মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক
দ্বাদশ শ্রেণী
বিষয় - ইতিহাস
অধ্যায় - অতীত স্মরণ
নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
১. ইতিহাস লেখার আনুমানিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর : একজন ইতিহাসবিদ যে সমস্ত নিয়ম নীতি আদর্শ ও পদ্ধতি মেনে তার ইতিহাস রচনা করে থাকেন তা হলো ইতিহাস তত্ত্ব। আনুমানিক ইতিহাস তত্ত্ব বলতে আমরা অষ্টাদশ শতক থেকে শুরু করে বিংশ শতকের শেষ দশক সময়কাল পর্যন্ত ইতিহাস চর্চা কে বুঝে থাকে। সময় এবং সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসের বিষয়বস্তু বৈচিত্র্য ও ব্যাপকতায়, বিশ্লেষণের ধারায়, নিত্য নতুন তথ্যের সমারোহে এবং যুক্তিবাদী বিজ্ঞানী অনেক ত্রুটি মুক্ত, সুগঠিত ও আধুনিক রূপ পেয়েছে। এই দীর্ঘ প্রায় 300 বছরের ইতিহাস চর্চা বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যের আলোকে সমুজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
আধুনিক ইতিহাস লেখার আনুমানিক দৃষ্টিভঙ্গি :
(ক) জাতীয়তাবাদ : বিশ্বের প্রতিটি দেশেই ঐতিহাসিকদের রেখায় জাতীয়তাবাদের ছাপ স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়ে। বিভিন্ন দেশের ইতিহাস গুলিতে নিজ নিজ দেশের ঐতিহ্য ও শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ, ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব বিভিন্ন ইউরোপীয় রাষ্ট্রে জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটায়। ভারতীয় ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র দত্ত 3 খন্ড লেখেন প্রাচীন ভারতের সভ্যতার ইতিহাস যা হলো ভারতীয় জাতীয়তাবাদী ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।
(খ) যুক্তিবাদ : আধুনিক ইতিহাস তত্ত্বের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো যুক্তিবাদ। আধুনিকতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনে কুসংস্কারও অন্ধ বিশ্বাসের বদল আসে যুক্তিবাদ। মানুষের অন্তরে সমালোচনামূলক ও প্রকৃতিবাদী দর্শনের জন্ম হয়। মানুষ বুঝতে শেখে কোনো কিছু বিশ্বাস করার আগে তাকে যুক্তিবাদের কষ্টিপাথরে যাচাই করে নেওয়া উচিত। আধুনিক যুক্তিবাদী ঐতিহাসিকগণ স্থান-কাল চরিত্র নির্বিশেষে যুক্তিবাদের আলোকে তথ্য সূত্র গুলি বিচার করে সেগুলি ইতিহাসে প্রয়োগ করে থাকেন।
(গ) প্রগতির ধারণা : আধুনিক ইতিহাস চর্চায় যুক্ত হয়েছে প্রগতির ধারণা। আধুনিক ইতিহাসের নতুন ব্যাখ্যা হল মানুষ ক্রমশ পূর্ণতা দিকে এগিয়ে চলেছে। ইতিহাসের প্রগতির ধারা নিরবিচ্ছিন্ন নয় তাতে উত্থান যেমন আছে পতনও তেমন আছে। ইতিহাসে প্রগতির আসল অর্থ হলো মানুষের ক্ষমতা ও সম্ভাবনার বিপুল বিস্তার। ইতিহাসে প্রগতির ধারণায় অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যৎ একই শৃংখলে আবদ্ধ। ইতিহাসের ঘটনা ও মূল্যবোধ উভয়েরি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রগতির উদ্ভব ঘটে।
(ঘ) দৃষ্টিবাদ : রোমান্টিক ভাবধারায় প্রক্রিয়ায হিসেবে উদ্ভব ঘটে দৃষ্টিবাদের ইতিহাসের দর্শনের। রোমান্টিক পর্বের ইতিহাসের যে সমস্ত ব্যাখ্যা দেয়া হয় সেগুলি যথেষ্ট তথ্যনির্ভর ছিল না। দৃষ্টি বাদীদের সন্ধ্যারা ঐতিহাসিক ছোট ছোট বিষয় কেন্দ্রীক সমালোচনামূলক ইতিহাস রচনা করে থাকেন।
