LightBlog
স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী | কমলা দাশপুপ্ত | সপ্তম শ্রেণীর বাংলা | WB Class 7 Bengali
Type Here to Get Search Results !

স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী | কমলা দাশপুপ্ত | সপ্তম শ্রেণীর বাংলা | WB Class 7 Bengali

স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী

কমলা দাশপুপ্ত

সপ্তম শ্রেণীর বাংলা

WB Class 7 Bengali


স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী | কমলা দাশপুপ্ত | সপ্তম শ্রেণীর বাংলা | WB Class 7 Bengali

স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী | কমলা দাশপুপ্ত | সপ্তম শ্রেণীর বাংলা | WB Class 7 Bengali

স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী | কমলা দাশপুপ্ত | সপ্তম শ্রেণীর বাংলা | WB Class 7 Bengali

স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী | কমলা দাশপুপ্ত | সপ্তম শ্রেণীর বাংলা | WB Class 7 Bengali

স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী | কমলা দাশপুপ্ত | সপ্তম শ্রেণীর বাংলা | WB Class 7 Bengali

স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী | কমলা দাশপুপ্ত | সপ্তম শ্রেণীর বাংলা | WB Class 7 Bengali

হাতে কলমে

স্বাধীনতা সংগ্রামী নারী প্রশ্ন ও উত্তর 


২.১ বিপ্লবী রামচন্দ্র মজুমদারের 'মসার' (পিস্তল) এর খোঁজ নেওয়ার জন্য ননীবালা দেবী কি কৌশল অবলম্বন করেছিলেন?
উত্তর: বিপ্লবী রামচন্দ্র মজুমদার গ্রেফতার হয়েছিলেন। গ্রেফতারের সময় রামবাবু একটা মসার পিস্তল কোথায় রেখে গিয়েছেন, সে কথা জানিয়ে যেতে পারেননি। তখন বিধবা ননীবালা দেবী রামচন্দ্র মজুমদারের স্ত্রী সেজে, রামবাবুর সঙ্গে প্রেসিডেন্সি জেলে দেখা করে নিয়ে পিস্তলের গুপ্ত খবর জেনে আসেন।
২.২ "এঁদের সকলেরই মাথায় অনেক হাজার টাকার হুলিয়া ছিল।"-'হুলিয়া'শব্দটির অর্থ কি? এঁরা কারা? এদের আশ্রয় দাত্রী কে ছিলেন? হুলিয়া থাকার জন্য এঁরা কিভাবে চলাফেরা করতে?
উত্তর:'হুলিয়া' শব্দটির অর্থ হল পলাতক আসামিকে গ্রেফতার করার জন্য তাঁর চেহারার বর্ণনা সহ বিজ্ঞাপন।
এঁরা হলেন বিপ্লবী নেতা যদুগোপাল মুখার্জি, অমর চ্যাটার্জী, অতুল ঘোষ, ভোলানাথ চ্যাটার্জি, নলিনীকান্ত কর, বিনয় ভূষণ দত্ত ও বিজয় চক্রবর্তী।
এঁদের আশ্রয় দাত্রী ছিলেন ননীবালা দেবী।
হুলিয়া থাকার জন্য এরা নিশাচর এর মতন চলাফেরা করতেন। সারাদিন দরজা বন্ধ করে ঘরে কাটিয়ে দিতেন। রাতে শুধু সুবিধা মত বেরিয়ে পড়তেন। নিষ্ঠুর শিকারির মতো পুলিশ এসে পড়লেই এই পলাতকেরা নিমেষে অদৃশ্য হয়ে যেতেন। তখন পুলিশ ভাইরাল হয়ে ফিরে যেতে।
২.৩"ননীবালা দেবী পলাতক হলেন।" -ননীবালা দেবী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন কেন? তিনি পালিয়ে কোথায় গিয়েছিলেন? সেখানে তিনি কোন অসুখে আক্রান্ত হন?
উত্তর: ননীবালা দেবী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, কারণ তাঁর বিপ্লবী দলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। পুলিশ জানতে পেরেছিল যে, ননীবালা দেবী রামবাবু স্ত্রী নন। চন্দননগরের ইনিই গৃহকর্ত্রী রূপে বিপ্লবীদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। তাই পুলিশ চন্দননগরের তল্লাশি শুরু করায় ননীবালা দেবী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।
তিনি পালিয়ে পেশোয়ারের গিয়েছিলেন।
সেখানে তিনি কলেরাই আক্রান্ত হন।
২.৪"ননীবালা দেবী সবই অস্বীকার করতেন"-ননীবালা দেবী কোন কথা অস্বীকার করতেন? তার ফল শ্রুতিই বা কি হত?
উত্তর: কাশির জেলে পুলিশ সুপার জিতেন ব্যানার্জি বিপ্লবীদের সঙ্গে তার সংযোগের কথা জানতে চাইলে তিনি সবকিছুই অস্বীকার করেন। তিনি জানান, কোন বিপ্লবীদের তিনি চেনেন না।
