মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক
ইতিহাস
দ্বাদশ শ্রেণী
নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখ :
১. সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদ কিভাবে পরস্পরের পরিপূরক?
উত্তর : আধুনিক বিশ্বের ইতিহাস এর দুটি উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ধারণা হলো উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ। অনেক সময় উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ কে একই অর্থে ব্যবহার করা হয়। বাস্তবে উভয়ের মধ্যে যথেষ্ট সাদৃশ্য থাকলেও কিছু কিছু বিষয় পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ একে অপরের পরিপূরক :
প্রথমত, উপনিবেশবাদ বলতে বোঝায় একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের দ্বারা অন্য কোন দুর্বল রাষ্ট্র বা জাতির উপর নিজেদের নেতৃত্ব ও দায়িত্ব প্রতিষ্ঠার মানসিকতা, আর সাম্রাজ্যবাদ বলতে বোঝায় কোন রাষ্ট্র বা জাতির উপর অন্য কোনো শক্তিশালী রাষ্ট্রের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা।
দ্বিতীয়ত, প্রাচীন আক্তের বিচারে সাম্রাজ্যবাদের তুলনায় উপনিবেশবাদ হলো নতুন ভাবধারা। উপনিবেশবাদের প্রচার শুরু হয় মোটামুটি খিস্তি ও পঞ্চম শতকের পর থেকে। তবে উপনিবেশবাদের চেয়ে অনেক প্রাচীন ভাব ধরা হলো সাম্রাজ্যবাদ। প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যের যুগেও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ছিল।
তৃতীয়ত, উপনিবেশবাদের লক্ষ্য হলো বিজিত রাষ্ট্রের নিজেদের শাসন নীতি প্রচলন নিজেদের স্বার্থে বিজিত রাষ্ট্রের সম্পদ ব্যবহার প্রভৃতি ; আর সাম্রাজ্যবাদের লক্ষ্য হলো প্রত্যক্ষ অভিযানের মাধ্যমে অন্য কোন রাষ্ট্রের ভূখণ্ড দখল করে নিল রাষ্ট্রীয় সীমানার প্রসার ঘটানো।
চতুর্থত, নৌ শক্তিতে উন্নত ইউরোপীয় দেশগুলো পঞ্চদশ শতকের পর থেকে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি হিসাবে বাণিজ্যের প্রসার ঘটনার উদ্যোগ নেয়; আর শক্তিশালী রাষ্ট্র গুলির প্রাচীনকাল থেকে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন বাস্তবায়িত করতে গিয়ে অন্য দেশের ভূখণ্ড দখল করে চলেছে।
পঞ্চমত, উপনিবেশবাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র থেকে প্রচুর মানুষ এসে উপনিবেশের বসবাস শুরু করে। তবে আগত এই জনগণের আনুগত্য থাকে মাতৃভূমির প্রতি; আর সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্রে সম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের জনগণ নতুন দখল করা রাষ্ট্রের বসবাস নাও করতে পারে। দখল করা অঞ্চলের সার্বভৌম ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে বিজিত অঞ্চলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা হয়।
ষষ্ঠত, কোন উপনিবেশিক রাষ্ট্রের বিপুলসংখ্যক মানুষ অন্য কোনো দেশে গিয়ে বসবাস শুরু করার মাধ্যমে সেখানে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে এবং উপনিবেশ অবস্থান করেই সেই স্থানে নিয়ন্ত্রণ চালায়। ক্রমে সেই উপনিবেশের বাসিন্দারাই সেখানকার রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেন। সাম্রাজ্যবাদের দ্বারা সামরিক অভিযানের মাধ্যমে অন্য কোন স্থান নিজেদের দখলে নেয় সেখানে নিজেদের প্রত্যক্ষ শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়। এক্ষেত্রে বিজয়ী রাষ্ট্রের বিপুলসংখ্যক জনগণের বিজিত রাষ্ট্রে বসবাস এর প্রয়োজন পড়ে না।
সপ্তমত, উনবিংশ শতকে বিভিন্ন ইউরোপীয় শক্তি ভারত অস্ট্রেলিয়া উত্তর আমেরিকা আলজেরিয়া প্রভৃতি দেশে যে ধরনের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে তা উপনিবেশবাদের উদাহরণ; আর উনবিংশ শতকের শেষের দিকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে কিভাবে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয় তা সাম্রাজ্যবাদের ধারণা।
২. কোন কোন উপাদান গুলি সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে?
