LightBlog
উচ্চমাধ্যমিক - একাদশ শ্রেণী - দর্শন - দ্বাদশ অধ্যায় - ন্যায় দর্শন - HS Class 11 Philosophy Suggestion 2023 WBCHSE Download Pdf Free
Type Here to Get Search Results !

উচ্চমাধ্যমিক - একাদশ শ্রেণী - দর্শন - দ্বাদশ অধ্যায় - ন্যায় দর্শন - HS Class 11 Philosophy Suggestion 2023 WBCHSE Download Pdf Free

 উচ্চ মাধ্যমিক

একাদশ শ্রেণি

দর্শন

দ্বাদশ অধ্যায়

ন্যায় দর্শন

প্রথম পর্ব




"নিয়তি অনেন ইতি ন্যায়া" - অর্থাৎ ন্যায়। যার দ্বারা বুদ্ধি মীমাংসায় উপনীত হয় তাকে বলে ন্যায় দর্শন। এই দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি গৌতম। অন্বিক্ষা বা অনুমানকে ভিত্তি করে এই দর্শন গড়ে উঠেছে বলে একে অন্বিশিক্ষি দর্শনও বলা হয়। ন্যায় দার্শনিকরা প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শব্দকে প্রমাণ স্বীকার করে। 

প্রত্যক্ষ

"ইন্দ্রিয়ার্থে সন্নিকর্ষ জন্যম, জ্ঞানম্ প্রত্যক্ষণ" অর্থাৎ ইন্ডিয়ার সাথে বিষয়ের সন্নিকর্ষ এর ফলে আমাদের যে জ্ঞান হয় তাকে বলে প্রত্যক্ষ। সন্নিকর্ষ কয় প্রকার, যথা -
  • সংযোগ সন্নিকর্ষ : - দ্রব্য - দ্রব্য
  • সমবায় সন্নিকর্ষ : - দ্রব্য - দ্রব্যের গুণ
  • সংযুক্ত সমবায় সন্নিকর্ষ : - দ্রব্য - দ্রব্য - দ্রব্যের গুন
  • সমবেত সমবায় সন্নিকর্ষ : - দ্রব্য - দ্রব্যের গুন - গুণের ভাব
  • সংযুক্ত সমবেত সমবায় সন্নিকর্ষ : - দ্রব্য - দ্রব্য - দ্রব্যের গুন - গুণের ভাব
  • বিশেষ্য বিশেষণ ভাব সন্নিকর্ষ : - ভূতলে ঘটের অভাব

     প্রত্যক্ষ কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা - লৌকিক প্রত্যক্ষ ও অলৌকিক প্রত্যক্ষ। ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে সরাসরি যে প্রত্যক্ষ করা হয় তাকে বলে লৌকিক প্রত্যক্ষ। ইন্দ্রিয়ের সাহায্য ছাড়াই যে প্রত্যক্ষ করা হয় তাকে বলে অলৌকিক প্রত্যক্ষ। লৌকিক প্রত্যক্ষকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা - বাহ্য লৌকিক প্রত্যক্ষ ও মানস লৌকিক প্রত্যক্ষ। বাহ্য ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে প্রত্যক্ষ করা হয় তাকে বাহ্য লৌকিক প্রত্যক্ষ বলে। আর মানস ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে যে প্রত্যক্ষ করা হয় তাকে মানস লৌকিক প্রত্যক্ষ বলে। বাহ্য প্রত্যক্ষ আবার পাঁচ প্রকার। যথা - চাক্ষুষ, শ্রোবণ, নাসিক্ব, রাসন, এবং স্পর্শন।

অলৌকিক প্রত্যক্ষ তিন প্রকার। যথা -
সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ : প্রতিটি বস্তুর একটি সামান্য লক্ষণ বা সাধারণ বৈশিষ্ট্য থাকে। এই সামান্য লক্ষণ এর সাহায্যে যখন বস্তুকে জানা যায় তখন তাকে সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ বলে। যেমন - গোত্ব দেখে গরুকে চেনা।

জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ : বস্তুর নির্দিষ্ট ইন্দ্রিয়ের সাহায্য ছাড়াই অন্য কোন ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে বস্তুর গুণ কে প্রত্যক্ষ করা হলে তাকে জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। যেমন - দূরে থেকে বরফের কাঠিন্যতাকে প্রত্যক্ষ করা।

যোগজ প্রত্যক্ষ : যোগের মাধ্যমে যে প্রত্যক্ষ করা হয় তাকে যোগস প্রত্যক্ষ বলে। যেমন - যোগীদের অতীত ভবিষ্যৎ ও সূক্ষ্ম পদার্থের প্রত্যক্ষ হল যোগস প্রত্যক্ষ। যোগীরা যোগ অভ্যাস করেন। এর ফলে তারা অলৌকিক শক্তির অধিকারী হন।

     এছাড়াও প্রত্যক্ষ জ্ঞানের স্পষ্টতার তারতম্য অনুসারে প্রত্যক্ষকে আরো দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা - সবিকল্প প্রত্যক্ষ ও নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ। বিকল্প কথার অর্থ হল নাম, গুন, জাতি, প্রকার ইত্যাদি। যে প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে আমরা বস্তুকে জানতে পারি, তার নাম, গুন, জাতি, প্রকার কিছুই জানতে পারেনা তাকে বলে নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ। আবার যে ক্ষেত্রে বস্তুকে জানার সঙ্গে সঙ্গে তার নাম, গুন, জাতি, প্রকার এই গুলোও জানতে পারি তাকে বলে সবিকল্পক প্রত্যক্ষ।

