LightBlog
তেলেনাপোতা আবিষ্কার | প্রেমেন্দ্র মিত্র | একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন ২০২৩ | WB Class 11 Bengali Suggestion 2023 WBCHSE
Type Here to Get Search Results !

তেলেনাপোতা আবিষ্কার | প্রেমেন্দ্র মিত্র | একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন ২০২৩ | WB Class 11 Bengali Suggestion 2023 WBCHSE

তেলেনাপোতা আবিষ্কার

প্রেমেন্দ্র মিত্র

তেলেনাপোতা আবিষ্কার | প্রেমেন্দ্র মিত্র | একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন ২০২৩ | WB Class 11 Bengali Suggestion 2023 WBCHSE


১। নিচের বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :


১.১ তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে গল্পকথকের তেলেনাপোতা ভ্রমণের সঙ্গী - দুইজন

১.২ তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে গোরুর গাড়ির গাড়োয়ান বাজাবে - ক্যানেস্তারা

১.৩ তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে তেলেনাপোতা থেকে মহানগরীর দূরুত্ব - ত্রিশ মাইল

১.৪ তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে গল্পকথকের তেলেনাপোতা আসার আসল উদ্দেশ্য - মাছ ধরা

১.৫ তেলেনাপোতা আবিষ্কারগল্পে পাতলা কাচের মতো পাখা'র আধিকারী - ফড়িং

১.৬ তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে নিরঞ্জন ছিল যামিনীর মায়ের দূর সম্পর্কের - বোনপো

১.৭ তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে গল্পকথকের মতে সম্ভবত যে বারে যোগাযোগ ঘটলে তেলেনাপোতা আবিষ্কার করা যায়, তা - মঙ্গল

১.৮ তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে তেলেনাপোতা যাওয়ার সময় গোরুর গাড়িটি গন্তব্যে পৌঁছোনোর আগে মোড় ঘুরবে - দু-তিনবার

১.৯ তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে গল্পকথকের পানরকিস বন্ধুর নাম - মণি

১.১০ তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে যামিনীদের বাড়িটাকে মণিবাবু অভিহিত করবেন - অজয়রপুরী

১.১১ পাঠ্য তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পটির উৎস কোন্‌টি? - কুড়িয়ে ছড়িয়ে

১.১২ তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির হৃদয়ের দিগন্ত স্নিগ্ধ করে কী ভেসে যাবে? - স্ব-কৃতজ্ঞ হাসি

১.১৩ তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে শ্মশানের দেশে কী মেলে না? - পুরুষ

১.১৪ তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে তেলেনাপোতা যাওয়ার শেষ বাহন ছিল - গোরুর গাড়ি

১.১৫ "তুমি যাবে!" - বক্তা হলেন - ডাক্তার

১.১৬ "একটা _________ গন্ধ অনেক্ষণ ধরেই আপনাদের অভ্যর্থনা করছে।" - কটু

১.১৭ "মগিদা আপনার সেই ________ বন্ধু।" - পান-রসিক

১.১৮ "এ অভিযানে তারা এসেছে - কে জানে কোন্‌ __________।" - অভিসন্ধিতে

১.১৯ "বড়ো রাস্তা থেকে নেমে সেই ভিজে জলার কাছেই গিয়ে দাঁড়াতে হবে আপনাকে।" কারণ - সে-দিক দিয়েই তেলেনাপোতা যাওয়ার পথ

১.২০ "হঠাৎ জলের শব্দে আপনার চমক ভাঙবে।" - জলে শব্দটার কারণ - একটি মেয়ে পিতলের ঝকঝকে কলশিতে পুকুরের পানা, কেউ সরিয়ে জল ভরছে।

১.২১ "আপনাকে নিরন্ত করার চেষ্টা করবে।" - কোন্‌ ব্যাপারে নিরন্ত করার চেষ্টা করেছিল? - ভাঙা সিঁড়ি দিয়ে ছাদে ওঠার ব্যাপারে

১.২২ তেলেনাপোতার মশা লেখকের সঙ্গে কীরকম সম্বন্ধ স্থাপন করবে? - শোণিত সম্বন্ধ

১.২৩ "আপনি উপরে না উঠে পারবেন না।" - কারণ - আপনি এক দুবার আকর্ষণ বোধ করবেন


(২) নিচের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ

২.১ তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে জঙ্গলের ভিতর থেকে ভেসে আসা শ্রুতিবিস্ময়কর আওয়াজটি কেমন ছিল?

