ভারতবর্ষ কেমন হত যদি নেতাজি সুভাষ বেঁচে থাকতো?
Type Here to Get Search Results !

ভারতবর্ষ কেমন হত যদি নেতাজি সুভাষ বেঁচে থাকতো?

 ভারতবর্ষ কেমন হত যদি নেতাজি সুভাষ বেঁচে থাকতো?


     একটি দেশের ভবিষ্যত কেমন হবে সেই দেশের প্রধানমন্ত্রি বা রাষ্ট্রপতি কেমন। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হয়েছিল পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু। আর তাঁর দেখানো পথে চলে ভারত আজ সারা বিশ্ব নিজের নাম করে নিয়েছে। যেহেতু জওহরলাল নেহেরু ছিলেন তৎকালেন ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেতা তাই স্বাধীন ভারতের তাঁর প্রধান মন্ত্রীর সিট একদম পাকা ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার ঠিক নয় বছর আগে জাতীয় কংগ্রেসের যে ভোট হয়েছিল তাতে সবচেয়ে বেশি ভোটে জিতে ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। কিন্তু নেতাজি যদি সেদিন তিনি তার পদ না ছাড়তেন এবং নেতাজি যদি রাজনীতিতে থাকতেন তাহলে তিনিই হতেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়েই কোনো সন্দেহই নেয়। আজ নেহেরু আর তার জাতীয় দল কংগ্রেসের দীর্ঘ সময়ে ভারতের অনেক উন্নতি হয়েছে কিন্তু আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন কি হত যদি আমাদের প্রথম প্রধানমন্ত্রি নেতাজি হতেন? যদিও এটি একটি হাইফোথিটিক্যাল থিয়োরি। যেখানে আমরা নেতাজির তৈরি ভারত কেমন হত সেটা বিচার করে দেখবো।


নেতাজি থাকলে কি দেশ ভাগ হতো?

     নেতাজি ছিলেন একজন সত্যিকারের দেশ প্রেমিক। তিনি নিজের সুখ সুবিধার কথা ভুলেগিয়ে ভারতকে স্বাধীনকরার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন কথাবার্তার মাধ্যমে সত্যিকারের স্বাধীনতা কখনই আশা সম্ভব নয়। গান্ধিজী ও নেহেরুর রাজনীতি ভারতকে স্বাধীনতো করেছিল কিন্তু দেশ দুটুকরো হয়েগিয়েছিল। কিন্তু নেতাজি কখনই এই দেশভাগের আইডিয়াকে সম্মতি দেননি। তাহলে এটা বলাই যায় যদি তিনি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হতেন ভারত কখনো ভাগই হত না। বর্তমান পাকিস্থান, বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের কিছু অংশ নিয়ে তৈরি হত এক বিশালভূখন্ড। তবে হ্যাঁ দেশভাগের আইডিয়া কিছু মানুষের মধ্যে এমন ভাবে ঢুকিয়ে দিয়েছিল যে স্বাধীনতার সময় ভাগ না হলেও স্বাধীনতার পরেও দেশে হিংসা প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যেতো। যার ফলে দেশকে সঠিক পথে চালানো একপ্রকার অসম্ভব হয়ে যেতো। যা নেতাজির সামনে অনেক বড়ো চ্যালেঞ্চ হয়ে দাঁড়াতো। তবে স্বাধীনতার সময় ভাগ না হলেও স্বাধীনতার ৫-৬ বছরের মধ্যে দেশ ভাগ হতই। 


দেশের সামরিক শক্তি কেমন হত?

