দামনারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়
(১) বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
প্রশ্নঃ 'স্কুলে কি বিভীষিকায় যে ছিল'-স্কুলে বিভীষিকায় ছিলেন -
(ক) সুকুমার
(খ) মাস্টারমশাই
(গ) ভদ্রলোক
(ঘ) কর্তৃপক্ষ
উত্তর: (গ) ভদ্রলোক
প্রশ্নঃ 'একবার মাত্র তাকিয়ে দেখতেন তার দিকে, তারপরেই এগিয়ে যেতেন' - মাস্টারমশাই এগিয়ে যেতে -
(ক) সুকুমারের দিকে
(খ) ক্লাস রুমের দিকে
(গ) অফিস ঘরের দিকে
(ঘ) ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে
উত্তর: (ঘ) ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে
প্রশ্নঃ 'এমন অঘটন কল্পনাও করতে পারতেন না মাস্টার মশাই' - মাস্টারমশাই কল্পনা করতে পারতেন না যে -
(ক) পুরুষ মানুষ হয়ে অংক পারে না
(খ) জ্যামিতির এক্সটা করতে হবে
(গ) একটা অংক আমার মিলছে না
(ঘ) ছেলেদের অংক মুখস্ত নেই
উত্তর: (ক) পুরুষ মানুষ হয়ে অংক পারে না
প্রশ্নঃ 'প্লেটোর দোরগোড়ায় কি লেখা ছিল জানিস?' - প্লেটোর দোরগোড়ায় লেখা ছিল -
(ক) সেখানে রাজচিত সংবর্ধনা পাওয়া যাবে
(খ) যে অংক জানে না সেখানে তাঁর প্রবেশ নিষেধ
(গ) বাংলাদেশের কলেজে বক্তৃতা দিতে হবে
(ঘ) স্মৃতির দিকে তাকাবার অবসর নেই
উত্তর: (খ) যে অংক জানে না সেখানে তাঁর প্রবেশ নিষেধ
প্রশ্নঃ 'প্রচন্ড চড় খেয়ে মাথা ঘুরে যেত' - মাথা ঘুরে গেলেও -
(ক) কৌতুহল থাকা চলতনা
(খ) কাঁদবার জো ছিল না
(গ) লোককে জানাত যেত না
(ঘ) অহেতুক তাড়ডনা দেওয়া যেত না
উত্তর: (খ) কাঁদবার জো ছিল না
প্রশ্নঃ 'পরীক্ষার লাস্ট বেল পড়ো পড়ো' - অথচ -
(ক) মাস্টারমশাই গার্ড হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন
(খ) মাস্টারমশাইয়ের দুচোখ দিয়ে আগুন ঝরছে
(গ) কর্তৃপক্ষ ছাড়লেন না
(ঘ) একটা অংক আমার মিলছে না
উত্তর: (ঘ) একটা অংক আমার মিলছে না
প্রশ্নঃ 'আর আমাকে স্কুলে অংক কষতে হয়না' - আমি কলেজে -
(ক) চাকরি করি
(খ) যাইনা
(গ) যাবই
(ঘ) বাংলা পড়াই
উত্তর: (ঘ) বাংলা পড়াই
প্রশ্নঃ 'মূল কথাটা এই ছিল' - অহেতুক তাড়ণা করে কাউকে -
(ক) বোঝানো যায় না
(খ) শিক্ষা দেওয়া যায় না
(গ) শেখানো যায় না
(ঘ) পাওয়া যায় না
উত্তর: (খ) শিক্ষা দেওয়া যায় না
প্রশ্নঃ 'অতিথ্য নিয়ে যেতে হবে ওখানে'। অতিথ্য নিয়ে সেখানে -
(ক) বিনা পয়সায় বেড়ানো যায়
(খ) স্মৃতি চারণা করতে হবে
(গ) বক্তৃতা দিতে হবে
(ঘ) অটোগ্রাফ দিতে হবে
উত্তর: (গ) বক্তৃতা দিতে হবে
প্রশ্নঃ 'কলকাতা থেকে কেউ বাইরে গেলেই তার রাজোচিত সম্ভার্ধনা মেলে'-এখানকার চড়ুই পাখি সেখানে -
(ক) রাজহংসের সমান
(খ) সম্ভ্রান্ত মানুষের সমান
(গ) গাধার সমান
(ঘ) ঘোড়ার সমান
উত্তর: (ক) রাজহংসের সমান
