মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন ২০২৪ – কোনি (সহায়ক পাঠ) মতি নন্দী
Type Here to Get Search Results !

মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন ২০২৪ – কোনি (সহায়ক পাঠ) মতি নন্দী

মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন ২০২৪ – কোনি (সহায়ক পাঠ) মতি নন্দী 

madhyamik bengali suggestion 2024 wbbse part 11


কোনি
মতি নন্দী


    (১) রচনাধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :

    প্রশ্নঃ 'আপনি নিজের শরীরটাকে চাকর বানাতে পারবেন না' - বক্তা উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে এমন কথা বলেছেন কেন? শরীরটাকে চাকর বানানো বলতে তিনি কী বুঝিয়েছেন?

    উত্তরঃ মতি নন্দীর লেখা 'কোনি' উপন্যাসে ক্ষিতীশ, বিষ্টুচরণ ধরকে এমন কথা বলেছেন। কারণ ক্ষিতীশ বয়সে পঞ্চাশোর্ধ্ব হওয়া সত্ত্বেও ব্যায়াম ও সংযমের মাধ্যমে নিজের শরীরকে সক্ষম রেখেছেন। তিনি এখনও দৌড়োতে পারেন, সিঁড়ি দিয়ে স্বচ্ছন্দে ওঠা নামা করতে পারেন, এমনকি নিজের ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে শরীরের কোনো অঙ্গকে অনড় করে রাখতে পারেন। উলটোদিকে, বিষ্টুচরণ অগাধ অর্থের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও স্বাস্থ্যসচেতন না হওয়ার কারণে দৈহিকভাবে দুর্বল। অপরিমিত খাদ্যাভ্যাস তার দেহের ওজন বাড়িয়েছে , কিন্তু তার মনের জোর কমিয়ে দিয়েছে । কারণ শরীর আসলে তার মনের কথা শোনে না। বানানো শরীরটাকে চাকর বানানোর অর্থ হল, মনের নির্দেশে শরীরের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রিত হওয়া। ক্ষিতীশের মতে, লোহা চিবিয়ে খেয়েও যদি পাকস্থলীকে মন হজম করার আদেশ দেয়, তবে সে তাই করবে। মন যদি পাকে পাঁচ মাইল হাঁটার নির্দেশ দেয়, পা জোড়া অমনি পৌঁছে দেবে। বয়স হলেও গাছের ডাল ধরে ঝুলে থাকার শখ হলে, হাত দুটো সে হুকুম তালিম করবে। শরীরটাকে চাকর বানানো বলতে ক্ষিতীশ শরীরের ওপর মনের এই আশ্চর্য নিয়ন্ত্রণকেই বুঝিয়েছেন।

    প্রশ্নঃ 'আর একটা দরজির দোকান ঠিক করেছি। দিনে প্রায় হাপ কেজি মাল হয়।' – কে, কেন দর্জির দোকান ঠিক করেছিল? এই সমস্ত কিছুর কারণ কী? 

    উত্তরঃ ক্ষিতীশের হিতাকাঙ্ক্ষী ভেলো তাঁকে দর্জির দোকান ঠিক করে দিয়েছিল। সেখান থেকে কাপড় এনে সমান মাপ করে কেটে লন্ড্রিগুলোতে বিক্রি করতেন ক্ষিতীশ। এগুলোতে নম্বর লিখে জামাকাপড়ে বেঁধে কাচতে পাঠাবার জন্য, লন্ড্রিতে এর চাহিদা বেশ ভালো। কোনির প্রয়োজনে ক্ষিতীশকে আরও অর্থ রোজগারের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে ভেলো আরও একটা দর্জির দোকানের খবর এনেছিল। কোনির মতো হতদরিদ্র মেয়েকে চ্যাম্পিয়ন বানানোর জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তা ক্ষিতীশের পক্ষে জোগান দেওয়া সম্ভব ছিল না। দরিদ্র পরিবারের মেয়ে কোনির শরীরে অপুষ্টির ছাপ স্পষ্ট। সাঁতারের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি যেসব খাদ্য থেকে আসে তার কারণ জোগান দেওয়া পরিবারের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই সব দায়িত্বই ক্ষিতীশকে নিতে হয়েছিল। তাই তাকে বিকল্প আয়ের পথ খুঁজতে হয়। 

      ক্ষিতীশ শুধু এখানেই থেমে থাকেনি, ছিট কাপড় কাটার কাজে কোনির মাকেও যুক্ত করে সাংসারিক অভাবমোচনের চেষ্টা করেছিলেন; এমনকি কোনিকেও তিনি স্ত্রী লীলাবতীর কাছে চল্লিশ টাকা মাইনের কাজ জুটিয়ে দিয়েছিলেন। ক্ষিতীশ জানতেন পরিবারের অন্যরা অভুক্ত থাকলে কোনি সাঁতারে মনোনিবেশ করতে পারবে না। এসবের মধ্য দিয়ে আমরা ক্ষিতীশকে এক মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ হিসেবে প্রতিভাত হতে দেখি।

    প্রশ্নঃ 'প্রথমদিকে লীলাবতী বিদ্রোহী হয়েছিল।' - লীলাবতীর চরিত্রের পরিচয় দাও। তার বিদ্রোহী হওয়ার কারণ কী?

    উত্তরঃ মতি নন্দীর 'কোনি' উপন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হল লীলাবতী। স্বল্পভাষী, কর্মপটু, বাস্তববাদী ও প্রখর ব্যক্তিত্বময়ী এই মহিলাই যেন; কোনি এবং ক্ষিতীশকে ধারণ করে রেখেছে। সে ক্ষিতীশের স্ত্রী হলেও কখনোই ক্ষিতীশের ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায়নি। তাই লীলাবতীর চরিত্র দোকানের বেহাল অবস্থায় সেটিকে ক্ষিতীশের হাত থেকে উদ্ধার করে সে চার বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কোনির প্রতি ক্ষিতীশের দায়দায়িত্বের বহর দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেনি । বরং স্বামীকে সেলামির প্রসঙ্গে ব্যয়সংকোচের কথা সে মনে করিয়ে দিয়েছে। খাবারের ব্যাপারে স্বামীর নির্দেশ মুখ বুজে সহ্য করে নিয়েছে। আবার কোনিকে খাওয়ার শর্তে দোকানে কাজ করতে দিয়েছে, যদিও এজন্য সে বেতনও দিয়েছে। কিন্তু কাজে দেরি হলে কোনিকে যেমন 'বেরিয়ে যাও' শুনতে হয়েছে, তেমন সাঁতারে জিতলেই মিলেছে ফ্রক কিংবা সিল্কের শাড়ির প্রতিশ্রুতি। লীলাবতীও লুকিয়ে কোনির সাঁতার দেখতে গেছে আর পেছনে থেকে কোনির সাফল্যের জন্য সাধ্যমতো সাহায্য ও সমর্থন জুগিয়ে গেছে। লীলাবতী চরিত্রটির এই নিজস্বতা পাঠককে মুগ্ধ করে।

         ক্ষিতীশ বিশ্বাস করেন বাঙালিয়ানা রান্নায় স্বাস্থ্য চলে না। ওতে পেটের চরম সর্বনাশ হয়। তিনি প্রায় সবই সেদ্ধ খাওয়ায় বিশ্বাসী। কারণ সেদ্ধ খাবারেই খাদ্যপ্রাণ অটুট থাকে এবং সর্বাধিক প্রোটিন ও ভিটামিন পাওয়া যায়। তাই লীলাবতী প্রথমদিকে সরষে বাটা, শুকনো লঙ্কা বাটা, জিরে ধনে পাঁচফোড়ন প্রভৃতি বস্তুগুলি রান্নায় ব্যাবহারের সুযোগ না পেয়ে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল।

    প্রশ্নঃ 'মা গঙ্গাকে উচ্ছৃন্নো করা আমই রাস্তায় বসে বেচবে' - প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

