ডাকাতের মা
সতীনাথ ভাদুড়ী
(১) নিচের বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
১.১ 'ডাকাতের মা' গল্পে শেষবার সৌখী জেলে যাবার পর তার দলের লোকেরা টাকা দিত প্রথম - দুই বছর
১.২ 'ডাকাতের মা' গল্পে সৌখীর ছেলের বয়স - চার-পাঁচ বছর
১.৩ 'ডাকাতের মা' গল্পে সৌখীর মাকে ঝি-চাকরের কাজ পাড়ার কেউ দিত না - অবিশ্বাসে
১.৪ 'ডাকাতের মা' গল্পে 'একলষেঁড়ে' শব্দের অর্থ - স্বার্থপর
১.৫ 'ডাকাতের মা' গল্পে সৌখী জেলে যাবার পর তার দলের লোকেরা তার বাড়িতে টাকা পাঠানো বন্ধ করে - দু-বছর পর
১.৬ 'ডাকাতের মা' গল্পে চতুর্থবার দরজায় জোড়া-টোকার শব্দ শুনে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে যার গন্ধ পায় সৌখীর মা, তা হল - বিড়ি
১.৭ 'ডাকাতের মা' গল্পে সৌখীর সাজা কমেছিল - এক বছর
১.৮ 'ডাকাতের মা' গল্পে পাঁচ-সাত বছর আগে পুলিশ একবার সৌখীদের বাড়ি ঘেরাও করেছিল যার খোঁজে, তা - বন্দুক
১.৯ "সাধে কি আর বউমাকে তার বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে হল!" - বউমাকে তার বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হল, কারণ - ঘরের নিত্য অভাব
১.১০ 'ডাকাতের মা' গল্পে সৌখী কতগুলি বিয়ে করেছিল? - দুটো
১.১১ 'ডাকাতের মা' গল্পে ডাকাতের মা বা বউ হয়ে সৌখীর মা কেমন বোধ করে? - গর্ব করে
১.১২ "দারোগসাহেব পর্যন্ত যার বাপকে __________ করতে সাহস করেননি কোনোদিন।" - তুইতোকারি
১.১৩ 'ডাকাতের মা' গল্পে সৌখীর মা প্রথমবার জোড়া টোকার শব্দ শুনে কী ভেবেছিল? - টিকটিকি তার সঙ্গে খুনসুড়ি করছে
১.১৪ "সৌখী এ প্রশ্ন কানে তুলতে চায় না।" - কোন্ প্রশ্ন? - সৌখীর জেলে অসুখ-বিসুখ করেছিল কি?
১.১৫ "সে মনে মনে ঠিক করে ফেলে যে...।" - কী ঠিক করে ফেলেছিল? - ছেলে-বউকে আনতে পরদিনই সে শ্বশুরবাড়ি যাবে
১.১৬ "নতুন-পাওয়া স্বাধীনতা উপভোগ করবার জন্য সৌখী মনে মনে ঠিক করেছে যে," - কী ঠিক করেছিল সৌখী? - বারোটার আগে ঘুম থেকে উঠবে না সে
১.১৭ "তার যে ধারণা ছিল" - কোন্ কথা ধারণা করে সৌখীর মা লোটা বিক্রি করেছিল? - পুরোনো বাসনপত্র নিশ্চিতভাবেই বাসনওয়ালা লোটাটা দেখাবে না
১.১৮ "তাকে ঠেকানো হয় মুশকিল।" - কাকে ঠেকানো মুশকিল? - দলের বিশ্বাসঘাতক মেয়েকে
১.১৯ "সে-ই সুপারিশ করে দিয়েছিল জেলের বাবুর কাছে" - সুপারিশ করার কারণ কী? - সৌখী তাকে ঘুষ দিয়েছিল
১.২০ "ছেলের চোখের চাউনি ঘরের দূর দেওয়াল পর্যন্ত কী যেন খুঁজছে।" - কী? - বউ এবং ছেলে
১.২১ "আইনের ধারণায় স্পষ্ট লেখা আছে যে," - কী লেখা আছে? - চুরির খবর পুলিশকে না দিলে জেল পর্যন্ত হতে পারে
১.২২ "ডাকাতের মায়ের ঘুম কি পাতলা না হলে চলে!" - কেন? - রাত-বিরেতে কখন দরজায় টোকা পড়বে
১.২৩ "আর বছরখানেক বাদেই তো সৌখী ছাড়া পাবে।" - ছাড়া পেয়ে এসে সৌখী কী করলেই বলে নিশ্চিত ছিল তার মা? - বউকে রূপোর গয়না গড়িয়ে দেবে
১.২৪ "অভিপ্রেতের চেয়ে হতাশ হয়েছে বেশি সৌখী।" - কেন? - বউ-ছেলেকে দেখতে না পেয়ে
১.২৫ "তাই বাপের মুখের আদল ধরা পড়েছে ধরা পড়েছে ছেলের মুখে।" - কী কারণে? - চুলে পাক ধরেছিল বলে
১.২৬ "টকটক করে দু-টোকার শব্দ থেমে থেমে তিনবার হলে বুঝতে হবে" - দলের লোক টাকা দিতে এসেছে
(২) নিচের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
২.১ ডাকাতের মায়ের ঘুম কি পাতলা না হলে চলে!" - কেন ডাকাতের মায়ের ঘুম পাতলা না হলে চলে না?