প্রশ্নঃ 'কলকাতা থেকে দ্রুত যতবেশি হয় আমাদের মতো নগণ্যোর পক্ষে ততই তা -
(ক) দুঃখের
(খ) খুশির
(গ) আনন্দের
(ঘ) সুখাবহ
উত্তর: (ঘ) সুখাবহ
প্রশ্নঃ 'সবাই জাঁকিয়ে বক্তৃতা করা গেল'-বক্তা উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন -
(ক) কিটস ও জীবনানন্দ এর উক্তি
(খ) রায়রন ও নজরুলের উক্তি
(গ) রবীন্দ্রনাথ ও বার্নাডশ - এর উক্তি
(ঘ) শেক্সপিয়ার ও কালিদাসের উক্তি
উত্তর: (গ) রবীন্দ্রনাথ ও বার্নাডশ - এর উক্তি
প্রশ্নঃ 'টেবিলে একটা প্রকাণ্ড কিল মেরে বক্তৃতা শেষ করলুম'-তখন অল্পের জন্য -
(ক) প্রস্তুতিতে স্ফীত হয়ে উঠলাম না
(খ) গলার স্বর শোনা গেল না
(গ) রক্ষা পেলুম
(ঘ) ফুলদানিটা রক্ষা পেল
উত্তর: (ঘ) ফুলদানিটা রক্ষা পেল
প্রশ্নঃ 'তিনি আসতে চাইছেন না' - তিনি দাঁড়িয়ে রয়েছেন -
(ক) বাইরে মাঠে
(খ) অন্ধকারে
(গ) ঘরের বাইরে
(ঘ) স্কুলের বাইরে
উত্তর: (ক) বাইরে মাঠে
প্রশ্নঃ 'তারপর চোখে পরল মানুষটিকে' - মানুষটি
(ক) মোটা ও বেঁটে চেহারা
(খ) কুঁজো, লম্বা চেহারা
(গ) লম্বা ও মোটা চেহারা
(ঘ) কুজো ও বেঁটে চেহারা
উত্তর: (খ) কুঁজো, লম্বা চেহারা
প্রশ্নঃ 'ওই স্বর বিদ্যুৎ এর আলোর মতো তাকে উদ্ভাসিত করে তুলেছেন।'বিদ্যুৎ এর আলোর মতন উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে -
(ক) সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিটিকে
(খ) ছাত্রদের
(গ) মাস্টারমশাই
(ঘ) সুকুমার
উত্তর: (গ) মাস্টারমশাই
প্রশ্নঃ 'বেঁচে থাকো বাবা যশস্বী হও' - একথা বলেন -
(ক) মাস্টারমশাই
(খ) জনৈক ব্যক্তি
(গ) বুড়ো প্রিন্সি পাল
(ঘ) সুকুমার
উত্তর: (ক) মাস্টারমশাই
প্রশ্নঃ 'মুহূর্তে আমার জিভ শুকিয়ে গেল' - জীব শুকিয়ে গেল
(ক) লজ্জায়
(খ) লজ্জায় ও আত্মগ্লানিতে
(গ) ঘৃণায়
(ঘ) আনন্দে
উত্তর: (খ) লজ্জায় ও আত্মগ্লানিতে
প্রশ্নঃ 'খালি শাসন করেছি, পিড়ন করেছি' - বলতে বলতে মাস্টারমশাই জামার পকেট থেকে বের করলেন -
(ক) একটা চিঠি
(খ) রুমাল
(গ) পেন
(ঘ) শতচ্ছিন্ন পত্রিকা
উত্তর: (ঘ) শতচ্ছিন্ন পত্রিকা
প্রশ্নঃ 'আবছা আলো টাই এমন অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলুম - অবছা আলোয় দেখা গেল -
(ক) মাস্টারমশাইয়ের চোখ দিয়ে জল পরছে
(খ) তার মুখ উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে
(গ) মহা সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে রয়েছে সে
(ঘ) বাইরে বৃষ্টি পড়ছে
উত্তর: (ক) মাস্টারমশাইয়ের চোখ দিয়ে জল পড়ছে
প্রশ্নঃ 'একটা কিছু বলতে চেষ্টা করলুম' - কিন্তু -
(ক) গলা থেকে স্বর ফুটল না
(খ) মুখে কথা ফুটল না
(গ) সাহস হল না
(ঘ) ভয় পেলাম
উত্তর: (খ) মুখে কথা ফুটল না
প্রশ্নঃ 'যার দাম সংসারের ঐশ্বর্যের চাইতে বেশি' - কার দামের কথা বলা হয়েছে?
