তৃতীয় অধ্যায়
উনবিংশ শতকের ইউরোপ : রাজতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী ভাবধারা সংঘাত
১। অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ-
(১.১) ভিয়েনা সম্মেলনের সভাপতি ছিলেন –
(ক) ট্যালিরান্ড
(খ) ক্যাসালরি
(গ) জার প্রথম আলেকজান্ডার
(ঘ) মেটারনিখ্
উত্তরঃ- (ঘ) মেটারনিখ্
(১.২) ভিয়েনা সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল –
(ক) ইউরোপের পুনর্গঠন
(খ) নেপোলিয়নের শাস্তিবিধান
(গ) ইউরোপের সামরিকীকরণ
(ঘ) ফরাসি বিপ্লবের ধ্বংসসাধন
উত্তরঃ- (ক) ইউরোপের পুনর্গঠন
(১.৩) কূটনীতির যাদুকর বলা হত –
(ক) ক্যাভুরকে
(খ) গ্যারিবল্ডিকে
(গ) মেটারনিখ্কে
(ঘ) বিসমার্ককে
উত্তরঃ- (গ) মেটারনিখ্কে
(১.৪) ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের রাজা ছিলেন –
(ক) লুই ফিলিপ
(খ) পঞ্চদশ লুই
(গ) ষোড়শ লুই
(ঘ) সপ্তদশ লুই
উত্তরঃ- (ক) লুই ফিলিপ
(১.৫) জোলভেরাইন স্থাপিত হয় –
(ক) ১৮১৭ সালে
(খ) ১৮১৮ সালে
(গ) ১৮১৯ সালে
(ঘ) ১৮২০ সালে
উত্তরঃ- (গ) ১৮১৯ সালে
(১.৬) ইউরোপের ‘বিপ্লবের বছর’ নামে পরিচিত সালটি হল –
(ক) ১৮৪৫ সাল
(খ) ১৮৪৬ সাল
(গ) ১৮৪৭ সাল
(ঘ) ১৮৪৮ সাল
উত্তরঃ- (ঘ) ১৮৪৮ সাল
(১.৭) বার্লিন কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন –
(ক) বিসমার্ক
(খ) ডিসরেলি
(গ) তুরস্কের সুলতান
(ঘ) জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার
উত্তরঃ- (ক) বিসমার্ক
(১.৮) ‘মির’ বলতে বোঝায় –
(ক) পৌরসভা
(খ) গ্রামসভা
(গ) বিচারসভা
(ঘ) শাসন পরিষদ
উত্তরঃ- (খ) গ্রামসভা
(১.৯) ফ্রাঙ্কফোর্ট পার্লামেন্ট বসেছিল –
(ক) ইতালিতে
(খ) ফ্রান্সে
(গ) রাশিয়াতে
(ঘ) জার্মানিতে
উত্তরঃ- (ঘ) জার্মানিতে
(১.১০) কাউন্ট ক্যাভুরের উদ্দেশ্য ছিল –
(ক) বিদেশি শক্তির সাহায্যে অস্ট্রিয়াকে বিতারন করা
(খ) একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা
(গ) সন্ত্রাসের শাসন কায়েম করা
(ঘ) যুবশক্তির সাহায্যে ইতালির ঐক্য ফিরিয়ে আনা
উত্তরঃ- (ক) বিদেশি শক্তির সাহায্যে অস্ট্রিয়াকে বিতারন করা
২। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ-
(২.১) ভিয়েনা সম্মেলন কবে অনুষ্ঠিত হয়?
উত্তরঃ- ১৮১৫ খ্রিঃ
(২.২) জুলাই বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল কত সালে?
উত্তরঃ- ১৮৩০ খ্রিঃ
(২.৩) মাৎসিনি প্রতিষ্ঠিত গুপ্ত সমিতির নাম কি ছিল?
উত্তরঃ- কার্বোনারি
(২.৪) জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট পার্লামেন্ট গঠিত হয়েছে কত সালে?
উত্তরঃ- ১৮৪৮ খ্রিঃ
(২.৫) কত সালে রাশিয়ার ভূমিদাস মুক্তির ঘোষণাপত্র জারি হয়েছিল?
উত্তরঃ- ১৮৬১ খ্রিঃ ১৯ শে ফেব্রুয়ারি
(২.৬) কত সাল পর্যন্ত ইউরোপে মেটারনিক যুগ নামে পরিচিত ছিল?