    উত্তরঃ মতি নন্দী রচিত 'কোনি' উপন্যাসের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে গঙ্গার ঘাটে স্নানরত এক বৃদ্ধের মুখে এই উক্তি শুনতে পাওয়া যায়। বারুণী উৎসবে মা গঙ্গাকে যে কাঁচা আম উৎসর্গ করা হয়ে থাকে, নিম্নবিত্ত পরিবারের কিছু ছোটো ছেলে সেগুলি সংগ্রহ করে ও কম দামে বাজারে বিক্রি করে। আম সংগ্রহ করা নিয়ে তাদের মধ্যে ছোটোখাটো গণ্ডগোলও বেধে থাকে। এমনই এক পটভূমিকায় কোনিকে প্রথম দেখেছিল ক্ষিতীশ। কোনি এবং তার বন্ধুদের বিবাদ লক্ষ করেই বৃদ্ধের এই উক্তি। গঙ্গায় স্নানরত বৃদ্ধের উক্তির মধ্যে দুই ধরনের মানসিকতা লক্ষ করা যায়।

      প্রথমত, বর্ণ হিন্দু অভিজাত দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনি সহ নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানদের নীচু দৃষ্টিতে দেখা হয়।

      দ্বিতীয়ত, কোনি মেয়ে হয়ে অন্য ছেলেদের সঙ্গে মারামারি করে বেড়াচ্ছে দেখে তাৎপর্য পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ভৎসনার সুর ধ্বনিত হয়েছে। এই দুই ক্ষেত্রেই সামাজিক সংস্কার বৃদ্ধের মনে বড়ো হয়ে দেখা দিয়েছে। লেখক বৃদ্ধের মুখে এই উক্তিটুকু বসিয়ে সমকালীন সামাজিক পরিস্থিতির একটা হদিস দিতে চেয়েছেন। অন্যদিকে, হিন্দুধর্মে দেবী বলে পুঁজিতা গঙ্গাকে উৎসর্গ করা আম পুনরায় বিক্রি করার মধ্যে হিন্দুধর্মের পাপপুণ্যের যে ধারণা রয়েছে, তাকেও এখানে তুলে ধরা হয়েছে।

    প্রশ্নঃ  'তোর আসল লজ্জা জলে, আসল গর্বও জলে' - কোনির কোন কথার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা বলা হয়েছে? তার আসল লজ্জা ও আসল গর্ব জলে বলার কারণ কী?

    উত্তরঃ ক্ষিতীশ ও কোনিকে প্রশিক্ষক আর সাঁতারু হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে নানান প্রতিবন্ধকতা ও তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। ধীরেন ঘোষ, বদু চাটুজ্জে, অমিয়া, হরিচরণরা কখনও কোনিকে ক্লাবে ভরতি না করে, কখনও সাঁতারের পুলে তাকে ডিসকোয়ালিফাই করে, কখনও – বা প্রথম হওয়া সত্ত্বেও জোর করে তাকে প্রশ্নোধৃত বক্তব্যের দ্বিতীয় বলে ঘোষণা করে বিপর্যস্ত করে দিতে পরিপ্রেক্ষিত চেয়েছে। আসল কথা ক্ষিতীশ ও কোনিকে ক্রীড়াক্ষেত্রে হারাতে না পেরে তাদের মানসিকভাবে দুর্বল করতে চেয়েছে। এমনকি ক্ষিতীশের স্ত্রী লীলাবতীর দোকানে অমিয়া ব্লাউজ করতে এসে, কোনিকে 'ঝি' বলে সম্বোধন করে তার মনোবল ভাঙতে চেয়েছে। অমিয়ার কথায় ক্ষুব্ধ কোনি ক্ষিতীশের কাছে তার লজ্জা অপমানের কাহিনি শোনালে, তিনি কোনির উদ্দেশ্যে উপরোক্ত মন্তব্যটি করেন।

        অমিয়ার ব্যঙ্গোক্তিতে কোনি আঘাত পাওয়ায় ক্ষিতীশ তাকে উদ্দেশ্য করে উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেন। কোনির সবচেয়ে বড়ো পরিচয় সে একজন সাঁতারু। একজন সাঁতারুর আসল লজ্জা যখন সে প্রতিযোগিতায় পরাজিত হবে আর গর্ব হল যখন সে জয়লাভ করবে। ব্যক্তিগত আক্রমণ ও অপমান একজন সাঁতারুকে কখনও পরাজিত করতে পারে না। ক্ষিতীশ এ কথাই বলতে চেয়েছেন।

    প্রশ্নঃ হিয়া মিত্রের চরিত্র আলোচনা করো।

    উত্তরঃ হিয়া মিত্র অভিজাত বিত্তবান পরিবারের সন্তান। কোনির মতো দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার চ্যালেও তাকে নিতে হয়নি। বালিগঞ্জ সুইমিং ক্লাবের পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রণবেন্দু বিশ্বাসের মতো কোচ পেতে তাকে কোনো লড়াই জিততে হয়নি।

        বিত্তবান পরিবারের মেয়ে হলেও হিয়া মাটিতে পা রেখে চলতে জানে। অমিয়ার মতো তাকে কখনও অপমানজনক মন্তব্য করতে শোনা যায় না। মজা করে বেলার ক্রিমের কৌটো থেকে ক্রিম নিয়ে নিজে মেখে কোনির গালে লাগিয়ে দিতে হিয়ার এতটুকু দ্বিধা নেই। এই সহজসরল ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোনির কাছে তাকে চড়ও খেতে হয়। ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে রিলে রেসে অমিয়ার পরিবর্ত হিসেবে। কোনিকে ডাকতে ছুটে আসে হিয়া।

         গোটা উপন্যাসে খেলোয়াড়সুলত তার মুখে কোনির বিরুদ্ধে কেবল দুটি কথা শোনা যায়। প্রথম, অত হিংসে ভাল নয় এবং দ্বিতীয় যখন কোনি রিলে নামতে রাজি হয় না তখন 'কোনি তুমি আনস্পোর্টিং'। হিয়া ছিল কোনির দুর্বলতা। হিয়াকে পরাজিত করার উদ্দেশ্যেই যেন কোনির সাফল্যের সূত্রপাত। তাই কোনির উত্থানের পিছনে হিয়া মিত্রের পরোক্ষ অবদানও অস্বীকার করা যায় না।

    প্রশ্নঃ ক্ষিতীশ কখনো যজ্ঞিবাড়ির নিমন্ত্রণে যায় না ক্ষিতীশ যজ্ঞিবাড়ির নিমন্ত্রণে যায় না কেন? বাঙালির খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে ক্ষিতীশের মনোভাব ব্যাখ্যা করো।

    উত্তরঃ ক্ষিতীশ নিজের শারীরিক সক্ষমতা ও সুস্থতা বজায় রাখার ব্যাপারে অত্যন্ত যত্নবান ছিলেন। বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করে তিনি। ক্ষিতীশের যজ্ঞিবাড়ির পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সেও নিজেকে সুস্থ সবল নিমন্ত্রণে না যাওয়ার রেখেছিলেন। তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল কারণ সংযত জীবনযাত্রা। তাই খাদ্যাভ্যাসের ক্ষেত্রেও তাঁর এই সংযম ছিল লক্ষণীয়। তাঁর মতে, পরম শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব ডক্টর বিধানচন্দ্র রায় বলে গিয়েছিলেন যে, এক একটা বিয়েবাড়ির নিমন্ত্রণ খাওয়া মানে এক এক বছরের আয়ু কমে যাওয়া। এই কথাটিকেই ক্ষিতীশ সবচেয়ে খাঁটি কথা বলে মনে করতেন। তাঁর ক্লাবে সাঁতার শিখতে আসা ছাত্রছাত্রীদেরও তিনি একথা বারবার মনে করিয়ে দিতেন। তাঁর মতে, 'শরীরের নাম মহাশয়, যা সহাবে তাই সয়।' তাই তিনি সন্ত্ৰীক সেদ্ধ খেয়েই জীবনধারণ করতেন এবং কখনোই যজ্ঞিবাড়ির নিমন্ত্রণে যেতেন না।

        ক্ষিতীশের ধারণা ছিল, বাঙালি রান্নার তেল–ঝাল–মশলায় স্বাস্থ্য সংরক্ষিত থাকে না। এতে পেটের ক্ষতি করে। সেইজন্যই বাঙালিরা শরীরে জোর পায় না, কোনো খেলাতেই বেশি উঁচুতে উঠতে পারে না। এমন খাদ্য খাওয়া উচিত যাতে সর্বাধিক প্রোটিন ও ভিটামিন পাওয়া যায়। তাই ক্ষিতীশ সমস্ত সেদ্ধ করে খাওয়া মনস্থ করেছিলেন।

    প্রশ্নঃ 'এভাবে মেডেল জেতায় কোনো আনন্দ নেই' – বক্তা কে? তার এমন কথা বলার কারণ কী ছিল?

