মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক
বাংলা
দ্বাদশ শ্রেণি
পার্ট ১
১. 'দারুন একটা হতাশা জেগেছে ওর মনে' - কার সম্পর্কে কার এই উপলব্ধি? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির হতাশার চিত্রটি বিবৃত করো।
উত্তর : প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের "কে বাঁচায় কে বাঁচে"ছোট গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয় একদিন বাড়ি থেকে অফিস যাওয়ার পথে ফুটপাতে অনাহারে মৃত্যু দেখে নিজেকে অপরাধী বলে ভাবতে শুরু করে। বাড়িতে ভালো করে খেতেও ঘুমাতে পারে না। নিজের স্ত্রী সহ সে এক বেলা না খেয়ে ওই খাবার ও অভুক্তদের বিলানো শুরু করে। কিন্তু এতেও তাঁর হতাশা দূর হয় না বলেই মাইনের দিন নিখিল এর মাধ্যমে পুরো মানেটা সে ত্রাণ তহবিলে দান করে দেয়।
ক্রমশ তার অফিসে আসা যাওয়া আর ঠিক থাকে না কাজে ভুল করে প্রায়ই চুপচাপ বসে থেকে ভাবে। বাড়িতেও বিশেষ না থেকে শহরের গাছতলায় ডাস্টবিনের ধারে ফুটপাতে পড়ে থাকা মন্বন্তর গ্রস্ত মানুষ গুলোকে দেখতে ঘুরে বেড়ায়। এমনকি সকালে লঙ্গরখানা গুলিতে ঘুরে বেরিয়ে অন্ন প্রার্থীদের সমাগম দেখে প্রতিবাদহীন অনাহারীদের একঘেয়ে বক্তব্য ভাষা ও বচন ভঙ্গি শোনে।
এরপর একদিন অফিস যাওয়া বন্ধ করে দেয় মৃত্যুঞ্জয়। তারপর একদিন বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে দিল। কিছুদিন পর সিল্কের জামা ও দ্রুতির জায়গায় ছেঁড়া কাপড় তার পোশাক হয়ে দাঁড়ায়। আদুল গায়ে ক্রমে ক্রমে মাটির স্তর জমে যায়। দাড়িতে তার মুখ ঢেকে যায়। একটি ছোট মগ্ন হাতে আরো দশজন অনাহারীদের সঙ্গে সে উপরে থাকে ফুটপাতে এবং তাদেরই মতো সেও লঙ্গরখানায় লাইন নিয়ে কাড়াকাড়ি করে খিচুড়ি খায়। গ্রাম থেকে আসা দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষ গুলির মত একঘেয়ে সুরে অবশেষে ও বলা শুরু করে - "গা থেকে এইচি। খেতে পাইনি বাবা। আমায় খেতে দাও।"
এইভাবে ঘটনা পরম্পরায় মধ্যবিত্ত যুবক মৃত্যুঞ্জয় মাত্র দুই তিন মাস সময় কাল এর মধ্যেই তার পেশা পরিবার ও সমাজকে ত্যাগ করে মিশে যায় ফুটপাতের জীবনে সেই অনাহার গ্রস্থ মানুষদের মধ্যে।
২. 'কদিন পরে মাইনের তারিখ এল' - এই বিশেষ তারিখের নিরিখে নিখিল ও মৃত্যুঞ্জয়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের "কে বাঁচায় কে বাঁচে" ছোট গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয়ের সহকর্মী বন্ধু ছিল নিখিল। প্রখর বুদ্ধিমান সেই রোগা মানুষটি ছিল কিছুটা অলস প্রকৃতির। কারো কারো মতে দুই সন্তানের পিতা নিখিলের সংসারে বিশেষ মন নেই। বইপত্র পড়ে এবং নিজের ভাবনার জগতে বিচরণ করে অবসর বিনোদন করত এই অন্তর্মুখী যুবকটি।
অফিসের সমপদস্থ সহকর্মী মৃত্যুঞ্জয়ের মাইনে নিখিলের থেকে কিছুটা বেশি হলেও অন্য সকলের মত নিখিলও তাতে বেশ পছন্দি করত, হয়তো তাকে কিছুটা অবজ্ঞাও জড়িয়ে থাকতো। তবে মৃত্যুঞ্জয়ের মানসিক শক্তির সাথে নিখিল কিছুটা হলেও যেন নিস্তেজ ছিল। সেইসঙ্গে মাঝে মাঝে তার আফসোস হতো এভাবে যে সে যদি নিখিল না হয়ে মৃত্যুঞ্জয় হতো তবে তা মন্দ হতো না। এর থেকে মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতি সহকর্মী নিখিলের মৃদু ঈর্ষার পরিচয়ও পাওয়া যায়।
