চতুর্থ অধ্যায়
ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া ও পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ
(১) বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ-
(১.১) যে প্রক্রিয়ায় অসমতল ভূমি সমতলে পরিণত হয় তা হল –
(ক) অবরোহন
(খ) আরোহন
(গ) পর্যায়ন
(ঘ) ভূআন্দোলন
উত্তরঃ- (গ) পর্যায়ন
(১.২) পৃথিবীর দীর্ঘতম ভঙ্গিল পর্বত হলো –
(ক) হিমালয়
(খ) রকি
(গ) আন্দিজ
(ঘ) অল্পাস
উত্তরঃ- (গ) আন্দিজ
(১.৩) নিচের কোন্টি পৃথিবীর বৃহত্তম পাত –
(ক) প্রশান্ত মহাসাগরীয়
(খ) উত্তর আমেরিকা
(গ) ইউরেশিয়
(ঘ) আফ্রিকা
উত্তরঃ- (ক) প্রশান্ত মহাসাগরীয়
(১.৪) ভূমধ্যসাগরের আলোক স্তম্ভ হল –
(ক) এটনা
(খ) ভিসুভিয়াস
(গ) স্ট্রম্বলি
(ঘ) ক্রাকাতোয়া
উত্তরঃ- (গ) স্ট্রম্বলি
(১.৫) নিম্নলিখিত কোন্টি ভারতের গ্রস্ত উপত্যকা –
(ক) মহানদী
(খ) কাবেরী
(গ) গোদাবরী
(ঘ) নর্মদা
উত্তরঃ- (ঘ) নর্মদা
(১.৬) ভারতের লাদাখ মালভূমি এক ধরনের –
(ক) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি
(খ) লাভা মালভূমি
(গ) শিল্ড মালভূমি
(ঘ) পর্বতবেষ্টিত মালভূমি
উত্তরঃ- (ঘ) পর্বতবেষ্টিত মালভূমি
(১.৭) নিম্নলিখিত কোন্টি ভারতের লাভা মালভূমি –
(ক) বুন্দেলখন্ড
(খ) লাদাখ
(গ) মালনাদ
(ঘ) ডেকানট্র্যাপ
উত্তরঃ- (ঘ) ডেকানট্র্যাপ
(১.৮) একটি প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বতের উদাহরণ হল –
(ক) রকি
(খ) আল্পাস
(গ) আরাবল্লী
(ঘ) হিমালয়
উত্তরঃ- (গ) আরাবল্লী
(১.৯) আগ্নেয় মেঘলা দেখা যায় –
(ক) ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে
(খ) প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে
(গ) আটলান্টিক মহাসাগরীয় অঞ্চলে
(ঘ) কুমেরু মহাসাগরীয় অঞ্চলে
উত্তরঃ- (খ) প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে
(১.১০) টেবিল ল্যান্ড বলা হয় –
(ক) পর্বতকে
(খ) মালভূমিকে
(গ) পাহাড়কে
(ঘ) সমভূমিকে
উত্তরঃ- (খ) মালভূমিকে
(২) অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ-
(২.১) অন্তর্জাত পদ্ধতিতে শক্তির উৎস কোথায় থাকে?
উত্তরঃ- পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগে
(২.২) বহির্জাত পদ্ধতিতে শক্তির উৎস কোথায় থাকে?
উত্তরঃ- ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে
(২.৩) ভূমিকম্প কোন্ প্রকারের ভূগঠন পদ্ধতি?
উত্তরঃ- অন্তর্জাত পদ্ধতি
(২.৪) পুঞ্জিতক্ষয় কোন্ প্রকারের ভূগঠন পদ্ধতি?
উত্তরঃ- বহির্জাত পদ্ধতি
(২.৫) ভাঁজ কোন্ প্রকার বলের প্রভাবে সৃষ্টি হয়?
উত্তরঃ- সংনমণ
(২.৬) মহাদেশ কোন্ আলোড়নে সৃষ্টি হয়?
উত্তরঃ- মহীভাবক
(২.৭) পর্বত কোন্ আলোড়নে সৃষ্টি হয়?
