নুন
জয় গোস্বামী
(১) নিচের বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
১.১ "কী হবে দুঃখ করে?" - এই ইঙ্গিত দেয় - অসহায়তার
১.২ "আমাদের দিন চলে যায়" - সাধারণ ভাতকাপড়ে
১.৩ "সব দিন হয় না বাজার" - এই বাজার না হওয়ার কারণ - অর্থাভাব
১.৪ "খেতে বসে রাগ চড়ে যায়" - এই রাগের কারণ হল - ঠান্ডা ভাতে নুন না থাকা
১.৫ কবিতায় শেষে কবি শুকনো ভাতের সঙ্গে কীসের ব্যবস্থা করার কথা বলেছে? - লবণের
১.৬ কবিতাটিতে কতগুলি স্তবক আছে? - ৮টি
১.৭ "রাগ চড়ে মাথায় আমার" - এর দ্বারা যা বোঝানো হয়েছে, তা হল - রাগের নিয়ন্ত্রণহীনতা
১.৮ "আমার তো সামান্য লোক" - এই সামান্য শব্দটির তাৎপর্য হল - জনসাধারণ
১.৯ "আমাদের দিন চলে যায় সাধারণ __________।" - জামাকাপড়ে
১.১০ "বাড়ি ফিরি __________।" - দুপুররাতে
(২) নিচের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশণগুলির উত্তর দাওঃ
২.১ "আমার তো অল্পে খুশি, কী হবে দুঃখ করে?" - দুঃখ করে কিছু হবে না বলে কবি কেন মনে করেছেন?
উত্তরঃ কবি জয় গোস্বামী তাঁর নুন কবিতায় দুঃখ করে কিছু হবে না বলে মনে করেছেন, কারণ বেশি সুখের কোনো সম্ভাবনাই দরিদ্র নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনে নেই।
২.২ "রাত্তিরে দু-ভাই মিলে টান দিই গঞ্জিকাতে" - এই গঞ্জিকাতে টান দেওয়ার তাৎপর্য কী?
উত্তরঃ গঞ্জিকাতে টান দেওয়ার তাৎপর্য হল জীবনের যন্ত্রণাকে, কঠোর বাস্তবকে ভুলে থাকার ব্যর্থ চেষ্টা।
২.৩ "কিন্তু, পুঁতবো কোথায়?" - গোলাপচারা সম্পর্কে কথকের এই মন্তব্য স্পষ্ট করো।
উত্তরঃ "কিন্তু, পুঁতবো কোথায়?" - গোলাপচারা সম্পর্কে এই মন্তব্যের কারণ হল দরিদ্র কথকের কোনোভাবে শুধু মাথাগোঁজার স্থানটুকুই আছে।
২.৪ "মাঝে মাঝে চলেও না দিন" - এই উক্তির মধ্য দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তরঃ "মাঝে মাঝে চলেও না দিন" - এই উক্তির মধ্য দিয়ে কবি নিম্নবিত্ত হতদরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক অনিশ্চিয়তার কথা বোঝাতে চেয়েছেন।
২.৫ "আমরা তো সামান্য লোক" - 'সামান্য' শব্দটি এখানে কীসের প্রতীক?
উত্তরঃ নুন কবিতায় সামান্য শব্দটি নিম্নবিত্ত হতদরিদ্র মানুষের সামান্য অধিকার রক্ষিত না হওয়ার ক্রোধ ও অভিমানের প্রতীক।
২.৬ গোলাপচারা নিয়ে শেষে কী সমস্যার উদ্ভব হয়?
উত্তরঃ জয় গোস্বামী নুন কবিতায় দেখা যায়, গরিব মানুষের বসবাসের সামান্য সংস্থানে গোলাপচারা পোঁতবার জন্য উপযুক্ত স্থান পাওয়া যায় না।
২.৭ নুন কবিতায় আমরা কারা?