উত্তরঃ ডাকাতের বাড়িতে রাতবিরেতে যখন-তখন দরজায় টোকা পড়ার সম্ভাবনা থাকে বলে দাকাতের মায়ের ঘুম পাতলা না হলে চলে না।
২.২ "তিনবারের পর আরও একবার হলে বুঝতে হবে যে," - কী বুঝতে হবে?
উত্তরঃ দরজায় টোকা তিনবারের পর আরও একবার হলে বুঝতে হবে যে, সৌখী বাড়ি ফিরল।
২.৩ "কতবার হয়েছে, কতবার বদলেছে?" - কী?
উত্তরঃ রাতবিরেতে সৌখীদের বাড়ির দরজায় টোকা-দেওয়ার সাংকেতিক নিয়ম অনেকবার হয়েছে এবং বদলেছে।
২.৪ "একেবারে ভেঙে গিয়েছে শরীর।" - কার শরীর, কেন একেবারে ভেঙে গিয়েছিল?
উত্তরঃ সৌখীর রোগা-রোগা চেহারার দ্বিতীয় বউয়ের শরীর একেবারে ভেঙে গিয়েছিল সন্তান প্রসব পারত না।
২.৫ "করলেই বা রাখত কে?" - কেউ রাখত না কেন?
উত্তরঃ ডাকাত-বাড়ির মা-বউকে কেউ বিশ্বাস করে না বলেই সৌখীর মা ও বউকে কেউ পরিচারকার কাছে রাখত না।
২.৬ "দলের ওই বদলোকগুলোকে ঠান্ডা করতে হবে" - ওই বদলোকগুলো বক্তা কী কী বলে অভিহিত করেছেন?
উত্তরঃ ওই বদলোকগুলোকে সৌখীর মা যে দুই অভিধায় অভিহিত করেছেন, তা হল একলষেঁড়ে লোক এবং ছিঁচকে চোর।
২.৭ "এ কি কম দুঃখের কথা।" - দুঃখের কথাটা কী?
উত্তরঃ বিগত পাঁচ বছর ধরে সৌখীর মা রাত্রে নাক-মুখ কম্বলে ঢেকে ঘুমালেও তাকে বকুনি দেওয়ার মতো কোনো লোক পর্যন্ত যে বাড়িতে নেই, সেটাই তার কাছে দুঃখের কথা।
২.৮ "সে কি আজকের কথা!" - কার কথা এখানে বলা হয়েছে?
উত্তরঃ সৌখীর মা যে অনেক-কালের-পুরোনো কম্বলটা জড়িয়ে শুয়ে ঠান্ডায় কাঁপছিল, সেটি সৌখী আগের বার জেল থেকে এনেছিল বলে সে বলেছে যে তা অনেক কালের কথা।
২.৯ 'হাতি পাকে পড়লে ব্যাঙেও লাথি মারে।" - বক্তা কখন একথা বলেছিল?
উত্তর ঘরে কম্বল - মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকা সৌখীর মা হঠাৎ টকটক করে টোকা পড়ার মতো শব্দ শুনে তাকে টিকটিকির ডাক মনে করে বিরক্ত হয় এবং প্রশ্নপত্রোক্ত উক্তিটি করে।
২.১০ "আর সন্দেহ নেই।" - কোন্ ব্যাপারে সন্দেহ ছিল না?