উত্তরঃ- গিরিজন
(২.8) একটি দ্রুতগতির অন্তর্জাত প্রক্রিয়ার নাম লেখো।
উত্তরঃ- ভূমিকম্প
(২.৯) এশিয়াতে একটি নবীন ভঙ্গিল পর্বতের উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ- হিমালয়
(২.১০) ম্যাগমা সঞ্চিত হয়ে কোন্ পর্বতের সৃষ্টি হয়?
উত্তরঃ- আগ্নেয় পর্বতের
(২.১১) স্টমবলি কী ধরনের আগ্নেয়গিরি?
উত্তরঃ- জীবন্ত
(২.১২) ভারতের সাতপুরা কি ধরনের পর্বত?
উত্তরঃ- স্তুপ পর্বত
(২.১৩) ভারতের একটি ক্ষয়জাত পর্বতের উদাহরন দাও।
উত্তরঃ- আরাবল্লী
(২.১৪) এশিয়াতে একটি পর্বত বেষ্টিত মালভূমি উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ- তিব্বতের মালভূমি
(২.১৫) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের একটি মহাদেশীয় মালভূমির উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ- কলোরাডো মালভূমি
(২.১৬) কোন্ পর্বতের শিলাস্তরে জীবাশ্ম দেখা যায়?
উত্তরঃ- ভঙ্গিল পর্বতের
(২.১৭) যে গোলাকার নলের মধ্য দিয়ে ম্যাগমা বাইরে বেরিয়ে আসে তাকে কি বলে?
উত্তরঃ- জ্বালামুখ
(২.১৮) পেডিমেন্ট ও বাহাদাকে একত্রে কি বলে?
উত্তরঃ- পেডিপ্লেন
(৩) নীচের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ-
(৩.১) বহির্জাত ও আন্তর্জাত প্রক্রিয়া বলতে কি বোঝো?
উত্তরঃ- যে পদ্ধতিতে পৃথিবীর উপরিভাগের বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি ভূপৃষ্ঠে ক্রিয়া করে সেই পদ্ধতিতে বহির্জাত প্রক্রিয়া বলে।
যে পদ্ধতিতে পৃথিবীর ভূগর্ভে বিভিন্ন প্রকার অভ্যন্তরীণ শক্তি ক্রিয়া করে সেই পদ্ধতিকে অন্তর্জাত প্রক্রিয়া বলে।
(৩.২) সমপ্রায় ভূমি কাকে বলে?
উত্তরঃ- নদীর জলপ্রবাহ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে প্রাচীন মালভূমি এবং উচ্চভূমি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষয় পেতে পেতে এক সময় উঁচু-নীচু ঢেউ-খেলানো ভূমি বা প্রায় সমতলভূমিতে পরিণত হলে তাদের সমপ্রায় ভূমি বলা হয়।
(৩.৩) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি বলতে কী বোঝো?
উত্তরঃ- যখন কোন বিস্তৃর্ণ মালভূমি বিভিন্ন প্রাকৃতিক ক্ষয়কারী শক্তির দ্বারা কতগুলি অংশে বিভক্ত হয়ে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করে তখন সেই মালভূমি গুলিকে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি বলে। যেমন - ছোটনাগপুর মালভূমি।
(৩.৪) পর্বত বেষ্টিত মালভূমি কাকে বলে?
উত্তরঃ- দুই বা ততোধিক পর্বতের মধ্যবর্তী স্থানে কোন মালভূমি অবস্থান করলে সেই মালভূমিকে পর্বত বেষ্টিত মালভূমি বলে। যেমন তিব্বতীয় মালভূমি।
(৩.৫) প্লাবন সমভূমি বলতে কি বোঝো?
উত্তরঃ- নদীর তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে অপেক্ষাকৃত মসৃণভূমি যা নদীর উপচে পড়া জলরাশি বা প্লাবনের ফলে যে সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে প্লাবন সমভূমি বলে।
(৩.৬) ব-দ্বীপ সমভূমি কাকে বলে?
উত্তরঃ- বদ্বীপ একটি প্রাকৃতিক ভূমি, যা নদীর মোহনায় দীর্ঘদিনের জমাট পলি অথবা নদীবাহিত মাটির সৃষ্ট দ্বীপ। একটি নদী বয়ে গিয়ে যখন কোন জলাধার, হ্রদ, সাগর কিংবা মহাসাগরে পরে তখন নদীমুখে বদ্বীপ তৈরী হয়।
(৩.৭) লোয়েস কি?
