ষষ্ঠ অধ্যায়
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর
১। বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ-
(১.১) জাপান মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ করে –
(ক) ১৯৩০ সালে
(খ) ১৯৩১ সালে
(গ) ১৯৩২ সালে
(ঘ) ১৯৩৩ সালে
উত্তরঃ- (খ) ১৯৩১ সালে
(১.২) জাপান জাতিসংঘের সদস্যপদ ত্যাগ করে –
(ক) ১৯৩৩ সালে
(খ) ১৯৩৫ সালে
(গ) ১৯৩৭ সালে
(ঘ) ১৯৩৯ সালে
উত্তরঃ- (ক) ১৯৩৩ সালে
(১.৩) ‘রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষচুক্তি’র স্থায়িত্বকাল ছিল –
(ক) ৫ বছর
(খ) ৭ বছর
(গ) ১০ বছর
(ঘ) ১২ বছর
উত্তরঃ- (গ) ১০ বছর
(১.৪) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ ছিল –
(ক) জার্মানির রাশিয়া আক্রমণ
(খ) জাপানের পার্ল হারবার আক্রমণ
(গ) রাশিয়ার বার্লিন আক্রমণ
(ঘ) জার্মানির পোল্যান্ড আক্রমণ
উত্তরঃ- (ঘ) জার্মানির পোল্যান্ড আক্রমণ
(১.৫) প্যারিসের শান্তি সম্মেলন হয়েছিল –
(ক) ১৯১৯ সালে (খ) ১৯২২ সালে (গ) ১৯২৫ সালে (ঘ) ১৯২৮ সালে
উত্তরঃ- (ক) ১৯১৯ সালে
(১.৬) ‘গণতন্ত্রের অস্ত্রাগারে’ পরিনত হয়েছিল –
(ক) ইটালি
(খ) আমেরিকা
(গ) ইংল্যান্ড
(ঘ) ফ্রান্স
উত্তরঃ- (খ) আমেরিকা
২। অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ-
(২.১) পার্ল হারবারের ঘটনা কবে ঘটেছিল?
উত্তরঃ- 1941 সালের 7ই ডিসেম্বর
(২.২) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ কবে গঠিত হয়?
উত্তরঃ- 1945 সালে
(২.৩) কোন্ ঘটনার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছিল?
উত্তরঃ- পার্ল হারবারের ঘটনা (1941)
(২.৪) হিটলার কবে পোল্যান্ড আক্রমণ করে?
উত্তরঃ- 1939 খ্রিস্টাব্দে
(২.৫) কত সালে আমেরিকা জাপানের শহরে পরমাণু নিক্ষেপ করেছিল?
উত্তরঃ- 1945 খ্রিস্টাব্দে
(২.৬) অপারেশন বারবারোসা কি?
উত্তরঃ- 1941 সালের জাপান ও সোভিয়েত দ্বন্দ্বকে অপারেশন বারবারোসা বলা হয়।
(২.৭) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিবাদমান দুই পক্ষের নাম কি?
উত্তরঃ- অক্ষশক্তি ও মিত্রশক্তি
(২.৮) লেলিন গ্রাদের অবরোধ কতদিন ধরে চলেছিল?
উত্তরঃ- 872 দিন ধরে চলেছিল
(২.৯) জাপানের হিরোশিমা শহরে ফেলা পারমানবিক বোমাটির নাম কি?
উত্তরঃ- লিটল বয় (1945, 6 August)
(২.১০) কত সালে লেলিনগ্রাদের অবরোধ তুলে নেয়া হয়েছিল?
উত্তরঃ- 1944 সালে
(২.১১) জাপানের নাগাসাকি শহরে ফেলা পারমানবিক বোমাটির নাম কি?
উত্তরঃ- ফ্যাট ম্যান (1945, 9 August)
৩। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ-
(৩.১) ইঙ্গ-ফরাসি তোষণ নীতি বলতে কী বোঝো?
উত্তরঃ- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্স ও ব্রিটেন আর জার্মানির সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে চাইনি। তারা হিটলারের প্রাথমিক দাবিগুলো মেনে নিতে তাকে তুষ্ট করার নীতি বা তোষণ নীতি গ্রহণ করেছিল। তবে এই নীতি সফল হয়নি কারণ হিটলারের সমস্ত দাবি মেনে নেয়া সম্ভব ছিল না। গণতন্ত্রের দেশ ব্রিটেন ও ফ্রান্সের জার্মানি ও ইতালিকে তোষণ এর অপর একটি কারণ ছিল তারা নাৎসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের সাম্যবাদ কে অধিকতর বিপদজনক বলে মনে করত। তাই তারা সাম্যবাদী সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিপক্ষ হিসাবে জার্মানিও ইতালিকে মদত দিতে থাকে।
(৩.২) ক্যাশ এন্ড ক্যারি নীতি কি?