উত্তরঃ দরজায় দুবার জোড়া-টোকার খনখনে শব্দ শুনে সৌখীর মা যে সৌখীর অনুচরের আগমন প্রত্যাশা করেছিল, তৃতীয়বারের জোড়া-টোকা শুনে সে সে-ব্যাপারে নিঃসন্ধিগ্ধ হয়।
২.১১ "কথা বলতে হবে সাবধানে।" - কার সঙ্গে কথা বলার কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ পুলিশের লোকের সম্বন্ধে সৌখীর মা একথা বলেছে।
২.১২ "অপ্রতিভের চেয়ে হতাশ হয়েছে বেশি সৌখী।" - কখন?
উত্তরঃ সৌখী যখন শোনে তার বউ ছেলে-সহ বাপের বাড়ি গেছে, তখনই সে অপ্রতিভের তুলনায় বেশি পরিমাণে হতাশ হয়।
২.১৩ "একথা এখনই মাকে বলে ফেলা ভালো দেখায় না।" - কোন্ কথা?
উত্তরঃ সৌখী যে পরদিনই বউ-ছেলেকে আনতে শ্বশুরবাড়ি যাওয়া মনে মনে ঠিক করেছিল - সেই কথা তখনই সে মাকে জানাতে চায়নি।
২.১৪ "সে পাঁচিল ভাঙতে বুড়ির বিশেষ অসুবিধা হল না।" - কেন?
উত্তরঃ পেশকারসাহেবের বাড়ির পাঁচিলটা মাত্র দু-আড়াই ফুট গাঁথা হয়েছিল এবং তার দু-পাশে মাটি আর ভাঙা ইটের পাহাড় পড়ে থাকায় তা ভাঙতে সৌখীর বুড়িমার বিশেষ অসুবিধা হয়নি।
২.১৫ "খোকার মা নাকে কেঁদে স্বামীকে মনে করিয়ে দিলেন..." - কী মনে করিয়ে দিলেন?
উত্তরঃ মাতাদীন পেশোকারের খোকার মা স্বামীকে মনে করিয়ে দেন যে, লোটা বাড়ির লক্ষ্মী বলে অবিলম্বে আর -একটি লোটা কিনে আনা দরকার বাড়ির লক্ষ্মীশ্রী ফেরাতে।
২.১৬ "কিন্তু আজ যে ব্যাপার অন্য।" - আজ অন্য ব্যাপ্র কেন?
উত্তরঃ সেদিন পুলিশের সঙ্গে মাতাদীন পেশকার এবং বাসনওয়ালা সৌখীর মা-র বাড়িতে উপস্থিত ছিল বলে তখন সৌখীর মার হেঁট হয়নি।
২.১৭ "কোনো জবাব বেরুল না বুড়ির মুখ দিয়ে।"- কোন্ প্রশ্নের জবাব বেরোয়নি?
উত্তরঃ দারোগাসাহেব যখন সৌখীর বুড়িমাকে জিজ্ঞাসা করেন, তাঁর দেখানো লোটাটা সেদিন সে বাজারের বাসনের দোকানে চোদ্দো আনায় বিক্রি করেছে কি না, সেই জিজ্ঞাসার জবাব বেরোয়নি বুড়ির মুখ দিয়ে।
২.১৮ "এ আনন্দ আর রাখবার জায়গা নেই..." - আনন্দের কারণ কী?
উত্তরঃ সৌখীর মার আনন্দের কারণ, এতদিন পর জেল থেকে ফিরেও তার সঙ্গে ছেলে খুনসুড়ি করছে।
২.১৯ "প্রতি মুহূর্তে বুড়ি এই প্রশ্নের ভয়ই করছিল।" - প্রশ্নটা কী?
উত্তরঃ বাড়ি ফিরে সৌখী ছেলে-বউকে দেখছে না কেন - সৌখীর এই প্রশ্নের ভয়ই করেছিল বুড়ি।
২.২০ 'ডাকাতের মা' কোন্ ধরনের রচনা?
উত্তরঃ 'ডাকাতের মা' রচনাটি ছোটোগল্প।
২.২১ 'ডাকাতের মা' গল্পে রাতে সৌখীদের ঘরের বাইরে কীসের শব্দ হয়েছিল?
উত্তরঃ রাতে সৌখীদের ঘরের বাইরে নোনা ও আতা গাছের শুকনো পাতার খড়খড় করার শব্দ হয়েছিল।
২.২২ 'ডাকাতের মা' গল্পে সৌখীর অসুখ-বিসুখ করেছিল নাকি? - একথা কে, কেন জিজ্ঞাসা করেছিল?