উত্তরঃ- বায়ু দ্বারা মরুভূমির বালি বাহিত হয়ে দূরে কোন নিচু জায়গায় সঞ্চিত হয়ে যে সমভূমি সৃষ্টি করে তাকে লোয়েস সমভূমি বলে। যেমন গোবি মরুভূমির লোয়েসে চীনের হোয়াংহো নদী অববাহিকায় সৃষ্ট লোয়েস সমভূমি।
(৩.৮) লাভা মালভূমি বলতে কী বোঝো?
উত্তরঃ- ভূ-অভ্যন্তরের ম্যাগমা অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বাইরে বেরিয়ে এসে ভূপৃষ্ঠে লাভা রূপে সঞ্চিত হয়ে যে মালভূমির সৃষ্টি করে তাকে লাভা গঠিত মালভূমি বলে।
(৩.৯) পামির মালভূমিকে ‘পৃথিবীর ছাদ’ বলা হয় কেন?
উত্তরঃ- অন্যান্য মালভূমি মত পামিরের উপরিভাগ কিছুটা সমতল এবং চারপাশে খাড়া ঢাল। পামির পৃথিবীর উচ্চতম মালভূমি। আর এর গড় উচ্চতা 4873 মিটার। তাই পামির মালভূমিকে পৃথিবীর ছাদ বলা হয়।
(৪) নীচের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ-
(৪.১) মহিভাবক আলোড়ন ও গিরিজনি আলোড়ন বলতে কী বোঝো?
উত্তরঃ- ভূপৃষ্ঠে উল্লম্বভাবে ক্রিয়াশীল ভূগাঠনিক আলোড়নকে মহিভাবক আলোড়ন বলে। মহীভাবক আলোড়ন এর ফলে স্তুপ পর্বত, গ্রস্ত পতাকা, সাগর, মালভূমি প্রভৃতি সৃষ্টি হয়।
ভূপৃষ্ঠে আনুভূমিকভাবে ক্রিয়াশীল ভূগাঠনিক আলোড়নকে গিরিজনি আলোড়ন বলে। গিরিজনি আলোড়ন এর ফলে প্রধানত ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি হয়।
(৪.২) ডেকান ট্রাপ বলতে কী বোঝো?
উত্তরঃ- দাক্ষিণাত্যের লাভা মালভূমি অঞ্চলটি ডেকান ট্রাপ নামে পরিচিত । এই অঞ্চলটি পৃথিবীর সুপ্রাচীন ভূখণ্ড গান্ডোয়ানাল্যান্ডের অন্তর্গত একটি মালভূমি । আজ থেকে প্রায় ৬-৭ কোটি বছর আগে ভূত্বকের প্রশস্ত ফাটল পথে ভু-গর্ভস্থ লাভা নিঃসৃত হয়ে এই অঞ্চলটিকে চাদরের মতো ঢেকে দেয়, এই ভাবে ডেকান ট্রাপ অঞ্চলটি সৃষ্টি হয়েছে।
(৪.৩) ম্যাগমা ও লাভার মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখ।
উত্তরঃ- ম্যাগমা ও লাভার প্রধান দুটি পার্থক্য হল -
প্রথমত, ভূ-অভ্যন্তরের গলিত অর্ধ তরল পদার্থকে ম্যাগমা বলে আর ভূগর্ভের ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে এলে তা লাভায় পরিণত হয়।
দ্বিতীয়ত, ভূগর্ভের ম্যাগমার মধ্যে জল ও অন্যান্য ধরনের উদ্বায়ী পদার্থ থাকে কিন্তু ভূগর্ভে ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠে এসে লাভায় পরিণত হলে তা থেকে জল ও উদ্বায়ী পদার্থগুলি বাষ্প রূপে বেরিয়ে যায়।
(৪.৪) ক্ষয়জাত ও আগ্নেয়জাত পর্বতের দুটি পার্থক্য লেখ।
উত্তরঃ- ক্ষয়জাত ও আগ্নেয়জাত পর্বতের প্রধান দুটি পার্থক্য হল -
প্রথমত, বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয় কার্যের ফলে কোন প্রাচীন পার্বত্য অঞ্চল ক্ষয়ে গিয়ে ক্ষয়জাত পর্বতের সৃষ্টি করে আর ভূগর্ভস্থ উত্তপ্ত ম্যাগমা লাভা রূপে ভূপৃষ্ঠ সঞ্চিত হয়ে সঞ্চয়জাত পর্বত সৃষ্টি করে।
দ্বিতীয়ত, ক্ষয়জাত পর্বত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গম্বুজের আকৃতির মত হয় কিন্তু সঞ্চয়জাত পর্বত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শঙ্কু আকৃতি হয়।
