মধ্যযুগে বাংলার সমাজ ও সাহিত্য
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস
(১) নিচের বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
১.১ 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্যের শেষ খন্ডের নাম - রাধাবিরহ
১.২ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ত্রয়োদশ-চতুর্দশ শতাব্দীকে বলা হয় - অন্ধকারময় যুগ
১.৩ অভিনব জয়দেব নামে পরিচিত - বিদ্যাপতি
১.৪ আদি মধ্যযুগের প্রাথমিক নিদর্শন হল - শ্রীকৃষ্ণকীর্তন
১.৫ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটির রচয়িতা হলেন - বড়ু চন্ডীদাস
১.৬ আর্যাসপ্তশতী কাব্যের রচয়িতা - গোবর্ধন আচার্য
১.৭ বাংলা ভাষার প্রথম রামায়ণ অনুবাদক - কৃত্তিবাস ওঝা
১.৮ মনসামঙ্গলের আদি কবির নাম - হরিদত্ত
১.৯ পান্ডববিজয় কাব্যটি রচিত - ষোড়শ শতাব্দীতে
১.১০ ধর্মমঙ্গল কাব্যের আদি কবি হলেন - ময়ূরভট্ট
১.১১ মহারাষ্ট্র পুরাণ গ্রন্থের রচয়িতা - গঙ্গারাম
১.১২ অষ্টাদশ শতাব্দীতে মঙ্গলকাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি হলেন - ভারতচন্দ্র রায়
১.১৩ বিদ্যাপতি ভাবশিষ্য বলা হয় - গোবিন্দদাস
১.১৪ মৈথিল কোকিল বলা হয় - বিদ্যাপতিকে
১.১৫ শ্রীকৃষ্ণবিজয় গ্রন্থটির রচয়িতা - মালাধর বসু
১.১৬ চৈতন্যদেবের মৃত্যু হয়েছিল - ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দে
১.১৭ মহাভারতের প্রথম অনুবাদক - কবীন্দ্র পরমেশ্বর
১.১৮ চৈতন্যভাগবত গ্রন্থটির রচয়িতা - বৃন্দাবন দাস
১.১৯ চন্ডীদাসের ভাবশিষ্য বলা হয় - জ্ঞানদাস
১.২০ রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র রায় কার পৃষ্ঠপোষকতায় অন্নদামঙ্গল কাব্য লেখেন? - কৃষ্ণচন্দের
See More : Full Class 11 Bengali Suggestion 2023
(২) নিচের রচনাধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
প্রশ্ন : বৈষ্ণব পদ রচনায় বিদ্যাপতির প্রতিভার পরিচয় দাও।
উত্তর : বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ও বাঙালি বিদ্যাপতিকে বাংলা সাহিত্যে গ্রহণ করা হয়েছে তার রাধা কৃষ্ণ বিষয়ক অসাধারন পথগুলির জন্যই। সইবো হেয় বিদ্যাপতি রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক পদাবলী রচনা করতে গিয়ে আশ্চর্য দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। বয়সন্ধি অভিসার মিলন মান মাথুর ও ভাবস সম্মেলনের পদে নানাভাবে রাধাকে তিনি পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। তাতে চৈতন্য পরবর্তী বৈষ্ণব ভক্তির গভীরতা না থাকলেও শিল্পরাসের প্রাচীর্য আছে -
"যব গোধূলি সময় বেলি
ধনী মন্দির বাহিরভেলি
নব জলধর বিজরী রেহা
দন্দ প্রসারী গেলি।"
বিদ্যাপতি রচনায় নব অনুরাগীনী রাধার বাধা না মানা অভিসার যাত্রার কথা আছে, তাছাড়াও মিলনের আশ্চর্য অনুভব -
"লাখ লাখ যুগ হিয়ে হিয়ে রাখলু
তবু হিয়া জোরান না গেল।"
আবার যখন তিনি দুঃখের বর্ণনা দিয়েছেন তখন বুকফাটা আর্তনাতে ভরে গেছে চারিদিকে -
"এ সখি হামারি দুঃখক নাহি ওর
এ ভরা বাঁদর মাহ ভাদর
শূন্য মন্দির মোর।"
বিদ্যাপতির পদাবলীর আঙ্গিক সম্বন্ধে বলা যায় যে তার শব্দ ব্যবহার প্রায় ত্রুটিহীন এবং উপমা অতি শক্তি প্রভৃতি অলংকার প্রয়োগে তিনি রীতিমতো দক্ষ।
রত্নকলা বৃত্ত রীতির ছন্দে রচিত তার বিভিন্ন পদে বিভিন্ন ধরনের ছন্দব্ধ ব্যবহৃত হয়েছে। এক পোঁদি দ্বীপদী ত্রিপদী ও চৌপদি ছন্দে রচিত পদগুলিতে বিভিন্ন আয়তনের পর্বের ব্যবহার তা রচনাকে বৈচিত্রমন্ডিত করে তুলেছে।