(ঙ) আপেক্ষিকতাবাদ : ইতিহাসের তথ্য সূত্র গুলি কখনোই চির সত্য নয় নতুন যুগের নতুন দৃষ্টিভঙ্গির বিচারে তথ্যসূত্রের সত্যতা আপেক্ষিক বলে প্রমাণিত হয়। আপেক্ষিকতাবাদ এর দুটি বৈশিষ্ট্য প্রথমটি হল ইতিহাসের সঙ্গে বর্তমানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অনুসন্ধান এবং দ্বিতীয়টি হলো বর্তমান এর প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী ইতিহাসের রচনা। এই মতবাদ অনুযায়ী ইতিহাসে বিষয়বস্তুর গুরুত্ব সমান গুরুত্ব ঘটনার পরিণতির গুরুত্ব সবই আপেক্ষিক।
(চ) বিজ্ঞানধর্মীতা ও অনৈতিকতাবাদ : সম্প্রতিক ইতিহাস রচনায় বিজ্ঞানসম্মতভাবে তথ্যসূত্র সংগ্রহ করে ঐতিহাসিক ব্যাখ্যার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞানে যেরকম পরীক্ষা অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণের দ্বারা সত্য উদঘাটনের চেষ্টা করা হয় ইতিহাসেও একই রকমভাবে বিষয়বস্তুর ঘটনার সত্যতা কাছাকাছি পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয়। ইতিহাসের সঙ্গে নৈতিকতারও সম্বন্ধে রয়েছে। ইতিহাসে নৈতিক মূল্যবোধের কষ্টিপাথরে ঐতিহাসিক চরিত্র ও ঘটনা গুলি বিচার করা হয়।
২. ঐতিহাসিক মিউজিয়াম, সামরিক মিউজিয়াম, বিজ্ঞান মিউজিয়াম আর ভ্রাম্যমাণ মিউজিয়াম - এর কার্যগত এবং বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য উদাহরণ সহযোগে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : ঐতিহাসিক মিউজিয়াম, সামরিক মিউজিয়াম, বিজ্ঞান মিউজিয়াম আর ভ্রাম্যমাণ মিউজিয়াম - এর কার্যগত এবং বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য উদাহরণ সহযোগে ব্যাখ্যা করা হল -
ঐতিহাসিক মিউজিয়াম : কোন প্রাচীন ঐতিহাসিক গৃহ কে কেন্দ্র করে যে জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয় তা ঐতিহাসিক গৃহ জাদুঘর বা ঐতিহাসিক মিউজিয়াম নামে পরিচিত। ঐতিহাসিক মিউজিয়াম বলতে কোন বিশেষ স্থাপত্যরীতি সম্বন্ধীয় অট্টালিকা কোন খ্যাতনামা ব্যক্তির জন্মস্থান বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী ছিল এমন স্থান হতে পারে।
উদাহরণ : মুর্শিদাবাদ জেলার লালবাগ এ অবস্থিত হাজারদুয়ারি একটি ঐতিহাসিক মিউজিয়াম এর আদর্শ উদাহরণ। এখানে বাংলার নবাবি আমলের বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষিত আছে।
সামরিক মিউজিয়াম : সামরিক জাদুঘর কোন দেশের সামরিক বাহিনী ও যুদ্ধ সংক্রান্ত নানা নিদর্শন সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করা হয়। সাধারণত কোন দেশের জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে সে দেশে এ ধরনের জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই জাদুঘরে যুদ্ধকালীন অস্ত্রশস্ত্র নানান সামরিক সরঞ্জাম, সেনাদের পোশাক, যুদ্ধকালীন প্রচার কর্মসূচী, যুদ্ধের সময় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ধরন প্রভৃতি নিদর্শন সংগ্রহ সংরক্ষণ ও প্রদর্শন এর ব্যবস্থা করা হয়।
উদাহরণ : কানাডিয়ান মিউজিয়াম এবং দা ন্যাশনাল ফাস্ট ওয়াল্ড ওয়ার মিউজিয়াম প্রভৃতি হলো সামরিক জাদুঘর এর উদাহরণ।
বিজ্ঞান মিউজিয়াম : বিজ্ঞান মিউজিয়াম বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত বিবর্তন, বিজ্ঞানের অগ্রগতি, বিস্ময় প্রভৃতি বিষয়ের নিদর্শন সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করে থাকে। বিজ্ঞানের মিউজিয়াম গুলি অধিকাংশ সময়ে একটি গম্বুজের চতুর্দিকে বৃত্তাকার অট্টালিকায় গড়ে ওঠে। বিভিন্ন বিজ্ঞান জাদুঘর আবার বায়ুযান, কম্পিউটার, রেলপথ, জ্যোতিষ বিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা প্রভৃতি পৃথক পৃথক বা বিশেষ বৈজ্ঞানিক বিষয়ের ওপর আলোকপাত করে থাকে।
