বিশ্বের ভাষা ও ভাষাপরিবার
বাংলা ভাষা সাহিত্যের ইতিহাস
(১) নিচের বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
১.১ ইথিওপিয়ার প্রধান ভাষা হল - আমহারিক
১.২ জর্জীয় ভাষা যে ভাষা-বংশের অন্তর্গত তা হল - ককেশীয়
১.৩ নিউজিল্যান্ডের উপজাতিবিশেষের ভাষা হল - মাওরি
১.৪ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি লোকের মাতৃভাষা - মান্ডারিন চাইনিজ
১.৫ শ্যামদেশের বর্তমান নাম - থাইল্যান্ড
১.৬ আন্দামানি ভাষা-বংশের ভাষা হল - ইয়ারভা
১.৭ ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী থেকে উদ্ভুত ভাষাবর্গগুলির নাম - কেন্তুম্ এবং সতম্
১.৮ সেমীয় ভাষাভাষীদের আদি বাসস্থান ছিল - উত্তর আফ্রিকা এবং এশিয়ার আরবীয় উপদ্বীপ অঞ্চল
১.৯ আরবি ভাষা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, কারণ - মুসলিম সম্প্রদায়ের কোরাণ এই ভাষায় লেখা
১.১০ ভারতেই বাইরে প্রচলিত দারিক ভাষার নাম হল - পাকিস্থান ও বেলুচিস্তানের পাহাড়ি অঞ্চলে প্রচলিত ব্রাহুই ভাষা
১.১১ মিতাল্লি হল - পূর্ব মেসোপটেমিয়ার অধুনালুপ্ত ভাষা
১.১২ কোন্ দার্শনিক প্রথম কৃত্রিম এক আন্তর্জাতিক ভাষার কল্পনা করেছিলেন? - দেকার্ত
১.১৩ পৃথিবীর সমস্ত ভাষাকে কটি ভাষাপরিবারে ভাগ করা হয়েছে? - একুশটি
১.১৪ জার্মান ভাষা কোন্ ভাষাবর্গের অন্তর্গত? - কেন্তুম্
১.১৫ ব্যাবিলনীয় ভাষা কোন্ ভাষাপরিবারের অন্তর্গত - সেমীয়
১.১৬ চিনের মাঞ্চুরিয়া এবং সাইবেরিয়ায় কোন্ ভাষাবংশ প্রচলিত? - মাঞ্চু
১.১৭ টোডা ভাষাটি কোন্ অঞ্চলে প্রচলিত? - নীলগিরি
১.১৮ তামিল, তেলেগু ইত্যাদি ভাষাগুলি কোন্ ভাষাবংশের অন্তর্গত? - দ্রাবিড়
১.১৯ নীচের কোন্টি কৃত্রিম ভাষার উদাহরণ? - এসপেরান্তো
১.২০ জেন্দ আবেস্তা রচিত হয় কোন্ ভাষায়? - আবেস্তীয়
১.২১ পশ্চিম জার্মানিক ভাষাশাখা থেকে উদ্ভূত হয়েছে - ফ্লেমিস্
১.২২ অনন্বয়ী বা অসমবায়ী বর্গের ভাষার উদাহরণ হল - চিনা ভাষা
(২) নিচের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
২.১ অনন্বয়ী বা অসমবায়ী বর্গের ভাষা কাকে বলে?
উত্তরঃ যেসব ভাষায় উপসর্গ-অনুসর্গ-প্রত্যয়-বিভক্তির অস্তিত্ব নেই এবং বাক্যে অবস্থান অনুযায়ী বাক্যান্তর্গত শব্দের কারকত্ব বা অন্যান্য বাক্য-বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়, তাদের বলে অনন্বয়ী বা অসমবায়ী ভাষা। যেমন - চিনা ভাষা।
২.২ সমগোত্রজ ভাষা বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ ভাষাবিজ্ঞানীরা ব্যাকরণগত সাদৃশ্যের নিরিখে বর্তমান বিশ্বের সমস্ত ভাষাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছেন এবং এক-একটি ভাগের অন্তর্গত ভাষাসমূহ একই ভাষাবংশ বা ভাষাগত উৎস থেকে জাত বলে অনুমান করেছেন। এই একই বংশজাত ভাষাসমূহকে বলা হয় সমগোত্রজ ভাষা।
২.৩ ফারসি বাষা কোন্ ভাষা থেকে জন্মগ্রহণ করেছে?