উত্তরঃ- ১৮১৫ - ১৮৪৮ খ্রিঃ
(২.৭) ফেব্রুয়ারি বিপ্লব কত সালে সংঘটিত হয়েছিল?
উত্তরঃ- ১৮৪৮ খ্রিঃ
(২.৮) ইয়ং ইতালি দলের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
উত্তরঃ- জোসেফ ম্যাৎসিনি
(২.৯) কত খ্রিস্টাব্দে জার্মানির ঐক্য সম্পন্ন হয়েছিল?
উত্তরঃ- ১৮৭১ খ্রিঃ
(২.১০) রক্ত লৌহ নীতির প্রবর্তক কে ছিলেন?
উত্তরঃ- বিসমার্ক
(২.১১) ক্রিমিয়ার যুদ্ধ কবে সংঘটিত হয়?
উত্তরঃ- ১৮৫৩ খ্রিঃ
(২.১২) বিশ্বের প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলনটির নাম কি?
উত্তরঃ- ভিয়েনা সম্মেলন
(২.১৩) ভিয়েনা কোন্ দেশে অবস্থিত?
উত্তরঃ- অষ্ট্রিয়ায়
(২.১৪) মেটারনিক কত খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন?
উত্তরঃ- ১৮০৯ খ্রিঃ
(২.১৫) ভিয়েনা সম্মেলনের রাশিয়ার প্রতিনিধি কে ছিলেন?
উত্তরঃ- প্রথম আলেকজান্ডার
(২.১৬) কে কী উদ্দেশ্যে ‘অ্যাক্ট অফ জাস্টিস’ আইন পাস করেন?
উত্তরঃ- দশম চার্লস, দেশে ফিরে আসা অভিজাতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য
(২.১৭) জুলাই বিপ্লবের কয়েকজন নেতার নাম লেখ?
উত্তরঃ- লাফায়েৎ, লাফিত, থিয়ার্স
(২.১৮) লাল কুর্তা বাহিনীর নায়ক কে ছিলেন?
উত্তরঃ- গ্যারিবল্ডি
(২.১৯) কূটনীতির জাদুকর কাকে বলা হয়?
উত্তরঃ- বিসমার্ককে
(২.২০) গ্যেটে কে ছিলেন?
উত্তরঃ- জার্মানির খ্যতনামা কবি ও সাহিত্যিক
(২.২১) জার্মানির সম্রাট কে ছিলেন?
উত্তরঃ- কাইজার প্রথম উইলিয়াম
(২.২২) গ্যাস্টিনের সন্ধি কবে স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তরঃ- ১৮৬৫ খ্রিঃ
(২.২৩) ‘কুলাক’ কথার অর্থ কি?
উত্তরঃ- মুষ্টি
(২.২৪) কোন দেশকে ইউরোপের ‘অসুস্থ দেশ’ বলা হত?
উত্তরঃ- তুরস্ককে
৩। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ-
(৩.১) মেটারনিক ব্যবস্থা বলতে কি বোঝো?
উত্তরঃ- প্রিন্স মেটারনিক ছিলেন অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী। 1815 থেকে 1848 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কেবল অস্ট্রিয়া নয় সমগ্র ইউরোপের বিস্তৃত অঞ্চলের রাজনীতির তিনি অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রক ছিলেন। ইউরোপের ইতিহাসে এই সমকাল তাই মেটারনিক যুগ হিসেবে চিহ্নিত। মেটারনিক যে পদ্ধতিতে ইউরোপীয় রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছিলেন তাকে আমরা মেটারনিক ব্যাবস্থা বলি।
(৩.২) ভিয়েনা সম্মেলনের উদ্দেশ্য লেখ।
উত্তরঃ- ভিয়েনা সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল - (১) ইউরোপের রাজনৈতিক কাঠামোর পুনর্গঠন। (২) নেপোলিয়ন কর্তৃক বিতাড়িত রাজবংশের পুনঃপ্রতিষ্ঠা। (৩) নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে সংগঠিত যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা।
(৩.৩) জুলাই রাজতন্ত্র বলতে কি বোঝো?
উত্তরঃ- ফ্রান্সে জুলাই বিপ্লবের পর লুই ফিলিপন এর নেতৃত্বে যে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় তা জুলাই রাজতন্ত্র নামে পরিচিত। এই রাজতন্ত্র কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির ছিল। এখানে উদারনৈতিক সংস্কার সাধনের চেষ্টা চলেছিল, ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের প্রতি সহানুভূতি প্রচলিত হয়েছিল এবং জনগণের কাছ থেকে সহানুভূতি লাভের চেষ্টা করা হয়েছিল।
(৩.৪) ‘বিগ ফোর’ বলতে কী বোঝা?
