা যান, তখন তাঁর বয়স ছিল - ৭৭ বছর
১.৭ "১৬০৯ সালে ঘটলো এক নতুন ব্যাপার"- ব্যাপারটি কী? - একজন হল্যান্ডবাদী লেন্সে উল্টো প্রতিবিম্ব দেখতে পেল
১.৮ "গ্যালিলিওর বাড়ি হয়ে উটলো ফ্যাকটরী কারুশালা" - কেন? - যুদ্ধজাহাজে দূরবিন জোগানের ভার পড়ল
১.৯ ফ্লারেন্সে গ্যালিলিও আসতেন কীসের ছুটিতে? - গ্রীষ্মের
১.১০ কোপারনিকাসের বই নিষিদ্ধ হয় কত সালে? - ১৬১০ সালে
১.১১ গ্যালিলিও স্বর্ণপদকে ভূষিত হয়েছিলেন - রাজপন্ডিত ও দার্শনিক হিসেবে
১.১২ গ্যালিলিও-র হিতাকাঙ্ক্ষী ও সুহৃদ ছিলেন - কার্ডিনাল বেলারিমিন
১.১৩ "তাঁর মুখ দিয়ে বলানো হল যে," - তিনি - কোপারনিকাসের মতে বিশ্বাস ত্যাগ করেছেন
১.১৪ গ্যালিলিও প্রচুর পরিমাণ অর্থাগমের চেষ্টা করতেন। কারণ - তাঁর বিশাল একান্নবর্তী পরিবার দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল
১.১৫ "আর এক কারণে তাঁর সব আবিষ্কার ও মতামত শুধু পন্ডিতমহলে আবদ্ধ রইল না।" - কারণটি কী? - উনি লাতিনের বদলে ইটালিয়ান ভাষায় লিখতে লাগলেন
১.১৬ "গ্যালিলিওকে শেষ অবধি মঠ ছাড়তে হল।" - কারণ - তাঁর পিতার আপত্তি এবং তাঁর দৃষ্টিশক্তির ক্ষীণতা
১.১৭ "গ্যালিলিওর ওপর ভার পড়ল - দূরবিন জোগান দেবার।" - কারণ - গ্যালিলিও নিজের হাতে উচ্চ-ক্ষমতাশালী দূরবিন তৈরি করতেন
১.১৮ "এখানেই শুরু হল তাঁর প্রকৃত বিজ্ঞানীর জীবন।" - কোথায়? - ১৫৯২ সালে পাড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
১.১৯ গ্যালিলিও ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে ভেনিস ছেড়ে তাসকানি চলে গেলেন কেন? - নতুন ডিউক প্রচুর অর্থসম্পদ দিয়ে গ্যালিলিওকে রাজপন্ডিত পদে নিয়োগ করেন
১.২০ ফ্লোরেন্স গ্যালিলিও-র সর্বাপেক্ষা প্রিয় শহর ছিল, তার কারণ হল গ্যালিলিও - শিল্পী মন
১.২১ "যতই এরা উদার বা মহানুভব হোক, বাঁধা কর্তব্য করা ছাড়া এদের কাছে বৃত্তি আশা করা বৃথা।" - কাদের কাছে? - ভেনিস গণতন্ত্র
১.২২ "এতে তাদের বিদ্বেষ আরও বাড়ল।" - কেন বিদ্বেষ বাড়ল? - গ্যালিলিও সহকর্মীদের মনোভাব নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করতেন
১.২৩ "এ সত্ত্বেও পৃথিবী চলমান।" - সম্ভবত কখন একথা বলেন গ্যালিলিও? - Inquisition-এ বিচারকদের সামনে
১.২৪ "যা হোক একটা উপাধি হলেই হল।" - কাদের এমন মনোভাব ছিল? - বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের
১.২৫ "ইতিমধ্যে অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে।" - কী ঘটে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে? - পোপ এবং বেলারিমিনের মৃত্যু
১.২৬ "এই দুঃখকষ্টের মধ্যে সেও মারা গেল।" - কে মারা গেল? - গ্যালিলিওকে দেখভাল করত যে মেয়েটি
(২) নিচের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
২.১ "এই স্বভাবই শেষ জীবনে তাঁর অশেষ দুঃখের কারণ হল" - কোন্ স্বভাবের কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ গ্যালিলিও খুব যুক্তি তর্ক করতে ভালবাসতেন। তাঁর এই ঝোঁক বা প্রবণতা শেষ জীবনে তাঁর অশেষ দুঃখের কারণ হল।
২.২ "এই সময় তাঁর বৈপ্লবিক মতবাদ বিপক্ষে কেউ আপত্তি জানাল না।" - এই সময় বলতে কোন্ সময়ের কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ ১৬০৪ খ্রিস্টাব্দে যখন পড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্যালিলিও-র চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি পায়, তখন তাঁর বৈপ্লবিক মতবাদের বিরোধিতা কেউ করেননি।
২.৩ "তাঁর মুখ দিয়ে বলানো হল" - কার মুখ কী বলানো হল?