তবে নিখিল স্বার্থপর ছিল না। তাই প্রতি মাসে তিন জায়গায় তাকে অর্থ সাহায্য পাঠাতে দেখি আমরা। তাছাড়া মৃত্যুঞ্জয় কে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘদিন ধরে সে সচেষ্ট থেকেছে, তার পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছি এবং মৃত্যুঞ্জয় অফিস যাওয়া বন্ধ করলে তার ছুটির ব্যবস্থাও করেছে।
পরার্থপর হলেও নিখিলের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে বাস্তব জ্ঞানের প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। মন্বন্তরের বাজারে তাই সে তার অর্থসাহায্য 5 টাকা করে কমাতে চেয়েছে।
হৃদয়বান, সামাজিক যুবক নিখিল দুর্বিষহ দুর্ভিক্ষে দুঃখী হলেও প্রিয় বন্ধু মৃত্যুঞ্জয়ের মত একেবারে ভেঙে পড়েনি। তাছাড়া মাইনে পুরো টাকা মৃত্যুঞ্জয় ত্রাণ তহবিলে দান করলে সে তার প্রতিবাদ করেছে একথা ভেবে যে "এভাবে দেশের লোক কে বাঁচানো যায় না"। মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবারের প্রতি ভাবনাও তার কথায় প্রতিফলিত হয়েছে। হৃদয়বান সাধারণ মানুষের মতোই সে এই যৌক্তিক কথাই জানিয়েছেন "নিজেকে না খাইয়ে মারা পাপ।" সুতরাং মৃত্যুঞ্জয় থেকে নিখিল এক হৃদয়বান এবং বাস্তববাদী চরিত্র।
৩. "কে বাঁচায় কে বাঁচে" - এই তীর্যক নামকরণের যথার্থ আলোচনা করো।
উত্তর : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের "কে বাঁচায় কে বাঁচে" ছোট গল্পের প্রধান চরিত্র চাকুরীজীবী বিবাহিত যুবক মৃত্যুঞ্জয় পঞ্চাশের মন্বন্তরেকালে বাড়ি থেকে অফিস যাওয়ার পথে একদিন ফুটপাতে অনাহারে মৃত্যু এক বীভৎস দৃশ্য দেখে ফেলে। এই দৃশ্য দেখে সে এতই আঘাত পায় এবং অপরাধবোধে দীর্ণ হয়ে পড়ে যে তারপর থেকে ভালো করে খেতেও ঘুমাতে পারে না। নিজের স্ত্রী সহ মৃত্যুঞ্জয় তাই এক বেলা খাওয়া কমিয়ে সেই খাবার অনাহারীদের দিতে শুরু করে। এতেও তাঁর হতাশা দূর না হওয়ায় মাইনের দিন পুরো মানেটা শেখ সহকর্মী বন্ধু নিখিল এর মাধ্যমে ত্রাণ তহবিলে দান করে দেয়। শহরের ফুটপাতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দুর্ভিক্ষ পীড়িত দের দেখতে দেখতে এরপর একদিন সে অফিস ও বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং ক্রমে তাদেরই একজন হয়ে যায়। ছেড়া ন্যাকড়া পড়ে মুখ দাড়ি রেখে মগ হাতে লঙ্গরখানায় গিয়ে মারামারি করে খিচুড়ি খেতে থাকে এবং ফুটপাতে পড়ে থাকে। অনাহারীর এর মত একঘেয়ে সুরে বলতে থাকে "গা থেকে এইচি। খেতে পাইনি বাবা। আমায় খেতে দাও।"
সুতরাং নিজের সর্বস্ব দিয়ে দুর্ভিক্ষ পীড়িত দের বাঁচাতে ব্যর্থ হয়ে মৃত্যুঞ্জয় হতাশ হয়ে অনাহারক্লিষ্ট সর্বহারা শ্রেণীর শ্রেণীর মধ্যে নিজেকে বিলীন করে দিয়েছে। ইটিভি যে যেমন সে প্রকৃত ভাবে বাঁচতে পারেনি তেমনি অনাহারীদের বাঁচাতে পারেনি। তাই এই গল্পের শিরোনাম এবং শিরোনামের শেষে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে লেখক ভুল স্বর্গ এর অধিবাসী এ গল্পের নায়কের গঠনমূলক সমালোচনা করে এর নামকরন কে সার্থক করে তুলেছেন।
৪. "জানিলাম এ জগৎ স্বপ্ন নয়" - কবির অনুসরণে এই উপলব্ধির তাৎপর্য লেখ।
