মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক
ভূগোল
দ্বাদশ শ্রেণী
অধ্যায় : ভূমিরূপ প্রক্রিয়া
নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখ :
১. চিত্রসহ আর্টেজীও কূপ কিভাবে গঠিত হয় তা ব্যাখ্যা করো। উষ্ণ প্রস্রবণ ও গিজারের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করো।
উত্তর : ভূপৃষ্ঠে ভাঁজযুক্ত শিলাস্তরে আর্টেজীয় কূপ গড়ে ওঠে। যদি দুটি অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের মাঝে একটি প্রবেশ্য শিলাস্তর অত ভঙ্গের আকারে অবস্থান করে এবং প্রবেশ্য শিলাস্তরের দুই প্রান্ত ভূপৃষ্ঠে উন্মুক্ত থাকে তাহলে বৃষ্টিপাতের জল ওই দুই প্রান্ত দিয়ে এসে প্রবেশ্য শিলাস্তরের মধ্যভাগে সঞ্চিত হয়। এভাবেই ভৌম জলের ভাণ্ডার গড়ে উঠলে ওই জলপূর্ণ প্রবেশ্য শিলাস্তরটিকে অ্যাকুইফার বলে। প্রবেশ্য শিলাস্তরের নিচে এবং উপরে অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের অ্যাকুইফার এর জল দিয়ে নিচে যেতে পারে না বা উঠছে উপরে উঠতে পারে না। এছাড়া অত ভঙ্গের মধ্যভাগের তুলনায় দুই প্রান্ত অনেক উপরে থাকে বলে মধ্যভাগে যথেষ্ট জলের চাপ সৃষ্টি হয়। এরকম অবস্থায় মধ্যভাগের যেকোনো স্থানে কূপ খনন করলে প্রবেশ্য স্তরে সঞ্চিত জল স্বাভাবিকভাবে আপনাআপনি প্রবল বেগে উপরে উঠতে থাকে। এই কূপটি আর্টেজীয় কূপ বলে। যেখানে কূপ খনন করা হয় সেখানে বৃষ্টিপাত না হলেও প্রবেশ্য স্তরের দুই প্রান্তে বেশি পরিমাণ বৃষ্টি হলেই ওই গ্রুপ থেকে সারা বছর জল পাওয়া যায় তাছাড়া কোনো কারণে অ্যাকুইফারের জলের স্তর নেমে গেলে পাম্পের সাহায্যে কূপ থেকে জল তোলা হয়।
উষ্ণ প্রস্রবণ গীজারের মধ্যে পার্থক্য :
প্রথমত, ভূপৃষ্ঠের কোন স্থান দিয়ে ভূগর্ভের জল বা ভৌম জল কোন একটি নির্দিষ্ট পথ ধরে স্বাভাবিক গতিতে বেরিয়ে আসলে তাকে প্রস্রবণ বলে; অপরদিকে গিজার হলো এক বিশেষ ধরনের উষ্ণ প্রস্রবণ, যখন জল এবং বাষ্প নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে প্রবল বেগে ও সশব্দে নির্গত হয় তখন তাকে গিজার বলে।
দ্বিতীয়ত, উষ্ণ প্রস্রবণ এর মাধ্যমে জলের প্রবাহের কোনো বাধা থাকে না তাই জল মুক্ত ভাবে প্রবাহিত হতে পারে ; কিন্তু গিজার এর মাধ্যমে জলে প্রবাহে বাধা থাকে ফলে এই জল বাধার উপর চাপ দিতে থাকে এবং বাধা সরে গেলে তা পড়ার মতো ভূপৃষ্ঠের বাইরে বেরিয়ে আসে।
তৃতীয়ত, পশ্চিমবঙ্গে বক্রেশ্বর উষ্ণ প্রস্রবণ লক্ষ্য করা যায় ; আর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্মিং প্রদেশের ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কে গিজার লক্ষ্য করা যায়।
২. ভূজলপৃষ্ঠের উচ্চতার পরিবর্তনের কারণ সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
উত্তর : নিচে ভূজলপৃষ্ঠের উষ্ণতা পরিবর্তনের কারণ গুলি সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো -
(ক) গ্রীষ্মকালে বাষ্পীভবন ও প্রস্বেদন বৃদ্ধি পায় ফলে ভূজলপৃষ্ঠে নিচে নেমে যায়।
(খ) বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের জন্য ভূগর্ভের জল পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ে।
(গ) জোয়ার ভাটার সময় জলতল সাময়িকভাবে ওঠানামা করে। জোয়ারের সময় জল বেড়ে ওঠে আর ভাটার সময় জল নিচে নেমে যায়।
(ঘ) বেশি উষ্ণ অঞ্চলের বাষ্পীভবনের মাত্রা বেশি হওয়ায় ভৌম জলের পরিমাণ কম হয় ভূজলপৃষ্ঠের উচ্চতা পরিমাপ কমে।
(ঙ) মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনে বা কৃষি ক্ষেত্রে এবং শিল্পে প্রচুর পরিমাণে জল ব্যবহৃত হয় এইভাবে অনবরত ভূগর্ভের জল উত্তোলনের ফলে ভূপৃষ্ঠে জল এর উচ্চতা কমে যায়।
