গুরু | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন ২০২৩ | WB Class 11 Bengali Suggestion 2023 WBCHSE
Type Here to Get Search Results !

গুরু | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন ২০২৩ | WB Class 11 Bengali Suggestion 2023 WBCHSE

গুরু

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

গুরু | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন ২০২৩ | WB Class 11 Bengali Suggestion 2023 WBCHSE
গুরু | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন ২০২৩ | WB Class 11 Bengali Suggestion 2023 WBCHSE


(৬) অনধিক একশো পঞ্চাশ শব্দে যে-কোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর দাওঃ

৬.১ 'গুরু' নাটকে গুরুর যে স্বরূপ প্রকাশিত হয়েছে তা নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তরঃ নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ 'গুরু' নাটকে শাস্ত্রাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। মিথ্যা সংস্কার মানুষকে বিপথেই চালিত করে তা বোঝাতেই দাদাঠাকুর ওরফে 'গুরু' চরিত্রের আবির্ভাব। এই গুরুর কতকগুলি স্বরূপ চোখে পড়ে -

(১) গুরু সবার কাছে পূজ্য। অচলায়তনের সকলে বিভিন্ন রকম সংস্কার, বাছবিচার মানতে অভ্যস্ত। কিন্তু গুরু সংস্কারমুক্ত। তিনি সংস্কার থেকে মানুষকে করে নতুন মুক্ত জগতে আনেন।

(২) শিক্ষার্থীরা গুরুকে 'অখণ্ড শক্তি' হিসাবে জ্ঞান করে। গুরুর আবির্ভাব কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাড়া পড়ে যায়। তাই গুরুর জন্য তারা সিংহদ্বার সাজাতে তৎপর হয়। 

(৩) মহাপ্যক জ্ঞানবাদী। তাই অর্থহীন শাস্ত্রাচার আচার–বিচারকে অচলায়তনে প্রতিষ্ঠা করতে চান। একারণে ভাই পঞ্চক তার কাছে 'পাষণ্ড'। তিনি দাদাঠাকুর আসার খবরে বেশ আতঙ্কে আছেন। কারণ আবার না নতুন করে 'উৎপাত' শুরু হয়। 

(৪) পশুক মুক্ত জীবনের পন্থী। গুরু তাঁর কাছে সহজ আনন্দের প্রতীক। গুরু প্রত্যেক মানুষকে সংস্কার মুক্ত করবেন, এটাই তার বিশ্বাস। 

(৫) নাট্যকার স্বয়ং গুরুর স্বরূপ প্রসঙ্গে বলেছেন, “গুরু কি ভাঙিবার কথাতেই শেষ করিয়াছেন। গড়িবার কথা বলেন নাই?” 

৬.২ “ভাই তোরা সব কাজই করতে পাস?” কে, কাকে এ প্রশ্ন করেছে? বক্তার এই প্রশ্নের কারণ কী? 

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'গুরু' নাটকে অচলায়তনের অধিবাসীদের মধ্যে স্বাধীন প্রাণের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত পঞ্চক কথোপকথনের ছলে তৃতীয় যূনককে আলোচ্য প্রশ্নটি করেছে। 

     আলোচ্য নাটকে যুনকদের সঙ্গে সাক্ষাতে তাদের ব্যতিক্রমী জীবনাচরণ বিস্মিত করে পঞ্চককে, যূনকেরা চাষ করে, তার মধ্যে আবার উল্লেখযোগ্যভাবে কাঁকুড় আর খেসারি ডালের চাষ করে – যা নীতিবিরুদ্ধ। কিন্তু যূনকদের সঙ্গে কথোপকথনে অচলায়তনের অধিবাসী পঞ্চকের সেই শাস্ত্রীয় সংস্কার ধীরে ধীরে ভেঙ্গে পড়ে। ক্ষৌরকর্মের সময় নাপিতের ভুলে গাল কেটে রক্ত পড়লেও যে তাদের সেই দিন খেয়া নৌকায় উঠতে কোনো নিষেধ থাকে না তৃতীয় যূনকের মুখে এই কথা শুনে সে চমকে ওঠে। যূনকদের লোহা পেটানো তাকে আরও বিস্মিত করে। আর এই বিস্ময় সীমাহীন হয়ে ওঠে যখন পঞ্চক জানতে পারে যে, যূনকরা, কেয়ূরী, মরীচী, মহাশীতবতী বা উন্নীয়বিজয় কোনো মন্ত্রই জানতে পারে না। যে পঞ্চক অচলায়তনের ভিতরে ছিল প্রথা আর সংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক, সেই পঞ্চকই কিছুটা মানসিক জড়তা সত্ত্বেও যূনকদের মধ্যে খুঁজে পায় তাদের সংস্কার – মুক্ত আদর্শের বিকাশ। ফলে এক প্রবল আনন্দের উচ্ছ্বাস তৈরি হয় তার মনে। জীবনবোধের সেই সাদৃশ্যের জায়গা থেকেই পক প্রশ্নোঘৃত মন্তব্যটি করে।