(৪.৫) পর্বত বেষ্টিত মালভূমি এবং ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি দুটি পার্থক্য লেখ।
উত্তরঃ- পর্বত বেষ্টিত মালভূমি ও ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি প্রধান দুটি পার্থক্য হল -
প্রথমত, পর্বত বেষ্টিত মালভূমি সাধারনত গিরিজনি আলোড়ন এর সময় প্রবল পার্শ্বচাপের ফলে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির সময় পর্বত মধ্যবর্তী ভূমি ভাগ উপরে ওঠে সৃষ্টি হয় আর ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি কোন মালভূমি বা উচ্চভূমি বিভিন্ন ভূ প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত ও বিচ্ছিন্ন হয়ে সৃষ্টি হয়।
দ্বিতীয়ত, পর্বত দৃষ্টিতে মলভূমিগুলি সাধারণত পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত হয় কিন্তু ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমিগুলি যে কোন শিলায় গঠিত হলেও আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলার প্রাধান্য দেখা যায়।
(৫) নীচের রচনাধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ-
(৫.১) পাত সঞ্চালন তত্ত্বের আলোকে ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তির কারণ গুলি আলোচনা করো।
উত্তরঃ-
: পাতসংস্থান বা পাতসঞ্চালন তত্ত্ব :
পাতসঞ্চালন তত্ত্ব অনুসারে, পৃথিবীর ভূত্বকের নিচে ২০০ কিলোমিটার পুরু অশ্মমণ্ডল রয়েছে। এই অঞ্চলটি সুদৃঢ় পাথরের তৈরি হলেও বেশ কিছু ব্লকে বিভাজিত। এই ব্লকগুলোকে পাত বলা হয়। এর নিচে রয়েছে এ্যাস্থোনোস্ফিয়ার নামক নমনীয় চটচটে পদার্থ সমৃদ্ধ অঞ্চল। আর এরও নিচে রয়েছে চটচটে ঘন সুপের মতো ঊর্ধ্ব গুরুমণ্ডল। এই অংশের উপরে অশ্মমণ্ডলের ভাসমান পাতসমূহ। পৃথিবীর উপরিভাগ কোনো না কোনো পাতের উপরে রয়েছে। বিজ্ঞানীরা এই পাতগুলোর নামকরণ করেছেন নানা নামে। যেমন−ইউরেশিয়ান প্লেট, আফ্রিকান প্লেট, ভারতীয় প্লেট, প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেট প্রভৃতি। ভয়ংকর উষ্ণতারকারণে ভূগর্ভের ম্যাগমা স্তরে সৃষ্ট পরিচলন স্রোত এবং পৃথিবীর আহ্নিক গতির ফলে পাতগুলোর সঞ্চালিত হয়। অবশ্য পাতগুলোর এই সঞ্চালন গতি অত্যন্ত মন্থর। এর গতি বছরে প্রায় ১০ মিলিমিটার। এইসব গতিশীল পাতগুলোর মধ্যে যে-কোনো দুটি পাত যখন পরস্পরের মুখো মুখি হয়, তখন ওই দুটি পাতের সংযোগ রেখা বরাবর উপসাগর, সাগর কিংবা মহাসাগরের তলদেশে সঞ্চিত পাললিক শিলাস্তরের দুদিক থেকে প্রবল চাপ সৃষ্টি হয়। আর এই চাপে শিলাস্তরে ভাঁজ পড়ার ফলে শিলাচ্যুতি ঘটে এবং ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয় এবং ভঙ্গিল পর্বত তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়।
পাতসঞ্চালনের ফলে ভঙ্গিল পর্বত দু’ভাবে সৃষ্টি হতে পারে, যেমন—
প্রথমত, প্রচণ্ড ভূমিকম্পের ফলে পৃথিবীর ওপরকার কোনো জায়গা বসে গিয়ে বা উঁচু হয়ে ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তরে ছোটো ছোটো ভাঁজের সৃষ্টি হয় । ভূমিকম্প যতই বাড়তে থাকে, ভাঁজগুলো ততই বড়ো ও উঁচু হয়ে পরস্পরের কাছে চলে এসে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি করে।