উত্তরঃ জঙ্গলের ভিতর থেকে ভেসে আসা শ্রুতিবিস্ময়কর আওয়াজটি ছিল নিংড়ে বের করা অমানুষিক এক কান্নার মতো।

২.২ তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে গোরুর গাড়ির গাড়োয়ান ক্যানেস্তারা বাজাবে কেন?

উত্তরঃ গোরুর গাড়ির গাড়োয়ান ক্যানেস্তারা বাজাবে কারণ এই আওয়াজ শুনে পালিয়ে যাবে।

২.৩ ঘরের অধিকার নিয়ে তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে কথকের সঙ্গে কাদের ঝামেলা হতে পারে?

উত্তরঃ ঘরের অধিকার নিয়ে গল্পের কথকের সঙ্গে দু-তিনটে চামচিকের ঝামেলা হতে পারে।

২.৪ "কেন তুই আমার কাছে লুকোচ্ছিস?" - কী লুকোনোর কথা বলা হয়েছে?

উত্তরঃ যামিনীকে বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে গিয়েছিল যে নিরঞ্জন আগমনের কথা বলা হয়েছে।

২.৫ তেলেনোপোতা আবিষ্কার গল্পে যামিনীকে উদ্দেশ্য করে কথকের শেষ মন্তব্য কী ছিল?

উত্তরঃ যামিনীকে উদ্দেশ্য করে কথকের শেষ মন্তব্য ছিল তেলেপোতার মাছ তাঁকে বারবার ফাঁকি দিতে পারবে না।

২.৬ "অপনাকে নিরন্ত করবার চেষ্টা করবে।" - কোন্‌ ব্যাপারে নিরস্ত করবার কথা বলা হয়েছে?

উত্তরঃ ভাঙা সিঁড়ি দিয়ে ছাদে ওঠার ব্যাপারে নিরস্ত করবার কথা বলা হয়েছে।

২.৭ "তার ক্ষীণ, দীর্ঘ, অপুষ্ট শরীর দেখলে মনে হবে" - কী মনে হবে কথকের?

উত্তরঃ 'তার' বলতে তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে যামিনীর কথা বলা হয়েছে। কৈশোর অতিক্রম করে যৌবনে উত্তীর্ণ হওয়া তার যেন স্থগিত হয়ে গেছে।

২.৮ 'সে-শব্দে আপনারা কিন্তু প্রতীক্ষায় চঞ্চল হয়ে উঠবেন?' - কোন্‌ শব্দে?

উত্তরঃ বোবা জঙ্গল থেকে এক অমানুষিক কান্নার শব্দে কথকরা প্রতীক্ষা হয়ে উঠবেন।

২.৯ তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পটি কোন্‌ গ্রন্থ থেকে সংকলিত?

উত্তরঃ কুড়িয়ে ছড়িয়ে

২.১০ "একটা বাসে গিয়ে আপনাকে উঠতে হবে।" - বাস থেকে নামার পর গল্পকথরা কীরকম আবহাওয়া টের পেলেন?

উত্তরঃ একটা স্যাঁৎসেঁতে ভিজে ভ্যাপসা আবহাওয়া।

২.১১ 'সে-শব্দে আপনরা কিন্তু প্রতীক্ষায় চঞ্চল হয়ে উঠবেন।' - 'অপনারা' বলতে লেখক কাদের বুঝিয়েছেন?

উত্তরঃ 'আপনারা' বলতে লেখক তেলেনাপোতা আবিষ্কারে আগ্রহী পাঠক এবং তাঁর দুই বন্ধুকে বুঝিয়েছেন।

২.১২ 'সে সমস্যার মীমাংসা করবেন।' - কোন্‌ সমস্যার?