উত্তরঃ- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথমদিকে আমেরিকা সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে যোগ না দিলেও মিত্রপক্ষের দেশগুলোর কাছে অস্ত্রশস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করে। অর্থের বিনিময় সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি এই নীতি ক্যাশ এন্ড ক্যারি নামে পরিচিত।
(৩.৩) রোম বার্লিন টোকিও জোট বলতে কি বোঝো?
উত্তরঃ- 1940 খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে জার্মানির রাজধানী বার্লিনে ইতালি, জার্মানি এবং জাপানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই তিনটি দেশের রাজধানীর নাম অনুযায়ী এই জোটিকে রোম বার্লিন টোকিও জোট বলা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এবং রাশিয়াকে তার পূর্ব সীমান্তে ব্যস্ত রাখার জন্য জার্মানি এই চুক্তি সম্পাদন করে।
(৩.৪) ট্রুম্যান নীতি কি?
উত্তরঃ- দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের অবসানের পর কমিউনিস্ট রাশিয়ার আধিপত্য প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে মার্কিন রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান মার্কিন কংগ্রেসে এক বক্তৃতায় ঘোষণা করেন যে বিশ্বের যেকোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সশস্ত্র সংখ্যালঘু গোষ্ঠী বা বিদেশী রাষ্ট্র দ্বারা আক্রান্ত হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আক্রান্ত রাষ্ট্রকে সব রকম সাহায্য করবে। এই ঘোষণা ট্রুম্যান নীতি নামে পরিচিত।
(৩.৫) লেলিনগ্রাদ অবরোধ বলতে কী বোঝো?
উত্তরঃ- লেলিনগ্রাদ শহরটি প্রাচীন আর বর্তমান নাম সেন্ট পিটার্সবার্গ। অর্থনৈতিক, ঐতিহাসিক এবং সামরিক দিক দিয়েও এই শহরটি ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। শহরটি দখল করার চেষ্টায় জার্মান বাহিনী দীর্ঘ 872 দিন অবরোধ চলায়। এটি সম্ভবত যুদ্ধের ইতিহাসে দীর্ঘতম অবরোধ। কিন্তু সোভিয়েত বাহিনী এবং শহরের বাসিন্দাদের তীব্র প্রতিরোধের ফলে শহরটি জার্মানিরা দখল করতে পারেনি। 1944 খ্রিষ্টাব্দের 27 জানুয়ারি এই অবরোধ তুলে নেয়া হয়।
(৩.৬) ফুলটন বক্তৃতা বলতে কী বোঝো?
উত্তরঃ- দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের অবসানের পর পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতন্ত্রের প্রসার ইঙ্গ-মার্কিন শক্তিকে চিন্তায় ফেলে দেয়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল 1946 খ্রিস্টাব্দে মার্চ মাসে আমেরিকার ফুলটন শহরে এক বক্তৃতায় পূর্ব ইউরোপের প্রভাব বিস্তার এর সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে আমেরিকাবাসীকে সচেতন করেন। এটি ফুলটন বক্তৃতা নামে পরিচিত।
(৩.৭) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কবে জাপানের উপর পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করেছিল?
উত্তরঃ- জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে 1945 খ্রিস্টাব্দের 6 এবং 9 আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক বোমাবর্ষণ করে। ইউরেনিয়াম 238 থেকে তৈরি ‘লিটলবয়’ নামক বোমাটি ফেলা হয় হিরোশিমায় এবং প্লুটোনিয়াম থেকে প্রস্তুত ‘ফ্যাটম্যান’ নামক বোমাটি ফেলা হয়েছিল নাগাসাকিতে।
(৩.৮) মার্শাল পরিকল্পনা কি?
উত্তরঃ- দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের অবসানের পর পশ্চিম ইউরোপে রুশ প্রভাব প্রতিরোধ, মার্কিন অনুগত একটি রাষ্ট্র জোট গঠন, সেখানে মার্কিন বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো প্রকৃতি উদ্দেশ্যে মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জর্জ সি মার্শাল ইউরোপীয় পুনর্জীবন পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এটি মার্শাল পরিকল্পনা নামে পরিচিত।
৩.(৯) পার্ল হারবারের ঘটনা বলতে কি বোঝো?