৩. কার্স্ট ভূমিরূপ গড়ে ওঠার প্রয়োজনীয় শর্ত সমূহ উল্লেখ করো।
উত্তর : আদর্শ কাস্ট ভূমিরূপ গঠনের প্রধান শর্ত গুলি হল -
(১) সমগ্র অঞ্চলটি আয়তনে বিশাল হওয়া প্রয়োজন যাতে দ্রবণের কাজ ভালোভাবে হতে পারে।
(২) ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি দ্রব্য যেমন চুনাপাথর ডলোমাইট চক বা নুড়ি পাথর ইত্যাদি থাকা একান্ত প্রয়োজন। বিশেষত চুনা পাথরের ওপর কাস্ট ভূমিরূপ সবচেয়ে ভালো তৈরি হয়।
(৩) বিশুদ্ধ চুনাপাথরের স্তরের গভীরতা যথেষ্ট হওয়া দরকার। ও বিশুদ্ধ ও পাতলা চুনাপাথরের স্তরে কাস্ট ভূমিরূপ এর বিকাশ ব্যাহত হয়।
(৪) সমগ্র অঞ্চলটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেকটা উঁচুতে অবস্থিত হওয়া প্রয়োজন এর ফলে স্থানীয় ভৌম জল ভালোভাবে দ্রবণের কাজ করতে পারে।
(৫) কাস্ট ভূমিরূপ বিকাশের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত পরিমিত উদ্ভিদ ও অন্ত:সলিলা নদী প্রয়োজন। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 30 শে মে এর বেশি হওয়া দরকার । এই কারণেই মরু অঞ্চলের চুনাপাথর থাকলেও কাস্ট ভূমিরূপ গড়ে ওঠে না।
৪. চিত্রসহ চুনাপাথরের গুহায় গঠিত ভূমিরূপ গুলির বিবরণ দাও।
উত্তর : চুনাপাথরের গুহার দ্রবন কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ গুলি কে কেমন ট্র্যাভারটাইন বা স্পেলিওথেম বলা হয়। চুনাপাথরের গুহা এই তিন ধরনের সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ গঠিত হয় -
(ক) ড্রিপস্টোন বা পাতনপ্রস্তর : গুহার ছাদ থেকে জমে চুইয়ে পড়ার সময় তার সঙ্গে দ্রবীভূত চুনাপাথর ফোটা ফোটা রূপে পরে যেসব ভূমিরূপ গঠিত হয় সেগুলিকে পাতন প্রস্তর বলে। গুহায় সৃষ্ট পাতন প্রস্তর এর উল্লেখযোগ্য ভূমিরূপ গুলি হল -
(অ) স্ট্যালাকটাইট : ভূপৃষ্ঠের উপর দিয়ে প্রবাহিত জল চুনাপাথরকে দ্রবীভূত করে এবং চুন মিশ্রিত জল গুহার ছাদ ও দেওয়ালের অসংখ্য ফাটল ও ধারণের মধ্য দিয়ে চুদিয়ে নিচে নামে। এরূপ ঝুলন্ত চুনের ফোটা থেকে জল বাষ্পীভূত হলে ক্যালসিয়াম কার্বনেট সঞ্চিত হয় এবং গুহার ছাদ থেকে দীর্ঘ স্তম্বের মত চুনের ঝুড়ি নিচের দিকে বাড়তে থাকে একে স্ট্যালাকটাইট বলে।
(আ) স্ট্যালাগমাইট : গুহার ছাদ থেকে চুলের ফোটা মেঝেতেও পড়লেও চুন জমা হয়। এর ফলে চুলের অপেক্ষাকৃত মোটা স্তম্ভ উপরদিকে বাড়তে থাকে। একে স্ট্যালাগমাইট বলে।
(ই) স্তম্ভ বা পিলার : যখন গুহার ছাদ থেকে নিচের দিকে এবং গুহার নিজে থেকে অপর দিকে ক্রমশ বাড়ছে এমন চুনের ঝুড়ি এক সঙ্গে মিলিত হয় তখন তাকে স্তম্ভ বা পিলার বলে।
(ঈ) হেলিকটাইড : অনেক সময় চুনাপাথরের গুহা ই জুন অপরদিকে নিচের দিকে 5 বরাবর তীর্যকভাবে অথবা পাকানো ভাবে বাড়ে তখন তাকে হেলিকটাইড বলে।
(উ) হেলিগমাইট : গুহার মেঝে থেকে বিভিন্ন দিকে প্রসারিত চুলের মূর্তিকে হেলিগমাইট বলে।
(ঊ) কার্টেন : গুহার ছাদ থেকে ঝুলন্ত স্ট্যালাকটাইট একত্র সমাবেশ ঝোলানো খাঁজকাটা পদার্থের মত দেখতে লাগে একে ড্রেপ বা কার্টেন বলে।
(খ) ফ্লেস্টোন বা প্রবাহ প্রস্তর : গুহার ভিতরে প্রবাহমান জলের মাধ্যমে সৃষ্ট ভূমিরূপ কে প্রবাহ প্রস্তর বলে।
(গ) কিনারা প্রস্তর : গুহার মধ্যে উপচে পড়া জল প্রবাহের মাধ্যমে গুহার দুই কিনারায় যে ভূমিরূপ গুলি গড়ে ওঠে সেগুলিকে কিনারা প্রস্তর বলে।
Other Model Activity Task : Model Activity Task 2022
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