    উত্তরঃ উদ্ধৃত উক্তিটির বস্তা হলেন কোনির অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিয়া বক্তার পরিচয় মিত্রের বাবা। নিজের মেয়ে মেডেল জিতলেও কোনির বিরুদ্ধে যেভাবে চক্রান্ত হয়েছিল তা তিনি মেনে নিতে পারেননি। জুপিটারের একসময়ের চিফ ট্রেনার ক্ষিতীশ ও তারই হাতে গড়া অন্যতম সাঁতারু কোনি ছিল জুপিটারের একটি গোষ্ঠীর চক্রান্তের শিকার। এই গোষ্ঠীর চক্রান্তেই স্টেট চ্যাম্পিয়নশিপে দু বার বক্তার উদ্দিষ্ট কথা ডিসকোয়ালিফাই এবং একবার প্রথম হয়েও দ্বিতীয় স্থান গ্রহণ করতে হয় কোনিকে। ব্রেস্ট স্ট্রোকের একশো মিটারে কোনির প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল হিয়া মিত্র। সেখানে টাইমকিপার বদু চাটুজ্জে কোনিকে মিথ্যা অজুহাতে ফ্ল্যাগ নেড়ে ডিসকোয়ালিফাই করেন। এরপর ফ্রি স্টাইলে কোনি সাঁতার শেষ করে ফিনিশিং বোর্ড ছুঁয়ে মুখ ঘুরিয়ে দেখে অমিয়া এসে ফিনিশিং বোর্ড ছুঁল অথচ নাম ঘোষণার সময় প্রথম হিসেবে অমিয়ার নাম ঘোষিত হয়। এক্ষেত্রে ক্ষিতীশ প্রতিবাদ করলেও তা গ্রাহ্য হয়নি। দুশো মিটার ব্যক্তিগত মেডলি ইভেন্টে কোনিকে বাটারফ্লাইতে, যজ্ঞেশ্বর ভট্টাচার্য আগে থেকেই ফ্ল্যাগ তুলে প্রায় ডিসকোয়ালিফাই করে রেখেছিল। সেদিন সাঁতারের পুলে এই নির্লজ্জতাগুলো সকলের মতো হিয়ার বাবাকেও ছুঁয়ে গিয়েছিল। আর সেজন্যই মেয়ে মেডেল পেলেও সেই জয় তিনি মেনে নিতে না পেরে উপরোক্ত মন্তব্যটি করেছেন।

    প্রশ্নঃ কোনি চরিত্রটি আলোচনা করো।

    উত্তরঃ যে চরিত্রের নামানুসারে 'কোনি' উপন্যাসের নামকরণ, সেটিই যে উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হবে, তা বলাই বাহুল্য। শ্যামপুকুর বস্তির এই ডানপিটে স্বভাবের মেয়েটির সাফল্যের শিখর ছোঁয়ার কাহিনির মধ্যে দিয়ে। তার চরিত্রের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পাঠকের সামনে স্পষ্ট হয়ে যায়। গল্পের শুরুতে গঙ্গায় আম কুড়োনো থেকে শুরু করে, ক্লাইম্যাক্সে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপের সুইমিংপুলে সর্বত্রই লড়াকু কোনির লড়াকু মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়।

        শুধু সাঁতারের ক্ষেত্রে নয়, জীবনযুদ্ধের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সে নির্ভীকভাবে লড়াই চালায় প্রতিপক্ষ আর প্রতিকূলতার সঙ্গে। দারিদ্র্য, খিদে, কায়িক শ্রম যে কোনো কষ্টকেই কোনি দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নেয়। তার শিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহও কষ্টসহিষু তাকে সেই শিক্ষাই দেন।

        তার এই কষ্টসহিষ্ণুতা আর অধ্যবসায়ই শেষপর্যন্ত তাকে সাফল্য এনে দেয়। জীবনে বারবার প্রতিকূলতার সম্মুখীন হলেও কখনোই ভেঙে পড়ে না কোনি। সমস্ত দুর্ভাগ্য, প্রতিবন্ধকতা, অপমান আর চক্রান্তের দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করে সে। তার জেদ আর দৃঢ় মনোভাবের দৃঢ়চেতা মধ্যে ক্ষিতীশ সিংহ খুঁজে পান লুকিয়ে থাকা চ্যাম্পিয়নকে। হিয়া কোনিকে 'আনস্পোর্টিং' বললেও সমগ্র উপন্যাস জুড়েই আমরা তার খেলোয়াড়সুলভ মনোভাবেরই পরিচয় পাই। শেষপর্যন্ত হিয়ার 'আনস্পোর্টিং' অপবাদের জবাবও খেলোয়াড়সুলভ সে খেলোয়াড়সুলভ ভাবেই দেয়। তাই সব মিলিয়ে কোনি হয়ে ওঠে জীবনযুদ্ধের এক নির্ভীক সৈনিক।


    প্রশ্নঃ 'কী আবার হবে, ছেড়ে দিলুম ' - বক্তা এখানে কী ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছেন? এর অন্তর্নিহিত কারণ বিশ্লেষণ করো।

    উত্তরঃ উদ্ধৃতিটির বক্তা ক্ষিতীশ। তিনি ছিলেন জুপিটার ক্লাবের সাঁতারের চিফ ট্রেনার। ক্লাবের সভায় তাঁর বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ এনে তাঁকে অপমান করায় তিনি ওই পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন।

          ক্ষিতীশের জুপিটারের চিফ ট্রেনার পদ ছেড়ে দেওয়ার একটি কারণ যদি হয় খেলোয়াড়দের সঙ্গে বনিবনার অভাব তবে অন্যটি অবশ্যই। কলকাতার ক্রীড়াজগতের ঘৃণ্য ক্রীড়ারাজনীতি। এক্ষেত্রে হরিচরণের চিফ ট্রেনার হওয়ার মরিয়া প্রচেষ্টা পরিস্থিতিকে ক্ষিতীশের বিপক্ষে নিয়ে যায়। জুপিটারের সঙ্গে ক্ষিতীশের ছিল নাড়ির টান। তিনি চাইতেন জুপিটার হোক ভারতসেরা আর তার জন্য খেলোয়াড়দের মধ্যে তিনি একটা জেদি মনোভাব গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। কেননা তিনি বিশ্বাস করতেন ইচ্ছাশক্তি ও প্রচেষ্টার জোরে মানুষ সব অর্জন করতে পারে। শৃঙ্খলাপরায়ণ, আদর্শবান ও দৃঢ়চেতা ক্ষিতীশ খেলোয়াড়দের জীবনে শৈথিল্য পছন্দ করতেন না। কিন্তু ক্লাব নিয়ে ক্ষিতীশের অনুভূতির সঙ্গে ক্লাব সদস্য ও খেলোয়াড়দের অনুভূতির পার্থক্য গড়ে উঠেছিল বিস্তর, তাই ক্ষিতীশ একপ্রকার বাধ্য হয়েই ইস্তফা দিয়েছিলেন।

    প্রশ্নঃ 'তবে একবার কখনো যদি জলে পাই' – কোন্ প্রসঙ্গে কার এই উক্তি? এখানে 'জলে পাওয়া' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

    উত্তরঃ উদ্ধৃতিটির বস্তু কোনি ওরফে কনকচাপা পাল। জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য বাংলা থেকে যেসব মহিলা সাঁতারুরা গিয়েছিল তার মধ্যে ছিল কোনি। দলের অন্য মেয়েদের সঙ্গে কোনির সম্ভাব ছিল না। তারা কোনিকে ভয় পেয়েছিল, তাই সাঁতারের বাইরে কোনিকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে মানসিকভাবে দুর্বল করে দিতে চেয়েছিল। বেলা, অমিয়া, হিয়ারা তাকে পরোক্ষে চোর অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করে। বড়োলোকের মেয়ে হিয়া বেলার ক্রিম নিয়ে মেখে অবশিষ্টটুকু কোনির গালে মাখিয়ে দেয়। বেলা ক্রিম কম দেখে কোনিকে সন্দেহ করে। তার গালে ক্রিমের গন্ধ আবিষ্কার করে অমিয়া। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে কোনো কিছু শোনার আগেই বেলা কোনিকে চড় কষিয়ে দেয়। এরপর হিয়া সত্যটা বলতে সকলে শান্ত হয়। সেইসময় কোনি হিয়ার জন্য অপমানিত হয়েছে। বলে তার গালে চড় কষিয়ে দিয়ে জানায়, সে বস্তির মেয়ে, হিয়ার মতো অভিজাতের সঙ্গে তার তুলনা চলে না। তবে যদি সে হিয়াকে কোনোদিন জলে পায় এই পার্থক্য ঘুচিয়ে দেবে। কোনির একমাত্র সম্বল তার প্রতিভা আর আত্মবিশ্বাস। হিয়াকে সে অন্য কোনোদিকে পরাজিত করতে না পারলেও 'ছলে পাওয়া' – মূল অর্থ সাঁতারে পারবেই - এই আত্মবিশ্বাস তার ছিল। ক্ষিতীশের কথামতো তার লজ্জা ও শরম যে জলেই সে কথা মনে রেখেই কোনি, হিয়ার দিকে এই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল।

