বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয়
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস
বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় | বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস | একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন ২০২৩ | WB Class 11 Bengali Suggestion 2023 WBCHSE
(১) নিচের বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
১.১ দেহদৈর্ঘ্যের নিরিখে মানুষকে ক-টি ভাগে ভাগ করা যায় - পাঁচটি
১.২ মানুষের মাথার আকৃতি বোঝানো হয় - শিরসূচক সংখ্যার সাহায্যে
১.৩ ভারতের জনসমূহের প্রথম স্তর - নিগ্রোবটু
১.৪ আদিম অস্ট্রেলীয়দের সঙ্গে অনেকটাই মেলে প্রাচীন সংস্কৃত ও পুরাণ সাহিত্যের উল্লিখিত - নিষাদজাতির বর্ণনা
১.৫ নর্ডিক গোষ্ঠীর লোকেরা ভারতে এসেছিল - উত্তর এশিয়া থেকে
১.৬ বেদের রচয়িতা - নর্ডিক গোষ্ঠীর মানুষেরা
১.৭ বাংলার আদি সমাজ ছিল - কৌম-ভিত্তিক
১.৮ আলপীয়রা ছিল - অসুর জাতীয় জনগোষ্ঠী
১.৯ অস্ট্রিক শব্দগুলি আধুনিক বাংলা শব্দভান্ডারের - দেশি শব্দ
১.১০ নৃতত্ত্বের দৃষ্টিতে বাংলার প্রধান ধর্ম ছিল - বাঙালি হিন্দু আর বাঙালি মুসলমান
১.১১ নৃতাত্ত্বিক পর্যায় নির্ধারণের দুটি নিরিখ হল - জিনগত বৈশিষ্ট্য এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন
১.১২ কোঁকড়া চুল দেখা যায় - নিগ্রো জাতিসমূহের মধ্যে
১.১৩ ভারতে প্রথম নৃতাত্ত্বিক পরিমাপে নেতৃত্ব দেওয়া হার্বাট রীজলি ছিলেন - ভারতীয় নৃতত্ত্ববিভাগ ও লোকগণনা সম্পর্কিত দপ্তরের কর্তা
১.১৪ বাইরে থেকে প্রথম ভারতে এসেছিল - দ্রাবিড় জনগোষ্ঠী
১.১৫ দ্রাবিড়দের সঙ্গে মিল পাওয়া যায় - আদি মিশরীয়দের
১.১৬ মহেন-জো-দারোর কঙ্কাল পাওয়া গেছে - আদি-অস্ট্রাল এবং দ্রাবিড়দের
১.১৭ বেদে উল্লিখিত কিরাত সম্প্রদায় হল - প্রত্নমঙ্গোলীয় গোষ্ঠীভুক্ত
১.১৮ উচ্চশ্রেণির বাঙালিরা ছিল - আলপীয় গোষ্ঠীভুক্ত
১.১৯ পালরাজাদের সময়ের সমাজবিন্যাসের কথা জানা যায় - বৃহদ্ধ্রর্ম নামক উপপুরাণ থেকে
১.২০ নৃতাত্ত্বিক পর্যায়ের সদৃশ বৈশিষ্ট্য হল - মুখের ভাষা
১.২১ ১৯০১ সালে ভারতীয় নৃতত্ত্ববিভাগের প্রধান ছিলেন - হার্বাট রীজলি
১.২২ বৈদিক সাহিত্যে দ্রাবিড়রা যে নামে উল্লিখিত, তা হল - পনি
১.২৩ আর্য যাদের ভাষা, তারা হল - আলপীয়
১.২৪ পালরাজাদের আমলে যে ধর্মের প্রাধান্য ছিল, তা হল - বৌদ্ধধর্ম
See More : Full Class 11 Bengali Suggestion 2023
(২) নিচের রচনাধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
প্রশ্ন: বাঙালি জাতির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় দাও।
উত্তর : বাঙালির আদিম অধিবাসীরা ছিল প্রাক দ্রাবিড় গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত নৃতত্ত্বের ভাষায় যাদের বলা হয় আদি অস্ট্রাল। আধুনিক বাংলা ভাষার শব্দ ভাণ্ডারে যেগুলি দেশই শব্দ নামে পরিচিত সেগুলি আসলে কস্টিক শব্দ যা আদি অস্ত্রালদের সঙ্গে বাঙালির নিবিড় সম্পর্কের প্রমাণ। আদি অস্ট্রালদের সঙ্গে ভূমধ্য নরগোষ্ঠী বা দ্রাবিড়দের মিলনের ফলেই তৈরি হয়েছিল বাঙালির নৃতাত্ত্বিক বুনিয়াদ।