উত্তরঃ গোরুর গাড়িটির অত্যন্ত জায়গায় গল্পকথদের তিনজনের তিনটি মাথা এবং তিনজোড়া করে হাত এবং পা কীভাবে প্রতিষ্ঠিত করবেন, সেই সমস্যারই মীমাংসা করবেন তাঁরা।

২.১৩ "গাড়ির গাড়োয়ান থেকে থেকে সোৎসাহে একটি ক্যানেস্তারা বাজাচ্ছে।" - গাড়ির গাড়োয়ান ক্যানেস্তারা বাজায় কেন?

উত্তরঃ গাড়ির গাড়োয়ান চিতাবাঘ তাড়াতেই ক্যানেস্তারা বাজার।

২.১৪ "একটা কুট গন্ধ অনেক্ষণ ধরেই আপনাদের অভ্যর্থনা করছে।" - কুট গন্ধের কারণ কী?

উত্তরঃ পাশের পুকুরের পচা কচুরিপানাই সেই কুট গন্ধের কারণ।

২.১৫ "ঘরের অধিষ্ঠাত্রী আত্মা যে তাতে ক্ষুদ্ধ," - ক্ষুদ্ধ হওয়ার কারণ কী?

উত্তরঃ গল্পকথরা ঘরটিতে প্রবেশ করার আগে ঘরটির ঝুলকালি, ধুলো এবং আবর্জনা ইতিপূর্বে কেউ পরিষ্কার করার ব্যর্থ - চেষ্টা করে গেছে বলে।

২.১৬ 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্পের গল্পকথকের নিদ্রাবিলাসী বন্ধুটি ঘরে প্রবেশ করে কী করলেন?

উত্তরঃ ঘরে শতরঞ্চি পাতার পরই 'নিদ্রাবিলাসী' বন্ধুটি সেখানে নিজেকে সম্পূর্ণ নিয়োজিত করে দেন।

২.১৭ যামিনীর মা কার সঙ্গে যামিনীর বিয়ের সম্বন্ধ ঠিক করেছিলেন?

উত্তরঃ যামিনীর মা নিরঞ্জনের সঙ্গে যামিনীর বিয়ের সম্বন্ধে ঠিক করেছিলেন।

২.১৮ "যখন জেগে উঠবেন তখন অবাক হয়ে দেখবেন" - কী দেখবেন?

উত্তরঃ সেই রাত্রিপুরীতেও সকাল হয় এবং পাখির কলকাকলিতে চারদিকে মুখরিত হয়ে ওঠে।

২.১৯ "সে নিশ্চয় এসেছে।" - সে বলতে বক্তা কাকে নির্দেশ করেছে?

উত্তরঃ নিরঞ্জনকে নির্দেশ করেছেন যামিনীর মা। 

২.২০ "সেই থেকে বুড়ি এই অজগর পুরীর ভেতর বসে সেই আশায় দিন গুনছে।" - বুড়ি কে?

উত্তরঃ বুড়ি হলেন যামিনীর মা।

২.২১ 'সে-সব কথা ভালো-করে আপনার কানে যাবে না।" - কোন্‌ সব কথা?

উত্তরঃ একশো বা দেড়শো বছর আগে ম্যালেরিয়ার মড়কই তেলেনাপোতাকে গতিশীল ও জীবন্ত জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপে যে পরিণত করেছিল, সেইসব কথাই গল্পকথকের দুই বন্ধু ফেরার সময় গোরুর গাড়িতে বসে আলোচনা করছিলেন। তার কথাই বলা হয়েছে।

See More : Full Class 11 Bengali Suggestion 2023

(৩) নীচের রচনাধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ

(১) 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' নামকরণ কতটা সার্থক আলোচনা করো।

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'তেলেনোপোতা আবিষ্কার' ছোটোগল্পে আমরা পাই কলকাতা থেকে ত্রিশ মাইল দূরবর্তী এক ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকা তেলেনাপোতা গ্রাম। শহরের হাঁসফাঁস করা জীবন থেকে সাময়িক মুক্তি পেতে গল্পকথক মাছ ধরায় আছিলায় দুই বন্ধুসহ সেখানে যান। দিনের আলোয় তিনি আবিষ্কার করেন অজগরপুরী তেলেনাপোতাকে। আর তেলেনাপতারই অন্ধকূপসম ধ্বংসস্তুপে অবস্থান করা যামিণী ও তার অন্ধ বৃদ্ধা মাকে। তেলেনাপোতায় অবস্থানকালে স্থানমাহাত্ম্যে কথক এতই প্রভাবিত হয়ে যান যে, ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি যামিণীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলেন। কিন্তু কলকাতায় ফিরে এসে তেলেনাপোতার মশা-বাহিত ম্যালেরিয়া তাঁকে এমন শারীরিক ও মানসিকভাবে আহত করে যে, তেলেনাপোতাকে ঝাপসা একটা স্বপ্ন বলে শেষমেষ মনে হয় তাঁর। 