কাব্য ও সঙ্গীতে ব্যবহৃত কৃত্রিম ভাষা বজ্র বুলিতেই বিদ্যাপতি প্রায় ৮০০ পদ রচনা করেছেন। বৈষ্ণব পদকর্তা গোবিন্দ দাস এমনকি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও পরবর্তীকালে এই ভাষাকে অনুসরণ করেছেন তার ভানু সিংহ ঠাকুরের পদাবলী কাব্যগ্রন্থে।
প্রশ্ন : কৃত্তিবাস রচিত বাংলা রামায়ন টির নাম কি? তার জনপ্রিয়তার কারণ লেখ।
উত্তর : কৃত্তিবাসের রামায়ণ বা শ্রীরাম পাঁচালী বাঙালির পরম আদরের কাব্যগ্রন্থ। নিজে এর জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ গুলি আলোচনা করা হলো -
(১) কৃত্তিবাস্তার কাব্যে বাল্মিকী রামায়ণের কাহিনী কে হুবহু অনুসরণ করেন নি। তিনি রামায়ণের মূল কাহিনীর সঙ্গে অন্য কয়েকটি কাহিনীও যুক্ত করেছেন। যেগুলি একেবারে বাঙালির মানসিকতার প্রতিফলন।
(২) নারকেল সুপারি কাক সারস প্রভৃতি পল্লী বাংলার প্রকৃতিগত উপাদান যেমন কৃত্তিবাসের রামায়নে আছে তেমনি আছে বাঙালির সমাজ জীবনের নানা অন্তরঙ্গ ছবি।
(৩) কৃত্তিবাসের কাব্যে সংস্কৃত রামায়ণের ক্ষত্রিয় বীর রামচন্দ্র হয়ে উঠেছে ভক্তের ভগবান সীতা পরিণত হয়েছে সহনশীলা বাঙালি গৃহিনী।
(৪) কৃত্তিবাসী রামায়ণের চরিত্র গুলির মধ্যে বাঙালির স্বভাব বৈশিষ্ট্য সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে বলে এগুলি এত জনপ্রিয় হতে পেরেছে প্রত্যেক বাঙালির মধ্যে।
(৫) তাছাড়া ভক্তিবাদ এবং করুণ রস প্রবণতার মধ্যেই কৃত্তিবাসী রামায়ণ বাঙালির কাছে আরও বেশি গ্রহণীয় হয়ে উঠতে পেরেছে।
প্রশ্ন : শাক্ত পদাবলী কাকে বলে? এর ধারার শ্রেষ্ঠ কবি কে? তার কাব্য প্রতিভা আলোচনা কর।
উত্তর : অষ্টাদশ শতাব্দীর বাঙ্গালীদের দুঃখ কষ্টের সাতকাহন এবং দুঃখমুক্তির সুর উমার সঙ্গীত এবং বিশেষ করে শ্যামাসঙ্গীত গুলিতে পরম আকুলতায় ফোটে উঠেছেন। পল্লীগ্রাম বাঙালির পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের গভীর অনুভব এই গানগুলির মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে।
এই শাক্তসংগীতের পথিকৃৎ এবং শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে কবি রামপ্রসাদ সেন যিনি কবি রঞ্জন নামে পরিচিত ছিলেন।
১৭২০ খ্রিস্টাব্দের উত্তর ২৪ পরগণায় হালিশহরের নিকটবর্তী কুমার হর্দ গ্রামে কবি রামপ্রসাদ সেনের জন্ম হয়। রামপ্রসাদ মহারাজ রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। রামপ্রসাদ বিদ্যাসুন্দর কালী কীর্তন ও কৃষ্ণ কীর্তন প্রভৃতি কাহিনী কাব্য রচনা করলেও তার যথার্থ পরিচয় শাক্ত পদ রচয়িতা হিসেবেই। রামপ্রসাদের পথ গুলোতে সহজ সরল ভাষায় ভক্ত প্রাণীর গভীর আকুতি প্রকাশিত হয়েছে। অমর সঙ্গীত ও শ্যামা সংগীত উভয় প্রকার গানেই তিনি সিদ্ধ হস্ত। তবু তার শ্যামা সংগীত গুলি মানুষকে বেশি টানে। তার মা আমায় ঘুরাবে কত কিম্বা মন রে কৃষি কাজ জানে না প্রভৃতি গান বাংলার পথে ঘাটে নানা জনের মুখে শোনা যায়। ভক্তের আকুতি পর্যায়ে মায়ের প্রতি কোভিদ অনুযোগ আবদার মা ও ছেলের নিরন্তর সম্পর্কের সুন্দরপ্রকাশ। কবিতার পদে কবি চিত্রের যে জীবন যন্ত্রণার প্রকাশ ঘটিয়েছেন তা সমকালীন মানুষের মর্মবাণী। তন্ত্রের গুড়তত্ত্ব কথা এ গানগুলিতে থাকলেও তা কখনোই গানগুলিকে দুর্বোধ্য ও নিরাশ করেনি। তাই রামপ্রসাদের গানের সুরের আবেদন গৃহস্থের মনেও সারা জাগায়। শাক্ত পদাবলীর শ্রেষ্ঠ কবি রামপ্রসাদের রামপ্রসাদী সংগীত বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।
See More : Full Class 11 Bengali Suggestion 2023
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