উত্তরঃ জয় গোস্বামীর নুন কবিতায় আমরা বলতে দীনদরিদ্র, গরিব-দুঃখী, যারা অল্পেই খুশি তাদের কথা বলা হয়েছে।
২.৮ "করি তো কার তাতে কী" - একথা বলার কারণ কী?
উত্তরঃ গরিব মানুষের অনিয়মিত অশান্তিময় জীবন নিয়ে উচ্চবিত্ত ধনীদের মাথাব্যথার অভাব এবং তার ফলে তাদের অভাবী জীবন থেকে জন্ম নেওয়া অসংযম এবং অশালীন ঔদ্ধত্যের প্রকাশ ফুটে উঠেছে আলোচ্য উদ্ধৃতিটিতে।
See More : Full Class 11 Bengali Suggestion 2023
(৩) নীচের রচনাধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
প্রশ্ন : নুন কবিতার মূল বক্তব্য সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর : নুন কবিতায় কবি জয় গোস্বামী এক নিম্নবিত্ত পরিবারের দিনযাপনকে অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন। তাদের অভাবী জীবনের নিত্য সঙ্গী অসুখ আর ধার দেনা। যদিও এই কঠোর বাস্তব থেকে মুক্তির জন্য বা দুঃখকে ভুলে থাকার জন্য এই সব দরিদ্র মানুষের জীবনে সামাজিক সম্পর্কের বিন্যাসও পাল্টে যায়। রাত্তিরে পিটু পিটি দুই ভাইয়ের মত পিতা পুত্র গাজায় টান দিয়ে নেশায় বিভোর হয়ে থাকে দুক্ষুকে ভুলে থাকার জন্য। তাদের দরিদ্র জীবনে প্রতিদিন বাজার করা সম্ভব হয় না। আবার কখনো হাতে পয়সা থাকলে বাজার হয়ে যায় মাত্রা ছাড়া। বাড়িতে ফেরার পথে সৌন্দর্যপ্রিয়তা বা বিলাসিতার মগ্ন হতে কখনো কখনো আবার গোলাপ চারাও কিনে আনে তারা।
কিন্তু কোথাও পোতা হবে সেই গোলাপ চারা কিংবা কবে তাতে ফুল ফুটবে এসব প্রশ্নের উত্তরে এইসব নিম্ন বৃত্ত মানুষের জীবন ভাবিত নয়। তাদের কাছে সত্য শুধু আবেগ তাড়িত হয়ে ক্ষণিক ইচ্ছে পূরণ। মাঝে মাঝে গভীর রাতে বাড়ি ফিরে তারা যখন দেখে ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ভাতে খাওয়ার মত উপযুক্ত নুন টুকু নেই রাগ মাথায় চড়ে যায় তখন। বাপ বেটা দুজন মিলে সমস্ত পারা তখন মাথায় করে। সেই মুহূর্তে তারা ভুলে যায় সামাজিক সৌজন্য ও ন্যূনতম শ্লীলতাবোধ। এক ধরনের বেপরোয়া মানসিকতার বশবর্তী হয়ে তখন তারা ঘোষণা করে - 'করি তো কার তাতে কি?' সব মিলিয়ে জয় গোস্বামী যেন তুলে আনেন একটা গোটা মানবিক ভূখণ্ডকে যেখানে কোন বিরাট রাজনৈতিক দর্শন অনুপস্থিত আছে শুধু ছোট ছোট স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকার একান্ত দাবি। কবিতাটি শুরু হয়েছিল নিম্নবিত্ত মানুষের অসহায়তা ও দারিদ্র্যের করুন আখ্যান দিয়ে। সেই আপাত শান্ত কবিতাই শেষ হয় বেঁচে থাকার ন্যূনতম সংস্থানের দাবি জানিয়ে।
প্রশ্ন : "কি হবে দুঃখ করে?" - কোবির এই মন্তব্যের কারণ নিজের ভাষায় লেখ।