৬.৩ "পৃথিবীতে জন্মেছি পৃথিবীকে সেটা খুব কষে বুঝিয়ে দিয়ে তবে ছাড়ি।" - মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'গুরু' নাটকে কর্মপাগল যুনকরা পঞ্চকের উদ্দেশে আলোচ্য উক্তিটি করেছে।

     রবীন্দ্রনাথ 'গুরু' নাটকে পুথিসর্বস্ব জীবনভাবনার তীব্র সমালোচনা করেছেন। শাস্ত্র–আচার কখনোই জীবনের শেষকথা নয়। কিন্তু নাটকে উল্লেখিত 'অচলায়তন'–এ শাস্ত্রই একমাত্র পালনীয় বিষয়। শ্রমজীবী যূনকরা অচলায়তনের নিয়মকে পাশ কাটিয়ে চলে। কারণ তারা না জানে মন্ত্র, না মানে গুরুকে, দাদাঠাকুরই তাদের বিশ্বাসের একমাত্র পাত্র। মন্ত্র উচ্চারণের পরিবর্তে তারা কাজ করার মধ্যে জীবনের সার্থকতা খুঁজে পায়। চাষাবাদের মধ্যেই তারা জীবনের ছন্দ খুঁজে পায় খুঁজে পায় প্রাণের ভাষা ও সুর। কাজের মধ্যেই মন হয় পূর্ণ, আত্মা হয় মুক্ত। তাই রোদ বা বৃষ্টিতে থেমে না থেকে যূনকরা সহাস্যবদনে কাজ করে চলে। কাঁকুড় বা খেসারি ডালের চাষ যা অচলায়তনের বহির্ভূত, এই চাষ করতেও তারা পিছ–পা হয় না। নিয়মকে বলিদান দিয়ে তারা সর্বদা কর্মতৎপর থাকে । লোহার কাজে যুনকরা অসংকোচে অতিসহজেই অংশগ্রহণ করে, খেয়া নৌকা পেরোতেও তারা বিন্দুমাত্র ভয় পায় না। আসলে যূনকরা অচলায়তনের সংকীর্ণ গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এসে বাধাহীন মুক্ত ক্ষেত্রে জীবনের সার্থকতা খুঁজতে চেয়েছে। গণ্ডির মধ্যে আত্মা বিকশিত হতে পারে না , তাকে নিয়মের বাহুপাশ থেকে বেরিয়ে আসতে হয়৷ অচলায়তনের বিপরীতে যূনকদের কর্মমুখর জীবনভাবনা প্রকৃতপক্ষে আত্মপ্রতিষ্ঠার চিরন্তন বার্তা বহন করেছে।”

৬.৪ "যিনি সব জায়গায় আপনি ধরা দিয়ে দিয়ে বসে আছেন তাঁকে একটা জায়গায় ধরতে গেলেই তাঁকে হারাতে হয়।" - মন্তব্যটির মর্মার্থ আলোচনা করো।

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'গুরু' নাটকে দেখা যায়, দর্ভকপল্লিতে গুরুর সঙ্গে সাক্ষাতের পর আচার্য আদীনপুণ্য অচলায়তনের শাস্ত্রনির্ভর জীবনবিমুখ ধর্মসাধনায় নিজের অতৃপ্তির কথা গুরুকে জানান। আচার্য হিসেবে অচলায়তনের সেই সংকীর্ণ ধর্মাদর্শের ও নিয়মতান্ত্রিকতার প্রতিষ্ঠায়  তাঁরও যে ভূমিকা ছিল, তা ভেবেই গ্লানিদগ্ধ হয়েছিলেন অদীনপুণ্য।