দ্বিতীয়ত, প্রচণ্ড পার্শ্ব চাপের ফলেও ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তরে ভাঁজ সৃষ্টি হয় । চাপ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঁজগুলো বড়ো ও উঁচু হয়ে পরস্পরের কাছে এসে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি করতে পারে।
(৫.২) মালভূমি শ্রেণীবিভাগ করে যেকোনো একটি প্রকারের আলোচনা কর।
উত্তরঃ-
: মালভূমির শ্রেণিবিভাগ :
মালভূমি প্রধানত তিন প্রকার , যথা— (ক) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি (খ) পর্বত ঘেরা মালভূমি (গ) লাভা মালভূমি। এছাড়া আরও কয়েক রকমের মালভূমি আছে যেমন, মহাদেশীয় মালভূমি বা অধিত্যকা মালভূমি, পর্বতের পাদদেশীয় মালভূমি প্রভৃতি ।
ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির সংজ্ঞা :-
নদীপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ, বৃষ্টির জল প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা কোনো প্রাচীন ও বিস্তীর্ণ মালভূমি ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হলে, নরম শিলায় গঠিত অংশ বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং কঠিন শিলায় গঠিত অংশ কম ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে । পরবর্তী কালে নীচু অংশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়ে উঁচু অংশগুলোকে ছোটো ছোটো অংশে বিভক্ত করে বা বিচ্ছিন্ন করে, তাই একে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি বলে।
ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির বৈশিষ্ট্য:-
১) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি অঞ্চলগুলি কঠিন ও কোমল- এই দুই ধরনের শিলাতেই গঠিত হয়ে থাকে।
২) হিমবাহ, নদী, ঝড়বৃষ্টি, বাতাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্ষয় পেয়ে কোমল শিলা অপসারিত হলে কঠিন শিলা গঠিত স্থানগুলি নাতিউচ্চ পাহাড় বা টিলার মতো দাঁড়িয়ে থাকে।
৩) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি সাধারণত বিভিন্ন নদীউপত্যকা দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়।
৪) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি থেকে সৃষ্টি হওয়া বেশিরভাগ পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় একই রকমের হয়।
৫) এই ধরনের মালভূমি বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে অবশেষে তা বহু পাহাড় ও উপত্যকার সমষ্টিতে পরিণত হয়।
উদাহরণ: ছোটোনাগপুর মালভূমি।
পর্বত ঘেরা মালভূমির সংজ্ঞা:-
যে সব মালভূমির চারিদিকে পর্বতের সাহায্যে ঘেরা থাকে তাদের পর্বত ঘেরা বা পর্বতবেষ্টিত মালভূমি বলে । ভূমিকম্পের ফলে ভঙ্গিল পর্বতশ্রেণি সৃষ্টি হওয়ার সময় দুটি সমান্তরাল পর্বতশ্রেণির মধ্যবর্তী অপেক্ষাকৃত নীচু স্থানগুলি কিছুটা উঁচু ও খাড়া ঢালযুক্ত হয়ে মালভূমির আকৃতি নেয় । চারি দিকে পর্বতবেষ্টিত হওয়ায় এই সব মালভূমিকে পর্বতবেষ্টিত মালভূমি বলে।