উত্তরঃ গ্যালিলিও-র মুখ দিয়ে বলানো হল যে, তিনি কোপারনিকাসের মতের ওপর বিশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
২.৪ "শীঘ্রই এই সমস্যার সমাধান হল" - কীভাবে সমস্যার সমাধান হল?
উত্তরঃ গ্যালিলিও কাগজে প্ল্যান এঁকে আলোর রেখাপথের বিষয় বিচার করে দূরের জিনিস দেখার জন্য কাঁচের নল বানিয়ে সমস্যার সমাধান করলেন।
২.৫ গ্যালিলিও-র বাড়ি ফ্যাক্টরি হয়ে ওঠার কারণ কী?
উত্তরঃ ভেনিসের প্রতিটি জাহাজের জন্য দূরবিনের জোগান দিতে গ্যালিলিও-র বাড়ি ফ্যাক্টরি হয়ে উঠেছিল।
২.৬ "১৬০৯ সালে ঘটল এক নতুন ব্যাপার" - কোন্ নতুন ব্যাপারের কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ ১৬০৯ সালে এক হল্যান্ডবাসী কাচের লেন্স নিয়ে নাড়াচাড়া করতে হঠাৎ একটি নলের দুপাশে চোখ রেখে দেখনেল যে, দূরের জিনিস বড়ো দেখাচ্ছে।
২.৭ কোন্ বিশ্ববিদ্যালয়ে কী বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন গ্যালিলিও?
উত্তরঃ গ্যালিলিও পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক্তারি-বিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন।
২.৮ "কাজেই গ্যালিলিও অনেকক্ষণ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রইলেন," - দরজার কাছে গ্যালিলিও দাঁড়িয়ে ছিলেন কেন?
উত্তরঃ ফ্লোরেন্সের গণিতবিদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে গ্যালিলিও দেখেন যে, তাসকানির শাসক-পুত্র তাঁর কাছে পড়ছে। তাই তিনি দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।
২.৯ "একজন হিসাব করে বলেছেন" - কী বলেছেন?
উত্তরঃ একজন হিসাব করে বলেছেন যে, ৬০ স্কুডি তৎকালীন হিসাবে ছিল ৯০০-১০০০ টাকার সমতুল।
২.১০ "গ্যালিলিও হলেন কর্তা।" - কখন গ্যালিলিও কর্তা হলেন?
উত্তরঃ ১৫৯১ সালে গ্যালিলিওর পিতা মারা গেলে গ্যালিলিও পরিবারের কর্তা হন।
২.১১ "এখানেই শুরু হল তাঁর প্রকৃত বিজ্ঞানীর জীবন।" - কোথায়?
