শিক্ষার সার্কাস
আইয়াপ্পা পানিকর
(১) নিচের বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
১.১ প্রথম শ্রেণিতে পাস করলে কোন্ শ্রেণিতে যাওয়া সম্ভব? - দ্বিতীয়
১.২ যদি তৃতীয় শ্রেণিতে পাস করে, তাহলে কোন্ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে? - চতুর্থ
১.৩ কবির মতে, সব শিক্ষা আসলে কী? - সার্কাস
১.৪ বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় জ্ঞানের জায়গায় শিক্ষার্থীদের মনে কী বাসা বেঁধেছে? - ধোঁকা
১.৫ সার্কাস আসলে কী? - একপ্রকার খেলা
১.৬ কবি কীভাবে চতুর্থ শ্রেণিতে বসতে পারেন? - তৃতীয় শ্রেণি পাস করলে
১.৭ "যদি _________ দ্বিতীয় শ্রেণি পাস করি।" - আমি
১.৮ কবি কী করে এক-দুই-তিন-চার শ্রেণীতে যেতে পারেন? - প্রত্যেক বছর পাস করে
১.৯ বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার সার্থকতা কোথায়? - পরীক্ষার কৃতকার্যতায়
(২) নিচের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
২.১ 'সর্বশিক্ষা' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তরঃ আইয়াপ্পা পানিকর-এর লেখা শিক্ষার সার্কাস রচনায় সর্বশিক্ষা বলতে লেখাপড়ার সঙ্গে সাংস্কৃতিক শিক্ষা, কারিগরি বা বৃত্তিমূলক শিক্ষার কথাও বুঝিয়েছেন কবি।
২.২ শিক্ষার সার্কাস কবিতায় যদি শব্দটি বারবার ব্যবহারের তাৎপর্য কী?
উত্তরঃ আইয়াপ্পা পানিকর-এর লেখা শিক্ষার সার্কাস কবিতায় যদি শব্দটির বারবার ব্যবহারের মাধ্যমে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার ক্ষেত্রে প্রচুর সংশয় প্রকাশ পেয়েছে।
২.৩ শিক্ষার সার্কাস কবিতায় এক-দুই-তিন-চার বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ আইয়াপ্পা পানিকর-এর লেখা শিক্ষার সার্কাস কবিতায় শিক্ষার এক-একটি শ্রেণি বোঝাতে 'এক-দুই-তিন-চার' ব্যবহার করা হয়েছে, যা কেবল সংখ্যা মাত্র।
২.৪ তবু পরের শ্রেণিতে বলতে কীসের কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ আইয়াপ্পা পানিকর-এর লেখা শিক্ষার সার্কাস কবিতায় তবু পরের শ্রেণিতে বলতে প্রথাগত শিক্ষার বাইরে কোনো শিক্ষা, হয়তো-বা বৃত্তিমূলক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে।
২.৫ বর্তমান শিক্ষাপদ্ধতির বিরোধিতা করেছেন এমন এক সাহিত্যিকের নাম লেখো।
উত্তরঃ বর্তমান শিক্ষাপদ্ধতির বিরোধিতা করেছেন এমন একজন সাহিত্যিক হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
২.৬ সব শ্রেণি শেষে কবি তবু পরের শ্রেণিতে যেতে চেয়েছেন কেন?