উদাহরণ:- মধ্যএশিয়ার পামির মালভূমি।
(গ) লাভা মালভূমি:-
ভূ-পৃষ্ঠের দুর্বল অংশের ফাটল দিয়ে কখন কখন উত্তপ্ত লাভা বেরিয়ে আসে এবং ভূ-পৃষ্ঠে সঞ্চিত হয় । কালক্রমে এই লাভা শীতল ও কঠিন হয়ে মালভূমির আকার ধারণ করে । একে লাভা মালভূমি বলে ।
উদাহরণ:- দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশে অবস্থিত মহারাষ্ট্র মালভূমি লাভা দিয়ে তৈরি।
(৫.৩) সমভূমির শ্রেণীবিভাগ করে যেকোনো একটি প্রকারের সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তরঃ-
: সমভূমির শ্রেণীবিভাগ :
সমভূমি নানাভাবে সৃষ্টি হয় । পৃথিবীর যে অংশের বহিরাবরাণে এখানও ভাঁজ পড়ে নি, সেখানে সুবিস্তৃত সমতল ক্ষেত্র বিরাজ করছে । যেমন এশিয়ার উত্তরে সাইবেরিয়ার সমভূমি । অবনত ভূমি অনেক সময় নদী ও হিমবাহ বাহিত পলি ও মোরেণ দিয়ে ভরাট হয়ে সমভূমিতে পরিণত হয় । ভূমিকম্পের ফলে সমুদ্র থেকে উপকূল সমভূমি জেগে ওঠে । উৎপত্তি অনুসারে বিভিন্ন সমভূমিকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—
১) সঞ্চয়জাত সমভূমি,
২) ক্ষয়জাত সমভূমি এবং
৩) ভূ-আন্দোলনের ফলে গঠিত সমভূমি।
: সঞ্চয়জাত সমভূমি সৃষ্টির কারণ :
যুগ যুগ ধরে নদীর দু’পাশে বা নদী মোহনায় পলি জমে এই সমভূমির সৃষ্টি হয় । সঞ্চয়জাত সমভূমিকে প্রধানত ৫ ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—
ক) পলিগঠিত সমভূমি:
উঁচু পর্বত থেকে নদী প্রচন্ডবেগে নীচে নামে । নামার সময়ে নুড়ি, পাথর, বালি,কাঁকর, কাদা নিয়ে আসে । নীচে নেমে নদীর স্রোতের বেগ কমে যায় । নদী তার নিম্নগতিতে সমুদ্রের কাছাকাছি চলে এলে নদীপথের ঢাল হ্রাস পায় এবং নদীবাহিত শিলাখন্ড, নুড়ি, বালি প্রভৃতি নদী তার দুই তীরে জমা করতে থাকে । ক্রমশ এই পলিমাটি জমে নদীর দুই তীরের নিচু জায়গা ভরাট হয়ে যায় ও সমভূমির রূপ নেয় । পলি দিয়ে এই সমভূমি গঠিত হয় বলে এর নাম পলিগঠিত সমভূমি ।
খ) প্লাবনসমভূমি বা বন্যাগঠিত সমভূমি :
নদী তার নিম্নগতিতে সমুদ্রের কাছা কাছি চলে এলে নদীর ভূমির ঢাল হ্রাস পায় এবং নদী বাহিত শিলাখন্ড, নুড়ি, বালি প্রভৃতি নদীগর্ভে সঞ্চিত হতে থাকে যার ফলে নদীর গভীরতা ক্রমশ কমে যায় । বর্ষাকালে হঠাৎ নদীতে জল বেড়ে গেলে এই অগভীর নদী উপত্যকা অতিরিক্ত জল বহন করতে পারে না, এর ফলে নদীতে বন্যা দেখা দেয় । বন্যার জল দুকূল প্লাবিত করে এবং প্লাবিত অঞ্চলে বালি, কাদা, পলি প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে এক নতুন ভূমিরূপ বা প্লাবন সমভূমির সৃষ্টি হয় । পলিমাটি সঞ্চিত হয়ে এই সমভূমি গঠিত হয় বলে একে সঞ্চয়জাত সমভূমিও বলে । নদীর দুই তীরে বালি, কাদা, পলি প্রভৃতি ক্রমাগত জমা হলে নদী তীর ধীরে ধীরে বাঁধের মতো উঁচু হয়ে যায় এই বাঁধ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় গঠিত হয়, তাই একে স্বাভাবিক বাঁধ বলে । পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গার গতিপথের দুপাশে প্লাবনভূমি ও স্বাভাবিক বাঁধ দেখা যায় । কলকাতা শহর গঙ্গার স্বাভাবিক বাঁধের উপর অবস্থিত।
গ) ব-দ্বীপ সমভূমি :