উত্তর : শেষ লেখা কাব্যগ্রন্থের 11 সংখ্যক কবিতা কবি রবীন্দ্রনাথ জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে ও জীবনকে নতুন ভাবে বোঝার বা চেষ্টা করেছেন। জন্মদিনে কবিতায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন -
"আমি পৃথিবীর কবি, যেথা তার যত ওঠে ধ্বনি
আমার বাঁশির সুরে সারা তার জাগিবে তখনি।"
আলোচ্য কবিতাতে এই পৃথিবীতেই আসতে চেয়েছেন তিনি। স্বপ্ন কল্পনার মায়া আবরণ কে দূরে সরিয়ে রবীন্দ্রনাথ যে জগতকে দেখেছেন তা আঘাত সংঘাতমুখর বেদনায় কাতর। প্রতিদিনের ব্যক্তিগত জীবনের হতাশা যন্ত্রণা সামাজিক এবং রাজনৈতিক নানা দ্বন্দ্ব-সংঘাত ইত্যাদির মধ্য দিয়েই জীবনের যথার্থ পরিচয় পাওয়া যায়। এই জীবন তাই স্বপ্নের রঙে রঙিন নয় রক্তের অক্ষরে এর যথার্থ পরিচয়। সে জীবনে দুঃখের তপস্যা নেই হয়তো সত্য কিন্তু তার মধ্যেই ঘটবে জীবনের বিকাশ। রবীন্দ্রনাথের ভাবনা আই স্বপ্নের বিপরীত প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে সত্য। এই সত্য হলো জীবনকে তার যথাযথ তাৎপর্য বুঝতে শেখা। মানুষের ধর্ম রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - "তাই বিরাটকে বলি রুদ্র, তিনি মুক্তির দিকে আকর্ষণ করেন দুঃখের পথে।" জীবন দুঃখময় কিন্তু তার মধ্যে দিয়েই মানুষের চৈতন্যের বিকাশ ঘটে। সেই জীবনের ধর্মকে অনুভব করতে পারে। তাই স্বপ্নবিলাসী তাই নয় দুঃখের তরঙ্গ মুখরতাতেই জীবন সত্যকে খুঁজে পাওয়া যায়।
৫. "সকল দেনা শোধ করে দিতে" - দেনা কিসের? কিভাবে তার শোধ করা যাবে বলে কবি মনে করেছেন? তার এই মনোভাবটি কোন বিশেষ মূল্যবোধকে আশ্রয় করে গড়ে উঠেছে?
উত্তর : শেষ লেখা কাব্যগ্রন্থের 11 সংখ্যক কবিতা রবীন্দ্রনাথের মর্তপ্রীতি প্রকাশ ঘটেছে। রূপনারায়ণের কূলে জেগে ওঠে প্রাক গো কোভিদ পরিণত উপলব্ধির এইযে জগত স্বপ্ন নয় রক্তের অক্ষরে অর্থাৎ বাস্তব জগতের আদর্শ সংঘাত বেদনার মধ্য দিয়েই জীবন জেগে ওঠে। জীবনের সঙ্গে মানুষের এই পরিচয় সত্য পরিচয় এই পথই জীবনের সত্যকে উপলব্ধি এবং আবিষ্কার করার একমাত্র উপায়। রানী চন্দ কে এই কবিতা লেখার প্রেক্ষাপট ভুলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন সত্য কঠিন অনেক দুঃখ দাবি নিয়ে আসে। স্বপ্নে তাতো থাকেনা কিন্তু তবুও আমরা সেই কঠিন কে ভালবাসি।" কোভিদ কথায় এই কঠিন এর জন্য সবসময় দুঃখ সহ কাজ করতে আমরা তৈরি থাকে - "এমনি করে জীবনের দেনা শোধ করে চলি আমরা"।
আঘাত ও বেদনাকে সহ্য করেও সত্যের দিকে এগিয়ে চলায় হলো জীবনের যথার্থ ধর্ম। দুঃখের তপস্যা আসলে সত্যের দারুন মূল্য কে শোধ করে দেওয়ার জন্য। সত্যের দারুন মূল্য অর্থাৎ সত্যকে পাওয়ার জন্য মানুষের কঠিন সাধনা। এই সত্য কি যেহেতু সব সময় উপলব্ধি করতে হয় তাই মৃত্যুর ঠিক আগের মুহূর্ত পর্যন্ত চলে মানুষের এই কঠোর সাধনা জীবনের যথার্থ পরিচয় কে চিনতে পারার কঠোর প্রয়াস। মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দেওয়ার অর্থ জীবনের কাছে সত্যিই যে দাবি তা সম্পূর্ণ করা। এভাবেই কল্পনা ও স্বপ্নের জগৎ ত্যাগ করে দ্বন্দ্বমুখর জীবনের প্রতিই কবি নিজের পক্ষপাত প্রকাশ করেছেন।
Other Model Activity Task : Model Activity Task 2022
আমার খুবই উপকার হলো 😊😊😊😊
উত্তরমুছুনআমার খুবই উপকার হলো
উত্তরমুছুনসুন্দর
উত্তরমুছুন