উত্তরঃ ভেনিস নগররাষ্ট্র তথা রাজ্যেই শুরু হয়েছিল গ্যালিলিও-র বিজ্ঞানী-জীবন, যার অন্তর্গত ছিল পাড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
২.১২ "প্রচুর লোক শুনতে আসছে এইসব মনোজ্ঞ বক্তৃতা।" - কোন্ বক্তৃতার কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ গ্যালিলিও পাড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কোপারনিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্ববিন্যাসের পক্ষে যেসব বক্তৃতা দিয়েছিলেন, সেসবের কথাই এখানে বলা হয়েছে।
২.১৩ "সেই সময়ে গ্যালিলিও রহস্য করে বললেন" - কোন্ সময়ে?
উত্তরঃ বৃহস্পতির উপগ্রহে অবিশ্বাসী এক উচ্চপদস্থ ধর্মযাজক, যিনি দূরবিন ব্যবহার অসম্মত ছিলেন, তাঁর মৃত্যুর অব্যবহিত পরের কথা এখানে বলা হয়েছে।
২.১৪ "তাই সারাজীবন তাঁদের মনে এই ধারণা বদ্ধমূল থেকে যায় যে," - কাদের মনে কী ধারণা বদ্ধমূল থেকে যায়?
উত্তরঃ সাক্ষর ইটালিবাসীর মনে বদ্ধমূল থেকে যায় যে, লাতিন ভাষায় লেখা প্রকান্ড ও জ্ঞানগর্ভ বইগুলি তাঁদের কাছে অবরুদ্ধ হয়ে থাকবে।
২.১৫ "নিজের দূরবীন দিয়ে গ্যালিলিও অনেক নতুন আবিষ্কার করছেন।" - স্বদেশে ফিরে আসার পর গ্যালিলিও কী কী নতুন আবিষ্কার করেন?
উত্তরঃ স্বদেশে ফিরে আসার পর গ্যালিলিও সূর্যবিম্বে কলঙ্কবিন্দু, শুক্রগ্রহের ঔজ্জ্বল্যের হ্রাসবৃদ্ধি এবং শনির বলয় - এই তিনটি নতুন বিষয় আবিষ্কার করেন।
২.১৬ "সূর্য যে জগতের কেন্দ্র-স্বরূপ - এটি অযৌক্তিক এবং যথার্থ ধর্মমতের পরিপন্থী ।" - Inquisition তার এই বক্তব্যের সপক্ষে কী যুক্তি দিয়েছিল?
উত্তরঃ Inquisition তাঁর বক্তব্যের সপক্ষে বলেছিল যে, সূর্যকেন্দ্রিক মতবাদ বাইবেলের অনেক লেখার সঙ্গে মেলে না, যেসব ততদিন পর্যন্ত যাজক ও পন্ডিতেরা শিক্ষা দিয়েছেন।
২.১৭ "এক সময়ে গ্যালিলিও ভাবতেন - ইনি বিজ্ঞানকে শ্রদ্ধা করেন।" - কার সম্বন্ধে একথা ভেবেছিলেন গ্যালিলিও?
উত্তরঃ পোপ পদে যিনি নতুন অধিষ্ঠিত হয়েছিলন, তাঁর সম্বন্ধে গ্যালিলিও এরূপে ভেবেছিলেন।
See More : Full Class 11 Bengali Suggestion 2023
(৩) নিচের রচনাধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
৩.১ "নিজের দূরবিন নিয়ে গ্যালিলিও অনেক নতুন আবিষ্কার করলেন।" - দূরবিনের সাহায্যে গ্যালিলিও কী কী আবিষ্কার করলেন? সনাতনীরা তাঁর বিরুদ্ধতা করেছিলেন কেন?