(ক) সেই স্নেহ
(খ) মায়া
(গ) ক্ষমা
(ঘ) সেই মমতা
উত্তর: (ঘ) সেই মমতা
প্রশ্নঃ 'এই অপরাধ আমি বলব কি করে'-কোন অপরাধ?
(ক) দশ টাকায় বিক্রি করার অপরাধ
(খ) লাঞ্ছনার অপরাধ
(গ) অসম্মান করা
(ঘ) অপমান করা
উত্তর: (ক) দশ টাকায় বিক্রি করার অপরাধ
প্রশ্নঃ 'সে বইটার কঙ্কাল লুকিয়ে ছিল' - কঙ্কাল লুকিয়ে ছিল
(ক) ঘরের কোণে
(খ) মনের চোরা কুঠুরিতে
(গ) সংসারের ভিতরে
(ঘ) মাঠের ধারে
উত্তর: (খ) মনের চোরা কুঠুরিতে
প্রশ্নঃ 'তারপর চোখে পড়ল' - তারপর কি চোখে পড়ল?
(ক) ছেলেটিকে
(খ) সুকুমারকে
(গ) লোকটিকে
(ঘ) মানুষটিকে
উত্তর: (ঘ) মানুষটিকে
প্রশ্নঃ 'সকলকে এই লেখা আমি দেখাই' - লেখা দেখিয়ে বক্তা বলেন
(ক) আমার ছাত্র আমাকে অমর করে দিয়েছে
(খ) এই লেখা আমার ছাত্রের
(গ) আমার ছাত্র আমাকে মনে রেখেছে
(ঘ) আমার খুব আনন্দ হচ্ছে
উত্তর: (ক) আমার ছাত্র আমাকে অমর করে দিয়েছে
(২) অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
প্রশ্নঃ স্কুলে কে বিভীষিকা ছিলেন?
উত্তর: অংকের মাস্টার মশাই
প্রশ্নঃ ঘন্টার পর ঘন্টা কি নিয়ে পন্ডশ্রম করতো ছেলেরা?
উত্তর: ঘন্টার পর ঘন্টা স্কুলের ছেলেরা জটিল অংক নিয়ে পন্ডশ্রম করত।
প্রশ্নঃ পৃথিবীর সব অংক কার মুখস্ত ছিল?
উত্তর: অংকের মাস্টারমশাইয়ের
প্রশ্নঃ মাস্টারমশাই কি কল্পনা করতে পারতেন না?
উত্তর: পুরুষ মানুষ হয়ে অংক পারে না এমন অঘটন মাস্টারমশাই কল্পনা করতে পারতেন না।
প্রশ্নঃ প্লেটোর দোরগোড়ায় কি লেখা ছিল?
উত্তর: যে অংক জানেনা এখানে তাঁর প্রবেশ নিষেধ।
প্রশ্নঃ পত্রিকার পক্ষ থেকে কি ফরমাশ এসেছিল?
উত্তর:পত্রিকার পক্ষ থেকে ফরমাশ এসেছিল ছেলেবেলার গল্প শুনানোর।
প্রশ্নঃ কর্তৃপক্ষ সুকুমারকে ছাড়লো না কেন?
উত্তর: অনেক মান্যগণ্য লোক পত্রিকায় লেখা দিতে রাজি না হওয়ায় কর্তৃপক্ষ সুকুমারকে ছাড়লো না।
প্রশ্নঃ পত্রিকার কর্তৃপক্ষ সুকুমারকে কত টাকা দক্ষিণা দিয়েছিল?
উত্তর: দশ টাকা দক্ষিণা দিয়েছিল।
প্রশ্নঃ গল্পের সুকুমারের লেখা সুদ পদেশটি কি ছিল?
উত্তর: অহেতুক তাড়না করে কাউকে শিক্ষা দেওয়া যায় না।
প্রশ্নঃ রাজোচিত সংবর্ধনা কোথায় মেলে?