উত্তরঃ প্রাচীন পারসিক ভাষা থেকে মধ্যযুগে পহ্লবী ভাষা জন্মগ্রহণ করেছিল। এই পহ্লবী ভাষা থেকেই আধুনিক ফারসি ভাষা জন্মেছে।
২.৪ ভারতীয় আর্য ভাষা উপশাখার প্রাচীনতম ভাষা কী?
উত্তরঃ ভারতীয় আর্য ভাষা উপশাখার প্রাচীনতম ভাষা হল বৈদিক।
২.৫ জার্মানিক ভাষা উপশাখার অধুনালুপ্ত ভাষাটি কী?
উত্তরঃ জার্মানিক ভাষা উপশাখার অধুনালুপ্ত ভাষাটি হল গথিক।
২.৬ পিগমিদের ভাষা কোন্ আফ্রিকান ভাষাশাখার অন্তর্গত?
উত্তরঃ পিগমিদের ভাষা হটেনটট্-বুশম্যান নামক আফ্রিকান ভাষা-শাখার অন্তর্গত।
২.৭ মঙ্গোলিয়া রাষ্ট্রের প্রধান ভাষা কী?
উত্তরঃ মঙ্গোলিয়া রাষ্ট্রের প্রধান ভাষা হল খালখা মোঙ্গল।
২.৮ জাপানি ও কোরীয় ভাষা কোথায় প্রচলিত?
উত্তরঃ জাপানি ভাষা জাপান এবং রিয়ুকিয়ু দ্বীপে এবং কোরীয় ভাষা উত্তর কোরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়া রাষ্ট্রদ্বয়ে প্রচলিত।
২.৯ মিশ্র ভাষা কাকে বলে?
উত্তরঃ একাধিক ভাষাগোষ্ঠীর মানুষের পেশাগত বা অভিবাসনজনিত কারণে পাশাপাশি থাকার ফলে উভয় ভাষার মিশ্রণে যখন নিম্নমানের একটি কৃত্রিম ভাষার সৃষ্টি হয়, তখন তাকে বলে মিশ্র ভাষা।
২.১০ পিজিন ইংরেজি কোন্ কোন্ অঞ্চলে প্রচলিত ছিল?
উত্তরঃ পিজিন ইংরেজি চিনদেশের উপকূলর্বতী বন্দরগুলিতে জাপানে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার চিনাপট্টিগুলিতে প্রচলিত ছিল।
২.১১ চিনুক জারগন ভাষা কীভাবে তৈরি হয়?
উত্তরঃ আমেরিকার দুই আদিম ভাষা চিনুক ও নুটকা ভাষার শব্দের সঙ্গে ইংরেজি ও ফরাসি শব্দের মিশ্রণে এবং চিনুক ভাষার উচ্চারণরীতিকে গ্রহণ করে তৈরি হয়েছিল চিনুক জারগন।
২.১২ সাংকেতিক ভাষা কাকে বলে?