     বর্তমানে ভারত পৃথিবীর চতুর্থ শক্তিশালী দেশ। আর এই স্থানে আসতে ভারতের প্রায় ৭০ বছরেও বেশি সময় লেগে গেছে। কিন্তু নেতাজি যদি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হতেন তবে তিনি ভারতের সামরিক শক্তির দিকে প্রথম থেকেই যতেষ্ঠ নজর দিতেন। এখানে আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি ভারত স্বাধীন হওয়ার পর গান্ধিজীর অসিংসা নীতির ফলে দেশের আর্মি অতোটাও শক্তিশালী হতে পারেনি যতোটা হওয়ার দরকার ছিলো। সেই সময় যদি রাশিয়া বা আমেরিকার মতো কোনো দেশ ভারতে আক্রমন করতো তাহলে ভারত আবার পরাধীন হয়ে যেতো। তবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর প্রধানমন্ত্রী পদে বসে সর্বপ্রথম দেশকে সুরক্ষিত করার কথা ভাবতেন। তিনি দেশের আর্মির নাম রাখতেন "ইন্ডিয়ান নেশ্যানাল আর্মি"। আর স্বাধীনতার পর ৭৫ বছর পার হয়েগেছে আজও ভারত বহু অস্ত্রশস্ত্র বিদেশ থেকে কেনে। কিন্তু নেতাজি দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের ডি আর ডি ও - এর মতো সংস্থান যারা বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র আবিষ্কার করে এরকম সংস্থা অনেক আগেই তৈরি হয়ে যেতো। আর বর্তমানে ভারত সামরিক দিক থেকে চিনকে পিছনে ফেলে দিতো। স্বাধীনতার কিছু বছর পর ভারতের কাছে যখন ইউনাইটেড নেশনের পারমানেমট সিটের অফার আসে তখন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন এবং তিনি পারমানেন্ট সিটের জন্য চিনকে মননিত করেন। তখন নেহেরু ভেবেছিলেন এর বদলে চিন ভারতের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখবে। কিন্তু তার পর থেকে চিন দুই বার ভারতের বিপক্ষে ভিটো ক্ষমতার প্রয়োগ করেচলেছে। তাই এতে সন্দেহ নেই যে নেতাজি থাকলে এমনটা হতো না। এছাড়াও ভারত একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসাবে ১৯৭৪ সালে নিজের নাম নথিভুক্ত করে করেছিল এবং তার প্রায় ২৫ বছর পর প্রথমবার পারমানবিক বোমা সফল ভাবে পরীক্ষা করেছিল। কিন্তু নেতাজি যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে এই পারমাণবিক শক্তি আরোও তাড়াতাড়ি ভারতের কাছে আসতো। যার ফলে চিনের মতো দেশ ভারতকে আক্রমন করার সাহস পেতো না। 


অর্থনৈতিক দিক থেকে কেমন হতো ভারত?

     কিছু ঐতিহাসিকদের মতে নেতাজি একজন সোসালিস্ট ছিলেন। সেই হিসাবে তিনি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের প্রতিটা মানুষকে রোজকারের জন্য ব্যবস্থা করে দিতেন। কলকারখানা শিল্প চাষাবাদ এই সব দিক দিয়ে তিনি ভারতকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশ হিসাবে পরিচয় এনে দিতেন। দেশের অর্থ ব্যবস্থাও অনেক উন্নতি হতো। যাতে রাশিয়া, জাপান এবং জার্মানির মতো দেশে সাহায্য থাকতো।


ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন হত?

      আপনারা অনেকেই জেনে থাকবেন নেতিজি নিজে অনেক শিক্ষিত বেক্তি ছিলেন। যিনি তৎকালীন ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় চতুর্থ হয়েছিলেন। তবে তিনি ব্রিটিশদের চাকরী করতে চাননি। তিনি মনে করতেন শিক্ষা এমন একটি বিষয় যা দেশকে খুব তাড়াতাড়ি উন্নত করতে পারবে। প্রাচীন ভারতে মানে আজ থেকে প্রায় ২০০০ বছর আগে ভারতবর্ষ শিক্ষা ব্যবস্থায় খুবই উন্নত ছিল। সেসময় নালোন্দা ও তক্ষশিলার মতো বিশ্ববিখ্যাত উইনিভারসিটি ছিল। যাতে দেশ বিদেশ থেকে বহু মানুষ পড়াশুনো করতে আসতো। আর নেতাজি প্রাচীন ভারতের মর্যাদা ভারতকে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তাই বলা যায় নেতাজি যদি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হতেন তাহলে তিনি শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে আরো আনেক উন্নতি করতেন। 


দেশে মহিলাদের স্থান কেমন হত?

     নেতাজি মহিলাদের স্বাধীনতার দিকে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছিলেন। তিনি তার গঠিত আজাদ হিন্দ ফৌজে মহিলা আর্মির একটি দল তৈরি করেছিলেন। যার নাম ছিল ঝাঁসির রানি রেজিমেন্ট। এখানেও আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি যে সময়ের কথা এখানে বলা হচ্ছে সে সময় মহিলাদের স্বাধীনতায় তেমন গুরুত্ব দেওয়া হতো না। দেশের কাজেও মহিলা যে সাহায্য করতে পারে এমন ধারণা পৃথিবীর বহু দেশে তখনও আসেনি। কিন্ত সেই দাঁড়য়ে মহিলাদের নিয়ে একটি আর্মির দল গঠন করার কথা ভেবে ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। এর থেকে বোঝা যায় নেতাজির শাসনে ভারতের মহিলাদের স্থান অনেকটা উপরে থাকতো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

LightBlog

Below Post Ad

LightBlog

AdsG

close