উত্তরঃ আইয়াপ্পা পানিকর-এর লেখা শিক্ষার সার্কাস কবিতায় সব শ্রেণি শেষে কবি তবু পরের শ্রেণিতে যেতে চেয়েছেন, কারণ প্রতিযোগিতায় জেতার জন্য তিনি আরও ডিগ্রি অর্জন করতে চেয়েছেন।
See More : Full Class 11 Bengali Suggestion 2023
(৩) নীচের রচনাধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
প্রশ্নঃ শিক্ষার সার্কাস কবিতায় কবির যে মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় লেখ।
উত্তরঃ আইয়াপ্পা পানিকর শিক্ষাক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক আদর্শের তীব্র বিরোধিতা করেছেন তার বিভিন্ন বক্তৃতায় এবং লেখায়। তার সেই শিশুর 'শিক্ষার সার্কাস' কবিতাতে বেশ স্পষ্ট শোনা যায়। আমাদের দেশে ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষার মূল কথাই ছিল চাকুরে তৈরি করা এবং তার জন্য যে কোন প্রকারের পরীক্ষায় পাস করা। এর জন্য এক শ্রেণী থেকে পড়ে শ্রেণীতে উত্তরণই শিক্ষার একমাত্র লক্ষ্য হিসাবে বিবেচিত হতে শুরু করে।
শিক্ষা এইভাবে শিক্ষার্থীর জীবনে সর্বাঙ্গীণ বিকাশের বদলে যেভাবে শুধু পরীক্ষায় পাশের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে, তাকেই তীব্র ভাষায় ব্যঙ্গ করেছেন কবি আইয়াপ্পা পানিকর। তার 'শিক্ষার সার্কাস' কবিতা যেভাবে সার্কাসের ট্রাফিজের খেলায় একটা দড়ি ছেড়ে আর একটা দড়ি ধরে কুশলী খেলোয়াড়, ঠিক সেভাবেই একশ্রেণী থেকে আরেক শ্রেণীতে ওঠার মধ্যেই শিক্ষার সার্থকতা খুঁজে এদেশের শিক্ষার্থীরা। তাই শিক্ষা কবির কাছে সার্কাস বলে মনে হয়েছে।
যার সাহায্যে শুধুই পরে শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়া যায়। শিক্ষার সঙ্গে জ্ঞানের এই সংযোগহীনতা কবিকে আশাহত করে তুলেছেন। স্কুল-কলেজের এই কলেজ হাঁটার ফলে আমাদের পাণ্ডিত্য, উদ্ভাবনীশক্তি বা ধারণাশক্তি কোনটাই যথাযথ বিকাশ ঘটে না। কেবল নোটবুক মুখস্ত করার ফলে আমাদের দেশের ছেলেরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শীর্ণ হয়ে ইস্কুল কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে। এর ফলে ক্রমশ অনিবার্য হয়ে ওঠে শিক্ষার্থী তথা একটি সমগ্র জাতির মানসিক অপমৃত্যু। সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থাকে তাই কবির ধোকা বলে মনে হয়েছে। এইভাবে গদ্য কবিতার লেখনীর সাহায্যে কবি সমাজ সংকটের গভীরে আলো ফেলতে চেয়েছেন। কল্পনার সামান্য মাত্র প্রকাশ ছাড়াই 'শিক্ষার সার্কাস' হয়ে উঠেছে কবির সমাজ-ভাবনা বিশিষ্ট দলিল।
প্রশ্নঃ "সে যেখানে গেছে, সেটা ঘোঁকা।" - 'ধোঁকা' শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে কবির কোন্ মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে?