উত্তরঃ সৌখীর মা জিজ্ঞাসা করে, কারণ জেলে গেলে তার শরীর ভালো হয় কিন্তু এবারে রোগা হয়েছে সে।
২.২৩ "এতক্ষণে শেষের কথাটা কানে গেল।" - কথাটি কী?
উত্তরঃ কথাটি হল - "নে, হাতমুখ ধুয়ে নে।"
২.২৪ "ঘটি দেখেই তাঁর খটকা লাগল।" - কার খটকা লাগল?
উত্তরঃ ঘটি দেখে মাতাদীন পেশকারের খটকা লাগল। পকেট থেকে চশমা বের করে সেটি নাকের ডগায় বসিয়ে তিনি যখন দেখলেন যে ঘটিটির নীচে তাঁর ঘটির নীচের মতোই তারাচিহ্ন আঁকা রয়েছে, তখনই খটকা দূর হল তাঁর।
See More : Full Class 11 Bengali Suggestion 2023
(৩) নিচের রচনাধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
প্রশ্নঃ ডাকাতের মায়ের মাতৃত্ববোধ আলোচনা করো।
উত্তরঃ 'ডাকাতের মা' ছোটোগল্পে সৌখীর মায়ের সবসময়ই তার ছেলেকে নিয়ে একপ্রকার উচ্চ ধারণা ছিল। যেমন সৌখীর নামে চৌকিদারসাহেব এমনি কি দারোগাসাহেব কাঁপেন।
সৌখীর মায়ের মাতৃত্বের আরোও পরিচয় লক্ষ করা যায় সৌখীর জেল থেকে ফিরে আসার পর। বাড়ি ফেরার পর তার প্রথম প্রশ্ন -
"জেলে তোর অসুখ-বিসুখ করেছিল নাকি?"
এখানে মাতৃত্ব স্নেহের এক উদবিগ্ন মায়ের কন্ঠস্বর শোনা যায়। এই স্নেহের কারণেই সামান্য আলোতেও সে লক্ষ করে যে সৌখীর চুলে পাক ধরেছে বা সৌখী আগের থেকে অনেক রোগা হয়েগেছে। এইসময় সে ভয়ে নাতি ও বউমার তার বেয়াইবাড়িতে যাওয়ার খবর কিছুতে বলতে চাই না, যাতে তার ছেলে কাছ-ছাড়া হয়ে যায়।
ছেলে ফিরে আসার পরেই সে ছেলেকে তার ব্যবসার পুঁজি খইমুড়ি খাবার হিসেবে দেয়। আর পরে মনে মনে হিসাব করতে থাকে কীভাবে পরের দিন ছেলেকে তার প্রিয় পদ ভাত আর আলুচচ্চড়ি রান্না করে খাওয়াবে। তাই তার নিজের একটি সামান্য ভুলে জেল থেকে ফিরে আসা ছেলে বউ ও ছেলের মুখ না দেখে আবার থানায় যেতে বাধ্য হয়, তখন তার মাতৃত্ববোধ শোকে-দুঃখে খানখান হয়ে যায়।
প্রশ্নঃ "কিন্তু আজ সে ব্যাপার অন্য।" - কোন্ দিনটার কথা বলা হয়েছে? সেদিনের অন্য ব্যাপারটি আলোচনা করো।
উত্তরঃ সতীনাথ ভাদুড়ীর 'ডাকাতের মা' ছোটোগল্পের খৌখীর মা যেদিন ভোররাতে ঘটি চুরি করেছিল, সেইদিনটার কথাই এখানে বলা হয়েছে।
জেল থেকে হঠাৎ ছাড়া পেয়ে বাড়িতে রাতে ফিরে আসে সৌখী। পরদিন সকালে ছেলেকে কি খেতে দেবে - সেই চিন্তায় বিছানায় শুনে অস্থির হয়ে পড়ে সৌখীর মা। সকালে সৌখীকে তার প্রিয় খাবার আলুচচ্চড়িসহ ভাত খাওয়াতে হলে আলু, চাল ও তেল - সবই কিনতে হবে। তাই নিরুপায় হয়ে খৌখীর মা মাঝরাতে প্রতিবেশী পেশকারের দড়জার বাইরে থেকে তার দামি ঘটিটি চুরি করে আনে। আর সেটিকে চোদ্দ আনায় বিক্রি করে। পরদিন সকালে যখন খৌখীর মা সৌখীর জন্য ভাত আর আলুচচ্চড়ি রান্না করছিল তখন বাসনওয়ালা ও পেশকার সাহেব পুলিশকে নিয়ে এসে উপস্থিত হয়। তাদের দেখে সৌখীর মায়ের বুক কেঁপে ওঠে। এর আগেও সৌখীকে ধরতে পুলিশ তাদের বাড়িতে হানা দিয়ে ছিল, কিন্তু উপযুক্ত প্রমান বা স্বাক্ষির অভাবে অনেকবার তাদের ফিরে যেতে হয়েছে। কিন্তু তার সদ্য ছিঁচকে চুরির সাক্ষী-প্রমান-সহ আজ তাদের বাড়িতে হাজির হয়। তাই সেই দিনটিতে পুলিশ দেকেহ সৌখীর মায়ের বুক কেঁপে ওঠে ছিল।