    প্রশ্নঃ কোনির পারিবারিক জীবনের পরিচয় দাও।

    উত্তরঃ কোনি উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র 'কোনি' ওরফে কনকচাপা পাল সাত ভাই, বোন ও মা সহ শ্যামপুকুর বস্তির এঁদোগলিতে বাস করে। বাবা যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে কিছুদিন আগেই মারা গেছে। মেজো ভাইও মারা গেছে। সেজো ভাই পিসিমার বাড়িতে থাকে। কোনির পরও দু বোন ও এক ভাই আছে। পরিবারে বড়ো হিসেবে সংসারের দায়িত্ব কোনির দাদা কমলের ওপর। ভালো সাঁতারু হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার, কিন্তু সে আশা অচিরেই হারিয়ে গেছে। বাবার মৃত্যুর পর সে এখন মোটর গ্যারেজের দেড়শো টাকা মাইনের কর্মচারী। সম্প্রতি সংসারের প্রয়োজনে এক ভাইকে কমল পনেরো টাকা মাইনেতে চায়ের দোকানে কাজে লাগিয়েছে। সাংসারিক অভাব সামাল দেওয়ার জন্য কোনিকেও সুতো কারখানায় ষাট টাকা মাইনেতে কাজে লাগাবার কথা ওঠে। বারুণী উৎসবের উৎসর্গীকৃত আম সংগ্রহের জন্য কোনিদের সংগ্রাম আসলে তাদের প্রকৃত জীবনসংগ্রামকেই তুলে ধরেছে। পরবর্তীতে ক্ষিতীশ কোনির সব দায়িত্ব সহ সাঁতার শেখানোর ভার নেন এবং তার মাকেও একটা কাজ জোগাড় করে দেন।

    প্রশ্নঃ 'ক্ষিতীশ এইসব অপচয় দেখে বিরক্তি বোধ করে।' - এখানে 'এইসব অপচয়' বলতে কী বোঝানো হয়েছে? বিরক্তি বোধ করার মধ্যে ক্ষিতীশের কোন মানসিকতার পরিচয় ফুটে ওঠে।

    উত্তরঃ 'এইসব অপচয়' বলতে 'কোনি' উপন্যাসে জুপিটার ক্লাবের চিফ ট্রেনার ক্ষিতীশ মানুষের শক্তি বা সামর্থ্যের অপচয়ের কথা বলেছেন। তাঁর মতে চিরাচরিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এইসব অপচয় ক্রীড়াক্ষেত্রের বাইরে যেসব প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, তাতে মানুষের সহ্যশক্তি ও একগুঁয়েমির পরীক্ষা হয় আর সবশেষে থাকে যশের মোহ। এতে খেলাধুলোর কোনো উন্নতি হয় না। শক্তির অপব্যবহার হয় বলেই ক্ষিতীশ এই অনুষ্ঠানগুলিকে 'অপচয়' বলেছেন।

         ক্ষিতীশের মানসিকতা 'বিরক্তি বোধ' করার মধ্যে দিয়ে ক্ষিতীশের দেশের প্রতি আন্তরিকতা ও চিরাচরিত খেলার প্রতি আস্থা প্রকাশিত হয়েছে। ক্ষিতীশের মতে, যে শক্তি বা সামর্থ্যকে কাজে লাগিয়ে খেলাধুলোয় দেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা যেতে পারে, নিজের শারীরিক সক্ষমতা বাড়ানো যেতে পারে, সেই শক্তিকে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত রেকর্ড ও গৌরববৃদ্ধির জন্য ব্যয় করা অপব্যয়েরই নামান্তর। তাঁর মতে, একজন আদর্শ ক্রীড়াবিদ শৃঙ্খলাবদ্ধ ট্রেনিং, বুদ্ধি ও টেকনিককে কাজে লাগিয়ে নিজের সঙ্গে সঙ্গে দেশের গৌরব বৃদ্ধি করবে এটাই কাম্য। একটানা কুড়ি ঘণ্টা হাঁটা বা নব্বই ঘণ্টা একনাগাড়ে সাঁতার কেটে বিশ্বরেকর্ড গড়ার প্রয়াস আসলে পেশিশক্তির আস্ফালন মাত্র, এতে মানুষের শক্তির অপব্যবহারই হয়।

    প্রশ্নঃ 'এই মুহূর্তে সে বুঝল তার মাথা থেকে মুকুট তুলে নিয়েছে হিয়া' - কার কথা বলা হয়েছে? সে কীভাবে এই উপলব্ধিতে উপনীত হল তা বুঝিয়ে দাও।

    উত্তরঃ 'কোনি' উপন্যাসের উদ্ধৃতাংশে 'সে' বলতে বাংলার চ্যাম্পিয়ন সাঁতারু অমিয়াকে বোঝানো হয়েছে।

          অমিয়া ছিল বাংলার সেরা সাঁতারুদের মধ্যে অন্যতম। অল্প বয়সে অধিক সাফল্যের কারণে তার মধ্যে দেখা দিয়েছিল ঔদ্ধতা ও অহংকার; সেইসঙ্গে তার চারপাশে জুটেছিল চাটুকার। সে এতটাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েছিল যে, নিজেকে সর্বকালীন সেরা সাঁতারু ভাবতে শুরু করে। কিন্তু বাংলার সাঁতারে হিয়া মিত্রের উত্থান তাকে ধীরে ধীরে বেকায়দায় ফেলতে থাকে। অমিয়ার পায়ের তলার মাটি যে সরে গেছে তা সে বুঝতে পারে মাদ্রাজে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপের ক্যাম্পে। তখন তার চাটুকাররাও আর তার পাশে থাকে না। তাই সেদিন অমিয়া, হিয়ার ট্রানজিস্টারে জোরে হিন্দি গান শোনার প্রতিবাদ করলে উত্তরে তাকে শুনতে হয় 'আপনি চেঁচাবেন না'। এভাবেই তার প্রতিদ্বন্দ্বী কোনি ও তার পুরোনো কোচ ক্ষিতীশের প্রতি তাচ্ছিল্য, অনীহা এবং বিরক্তি প্রকাশ এবং নিজের হারানো সম্মান উদ্ধারে ব্যর্থ হওয়া অমিয়া ধীরে ধীরে একজন রক্তমাংসের চরিত্র হয়ে ওঠে।

    প্রশ্নঃ 'কোনি' ও 'ক্ষিতীশ' - দুটি চরিত্রকেই 'কোনি' উপন্যাসের প্রধান চরিত্র বলা যায় কিনা আলোচনা করো।

