দ্বীপান্তরের বন্দিনী
কাজি নজরুল ইসলাম
(১) নিচের বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
১.১ ভারত-ভারতী বলতে এই কবিতায় কী বোঝানো হয়েছে? - দেশমাতা
১.২ "পুণ্যবেদীর শূন্যে ধ্বনিল ক্রন্দন __________" - দেড়শত বছর
১.৩ 'বীণার তন্ত্রী কাটিয়ে হায়' - 'বীণার তন্ত্রী' বলতে কী বোঝানো হয়েছে? - স্বাধীনতার দাবি
১.৪ "ধ্বংস হল কি রক্ষ-পুর" - 'রক্ষ-পুর' বলতে এখানে কী বোঝানো হয়েছে? - ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থা
১.৫ "হোমানল হতে বাণীর রক্ষী" - 'হোমানল' বলতে কবি এখানে কী বুঝিয়েছেন? - স্বাধীনতার যজ্ঞ
১.৬ "সাহিছে বিচার-চেড়ীর মার" - বিচার-চেড়ীর মার সহ্য করে - বন্দিনী সীতা-সম বাণী
১.৭ কবি কাকে আহ্বান জানিয়েছেন স্বাধীনতার জন্য? - যুগান্তরের ধর্মরাজকে
১.৮ রূপার কাঠির রূপকে কবি এখানে কী বলতে চেয়েছেন? - লোহার শিকল
১.৯ কবিতায় কী ধরনের পুরোহিতের কথা বলা হয়েছে? - শৌখিন
১.১০ শাসকদল সিংহকে ভয়ে কোথায় রাখে? - পিঞ্জরে
১.১১ বাণীপূজার জন্য আরতির তেল কবি কোথা থেকে আনতে বলেছেন? - জীবন চুয়ানো ঘানি থেকে
১.১২ "দ্বীপান্তরের ঘানিতে লেগেছে যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক।" - কবি এখানে ঘূর্ণিপাক বলতে কী বুঝিয়েছেন? - পরিবর্তনের ধ্বংসলীলা
১.১৩ যুগান্তরের ধর্মরাজ যা করেছেন - পদ্মে চরণ - পদ্ম রেখেছেন
(২) নিচের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
২.১ "আসে নাই ফিরে ভারত-ভারতী? / মার কতদিন দ্বীপান্তর?" - মাকে দ্বীপান্তরিতা বলা হয়েছে কেন?
উত্তরঃ স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামীদের দ্বীপান্তরে পাঠানো হত বলেই সেই তাৎপর্য দেশ মাকে দ্বীপান্তরিতা বলা হয়েছে।
২.২ "পূণ্য বেদীর শূণ্যে ধ্বনিল" - বেদি শূন্য, কী কারণে?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় উদ্ধৃতাংশে বেদিকে শূণ্য বলা হয়েছে, কারণ বেদিতে অধিষ্ঠিত দেশমাতা দ্বীপান্তরে বন্দিনি হয়েছেন।
২.৩ "যন্ত্রী যেখানে সান্ত্রী বসায়ে / বীণার তন্ত্রী কাটিয়ে হায়" - বীণার তন্ত্রী কী?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় উদ্ধৃতাংশে বীণার তন্ত্রী হল মানুষের ঐক্যবদ্ধ কন্ঠস্বর।
২.৪ "পূজারী, কাহারে দাও অঞ্জলি?" কবির এই প্রশ্নের কারণ কী?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতার উদ্ধৃতাংশে কবির এই প্রশ্নের মূলে রয়েছে মুক্ত স্বদেশকে দেখতে না পাওয়া।
২.৫ "তবে কি বিধির বেতার-মন্ত্র / বেজেছে বাণীর সেতারে আজ," - এই বিধির বেতার-মন্ত্র কী?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতার উদ্ধৃতাংশে বিধির বেতার - মন্ত্র হল স্বাধীনতার বার্তা।
২.৬ দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় অস্ত্রের আঘাতে কী হয়েছে?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় অস্ত্রের আঘাতে শতদল বা পদ্মের পাপড়িগুলি শত খন্ডে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
২.৭ ন্যায়ের শাসক বলতে কবি কাদের বুঝিয়েছেন?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় ন্যায়ের শাসক বলতে কবি বিদ্রুপার্থে ইংরেজি শাসনব্যবস্থাকে বুঝিয়েছেন।
২.৮ বাঘকে কীসের আঘাত করা হয়?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় বাঘকে অগ্নিশেলের আঘাত করা হয়।
২.৯ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে কী হবে বলে কবি মনে করেন?
উত্তরঃ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে দেশের বর্তমান পরাধীনতার বিনাশ হয়ে নতুন যুগের সূচনা হবে বলে কবি মনে করেন।
২.১০ "শতদল যেথা শতধা ভিন্ন" - এই শতদল কী?
উত্তরঃ এই শতদল হল স্বাধীনতার বাসনা।
২.১১ পূজারির সঙ্গে কী থাকার কথা কবি জানতে চেয়েছেন?
উত্তরঃ দেশ-মাকে বন্দনা জন্য বাণী-উপচার সঙ্গে আছে কি না কবি জানতে চেয়েছেন।
২.১২ ধর্মরাজ কীসের বার্তা বহন করে এনেছেন?
