উচ্চমাধ্যমিক
একাদশ শ্রেণী
দর্শন
চতুর্থ অধ্যায়
জ্ঞানের উৎস
অভিজ্ঞতাবাদ
দর্শনের অন্যতম শাখা জ্ঞান বিদ্যা আলোচনা করা হয় জ্ঞান কাকে বলে? জ্ঞানের স্বরূপ কি? জ্ঞান আদৌ সম্ভব কিনা? জ্ঞানের সম্ভাব্যতা নিয়ে প্রথম প্রশ্ন তোলেন ইমানুয়েল কান্ট। এইজন্য কান্টেকে জ্ঞান বিদ্যার জনক বলা হয়। জ্ঞানের উৎস নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে পাশ্চাত্য দার্শনিক কে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যান। কারো কারো মতে আমাদের যাবতীয় জ্ঞান হয় অভিজ্ঞতা থেকে। আবার কারও মতে আমাদের যাবতীয় কেন সহজাত। যাদের মতে আমাদের যাবতীয় জ্ঞান হয় অভিজ্ঞতা থেকে তাকে বলে অভিজ্ঞতাবাদ বা Emperialism। আবার যাদের মতে আমাদের যাবতীয় জ্ঞান সহজাত বা বুদ্ধি থেকে তাদের মতবাদ কে বলা হয় বুদ্ধিবাদ বা Rationalism।
অভিজ্ঞতাবাদ অনুযায়ী অভিজ্ঞতাই জ্ঞানের একমাত্র উৎস। এই মতবাদের মূল প্রবক্তা হলেন প্রোটোগোরাস, গর্জিয়াস, এপিকিউরাস, অ্যারিস্টোপাস প্রমুখ। আধুনিক যুগে ব্রিটিশ দার্শনিক জন লক অভিজ্ঞতাবাদ কে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন ঈশ্বর যদি আমাদের জন্মের সময় সমস্ত জ্ঞান দিয়ে দেন তাহলে আমরা সবাই সমান বুদ্ধির অধিকারী হতাম বা সব বিষয়ে সহমত পোষণ করতাম। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয়। বরঞ্চ জন্মের সময় মানুষের মন থাকে সাদা কাগজের মতো (TabulaRasa) । বিভিন্ন অভিজ্ঞতার ছাপ সেই কাগজের উপর পড়ে আমাদের অভিজ্ঞতা হয়। তাই লকের মতে কোন ধারনাই সহজাত নয়।
লকের মতে ধারণা দুই প্রকার। যথা - সরল ধারণা ও জটিল ধারণা।
সরল ধারনাগুলি মনে প্রবেশ করার সময় কোন নিষ্ক্রিয় থাকে। মন সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং বিক্রিয়া করে একটি জটিল ধারণার সৃষ্টি করে। এই জটিল ধারণার সঙ্গে বস্তুর হুবহু মিল হলে বস্তু সম্পর্কে আমাদের সঠিক জ্ঞান হয়, নতুবা জ্ঞানটি ভ্রান্ত হয়। লক সরাসরি বলেন বুদ্ধিতে এমন কিছু নেই যা পূর্বে ইন্দ্রিয়তে ছিল না।
লক অভিজ্ঞতাবাদী হয়েও ঈশ্বর, আত্মা ও দ্রব্যকে স্বীকার করেন। তিনি বলেন ঈশ্বর হলেন জগতের পরিচালক। আত্মা হলো বিভিন্ন ক্রিয়ার আধার এবং দ্রব্য হল বিভিন্ন গুণের আধার। লক দ্রবের গুণকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন, যথা - মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণ।
মুখ্য গুণ : যে গুণগুলি বস্তুগত বা স্থায়ী গুণ কাকে বলে মুখ্য গুণ। যেমন - বিস্তৃতি, আকার, আয়তন, জ্ঞান, পরিমাণ ইত্যাদি।