উত্তরঃ লেখক সত্যেন্দ্রনাথ বসুর লেখা গ্যালিলিও গল্প থেকে প্রশ্নোদ্ধৃত বাক্যটি নেওয়া হয়েছে। ভেনিসে থাকাকালীন গ্যালিলিও নিজের তৈরি দূরবিনে চোখ রেখে লক্ষ করেন যে, চন্দ্রপৃষ্ঠ অত্যন্ত অসমান ও বন্ধুর, যা 'চাঁদের পাহাড়' নামে অভিহিত এবং ছায়াপথ প্রকৃতপক্ষে লক্ষ লক্ষ তারার সমাবেশ। বৃহস্পতির চারটি এবং পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহে চাঁদকেও পর্যবেক্ষণ করেন তিনি। স্বদেশে ফিরে গ্যালিলিও লক্ষ করেন সূর্যমন্ডলের অসংখ্য কলঙ্কবিন্দু। চাঁদের ন্যায় শুক্রগ্রহের এবং শনিগ্রহের চারিদিকের বলয়রেখাও পর্যবেক্ষণ করেন তিনি। দূরবিনের সাহায্যে গ্যালিলিও এসবই আবিষ্কার করেছিলেন।
গ্যালিলিও যে ভেনিসে থাকাকালে দূরবিনের সাহায্যে চাঁদের পাহাড়, ছায়াপথের প্রকৃতি, বৃহস্পতির চারটি এবং পৃথিবীর উপগ্রহে চাঁদকে আবিষ্কার করেছিলেন, তা সেখানকার ধার্মিক পন্ডিতেরা কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাননি। কুসংস্কারাচ্ছন্ন এই সনাতনীরা গ্যালিলিও শর্ত অনুরোধেও কিছুতেই দূরবিনে চোখ রাখেননি। সম্ভবত তাঁদের ভয় ছিল, এতে পাছে তাঁদের ধর্মবিশ্বাস টলে যায়। বরঞ্চ তাঁরা বলেন যে, এ সমস্তকিছুই যন্ত্রের কোনো জাদুশক্তির প্রভাবেই দেখা যাচ্ছে। তাঁদের মতে, যা খালি চোখে দেখা যায় না, তা যদি যন্ত্র দিয়ে দেখা যায়, তাহলে সেটা মোটেও বাস্তব নয়, যন্ত্রেরই কারসাজি। তাঁরা তাই গ্যালিলিওর বিরুদ্ধতা করে জানিয়েছিলেন যে, গ্যালিলিও আসলে চালাকির সাহায্যে কোপারনিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক ব্রহ্মান্ড-বিন্যাসের সপক্ষে যুক্তি সংগ্রহের মতো অন্যায়-কর্ম করছেন।
৩.২ "তখনকার দিনে ধার্মিক পন্ডিতেরা এসব বিশ্বাস করতে চাইলেন না।" - 'ধার্মিক পন্ডিতরা' কী বিশ্বাস করতে চাইলেন না এবং কেন?
উত্তরঃ প্রখ্যাত বাঙালী বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর 'গ্যালিলিও' প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, হল্যান্ডদেশীয় এক ব্যক্তি এক অভিনয় যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন শুনে গ্যালিলিও দূরবিন তৈরি করেন। ক্রমশ সেটি আরও উন্নত এবং শক্তিশালী হয়ে ওঠে। সেই দূরবিনে চোখ রেখে আকাশের অনেক নতুন নতুন দৃশ্য তিনি আবিষ্কার করেন - যেসব দৃশ্য ইতিপূর্বে ছিল মানুষের কল্পনার বাইরে।