উত্তর: কলকাতা থেকে বাইরের কলেজে অর্থাৎ প্রান্তীয় কোন কলেজে আতিথ্য গ্রহণ এর ডাকলে রাজোচিত সংবর্ধনা পাওয়া যায়।
প্রশ্নঃ সবাই সুকুমার কেমন বক্তৃতা করেছিল?
উত্তর: সবাই সুকুমার জাঁকিয়ে বক্তৃতা করেছিল।
প্রশ্নঃ সুকুমারের মাস্টারমশাই কোথায় দাঁড়িয়ে ছিলেন?
উত্তর: সুকুমারের মাস্টারমশাই স্কুলের বাইরে মাঠে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
প্রশ্নঃ মাস্টারমশাই নিজে কিসের ছাত্র ছিলেন?
উত্তর: মাস্টারমশাই নিজে বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন।
প্রশ্নঃ মাস্টারমশাইয়ের চোখে দীপ্তী কেমন ছিল?
উত্তর: মাস্টার মশাইয়ের চোখ বুদ্ধির দীপ্তিতে ছুরির ফলার মতো চকচক করত।
প্রশ্নঃ কোন লেখাটা মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে সব সময় থাকে?
উত্তর: সুকুমার মাস্টার মশাই কে নীচে যে গল্পটি লিখেছিল সেই গল্পটি মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে সবসময় থাকে।
প্রশ্নঃ সুকুমার নিজে বক্তৃতাকে কিসের সঙ্গে তুলনা করেছে?
উত্তর: সুকুমার নিজের বক্তৃতাকে ফাঁপা ফানুসের সঙ্গে তুলনা করেছে।
প্রশ্নঃ সুকুমারের জীব শুকিয়ে যাচ্ছিল কেন?
উত্তর: লজ্জায়, আত্মগ্লানিতে সুকুমারের জিপ শুকিয়ে যাচ্ছিল।
প্রশ্নঃ হলের বাইরে মাঠের অন্ধকার কেমন ছিল?
উত্তর: হলের বাইরে মাঠের অন্ধকার ছিল তরল।
প্রশ্নঃ সুকুমার তার মাস্টার মশাইয়ের কাছে কেমন ছিল?
উত্তর: সুকুমার তার মাস্টার মশায়ের কাছে সন্তানের মতো ছিল।
প্রশ্নঃ সুকুমার কাকে দশ টাকায় বিক্রি করেছিল?
উত্তর: তার মাস্টার মশাই কে।
(৩) ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
প্রশ্নঃ "কুলে কী বিভীষিকাই যে ছিলেন ভদ্রলোক!" - এখানে যার কথা বলা হয়েছে? তিনি কেন বিভীষিকা ছিলেন?
উত্তরঃ আলোচ্য উদ্ধৃতাংশে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' গল্পের কথক সুকুমারের স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের কথা বলা হয়েছে। অঙ্কে অসাধারণ দক্ষ সেই মাস্টারমশাই যে-কোনো অঙ্কই মুহুর্তে সমাধান করে ফেলতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে এক না জানলে জীবন বৃথা। তাই মাস্টারমশাই অত্যন্ত নিষ্ঠাভরে ছাত্রদের অঙ্ক শেখানোর চেষ্টা করতেন। ছাত্ররা এ না পারলে কুস্থ মাস্টারমশাইয়ের প্রকাশ হারে প্রচণ্ড চড় তাদের পিঠে নেমে আসত কিন্তু কাদবার জো ছিল না, একারণেই তিনি ছাত্রদের কাছে বিভীষিকা ছিলেন।
প্রশ্নঃ "ছেলেরা বিস্ময়ে চোখ কপালে তুলল" - ছেলেরা বিস্ময়ে চোখ কপালে তুলল কেন?
উত্তরঃ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটোগল্পে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের কলেজে সুকুমারের খুব আবেগময় বক্তৃতা শেষ হওয়ার পর কলেজের বৃদ্ধ প্রিন্সিপাল তার প্রশংসা করতে থাকেন। তখন সুকুমার বলেন যে তার শরীরটা ভালো না থাকায় তিনি মনের মতো বক্তৃতা করতে পারেননি। অর্থাৎ এর চেয়েও ভালো বলার ক্ষমতা তিনি রাখেন। এ কথা শুনে ছেলেরা বিস্মিত হয় এই ভেবে যে শরীর ভালো থাকলে তিনি আরও কত ভালো বক্তৃতা দিতেন। এই বিস্ময়েই তাদের চোখ কপালে উঠে যায়।
প্রশ্নঃ "ওঁর ভয়ে তারাই তটস্থ হয়ে থাকত" - কার ভয়ে কারী কেন তটস্থ হয়ে থাকত?