গৌণ গুণ : যে গুণগুলি ব্যক্তিগত বা পরিবর্তনশীল তাকে বলে গৌণ গুণ। যেমন - রূপ, রস, গন্ধ ইত্যাদি।
পরবর্তী দার্শনিক জর্জ বার্কলে লকের গুণ এর শ্রেণীবিভাগকে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন সব গুনই আসলে গৌণ গুণ। কারণ সব গুণই পরিবর্তনশীল। বার্কলে সরাসরি বলেন Esse-Est- Percipi বা আমি প্রত্যক্ষ করি তাই আছে। অর্থাৎ বস্তুর অস্তিত্ব আমার দেখার উপর নির্ভর করে। এইজন্য বার্কলে ঈশ্বর বা দ্রব্যের অস্তিত্ব স্বীকার করেননি। তার মতে দ্রব্য হল ব্যক্তি মনের ধারণা মাত্র অর্থাৎ শুধুমাত্র আমি আছি এবং আমার ধারণা আছে। প্রশ্ন উঠে যখন আমি বস্তুকে প্রত্যক্ষ করি না তখন বস্তুর অস্তিত্ব কোথায়। অর্থাৎ বস্তুর অস্তিত্ব ধারাবাহিকতা কিভাবে সম্ভব। এর উত্তরে বাকলে বলতে বাধ্য হন যখন আমি বস্তুকে প্রত্যক্ষ করি না তখন তাকে ঈশ্বর প্রত্যক্ষ করেন। এইভাবে বার্কলে অভিজ্ঞতাবাদী হয়েও ঈশ্বর এবং আত্মাকে স্বীকার করেন।
পরবর্তী দার্শনিক ডেভিড হিউম ছিলেন চরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদী। তিনি অভিজ্ঞতার বাইরে একপাও যেতে রাজি হননি। সেই জন্য তিনি ঈশ্বর আত্মা দ্রব্য কোন কিছুতেই স্বীকার করেননি। তার মতে ঈশ্বরের কল্পনা হলো একটি দুর্ভেদ্য উদ্ভট কল্পনা, আত্মা হলো বিভিন্ন ক্রিয়ার সমষ্টি মাত্র এবং দ্রব্য হল বিভিন্ন গুণের সমষ্টি মাত্র। হিউম সবকিছুকে সন্দেহ করার নির্দেশ দেন এমনকি সন্দেহ করতে করতে তিনি শেষ পর্যন্ত নিজের অস্তিত্ব কেউ সন্দেহ করে। এইজন্য দর্শনের ইতিহাসে তাকে সংশয়বাদী দার্শনিক বলা হয়।
Full Suggestion : WB Class 11 Philosophy Suggestion 2023 WBCHSE
অনুশীলনী
প্রশ্নঃ কাকে জ্ঞান বিদ্যার জনক বলা হয়?
উত্তরঃ কান্টেকে জ্ঞান বিদ্যার জনক বলা হয়।
প্রশ্নঃ অভিজ্ঞতাবাদ কাকে বলে?
উত্তরঃ যাদের মতে আমাদের যাবতীয় জ্ঞান হয় অভিজ্ঞতা থেকে তাকে বলে অভিজ্ঞতাবাদ বা Emperialism।
প্রশ্নঃ বুদ্ধিবাদ কাকে বলে?
উত্তরঃ যাদের মতে আমাদের যাবতীয় জ্ঞান সহজাত বা বুদ্ধি থেকে তাদের মতবাদ কে বলা হয় বুদ্ধিবাদ বা Rationalism।
প্রশ্নঃ অভিজ্ঞতাবাদ অনুযায়ী জ্ঞানের উৎস কি?
উত্তরঃ অভিজ্ঞতাবাদ অনুযায়ী অভিজ্ঞতাই জ্ঞানের একমাত্র উৎস।
প্রশ্নঃ অভিজ্ঞতাবাদ মতবাদের মূল প্রবক্তার নাম লেখো।
উত্তরঃ অভিজ্ঞতাবাদ মতবাদের মূল প্রবক্তা হলেন প্রোটোগোরাস, গর্জিয়াস, এপিকিউরাস, অ্যারিস্টোপাস প্রমুখ।
প্রশ্নঃ Tabularasa কথার অর্থ কি?