গ্যালিলিও লক্ষ করেন যে, চন্দ্রপৃষ্ঠ অত্যন্ত অসমান ও বন্ধুর - যাকে 'চাঁদের পাহাড়' বলা হয়। ছাপাপথ যে প্রকৃতপক্ষে লক্ষ লক্ষ নক্ষত্রের সমাবেশমাত্র, তাও পর্যবেক্ষণ করেন তিনি। এ ছাড়া গ্যালিলিও দেখলেন যে, বৃহস্পতির চারদিকে চারটি উপগ্রহ প্রদক্ষিণ করছে। আমাদের পৃথিবীকেও প্রদক্ষিণ করছে তার একটিমাত্র উপগ্রহ - চাঁদ। তখনকার দিনের ভেনিসবাসী ধার্মিক পন্ডিতরা গ্যালিলিওর এসব পর্যবেক্ষণের কথা বিশ্বাস করতে চাইলেন না। কুসংস্কারাচ্ছন্ন এই পন্ডিতেরা গ্যালিলিওর শর্ত অনুরোধেও কিছুতেই দূরবিনে চোখ রাখতে চাইলেন না, পাছে তাঁদের ধর্মবিশ্বাস টলে যায় - এই ভয়ে। দূরবিনে চোখ না রেখেই তাঁরা বললেন যে, কোনো জাদুশক্তির প্রভাবেই দূরবিন দিয়ে বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ দেখা যাচ্ছে। তাঁদের মতে যা খালি চোখে দেখা যায় না, তা যদি যন্ত্র দিয়ে দেখা যায়, তাহলে সেটা মোটেও বাস্তব নয়, কেবল যন্ত্রের কারসাজি। তাঁরা আরও ভাবলেন যে, এইভাবে গ্যালিলিও কোপারনিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্ব-বিন্যাসের পক্ষে যুক্তি সংগ্রহের মতো অন্যায় কাজ করছেন। বাইবেল-অন্ধ যাঁরা এতদূর অবধি কষ্টকল্পনা করতে পারেন, তাঁরা কী করে বিশ্বাস করবেন মহান জ্ঞানী গ্যালিলিওকে?
৩.৩ "গ্যালিলিও রাজি হলেন," - কোন্ ব্যাপারে রাজি হয়েছিলেন গ্যালিলিও? গ্যালিলিওর জীবনের শেষ পাঁচ বছরের পরিচয় দাও।
উত্তরঃ বিখ্যাত বাঙ্গালী বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর 'গ্যালিলিও' প্রবন্ধে আমরা দেখি যে, ১৬১৬ খ্রিঃ ইনক্যুইজিসনের বিচারকরা রোমে পোপেও কাছে গ্যালিলিওর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালে পোপ, কার্ডিনাল বেলারিমিনকে ভার দেন গ্যালিলিওকে শোধরানোর। সেই অনুযায়ী রোমের বিচারসভায় গ্যালিলিওর ডাক পড়লে সেখানে যাবার আগেই বেলারিমিন তাঁকে নিজের প্রাসাদে ডেকে নেন। গ্যালিলিওর প্রকৃত শুভাকাঙ্ক্ষী এই উদার মনের মানুষটি রোমের ইনক্যুইজিসনের অন্যান্য বিচারদের মনোভাব আগে থেকেই টের পেয়েছিলেন। তাই তিনি গ্যালিলিওকে বাস্তবাদী হওয়ার অনুরোধ করেন। তিনি তাঁকে বুঝিয়ে বলেন যে, গ্যালিলিও যেন কোপারনিকাসের তত্ত্ব নিয়ে ধর্মযাজকদের সঙ্গে অযথা তর্ক না করেন। এ ছাড়া, বাইবেলের পঙ্ক্তি উদ্ধৃত করে গ্যালিলিওকে তাঁর নিজের মত ব্যাখ্যা করতেও নিষেধ করেন তিনি। কার্ডিনাল বেলারিমিনের এই সুপরামর্শেই গ্যালিলিও রাজি হয়েছিলেন।
শেষ জীবনে ফ্লোরেন্স শহরের উপকন্ঠে গ্যালিলিওর নিজের বাড়িতেই তাঁকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল। তবে, মৃত্যুর পাঁচ বছর আগে অর্থাৎ ১৬৩৭ খ্রিঃ তাঁর ওপরের বাধা নিষেধ অনেকটাই আলগা করে দেওয়া হয়। মহামান্য পোপের করুণায় তিনি বেশ কিছু বাধানিষেধের হাত থেকে নিষ্কৃতি পান। দেশ-বিদেশ থেকে বহু লোক তখন চালান ও ছাপা হতে থাকে। তা ছাড়া, প্রোটেস্টান্ট মতাবলম্বী লাভ করেছিলেন। গ্যালিলিওর শেষ পাঁচ বছরের জীবনে এইসব বিষয়গুলিই তাঁর পক্ষে গিয়েছিল।