উদাহরণ : শিকাগোর মিউজিয়াম অব সায়েন্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি হলো একটি বিজ্ঞান মিউজিয়াম।
ভ্রাম্যমাণ মিউজিয়াম : যখন কোন চলমান যানের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে ঐতিহাসিক বা দ্যুলোক নিদর্শনসমূহ দর্শকের সামনে প্রদর্শন করা হয় তখন তাকে ভ্রাম্যমাণ মিউজিয়াম বলে। ট্রেন, মোটর ভ্যান অভিযানে ভ্রাম্যমাণ মিউজিয়াম তৈরি করে তা স্থান থেকে স্থানান্তরে পাঠানো হয়।
উদাহরণ : 2011 খ্রিস্টাব্দে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে তার জীবনকাহিনী কে কেন্দ্র করে ভারতীয় রেল একটি ট্রেনে জাদুঘর তৈরি করে।
৩. পেশাদারী ইতিহাস ও অপেশাদার ইতিহাসের তুলনামূলক আলোচনা করো।
উত্তর : ঐতিহাসিক ই. এইচ. কারের এর ধারণাই ইতিহাস থেকে যে সমস্ত সাধারণ সূত্র গড়ে ওঠে সেগুলি মানুষের খুব কাজে লাগে। আসলেই ইতিহাস মানুষের অতীত কে জানাতে সাহায্য করে। তাই বলা হয় ইতিহাস হল মানব জাতির অতীত কর্মকাণ্ডের কালানুক্রমিক ও ধারাবাহিক লিখিত বিবরণ। প্রাচীন গ্রিক ইতিহাসবিদ ইতিহাসের গুরুত্ব প্রসঙ্গে বলেছেন যে "অতীতকালে যা ঘটেছে তার সঠিক জ্ঞান ভবিষ্যতে প্রয়োজন আসবে, কারণ মানুষের কর্মকাণ্ডের বাস্তবতার নিরিখে ভবিষ্যতেও একই ধরনের ঘটনা পুনরায় সংঘটিত হবে।"
এই ঐতিহাসিকদের মধ্যে অনেকে ইতিহাস চর্চা কে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন, যারা পেশাদার ঐতিহাসিক নামে পরিচিত পান। আবার ঐতিহাসিকদের মধ্যে কেউ কেউ অবসর হিসাবে শখের ইতিহাস চর্চা করে থাকেন যারা হলেন মূলত অপেশাদারী ঐতিহাসিক।
নিচে পেশাদারি ও অপেশাদারী ইতিহাসের মূল পার্থক্য গুলি আলোচনা করা হলো -
পেশাদারী ইতিহাস :
প্রথমত, পেশাদারী ইতিহাস চর্চায় আর্থিক সম্পর্কের বিষয়টি ছড়িয়ে থাকে। পেশাদারী ইতিহাস চর্চার জন্য অনেক সময় বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প থেকে আর্থিক সহায়তা মেলে।
দ্বিতীয়ত, পাশাপাশি এই ধরনের ইতিহাস চর্চায় ইতিহাসবিদ ব্যক্তিগতভাবেও আর্থিক সুবিধা গ্রহণের সুযোগ পান। পেশাদারী ইতিহাস বিদের জীবন-জীবিকাও অনেকাংশে নির্ভরশীল তাদের এই ইতিহাস চর্চার কাজের উপর।
তৃতীয়ত, পেশাদারী ইতিহাস বি তাদের গবেষণার কাজে খুব উন্নত মানের আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন।
চতুর্থত, প্রকৃতপক্ষে ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউরোপের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইতিহাস চর্চার কাজ পেশাদারী ভিত্তিতে শুরু হয়। এই সময় থেকে কোন কোন ঐতিহাসিক ঐতিহাসিক গোষ্ঠী ইতিহাস চর্চা ও ইতিহাসের গবেষণাকে পেশাদারী কাজ হিসাবে গ্রহণ করেছেন এবং পেশাদারী ভিত্তিতে ইতিহাসের নতুন নতুন দিক উন্মোচন করে চলেছেন।
পঞ্চমত, পেশাদারী ইতিহাস চর্চার হল একটি সর্বক্ষণের কাজ। গবেষক বা ইতিহাসবিদ তাদের প্রধান পেশা হিসাবে ইতিহাস চর্চার কাজ করে থাকেন।
অপেশাদার ইতিহাস :
প্রথমত, অফিসে দেরি ইতিহাস চর্চা উনিশ শতকের অনেক আগেই অর্থাৎ প্রাচীনকাল থেকেই শুরু হয়েছে বলে অনুমান করা হয়।
দ্বিতীয়ত, সাধারণভাবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে জাতীয় ইতিহাসকে তুলে ধরার জন্য ঐতিহাসিকরা কলম ধরে থাকেন। এ ক্ষেত্রে প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহাসিক কলহনের কথা উল্লেখ করা যায়।