      ঈশ্বরের অবস্থান সর্বভূতে। বিরাট বিশ্বসংসারে প্রতিটি প্রাণের মধ্যেই ঈশ্বর বিরাজ করেন। তাই নিজক সাধন, পূজন, ভজন বা আরাধনার মাধ্যমে ঈশ্বরকে লাভ করা যায় না। মানুষের সঙ্গে প্রাণের মিলনের মাধ্যমে আত্মার প্রসার ঘটানোই ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের একমাত্র চাবিকাঠি। দাদাঠাকুর তাই তাঁর ব্যক্তিগত জীবনাচরণের মাধ্যমে অনায়াসে মিশে যান অস্পৃশ্য যূনক বা অন্ত্যজ দর্ভকদের সঙ্গে। বলা যায়, তাদের একজন হয়ে থাকতেই তিনি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। দর্ভকদের ভাত ও মাষকলাইয়ের সামান্য আয়োজনেও তাঁর ক্ষুধাতৃপ্তি ঘটে। তাই গুরুবাদে তাঁর কোনো আস্থা নেই। অচলায়তনের প্রাচীর প্রাণের প্রবেশের রুদ্ধ করে রেখেছে বলে দাদাঠাকুর মনে করেন। তাই দর্ভকপল্লিতে তাঁর নিয়মিত আগমন ঘটলেও অচলায়তনের আচার্যরা তাঁর দেখা পাননি বহুদিন ধরে। অচলায়তনের পুথিনির্ভর জীবনসাধনা আসলে এক অভ্যাসের চক্র তৈরি করে দেয়, যা মানুষকে কোনো জায়গাতেই এগিয়ে নিয়ে যায় না, কেবল নিজের মধ্যেই ঘুরিয়ে মারে। অচলায়তনের প্রাচীরের আড়ালে জীর্ণ আচার আর পুথির মধ্যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব খুঁজতে চেয়েছিলেন মহাপঞ্চক উপাধ্যায়রা। এতে ধর্মাদর্শ সংকীর্ণ হয়েছে, মানবতা এবং প্রাণধর্ম লাঞ্ছিত হয়েছে, আর ঈশ্বর আরও দূরে সরে গিয়েছেন। মন্ত্রতন্ত্র আর প্রায়শ্চিত্তের মধ্যে ধর্মের পরাকাষ্ঠা খোঁজা হয়েছে, কিন্তু মানুষের মাধ্যে ঈশ্বরের যে সহজ প্রতিষ্ঠা তার স্বরূপ উপলদ্ধি করা সম্ভব হয়নি অচলায়তনিকদের পক্ষে। বিভ্রান্তি এবং বিপর্যস্ত আচার্যকে একথাই বোঝাতে চেয়েছেন দাদাঠাকুর।

৬.৫ "খোলা জায়গাতেই সব পাপ পালিয়ে যায়।" - মন্তব্যটির মধ্য দিয়ে বক্তা কী বোঝাতে চেয়েছেন?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'গুরু' নাটকে দেখা যায়, অচলায়তনের প্রাচীর ভেঙে পড়ার পরে সেখানে প্রবেশ ঘটে দাদাঠাকুর এবং যূনকদের। অচলায়তনের প্রথাসর্বস্বতা থেকে ক্রমশ বেরিয়ে আসে মহাপঞ্চক ছাড়া সকলেই। সকলেই যখন মুক্তির স্পর্শে সঞ্জীবিত, বাইরের আলো, বাতাস বা পাখির ডাকের শব্দে উচ্ছ্বসিত। তখনই দ্বিতীয় বালকের প্রশ্নের উত্তরে দাদাঠুর জানান যে তিনি তাদের সঙ্গে খেলবেন। এই খেলার মধ্য দিয়েই বালকদের গুরু হিসেবে তাঁর গৌরব রক্ষা করা সম্ভব হবে। আর সেই খেলা হবে ঘর বা আঙিনার থেকেও বড়ো কোনো জায়গায়। অচলায়তনের বদ্ধ পরিবেশে অভ্যস্ত দ্বিতীয় বালক জানতে চেয়েছিল যে, খোলা জায়গায় গেলে পাপ হবে কি না। তখনই দাদাঠাকুর এই মন্তব্যটি করেছিলেন।