    উত্তরঃ মতি নন্দীর 'কোনি' উপন্যাসের নামকরণ কোনির নাম অনুযায়ী হলেও একথা অনস্বীকার্য যে, প্রধান বা কেন্দ্রীয় চরিত্র বলতে যা বোঝায়, তার উপাদান কোনি ও ক্ষিতীশ উভয়ের মধ্যেই রয়েছে। ক্ষিতীশ একজন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া সাঁতার প্রশিক্ষক, যে ভাঙে তবু মচকায় না। 'হেরে যাওয়া' বা 'হাল ছাড়া' শব্দবন্ধটি ক্ষিতীশের অভিধানে নেই। জুপিটার ক্লাবে পঁয়ত্রিশ বছর কাটানোর পরও যথাযোগ্য সম্মান বা সুযোগ্য শিষ্য কোনোটির খোঁজই তাঁর শেষ হয়নি। ছাত্রদের কাছে যে আত্মনিবেদন তিনি প্রত্যাশা করেন, তা জীবনের পঞ্চাশ ভাগ কাটিয়ে ফেলার পরেও তিনি পাননি। উলটোদিকে, কোনি একজন সাধারণ মেয়ে, যার মধ্যে ছিল ঔদ্ধত্য, একগুঁয়েমি ও প্রতিশোধস্পৃহা। এগুলি সাধারণের দৃষ্টিতে দোষ বলে বিবেচিত হলেও ক্ষিতীশের জহুরির চোখ তার ভিতরে লুকিয়ে থাকা চ্যাম্পিয়নকে চিনে নিতে ভুল করেনি। কাহিনি যতই এগোতে থাকে ক্রমশ কোনির উত্থান, ক্ষিতীশের শক্ত হাতে প্রশিক্ষণ, কোনির প্রতিশোধস্পৃহা, ক্ষিতীশের হৃত সম্মান পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া, ক্ষিতীশের ঘরের দেয়ালে টাঙানো অর্জুন ও তার সারথি কৃষ্ণের ছবির অন্তর্নিহিত অর্থটা ধীরে ধীরে পাঠকের সামনে স্পষ্ট করে তোলে। অবশেষে ক্ষিতীশের অব্যক্ত যন্ত্রণারূপে কোনির অস্তিত্বে মিশে যাওয়া আর গুরু শিষ্যের সাফল্য কাহিনিটিকে পরিপূর্ণতা দান করে।

    প্রশ্নঃ 'একটা মেয়ে পেয়েছি, তাকে শেখাবার সুযোগটুকু দিও তা হলেই হবে।' - বক্তার এমন আকুতির কারণ ব্যাখ্যা করো। উদ্ধৃতাংশে বক্তার কোন্ মনোভাবের প্রতিফলন ঘটেছে?

    উত্তরঃ মতি নন্দীর 'কোনি' উপন্যাস থেকে উদ্ধৃত অংশটির বক্তা জুপিটার ক্লাবের সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ পঁয়ত্রিশ বছরে জুপিটারের বস্তার আকৃতির কারণ কাছে প্রাপ্য সম্মান না পেলেও জুপিটারকে দিয়েছেন অনেক কিছু। কিন্তু চক্রান্ত করে তাঁকে চিফ ট্রেনারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষানবিশ সাঁতারুদের ক্ষোভকে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের হাতিয়াররূপে ব্যবহার করা হয়েছে। কাঠিন্যের আড়ালে তাঁর স্নেহশীল মনটা ছাত্ররা বুঝতে পারেনি। তাই ক্লাব অন্ত প্রাণ হয়েও জুপিটার থেকে তাঁকে সরে যেতে হয়। কিন্তু তাঁর আবিষ্কার কোনিকে সাঁতার শেখাতে গেলে চাই একটা সুইমিং পুল।

         ক্ষিতীশ তাই অ্যাপোলোর প্রেসিডেন্ট নকুল মুখার্জির শরণাপন্ন হন। শুরুতেই তিনি জানিয়ে রাখেন, তিনি অ্যাপোলোর লোক হবেন না। তবে কোনির সব সাফলা হবে অ্যাপোলোর। কোনিকে শেখানোর কোনো অর্থ চাই না চাই শুধু সুযোগ। উদ্ধৃতিটিতে ক্ষিতীশের যোগ্য সাঁতারু তৈরির উপযুক্ত সুযোগের জন্য আর্তি ফুটে উঠেছে। উদ্ধৃতাংশে বক্তার মনোভাব উদ্ধৃতাংশের মধ্যে আমরা খুঁজে পেয়েছি একজন যোগ্য শিক্ষককে, যিনি যোগ্য শিষ্যের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিতে পারেন। পরিবর্তে কোনো অর্থ বা খ্যাতি তাঁর কাছে কাম্য নয়। তবে উদ্ধৃতাংশে বক্তার মনোভাবে একজন প্রকৃত গুরুর জেদ ও সাঁতারের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসার ছবি ফুটে উঠেছে।

    প্রশ্নঃ 'ওই জলের নীচে লুকিয়ে ছিলুম।' - কোন্ প্রসঙ্গে বক্তা এমন মন্তব্য করেছেন? তার এই কথা বলার কারণ কী ছিল?

    উত্তরঃ আর্থিক অনটনের জন্য মাদ্রাজে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে যাওয়ার সময় ক্ষিতীশ কোনির সঙ্গে যেতে পারেননি। বিনা টিকিটে ট্রেনে করে মাদ্রাজ যেতে গিয়ে তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে লক আপে বন্দি থাকেন। অবশেষে কোনি যেদিন রিলেতে প্রসঙ্গের উল্লেখ নামার সুযোগ পেল সেদিনই ক্ষিতীশ মুক্তি পেয়ে সেখানে হাজির হন। তাঁকে দেখে কোনি দ্বিগুণ শান্তি পায় এবং অসামান্য দক্ষতায় বিজয়ীর শিরোপা অর্জন করে। প্রতিযোগিতা শেষে ক্ষিতীশের দেখা পেয়ে কোনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করে, 'কোথায় লুকিয়েছিলে তুমি?' উত্তরে ক্ষিতীশ উদ্ধৃত উক্তিটি করেছিলেন। গুরুর ভাবধারা শিষ্যের মধ্যে প্রবাহিত করাই হল শিক্ষাপ্রক্রিয়া - যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। ক্ষিতীশ তাঁর জীবনদর্শন দিয়ে কোনিকে গড়ে বক্তার প্রশ্নোত বক্তব্যের কারণ তুলেছিলেন। শারীরিক যন্ত্রণাকে অতিক্রম করে কীভাবে সাফল্যকে ছুঁতে হয় ক্ষিতীশ তা দিনের পর দিন কোনিকে শিখিয়েছেন। কোনির প্রতিদিনের জীবন চালিত হয়েছে ক্ষিতীশের নির্দেশিত পথে। ক্ষিতীশ তার কাছে শারীরিকভাবে উপস্থিত না থাকলেও উপস্থিত ছিলেন তার শিক্ষায়, জ্ঞানে, সিদ্ধান্তে। কোনির সবচেয়ে বড়ো অনুপ্রেরক তার দাদা কমল আর ক্ষিদা যেন কখন তার মনের মধ্যে মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছিল। ক্ষিতীশের সেই অমোঘ নির্দেশ 'ফাইট কোনি ফাইট' সর্বদাই কোনির সঙ্গে থাকত। এই পরিপ্রেক্ষিতেই ক্ষিতীশের উদ্ধৃত উদ্ভিটি।

    প্রশ্নঃ 'মেডেল তুচ্ছ ব্যাপার, কিন্তু একটা দেশ বা জাতির কাছে মেডেলের দাম অনেক, হিরোর দাম' – বক্তা কে? উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

    উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটির বক্তা হল সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ।

         বিস্টুচরণ ধরের বক্তৃতার ভাষ্য লিখতে গিয়ে ক্ষিতীশ বলেছিলেন যে, মেডেল একটি সামান্য চাকতি মাত্র। মেডেলের চেয়ে মেডেলের প্রাপ্তির পিছনে যে অক্লান্ত পরিশ্রম থাকে, তার দাম অনেক বেশি। কিন্তু একটা দেশ বা জাতির কাছে মেডেলের তাৎপর্য অনেক বেশি। কারণ এক একটি মেডেল আসলে এক একজন নায়ক বা 'হিরো'–র জন্ম দেয়। সেই হিরো সাঁতারু বা সেনাপতি, যেই হোন না কেন, দেশের নবীন প্রজন্মের কাছে তিনি একটি আদর্শের প্রতীক। সেনাপতি বা সাঁতারু একজন এমন আইকন, যাকে দেশবাসী মনেপ্রাণে অনুসরণ করে। কিন্তু তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। একজন সফল সাঁতারু, জীবন ও প্রাণের প্রতীক, কিন্তু একজন সেনাপতি, মৃত্যু ও ধ্বংসের প্রতীক। সাঁতারুর স্থান তাই সেনাপতির চেয়ে অনেক উপরে। যুদ্ধজয়ী সেনাপতি যেমন মানুষের সমীহ পায়, অন্যদিকে ঘৃণাও পায়। খেলোয়াড় বা সাঁতারুরা সারাপৃথিবীর কাছে কেবলমাত্র আদর্শ ও অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে জীবিত থাকে। একজন সাঁতারু কেবলই জীবনের উৎসবের জয়গানে ব্যাপৃত থাকে; সে শতসহস্র মানুষের জীবনসংগ্রামের হারতে হারতেও হেরে না যাওয়ার প্রতীক ও প্রেরণা। অন্যদিকে সেনাপতি এক অর্থে মৃত্যুশোকেরও ভগ্নদূত। এ কারণেই ক্ষিতীশ এমন মন্তব্য করেছেন।