উত্তরঃ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটোগল্পে অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের ভয়ে যারা পরীক্ষায় একশোতে একশো পেত তারাও তটস্থ হয়ে থাকত।
স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাই ছিলেন অসাধারণ দক্ষ। যে-কোনো জটিল অঙ্কই তিনি অনায়াসে সমাধান করে ফেলতেন। মাস্টারমশাই মনে করতেন, অঙ্ক না জানলে জীবন বৃথা। তাই তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠাভরে ছাত্রদের অঙ্ক শেখাতেন। কিন্তু ছাত্ররা অঙ্ক না পারলে তিনি ভয়ানক রেগে গিয়ে তাদের মারতেন বলেই লেখাপড়ায় ভালো ছাত্ররাও তাকে ভয় পেত।
প্রশ্নঃ "একটা ভয়ের মৃদু শিহরণ আমার বুকের ভিতর দিয়ে বয়ে গেল" - বক্তার ভয়ের শিহরণ হওয়ার প্রকৃত কারণটি কী ছিল?
উত্তরঃ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটোগল্পে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের কলেজের অন্ধকারে ঢাকা মাঠে এক ভদ্রলোক কথক সুকুমারকে নাম ধরে ডাকলে তার ভয়ের শিহরণ হয়।
অচেনা এলাকায় অপরিচিত ব্যক্তির মুখে নিজের নাম শুনে অবাক হওয়ার পরমুহূর্তেই সুকুমার কণ্ঠস্বরটি চিনতে পারেন। স্কুলের বিভীষিকাম্বরূপ অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের গলার আওয়াজ কথকের মনে তার ছোটোবেলায় অঙ্ক না পেরে মার খাওয়ার স্মৃতিকে জাগিয়ে তোলে। এটিই ছিল তার ভয়ের প্রকৃত কারণ।
প্রশ্নঃ "এখনি পা ধরে স্কুলের পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দেবো" - বক্তা কেন পুকুরে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার কথা বলেছেন?
উত্তরঃ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটোগল্প থেকে নেওয়া উক্তিটি সুকুমারের স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের। অঙ্ক-অন্তপ্রাণ মাস্টারমশাইয়ের ক্লাসের কোনো ছাত্র অঙ্ক না পারলেই তার পিঠে নেমে আসত তার প্রকাণ্ড হাতের প্রচণ্ড চড়। সেই চড় খেয়ে কোনো ছাত্র কাদলেই তাকে তিনি পা ধরে পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার সুমকি দিতেন। তার মতে অঙ্ক না পারা এবং কাদা, দুটোই পুরুষমানুষের পক্ষে চরম লজ্জার বিষয়।
প্রশ্নঃ "মাস্টারমশাই আমাকে বলতে দিলেন না।" - বলতে না দিয়ে মাস্টারমশাই নিজে কী বলেছিলেন?
উত্তরঃ মাস্টারমশাই কথক সুকুমারের বক্তৃতার প্রশংসা করলে, লজ্জায়। কথক তাকে বাধা দিতে গেলে মাস্টারমশাই তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন যে, ছাত্ররাই প্রকৃত অর্থে শিক্ষকদের গর্ব ও পরিচয়। অথচ শিক্ষক হিসেবে তিনি ছাত্রদের কিছুই দিতে পারেননি, খালি শাসন-পীড়ন করেছেন। এরপরে পকেট থেকে এক জীর্ণ পত্রিকা বের করে মাস্টারমশাই কথকের লেখাটি দেখিয়ে বলেন ছাত্র তাকে নিয়ে গল্প লিখে তাকে অমর করে দিয়েছেন।
প্রশ্নঃ "দু-চোখ দিয়ে তার আগুন ঝরছে" - যার কথা বলা হয়েছে? তার দু- চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে কেন?