নদী যেখানে সমুদ্রে এসে পড়ে তাকে নদীর মোহনা বলে । এই মোহানাতে নদীর জলের সঙ্গে বাহিত পলি জমে ( নুড়ি, কাঁকর, কাদা, বালি) যে নতুন ভূভাগের সৃষ্টি হয় তাকে দ্বীপ বলে । দ্বীপের চারিদিকেই জল থাকে । এই দ্বীপকে দেখতে যখন অনেকটা বাংলা ‘ব’বা গ্রিক অক্ষর ডেল্টা -র মতো হয়, তখন তাকে বদ্বীপ বা ডেল্টা বলে । বদ্বীপ সৃষ্টির পর নদীর জল বদ্বীপে বাধাপ্রাপ্ত হলে নদী বহু শাখায় বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং বদ্বীপগুলির চার ধারে আরও বেশি মাত্রায় পলি জমতে থাকে, যার ফলে বদ্বীপগুলো ক্রমশ আয়তনে বড় হয়ে মূল ভূভাগের সঙ্গে মিশে যায়। এইভাবে যে সমভূমি সৃষ্টি হয় তাকে ব-দ্বীপ সমভূমি বলে।
ঘ) হ্রদ সমভূমি :
নদীবাহিত বালি, নুড়ি, কাঁকর, পলি প্রভৃতি দ্বারা কোনো হ্রদ ভরাট হলে কালক্রমে যে সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে হ্রদ সমভূমি বলে। কাশ্মীর উপত্যকা ও উত্তর দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তাল সমভূমি অঞ্চল হ্রদ ভরাট হয়ে সৃষ্টি হয়েছে ।
ঙ) লোয়েস সমভূমি :
বায়ুপ্রবাহের পরিবহন ও সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, লোয়েস সমভূমি হল তার মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । অতিসূক্ষ্ম বালিকণা, মাটির কণা বা মৃত্তিকা বায়ুর দ্বারা পরিবাহিত হয়ে মরুভূমি সীমানার অনেক দূরে নিয়ে গিয়ে জমা হয়ে যে সমভূমি গঠন করে তাকে লোয়েস সমভূমি। এর রং হলদে । কিন্তু এই মাটি খুবই উর্বর।
: ক্ষয়জাত সমভূমি সৃষ্টির কারণ :
নীচু মালভূমি ও পার্বত্য অঞ্চলে বহুদিন ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ক্ষয়জাত সমভূমির সৃষ্টি হয়। ক্ষয়জাত সমভূমি দু ধরনের হয় যথা— ক) সমপ্রায় ভূমি এবং খ) পাদদেশীয় সমভূমি।
ক) সমপ্রায় ভূমি সৃষ্টির কারণ :
নদীর জলপ্রবাহ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে প্রাচীন মালভূমি এবং উচ্চভূমি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষয় পেতে পেতে এক সময় উঁচু-নীচু ঢেউ-খেলানো ভূমি বা প্রায় সমতলভূমিতে পরিণত হলে তাদের সমপ্রায় ভূমি বলা হয়।
খ) পাদদেশীয় সমভূমি বা পেডিমেন্ট সৃষ্টির কারণ :
বায়ু এবং জলের ক্ষয় ও সঞ্চয় কাজের ফলে মরুভূমি অঞ্চলের পর্বতের ঢাল ও পাদদেশভাগ পাথরে ঢাকা ঢালু সমতল ভূমিতে পরিণত হয়ে পাদদেশীয় সমভূমি বা পেডিমেন্ট সৃষ্টি হয়।
: ভূ-আন্দোলনের ফলে গঠিত সমভূমি :
ভূ-আন্দোলনের ফলে সাধারণত দু’রকমের সমভূমির সৃষ্টি হয়, যথা— ক) উন্নত সমভূমি ও খ) অবনত সমভূমি । ভূমিকম্পের ফলে নীচু স্থান উঁচু হয়ে উন্নত সমভূমির সৃষ্টি হয় (যেমন, ভারতের করমন্ডল উপকূল) এবং উঁচু স্থান নীচু হয়ে অবনত সমভূমি সৃষ্টি হয় (যেমন, তুরানের নিম্ন সমভূমি)।
ক) উন্নত সমভূমি:- ভূমিকম্পের ফলে নীচু স্থান উঁচু হয়ে উন্নত সমভূমির সৃষ্টি হয় (যেমন,ভারতের করমন্ডল উপকূল)
খ) অবনত সমভূমি:- ভূমিকম্পের ফলে উঁচু স্থান নীচু হয়ে অবনত সমভূমি সৃষ্টি হয় (যেমন,তুরানের নিম্ন সমভূমি)।
Asikur
উত্তরমুছুন