উত্তরঃ মাথা, চোখ, আঙুল-সহ হাত ইত্যাদি অঙ্গের সঞ্চালনের ওপর নির্ভর করে মূক ও বাধিরদের জন্য যে বিশেষ ভাষা তৈরি তাই-ই সাংকেতিক ভাষা।
See More : Full Class 11 Bengali Suggestion 2023
(৩) নিচের রচনাধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
৩.১ অবর্গীভূত ভাষা কাকে বলে? পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি অবর্গীভূত ভাষার পরিচয় দাও।
উত্তরঃ পৃথিবীর যেসব ভাষায় এমন কোণো ভাষাতাত্ত্বিক প্রমাণ বা সূত্র পাওয়া যায়নি, যার মাধ্যমে তাকে অন্য একাধিক ভাষার সঙ্গে একই বংশজাত অর্থাৎ কোনো একটি নির্দিষ্ট ভাষাবর্গের অন্তর্ভুক্তি বলে ধরা যায়, তাদের অবর্গীভূত বা অশ্রেণিবদ্ধ ভাষা বলে। জাপানি ও কোরীয়, বাস্ক, বুরুশাসকি ইত্যাদি ভাষা এবং আন্দামানি ভাষাশাখার অন্তর্গত এই শ্রেণির ভাষা।
জাপানি ও কোরীয়ঃ কোরীয় ভাষা এবং উপভাষাসহ জাপানি ভাষার সঙ্গে আলতাইক ভাষাবংশের ভাষাগুলির অবশ্য সামান্য সাদৃশ্য আছে। জাপান ও রিয়ুকিয়ু দ্বীপে জাপানি ভাষা এবং উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় কোরীয় ভাষা প্রচলিত। প্রত্যয়, বিভক্তি এবং পদক্রমের দিক দিয়ে এই দুই ভাষার মধ্যে মিল থাকলেও কারকবোধক অনুসর্গের প্রয়োগবিধি এই দুই ভাষার সম্পূর্ণ পৃথক। জাপানি ভাষার চিনা ভাষা, লিপি ও সংস্কৃতির প্রভাব যেমন আছে, তেমনি আছে কোরীয় ভাষাতেও।
বাস্কঃ ফ্রান্সের পশ্চিমে এবং স্পেনের পূর্বদিকে পিরানিজ পর্বতমালার চারপাশে বাস্ক ভাষা প্রচলিত। উত্তর স্পেনের দুই শতাংশ এবং দক্ষিণ ফ্রান্সের কিছু মানুষের মাতৃভাষা বাস্ক। ফিন্নো-উগ্রীর অর্থাৎ উরানীয় ভাষা-পরিবারের ভাষাগুলির সঙ্গে এই ভাষার সামান্য সাদৃশ্য আছে।
বুরুশাসকিঃ ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে প্রচলিত রয়েছে বুরুশাসকি বা খজুনা ভাষা নামক এক বিচ্ছিন্ন ভাষা।
আন্দামানিঃ আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন দ্বীপে প্রচলিত বহু ভাষা যেমন - শারি, কোরা, ইয়ারভা প্রভৃতি এই বিচ্ছিন্ন ভাষাশাখার অন্তর্গত। কম্বোডিয়ার খমের ও অশ্রেণিবদ্ধ ভাষা।
৩.২ ভাষার রূপতত্ত্ব বা আকৃতি অনুযায়ী শ্রেণীবিভাগ করার পদ্ধতিগত সুবিধা কী? এই পদ্ধতিটি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তরঃ রূপতত্ত্বগত অর্থাৎ গঠনগত দিক দিয়ে পৃথিবীর ভাষাসমূহের শ্রেণিবিভাগ করা হলে সেই বিশ্লেষণে বিভিন্ন ভাষার সাংগঠনিক অবয়ব সুস্পষ্ট হয়। এই পদ্ধতিতে প্রাথমিকভাবে বিশ্বের ভাষাসমূহকে দুভাগে ভাগ করা যায় -
(১) অনন্বয়ী বা অসমবায়ী ভাষা
(২) সমবায়ী ভাষা
যে সব ভাষার উপসর্গ-অনুসর্গ-প্রত্য্য-বিভক্তির অস্তিত্ব নেই এবং বাক্যে অবস্থান অনুযায়ী শব্দের কারকত্ব বা অন্য অসমবায়ী ভাষা। চিনা ভাষা এবং ভোট-চিনা ভাষাবংশের বেশ কয়েকটি ভারতীয় ভাষা এই শ্রেণির। সমবায়ী ভাষার এসব উপাদান আছে।