উত্তর : বিশেষ কয়েকটি উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে কোনো একটি দেশ অপর দেশে সাম্রাজ্যবাদ কায়েম করে। আর্থিক সুবিধা লাভ জাতীয়তাবাদের সম্প্রসারণ জাতীয় শক্তি বৃদ্ধি জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জনসংখ্যার সম্পন্ন ও ধর্ম সভ্যতার আদর্শ প্রচার ছিল সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের উদ্দেশ্য।
(১) অর্থনৈতিক সুবিধালাভ : ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, স্পেন প্রভৃতি নৌশক্তিতে শক্তিশালী দেশ গুলি ও বাণিজ্যিক লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিযান চালায় এবং উপনিবেশিক সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। আরো পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে শিল্প বিপ্লব ঘটিয়ে কাঁচামাল আমদানি ও উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী বিক্রয়ের লক্ষ্যে উপনিবেশের প্রয়োজনীয়তা বাড়ে। এই প্রয়োজনীয়তা মেটানোর লক্ষ্যে ইউরোপে শিল্পোন্নত দেশগুলি সাম্রাজ্যবাদ কায়েমের লক্ষ্যে সক্রিয় হয়ে ওঠে।
(২) জাতীয়তাবাদের সম্প্রসারণ : সাম্রাজ্যবাদী অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো জাতীয়তাবাদের সম্প্রসারণ। একটি দেশ অপর দেশের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার দ্বারা নিজের দেশের মর্যাদা, শক্তি, প্রভাব বৃদ্ধি এবং জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার করার চেষ্টা করে। নিজের দেশের পতাকা অন্য দেশে উড়িয়ে নিজের দেশের ভাষা সংস্কৃতি অন্য দেশের অধিবাসীদের উপর চাপিয়ে দিয়ে এক আত্মতুষ্টি লাভ করে থাকে। এই ধরনের উগ্র জাতীয়তাবাদী মনোভাব থেকেই অনেকে নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে মনে করে থাকে। অনেক সময় কোন দেশের রাজা বা শাসক নিজের শৌর্যবীর্যের প্রমাণ রাখার জন্য সুবিচার সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন।
(৩) জাতীয় শক্তি বৃদ্ধি : বিশ্ব রাজনীতিতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা বা দেশবাসী নানা চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর জাতীয় শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা করে। নিজে নিজে উপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদী কাঁচামাল ও সম্পদ জোগাড় করে একটি ক্ষুদ্র দেশ কিভাবে বিশ্বের অন্যতম রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হতে পারে ব্রিটেনের তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উপনিবেশ গড়ে তোলে সুবিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী হয়ে ওঠা ব্রিটেন ও ফ্রান্স ওয়ার্ল্ড পাওয়ার হিসেবে মর্যাদা লাভ করে। পরবর্তীকালে একই পথ অনুসরণ করে জার্মানি ও বিশ্ব রাজনীতিতে স্বতন্ত্র স্থান লাভ এর লক্ষ্যে জাতীয় শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা চালায়।
(৪) জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা : অনেকের ধারণা এই জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে আসলে সাম্রাজ্যবাদ এই সুদীর্ঘ করার চেষ্টা চালানো হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে ফ্রান্স রাইন নদী পর্যন্ত সমগ্র ভূখণ্ডের ওপর নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার দাবি জানায়। আবার এই একই অজুহাতে জাপান দূরপ্রাচ্যে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে লাতিন আমেরিকার অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করেন। দেশের নিরাপত্তার কথা প্রচার করে রাশিয়া লাটভিয়া লিথুয়ানিয়া এবং ফিনল্যান্ডের কিছু অঞ্চল দখল করে নেয়। ব্রিটেনের তার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নিরাপত্তার কথা তুলে ধরে জিব্রাল্টার মালটা সাইপ্রাস এডেন ইত্যাদি অঞ্চল দখলে করে নেয়।