উত্তরঃ জন্মের সময় মানুষের মন থাকে সাদা কাগজের মতো।
প্রশ্নঃ কোন ধারনাই সহজাত নয়। - উক্তিটি কার।
উত্তরঃ লকের মতে কোন ধারনাই সহজাত নয়।
প্রশ্নঃ লকের মতে ধারণা কয় প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ লকের মতে ধারণা দুই প্রকার। যথা - সরল ধারণা ও জটিল ধারণা।
প্রশ্নঃ বুদ্ধিতে এমন কিছু নেই যা পূর্বে ইন্দ্রিয়তে ছিল না। - উক্তিটি কার।
উত্তরঃ লক বলেন বুদ্ধিতে এমন কিছু নেই যা পূর্বে ইন্দ্রিয়তে ছিল না।
প্রশ্নঃ ঈশ্বর হলেন জগতের পরিচালক। - উক্তিটি কার।
উত্তরঃ লকের মতে ঈশ্বর হলেন জগতের পরিচালক।
প্রশ্নঃ আত্মা হলো বিভিন্ন ক্রিয়ার আধার। - উক্তিটি কার।
উত্তরঃ লকের মতে আত্মা হলো বিভিন্ন ক্রিয়ার আধার।
প্রশ্নঃ দ্রব্য হল বিভিন্ন গুণের আধার। - উক্তিটি কার।
উত্তরঃ লকের মতে দ্রব্য হল বিভিন্ন গুণের আধার।
প্রশ্নঃ লক দ্রবের গুণকে কয় ভাগে ভাগ করেছেন ও কি কি?
উত্তরঃ লক দ্রবের গুণকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন, যথা - মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণ।
প্রশ্নঃ মুখ্যগুণ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে গুণগুলি বস্তুগত বা স্থায়ী গুণ কাকে বলে মুখ্য গুণ। যেমন - বিস্তৃতি, আকার, আয়তন, জ্ঞান, পরিমাণ ইত্যাদি।
প্রশ্নঃ গৌণগুণ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে গুণগুলি ব্যক্তিগত বা পরিবর্তনশীল তাকে বলে গৌণ গুণ। যেমন - রূপ, রস, গন্ধ ইত্যাদি।
প্রশ্নঃ সব গুনই আসলে গৌণ গুণ। - উক্তিটি কার।
উত্তরঃ দার্শনিক জর্জ বার্কলে বলেন সব গুনই আসলে গৌণ গুণ।
প্রশ্নঃ Esse-Est- Percipi কথাটির অর্থ কি?
উত্তরঃ বস্তুর অস্তিত্ব আমার দেখার উপর নির্ভর করে।
প্রশ্নঃ দ্রব্য হল ব্যক্তি মনের ধারণা মাত্র। - উক্তিটি কার।
উত্তরঃ জর্জ বার্কলে বলেন দ্রব্য হল ব্যক্তি মনের ধারণা মাত্র।
প্রশ্নঃ একজন চরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকের নাম লেখো।
উত্তরঃ দার্শনিক ডেভিড হিউম ছিলেন চরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদী।
প্রশ্নঃ ঈশ্বরের কল্পনা হলো একটি দুর্ভেদ্য উদ্ভট কল্পনা। - উক্তিটি কার।
উত্তরঃ ডেভিড হিউম বলেন ঈশ্বরের কল্পনা হলো একটি দুর্ভেদ্য উদ্ভট কল্পনা।
প্রশ্নঃ আত্মা হলো বিভিন্ন ক্রিয়ার সমষ্টি মাত্র। - উক্তিটি কার।
উত্তরঃ ডেভিড হিউম বলেন আত্মা হলো বিভিন্ন ক্রিয়ার সমষ্টি মাত্র।
প্রশ্নঃ দ্রব্য হল বিভিন্ন গুণের সমষ্টি মাত্র। - উক্তিটি কার।
উত্তরঃ ডেভিড হিউম বলেন দ্রব্য হল বিভিন্ন গুণের সমষ্টি মাত্র।
প্রশ্নঃ কাকে এবং কেন সংশয়বাদী দার্শনিক বলা হয় কেন?
উত্তরঃ হিউম সবকিছুকে সন্দেহ করার নির্দেশ দেন এমনকি সন্দেহ করতে করতে তিনি শেষ পর্যন্ত নিজের অস্তিত্ব কেউ সন্দেহ করে। এইজন্য দর্শনের ইতিহাসে তাকে সংশয়বাদী দার্শনিক বলা হয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