উত্তরঃ- ভিয়েনা সম্মেলনে ইউরোপের অধিকাংশ দেশের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত থাকলেও অস্ট্রিয়া রাশিয়া প্রাশিয়া ও ইংল্যান্ড - এই চারটি দেশ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই চারটি দেশকেই একসঙ্গে ‘চার প্রধান’ বা ‘বিগ ফোর’ বলা হয়।
(৩.৫) রিসর্জিমেন্ট কি?
উত্তরঃ- ‘রিসর্জিমেন্ট’ কথার অর্থ ‘পুনর্জাগরণ’। ইতালিবাসীদের মনে বিভিন্ন কারণে অখন্ড জাতীয়তাবাদের ধারণা জন্ম হয়েছিল তাকে রিসর্জিমেন্ট বলা হয়।
(৩.৬) ‘এমস টেলিগ্রাম’ বলতে কী বোঝো?
উত্তরঃ- স্পেনের সিংহাসনে ভবিষ্যতে যাতে প্রাশিয়ার রাজবংশীর কেউ না বসে সে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি আদায়ের উদ্দেশ্যে ফরাসি দূত কাউন্ট বেনেদেত্তি নামক স্থানে প্রাশিয়ার রাজা প্রথম উইলিয়ামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রাশিয়ার রাজা প্রথম উইলিয়াম তাকে কোনো প্রতিশ্রুতি না দিয়ে বরং সাক্ষাৎকারের বিষয়টি টেলিগ্রাম যোগে রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী অটো ফন বিসমার্ককে জানান। বিসমার্ক টেলিগ্রাম টির কিছু শব্দ সুকৌশলে বাদ দিয়ে এমন ভাবে সংবাদপত্রে প্রকাশ করেন যে, এতে ফরাসিরা মনে করে যে, প্রাশীয়রাজ ফরাসি দূতকে অপমান করেছেন। এটি এমস টেলিগ্রাম নামে পরিচিত।
(৩.৭) জোলভারেইন কী?
উত্তরঃ- জার্মান রাজ্যগুলির অভ্যন্তরীণ ও বাণিজ্যের বাধাগুলো দূর করার উদ্দেশ্যে জার্মান অর্থনীতিবীদ ম্যাজেনের উদ্যোগে এবং প্রাশিয়ার নেতৃত্বে বিভিন্ন জার্মান রাজ্যকে নিয়ে 1819 খ্রিস্টাব্দে একটি শুল্ক সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয় যা জোলভেরাইন নামে পরিচিত।
(৩.৮) ভিয়েনা সম্মেলনের প্রধান নীতিগুলি কি কি?
উত্তরঃ- ভিয়েনা সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো পিছনে তিনটি প্রধান নীতি কার্যকর ছিল। এগুলি হল - (১) ন্যায্য অধিকার নীতি (২) শক্তিসাম্য নীতি এবং (৩) ক্ষতিপূরণ নীতি।
(৩.৯) কার্বোনারি আন্দোলন বলতে কি বোঝো?
উত্তরঃ- ভিয়েনা বন্দোবস্তের দ্বারা ইতালিকে বিচ্ছিন্ন রাখার চেষ্টা করা হলে ইতালিতে বিভিন্ন গুপ্ত সমিতি গড়ে ওঠে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কার্বনারি সমিতি। এই সমিতির পরিচালনায় ইতালির ঐক্যের দাবিতে যে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে তা কার্বনারি আন্দোলন নামে পরিচিত।
(৩.১০) ইয়ং ইতালি কি? ইয়ং ইতালি দলের আদর্শ কি কি ছিল?
উত্তরঃ- ইয়ং ইতালি হলো ইতালির ঐক্য আন্দোলনের নেতা জোসেফ ম্যাৎসিনি প্রতিষ্ঠিত এটি যুব সংগঠন। 40 বছর বয়স পর্যন্ত সকলেই এর সদস্য হতে পারতো। ইয়ং ইতালি দলের আদর্শ ছিল কোন বিদেশী শক্তির দ্বারা যুবকদের আত্মত্যাগের দ্বারা ইতালি থেকে অস্ট্রিয়াবাসীদেরকে বিতাড়িত করা এবং ইতালির মুক্তির পর সেখানে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করা।
৪। রচনাধর্মী প্রশ্নগুলিত উত্তর দাওঃ-
(৪.১) মুক্তির ঘোষণাপত্র বলতে কী বোঝো?