উত্তরঃ ধর্মরাজ যুগান্তরের বার্তা বহন করে এনেছেন।
See More : Full Class 11 Bengali Suggestion 2023
(৩) নিচের রচনাদর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
প্রশ্নঃ "তবে তাই হোক।" - এক্ষেত্রে কবির অভীষ্ট কী ছিল?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম তাঁর 'দ্বীপান্তরের বন্দিনী' কবিতায় একদিকে যেমন ইংরেজদের সাম্রাজ্যবাদী শোষণের ছবিকে তুলে ধরেছেন, অন্যদিকে তা থেকে মুক্তির স্পষ্ট আকাঙ্ক্ষাও এখানে প্রকাশিত হয়েছে। কবি দেখেছেন স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামরত মানুষদের ওপরে নেমে এসেছে তীব্র অত্যাচার। আইনের শাসনের নামে সত্যকেই আসলে বন্দি করে রাখা হয়েছে। মুক্ত কন্ঠে কথা বলতে গেলেই বিদ্রোহী আখ্যা দেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতার শতদল ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে ইংরেজদের পুলিশ প্রশাসনের নির্মম অত্যাচারে। তাই এখান থেকেই মুক্তির আকাঙ্ক্ষা কবির মনে তীব্র হয়ে উঠেছে। স্বাধীনতার জন্য যারা আত্মবলিদান করেছেন তাদের থেকে প্রেরণা নিয়ে মুক্ত ভারতীর সন্ধান করেছেন। দ্বীপান্তরের আন্দামানে কবি যেন শুনতে পেয়েছেন সেই মুক্তির সুর। কামান গোলার সীসা স্তুপে স্বাধীনতার সুরম্য প্রাসাদের নির্মাণের সম্ভাবনা দেখেছেন কবি।
তাঁর কানে ভেসে এসেছে মুক্ত বদ্ধ সুর অর্থাৎ স্বাধীনতার কন্ঠস্বর। যুগান্তরের ধর্মরাজ অর্থাৎ পরিবর্তনের দিশারিকে কবি যেন প্রত্যক্ষ করেন, আর তারই আহ্বানগীত রচনা করেন কবি নিজে। 'তবে তাই হোক' - সেই সম্ভাবনার স্বীকৃতি। দ্বীপান্তরের ঘানিতে যে যুগান্তরের ঘূর্ণীপাকে লেগেছে তার জন্য পাঞ্চজন্য শাঁখ বাজাতে বলেছেন কবি।
প্রশ্নঃ দ্বীপান্তরে বন্দিনী কবিতায় কবির যে স্বদেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটেছে তা আলোচনা করো।
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলামের লেখা ফণি-মনসা কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় কবির স্বদেশপ্রেমের অসামান্য প্রকাশ দেখা যায়।
১৭৫৭ খ্রিঃ পলাশীর প্রান্তরে ভারতবর্ষের যে স্বাধীনতার সূর্য অস্তাচলে গিয়েছিল, তার জন্য কবির আক্ষেপ এই কবিতায় তীব্র স্বরে ধ্বনিত হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে বন্দি ও দেশান্তরী হতে হয়েছে অনেক দেশপ্রেমিককে। আন্দামান ও নির্বাসন তখন সমার্থক শব্দে পরিনত হয়েছে। স্বাধীনতার লাঞ্ছনা, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উপর ব্রিটিশ শাসকদের নির্মম অত্যাচারের ছবি কবি তাঁর হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করে তাকে মর্মস্পর্শী ভাষায় এই কবিতায় চিত্রিত হয়েছে।
কবি দেখেছেন সংগ্রামী মানুষের উপর নেমে আসা অত্যাচারের জঘন্য রূপ। কবি দেখেছেন প্রতিবাদের আর মুক্তির কন্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নির্লজ্জ প্রয়াস। এমন এক আইনের শাসনে দেশ বাঁধা, সেখানে সত্য কথা বললে বন্দি হতে হয়, স্বাধীন মনে কথা বললে বিদ্রোহী আখ্যা দেওয়া হয়। আইনের সাহায্যে ন্যায়বিচারের পরিবর্তে শাসক যেখানে অত্যাচার আর শোষণকে কায়েম রাখতে সক্ষম হয়। কিন্তু শাসনের অবশান আর স্বাধীনতার উন্মেষের মধ্যেই রয়েছে জীবনের সার্থকতা।
প্রশ্নঃ 'মুক্ত ভারতী ভারতে কই?' - ভারতী বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? ভারতমাতার পরাধীনতার কথা কবি কীভাবে এই কবিতায় ফুটিয়ে তুলেছেন?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলামের লেখা ফণি-মনসা কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় ভারতী বলতে আমদের এই দেশ ভারতবর্ষকে বোঝানো হয়েছে।
কবি জানিয়েছেন, দেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামরত মানুষজনকে ইংরেজ সরকার আইনের অপপ্রয়োগের সাহায্যে আন্দামানে দ্বীপান্তরে পাঠাতেন। দেশের মূল স্রোত থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করে ভারতের স্বাধীনতার জোরাল দাবি দূরবল করে দেওয়াই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য।
আমরা জানি, রূপকথার রাজকন্যারা রূপোর কাঠির স্পর্শে ঘুমিয়ে পড়ত। কবি নজরুল বোঝাতে চেয়েছেন, ইংরেজ শাসনও এই রকম রূপোর কাঠির ছঁয়াতে দেশের সার্বভৌম স্বাধীনতার পরিসমাপ্তি করতে। স্বাধীনতার শতদল সেখানে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ব্রিটিশ সান্ত্রিদের নির্মম অত্যাচারে। অত্যাচারি ইংরেজ শাসককে কবি এই কবিতায় রক্ষপুরের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এরপর কবি বলতে চেয়েছেন যে, আন্দলনকারীদের সামাজিক সন্মান ও প্রতিষ্ঠার লোভে মিথ্যা স্বাধীনতা সংগ্রামে জরিয়ে পরেছে।
See More : Full Class 11 Bengali Suggestion 2023
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