     মন্তব্যটি দাদাঠাকুর তথা নাট্যকারের সামগ্রিক জীবনদর্শনের প্রকাশ। শাস্ত্রবদ্ধতায় নয়, প্রকৃতির সঙ্গে এবং অন্য জীবনের সঙ্গে সংযোগেই জীবনের সার্থকতা। পুথিসর্বস্ব জীবনবিমুখ আচরণবিধির বদলে অচলায়তের অধিবাসীদের বাইরের জীবনের সঙ্গে সহজে সংযুক্ত করে দেওয়াই ছিল মনের দরজা খুলে দেওয়াই ছিল দাদাঠাকুরের প্রাথমিক কাজ। সংকীর্ণতা বা নিরর্থক আচাত-সংস্কার থেকে মুক্তি আর মনের অবাধ বিস্তারের মধ্যে দিয়েই যাবতীয় মনিলতার অবসান ঘটবে, বাইরের বৃহৎ ও উদার বিশ্বপ্রভৃতির সংস্রবেই মানুষ আত্মসম্প্রসারণের যথার্থতা এবং মাহাত্ম্য উপলব্ধি করতে তার ক্ষুদ্রতা বা নীচতাকে অতিক্রম করতে শিখবে - এমনটাই দাদাঠাকুর মনে করেছিলেন।

৬.৬ "উনি গেলে তোমাদের অচলায়তনের পাথরগুলো সুন্ধু নাচতে শুরু করবে" - বস্তা কে? কাকে উদ্দেশ্য করে এই মন্তব্য? বস্তার চরিত্র ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'গুরু' নাটক থেকে প্রশ্নোত্ত উদ্ধৃতিটি গৃহীত। উদ্ধৃতিটির বস্তা হলেন প্রথম যুনক। 

     পঞ্চককে উদ্দেশ্য করে তিনি এই মন্তব্য করেছেন। 

     প্রথম যূনক যথার্থই বলেন,"উনি আমাদের সব দলের শতদল পদ্ম"। দাদাঠাকুরের মূল লক্ষ্য জীবনকে যথাযথ প্রতিষ্ঠা করা। অন্যদিকে, জীবন শাস্ত্র, আচরণ আর নিয়মের যাঁতাকলে। সুভদ্র উত্তরদিকের জানালা খুললে তাই 'অপরাধ' বলে হিসাবে গণ্য করা হয়। যূনকদের মতে, দাদাঠাকুর আসা মানেই এখানে খোলা হাওয়া বাতাস প্রবেশের অধিকার উন্মুক্ত হবে। বন্ধ অচলায়তনের পাথরে জাগাবে প্রাণের আবেগ। পুঁথিগুলির মধ্যে বেজে উঠবে প্রাণের সুর। ভাঙবে প্রথার অচল প্রাচীর, ঢুকবে প্রাণের প্রবাহ।

৬.৭ "এমন জবাব যদি আর একটা শুনতে পাই তা হলে তোদের বুকে করে পাগলের মতো নাচব" - একথা বলার মধ্যে দিয়ে বক্তা কী বোঝাতে চেয়েছেন?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'গুরু' নাটকে যূনকদের সঙ্গে সাক্ষাতে তাদের ব্যতিক্রমী জীবনাচরণ বিস্মিত করে পঞ্চককে। যূনকেরা চাষ করে, তার মধ্যে আবার উল্লেখযোগ্যভাবে কাঁকুড় আর খেসারি ডালের চাষ করে - যা অচলায়তনের স্থবিরক সম্প্রদায়ের শাস্ত্র নিষিদ্ধ। কিন্তু যূনকদের সঙ্গে কথাবার্তায় অচলায়তনের অধিবাসী পঞ্চকের সেই শাস্ত্রীয় সংস্কার ধীরে ধীরে ভেঙে পড়তে শুরু করে। ক্ষৌরকর্মের সময় গাল কেটে রক্ত পড়লেও তাদের সেইদিন যে খেয়া নৌকায় উঠতে কোনো বাধা থাকে না - তৃতীয় যূনকের মুখে এই কথা শুনে শিহরিত হয় পঞ্চক। যূনকদের লোহা পেটানো তাকে আরও বিস্মিত করে। আর এই বিস্ময় সীমাহীন হয়ে ওঠে যখন পঞ্চক জানতে পারে যে, যূনকরা কেয়ূরী, মরীচী, মহাশীতবতী বা উষ্ণীষবিজয় কোনো মন্ত্রই জানে না। যে পঞ্চক অচলায়তনের ভিতর ছিল প্রথা আর সংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক, সেই পঞ্চকই কিছুটা মানসিক জড়তা সত্ত্বেও যূনকদের মধ্যে খুঁজে পায় তার আদর্শের বিকাশ। ফলে এক প্রবল আনন্দের উচ্ছ্বাস তৈরি হয় তার মনে। জীবনবোধের সেই সাদৃশ্যের জায়গা থেকেই পঞ্চক প্রশ্নোদ্ধৃত মন্তব্যটি করে। বোঝা যায়, মুক্ত জীবনের স্বাদ মানুষের প্রথাবদ্ধ জীবনেও কীভাবে মুহূর্তমধ্যে পরিবর্তনের জোয়ার আনতে পারে, মানুষকে আরও উদার করে তুলতে পারে।

See More : Full Class 11 Bengali Suggestion 2023

৬.৮ "পাথরগুলো সব পাগল হয়ে যাবে" - পাথরগুলো পাগল হয়ে যাবে কেন?