উত্তরঃ- উত্তর-প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের একটি বন্দর পার্ল হারবার ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌঘাঁটি। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন আধিপত্যের অবসান ঘটানোর জন্য জাপান ভাইস এডমিরাল নোগুচির নেতৃত্বে 1941 খ্রিস্টাব্দের 7 ডিসেম্বর ওই বন্দরে মার্কিন নৌবহরের উপর বিধ্বংসী বোমাবর্ষণ হয়। এই ঘটনাটি পাল হারবারের ঘটনা নামে পরিচিত। এই ঘটনার পরেই 8 ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যোগদান জার্মানি ও জাপানের পরাজয়ের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।
(৩.১০) ঠান্ডা লড়াই কী?
উত্তরঃ- দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের শেষে বিশ্বের প্রধান দুটি শক্তিধর রাষ্ট্র আমেরিকা ও রাশিয়ার নেতৃত্বে পরস্পরবিরোধী কয়েকটি শক্তি জোট গড়ে ওঠে। এই শক্তি জোটের মধ্যে প্রকাশ্য যুদ্ধ না হলেও উভয়পক্ষের মধ্যে সর্বদা একটি যুদ্ধের পরিবেশ বজায় থাকে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে এই বিষয়টি ঠান্ডা লড়াই নামে পরিচিত।
(৩.১১) আটলান্টিক চার্টার বলতে কি বোঝো?
উত্তরঃ- উগ্র জাতীয়তাবাদের বিপরীত আদর্শ হল আন্তর্জাতিকতাবাদ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন 1941 খ্রিস্টাব্দের 14 আগস্ট ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে একটি ঘোষণা করে। এই ঘোষণা আটলান্টিক চার্টার নামে পরিচিত। এই চারটার এ জাতি গুলিকে স্বশাসনের অধিকার দেয়ার কথা বলা হয় এবং জাতিগুলির পারস্পারিক সম্পর্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির কথা বলা হয়।
(৩.১২) আন্তর্জাতিকতাবাদ বলতে কি বোঝো?
উত্তরঃ- জাতি তথা স্বাধীন জাতি রাষ্ট্রগুলি যে নীতি মেনে একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণ করে তাকে এক কথায় আন্তর্জাতিকতাবাদ বলা যেতে পারে। এই অর্থে জাতীয়তাবাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিকতাবাদের কোন স্পষ্ট বিরোধ নেই বরং তারা একে অপরের পরিপূরক। কারণ জাতীয় রাষ্ট্রের স্বাধীন অস্তিত্ব তাদের সীমান্ত রক্ষার অধিকার বা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত রক্ষার অধিকার আন্তর্জাতিকতাবাদের দরায় স্বীকৃতি পায়।
(৩.১৩) উগ্র জাতীয়তাবাদ বলতে কি বোঝো?
উত্তরঃ- যে জাতীয়তাবাদ বিভিন্ন জাতির মধ্যে সম্প্রীতি ও সহযোগিতার সম্পর্ক ধ্বংস করে জাতিবিদ্বেষ প্রচার করে এবং সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ প্রভৃতি শোষণমূলক ধারণাকে সমর্থন করে তাকে উগ্র জাতীয়তাবাদ বলে।
(৩.১৪) ন্যাটো কি?
উত্তরঃ- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে আমেরিকার নেতৃত্বে অনুগামী রাষ্ট্রগুলিকে নিয়ে 1949 খ্রিস্টাব্দে এক সামরিক জোট গড়ে ওঠে, যা উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা বা North Atlantic Treaty organisation বা NATO নামে পরিচিত।
(৩.১৫) ‘ডি – ডে’ বা ‘মুক্তি দিবস’ বলতে কী বোঝো?