     এই মূল কাহিনী নিয়ে রচিত 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্পটিতে তেলেনাপোতা নামক আবিষ্কার -প্রতীক্ষিত স্থানটিই প্রাধান্য পেয়েছে। সেই আবিষ্কার অভিযানে ছোটো বড়ো চরিত্রগুলি সেই মূল বিষয় সংগীত সংগত মাত্র হয়েছে। তেলেনাপতার সঙ্গে সঙ্গে এইসব চরিত্রগুলিও পাঠকের কাছে আবিষ্কৃত হয়েছে। সুতরাং 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' নামকরণটি বিষয়ানুগ, যথাযথ এবং সার্থক। 


(২) "মনে হবে তেলেনাপোতা বলে কোথায় কিছু সত্যি নেই"। - একথা কার মনে হয়েছে? এই মনে হওয়ার কারণ কী?

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্প থেকে সংকলিত এই লেখক-কৃত উদ্ধৃতিটি এ গল্পের গল্পকথকের মনে হয়েছে।

     এই গল্পের গল্পকথক দুইবন্ধুসহ একরাতের জন্য তেলেনাপোতা নামক এক গ্রামে বেড়াতে গিয়ে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সে গ্রামের মেয়ে যামিনীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কলকাতায় ফিরে আসেন। ফিরে এসে বেশ কয়েকদিন পর পারিপার্শ্বিক এবং মানসিক সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে পুনরায় তেলেনাপোতা যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হন। কিন্তু সেখানে যাওয়ার দিনই তিনি তেলেনাপোতার মশা-বাহিত ম্যালেরিয়ায় প্রচন্ডভাবে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। বহুদিন পর সেরে উঠে অতি দুর্বল দেহ-মনে নিজের অজ্ঞাতেই অনেক কিছুই তাঁর স্মৃতি থেকে ধোঁয়া-মোছা হয়ে গেছে। 

     সদ্য ম্যালেরিয়া থেকে সুস্থ হয়ে তেলেনাপোতা আবিষ্কার এবং তার সঙ্গে অন্যান্য বিষয়গুলিও এখন ঝাপসা এক স্বপ্নে পরিনত হয়েছে। ভয়ংকর ম্যালেরিয়া কথককে ভেতরে-বাইরে এমনভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে বলেই তাঁর এমন মনে হয়েছিল।

প্রশ্নঃ "আপনার আসল উদ্দেশ্য আপনি নিশ্চয় বিস্মৃত হবেন না।" - আসল উদ্দেশ্য কোন্‌টি? সেই উদ্দেশ্য সাধনে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কী করলেন?

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' ছোটগল্প থেকে সংকলিত এই উদ্ধৃতিটিতে গল্পকথকের 'আসল উদ্দেশ্য' এর কথাই বলা হয়েছে। গল্পকথকের তেলেনাপোতায় বেরাতে আসার আসল উদ্দেশ্য ছিল মৎস শিকার।