উত্তরঃ উপরের এই কথাটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের অন্যতম রূপক নাটক গুরু-র প্রাণবন্ত চরিত্র পঞ্চক বলেছে। নববর্ষের সজল হাওয়ায় মনের সমস্ত ক্লেশ, ক্ষোভ দূর হয়ে যাবার জন্য পঞ্চক গান ধরেছে। আকাশের ঘন নীল মেঘের মধ্যে সে তার মুক্তির পথ দেখতে পেয়েছে। তাই সে নৃত্যসহকারে গান ধরেছে এবং অচলায়তনের অন্য ছাত্রদেরও মাতিয়ে তুলেছে। তার জন্য তার দাদা মহাপঞ্চক তাকে তিরস্কার করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন সুভদ্রের উত্তরের জানলা খুলে দেখবার জন্য উত্তরের অধিষ্ঠাত্রী একজটা দেবী প্রচন্ড রেগে গিয়ে শাপ দিয়েছেন, ফলে অচলায়তনের অধিবাসীদের বুদ্ধিভ্রম ও মতিভ্রম ঘটেছে। মহাপঞ্চকের ধারণা যে পাথর দিয়ে অচলায়তনের প্রতিষ্ঠিত, সেগুলি আর বাঁধনে থাকবে না।

      এই পরিস্থিতিতে পঞ্চক বলেছে পাথরগুলো পাগল হয়েছে, তাই তারা গান গেয়ে ছুটে বেরিয়ে যাবে, আর বদ্ধ থাকবে না। প্রচন্ড নিয়ম-নীতির বেড়াজালে অত্যাচারিত হতে হতে একদিন তারা তাদের স্বাভাবিক বুদ্ধি হারিয়ে পাগল হয়ে যায় জীবনের আনন্দধারায় ফেরবার জন্য। জীবন যখন পিছু হটতে হটতে সংকীর্ণতার দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তখনই সে সবকিছুকে ভেঙে খোলা আকাশে বেরিয়ে আসতে চায় নতুন করে বাঁচবার জন্য।

৬.৯ "গুরু" নাটকে পঞ্চক চরিত্রটি আলোচনা করো।

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'গুরু' নাটকে দেখা যায়,  অচলায়তনের প্রথা ও শাস্ত্রনির্দেশিত পটভূমিতে নাট্যকারের মুক্ত জীবনবোধের প্রতীক হয়েই পঞ্চকের আগমন ঘটেছে। আলোচ্য নাটকে তার নিম্নলিখিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ করা যায় -

যুক্তিবাদিতাঃ অন্ধ আনুগত্যের বিপরীতে যুক্তি দিয়ে পঞ্চক সব কিছুকে গ্রহণের পক্ষপাতী ছিল বলেই মহাময়ূরী দেবীর পুজোর দিন কাঁসার থালায় ইঁদুরের গর্তের মাটি রেখে তার ওপর পাঁচটা শেয়ালকাঁটা পাতা আর তিনটে মাষকলাই সাজিয়ে আঠারো বার ফুঁ দিয়েছে।

প্রথাবিরোধিতাঃ 'গুরু' নাটকের একেবারে গোড়া থেকেই পঞ্চককে প্রথাবিরোধী এক চরিত্ররূপে দেখা যায়। সে গান করে, পুথিপত্র সব ফেলে দিয়ে গুরুর আগমনের জন্য অপেক্ষা করে থাকে। মহাময়ূরী দেবীর শক্তিকেও তাই সে হাতে-কলমে যাচাই করে নিতে চেয়েছে।

নর্ভীকতাঃ পঞ্চক নির্ভীক ছিল বলেই অচলায়তনের বেশিরভাগ প্রথা ভাঙতে তার মধ্যে কোনো ভয় দেখা যায় না, এমনকি দর্ভকপল্লিতে নির্বাসনের শাস্তির সময়েও না।