উত্তরঃ- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস 1944 খ্রিস্টাব্দের 6 জুন দিনটি ডি ডে বা মুক্তি দিবস নামে পরিচিত। মুক্তি দিবসের আক্রমণের দ্বারা মিত্রবাহিনী জার্মানির কবল থেকে ফ্রান্সের বিভিন্ন ভূখন্ড মুক্ত করতে থাকে। তারা 25 আগস্ট রাজধানী প্যারিস দখল করে।
৪। রচনাধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ-
(৪.১) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণগুলি আলোচনা করো।
উত্তরঃ- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ হওয়ার 21 বছর পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছিল। 1939 খ্রিস্টাব্দে শুরু হওয়া দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তুলনায় অনেক বেশি বিধ্বংসী এবং ভয়াবহ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে একাধিক কারণ বিদ্যমান ছিল।
:দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ:
ভার্সাই সন্ধির ত্রুটিঃ-
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত জার্মানির উপর মিত্রশক্তি ভার্সাই সন্ধি বলপূর্বক চাপিয়ে দিয়েছিল। এমত অমর্যাদাকর চুক্তির শর্তগুলি জার্মানদের প্রতিশোধস্পৃহায় জাগরণ ঘটিয়ে যুদ্ধ মুখী করে তুলেছিল।
জার্মানির উগ্র জাতীয়তাবাদঃ-
জার্মানির উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং হিটলারের আগ্রাসী নীতির সমন্বয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার উপযুক্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। হিটলারের নির্দেশে জার্মানি চেকোস্লোভাকিয়া পোল্যান্ড প্রভৃতি ইউরোপীয় দেশের অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে প্রকাশ্যে বা গোপনে আন্দোলন গড়ে তোলার ইন্ধন জুগিয়েছিল।
ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের তোষণ নীতিঃ-
ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স ভ্রান্ত তোষণ নীতির ফলে হিটলার এবং মুসোলিনির নেতৃত্বে যথাক্রমে ইতালি জার্মানি নিজ শক্তির বিকাশ ঘটিয়েছিল। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স মনে করেছিল ইতালি ও জার্মানীকে শক্তি অর্জনের সুযোগ দিলে তারা সাম্যবাদী সোভিয়েত রাশিয়াকে দুর্বল করতে সক্ষম হবে। কিন্তু বাস্তবে এমত তোষণনীতি ইতালি ও জার্মানীকে আর সাম্রাজ্যবাদী করেছিল।
ইতালি জাপানের আগ্রাসী নীতিঃ-
ইতালি ও জাপানের আগ্রাসী পররাষ্ট্র নীতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ী ছিল। ইতালি-আবিসিনিয়া এবং জাপানের মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ করলে ইংল্যান্ড বা ফ্রান্স নীরব থাকে। ফলে ইতালি ও জাপানের পররাষ্ট্র গ্রাসের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছিল।
আদর্শগত মতভেদঃ-
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে বিভিন্ন শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে আদর্শগত মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। জার্মানি, জাপান, ইতালি প্রভৃতি ছিল স্বৈরতন্ত্রী দেশ। আবার সোভিয়েত রাশিয়াও ছিল সাম্যবাদী রাষ্ট্র। এমত আদর্শগত মতভেদ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছিল।
(৪.২) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার যোগদানের কারণ আলোচনা করো।
উত্তরঃ- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমেরিকা নিরপেক্ষতা নীতি গ্রহণ করে নিজেকে বিশ্ব রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রেখে ছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকা প্রথমে নিরপেক্ষতা নীতি গ্রহণ করলেও পরে যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়ে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রপক্ষের প্রতি আমেরিকার সমর্থন থাকলেও যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রায় দুই বছর আমেরিকা নিরপেক্ষতা নীতি নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে। এই সময় আমেরিকা মূলত মিত্র শক্তি রাষ্ট্রগুলির কাছে অস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করে।
আমেরিকা মিত্রপক্ষকে অস্ত্র সাহায্য করলে 1941 খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে আমেরিকা অক্ষশক্তির মধ্যে অঘোষিত যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। জার্মান সাবমেরিন গুলি ক্রমাগত মার্কিন জাহাজ গুলিতে আক্রমন চালাতে থাকে। এর ফলস্বরূপ আমেরিকাও পাল্টা জার্মান সাবমেরিন ও যুদ্ধজাহাজ গুলিকে দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেয়। আর এই ভাবেই আমেরিকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিল।