এর ফলশ্রুতিতে মনিবালা দেবীকে একটি 'পানিশমেন্ট সেল'-এ বন্ধ রাখা হলো। এই সেল-এ একটাই মাত্র দরজা ছিল। আলো বাতাস ঢোকার জন্য কোন জানলা ছিল না। তাকে সেই আলো বাতাসের কুঠিরিতে প্রতিদিন অন্ধকারের মধ্যে আধঘন্টা তালা বন্ধ করে রাখা হতো। কিন্তু এত পীড়ণ করেও তাঁর মুখ থেকে কোন কথা বের করা যায়নি।
২.৫ কাশির জেলে 'পানিশমেন্ট সেল'-টির অবস্থা কেমন ছিল? সেখানে ননীবালা দেবীর ওপর কি ধরনের অত্যাচার করা হয়?
উত্তর: কাশির জেল ছিল পুরনো, সেকেলে। সেখানে প্রাচীরের বাইরে মাটির নিচে একটি পানিশমেন্ট সেল অর্থাৎ শাস্তি কুঠুরি ছিল। তাকে দরজা ছিল একটাই কিন্তু আলো বাতাস প্রবেশ করার জন্য কোন জানলা সেখানে ছিল না।
   ননীবালা দেবীকে জেরা করে কিছুই উদ্ধার করতে না পারায়, ওই 'পানিশমেন্ট সেল' অর্থাৎ, শাস্তি কুটুরীতে তিন দিন প্রায় আধঘন্টা সময় ধরে তালা বন্ধ করে আটকে রাখা হতো। কবরের মতো সেলে আধঘন্টা পরে দেখা যায় ননীবালা দেবীর অর্ধমৃত অবস্থা। এমনকি, একদিন এই অত্যাচারের পরিমাণ বাড়িয়ে তাকে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত আটকে রাখা হয়েছিল। তবুও ননীবালা দেবীর মুখ থেকে কোন কথা বের করা যায়নি।
২.৬"মনিবালা বেবি তখনই দরখাস্ত লিখে দিলেন"-ননীবালা দেবী কাকে দরখাস্ত লিখে দিয়েছিলেন? দরখাস্তের বিষয়বস্তু কি ছিল? শেষ পর্যন্ত সে দরখাস্তে কি পরিণতি হয়েছিল?
উত্তর: প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি থাকাকালীন ননীবালা দেবী আইবি পুলিশের স্পেশাল সুপারিনটেন্ডেন্ট গোলটি সাহেবকে দরখাস্ত লিখে দিয়েছিলেন।
  দরখাস্তের বিষয়বস্তু ছিল ননীবালা দেবী বাগবাজারের রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের স্ত্রীর কাছে থাকতে চান।
  গোল্ডি সাহেব দরখাস্ত লিখতে বললে, ননী বালা দেবী তা লিখেছিলেন। কিন্তু গোল্ডি সাহেব সেটা ছিড়ে দলা পাকিয়ে ছেঁড়া কাগজের টুকরিতে ফেলে দেন। আপনি যেন বারুদে আগুন পড়ল। আহত, ক্ষিপ্ত বাঘের মত লাফিয়ে উঠে ননীবালা দেবী গল্ডির গালে এক চড় বসিয়ে দেন।
২.৭ "এবার আমায় দলে নিয়ে নাও"-কে, কাকে এই অনুরোধ জানিয়েছিলেন? তিনি কেন, কোন দলে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক ছিলেন?
উত্তর: দুকড়িবালা দেবী তাঁর বোনপো নিবারণ ঘটকের কাছে এই অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
  দুকড়িবালার বোনপো নিবারণ ঘটক ছিলেন মাইনিং ক্লাসের ছাত্র। তিনি তার মাসিমা দুকড়িবালার বাড়িতে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে আসতেন। সেখানে তারা লুকিয়ে স্বদেশী বই, বেআইনি বই পড়তেন। অর্থাৎ স্বদেশী করতেন। তাদের দেখে উৎসাহিত হয়ে দুকড়িবালা দেবী ও বোনপো মত স্বদেশী দলের নাম লেখাতে আগ্রহী হন ও উৎসাহী হয়ে বিপ্লবীদের দলে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক হন।
২.৮ পুলিশ কোন্‌ অভিযোগে দুকড়িবালা দেবীকে গ্রেফতার করেন? বিচারে তার কি শাস্তি হয়?
উত্তর: ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে জানুয়ারি মাসে একদিন পুলিশ দুকড়িবালা দিদির বাড়ি ঘিরে ফেলে। তল্লাশিতে সেখানে পাওয়া যায় সাতটা মসার পিস্তল। কিন্তু, ছোট যে রাতেও পুলিশ তার মুখ থেকে বের করতে পারল না যে, তাকে পিস্তল গুলি কে দিয়েছে। সে কারণেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
  গ্রামের মেয়ের তথা গ্রামের বউ দুকড়িবালা দেবী কোলের শিশুকে বাড়িতে রেখে পুলিশের সঙ্গে চলে গেলেন। স্পেশাল ট্রাইবুনালের বিচারে রায়ে দুকড়িবালা দেবীর দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়।
৩.১ স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণোকারী স্বনামধন্য খ্যাতনামা বিপ্লবীদের তুলনায় ননীবালা দেবী ও দুকড়িবালা দেবীর অবদান সামান্য নয়। - এ বিষয়ে তোমার ময়ামত জানাও।