     সেই উদ্দেশ্য-সাধনে গল্পকথক তেলেনাপোতায় পৌঁছানোর পরদিন সকালে বড়শিসহ মাছ ধরার সমস্ত উপকরন নিয়ে হাজির হন পানাপুকুরটিতে। সেখানে বড়শি ফেলে ভাঙা ঘাটে তিনি একাকী বসে থাকেন মাছের অপেক্ষায়। ক্রমে বেলা বাড়তে থাকলেও মাছের দেখা পাওয়া যায় না। একটি মাছরাঙার মৎস শিকার, একটি সাপের সন্তরণ এবং দুটি ফড়িং-এর ফাতনাটিতে বসার প্রতিযোগিতামূলক চেষ্টা নীরবে দেখে চলেন কথক। একসময় ঘুঘুপাখির উদাসকরা ডাকে তন্ত্রাচ্ছন্ন কথক হঠাৎ জলের শব্দে চমকে গিয়ে দেখেন যে, পুকুরের স্থির সবুজ জলে ঢেউ উঠেছে এবং তাঁর ফাতনা ধীরে ধীরে দুলছে। ঘাড় ঘুরিয়ে একটি মেয়েকে কলশিতে জল ভরতে দেখে অবাক হয়ে যান তিনি। কলশিতে জলভরে ফিরে যাওয়ার সময় মেয়েটি কথককে বড়শিতে টান দিতে বললে ভ্যাবাচাকা খাওয়া কথক তার একটু পরে টান দিয়ে দেখেন যে, বড়শিতে মাছ তো নেইই, টোপও নেই। মৃদু হেসে মেয়েটি চলে গেলে তার কথা ভাবতে ভাবতে আবার জলে টোপসহ বড়শি ফেলে বসে থাকেন তিনি। দ্বিতীয়বার মাছ আর তাঁর টোপ না খাওয়ায় একসময় হতাশ কথক সবকিছু গুটিয়ে উঠে পড়েন। সুতরাং মৎসশিকারে ব্যর্থ হলেও কথক মাছ ধরার সূত্রে তেলেনাপোতায় এক আশ্চর্যজনক অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন।


প্রশ্নঃ "ব্যাপরটা কী এবার হয়তো জানতে চাইলেন।" - প্রসঙ্গ উল্লেখ করো।

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্পে তেলেনাপোতা আসার পরদিন দুপুরে গল্পকথকরা যামিনীদের বাড়িতে নেমন্তন্ন খেতে এসেছিলেন। খাওয়ার শেষে তিনবন্ধু যখন সেই ঘরেই বিশ্রাম করছিলেন, তখন অত্যন্ত কুন্ঠার সাথে কয়েকবার ইতস্তত করে, তারপর বেপরোয়া হয়ে যামিনী বাইরে থেকে তার মণিদাকে ডাকে। যামিনী খুব কাতরভাবে বলছিল যে, মণিবাবুদের তেলেনাপোতা আসার খবর পাওয়ার পরই খুব অস্থির হয়ে পড়েছে তার মা। সেই পুরোনো খেয়াল তার মায়ের তখনও রয়ে গেছে। মণিবাবু বুঝতে পারেন যে, অন্ধ, বৃদ্ধা যামিনীর মায়ের দৃঢ় বিশ্বাস যে, নিরঞ্জন ফিরে এসেছে। শুধু বছর চারেক ব্যবধানের পর দেখা করতে আসার লজ্জায় তার সামনে আসতে পারছে না। তাই বৃদ্ধা বার বার নিরঞ্জনকে ডেকে দেওয়ার অনুরোধ করছেন যামিনীকে। নিজের অসহায়তার কথা প্রকাশ করে এরপর যামিনী আরও জানায় যে, দৃষ্টিহীন হয়ে যাওয়ার পর থেকে বৃদ্ধার ধৈর্যহীনতা এতটাই বেড়েছে যে, কোনো কথা বোঝালেও তিনি বুঝতে চান না। উপরন্তু প্রায়ই রেগে গিয়ে মাথা ঠুকে এমন ব্যাপার করেন যে, তখন ওনার প্রাণ বাঁচানো সংকটজনক হয়ে পড়ে। যামিনীর কথাগুলি শুনে মণিবাবু তাকে যানান যে, বৃদ্ধা যদি চোখে দেখতে পেতেন, তবে হয়তো তিনি তার বন্ধু-দুজনকে দেখিয়ে দিয়ে তাকে নিশ্চিত করতে পারতেন যে, নিরঞ্জন সত্যিই আসেনি। এরপর যামিনী মণিবাবুকে ওপরে যেতে অনুরোধ করে অপরে চলে গেলে মণি নিজের মনেই বৃদ্ধার সমালোচনা করতে থাকেন। তখনই গল্পকথক ব্যাপারটা জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।


প্রশ্নঃ তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে যামিণীর মায়ের চরিত্র আলোচনা করো।