অক্ষশক্তি ভুক্ত জাপান 1941 খ্রিস্টাব্দে 7 ডিসেম্বর হঠাৎ হাওয়াই দ্বীপের মার্কিন পার্ল হারবারে বোমাবর্ষণ করে ঘাঁটিটি ধ্বংস করে দেয় এবং পরদিন 8 ডিসেম্বর জাপান আমেরিকা ও মিত্রশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ফলে আমেরিকা তার বিপুল শক্তি নিয়ে সরাসরি অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দিয়েছে।
(৪.৩) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফলগুলি আলোচনা করো।
উত্তরঃ- মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (1939 – 1945)। জার্মানি, ইতালি, জাপান ও তাদের সহযোগী বিভিন্ন দেশ নিয়ে গঠিত অক্ষশক্তি এবং ইংল্যান্ড, ফ্রান্্ রাশিয়া, আমেরিকা ও তাদের সহযোগী বিভিন্ন দেশ নিয়ে গঠিত মিত্রশক্তির মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে জার্মানির নেতৃত্বাধীন অক্ষশক্তির পরাজয় ঘটে।
:দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল:
বিভিন্ন দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজ প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপক প্রভাব পরে। যেমন -
ধ্বংসলীলাঃ-
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিশ্বব্যাপী ভয়ংকর ধ্বংসযজ্ঞ ঘটনা । এর ফল হয়েছিল মারাত্মক ও সুদূরপ্রসারী । যুদ্ধের শেষ দিকে 1945 খ্রিস্টাব্দে 6ই আগস্ট জাপানের হিরোসিমায় ও 9ই আগস্ট নাগাসাকিতে আমেরিকা পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করে । আমেরিকার নিক্ষিপ্ত পরমাণু বোমায় জাপানের দুটি শহর হিরোসিমা ও নাগাসাকি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয় । মানুষের ইতিহাসে এতবড় ধ্বংসলীলা আর সংঘটিত হয়নি ।
আমেরিকা ও রাশিয়ার আধিপত্য বিস্তারঃ-
এই যুদ্ধের ফলে আমেরিকা ও রাশিয়া পৃথিবীর মধ্যে বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অধিকারী হয় । ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি প্রভৃতি ইউরোপীয় দেশের স্থান হয় দ্বিতীয় সারিতে । ইতালিতে ফ্যাসিবাদী সরকারের জায়গায় প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় । জার্মানি দ্বিখন্ডিত হয়ে পূর্ব জার্মানি এবং পশ্চিম জার্মানি দুইটি দেশে বিভক্ত হয় ।
ঠান্ডা যুদ্ধের সূত্রপাতঃ-
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাম্যবাদী আদর্শ দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে । সর্বপ্রথম রাশিয়ার সাম্যবাদী আদর্শ জয়যুক্ত হয় । পরে চিন, পোল্যান্ড, চেকোশ্লোভাকিয়া, পূর্ব জার্মানি ইত্যাদি দেশ সাম্যবাদী আদর্শ গ্রহণ করে প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয় । সমাজতান্ত্রিক প্রবক্তা রূপে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কমিউনিস্ট দল আত্মপ্রকাশ করে । একে কেন্দ্র করে আবার পৃথিবীর রাষ্ট্রসমূহ দুটি শিবিরে ভাগ হয়ে যায় । একদিকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানি এবং তাঁদের মিত্র দেশগুলি, আর অন্যদিকে রাশিয়া, পোল্যান্ড, চেকোশ্লোভাকিয়া, পূর্ব জার্মানি ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশ । এর মধ্যে আবার কয়েকটি দেশ নিরপেক্ষ থেকে যায় । ভারত তার অন্যতম । এভাবে দুটি শিবিরে বিভক্ত দেশগুলির মধ্যে এক ধরণের স্নায়ুর লড়াই শুরু হয়, যার নাম ঠান্ডা যুদ্ধ ।
জাতীয়তাবাদের উদ্ভবঃ-
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে পরাধীন দেশগুলিতে শুরু হয়ে যায় স্বাধীনতার লড়াই । সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি বুঝতে পরে যে সাম্রাজ্যবাদী শাসনের অবসান ঘটতে আর দেরি নেই । দেশে দেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করে তারা নিজ নিজ উপনিবেশগুলিকে স্বাধীনতা দানে তৎপর হয় । ফলে অনেক দেশ স্বাধীনতা লাভ করে ।
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠাঃ-
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠা হয় । আজ পর্যন্ত এই বিশ্ব সংস্থা পৃথিবীর শান্তি ও নিরাপত্তা অক্ষুন্ন রাখতে ও মানুষের সার্বিক উন্নয়নে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে ।
যুদ্ধাপরাধের বিচারঃ-
বিজয়ী মিত্রপক্ষ পরাজিত অক্ষশক্তির যুদ্ধ অপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দানের উদ্যোগ নেই। 21 জন নাৎসি আধিকারিকা শান্তি বিরোধী, মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধ অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তাদের 14 জনকে ফাঁসি দেয়া হয় এবং বাকিদের কারাদণ্ড হয়।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে জার্মানি পর্যায়ের কারণ
উত্তরমুছুনJani na 😑
মুছুনজেনারেল ফ্রাঙ্ক কে ছিলেন
মুছুনজেনারেল ফাংকু কে
মুছুনসিভিও পার্লামেন্টের নাম
মুছুনকোড নেপোলিয়ান কী
উত্তরমুছুনThoda si bhi block karke boli
উত্তরমুছুন