উত্তরঃ বিখ্যাত সাহিত্যিক কামলা দাশগুপ্তের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার নারী শীর্ষক প্রবন্ধের সংকলিত অংশ স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী পাঠ্যাংশে আমরা দুই সাধারণ নারীর পরিচয় পাই। তাঁরা অসামান্য না-হলেও, স্বাধীনতা সংগ্রামে অতুলনীয় ভূমিকা নিয়েছিলেন। খুব অল্প বয়সে বিধবা হয়ে ননীবালা দেবী স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছিলন। বিপ্লবীদের বিভিন্ন সময় নানাভাবে সাহায্য করে তিনি পুলিশের চোখে বহুবার ধুলো দিয়েছিলেন। কখনও অপরের বউ সেজে, কখনও গৃহকর্ত্রী সেজে পুলিশের শ্যেনদৃষ্টিকে ফাঁকি দিয়ে কাজ হাসিল করা সেই সময়ের কোনো মেয়ের পক্ষে কল্পনা করাও কষ্টকর ছিল। আবার বিভিন্ন জেলে অমানুষিক অত্যাচার সহ্য করা, ইংরেজ সাহেবের গালে চড় মারা, অবশেষে সবার অনাদর, লাঞ্ছনা ও দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করা এক অসম সাহসী স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে তিনি নিঃসন্দেহে ইতিহাসে স্থান পাওয়ার যোগ্য।

     অপরদিকে দুকড়িবালা দেবীর অন্তরেও ছিল স্বদেশি ভাবনা। তিনি নিজের বোনপো নিবারণ ঘটকের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছিলন। সিংহীর ন্যায় গর্জন করে জানিয়েছিলেন, দেশের জন্য তিনিও প্রাণ দিতে পারেন। তিনি স্বদেশিদের চুরি করা মসার পিস্তল লুকিয়ে রেখে পুলিশের জালে ধরা পড়েন। সেকারণে তাঁকে দু-বছরের জন্য সশ্রম কারাদন্ড ভোগ করতে হয়। বন্দিজীবনের অসহ্য পরিবেশের মধ্যেও তিনি প্রতিদিন আধমণ করে ডাল ভাঙতেন।

     এই দুই নারী চরিত্র নিজেদের সুখস্বাচ্ছন্দ্য, নির্ঝঞ্ঝট জীবন ছেড়ে কেবলমাত্র দেশের জন্য অজস্র কষ্ট ভোগ করেছেন। তাই স্বাধীনতার ইতিহাসে তাঁদের অবদান সামান্য নয়।

৩.২ ননীবালা দেবী ও দুকড়িবালা দেবীর অনমনীয় বৈপ্লবিক মনোভাব কীভাবে পরবর্তীকালের বিপ্লবী নারীকে পথ দেখিয়েছে? - পাঠ্য গদ্যাংশ অবলম্বনে তোমার মতামত জানাও।

উত্তরঃ ননীবালা দেবী ও দুকড়িবালা দেবীর অনমনীয় বৈপ্লবিক মনোভাব পরবর্তীকালের বিপ্লবী নারীদের পথ দেখিয়েছিল। 

     পরবর্তীকালে এই দুই বাঙালি নারী চরিত্রের অসামান্য বীরত্বের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে বহু বাঙালি নারী ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে এগিয়ে আসেন। প্রসঙ্গত মাতঙ্গিনি হাজরার নেতৃত্বে আইন অমান্য আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন ও ভারত ছাড়ো আন্দোলন সংঘটিত হয়।