উত্তরঃ- 1857 খ্রিস্টাব্দে একবার ভূমিদাস প্রথা উচ্ছেদের চেষ্টা হয়। কিন্তু জমিদারদের বিরোধীতাই তা বাস্তবায়িত হয়নি। অবশেষে 1861 খ্রিষ্টাব্দের 19 শে ফেব্রুয়ারি মুক্তির ঘোষণাপত্র জারি হয়। এই নির্দেশ নামায় 300 টি পাতায় 22 টি ধারা ছিল। এতে বলা হয় - (১) ভূমিদাসদের ওপর কোন মালিকের কর্তৃত্ব বা অধিকার থাকবে না। (২) মুক্ত ভূমিদাসদের জমি দিতে হবে এবং তাদের উপর জমিদারের কোন অধিকার থাকবে না। (৩) ভূমিদাসের জমিগুলি পরিচালনার ভার থাকবে মির নামক গ্রাম সমিতির ওপর। (৪) জমিদারদের ক্ষতিপূরণ সরকার মিটিয়ে দেবে। কিন্তু কৃষকদের এই অর্থ দীর্ঘমেয়াদি ঋণ হিসেবে শোধ করতে হবে।
(৪.২) ইতালির ঐক্য আন্দোলনে মাৎসিনি, ক্যাভুর এবং গ্যারিবল্ডির অবদান উল্লেখ করো।
উত্তরঃ- উনবিংশ শতকের প্রথম দিকে ইতালি বিভিন্ন ছোট বড় রাজ্যে বিভক্ত ছিল এবং পিডমন্ট সার্ডিনিয়া ছাড়া ইতালির সব রাজ্যেই অস্ট্রিয়াসহ বিভিন্ন বিদেশী শক্তির আধিপত্য প্রতিষ্ঠা ছিল। ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন ইতালির খন্ড-বিখন্ড রাজ্যগুলির জয় করে ঐক্যবদ্ধ করলেও তার পতনের পর ভিয়েনা বন্দোবস্তের দ্বারা ইতালিকে তারা আবার বিভিন্ন রাজ্যে বিভক্ত করে সেখানে বিদেশিদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা হয়।
ইতালির ঐক্য আন্দোলনে যারা অসামান্য অবদান রেখেছিলেন তাদের মধ্যে প্রধান তিন জন নেতা হলেন - ম্যাৎসিনি, ক্যাভুর এবং গ্যারিবল্ডি।
: ইতালির ঐক্য আন্দোলনে মাৎসিনির ভূমিকা :
জোসেফ ম্যাৎসিনি ছিলেন ইতালির ঐক্য আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা। প্রথম জীবনে তিনি কার্বনারি নামক গুপ্ত সমিতির সদস্য ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি ভিন্নতর আদর্শ গ্রহণ করেন। সন্ত্রাসবাদের পথ পরিত্যাগ করে গণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিনি ইতালিকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেন। ইতালির ঐক্য সাধনে প্রধান বাধা অস্ট্রিয়া তা তিনি খুব ভালভাবেই জানতেন। কিন্তু শক্তিশালী অস্ট্রিয়ার মোকাবেলা করার জন্য তিনি বিদেশী শক্তির সাহায্য নিতে চাননি। এমনকি ইতালির কোন রাজতন্ত্রের অধীনে ঐক্য আন্দোলন পরিচালনা করায় তার উদ্দেশ্য ছিল না। কার্বনারি দলের পরিকল্পনাহীন বিক্ষিপ্ত সন্ত্রাস মূলক কার্যকলাপ দ্বারা ইতালির ঐক্য সাধনে উপলব্ধি করে তিনি 1831 খ্রিস্টাব্দে ইয়ং ইতালি নামে একটি দল গড়ে তোলেন যা ভবিষ্যতে ইতালি বাসীদের ঐক্যের জন্য সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার উত্সাহ জুগিয়ে ছিল।
: ইতালির ঐক্য আন্দোলনে ক্যাভুরের ভূমিকা :
বিদেশী শক্তিগুলিকে বিতাড়িত করে খন্ড-বিখন্ড ইতালির ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যারা অসামান্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান ছিলেন ইতালির রাজ্যের পিডমন্টের প্রধানমন্ত্রী কাউন্ট ক্যামিলো বেনসো ডি ক্যাভুর। তিনি চেয়েছিলেন সার্ডিনিয়া পিডমেন্ট এর রাজতন্ত্রের নেতৃত্বে একটি রাজতান্ত্রিক ইতালি প্রতিষ্ঠা করতে। আর এই কাজে বৈদেশিক শক্তির সাহায্য নেওয়ার বিষয়ে তার কোন আপত্তি ছিল না। তার লক্ষ্য ছিল ইতালিবাসীর প্রতি ইউরোপীয় জনগণের অনুভূতি সঞ্চার করা। এই উদ্দেশ্য পূরণের জন্য তিনি ক্রিমিয়ার