(৫) জনসংখ্যার সংকুলান : বেশকিছু ঐতিহাসিকদের ধারণায় শিল্প বিপ্লবের পরবর্তী কালে ইউরোপে বিপুল জনসংখ্যার চাপ সামলানোর লক্ষ্যে জনবহুল রাষ্ট্রপতি অনেক সময় সাম্রাজ্যবাদের প্রসার ঘটাতে সচেষ্ট হন। উনিশ শতকে ইউরোপে প্রায় সমস্ত দেশের কম বেশি জনসংখ্যার বিস্তার ঘটে। এই বর্ধিত জনসংখ্যার পুনর্বাসন ও সংকুলানের লক্ষ্যে এবং কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে এশিয়া, আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার কিছু অংশও ইউরোপীয় উপনিবেশ গড়ে ওঠে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে জার্মান রাষ্ট্রনায়ক হিটলার পূর্ব ইউরোপের জার্মান রাষ্ট্রশক্তির সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সচেষ্ট হন। তিনি বলেন জার্মান জাতির জন্য " পা রাখবার জায়গার" প্রয়োজন। জার্মানি ছাড়াও জাপান ইতালি সহ বেশ কয়েকটি দেশ এই একই অজুহাত দেখিয়ে নিজে নিজে সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটায়।
(৬) ধর্ম ও সভ্যতার আদর্শ প্রচার : বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্ম ও সভ্যতার আদর্শ প্রচার আকাঙ্খাই সাম্রাজ্যবাদের একটি মূল উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। সুপ্রাচীন অতীত থেকেই পর্তুগাল স্পেন ফ্রান্স ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশের খ্রিস্টান মিশনারীরা এশিয়া আফ্রিকা এবং আমেরিকার বিভিন্ন দেশে গিয়ে খ্রিস্টান ধর্মের প্রচার করেন। স্পেন ও পর্তুগালের হাজার হাজার জেসুইট এবং অন্যান্য খ্রিস্টান পুরোহিতগন খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে লাতিন আমেরিকার বহু অজানা দেশে পাড়ি দেয়। সপ্তদশ শতকে উত্তর আমেরিকাতে মূলত প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মীয় নেতাদের প্রচেষ্টার জন্যই ব্রিটিশ উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল। শুধুমাত্র ধর্মযাজকরাই নন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সভ্যতা প্রচারকে হাতিয়ার করে সাম্রাজ্যবাদী নীতি অনুসরণ করেন। ইউরোপের কিছু সাম্রাজ্যবাদী চিন্তাবিদ মনে করেন এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষের প্রতি ইউরোপীয়দের কিছু দায়বদ্ধতা আছে। যেমন স্পেন কে পরাজিত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিলিপিনস অধিকার করে নিলে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ম্যাককিনলে খ্রিষ্ট ধর্ম ও মানবতার স্বার্থে' তাকে সমর্থন জানায়।
৩. ঔপনিবেশিক সমাজের জাতি সংক্রান্ত প্রশ্নের প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর : ইউরোপের ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির অষ্টাদশ শতক থেকে এশিয়া ও আফ্রিকায় পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন দেশের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে। ঔপনিবেশিক শাসকরা ছিল শ্বেতাঙ্গ জাতির ভক্ত এবং শাসিত উপনিবেশের বাসিন্দারা ছিল কৃষ্ণাঙ্গ জাতিভুক্ত। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শাসক শ্বেতাঙ্গ এবং শাসিত কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বিস্তর জাতিগত ব্যবধান দেখা যায়।
উপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলিতে শাসক এবং শাসিতের জাতিগত ব্যবধানে বিভিন্ন প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যেমন -
(১) জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব : উপনিবেশিক কৃষ্ণাঙ্গ প্রজাদের চেয়ে শাসক শ্বেতাঙ্গরা নিজেদের শ্রেষ্ঠতর বলে মনে করেন। তারা দাবি করে যে নিজেদের জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের জন্য তারা অনগ্রসর কৃষ্ণমৃত্যু পর সামগ্রিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার অধিকারী।