উত্তরঃ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দাম’ ছোটোগল্পে সুকুমারের স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের দু-চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে। অঙ্কে বরাবর দুর্বল সুকুমার এমএ পাস করার পরও স্বপ্ন দেখতেন যে তিনি যেন অঙ্ক পরীক্ষা দিচ্ছেন। শেষ ঘণ্টা পড়ার সময় হয়ে গেছে কিন্তু তার একটি অঙ্কও মিলছে না। সুকুমারের স্কুলজীবনের অন্যতম আতঙ্ক অঙ্কের মাস্টারমশাই গার্ড হয়ে তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। ছাত্র অঙ্ক পারছে না দেখে মাস্টারমশাইয়ের দু-চোখ থেকে আগুন ঝরছে।
প্রশ্নঃ "আমার ছাত্র আমাকে অমর করে দিয়েছে" - বক্তার ছাত্র কাকে কীভাবে অমর করেছে?
উত্তরঃ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটোগল্পের অঙ্কে অসাধারণ দক্ষ মাস্টারমশাই ভাবতেই পারতেন না যে তার ছাত্ররা অঙ্ক পারবে না। মেরে-বকে ছাত্রদের তিনি অঙ্ক শেখাতে চাইতেন। ফলে ছাত্রদের কাছে তিনি ছিলেন বিভীষিকা। তার এক ছাত্র সুকুমার পরবর্তীকালে মাস্টারমশাইকে নিয়ে তার বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা একটি পত্রিকায় লিখেছিলেন। সেটি পড়েই সরল মনের মাস্টারমশাইয়ের মনে হয়েছিল ছাপার অক্ষরে তার কথা লিখে তার ছাত্র তাকে অমর করে দিয়েছে।
প্রশ্নঃ "আমাদের মতো নগণ্যের পক্ষে ততই সুখাবহ" - 'আমাদের' বলতে যাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের কাছে কোন্ বিষয় সুখাবহ?
উত্তরঃ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটোগল্পের কথক সুকুমার 'আমাদের বলতে তার মতো মাঝারি মাপের লেখকদের বুঝিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত একটি কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানে অতিথি হওয়ার ডাক পেয়ে সুকুমার আলোচ্য উক্তিটি করেছেন। কলকাতায় একজন লেখকের প্রকৃত স্থান সম্পর্কে গ্রামের মানুষের স্বচ্ছ ধারণা থাকে লেখকের মর্যাদা এবং সম্মান পান। এই ব্যাপারটিকেই সুকুমার সুখাবহ বলেছেন।
(৪) নিচের রচনাধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
প্রশ্নঃ 'দাম' গল্পটি ছোটোগল্প হিসেবে কতটা সার্থক আলোচনা করো।
উত্তরঃ শুধু আয়তনের সংক্ষিপ্ততা নয়, ছোটোগল্পের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য 'দাম' গল্পে দেখা যায়।
চরিত্রের স্বল্পতাঃ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' গল্পটিতে চরিত্রের সংখ্যা খুবই কম। সুকুমার এবং তার স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাই হলেন গল্পের প্রধান দুই চরিত্র। এছাড়া কলেজের প্রিন্সিপাল ও কয়েকজন ছাত্রের উল্লেখ আছে, যাদের ভূমিকা খুবই কম।
ঘটনার ঘনঘটা বর্জিতঃ 'দাম' গল্পে ঘটনারও বাহুল্য নেই। গল্প শুরু হয়েছে সুকুমার ও তার সহপাঠীদের সঙ্গে স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের সম্পর্ক দিয়ে। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো ঘটনার উল্লেখ নেই। সেই সম্পর্কেরই পরিণতিতে গল্প শেষ হয়। ফলে নিশ্চিতভাবে কাহীনিটিকে একমুখী বলা যায়।