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত তেলেনাপোতা আবিষ্কার ছোটোগল্পের একটি অন্যতম প্রধান চরিত্র যামিণীর মা। যিনি অন্ধ, বিধবা, শয্যাশায়ী এক বৃদ্ধা। যামিনীর ছোটোবেলাতেই তিনি তাঁর এক দূর-সম্পর্কের বোনপো নিরঞ্চনের সঙ্গে যামিনীর বিয়ে ঠিক করেছিল। শেষবার প্রায় চার বছর আগে  নরঞ্চজন গ্রামে এসে যামিনীর মাকে যামিনীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আর এই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি নিয়েই বৃদ্ধা যামিনীর মা আজও দিন কাটাচ্ছে।

   বৃদ্ধ বয়সে অন্ধ হয়ে পড়া যামিণীর মা তাই অত্যন্ত ধৈর্যহীনা ও অবুঝ হয়ে পড়েছিল। রেগে গেলে মাথা ঠুকে এমন কান্ড করেন যে, তাকে তখন বাঁচানোয় দুষ্কর হয়ে পড়ে যামিনীর কাছে। আসলে শোকে তাপে এবং একমাত্র কন্যার বিয়ে না দিতে পারার দুশ্চিন্তায় তাঁর মাথা আরোও খারাপ হতে শুরু করে, আর যামিনীকেই নানা ভাবে যন্ত্রনা ও গঞ্জনা দিতো। যদিও নিরঞ্জনরূপী কথকে যামিনীর প্রশংসাও তিনি করতেন। অবশেষে নিরঞ্জনরূপী গল্পের কথকের কাছ থেকে আশ্বাসবাণী পেয়ে তিনি কিছুটা দুশ্চিন্তামুক্ত হয়েছিলেন। অত্যন্ত সহজ মনের গ্রাম্য নারী হওয়ায় তিনি নাগরিক সভ্যতার দুই প্রতিনিধি নিরঞ্জন ও গল্পকথকে ঠিক চিনেউঠতে পারেননি।


প্রশ্নঃ তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে যামিনীর চরিত্র আলোচনা করো।

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত তেলেনাপোতা আবিষ্কার ছোটোগল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র যামিনী। সে ছিল শয্যাশায়ী, অন্ধ, বিধবা মায়ের একমাত্র সম্বল। যামিনী চরিত্রের যে বৈশিষ্ট্যগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সেগুলি হল -

(১) জড়তামুক্ত ব্যবহারঃ যামিণীর আচরণে গ্রাম্য যুবতীর কোনো দ্বিধা বা অহেতুক লজ্জা বা আড়ষ্টতা লক্ষ করা যায় না। 

(২) সেবাপরায়ণতাঃ যামিণীর মা অন্ধ, বিধবা, বৃদ্ধা ও শয্যাশায়ী হওয়া সত্ত্বেও তার মাকে সে খুব ভালোভাসতো এবং সেবাও করত। এর থেকে যামিনীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে সেবাপরায়ণতা লক্ষ করা যায়।

(৩) দায়িত্ববোধঃ তেলেতাপোতার শ্মশানভূমিতে যামিনী একাধারে নারী ও পুরুষ হয়ে পরিবারের সব ঝক্কি-ঝামেলা অসীম ধৈর্‍্যে নিজের কাঁধে বহন করে নিয়ে চলেছে।

(৪) বিচারবোধঃ যামিনীর মধ্যে বিচারবোধ ছিল বলেই, নিরঞ্জন-সংক্রান্ত মনের যন্ত্রণা সে নিজের মনের মধ্যেই চেপে রেখে দেয়। তার একমাত্র সঙ্গিনী মাকেও সে কিছুই জানতে দেয়না। 

     তবে গল্পকথকের রোমান্টিক দৃষ্টিতে যামিনী ছিল রূপকথার বন্দিনি রাজকন্যা। অতীতের রহস্যমাখা স্বপ্নলোক থেকে সে যেন কথকের জীবনে ক্ষণিকের জন্য ভেসে ওঠা এক স্বপ্নের বুদবুদ।

See More : Full Class 11 Bengali Suggestion 2023

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

LightBlog

AdsG

close