যুদ্ধে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের পক্ষে যোগ দেন। ফরাসি রাজ তৃতীয় নেপোলিয়নের সহযোগিতায় উত্তর ইতালির কিছু অংশ অস্ট্রিয়ার শাসন মুক্ত হয়। কিন্তু ঐক্য সাধন সম্পন্ন হওয়ার আগেই তৃতীয় নেপোলিয়ন ফরাসি বাহিনীকে ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর ইতালির ঐক্য আন্দোলনে সাধারণ ইতালিবাসীদের ভূমিকা যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল। অস্ট্রিয়ার পরোক্ষ শাসনে থাকা পার্মা, মডেনা ও টাস্কানির মত ইতালিয় অঞ্চলের সাধারণ মানুষের গণভোটের মাধ্যমে সার্ডিনিয়া-পিডমন্টের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে তার কাজ সহজ হয়ে যায়।
: ইতালির ঐক্য আন্দোলনে গ্যারিবল্ডির ভূমিকা :
মাৎসিনি ভাব শিষ্য গ্যারিবল্ডি সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ ইতালির সিসিলি এবং নেপলস থেকে বিদেশী বুরবোঁ শাসকদের বিতাড়িত করেন। স্বাধীন সিসিলি এবং নেপলস রাজ্যকে এরপর তিনি পিডমন্টের রাজা ভিক্টর ইমানুয়েলের হাতে তুলে দিলে রোম ও ভেনেশিয়া বাদে বাকি প্রায় সমগ্র ইতালি এই রাজবংশের অধীনে একটি ঐক্যবদ্ধ রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পরবর্তীকালে রাজা ভিক্টর ইমানুয়েল বিসমার্ক এর সঙ্গে সহযোগিতার বিনিময় ওই দুটি স্থানও ইতালি সঙ্গে সংযুক্ত করেন।
(৪.৩) ফ্রান্সে ফেব্রূয়ারি বিপ্লবের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো।
উত্তরঃ- জুলাই বিপ্লবের দ্বারা ফ্রান্সে অর্লিয়েন্স বংশীয় লুই ফিলিপ সিংহাসনে বসেন। মাত্র দুই দশকের কম সময়ের মধ্যে তার শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং 1848 খ্রিস্টাব্দে ফেব্রূয়ারি বিপ্লবের ফলে তার পতন ঘটে আর এরপরই ফ্রান্সে দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
: ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের কারণ :
ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের বিভিন্ন কারণ ছিল। যেমন -
(এক) বুর্জোয়াদের আধিপত্যঃ-
লুই ফিলিপ এর শাসনকালে ফ্রান্সে বুর্জোয়া শ্রেণীর চূড়ান্ত আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে দরিদ্র কৃষক ও শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
(দুই) জনসমর্থনের অভাবঃ-
লুই ফিলিপ এর প্রতি জনসমর্থনের খুবই অভাব ছিল। নেপোলিয়ন বোনাপার্টের অনুগামী, ক্যাথলিক, প্রজাতন্ত্রী, ন্যায্য অধিকার নীতির সমর্থক প্রভৃতি কেউই তাঁর সিংহাসন লাভ পছন্দ করেননি।
(তিন) ত্রুটিপূর্ণ বিদেশনীতিঃ-
লুই ফিলিপ শান্তি রক্ষা করার নীতি গ্রহণ করে পোল্যান্ড, ইতালি, বেলজিয়াম, মিশর, তুরস্ক প্রভৃতি দেশে ফরাসি আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ব্যাপক সুযোগ থাকলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি। ফলে দেশবাসী ক্ষুব্ধ হয়।
(চার) আর্থিক দুরবস্থাঃ-
1840 এর দশকে ফ্রান্সে খরা, শস্যহানি, খাদ্যাভাব, শিল্প ও বাণিজ্য মন্দা, বেকার সমস্যা প্রভৃতি তীব্র আকার ধারণ করে। সরকার অর্থনৈতিক সংকটের সমাধানে ব্যর্থ হয়।
: ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলাফল :
ফ্রান্সের অভ্যন্তরে ফেব্রূয়ারি বিপ্লবের বিভিন্ন ফলাফল প্রত্যক্ষ করা যায়। যেমন -
(এক) নতুন আইন ব্যবস্থাঃ-