তবে উচ্চ শ্রেণীর বাঙালিরা ছিল আলোপীয় গোষ্ঠীভুক্ত। ডক্টর দেব দত্ত রামকৃষ্ণ ভান্ডাকর দেখিয়েছিলেন যে উচ্চ বর্ণের বাঙ্গালীদের মধ্যে চালু থাকা পদবী গুলি যেমন ঘোষ বসু মিত্র দত্ত দেব পশ্চিম ভারতে ওই একই নৃতাত্ত্বিক পর্যায়ের অন্তর্গত উচ্চ বর্ণের মধ্যে প্রচলিত আছে। 'আর্য মঞ্জুশ্রী মূলকল্প নামক প্রাচীন বৌদ্ধ গ্রন্থে বলা হয় যে বাংলাদেশের আর্য ভাষাভাষী লোকেরা অসুর জাতিভুক্ত। মহাভারতেও বঙ্গদেশের লোকেদের অসুর রাজা বুলির ক্ষেত্র সন্তান হিসেবে দেখানো হয়েছে। বাংলায় আগত ভিন্ন শাখার আর্য ভাষায় কথা বলা আলো প্রিয় জনগোষ্ঠী তাদের রক্তের বিশুদ্ধতা বজায় রাখতে পারেনি। আদি অস্টাল এবং দ্রাবিড়দের মধ্যে তাদের মিশ্রণ ঘটে। বাঙালি জাতিসত্তা এভাবে ক্রমশই সংকর চরিত্র লাভ করে। আদিতি পুন্দ্র করবারট বাগদী হাড়ি ডোম বাউরি প্রকৃতি কৌম ভিত্তিক জাতি ছিল বঙ্গদেশে। পরবর্তীকালে বৌদ্ধ পাল রাজাদের রাজত্বকালে এসব জাতির মধ্যে মিশ্রণ ঘটে। ফলে বিভিন্ন বর্ণ উপবর্গের মধ্যে অনুলক ও প্রতিরোধ বিবাহের ফলে বিভিন্ন সংকর জাতি বা বর্ণের সৃষ্টি হয় বাংলায়। সমন্বয়ে সংমিশ্রণের এই বহু মানতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।
প্রশ্ন : বিভিন্ন বাঙালি জাতির মধ্যে নৃতাত্ত্বিক সম্পর্ক নিজের ভাষায় আলোচনা কর।
উত্তর : নৃতাত্তিকরা প্রাচীন বাংলার জনগোষ্ঠীর যে পরিমাণ করেছেন তা থেকে মনে হতে পারে যে এই জনগোষ্ঠীর কেউই বিস্তৃত মাথা যুক্ত ছিল না। এরই মধ্যে তোদের শীর্ষচক সংখ্যা এবং নাসিকা সূচক সংখ্যা ব্রাহ্মণদের সঙ্গে প্রায় সমান ছিল। কিন্তু কাজ তোদের দেহ-দৈর্ঘ্য ব্রাহ্মণদের চেয়ে কম এবং সদগোপদের শীর্ষচক সংখ্যা ব্রাহ্মণ এবং কাজ তোদের সঙ্গে প্রায় সমান ছিল। তবে সদগোপদের নাক বেশি প্রসারিত এবং দেহের দৈর্ঘ্য ব্রাহ্মণদের চেয়ে অনেক কম ছিল। গোয়ালা করবট ও পোদদের শীর্ষ সূচক সংখ্যা অনেক কম থাকলেও না বেশি প্রসারিত ছিল। দেহ দৈর্ঘ্য গোয়ালা অপেক্ষা কোরবাদের কম ছিল এবং তার চেয়েও কম ছিল পোদদের। দেহ দৈর্ঘ্যের অনুপাতে রাজবংশীয়দের নাক করবদের চেয়ে অনেক ছোট। রাজবংশীদের মধ্যে যারা ক্ষত্রিয় তাদের মধ্যে মঙ্গলীয় চোখের খাঁজ লক্ষ্য করা যায়। অন্য রাজবংশীদের মধ্যে আবার তা দেখা যায় না। কিছু হেরফের সত্ত্বেও বাংলায় কয়েকটি বিশেষ জাতির মধ্যে এক নৃতাত্ত্বিক ঐক্য লক্ষ্য করা যায়। এগুলি হল - ব্রাহ্মণ বৈদ্য কায়স্থ এবং সদগোপ। গোয়ালা করবত ও পোদ। সাঁওতাল মুন্ডা মাল পাহাড়িয়া ইত্যাদি উপজাতি সমূহ। কালির প্রবাহে বাংলার জনজীবনে এই মিশ্রণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বীরামহীন পারস্পরিক সংমিশ্রণের মাধ্যমেই আজকের এই বাঙালি জাতি গড়ে উঠেছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