গল্পের শেষে চমকঃ যখন গল্পের শেষদিকে এসে সুকুমারের সঙ্গে কথকের দেখা হয় এবং সুকুমার জানতে পারেন যে স্বয়ং মাস্টারমশাই তার লেখা বাল্যস্মৃতিটি পড়েছেন, তারপরে ছাত্র ও শিক্ষকের সম্পর্ক যেভাবে নতুন ধারণায় প্রতিষ্ঠিত হয়, তা পাঠকদের নিঃসন্দেহে চমকে দেয়।
অতৃপ্তিঃ মাস্টারমশাই তাঁর সব সমালোচনার আঘাত উদারমনে গ্রহণ করেছেন - এটা জানার পর সুকুমারের স্বগতোক্তি দিয়ে গল্প শেষ হয়। পাঠকের মনে একটা অতৃপ্তি থেকেই যায় এটা জানার জন্য যে, এরপর কী হল। সব দিক বিচার করে তাই বলাই যায় যে, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' একটি আদর্শ ছোটোগল্প।
প্রশ্নঃ "এ অপরাধ আমি বইব কী করে, এ লজ্জা আমি কোথায় রাখব!" - অপরাধবোধ এবং আত্মগ্লানি দূর হয়ে কীভাবে বক্তার আত্মশুদ্ধি ঘটল তা সংক্ষেপে লেখো।
উত্তরঃ 'দাম' গল্পে কথকের ছোটোবেলার বিভীষিকাম্বরূপ ছিলেন তার স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাই। অঙ্ক শেখানোর জন্য তার কঠোর শাসন, তীব্র বকাঝকা কথকদের কাছে আতঙ্ক হয়ে গিয়েছিল। সেই আতঙ্কের রেশ এতটাই তীব্র ছিল যে, এমএ পাস করার পরেও দুঃস্বপ্নে মাস্টারমশাই এসে হাজির হতেন সামনে। তারপরে যখন জেগে উঠে ভাবলেন যে তিনি এখন কলেজে বাংলা পড়ান, স্কুলে অঙ্ক করেন না তখন এক গভীর তৃপ্তি অনুভব করলেন। মাস্টারমশাইয়ের ওপরে মধুর প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ কথক পেয়ে যান যখন একটি পত্রিকার পক্ষ থেকে ছেলেবেলার গল্প লেখার অনুরোধ আসে। তার লেখায় উঠে তাড়না করে যে কাউকে শিক্ষা দেওয়া যায় না—নিজের অঙ্ক শিক্ষার ব্যর্থতার কথা বলে এ কথাই বুঝিয়ে দেন কথক। কিন্তু বাংলাদেশের প্রান্তবর্তী কলেজে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বহুদিন পরে বয়সের ভারে জীর্ণ সেই মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে যখন কথকের আবারও দেখা হয়—কথকের সব ধারণা পালটে যায়। মাস্টারমশাই শুধু তার বক্তৃতারই প্রশংসা করেন না, জামার পকেট থেকে বের করেন সেই জীর্ণ পত্রিকা—যাতে ছিল মাস্টারমশাইকে নিয়ে কথকের লেখা বাল্যস্মৃতিটি। "আমার ছাত্র আমাকে অমর করে দিয়েছে" - মাস্টারমশাইয়ের মুখে এ কথা শুনে পার আত্মগ্লানিতে মাটিতে মিশে যান কথক। সন্তান বড়ো হলে অন্যায় শুধরে দেবে - নিজের এই মূল্যায়নে মাস্টারমশাই যেন অনন্য মহিমা নিয়ে ধরা পড়ে কথকের সামনে। কথকের মনে হয় তিনি যেন স্নেহ-মমতামার এক মহাসমুদ্রের সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। এই লজ্জাবোধে আর মাস্টারমশাইয়ের উদারতার সামনে নত হওয়ার মাধ্যমেই তাঁর আত্মশুদ্ধি ঘটে।
প্রশ্নঃ "আমি তাঁকে দশ টাকায় বিক্রি করেছিলুম"- এই উক্তিটির আলোকে সুকুমার চরিত্রটি আলোচনা করো।
উত্তরঃ নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা 'দাম' গল্পের প্রধান চরিত্র হলো সুকুমার। সুকুমারের যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি নিচে আলোচনা করা হল -