     এইভাবে বাংলার বহু নারী বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা এনেছিলেন। তিনি ছাড়াও পরবর্তীকালে সরলাদেবী চৌধুরী, কল্পনা দত্ত, প্রমীলা দেবীর মতো বাঙালি নারীরা বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন সুচেতা কৃপালিনী, উমা দাস, রমা চৌধুরি প্রমুখ।

     ভারতের স্বধীনতা সংগ্রামের আন্দোলনে বেশ কয়েকজন মহিলা স্বাধীনতা সংগ্রামীর পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন - সরলাদেবী চৌধুরী, মাতঙ্গিনি হাজরা, সরোজিনী নাইডু, প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদার, কমলা দত্ত, কমলা নেহরুর কথা আমরা জানতে পারি। এঁরা প্রত্যেকেই ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে স্বাধীনতা সংগ্রামে নিজ নিজ আত্মনিবেদনের মাধ্যমে দেশকে ঋদ্ধ করেছেন।

(৪) ননীবালা দেবী এবং দুকড়িবালা দেবী ছাড়াও আমি মাতঙ্গিনি হাজরা, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কনকলতা বড়ুয়ার নাম জানি। স্বাধীনতা আন্দোলনে পুরুষদের পাশাপাশি এঁদের ভূমিকাও কম ছিল না।

মাতঙ্গিনী হাজরাঃ মাতঙ্গিনী হাজরা ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী এক মহান বিপ্লবী নেত্রী। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২৯ সেপ্টেম্বর তদনীন্তন মেদিনীপুর জেলার তমলুক থানার সামনে ব্রিটিশ ভারতীয় পুলিশের গুলিতে তিনি শহিদ হয়েছিলেন। তিনি 'গান্ধীবুড়ি' নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি সর্বদা মানবতাবাদী উদ্দেশ্য সাধনে নিয়োজিত থেকেছেন। তাঁর অঞ্চলে যখন মহামারী আকারে বসন্ত-রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে, তখন তিনি আক্রান্ত পুরুষ, নারী ও শিশুদের সেবা করেছেন। ১৯৩০-এর দশকে কারাবাস ও পুলিশের লাঠিচার্জের ফলে তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। কিন্তু জেল থেকে মুক্তির পরেই তিনি সমাজের সেবায় আবার নিয়োজিত হন, বিশেষত অস্পৃশ্যদের সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারঃ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার যিনি প্রীতিলতা ওয়াদ্দের নামেও পরিচিত ডাকনাম রাণী, ছদ্মনাম ফুলতারা, একজন বাঙালি ছিলেন, যিনি ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নারী মুক্তিযোদ্ধা ও প্রথম বিপ্লবী শহীদ ব্যক্তিত্ব।তৎকালীন পূর্ববঙ্গে জন্ম নেয়া এই বাঙালি বিপ্লবী সূর্য সেনের নেতৃত্বে তখনকার ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং জীবন বিসর্জন করেন। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব দখলের সময়তিনি ১৫ জনের একটি বিপ্লবী দল পরিচালনা করেন। এই ক্লাবটিতে একটি সাইনবোর্ড লাগানো ছিলো যাতে লেখা ছিলো "কুকুর এবং ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ"। প্রীতিলতার দলটি ক্লাবটি আক্রমণ করে এবং পরবর্তীতে পুলিশ তাদেরকে আটক করে। পুলিশের হাতে আটক এড়াতে প্রীতিলতা সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন।

কনকলতা বড়ুয়াঃ কনকলতা বড়ুয়া অন্য নামে বীরবালা ও শহীদ কনকলতা বড়ুয়া ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে আসামের প্রথম নারী শহীদ, যিনি ১৯৪২ সালের ভারত ছাড় আন্দোলনে ভারতীয় জাতীয় পতাকা বহনকারী মিছিলের নেতৃত্ব দান করে নিহত হন। কনকলতা বড়ুয়া ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে একজন অগ্রগামি সংগ্রামী মহিলা ছিলেন। জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালার নেতৃত্বে তিনি মৃত্যু বাহিনীতে যোগদান করেছিলেন। ১৯৪২ সনের ২০ সেপ্টেম্বর তারিখে অসম শাখার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতেকটি থানায় বৃটিশের উত্তোলিত পতাকা নামিয়ে তার স্থলে ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন। গহপুরের পশ্চিম দিকে অবস্থিত থানা অভিমুখে অগ্রসর হওয়া মৃত্যুবাহিনী সদস্যের সন্মুখে ছিলেন কনকলতা বড়ুয়া ৷ থানার সন্মুখে এসে থানায় সমাবেশ করার চেষ্টা করার সময়ে অন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রামীর সাথে পুলিশের সাথে টানা যুদ্ধ বাঁধে। এমন সময়ে কনকলতা নিজের দাবী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করলে পুলিস সিপাহী বগাই কছাড়ী কনকলতার বুক লক্ষ্য করে গুলি মারেন যার ফলে কনকলতা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ও তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয়।

