ভাঙার গানকাজী নজরুল ইসলাম
বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
প্রশ্নঃ 'ভাঙার গান' কবিতাটি কার লেখা?
(ক) কাজী নজরুল ইসলাম
(খ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) জমির উদ্দিন
(ঘ) শামসুর রহমান
উত্তর: (ক) কাজী নজরুল ইসলাম
প্রশ্নঃ 'পাষাণ বেদী'-কিসের?
(ক) ঈশান পূজার
(খ) শিকল পূজার
(গ) জমাট রক্তের
(ঘ) দেবীর পূজার
উত্তর: (খ) শিকল পূজার
প্রশ্নঃ 'নিশান' শব্দটির অর্থ হলো-
(ক) পতাকা
(খ) রাত্রি
(গ) নিশানা
(ঘ) চিহ্ন
উত্তর: (ক) পতাকা
প্রশ্নঃ "গাজনের বাজনা বাজা"-'গাজন' কোন দেবতার উৎসব?
(ক) মনসার
(খ) চন্ডী
(গ) সত্যপীর
(ঘ) মহাদেব
উত্তর: (ঘ) মহাদেব
প্রশ্নঃ পাগলা ভোলা কে?
(ক) ব্রম্মা
(খ) পবন দেব
(গ) মহাদেব
(ঘ) ইন্দ্রদেব
উত্তর: (গ) মহাদেব
প্রশ্নঃ "কাঁধে নে দুন্দুভি ঢাক" - দুন্দুভি হল -
(ক) শিঙা
(খ) দামামা
(গ) শঙ্খ
(ঘ) বাঁশি
উত্তর: (খ) দামামা
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর ধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
প্রশ্নঃ 'ভাঙার গান' কবিতাটি কার লেখা?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের লেখা।
প্রশ্নঃ "কারার ওই লৌহ কপাট"-'লৌহ কপাট' কথার অর্থ কি?
উত্তর: লৌহ কপাট কথার অর্থ লোহার তৈরি দরজার।
প্রশ্নঃ কশ্বিন কি ভেঙে ফেলতে বলেছেন?
উত্তর: কবি কারার লৌহ কপাট ভেঙে ফেলতে বলেছেন।
প্রশ্নঃ 'ঈশান' শব্দের দুটি অর্থ লেখ।
উত্তর: ঈশান শব্দের অর্থ শিব। অন্যদিকে, ঈশান হলো উত্তর-পূর্ব দিক, যা দশটি দিকের একটি।
প্রশ্নঃ 'পাষাণ বেদী' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম পাষাণ-বেদী বলতে বন্দিশালা কে বুঝিয়েছে।
প্রশ্নঃ "লাথি মার ভাঙরে তালা"-কিসের তালা কবি ভাঙতে বলেছেন?
উত্তর: ইংরেজ শাসকের তৈরি কারাগারের তালা কবি ভাঙতে বলেছে।
প্রশ্নঃ কবিতাটি কোভিদ কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে?
উত্তর: কবিতাটি কবির ভাঙার গান নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।
প্রশ্নঃ "ভগবান পরবে ফাঁসি"-কে ভগবানকে ফাঁসি দিতে চায়?
উত্তর: অত্যাচারী ইংরেজ শাসক ভগবান কে ফাঁসি দিতে চায়।
প্রশ্নঃ "আগুন জ্বালা, আগুন জ্বালা"-কবি কোথায় আগুন জ্বালাতে বলেছেন?
উত্তর: ইংরেজরা বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের যেসব কারাগারে বন্দি রয়েছে, কবি সেখানে আগুন জ্বালাতে বলেছেন।
প্রশ্নঃ কবি গাজনের বাজনা বাজাবার মধ্যে দিয়ে কি বলতে চেয়েছেন?
উত্তর: কোভিদ গাজনের বাজনা বাজানোর মধ্যে দিয়ে নতুন পথে যাত্রা করার কথা বলেছেন।
প্রশ্নঃ "নাচে ওই কালবোশাখী"-'কালবৈশাখী' কিসের প্রতীক?
উত্তর: কালবৈশাখী অর্থাৎ কালবৈশাখী ঝড় একাধারে ধ্বংস ও সৃষ্টির প্রতীক।
প্রশ্নঃ 'পাগল ভোলা'কে? কাকে পাগল ভোলা বলা হয়েছে?