তৃতীয়ত, অপেশাদার ইতিহাস চর্চায় সাধারণত স্থায়ী তথ্যাদি ক্ষেত্রসমীক্ষা প্রভৃতি পদ্ধতি ব্যবহার করে ঐতিহাসিক তথ্যাদি সংগ্রহ করা হয়।
চতুর্থত, বর্তমানকালেও পেশাদারী ইতিহাস চর্চা তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র প্রেক্ষাপটে হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগে যে সমস্ত স্থানীয় ইতিহাস চর্চা গুলি হয়ে থাকে সেগুলির স্থানীয় ইতিহাস কে তুলে ধরে।
পঞ্চমত, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপেশাদার ইতিহাস চর্চার গবেষকগণ তাদের ইতিহাস চর্চার কাছ থেকে একটি আংশিক সময়ের কাজ হিসাব গণ্য করে থাকেন
।
৪. উপযুক্ত তথ্য সহযোগে নিচের ছকটি পূরন করো :
ক) পৌরাণিক কাহিনী :
বৈশিষ্ট্য : (১) পৌরাণিক কাহিনী গুলি অতীতের সময় থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে বর্তমান সমাজে প্রচলিত হয়।
(২) পৌরাণিক কাহিনী গুলি হল প্রাগৈতিহাসিক যুগের ইতিহাস। মানব সভ্যতার উন্মোচনের আগে মানুষ কেমন ছিল তার বিভিন্ন খন্ড চিত্র পাওয়া যায় এই কাহিনী গুলিতে।
উদাহরণ :
(১) খ্রিস্টান ধর্মের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলে একটি পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে প্রবল বন্যায় পৃথিবীর স্থলভাগ ডুবে গেলে বিভিন্ন প্রাণীর একজোড়া করে প্রতিনিধি নোয়ার নৌকায় আশ্রয় নেয়। এই প্রাণীদের থেকেই আবার পৃথিবীতে জীবজগতে প্রসার ঘটে।
(২) প্রাচীন হিন্দু ধর্মের একটি জনপ্রিয় কাহিনী হলো মহাকবি কালিদাসের কাহিনী। প্রথম জীবনের মূর্খ কালিদাস গাছের ডালে বসে সেই ডালের বড়া কাটছিলেন। পরবর্তীকালে দেবী সরস্বতীর বর পেয়ে তিনি মহাকবি হন এবং সংস্কৃত ভাষায় অসাধারণ কয়েকটি কাব্য রচনা করেন।
ইতিহাস নির্মাণে ভূমিকা : পৌরাণিক কাহিনী গুলিতে অতীত ইতিহাসের বহু সত্য ও যথার্থ উপাদান লুকিয়ে থাকে। প্রাচীন গ্রিসের পৌরাণিক কাহিনী গুলিকে তাদের দেবতা পূর্বপুরুষ এবং বীরপুরুষের গল্প মনে করা হয়। পৌরাণিক কাহিনী গুলির সঙ্গে তুলনা মূলক পদ্ধতিতে যাচাই করে ইতিহাসে বহু সাল তারিখ নির্ণয় করা সম্ভব হয়। পুরান গুলি থেকে প্রাচীনকালের বিভিন্ন রাজবংশের বংশ তালিকা জানা যায়। প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন পুরাণে বহু প্রাচীন রাজবংশের নাম ও পরিচয় পাওয়া যায়।
খ) লোককথা :
বৈশিষ্ট্য : (১) কিংবদন্তি, পুরান প্রভৃতি কাহিনীগুলি তে শিশু কিশোর যুবক বয়স্ক প্রভৃতি সকলের জন্য রসদ থাকে। কিন্তু লোককথায় সাধারণত শিশু ও কিশোর কিশোরীদের জন্য রসদ থাকে।
(২) সাধারণভাবে লোককথার প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা বা রচয়িতা দের পরিচয় সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তবে আসল লোক কথাগুলি পরিমার্জন করে যারা এগুলি আবার প্রকাশ করেন তাদের কিছু কিছু নাম ও পরিচয় সম্পর্কে জানা যায়।
উদাহরণ : (১) দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের ঠাকুরমার ঝুলি নামক বইয়ের একটি জনপ্রিয় গল্প হল সাত ভাই চম্পা যা আদর্শ লোককথার উদাহরণ।
(২) আলিবাবা ও চল্লিশ চোর হল প্রাচীন আরব্য রজনীর একটি আদর্শ লোককথার উদাহরণ।
ইতিহাস নির্মাণের ভূমিকা : কোন সমাজে সৃষ্ট লোক কথাগুলিকে সেই সমাজের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় প্রভৃতি বিষয়ের যথেষ্ট প্রভাব পড়ে। হোলি অতীতকালে এই সমাজের সামাজিক সাংস্কৃতিক ধর্মীয় ঐতিহ্য কেমন ছিল তার মোটামুটি আবার সেই সমাজে সৃষ্ট লোককথার কাহিনীগুলি থেকে জানা যায়।