প্রশ্নঃ 'ডাকাতের মা' ছোটোগল্প অবলম্বনে সৌখীর মারে চরিত্র বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ 'ডাকাতের মা' ছোটোগল্পের প্রধান ও কেন্দ্রীয় চরিত্র হল সৌখীর মা। গল্পে সৌখীর মায়ের যে যে বৈশিষ্ট্যগুলি পাওয়া যায় তা নিচে আলোচনা করা হল -
(১) অপত্যস্নেহঃ পুত্রের চিন্তাভাবনা এবং পূর্ণ সমর্থ ছিল তার। বহু বছর জেল থেকে ফেরার পর শুধু মাত্র মাতৃস্নেহে ছেলের প্রিয় পদ রান্নার জন্য সে চুরি করতেও দ্বিধাবোধ করেনি।
(২) পরিশ্রমীঃ সৌখীর মা অত্যন্ত পরিশ্রমী ছিল। তাই সৌখীর অনুচররা তার জেলে যাওয়ার দুই বছর পর টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিলে সে বাড়িতে খই-মুড়ি ভেজে বিক্রি করে নিজে জীবন যাপন করত।
(৩) পুত্রবধূর প্রতি স্নেহপরায়ণাঃ দুর্বল চেহারার পুত্রবধূর উপযুক্ত পরিচর্যার জন্য সে বাধ্য হয়ে নাতিসহ বৌমাকে তার বেয়াই বড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিল।
(৪) পুরুষতন্ত্রে আস্থাঃ নিরক্ষর সৌখীর মা পুরুষের আধিপত্য শিরোধার্য করে নিয়ে ছিল। তাই সে বলে - "বাপের বেটা, তাই মেজাজ অমন কড়া।"
(৫) বাস্তববুদ্ধিঃ সৌখীর মার যথেষ্ঠ বাস্তব বুদ্ধি থাকার জন্য দীর্ঘদিন পর ছেলে বাড়ি ফিরলে তার কাছে অনুচরদের বিশ্বাস ঘাতকতা এবং স্ত্রীর অসুখের কথা কিছুই বলেনি।
প্রশ্নঃ ছোটোগল্প হিসেবে ডাকাতের মা কতটা সার্থক তা আলোচনা করো।
উত্তরঃ সতীনাথ ভাদুড়ীর ডাকাতের মা ছোটোগল্পটি নানা ভাবে সার্থক হয়েছে। নিচে তা আলোচনা করা হল -
প্রথমত, এই গল্পটিতে রয়েছে স্থান-কাল-ঘটনার ঐক্য। সৌখীর মায়ের রাত্রিকালীন চিন্তাভাবনা থেকে শুরু এবং গল্পটি শেষ হয়েছে পরদিন ভোরে সৌখীকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার কাহিনী দিয়ে।
দ্বিতীয়ত, এ গল্পে ইঙ্গিতধর্মী বাক্যের অসাধারণ ব্যবহার দেখা যায়। যেমন - "ডাকাতি করা তার স্বামী-পুত্রের হকের পেশা।"
তৃতীয়ত, ডাকাতের মা গল্পে একটি বংশানুক্রমিক ডাকাত পরিবারের নানান ঘটনাকে অত্যন্ত নিরাসক্তভাবে লেখক তুলে ধরেছেন।
চতুর্থত, ডাকাতের মা গল্পটিতে সৌখীর মায়ের কোথা শুনে মনে হয়, ডাকাতি করা তাঁর কাছে মোটেও কোনো নিকৃষ্ট কাজ নয়। বরঞ্চ ছিঁচকে চুরিই তার কাছে বেশি লজ্জাজনক।
পঞ্চমত, এই গল্পের শেষে রয়েছে নাটকীয়তা। ছেলের খাবারের জন্য পয়সা জোগাড় করার জন্য সৌখীর মায়ের রাতের বেলায় লোটা চুরি করা এবং ঘটনা ক্রমে সৌখীর মায়ের দারোগাবাবুর হাতে গ্রেফতার হওয়া, এই বিভিন্ন ঘটনা এত দ্রুত এবং আকস্মিক যে পাঠকদের চমকিত করেছে।