    প্রশ্নঃ 'সব পারে, মানুষ সব পারে… ফাইট কোনি, ফাইট।' - উপরোক্ত উদ্ধৃতির আলোকে বক্তার চরিত্র আলোচনা করো।

    উত্তরঃ কোনি উপন্যাসে ক্ষিতীশ এক বিরল ব্যক্তিত্বের অধিকারী। ক্ষিতীশের মতে, চ্যাম্পিয়ন তৈরি করা যায় না, তাকে শুধু চিনে নিতে অভিজ্ঞ হয়। গঙ্গার ঘাটে কোনির লড়াকু সত্তাকে চিনে নিতে ভুল করেনি তাঁর অভিজ্ঞ চোখ। ঔদ্ধত্য বা প্রতিকূলতার কাছে এই দৃঢ়চেতা মানুষটি কোনোদিন মাথা নত করেননি। তাঁর বিরুদ্ধে যতই চক্রান্ত করা হোক না কেন তিনি নিজের লক্ষ্যে স্থির থেকে সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। কোনিকে চ্যাম্পিয়ন বানানোর জন্য ক্ষিতীশ কঠোর থেকে তার অনুশীলন, শরীরচর্চা, খাওয়াদাওয়া, এমনকি জীবনযাত্রার ধরনকে নিয়ন্ত্রণ অধ্যবসায়ী ও পরিশ্রমী করেছেন। তিনি কোনিকে শেখান, যন্ত্রণা আর সময় তার দুই শত্রু। যন্ত্রণাকে জয় করে চেষ্টা করলে 'মানুষ সব পারে'। তাই প্রতিনিয়ত তিনি কোনিকে উদ্বুদ্ধ করেছেন 'ফাইট কোনি, ফাইট' বলে। এই জন্যই ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন হয়ে কোনি যখন নিজের যন্ত্রণা ব্যক্ত করছিল তখন ক্ষিদা তাকে বলেছিলেন — 'ওইটেই তো আমি রে, যন্ত্রণাটাই তো আমি।' দৈহিকভাবে উপস্থিত না থেকেও ক্ষিতীশ কোনির জেতার প্রবল ইচ্ছে, জেতার জন্য মরিয়া প্রচেষ্টা, প্রচেষ্টার যন্ত্রণা সব কিছুর মধ্যেই ভীষণভাবে উপস্থিত ছিলেন।

    প্রশ্নঃ 'কম্পিটিশনে পড়লে মেয়েটা তো আমার পা ধোয়া জল খাবে।' - কোন প্রসঙ্গে কার এই উক্তি? এখানে বক্তার চরিত্রের কোন দিকটি প্রকাশিত হয়েছে?

    উত্তরঃ অ্যাপোলো ক্লাবের সুইমিংপুলে বিভিন্ন পদ্ধতিতে, নানারকম প্রসসহ বস্তার উপদেশ আদেশ দিয়ে কোনিকে সাঁতার শেখানোর চেষ্টা চালাতে থাকেন ক্ষিতীশ। এই প্রশিক্ষণ চলাকালীন তাঁকে নানাধরনের বাঙ্গোত্তি শুনতে হয়। অ্যাপোলোর দক্ষ সাঁতারু ও বেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন অমিয়া, ক্ষিতীশ ও কোনিকে অ্যাপোলোতে দেখে ও কোনির প্রশিক্ষণ লক্ষ করে, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ও উদ্ধৃত হয়েই কোনি সম্পর্কে উপরোক্ত উক্তিটি করেছিল।

        এই উক্তি থেকে অমিয়ার ঔদ্ধত্য ও অহংকার প্রকাশিত হয়। সে বেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন এবং তখনও পর্যন্ত বাংলা সাঁতারুদের মধ্যে অন্যতম। তবে সেরাদের শুধু আত্মবিশ্বাসী হলেই হয় না, মাটিতে পা রেখে চলাটাও অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু অমিয়া তা পারেনি। সাফল্যের চূড়ায় বসে সে চরম আত্মসন্তুষ্টিতে ভুগতে থাকে। এই ধরনের ব্যক্তিদের বক্তার চরিত্রের মধ্যে এক ধরনের নিশ্চিন্ত আত্মবিশ্বাস লক্ষ করা প্রকাশিত দিক যায়, যে আত্মবিশ্বাস আমরা অমিয়ার মধ্যেও দেখতে পাই। আসলে জীবনে কাউকে কখনও ছোটো করে দেখতে নেই। কারও দক্ষতা বিষয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে নেই। এই ভুলটাই করে ফেলেছিল অমিয়া। কোনি তার পা ধোয়া জল খাবে এমন উক্তি করে সে শুধু কোনিকেই অপমান করেনি, নিজেকেও খুব ক্ষুদ্র স্তরে নামিয়ে এনেছিল, যা তার অন্ধ অহংকারী ও সংকীর্ণ মনেরই পরিচায়ক।

    প্রশ্নঃ 'অবশেষে কোনি বাংলা সাঁতার দলে জায়গা পেল।' - কোনি কাভাবে বাংলা সাঁতার দলে জায়গা পেল তা সংক্ষেপে লেখো।

    উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটি মতি নন্দীর 'কোনি' উপন্যাস থেকে গৃহীত। বস্তির মেয়ে কোনির সাঁতার কাটার শুরু গঙ্গায়। সেখান থেকে বাংলা সাঁতার দলে জায়গা করে নেওয়ার পথটা তার জন্য নেহাত সাঁতার দলে জায়গা পাওয়ার প্রাথমিক ধাপ সহজ ছিল না। দারিদ্র্য ও অশিক্ষার কারণে তাকে পদে পদে হেনস্থা হতে হয়েছে তথাকথিত শিক্ষিত, সভ্যসমাজের কাছে। বিশেষত, ক্ষিতীশ সিংহের ছাত্রী হওয়ার দরুন বারবার ক্লাবের সংকীর্ণ রাজনীতি, দলাদলি ও চক্রান্তের শিকার হয়েছে কোনি। কিন্তু তার প্রশিক্ষক প্রতিনিয়ত উৎসাহ জুগিয়েছেন তাকে। কোনির বাংলা দলে সুযোগ পাওয়ার বিষয়ে অবশ্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বালিগঞ্জ সুইমিং ক্লাবের প্রশিক্ষক প্রণবেন্দু বিশ্বাস। কোনির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিয়া মিত্রের প্রশিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও কোনির বিরুদ্ধে ঘটে চলা হীন চক্রান্তের প্রতিবাদ করেন তিনি। সংকীর্ণ দলাদলির ঊর্ধ্বে উঠে তিনি বলেন, 'বেঙ্গলের স্বার্থেই কনকচাপা পালকে টিমে রাখতে কোনির সাঁতার দলে হবে।' তাঁর অভিজ্ঞ চোখ কোনির প্রতিভাকে চিনে স্থায়ী জায়গা লাভ নিতে ভুল করেনি। তাই তিনি বুঝেছিলেন, মহারাষ্ট্রের রমা যোশিকে ফ্রি স্টাইলে হারাতে হলে কিংবা স্প্রিন্ট ইভেন্টে জিততে গেলে বাংলা দলে কোনিকে রাখতেই হবে। এমনকি কোনিকে দলে না নিলে প্রণবেন্দু নিজের ক্লাবের সাঁতারুদের নাম প্রত্যাহার করার হুমকিও দেন। এভাবেই নিজের প্রতিভা ও অধ্যবসায়ের পাশাপাশি প্রণবেন্দু বিশ্বাসের ইতিবাচক ভূমিকায় বাংলা দলে জায়গা পায় কোনি।

    প্রশ্নঃ 'দাঁড়া তোর ওষুধ আমি পেয়েছি' - এখানে কাকে ওষুধ বলা হয়েছে? তাকে ওষুধের সঙ্গে তুলনা করার কারণ কী বলে তোমার মনে হয়?