উত্তর: মহাদেবের অন্য নাম পাগল ভোলা। স্বাধীনতাকামী শস্ত্র তরুণদের পাগল ভোলা বলা হয়েছে।
প্রশ্নঃ "মৃত্যুকে ডাক জীবনপানে"-কে ডাকবে?
উত্তর: পাগলা ভোলা অর্থাৎ তরুণ স্বাধীনতা সংগ্রামীরা মৃত্যুকে জীবন পানে ডাকবে অর্থাৎ হাসিমুখে বরণ করবে।
প্রশ্নঃ 'বন্দিশালায় আগুন জ্বালা'-কে কাকে একথা বলেছেন?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম স্বাধীনতাকামী তরুণদের একথা বলেছে।
প্রশ্নঃ সব বন্দিশালাকে... কবি কি করতে চেয়েছেন?
উত্তর: লাথি মেরে সব বন্দীশালার তালা ভেঙে ফেলতে বলেছেন, আগুন জ্বালাতে বলেছেন ও সে গুলোকে উপরে ফেলতে চেয়েছেন।
(৩) নিচের ব্যাখ্যাভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
প্রশ্নঃ "কারার ওই লৌহকপাট/ভেঙে ফেল, কররে লোপাট" - এই আহ্বানের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ পরাধীন ভারতকে বিদেশি শক্তির বাঁধন থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য কবি তরুণ বিপ্লবী শক্তিকে আহ্বান জানিয়েছেন। অত্যাচারী ইংরেজ শাসক দেশপ্রেমী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের যে কারাগারে আটকে রেখেছে বা রাখতে চায় সেই সমস্ত কারাগারের লৌহকপাট ভেঙে ফেলার আহ্বান জানিয়েছেন কবি।
প্রশ্নঃ "ওরে ও তরুণ ঈশান! /বাজা তোর প্রলয়-বিষা" - তরুণ ঈশান প্রলয় বিষাণ বাজাবে কেন?
উত্তরঃ 'ঈশান' হলেন ধ্বংস ও সৃষ্টির দেবতা শিব। জরাজীর্ণকে, অশুভকে বিনাশ করার জন্য তিনি যখন প্রলয় নৃত্য করেছিলেন, তার আগে বাজিয়েছিলেন 'বিষাণ' অর্থাৎ শিঙা। কবি নবীন বিপ্লবীদের ঈশানের সঙ্গে তুলনা করে ইংরেজ শাসন ধবংসের বিষাণ বাজাতে বলেছেন। দেশমাতার মুক্তির জন্য যেসব ভারতসন্তান সংগ্রাম করছেন তাদের ওপর অত্যাচার করে, তাদের কারাগারে বন্দি করে ইংরেজরা তাদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে দমন করতে চাইছে। তাই তরুণ ঈশানকে অশুভ ইংরেজ শাসনের ধবংসের জন্য প্রলয় বিষাণ বাজাতে হবে।
প্রশ্নঃ "রক্ত-জমাট/শিকল-পুজোর পাষাণ-বেদী!" - পঙক্তিটির অন্তর্নিহিতঅর্থ বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ পরাধীন ভারতবর্ষে অত্যাচারী ইংরেজ শাসক স্বাধীনতা সংগ্রামী ভারতীয়দের কারাগারে বন্দি করে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। এই ভাবে তারা দমন করতে চেয়েছিল সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামকে। শোষক ইংরেজদের অত্যাচারে বিপ্লবীদের অনেক রক্ত ঝরেছে। কারাগারে লেগেছে সেই রক্ত। আর বিপ্লবীদের রক্ত লেগে থাকা সেই কারাগারই কবির কাছে হয়েছে দেশমাতার পূজার পাষাণ বেদি, যাতে শহিদের রক্ত জমাট হয়ে আছে।
প্রশ্নঃ "ওরে ও পাগলা ভোলা" - 'পাগলা ভোলা' কে? কবি এরকম বলেছেন কেন?