প্রশ্নঃ ডাকাতের মা ছোটো গল্প অবলম্বনে ডাকাত-সর্দার সৌখীর চরিত্র আলোচনা করো।
উত্তরঃ সতীনাথ ভাদুড়ীর লেখা ডাকাতের মা ছোটোগল্পে সৌখীর যে চরিত্রগুলি দেখা যায় তা নীচে আলোচনা করা হল -
(১) আত্মমর্যাদাবোধঃ অত্যন্ত আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন ডাকাত ছিল সৌখী। তাই জেলে থাকার সময় কখনও সে ছিঁচকে চোরেদের সঙ্গে কোনো রকম আচার - ব্যবহার করত না।
(২) সাবধানীঃ ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত থাকার জন্য অত্যন্ত সাবধানে থাকতে হতো সৌখীকে। দরজা খোলার আগেও মাকে বলে ছিল দশবার নিঃশ্বাস ফেলার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করার।
(৩) ধূর্ত এবং কুশলীঃ বাস্তববুদ্ধির অধিকারী ছিল বলেই সৌখী জমাদারকে ঘুষ দিয়ে নিজের জেল-জীবনের মেয়াদ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়।
(৪) মাতৃভক্তিঃ জেল থেকে বাড়ি ফিরে এসে রাতে যখন সে মায়ের গায়ে পুরোনো-ছেড়া কম্বল দেখে তখন জোর করেই তার গায়ের কম্বলটা মাকে দিয়ে দেয়।
(৫) মেজাজিঃ সৌখী অত্যন্ত মেজাজি ছিল। কারণ টোকার শব্দে ঠিক সময়ে তার ঘুম না ভাঙার জন্য মাকে বেদম প্রহার করেছিল।
প্রশ্নঃ "হাতি পাঁকে পড়লে ব্যাঙেও লাথি মারে।" - বক্তার একথা কারণ প্রসঙ্গসহ আলোচনা করো।
উত্তরঃ সতীনাথ ভাদুড়ীর লেখা ডাকাতের মা ছোটোগল্পে উদ্ধৃতি বক্তব্যটির বক্তা হলেন ডাকাত-সর্দার সৌখীর মার।
এক শীতের রাতে সৌখীর মা যখন কম্বল মুড়ি দিয়ে একাকী শুয়েছিল, তখনই বাড়ির উঠোনে নোনা আতা গাছতলায় শুকনো পাতার একটা খড়খড় শব্দ শুনতে পায় সে। গন্ধগোকুলের বা শেয়ালের ঘুরে বেড়ানোর আওয়াজ বলে তাকে প্রাথমিকভাবে মনে করে সে। ভাবে যে, ওরা হয়তো কিছু খেতে এসেছে। সেসময় সৌখীর মার খুব শীত করতে লাগলো। এ প্রসঙ্গেই তার গায়ের পুরোনো কম্বলটার বয়স যখন সে হিসাব করছিল, তখনই একটা টক্টক্ শব্দ তার কানে আসে। এই ডাকটা শুনে তাকে টিকটিকির ডাক বলে মনে করে সৌখীর মা।
টিকটিকিটা তার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটাল বলে হতাশ সৌখীর মা ভাবে যে, টিকটিকিও যেন তার দুঃসময়ের সুযোগ নিয়ে তার সঙ্গে মশকরা করছে। সৌখীর মায়ের দুঃসময়ের কারণ মূলত দুটো। প্রথমটি হল ছেলে সৌখী ডাকাতি করতে গিয়ে জেলে বন্দি, আর দ্বিতীয়টি হল নাতি এবং বৌমাকে অভাবের তাড়নায় বেয়াই বাড়িতে পাঠাতে বাধ্য হওয়া। সৌখীর মা এই ভেবে হতাশ হয় যে, তার সঙ্গে টিকটিকিও এখন মশকরা করছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তার এই উক্তি।
See More : Full Class 11 Bengali Suggestion 2023
খুব ভালো
উত্তরমুছুনখুব ভালো
উত্তরমুছুন