উত্তর : জয় গোস্বামীর নুন কবিতায় নিম্নমৃত্যু মানুষের অল্পে খুশি হওয়া জীবনে যে অনেক কিছুরই অভাব আছে সেই অপ্রাপ্তি নিয়ে দুঃখ না করার কথা বলা হয়েছে। সাধারণ ভাত কাপড়ে আর অসুখে ধার দেনাতে যে জীবন নিম্নবিত্ত মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম অতিবাহিত করে অভাব আর বঞ্চনায় সেখানে অবলম্বন। কিন্তু তার মধ্যে থাকেও আনন্দ খুঁজে নেই সেই ওইসব নিম্নবিত্ত মানুষ। তাদের এই খুশি হওয়া মন থেকে নয় খুশি না হওয়া উপায় নেই তাই। আসলে তারা জানে তাদের জীবনে যতই অপ্রাপ্তি থাকুক না কেন কিছুতেই তাদের সেই অভাব পূরণ হবে না। তাই নিতান্ত বাধ্য হয়েই অত্যন্ত সামান্য উপকরণের মধ্যে থেকেই তারা আনন্দ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করে, নিজেদের তৃপ্ত রাখতে শিখে নেয়।
এই নিম্নবিত্ত মানুষরা যতই তাদের দারিদ্রকৃষ্ট জীবনের অপ্রাপ্তি বা যন্ত্রণাকে মানিয়ে নিয়ে দিনযাপনের চেষ্টা করুক না কেন আসলে তারা নিজেদেরই বঞ্চনা করে। এই আত্ম প্রবঞ্জনা, তাই যেকোনো মুহূর্তে বাস্তবের আঘাতে শেষ হয়ে যায়। রাতে বাড়ি ফিরে এইসব ক্ষুধা তুর নিম্নবিত্ত মানুষরা যখন ঠান্ডা ভাতে প্রয়োজনীয় নুন টুকু পায় না তখন তার রাগ চড়ে যায়। আসলে দারিদ্র্যের জ্বালায় তারা যখন হারিয়ে ফেলে তাদের সহনশীলতার শেষ মাত্রাও। বেঁচে থাকার জন্য নূন্যতম প্রয়োজনীয় দ্রব্যটুকু না পাওয়ার রাগী তখন তাদের মাথায় চড়ে বসে।
প্রশ্ন : "সে অনেক পরের কথা" - বক্তার কোন বিষয়কে কেন অনেক পরের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর : জয় গোস্বামীর নুন কবিতার নিম্নবিত্ত কথক অভাব অনটন ধার দেনা বা অসুখের নিত্য সহচর্য সত্ত্বেও মাঝেমাঝে বাড়িতে ফিরে আসার সময় শখ করে গোলাপ চারা কিনে আনেন। কিন্তু সেই গোলাপ চারা প্রতার জায়গা নেই তাদের সেই স্থান অভাবের বাসস্থানে। উপরন্তু সংশয় থাকে যে সে গোলাপ চারায় আদৌ ফুল হবে কিনা। এইসব ভাবনা মনে এলেও এগুলোকেই কথক অনেক পরের কথা বলেছেন।
নিম্ন বৃত্তের জীবনে অভাবের যে রোজ নামচা কবি জয় গোস্বামী এই কবিতায় তুলে ধরেছেন সেটিই ভীষণ রকম ভাবে সত্য। সাধারণ ভাত কাপড়ে অল্পে খুশি হয়েই থাকতে হয় এইসব মানুষদের। সেখানে দুঃখ টুকু করা যায় না, কারণ দুঃখ করে কোন লাভ নেই। অসুখ আর ধার দেনাই ভরা সেই জীবনে দুঃখকে ভুলে থাকার জন্য চলে সামাজিক সম্পর্কের বিন্যাসকে ভুলে গিয়ে পিতা পুত্রের একসঙ্গে গাঁজাতে টান দেওয়াও। সব দিন বাজার করাও সম্ভব হয় না। আবার তার সঙ্গে থাকে অবিবেচক বেহিসাবি মোনও - তাই সম্ভব হলেই মাত্রা