মহানুভূতিশীলঃ সহানুভূতিশীলতা পঞ্চক চরিত্রের অন্যতম মৌলিক গুণ বলেই সুভদ্রের কান্না সে কিছুতেই সহ্য করতে পারেনি। আচার্যকে সঙ্গে নিয়ে সে সবসময় সুভদ্রের পাশে দাঁড়িয়ে তাকে মানসিক শক্তি জুগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে।

মুক্তিপ্রিয়তাঃ অচলায়তনের বদ্ধ জীবনে পঞ্চক ভেতরে ভেতরে হাঁপিয়ে উঠেছিল বলে প্রায়শ্চিত্তের মধ্যে সে খুঁজে পেত একঘেয়েমির অবসান। তাই অন্ত্যজ যূনকদের মধ্যে গিয়ে নেচে ওঠায় বা দর্ভকপল্লিতে নির্বাসিত হয়ে তার মধ্যে বেঁচে থাকার আনন্দ প্রকাশ পায়।

৬.১০ "ভুল করেছিলুম জেনেও সে ভুল ভাঙতে পারিনি।" - কে কাকে কোন্‌ ভুলের কথা বলেছে? ভুল ভাঙেনি কেন?

উত্তরঃ আলোচ্য উক্তিটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা গুরু গ্রন্থে অচলায়তনের আচার্য অদীনপুণ্য বলেছেন তাদের গুরু তথা যূনকদের দাদাঠাকুরকে।

     আচার্য হলেন অচলায়তন নামক আশ্রমটির প্রধান কর্ণধার। তাঁর নির্দেশেই আশ্রমের সকল সদস্য নিয়ম পালন করে, শিক্ষা দেয় সমাজের উচ্চশ্রেণির সন্তানদের। আশ্রম প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তিনি পুথিগত পান্ডিত্য ও নিয়মনীতিকে এমনভাবে আঁকড়ে ধরেছিলেন যে, প্রকৃত মানবতাই তাঁর কাছে উহ্য হয়ে গিয়েছিল। প্রকৃতির নিয়ম যে মানুষের সকল সংস্কারের ঊর্ধ্বে, সেকথা তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন। তাই তো অষ্টাঙ্গশুদ্ধি ব্রত করার সময় উপবাসের তৃতীয় রাতে বালক কুশলশীল তৃষ্ণার্ত অবস্থায় প্রাণত্যাগ করলেও আচার্য তখন তার মুখে এক ফোঁটাও জল দেননি এবং বলেছিলেন, "তুচ্ছ মনুষ্যের প্রাণ আছে কাল নেই। কিন্তু সনাতন ধর্মবিধি তো চিরকালের।" গুরু আচার্যকে মুক্ত মনে শিক্ষার পথ দেখিয়ে নেতার স্থানে বসিয়ে গেলে তিনি পুথি নিয়ে জীবনকে আবদ্ধ করে তোলেন। কিন্তু গুরুর আগমনবার্তা পেয়ে তিনি সুভদ্রকে দিয়ে মহাতামস ব্রত করানোয় বাধা দিয়েছিলেন। যদিও তিনি শেষরক্ষা করতে পারেননি কারণ তাঁর রক্ষা-করে-চলা নিয়মের প্রভাব ক্ষুদ্র বালক মনেও ক্রিয়াশীল হয়ে গিয়েছিল। সুভদ্র নিজেই ব্রতপালনে অগ্রসর হয় এবং সুভদ্রকে বাঁচাতে চাওয়ার অপরাধে আচার্যকে পদচ্যুত করে দর্ভকপল্লিতে পাঠানো হয়।

৬.১১ "ওকে অচলায়তনের ভুতে পেয়েছে" - কার সম্বন্ধে একথা কে বলেছ? অচলায়তনের ভূত কী? কীভাবে তাকে ভূতে ধরেছে?