রূপতত্ত্ব অনুযায়ী সমবায়ী শ্রেণির ভাষাগুলি মুক্তান্বয়ী বর্গ, অত্যন্বয়ী বর্গ এবং সমন্বয়ী বর্গ - এই তিনপ্রকার বর্গের বিভক্ত।
অত্যন্বয়ী বর্গঃ এই বর্গের ভাষাগুলিতে ভাষার অর্থদ্যোতক ক্ষুদ্রতম অংশ হল বাক্য। বাক্যের বাইরে এ ভাষার শব্দের স্বাধীন অর্থ নেই বলে এ ভাষার বাক্য-নিরপেক্ষ শব্দগুলি অসম্পূর্ণ ভাবের বাহক মাত্র। এস্কিমো ভাষা এই বর্গের ভাষা।
মুক্তান্বয়ী বর্গঃ এই বর্গের ভাষাগুলিতে উপসর্গ-অনুসর্গ-প্রত্যয়-বিভক্তি শব্দ বা পদগঠনে যেমন ব্যবহৃত হয়, তেমনি বাক্যে স্বাধীন পদ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। তুর্কি, সোয়াহিলি ভাষা এবং আলতাইক, ফিনো-উগ্রীয় বা উরানীয় ও দ্রাবিড় ভাষাবংশের বিভিন্ন ভাষা এই বর্গের অন্তর্গত।
সমন্বয়ী বর্গঃ এই জাতীয় বর্গের ভাষাগুলিতে উপসর্গ-অনুসর্গ-প্রত্যয়-বিভক্তি শব্দ বা পদ গঠনেই কেবল ব্যবহৃত হয়, বাক্যে স্বাধীন পদ হিসেবে কখনোই ব্যবহৃত হয় না। সংস্কৃত, বাংলা, ইংরেজি, আরবি, হিন্দুস্থানি প্রভৃতি এই বর্গের ভাষা।
৩.৩ ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশের বিস্তৃত পরিচয় দাও।
উত্তরঃ আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যতগুলি ভাষাবংশ বা ভাষাপরিবার আছে, তাদের মধ্যে ইন্দো-ইউরীপীয়ই শ্রেষ্ঠ। আনুমানিক ৫০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে দক্ষিণ রাশিয়ার উরাল পর্বতের পাদদেশে এই ভাষাপরিবারের আদি ভাষার জন্ম। যে মূল ভাষা থেকে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর উদ্ভব হয়েছিল, সেই মূল আর্যভাষা বা মূল ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার কোনো নিদর্শন এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। তাই ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার আদি রূপ আমরা জানতে পারিনি। সে কারণেই, সেই মূল ভাষা থেকে জন্ম নেওয়া প্রাচীন ভাষাগুলির মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করে মূল ভাষার একটি অনুমান-নির্ভর রূপ গড়ে তোলা হয়েছে। আনুমানিক ২৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মূল ইন্দো-ইউরোপীয় জাতি আর্যরা আদি বাসস্থান থেকে ক্রমশ এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে মূল আর্যভাষা থেকে ক্রমশ দশটি প্রাচীন ভাষাশাখার জন্ম হয় -
(১) ইন্দো-ইরানীয়
(২) বালতো-স্লাভিক
(৩) আলবেনীয়
(৪) আরমেলীয়
(৫) গ্রিক
(৬) ইতালীয়
(৭) কেলতীয়
(৮) তিউনিশীয় বা জার্মানিক
(৯) তোখারীয়
(১০) হিত্তীয়
এদের মধ্যে প্রথম চারটি কেন্তুম্ বর্গের এবং শেষ ৬টি সতম্ বর্গের ভাষাশাখা। ইউরোপের পশ্চিমপ্রান্ত থেকে পূর্বে ভারত পর্যন্ত যতগুলি দেশ, তার বেশিরভাগ ভাষাই ইন্দো-ইউরোপীয় জাতীয়।
See More : Full Class 11 Bengali Suggestion 2023
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