    উত্তরঃ আলোচ্য অংশে বক্তা ক্ষিতীশ বালিগঞ্জ ক্লাবের সাঁতারু হিয়া মিত্রের প্রতি কোনির বিতৃয়া এবং ক্ষোভকেই ওষুধ বলে উল্লেখ করেছেন।

         দরিদ্র পরিবারের সাধারণ মেয়ে কোনি তার দাদাকে কথা দিয়েছিল যে, রবীন্দ্র সরোবরের প্রতিযোগিতায় সে মেয়েদের মধ্যে প্রথম হবে। কিন্তু সাঁতারের কোনো প্রথাগত প্রশিক্ষণ না থাকায় দাদাকে দেওয়া কথা সে রাখতে পারেনি। বালিগঞ্জ ক্লাবে নিয়মিত প্রশিক্ষণ নেওয়া, ধনী ও অভিজাত পরিবারের মেয়ে হিয়া মিত্র প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়। ছোটো থেকে কোনির বদ্ধমূল ধারণা ছিল বড়োলোকরা গরিবদের ঘেন্না করে। তাই হিয়ার কাছে পরাজয় কোনি মেনে নিতে পারেনি। হিয়ার প্রতি তার এই বিতৃয়া ও প্রতিশোধস্পৃহাকে কাজে লাগিয়েছিলেন ক্ষিতীশ। প্রবল পরিশ্রমে ক্লান্ত ও অনিচ্ছুক কোনিকে, হিয়া মিত্রের নাম বললেই ম্যাজিকের মতো কাজ হত। তখন সাঁতারের জন্য তার অধ্যবসায় ও আত্মনিবেদনে কোনো ত্রুটি দেখা যেত না। এইজন্য হিয়া মিত্রের নামটিকেই ওষুধের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

    প্রশ্নঃ 'আমি কি ঠিক কাজ করলাম? অ্যাপোলোয় যাওয়া কি উচিত হলো?' – 'আমি' কে? সে অ্যাপোলোয় কেন গিয়েছিল? অ্যাপোলোয় যাওয়া নিয়ে তার মনে দ্বন্দ্বের কারণ কী?

    উত্তরঃ প্রশ্নোদৃত অংশটি মতি নন্দীর 'কোনি' উপন্যাসের অন্তর্গত। এখানে 'আমি' বলতে সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহের কথা বলা হয়েছে।

          ক্ষিতীশ ছিলেন জুপিটার ক্লাবের চিফ ট্রেনার। কিন্তু সেখানে তিনি ঘৃণ্য ক্রীড়া–রাজনীতির শিকার হন। আদর্শবাদী ও শৃঙ্খলাপরায়ণ ক্ষিতীশ উদীয়মান সাঁতারুদের মধ্যে কোনোরকম শৈথিল্য পছন্দ করতেন না। এই জন্য ক্লাবের সাঁতারুদের সঙ্গে তাঁর মতপার্থক্য দেখা দেয়। সেইসঙ্গে হরিচরণের চিহ্ন ট্রেনার হওয়ার মরিয়া প্রচেষ্টা পরিস্থিতিকে ক্ষিতীশের বিপক্ষে নিয়ে যায়। ক্লাব পরিচালনা নিয়ে ক্লাবের কর্মকর্তা–সদস্য ও সাঁতারুদের সঙ্গে তাঁর মানসিকতার বিস্তর ব্যবধান গড়ে ওঠে। ক্লাবের সভায় তাঁর বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ এনে অপমান করায় তিনি জুপিটার ছেড়ে দেন। কিন্তু কোনিকে সাঁতার শেখানোর সংকল্পকে বাস্তবায়িত করতেই শেষে তিনি অ্যাপোলোয় যোগ দেন।

          সাঁতার অন্ত প্রাণ ক্ষিতীশ জুপিটারকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। তাঁর সঙ্গে জুপিটার ক্লাবের সম্পর্ক ছিল পঁয়ত্রিশ বছরের। জুপিটারকে গৌরবান্বিত করার জন্য কিংবা ভারতসেরা করার জন্য ক্ষিতীশের চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। ক্লাবের ভালোমন্দের কথা ভাবতে গিয়েই তিনি মন দিয়ে দোকান সামলাতে পারেননি। অথচ পরিণামে সেই ক্লাব থেকেই তাঁকে সরে গিয়ে; চিরশত্রু অ্যাপোলোর শরণাপন্ন হতে হল। কয়েকজন লোভী, মূর্খ ও স্বার্থপরের ষড়যন্ত্রে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে হাত মেলাতে হল। মানসিক এই টানাপোড়েনেই ক্ষিতীশ অন্তর্দ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলেন।

    প্রশ্নঃ 'গাছে অনেক দূর উঠে গেছি। মই কেড়ে নিলে নামতে পারব না।' - 'গাছে উঠে যাওয়া' বলতে বস্তু কী বুঝিয়েছেন? এখানে ‘'মই কেড়ে নেওয়ার' প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছে কেন?

    উত্তরঃ 'গাছে উঠে যাওয়া' শব্দটির অর্থ অনেকটা এগিয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে বস্তু বিচরণ প্রচুর অর্থের মালিক হলেও তার বাস্তব বুদ্ধি ছিল। একটু কমজোরি তার প্রবল ইচ্ছা এম এল এ বিনোদ ভড়ের বিরুদ্ধে 'গাছে উঠে যাওয়া' নির্বাচনে লড়াই করা। বিচরণ ক্ষিতীশকে অশ্বের মতো বিশ্বাস করত। ক্ষিতীশ বিচরণের পরামর্শদাতা হয়ে ওঠে। তার ভরসাতেই বিচরণ নির্বাচনে লড়াই করতে নামে। ক্ষিতীশ তার বক্তৃতা লিখে দেওয়া, বুদ্ধি জোগানোর মতো কাজগুলো করে দিতেন। ক্ষিতীশ তাকে বোঝান যে, বিনোদ ভড় যে যে সংস্থায় আছে তার প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থাগুলোতে তাকে যোগ দিতে হবে। তাই ক্ষিতীশের সহযোগিতায় বিনোদ ভড়ের জুপিটার ক্লাবের বিপক্ষ অ্যাপোলো ক্লাবের সভাপতি হওয়ার জন্য সে মুখিয়ে ওঠে এবং সাত হাজার টাকা অনুদানের অঙ্গীকারও করে বসে। বিস্টুচরণ একেই গাছে ওঠা বলেছে।

         'মই কেড়ে নেওয়া'র অর্থ কোনো কাজে এগিয়ে দিয়ে পিছন থেকে সরে যাওয়া। ক্ষিতীশ বিচরণকে জানান, অ্যাপোলোর প্রেসিডেন্ট হওয়ার 'মই কেড়ে নেওয়া' জন্য তাকে ডোনেশন বাবদ দুই হাজার টাকা আর কোনির একটা সাঁতারের পোশাক বাবদ একশো টাকা খরচ করতে হবে। সেইসঙ্গে সেলামি বাবদ লীলাবতীর দেওয়া পাঁচ হাজার টাকাও ফেরত দিতে হবে। না হলে তিনি বিচরণের জন্য বক্তৃতা লিখে দেবেন না। তখন একদিকে আর্থিক ক্ষতি ও অন্যদিকে বিষ্টুচরণের বক্তৃতা না লিখে দেওয়ার হুমকির মাঝে দাঁড়িয়ে বিস্টুচরণ এমন উক্তি করেছে।

    প্রশ্নঃ 'ভারিবিচালে বিস্টুধর ঘোষণা করল এবং গলার স্বরে বোঝা গেল এর জন্য সে গর্বিত' – বিস্টুধর ভারিভিচালে কী ঘোষণা করেছিল? সে যে বিষয়ের জন্য গর্ববোধ করত তার পরিচয় দাও।

    উত্তরঃ মতি নন্দীর 'কোনি' উপন্যাসের একটি বর্ণময় চরিত্র বিষ্টুচরণ ধর। মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া আর কুঁডেমির ফলে ধনী বিখুঁচরণ প্রায় একটি বিধরের সাড়ে তিনমনি দেহের চর্বির পাহাড়ে পরিণত ভারিতিকালে ঘোষণা হয়েছে। অথচ তার ধারণা, সে যথেষ্ট সংযমী জীবনযাপন করে। তাই বিঈধর ভারিকিচালে ঘোষণা করে যে, খাওয়ার প্রতি তার কোনো লোভ নেই এবং সে নিয়মিত ডায়টিং করে।