উত্তরঃ নাট্যব্যক্তিত্ব রবীন্দ্রনাথ প্রণীত 'গুরু' নাটকে পশুক সম্পর্কে তৃতীয় যুনক উক্ত কথা বলেছে। 

     আলোচ্য নাটকে 'অচলায়তনের ভূত' বলতে বোঝানো হয়েছে সনাতন সংস্কার, নিয়ম–নীতিকে। এই সনাতন প্রথা বা সংস্কারই জন্ম দিয়েছে বৈষম্য এবং অস্পৃশ্যতাবোধ। আলোচ্য নাটকে রবীন্দ্রনাথ পঞ্চক চরিত্রটিকে ঘৃণধরা সনাতন সংস্কার থেকে বের করে এনে মুত্তপ্রাণের অগ্রদূত হিসেবে অঙ্কন করেছেন। অচলায়তনের বস্তাপচা রীতিনীতি, সংস্কারের সঙ্গে সে খাপ খায় না। অচলায়তনের পাথরের প্রাচীরকে ডিঙি য়ে সে অবাধ গতিতে এগিয়ে চলে মুক্ত পথের দিকে। তার গান শুনে যুনকরা মুগ্ধ হয় এবং তাকে জড়িয়ে ধরার বাসনা প্রকাশ করে। কিন্তু পঞ্চক বাধা দিয়ে বলেছে – “আমাকে ছুঁস না।” তাই যূনকদের মনে হয়েছে, অচলায়তনের ভূত পশ্যককেও পেয়ে জানিয়েছে। পণক সংস্কারমুক্ত প্রাণের সন্ধান করেছে ঠিকই কিন্তু সে অচলায়তনরেই অধিবাসী। এইজন্যই তার মাথায় অচলায়তেনর ভূত চেপে বসেছে। 

৬.১২ "আমরা প্রাণ দিয়ে ঘর বাঁধি, থাকি তার মাঝেই।" - এই গান কারা গেয়েছে? প্রাণ দিয়ে ঘর বাঁধার উদ্যম তাদের গানে কীভাবে ভাষা পেয়েছে?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ প্রণীত 'গুরু' নাটকে কর্মচঞ্চল যূনকরা উদ্ধৃত গানটি গেয়েছে। পঞ্চক মুক্ত জীবনবোধের প্রতীক হিসাবে নাটকে এসেছে। অচলায়তন নামক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পঞ্চক একটি মূর্তিমান বিদ্রোহ অচলায়তনের সব পুঁথিপত্র ফেলে, গুরুর জন্য অপেক্ষা করছে পঞ্চক। অচলায়তনে গান একেবারেই নিষিদ্ধ কিন্তু নিয়ম ভাঙার হাতিয়ার হিসাবে পঞ্চক গানকেই বেছে নেয়। বালক সুভদ্র উত্তরদিকের জানালা খুলে ফেলার অপরাধে ভীত হলে পঞ্চকই তাকে সাহস দেয়। মহাময়ূরী দেবীকেও সে ভয় পায় না। নাটকের শেষদিকে সুভদ্রকে সঙ্গে নিয়ে সে–ই অচলায়নের বদ্ধ জানালাগুলো খুলে দেয়। 

    অচলায়তনে পঞ্চক একটি ব্যতিক্রমী চরিত্র। অন্যরা মন্ত্র ও নিয়মের দাসত্ব করলেও পঞ্চক সেখানে যুক্তিবাদের জয় ঘোষণা করে। পঞ্চকের প্রাণশক্তিরও তুলনা নেই। সে গান মুখস্থ করলেও মন্ত্র মুখস্থ করে না। সে শাশ্বত সত্যের সন্ধানে মগ্ন। কৃত্রিম বিদ্যার ভার সে বহন করতে অনিচ্ছুক। আসলে অচলায়তনে পঞ্চকই হলো মুক্ত প্রাণের প্রতীক। যুক্তিবাদী মনন তাকে সংস্কারমুক্ত মানুষে পরিণত করেছে। 