(২) অবজ্ঞা : শাসক শ্বেতাঙ্গরা উপনিবেশের শাসিত কৃষ্ণাঙ্গদের অবজ্ঞা ও ঘৃণার চোখে দেখতেন। কোন কোন উপনিবেশিক শহরের শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ দেশ বসবাসের জন্য পৃথক অঞ্চলে চিহ্নিত করা হয়। তার আদর্শ ধারণ হলো ভারতীয় উপমহাদেশে শ্বেতাঙ্গদের কোন কোন ক্লাব বা রেস্তোরাঁয় প্রবেশপথে লেখা থাকতো এখানে কুকুর এবং ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ।
(৩) বিভেদ : উপনিবেশের শ্বেতাঙ্গ শাসকগোষ্ঠী উপনিবেশগুলোতে বসবাসকারী ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গ স্বদেশীয় কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বিভেদ সৃষ্টি করেছিল। ভারতের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে রেলগাড়ি সরকারি অফিস-আদালতেও কৃষ্ণাঙ্গরা শ্বেতাঙ্গদের সমান অধিকার পেত না। তাছাড়া সামাজিক ধর্মীয় প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে উপনিবেশের মানুষদের মধ্যেও নানা বিভেদ সৃষ্টি করা হয়।
(৪) দাসত্ব : শ্বেতাঙ্গরা বহু স্থানে উপনিবেশের বাসিন্দাদের ক্রীতদাসে পরিণত করে। আপনি কেমন দেশ এর বিভিন্ন উপনিবেশ থেকে কৃষ্ণাঙ্গদের ক্রীতদাসে পরিণত করে পশ্চিমের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। পরবর্তীকালে ক্রীতদাস প্রথা নিষিদ্ধ হওয়ার পরও শ্বেতাঙ্গদের দাসত্ব করতে বহু কৃষ্ণাঙ্গ বাধ্য হয়।
(৫) চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক : ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গ প্রভুরা ভারত-চীন প্রভৃতি উপনিবেশ গুলি থেকে বহুদূরে চুক্তিভুক্ত শ্রমিককে আফ্রিকাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে বিভিন্ন শ্রমসাধ্য কাজে নিয়োগ করেন। বিদেশে তারা চরম দূর্দশার শিকার হয়। অনেকে আত্মীয়-স্বজনকে হারিয়ে চিরদিনের মতো বিদেশে থেকে যায় এবং সেখানে মৃত্যুবরণ করতে বাধ্য হয়।
(৬) জাতিগত দ্বন্দ্ব : শ্বেতাঙ্গদের শোষণ এবং অত্যাচার এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন উপনিবেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গরা শাসক সংখ্যালঘু শেতাঙ্গ দের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়। এর ফলে কখনো কখনো শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ দের মধ্যে জাতিগত দ্বন্দ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এই দ্বন্ধে শ্বেতাঙ্গরা অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন চালিয়ে কৃষ্ণাঙ্গদের বিদ্রোহ দমন করে। জামাইকা প্রদেশই এরূপ জাতিগত বিদ্বেষ এবং শ্বেতাঙ্গ প্রভিদের নির্যাতন অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছিল।
(৭) শোষণ : শ্বেতাঙ্গ ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির উপনিবেশের অর্থ-সম্পদ শোষণ করে কৃষ্ণাঙ্গদের উপর বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক শাসন চালায়। তারা উপনিবেশ গুলি থেকে বিভিন্ন কাঁচামাল খুব সস্তায় সংগ্রহ করে নিজের দেশে রপ্তানি করে শিল্পের বিকাশ ঘটায় এবং নিজেদের শিল্পজাত সামগ্রীর উপনিবেশের বাজারগুলিতে রপ্তানি করলে উপনিবেশিক বাসিন্দাদের কুটির শিল্প ধ্বংস হয়। ফলে উপনিবেশে বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক দুর্দশা বৃদ্ধি পায়।
উপনিবেশিক কৃষ্ণা নদীর উপর শাসন শ্বেতাঙ্গদের বৈষম্যমূলক শোষণ-নির্যাতনের ফলে নির্যাতিত কৃষ্ণাঙ্গরা শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে মুক্তি সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। বিংশ শতকের প্রথমার্ধে এই সংগ্রাম প্রবল হয়ে ওঠে। এর পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গদের শাসন এবং শোষণ থেকে মুক্তি পেতে কৃষ্ণাঙ্গ উপনিবেশ গুলি একে একে স্বাধীনতা লাভ করতে শুরু করে।
Other Model Activity Task : Model Activity Task 2022
কোন কোন উপাদান গুলি সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিক কতাবাদে বিস্তারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
উত্তরমুছুন