গ) স্মৃতিকথা :
বৈশিষ্ট্য : (১) স্মৃতিকথা কোন কাল্পনিক উপন্যাস নয় এর মূল ভিত্তি হলো বাস্তবতা। স্মৃতিকথার কাহিনী কোন ব্যক্তির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অভিজ্ঞতার ফসল।
(২) স্মৃতিকথা সাধারণতঃ লেখককে দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা হয়। রচনা উপস্থাপনা করা হয় উত্তম পুরুষে। অর্থাৎ বক্তা আবার লেখক নিজে কাহিনীর কথক বলে স্মৃতিকথার কাহিনী কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
উদাহরণ : (১) বিখ্যাত বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী মান্না দের লেখা জীবনের জলসাঘরে একটি আদর্শ স্মৃতিকথার উদাহরণ।
(২) বাংলাদেশের সাহিত্যিক সুফিয়া কামালের লেখা একাত্তরের ডায়েরী একটি মূল্যবান স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ।
ইতিহাস নির্মাণে ভূমিকা : অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সিটি কথাগুলি গুনি ব্যাক্তিদের রচনা করেন। হলে তাতে অবান্তর পক্ষপাতমূলক ও অতিরঞ্জিত ঘটনার প্রবেশ রাস পায় এবং সেগুলি থেকে অতীতের বিভিন্ন বাস্তব ঘটনার তথ্য ও বিবরণ পাওয়া যায়। তাছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে ঘটনার বিবরণ তাদের স্মৃতিকথা গুলিতে আলোচনা করেন।
ঘ) কিংবদন্তি :
বৈশিষ্ট্য : (১) কিংবদন্তির বিষয় বস্তু বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। ইতিহাস নির্ভর কাহিনী, প্রেম বিরহ সম্পর্কিত কাহিনী, আধ্যাত্মিক ঘটনা, সন্ন্যাসী ফকির পীর-দরবেশ এর কাহিনী ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ঘটনা কিংবদন্তির বিষয়বস্তু হয়ে থাকে।
(২) কিংবদন্তির ঘটনাগুলির সম্পূর্ণ ঐতিহাসিক সত্যতা সম্পর্কে সন্দেহ থাকলেও একথা সাধারণভাবে স্বীকার করে নেয়া হয় যে কিংবদন্তি চরিত্র গুলি অতীতকালে একসময় জীবিত ছিলেন। রামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণ হারকিউলিস প্রমুখ কিংবদন্তি চরিত্র অস্তিত্ব সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণের প্রায়ই নিশ্চিন্ত।
উদাহরণ : (১) প্রাচীন ভারতের মহাকাব্য রচনায় রামায়ণে উল্লিখিত রামচন্দ্র একটি উল্লেখযোগ্য কিংবদন্তি চরিত্র। রামচন্দ্রের সম্পর্কে প্রচলিত কিংবদন্তি ঘটনা গুলির মধ্যে অন্যতম হল রাজ সিংহাসন ছেড়ে পতিতা ও ব্রাক্ষণ প্রসঙ্গ নিয়ে 14 বছরের জন্য বনবাসে যাত্রা লংকা রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং কৃষি তাকে উদ্ধারের কাহিনী এখানে বর্ণিত আছে।
(২) মহাকাব্য মহাভারতে উল্লেখিত শ্রীকৃষ্ণ চরিত্রটিও একটি অন্যতম কিংবদন্তি চরিত্র। শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে কিংবদন্তির ঘটনা গুলির মধ্যে অন্যতম হলো কংসের কারাগারে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম লাভ কংস কে হত্যা অসংখ্য গোপিনীদের নিয়ে কৃষ্ণের লীলা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনের রথের সারথি হিসাবে শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকা যুদ্ধক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক অর্জুনকে ভগবত গীতার শ্লোক শোনানো প্রভৃতি।
Other Model Activity Task : Model Activity Task 2022
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