৬.১৩ "শুনেছি অচলায়তনের কারা সব লড়াই করতে এসেছে।" - শিক্ষায়তন কীভাবে অচলায়তনে পরিণত হয়েছিল? সেখানে কারা লড়াই করতে এসেছিল এবং কেন?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গুরু নাটকে অচলায়তনে আপাতভাবে শিক্ষায়তন হলেও শাস্ত্র, আচার-বিচার আর সংস্কারে নিমজ্জিত সেই আয়তন শেষ অবধি অচলায়তনেই পরিণত হয়। এই অচলায়তনে পাথরকে সত্য বলে মানা হয়, পাথরে ঘাস জন্মানো হয় নিন্দিত। কুলদত্তের ক্রিয়াসংগ্রহ, ভরদ্বাজ মিশ্রের প্রয়োগ প্রজ্ঞপ্তি আর জ্বলনানন্তের আধিকর্মিক বর্ষায়ণে অচলায়তন পথের সন্ধান খোঁজে। নিয়ম পালনের মধ্যেই সেখানে জীবনের সার্থকতা। আচার্য এর ব্যাখ্যায় বলেছেন - "এখানকার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর এখানকারই সমস্ত শাস্ত্রের ভিতর থেকে পাওয়া যায়"। অর্থাৎ আচার্যের কথায় পরোক্ষে অচলায়তনের গতিহীনতার দিকে ইঙ্গিত থাকে। মুক্ত জীবনের বার্তাবাহক পঞ্চককে তাই অচলায়তনে 'দুর্লক্ষণ' বলে চিহ্নিত করা হয়। বালক সুভদ্র কৌতুহলের বশে আয়তনের উত্তর দিকের জানলা খুলে দিলে তাকে ভয়ংকর পাপ হিসেবে বিবেচনা করে মহাপঞ্চক। উপাধ্যায়, উপাচার্যসহ সকলেই তাকে প্রায়শ্চিত্ত করানোর জন্য ব্যগ্র হয়ে ওঠে। উপাধ্যায় যখন বলেন "তুচ্ছ মানুষের প্রাণ আজ আছে কাল নেই, কিন্তু সনাতন ধর্মবিধি তো চিরকালের।" তখন মানবতার ওপরে শাস্ত্রকে স্থাপন করা হয়। আর শিক্ষালয়ের অচলায়তনে পরিণত হওয়াও নিশ্চিত হয়ে যায়।

     দাদাঠাকুরের নেতৃত্বে সেখানে যূনকেরা লড়াই করতে এসেছিল। আপাতভাবে চন্ডকের হত্যা এবং দশজন যূনককে কালর্ঝন্টি দেবীর কাছে বলি দেওয়ার জন্য ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য শোধ নেওয়া তাদের উদ্দেশ্য হলেও, আসলে তারা এসেছিল অচলায়তনের পাপের প্রাচীরকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে।

৬.১৪ "আমাদের রাজার বিজয়রথ তার উপর দিয়ে চলবে" - কে বলেছেন? রাজা কে? তিনি কী বিজয় করবেন? কোথা দিয়ে যাবে তার বিজয়রথ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ বিরচিত 'গুরু' নাটকে দাদাঠাকুর উক্ত কথা বলেছেন। চণ্ডক স্থবিরক হয়ে ওঠার জন্য বনের পোড়ো মন্দিরে ধ্যান করছিল। রাজা মন্থরগুপ্ত এই সংবাদ পেয়ে তাকে কেটে ফেলে। এই সংবাদ শুনে দাদাঠাকুর স্থবিরপত্তনের প্রাচীর ভেঙে দিয়ে তার উপরে রাজপথ নির্মাণ করতে চান। দাদাঠাকুর বলেন, এই পথেই রাজার বিজয়রথ চলবে। 'রাজা' কথার অন্তর্নিহিত অর্থ সবকিছু সমান করার অধীশ্বর যিনি, তাঁর সম্পর্কেই দাদাঠাকুর রাজার প্রসঙ্গ এনেছেন। 

     অচলায়তনে যে জীর্ণ সংস্কার, রীতিনীতি, অস্পৃশ্যতা, বৈষম্য তা রাজা বিজয় করবেন। তিনি যূনক ও দর্ভকদের সংস্কার এবং চলার পথের মিলন স্থাপন করবেন। যে সনাতন সংস্কার অচলায়তনের মানুষকে সংকীর্ণ গণ্ডিতে বন্ধ করে রেখেছিল, সেই সংস্কারকে দাদাঠাকুর ধুয়ে – মুছে সমান করে দিবেন। প্রথামুক্ত সংস্কারের চেতনায় অচলায়তনের অন্যসংস্কার ধ্বংস হয়ে যাবে। সেইসঙ্গে মানুষ রাজার বিজয় পতাকা মুক্তপথের দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এইভাবে রাজার বিজয়রথ স্থবিরকদের ভাঙা প্রাচীরের উপর দিয়ে অসীমতার দিকে ছুটে চলবে।

See More : Full Class 11 Bengali Suggestion 2023

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
  1. সঙ্গীতের ব্যবহার, গুরুর বিশ্লেষণ, নামকরণ, বালক দলের প্রয়োজনীয়তা, মহাপঞ্চক চরিত্র এগুলো সমন্ধে প্রশ্নোত্তর দিন।

    উত্তরমুছুন

Top Post Ad

LightBlog

Below Post Ad

LightBlog

AdsG

close