উত্তরঃ 'পাগলা ভোলা' কথাটির আক্ষরিক অর্থ প্রলয়ংকর মহাদেব, কিন্তু এখানে স্বাধীনতার স্বপ্নে চল তরুণদের কথা বলা হয়েছে।
শিব তার প্রলয়রূপে যেরকম অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করে, কবি প্রত্যাশা করেছেন দেশপ্রেমিক তরুণরা ঠিক সেভাবেই শক্তি ও সাহসের উন্মত্ত প্রকাশে কারাগারের গারগুলোকে হ্যাচকা টান দেবে, লৌহকপাট ভেঙে ফেলবে। এই উদ্যম, স্পর্ধা এবং সাহস আছে বলেই দেশের তরুণদের কবি ‘পাগলা ভোলা’ বলেছেন।
(৪) নিচের রচনাধর্মী প্রশণগুলির উত্তর দাওঃ
প্রশ্নঃ "ভাঙার গান" কবিতাটিতে কবি নজরুলের কবি মানসিকতার যে পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে তা সংক্ষেপে লেখো।
উত্তরঃ কাজী নজরুল ইসলামের 'ভাঙার গান' কবিতাটি স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ মানুষের প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধের আকাঙ্ক্ষাকেই যেন প্রকাশ করে। এই কবিতায় সাম্রাজ্যবাদী শাসক শ্রেণির প্রতি কবির বিদ্রোহী মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে কারাগারের লৌহকপাটকে ভেঙে ফেলে সেখানে থাকা 'রক্ত-জমাট/ শিকল-পুজোর পাষাণ-বেদী'-কে কবি ধ্বংস করতে বলেছেন। জেলখানার গারদগুলোয় 'হেঁচকা টান' দিতে বলেছেন। আত্মদানের মধ্যে দিয়েই কবি চেয়েছেন জীবনকে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠা করতে, বলেছেন- "ডাক ওরে ডাক/মৃত্যুকে ডাক জীবনপানে"। কখনওবা বলেছেন বন্দিশালায় আগুন জালিয়ে তাকে উপড়ে ফেলার জন্য। এই আকাঙ্ক্ষার মধ্য দিয়ে কবি নজরুলের শুধু দুঃসাহস নয়, বরং বিদ্রোহ, সত্য ও স্বাধীনতার প্রতি আনুগত্যও প্রকাশ পেয়েছে। আপসহীন প্রতিবাদী মানসিকতায় কবি শুধু বিদ্রোহের কথা বলেননি, স্বাধীনতার জয় ঘোষণা করেছেন। গাজনের বাজনা বাজিয়ে ধ্বংসের মধ্য দিয়ে সৃষ্টির আগমনকে ঘোষণা করেছেন কবি। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সেখানে জীবনের নতুন অভিষেক ঘটবে। শাসক আর শাসিতের মধ্যেকার দূরত্ব মিটে যাবে। এভাবেই 'ভাঙার গান' কবিতাটিতে নজরুলের স্বাধীনতাপ্রিয় বিদ্রোহী মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে।
প্রশ্নঃ "ভাঙার গান" রচনাটির পটভূমি উল্লেখ করে মমার্থ লেখো।
উত্তরঃ 'ভাঙার গান' গানটি কাজী নজরুল ইসলাম অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমিতে রচনা করেছিলেন ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে। এই গানটিতে পরাধীন দেশমাতার শৃঙ্খলমোচনের কথা বিদ্রোহের ভঙ্গিতে প্রকাশিত হয়েছে। অত্যাচারী ইংরেজ শাসক স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কারারুদ্ধ করেছে। কবি সেই কারাগারের লৌহকপাট ভেঙে লোপাট করার ডাক দিয়েছেন। ইংরেজের অত্যাচারে দেশমাতার পূজার বেদি রক্তে লাল হয়ে গেছে। বিদেশি শাসকরা স্বদেশপ্রেমীদের গলায় ফাসির দড়ি পরাতে চায়। কিন্তু তারা জানে বিপ্লবী বীরদের মৃত্যু নেই, তাঁরা মৃত্যুঞ্জয়ী রুদ্র মহেশ্বর বা খ্যাপা ভোলানাথের মতো প্রলয়নৃত্যে সমস্ত বাঁধ ভেঙে তরুণ দেশপ্রেমীরা স্বদেশকে মুক্ত করবেই। অর্থাৎ পরাধীনতার বন্ধন ছিন্ন হবে। তীব্র ঘৃণার পদাঘাতে ভেঙে পড়বে ভীমকারার তালা। গোটা দেশটাই আজ যেন এক কারাগার। সেই কারাগার থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন কবি। তিনি বিশ্বাস করেন, দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধ ভারতবাসী এভাবেই দেশমাতাকে সমস্ত বন্ধন থেকে মুক্ত করবে।
hi
উত্তরমুছুন