বিপ্লবের পর ফ্রান্সে সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা গঠিত হয়। এই আইনসভা লুই নেপোলিয়ন কে চার বছরে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত করে।
(দুই) প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠাঃ-
ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলে ফ্রান্সে অর্লিয়েন্স রাজবংশের পতন ঘটে এবং দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। নতুন প্রজাতান্ত্রিক সরকার বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপ ঘোষণা করে।
(তিন) শ্রমিক কল্যাণঃ-
নতুন প্রজাতান্ত্রিক সরকার শ্রমিক শ্রেণীর উন্নতির জন্য শ্রম কমিশন গঠন করে। শ্রমিকদের কাজের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়।
(চার) ভোটাধিকারঃ-
ভোটাধিকার সম্প্রসারণের ফলে ফ্রান্সের সাধারণ নিম্নবিত্ত বুর্জোয়ারা ভোটদানের এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের সুযোগ পায়।
(৪.৪) জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বিসমার্কের 'রক্ত ও লৌহ' নীতি সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তরঃ- ইতালির মত জার্মানির ঐক্য সাধিত হয়েছিল সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে একটি রাজবংশের অধীনে। জার্মানির ক্ষেত্রে রাজবংশী ছিল প্রাশিয়ার হোহেনজোলার্ন রাজবংশ। বিসমার্ক ছিলেন এই রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী। জার্মানির খণ্ড খণ্ড রাজ্যগুলি স্বাধীন হলেও এদের ওপরে অস্ট্রিয়ার একটি নিয়ন্ত্রণ ছিল। তাছাড়া প্রতিবেশী শক্তিশালী দেশ ফ্রান্সও চায়নি জার্মান ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করুক। অস্ট্রিয়া ও ফ্রান্সের এ বাধা সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অপসারিত করতে বিসমার্ক বদ্ধপরিকর ছিলেন।
1862 খ্রিস্টাব্দে অটো ফন বিসমার্ক প্রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হলে প্রথম উইলিয়ামসের লক্ষ্য বাস্তবায়িত হওয়ার সুযোগ পায়। জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে তিনি নিম্নলিখিত নীতি গ্রহণ করেছিলেন -
(এক) রাজতন্ত্রে বিশ্বাসঃ-
রাজতন্ত্রে বিশ্বাসী বিসমার্ক এর উদ্দেশ্য ছিল প্রাশিয়ার রাজতন্ত্রের অধীনে সমগ্র জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং প্রাশিয়ার রাজতান্ত্রিক শাসনের ভাবধারায় জার্মানিকে প্রভাহিত করা।
(দুই) রক্ত ও লৌহ নীতিঃ-
বিসমার্ক গণতান্ত্রিক রাজনীতির ওপর নয় রক্ত ও লৌহ নীতির ওপর আস্থাশীল ছিলেন। তিনি রাশিয়ার আইনসভা এ ঘোষণা করেন যে "বিতর্ক বা ভোটে দ্বারা নয় রক্ত ও লৌহ নীতির মাধ্যমেই জার্মানির সমস্যার সমাধান হবে।"
(তিন) সামরিক শক্তিতে আস্থাঃ-
বিসমার্ক উপলব্ধি করেন যে, একমাত্র সামরিক শক্তির জোরেই জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এজন্য তিনি প্রতিনিধি সভার মত অগ্রাহ্য করে প্রাশিয়ার সামরিক শক্তি বাড়ানোর উদ্যোগ নেন এবং তিনটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধের মাধ্যমে সমগ্র জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করেন। যথা - (১) ডেনমার্কের সঙ্গে যুদ্ধ (২) অস্ট্রিয়ার সাথে যুদ্ধ (৩) ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধ।
Jfi
উত্তরমুছুনLong qution
উত্তরমুছুন