(৭) পাঠ্য গদ্যাংশটি পড়ে নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের সম্পর্কে দু-চার কত্যহা লেখোঃ অমরেন্দ্র চ্যাটার্জী, প্রবোদ মিত্র, জিতেন ব্যানার্জী, গোল্ডি, নিবারণ ঘটক, হরিদাস দত্ত।

অমরেন্দ্র চ্যাটার্জীঃ অমরেন্দ্র চ্যাটার্জী ছিলেন সম্পর্কে ননীবালা দেবীর ভ্রাতুষ্পুত্র। তিনি স্বদেশি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষিত হওয়ার পর পুলিশের ভয়ে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াতেন তিনি। রিষড়াতে থাকাকালীন তিনি পলাতক হন। এঁর মাথায় ওপরেও সরকারি হুলিয়া জারি ছিল।

প্রবোধ মিত্রঃ প্রবোধ মিত্র ছিলেন ননেবালা দেবীর বাল্যবন্ধুর দাদা। যদিও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তিনি সরাসরি যুক্ত ছিলেন কি না, তা সথিকভাবে জানা যায় না। তিনি পেশোয়ারে স্বাধীনতা সংগ্রামের নানান কর্মে নিযুক্ত ছিলেন। ননীবালা দেবীকে পেশোয়ারে লুকিয়ে রাখার ব্যাপারে ইনিই সাহায্য করেছিলেন।

জিতেন ব্যানার্জীঃ জিতেন ব্যানার্জী কাশীর ডেপুটি পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট ছিলেন। পেশোয়ার থেকে ননীবালা দেবীকে কাশীতে আনার পর তিনিই ননীবালা দেবীকে নিয়মিত জেরা করতেন। যদিও তিনি সফল হননি। অবশ্য তিনি ননীবালা দেবীকে নিদারুন নির্যাতন করতেন। একটি আলোবাতাসহীন বদ্ধ কবরের মতো সেলে ননীবালা দেবীকে প্রতিদিন আধঘন্টা বদ্ধ রেখে তাঁর ওপর অত্যাচার করতেন।

গোল্ডিঃ কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলের আই বি পুলিশের স্পেশাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট ছিলেন গোল্ডি সাহেব। তিনি ননীবালা দেবীকে প্রস্তাব দিয়েছিলনে যে, তিনি যা করতে চান দরখাস্ত লিখে জানাতে পারেন। ননীবালা দেবী, সারদা দেবীর কাছে থাকতে চান বলে দরখাস্ত লিখে দিলে গোল্ডি সাহেব দরখাস্ত ছিঁড়ে ফেলে। রেগে গিয়ে ননীবালা দেবী গোল্ডি সাহেবকে চড় মারেন।

নিবারণ ঘটকঃ দুকড়িবালা দেবীর বোনপো হলেন নিবারণ ঘটক। তিনি ছিলেন মাইনিং ক্লাসের ছাত্র। তিনি তাঁর মাসিমা দুকড়িবালা দেবীর বাড়িতে স্বদেশি বই, বেআইনি বই লুকিয়ে রাখতেন। বড়া কোম্পানি থেকে চুরি করে আনা সাতটি মসার পিস্তল তিনি মাসিমার বাড়িতে লুকিয়ে রাখেন। এর জন্য পরে তাঁকে পলাতক হতে হয়।

হরিদাস দত্তঃ ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে আগস্ট রড়া কোম্পানির জেটি-সরকার শ্রীশা মিত্র বড়োসাহেবের হুমুমমতো মালপত্র খালাস করতে জাহাজঘাটায় যান। ২০২টি অস্ত্রপূর্ণ বাক্স খালাস করে সাতটি গোরুর গাড়িতে বোঝাই করে তিনি নিয়ে আসেন। যার একটি গাড়ির গাড়োয়ান ছিলেন ছদ্মবেশী বিপ্লবী হরিদাস দত্ত। তিনি গাড়িটিকে উধাও করে নিয়ে যান ও ৯টি বাক্সের কার্তুজ ও ৫০টি মসার পিস্তল বিপ্লবীদের বিভিন্ন কেন্দ্র পাঠিয়ে স্বদেশি সন্তাসবাদ মদত দেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

LightBlog

AdsG

close