৩.৪ "আর এক কারণে তাঁর সব আবিষ্কার ও মতামত শুধু পন্ডিত মহলে আবদ্ধ রইল না।" - কারণটি বিস্তৃতভাবে পর্যালোচনা করো।
উত্তরঃ ১৬১১ খ্রিঃ স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পর গ্যালিলিওর নিত্যনতুন আবিষ্কার ও মতবাদ একটা বিশেষ কারণে কেবল পন্ডিত-মহলের মধ্যেই আবদ্ধ থাকল না। কারণটা ছিল, দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে নিজের পরীক্ষালদ্ধ বক্তব্য বা দর্শনকে তুলে ধরার জন্য লাতিনের পরিবর্তে মাতৃভাষা ইটালিয়ানকেই তিনি সেইসময় গ্রহণ করেছিলেন।
তাসকানিসহ সমগ্র ইতালির সব সাক্ষর মানুষ যাতে তাঁর চিন্তাভাবনা, মতামত ও আবিষ্কারগুলি পড়তে বা শুনতে পারে, তার উদ্দেশ্যেই গ্যালিলিও এই বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ১৬১২ খ্রিঃ মে মাসে একটা চিঠিতে তিনি জানিয়েছিলেন যে, তাঁর দেশের যুবকরা যে-কোনো একটা খেতাব পাওয়ার জন্যই ডাক্তার বা দার্শনিক বা অন্য কিছু হতে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। তারপর এমন পেশা তারা গ্রহণ করে, যে পেশায় তারা একেবারেই অদক্ষ। অন্যদিকে, যাঁরা জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চার জন্য যথার্থই উপযুক্ত ব্যক্তি, তাঁরা নিজেদের জীবিকার কারণে বা দৈনন্দিন দুর্ভাবনার জন্য জ্ঞানচর্চা থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হন। অন্য পেশায় নিযুক্ত এইসব উপযুক্ত মানুষ লাতিন ভাষা না বোঝার জন্যও জ্ঞানচর্চা থেকে সরে থাকতে বাধ্য হন। এইসব হতভাগ্য, উপযুক্ত মানুষরা সারাজীবন ধরে এই ধারণা নিয়ে চলেন যে, বিশাল আকারের মহামূল্যবান বইগুলি যেগুলি প্রকৃতপক্ষে জ্ঞানের ভান্ডার, তা তাঁদের কাছে সম্পূর্ণভাবেই অজানা হয়ে থাকবে। গ্যালিলিও তাঁদের মধ্যে এই যথার্থ জ্ঞানের উন্মেষ ঘটাতে চেয়েছিলেন। কারণ, বিশ্বপ্রকৃতি সব মানুষকেই চোখ দিয়েছে তাঁর কার্যকলাপ দেখতে এবং বুদ্ধি দিয়েছে তাঁর স্বরূপ উপলদ্ধি করে বিশ্বপ্রকৃতির সেই স্বরূপকে নিজেদের কাজে লাগাতে।
সুতরাং বিশ্বের জ্ঞানবিজ্ঞানকে কয়েকজন পন্ডিতের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, দেশের সর্বস্বরের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যই সেই যুগে দাঁড়িয়েও গ্যালিলিও সাধুভাষা ল্যাটিনের পরিবর্তে সর্বজনবোধ্য ইটানিয়ান ভাষাকেই তারঁ গ্রন্থ রচনার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।
See More : Full Class 11 Bengali Suggestion 2023
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