অঙ্কে দুর্বলঃ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের দাম ছোটোগল্পের কথক সুকুমার বরাবরই অঙ্কে দুর্বল ছিলেন। সুকুমারের কাছে স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাই ছিলেন মূর্তিমান বিভীষিকা। ম্যাট্রিকুলেশনের পর এই মাস্টারমশাইয়ের হাত থেকে রেহাই পেলেও দীর্ঘদিন ধরে সেই জয় সুকুমারকে তাড়া করে ফিরত। পরবর্তীকালে বাংলার অধ্যাপক লেখক সুকুমার একটি অনামি পত্রিকায় মাস্টারমশাইকে নিয়ে তার বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার স্মৃতিকথা লিখেছিলেন।
আত্মসমালোচকঃ সুকুমার চরিত্রের সবথেকে বড়ো বৈশিষ্ট্য হল তার আত্মবিশ্লেষণ। তিনি যে মাঝারি মাপের লেখক, তার বক্তৃতা যে আবেগসর্বস্ব, অন্তঃসারশূন্য, অত প্রশংসা যে তার প্রাপ্য নয় সবটাই তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন।
শ্রদ্ধাশীলঃ বহু বছর পর তার স্কুলজীবনের বিভীষিকা অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে দেখা হতেই তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে কিন্তু সুকুমারের এতটুকু দেরি হয়নি। অঙ্কে মাস্টারমশাইয়ের পান্ডিত্যকেও সুকুমার মর্যাদার সঙ্গে স্বীকার করেছেন। তিনি মাস্টারমশাইকে ভয় পেয়েছেন, কিন্তু অশ্রদ্ধা করেননি।
সংবেদনশীলঃ সুকুমারের পরিপত মন বুঝেছে যে, এতদিন তিনি শুধু মাস্টারমশাইয়ের শাসনের ভীতিকেই উপলব্ধি করেছিলেন, তাঁর স্নেহের ফল্পধারাকে অনুভব করতে পারেননি। যে স্নেহ-মমতা-মার মহাসমুদ্র মাস্টারমশাইয়ের স্মৃতিকে তিনি দশ টাকায় বিক্রি করেছেন, সেই মানুষটির অমূল্য স্নেহ তার মাথায় ঝরে পড়েছে—এই ভেবে সুকুমার আত্মগ্লানিতে জর্জরিত হন।
প্রশ্নঃ 'দাম' ছোট গল্পটি অবলম্বনে মাস্টারমশাইয়ের চরিত্র বর্ণনা করো।
উত্তরঃ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' একটি অসাধারণ ছোটোগল্প। গল্পটিতে মাস্টারমশাই এক অসামান্য চরিত্র।
দক্ষ গণিতবিদঃ গায়ের থেকে আসা স্কুলের মাস্টারমশাই ছিলেন অংকে অসাধারণ দক্ষ। যেকোনো জটিল অংকই তিনি একবারমাত্র দেখে তক্ষুনি অনায়াসে সমাধান করে ফেলতে পারতেন।
আবেগময়তাঃ মাস্টারমশাই বিশ্বাস করতেন ভালোবাসা থেকে প্রতিটি ছাত্রের তার কর্তব্যের মাধ্যমে ছাত্রদের মধ্যে আরো প্রীতি ভালোবাসা জাগিয়ে তোলা। এই আবেগের কারণেই ছাত্ররা অংক না পারলে তার এক হাত থেকে চড় নেমে আসত তাদের পিঠে। এই জন্যই মাস্টারমশাই ছাত্রদের কাছে মুর্তিমান বিভীষিকা হয়ে উঠেছিলেন।
উদারমনাঃ ছাত্র সুকুমারের বাল্য জীবনীতে লেখা সমালোচনাকে তিনি উদারমনে সন্তানের অধিকার বলেই গ্রহণ করেছিলেন। ছাত্র তাকে মনে রেখেছে—এইটুকুই বৃদ্ধ মাস্টারমশাইয়ের কাছে সবথেকে বড়ো পাওয়া হয়ে উঠেছে।
সারকথাঃ মাস্টারমশাই যেটা উপনা করতে পারেননি, সেটা হল সব বিষয় সকলের প্রিয় না-ও হতে পারে এবং ভীতি কোনো বিষয়ক ভালোবাসতে শেখায় না। বরং তার থেকে আরও দূরে সরিয়ে দেয়। মাস্টারমশাইয়ের শিক্ষাপদ্ধতির এই ত্রুটির জন্য ছাত্ররা তাকে ভুল বুঝত। আসলে কিন্তু তিনি ছিলেন একজন আদর্শ, কর্তব্যপরায়ণ এবং ছাত্ররাদরদি শিক্ষক। তার ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে সুকুমারের দেওয়া সব আঘাত তাঁর গায়ে ছাত্রের শ্রদ্ধার ফুল হয়ে ঝরে পড়েছিল।
লেখক কী পাস করাবার স্বপ্ন দেখেছেন
উত্তরমুছুন