          সে নিজের ডায়টিং–এর নমুনা পেশ করতে গিয়ে বলে, আগে রোজ আধ কিলো ক্ষীর খেলেও এখন মোটে তিনশো গ্রাম যায়। সেভাবেই জলখাবারের কুড়িটা লুচি এখন কমে দাঁড়িয়েছে পনেরোয়। রাতে মাপমতো আড়াইশো গ্রাম চালের ভাত আর খানবারো রুটি। ঘি খাওয়া প্রায় বন্ধ, তবে গরম ভাতের সঙ্গে নাত্র চার চামচ; এর বেশি একবিন্দুও নয়। বিকেলের জন্য বরাদ্দ দুই গ্লাস মিছরির শরবত আর চারটে কড়াপাকের সন্দেশ। বাড়িতে রাধাগোবিন্দের মূর্তি থাকায় মাছ মাংস ছুঁয়েও দ্যাখে না। সুতরাং, সংযম কৃচ্ছ্রসাধনের মধ্যেই সে বেঁচে আছে। এই জন্যেই তার গর্ব।

    প্রশ্নঃ 'কাজটা থেকে বরখাস্ত হলে চল্লিশটা টাকা থেকে তাদের সংসার বঞ্চিত হবে।' -  কোন্‌ কাজের কথা এখানে বলা হয়েছে? কাজ থেকে বরখাস্ত হওয়ার আশঙ্কার কারণ কী ছিল?

    উত্তরঃ কমলের মৃত্যুর পর তার রোজগারের দেড়শো টাকার জোগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, কোনিদের সংসার তীব্র আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়ে। এরকম অবস্থায় কোনির সাঁতারও প্রায় বন্ধ হয়ে যেতে বসে। এই সংকটের সময় ক্ষিতীশ তার স্ত্রী। লীলাবতীর দোকানে কোনিকে চল্লিশ টাকা বেতনে কাজে লাগিয়ে দেন। তার কাজ ছিল ট্রেনিং শেষে বেলা দশটার সময় দোকান খুলে ঝাঁট দেওয়া, কাউন্টার মোছা, কুঁজোয় জলভরা ছাড়াও অন্যান্য ফাইফরমাশ খাটা। রাতে দোকান বন্ধের পর তার ছুটি। বেতনের সঙ্গে সঙ্গে তার দু–বেলা খাবারও জুটত এই কাজের জন্য।

          ক্ষিতীশের স্বপ্ন কোনিকে চ্যাম্পিয়ন করা। তাই তিনি প্রতিদিন কোনির ট্রেনিংয়ের সময় বাড়িয়ে চলেন। লীলাবতী ব্যবসায়ী মানুষ। কোনির দোকানে আসার কথা দশটায় কিন্তু ক্ষিতীশের পাল্লায় পড়ে সেদিন কোনির দোকানে আসতে একটু দেরি হয়। দেরির কথা ভেবে কোনি। খাওয়াদাওয়া না করেই ক্লান্ত অবসন্ন শরীরে যখন দোকানে হাজির হয়, তখন লীলাবতী প্রায় সব কাজই নিজে করে নিয়ে রাগে ফুঁসছেন। তাকে দেখামাত্র লীলাবতী বেরিয়ে যেতে বলেন। অবসন্ন কোনি লীলাবতীর কাছে বাড়ি যাওয়ার আর্জি জানালে তা নাকচ হয়ে যায়। তবুও কোনি কষ্ট সহ্য করে দাঁড়িয়ে থাকে কাজ থেকে বরখাস্ত হওয়ার ভয়ে, কারণ কাজ থেকে পাওয়া চল্লিশটা টাকা যে তাদের সংসারের বড়ো প্রয়োজন।

    Madhyamik Bengali Suggestion 2024

         Madhyamik Bengali suggestion 2024 pdf. Madhyamik Bengali suggestion 2023 pdf download. Madhyamik Bengali question 2024. Madhyamik Bengali. Madhyamik Bengali meaning. Madhyamik Bengali syllabus 2024. Madhyamik Bengali syllabus 2024. Madhyamik Bengali syllabus. Madhyamik Bengali question 2024.


    কোনি মতি নন্দী মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন প্রশ্ন ও উত্তর

         কোনি বড় প্রশ্ন উত্তর 2024. কোনি উপন্যাস প্রশ্ন উত্তর pdf. কোনি বড় প্রশ্ন উত্তর 2024. কোনি সাজেশন 2024. কোনির পুরো নাম কি. জুপিটার ক্লাবের ক্ষিতীশ এর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ গুলি কি ছিল. ক্লাস টেন কোনি. ফাইট কোনি ফাইট উত্তর.


    Madhyamik Suggestion 2024 pdf Free download

         মাধ্যমিক সাজেশন 2024 pdf. উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন 2024. মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন 2024 PDF. বাংলা ব্যাকরণ সাজেশন. উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন 2024. মাধ্যমিক বাংলা কারক. মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান সাজেশন 2024. পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক  বাংলা পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্ন উত্তর ও শেষ মুহূর্তের সাজেশন ডাউনলোড. মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য সমস্ত রকম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। মাধ্যমিক সাজেশন 2024 pdf. মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন 2024 pdf. মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন 2024 mcq. মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন 2024. মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্ন উত্তর 2024. 2024 এর মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্ন বাংলা.


    কোনি গল্পের প্রশ্ন উত্তর pdf

         কোনি উপন্যাস প্রশ্ন উত্তর pdf. কোনি উপন্যাস pdf. কোনি বড় প্রশ্ন উত্তর 2024. কোনি বড় প্রশ্ন উত্তর 2024. কোনি উপন্যাস প্রশ্ন উত্তর mcq. কোনি সাজেশন 2024. কোনি প্রশ্ন উত্তর pdf mcq. কোনির পুরো নাম কি.


    মাধ্যমিক সাজেশন 2024 pdf

         Madhyamik suggestion 2024 pdf. Madhyamik suggestion 2024 pdf download. Madhyamik suggestion 2024 pdf free download. ক্লাস 10 বাংলা প্রশ্ন উত্তর 2024. ক্লাস টেনের বাংলা সাজেশন. মাধ্যমিক সাজেশন 2024 pdf. মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন 2024 pdf. মাধ্যমিক পরীক্ষার সাজেশন 2024 বাংলা. উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন 2024. মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন 2024. মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন 2024 PDF. বাংলা ব্যাকরণ সাজেশন.


    কোনি গল্পের প্রশ্ন উত্তর 2024

         কোনি বড় প্রশ্ন উত্তর 2024. কোনি বড় প্রশ্ন উত্তর 2024. কোনি উপন্যাস pdf. কোনি সাজেশন 2024. কোনির পুরো নাম কি. জুপিটার ক্লাবের ক্ষিতীশ এর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ গুলি কি ছিল. কোনির জীবনে ক্ষিতীশ এর অবদান. ফাইট কোনি ফাইট উত্তর.


    WBBSE Madhyamik bengali suggestion 2024

         WBBSE Madhyamik Bengali suggestion 2024 pdf download. Madhyamik Question Paper  Bengali. WBBSE Madhyamik Bengali suggestion 2024 pdf download in Bengali. WBBSE Madhyamik Bengali suggestion 2024 download pdf. West Bengal Madhyamik  Bengali Suggestion 2024 Download. WBBSE Madhyamik Bengali short question suggestion 2024. Madhyamik Bengali Suggestion 2024 download. WB Madhyamik 2024 Bengali suggestion and important questions. Madhyamik Suggestion 2024 pdf.


    কোনি বড় প্রশ্ন উত্তর

         কোনি বড় প্রশ্ন উত্তর 2024. কোনি বড় প্রশ্ন উত্তর 2024. কোনির চরিত্র আলোচনা কর. জুপিটার ক্লাবের ক্ষিতীশ এর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ গুলি কি ছিল. কোনি তুমি অন স্পোর্টিং. কোনি প্রশ্ন উত্তর pdf. কোনি উপন্যাস অবলম্বনে কোনির সাফল্যের পিছনে ক্ষিতীশ সিংহের অবদান লেখো. কোনির পুরো নাম কি.

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    2 মন্তব্যসমূহ
    * Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

    Top Post Ad

    LightBlog

    Below Post Ad

    LightBlog

    AdsG

    close