উচ্চ মাধ্যমিক
একাদশ শ্রেণি
দর্শন
ত্রয়োদশ অধ্যায়
সমসাময়িক ভারতীয় দর্শন
প্রথম পর্ব
উপনিষদীয় চিন্তাধারার ধারক ও বাহক হিসাবে আমরা দুজন চিন্তা নায়কের পরিচয় পাই। এই দুইজনের একজন হলেন বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ এবং অপরজন হলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই দুই মহান মনীষীর ভারতীয় সংস্কৃতি, ধর্ম ও দর্শনের ক্ষেত্রে চিরাচরিত চিন্তাধারার পরিবর্তনে নতুন এক মুক্ত চিন্তাধারার প্লাবন এনেছেন। তারা দুজনেই ভারতবাসীকে অভয় মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছেন। তারা দুজনেই বেদান্তের অনুসারী হয়েও বেদান্তের চিন্তা ধারাকে নিজেদের মতো করে স্বচ্ছ ও সহজ ভাবে হাজির করেছেন।
স্বামী বিবেকানন্দ ও তার দার্শনিক চিন্তা :
শ্রীরামকৃষ্ণের শিক্ষার মধ্য দিয়ে স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর জীবনের কর্মপদ খুঁজে পেয়েছেন। তার সেই পথ হল - মানবসেবার পথ এবং সমগ্র মানবজাতির মুক্তির পথ। তার সমস্ত কর্মকাণ্ড ও দার্শনিক চিন্তনের কেন্দ্রে পরিলক্ষিত হয় সমস্ত মানুষের জাগতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি। মানুষের এই জাগতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি প্রেয়াসে তিনি কর্মযোগকে মূল হাতিয়ার হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
কর্মযোগ :
স্বামী বিবেকানন্দ মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতির সোপান হিসাবে কর্মযোগের বিষয়টিকে উল্লেখ করেছেন। কর্মযোগ হলো সুচিন্তিত, সুনিয়ন্ত্রিত ও বিজ্ঞানসম্মত ভাবে যে কোন কর্মের অনুষ্ঠান যা মানুষকে শেষ পর্যন্ত ভগবৎমুখী করে তোলে।
কর্মযোগের উদ্দেশ্য :
কর্মযোগের উদ্দেশ্য গুলি নিচে আলোচনা করা হলো -
প্রথমত, মানুষের জীবন প্রায়ই কর্ম নিয়ন্ত্রিত। কর্মের জন্যই কর্মফলের বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়। কৃতকর্মের ফল কর্মকর্তাকেই ভোগ করতে হয় সুতরাং কর্মের মাধ্যমে আসে কর্মফল ও জন্মান্তরবাদ।
স্বামী বিবেকানন্দ ছাড়া ভারতবর্ষের আর যেসব মনীষীকে উপনিষদ তথা বেদান্তের আধুনিক ব্যাখ্যাকার রূপে উল্লেখ করা হয় তার মধ্যে সবার প্রথমে উল্লেখ করা হয় বিশ্বকবি ও দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম। রবীন্দ্রনাথের দর্শনে যে বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে তা হলো মানবতাবাদ।
Full Suggestion : WB Class 11 Philosophy Suggestion 2023 WBCHSE
মানবতাবাদ :
রবীন্দ্রনাথের মতে মানুষের ধর্মের মূল ভিত্তি হল মানবতাবাদ। এই মানবতাবাদ কে তিনি মানবধর্ম রূপে উল্লেখ করেছেন। মানবতাবাদ এর পূর্ণ অর্থ হলো - যা মানুষের জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশকে সূচিত করে তাই হল মানবতাবাদ।
আধুনিক ধর্ম হিসাবে মানবতাবাদ :
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ মনে করেন যে একমাত্র মানবতায় আধুনিককালের ধর্ম হিসাবে গণ্য হওয়া উচিত। মানবতাবাদ যে মানুষের প্রকৃত ধর্ম রূপে গণ্য হতে পারে তা রবীন্দ্রনাথই সর্বপ্রথম যুক্তিসহকারে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপিত করেন।
মানবতাবাদের উদ্দেশ্য :
মানবতাবাদের প্রধান উদ্দেশ্য গুলি নিচে আলোচনা করা হলো -
প্রথমত, মানবতাবাদ মানুষের প্রকৃত সত্যকে প্রকাশ করে।
দ্বিতীয়ত, মানবতাই মানুষের অহংবোধ ধ্বংস করে। মানুষকে বিশ্ব ভাবে উদ্দীপ্ত করে।
তৃতীয়ত, ঐক্য মঞ্চের একমাত্র দিশারী হল মানবতাবাদ।
চতুর্থত, মানবতাবাদি হলো মানুষের আদর্শ ধর্ম।
মানুষের চরিত্র গঠনে মানবতাবাদের প্রভাব :
মানুষের চরিত্র গঠনে মানবতাবাদের যে প্রভাব গুলি পরিলক্ষিত হয় তা নিম্নরূপ -
প্রথমত, আধ্যাত্মিক উত্তোলনের পথ হল মানবতাবাদ। মানবতাই হলো মানুষের আধ্যাত্মিক উত্তোলন ঘটায়।
দ্বিতীয়ত, মানুষের সসীম সত্তাকে অতিক্রম করে অসীমতায় উন্মোচন ঘটনোয় মানবতাবাদ।
তৃতীয়ত, মানবতাবাদ মানুষের সৃজনশীল ক্ষমতাকে আহ্বান জানায়।
চতুর্থত, মানবতাবাদের উদ্ভূত অসীম চেতনাবোধ কোন বহির্জগতের নির্দেশ নয়, এগুলো মানুষের অন্তরের বিবেকের নির্দেশ।
পঞ্চমত, মানবতাবাদের মাধ্যমেই মানুষের আত্মোপলব্ধি ঘটে - যা এক অনাবিল আনন্দের অনুভুতিকে সূচিত করে।
খুব ভালো
উত্তরমুছুনহয়েছে