উত্তরঃ বর্তমান সমাজে ব্যবহারিক জীবনে মানুষের শিক্ষা যেভাবে তার প্রকৃত তাৎপর্য হারায় এবং আত্মিক বিকাশের সহায়ক হয় না তার উল্লেখ প্রসঙ্গেই উক্তিটি করা হয়েছে আইয়াপ্পা পানিকর তার শিক্ষার সার্কাস কবিতায়। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন প্রতিটি শিক্ষা ব্যবস্থার। ঘোষিত উদ্দেশ্য হল জ্ঞান সঞ্চয় এবং শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটানো। অনবরত অধ্যয়নের মাধ্যমে জীবনকে জীবজগতের শ্রেষ্ঠতম প্রতিনিধির মর্যাদা দেবে এবং তার জ্ঞান ভান্ডারকে ক্রমাগত সমৃদ্ধ করে চলবে। এটাই প্রত্যাশিত জ্ঞান ভান্ডারকে অজানা জগতে রহস্য উন্মোচনে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য। আর এই জ্ঞানের মাধ্যমেই ঘটাবে চেতনার উন্মেষ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভোগবাদী সমাজে শিক্ষার আদর্শ ও উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে শিক্ষা। যেখানে বেক্তিগত প্রতিষ্ঠা অর্জনের জন্য যেন এক সিঁড়ি ভাঙা অংক এক শ্রেণী থেকে আরেক শ্রেণীতে নিছক যান্ত্রিকভাবে উত্তোলন। আর তার জন্য পরীক্ষায় পাসের প্রাণান্তর প্রয়াস। শিক্ষার সার্থকতাকে পরিষদের পরীক্ষায় পাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। ফলে যে শিক্ষা একজন শিক্ষার্থী অর্জন করে সেখানে আর যাই হোক প্রকৃত জ্ঞানের চর্চা অন্তত থাকেনা। স্কুল-কলেজে প্রদত্ত শিক্ষা পদ্ধতির নিষ্ফলতা যেখানে প্রমাণিত হয়। এই ধরনের শিক্ষা পদ্ধতির ফলে তাই শিক্ষার্থীদের আর্থিক মৃত্যু হয়ে ওঠে অনিবার্য শব্দটি দ্বারা শিক্ষার্থীকেই তুলে ধরা হয়েছে।
প্রশ্নঃ "সব শিক্ষা একটি সার্কাস" - মন্তব্যটির তাৎপর্য আলোচনা করো।
উত্তরঃ শিক্ষার সার্কাস কবিতা এই প্রশ্ন জড়িত মন্তব্যটির বক্তা কবি আইয়াপ্পা পানিকর স্বয়ং। মানুষের জীবন সবসময়ই শ্রেণীবদ্ধ সামাজিক ও ব্যক্তিগত চাহিদা এবং লক্ষ্য পূরণের প্রয়োজনে নিরন্তর একশ্রেণী থেকে অন্য শ্রেণীতে উত্তরণের পথ খুঁজে চলে। মানুষ শিক্ষাক্ষেত্রে এর বিপুল অনুশীলন লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু পরীক্ষায় সাফল্য জীবনে প্রধানতম হয়ে ওঠে জ্ঞানের অন্বেষণ। এর আকাঙ্ক্ষা ক্রমশই শিক্ষার্থী মন থেকে হারিয়ে যায়। শিক্ষাব্যবস্থাকে সার্কাস এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। সার্কাসে যেমন খেলোয়াড় একটা দড়ি বা তার থেকে শারীরিক কসরত দেখিয়ে আরেকটিতে চলে যায়। শিক্ষার ক্ষেত্রে এক শ্রেণী থেকে উত্তীর্ণ হয়ে পড়ে নিতে যাওয়া তেমনি একটা বাহ্যিক চলন মাত্র এই প্রসঙ্গে জ্ঞানার্জনের কোন সম্পর্ক নেই। স্যার কাছে যেমন কখনো কখনো মুহূর্তে বিচ্যুতি মানে নিশ্চিত পতন প্রচলিত শিক্ষা নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা তেমনি একটি পরীক্ষার সাফল্য না পেলে জীবনে যেন নিরর্থক হয়ে যায়। পাশের লক্ষ্যে পাঠ্যপুস্তক এর জ্ঞানকে গলধঃকরণ করার চেষ্টা চলে নিরন্তর আর পরীক্ষার খাতায় বা তা আবার বমির মতো উদগীরণ করা হয়। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী সে বিষয়ে প্রায় অধিকাংশ লোকই একমত জ্ঞানহীন চেতনাবিমুখ এই শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীন কবি আইয়াপ্পা পানিকর শিক্ষাকে সার্কাস এর সঙ্গে তুলনা করেছেন।
See More : Full Class 11 Bengali Suggestion 2023
Thanks
উত্তরমুছুন