ছাড়া বাজারও হয়ে যায় কোন কোন দিন। তখনই বাস্তবকে ভুলে শখ মেটানোর জন্য বাড়িতে ফেরার পথে কিনে আনা হয় গোলাপ চারা। এভাবেই একদিকে মনের ভাব-বিলাস রোমান্টিকতা এবং অন্যদিকে কঠোর বাস্তবের মধ্যে তৈরি হয় সংঘাত। আর সেখানেই নির্মম বাস্তব পিছনে ফেলে দেয় ভাব বিলাস বা রোমান্টিক স্বপ্নলোকে। গোলাপ চারা কোথায় পোতা হবে বা তাতে ফুল হবে কিনা এসব ভাবনা হয়ে যায় অনেক পরের কথা আর বেঁচে থাকা বা দিনযাপনের জন্য লড়াই করার বিষয়টিই হয় তখন একমাত্র ভাবনার বিষয়।
প্রশ্ন : নুন কবিতার নামকরণের সার্থকতা আলোচনা কর।
উত্তর : কবি জয় গোস্বামীর নুন একটি অন্যতম কঠিন বাস্তববাদী কবিতা। নিত্য দিনের খাদ্য বস্তুর মধ্যে লবণ একটি সস্তা এবং সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান। গরিব দিন দরিদ্র মানুষেরা রোজকার খাবারে প্রোটিন ভিটামিন যুক্ত খাদ্যের জোগাড় করতে না পারলেও ভাতের সঙ্গে একটু নুন জোগাড় করে অতি কষ্টে। শুকনোভাতে একটু নুন হলেই আনন্দের সঙ্গে তারা সেটা খেয়ে পেট ভরায়।
নিত্যদিন হাড়ভাঙ্গা খাটনি খেটে এরা সমাজের সেবা করে কিন্তু উপযুক্ত পারিশ্রমিক থেকে এরা চিরকালই বঞ্চিত হয়ে চলেছে। তাই এই অসহায় অত্যাচারিত মানুষগুলির হয়ে কবি সামান্য মনের দাবি জানিয়েছেন সমগ্র সমাজের কাছে। সাধারণ ভাত কাপড়ে কোনদিন মাত্রা ছাড়া আর কোন দিন আট পেটা খেয়েই তাদের দিন চলে যায় খুশিতে হেসে খেলে। অধিক কষ্ট ভুলে থাকতে মাঝে মাঝে বাপ-বেটাই এক হয়ে দুই বন্ধুর মত নেশা করে। শখ বা বিলাসিতার কোন অবকাশই নেই তাদের জীবনে। তবুও মাঝে মাঝে রাত দুপুরে বাড়ি ফিরে তারা যখন দেখে যে তাদের শুকনোভাতে সামান্য নন্টু করে ব্যবস্থা নেই তখন প্রবল চিৎকারে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে তারা তাদের আরতি প্রকাশ করে জানায় - "আমাদের শুকনোভাতে লবণের ব্যবস্থা হোক"। লক্ষণীয় এই কবিতায় কবি দুবার নুনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। একবার করেছেন অভাবে সূত্রে নুন নেই ঠান্ডা ভাতে। আর যখন দাবির কথা উঠেছে তখন নুনের বদলে ব্যবহার করা হয়েছে লবণ শব্দটি। শ্রমজীবী দরিদ্র মানুষেরা যেহেতু তথাকথিত ভদ্র শাসক শ্রেণীর কাছেই তাদের দাবি জানাচ্ছে তাই দাবি পত্রের পোশাকি ভাষা মানেই কোভিদ ব্যবহার করেছে লবণ শব্দটি। যা মানুষের জীবন ধারণের অন্যতম একটি উপাদান। তাই কোভিদ নামকরণ যে সার্থকতা পেয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
See More : Full Class 11 Bengali Suggestion 2023
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