সবিকল্পক ও নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষের প্রধান পার্থক্য গুলি নিচে আলোচনা করা হলো -

প্রথমত, ইন্দ্রিয় - বিষয় - সন্নিকর্ষ না হলে নির্বিকল্প প্রত্যক্ষ হয়না, আর নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ না হলে সবিকল্প প্রত্যক্ষ হয়না।

দ্বিতীয়ত, নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ নিষ্প্রকারক জ্ঞান, কিন্তু সবিকল্পক প্রত্যক্ষ সপ্রকারক জ্ঞান।

তৃতীয়ত, নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ সম্বন্ধে বর্জিত জ্ঞান, আমার সবিকল্পক প্রত্যক্ষ সম্বন্ধযুক্ত জ্ঞান।

চতুর্থত, নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ অব্যাপদাশ্য জ্ঞান, আর সবিকল্পক প্রত্যক্ষ ব্যাপদাশ্য জ্ঞান।

পঞ্চমত, নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ কে বচনে প্রকাশ করা যায় না, কিন্তু সবিকল্পক প্রত্যক্ষকে বচনে প্রকাশ করা যায়।

অনুমান

     ন্যায় দার্শনিকদের মতে অনুমান দুই প্রকার। যথা - স্বার্থনুমান এবং পরার্থানুমান। নিজে বোঝার জন্য যে অনুমান করা হয় তাকে বলে স্বার্থনুমান। আর যখন অপরের জন্য অনুমান করা হয় তখন তাকে বলে পরার্থানুমান। স্বার্থ নোমানের ক্ষেত্রে অনুমান টিকে যথাযথভাবে ব্যপ্ত করার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু পরার্থানুমানের ক্ষেত্রে অনুমানকে যথাযথভাবে ব্যক্ত করার প্রয়োজন আছে। যথাযথভাবে ব্যক্ত করার অর্থ হল অনুমানে বা ন্যায় শাস্ত্রসম্মত রূপটি প্রকাশ করা। ভারতীয় ন্যায় পাঁচটি অবয়ব বিশিষ্ট। যথা - প্রতিজ্ঞা, হেতু, উদাহরণ, উপনয় এবং নিগমন। নিচে একটি দৃষ্টান্তের সাহায্যে বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করা হলো -
  • পর্বত বহ্নিমান - প্রতিজ্ঞা
  • পর্বত ধূমমান - হেতু
  • যেখানেই ধুম সেখানেই বহ্নি, যেমন রান্নাঘর - উদাহরণ
  • পর্বত ধূমমান - উপনয়
  • অতএব, পর্বত বহ্নিমান - নিগমন

     উপরের প্রথম বচনটি হলো প্রতিজ্ঞা বা প্রতিপাদ্য। এই বিষয়টিকে প্রমাণ করতে হবে। দ্বিতীয় বচনটি হলো হেতু। হেতুই প্রতিজ্ঞার কারণ নির্দেশ করে। তৃতীয় বচনে সাধ্য এবং হেতুর মাধ্যমে ব্যাপ্তি বা নিয়ত অভ্যবিচারী সম্বন্ধ সেটিকে প্রকাশ করে এবং পরিচিত দৃষ্টান্তের দ্বারা এই ব্যক্তি সম্বন্ধকে সমর্থন করা হয়। চতুর্থ বচনটি হলো উপনয়। উপনয় হল সামান্য বচন থেকে বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা। পঞ্চম বা সর্বশেষ বচন টি হল নিগমন। পূর্ববর্তী বচনগুলোর ভিত্তিতে বা বচন গুলির দ্বারা সমর্থিত হয়ে যে সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় সেটি হল নিগমন। এই অবয়ব সমূহের সমষ্টিকে ন্যায় নামে অভিহিত করা হয়।

খন প্রশ্ন উঠতে পারে কাকে অনুমান করছি? কার মধ্যে অনুমান করছি? এবং কার মাধ্যমে অনুমান করছি? যার মধ্যে কোন বিষয়কে অনুমান করছি অর্থাৎ পর্বত এটি হলো পক্ষ। যে বিষয়টিকে অনুমান করছি অর্থাৎ বহ্নি তাহলো সাধ্য এবং যার মাধ্যমে অনুমান করছি অর্থাৎ ধূম হলো হেতু।

পক্ষ : যে অধিকরণে কোন বস্তু অনুমান করা হয় তাকে বলে পক্ষ। এখানে পর্বত হলো পক্ষ। কারণ পর্বতের বহ্নির অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে। সিদ্ধান্তে উদ্দেশ্যই হলো পক্ষ।

সাধ্য : অনুমানের সাহায্যে যাকে আমরা জানতে চাই বা প্রমাণ করতে চাই তা হল সাধ্য। উপরের অনুমানে বহ্নিই হল সাধ্য। যেহেতু পর্বতে বহ্নির অস্তিত্বই আমরা প্রমান করতে চাই। সিদ্ধান্তের বিধায়কে বলা হয় সাধ্য।

হেতু : সেতুর অপর নাম লিঙ্গ। কারণ এটি হলো একটি চিহ্ন যা আমরা প্রত্যক্ষ করি না, তাকে নির্দেশ করি। হেতু সাধ্যপদ বা মধ্যপদ কারণ এই পদের মাধ্যমেই পর্বতের বহ্নিরর অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায়।

     ভারতীয় ন্যায় অনুমানের দুটি ভিত্তি। যথা - পক্ষধর্মতা এবং ব্যপ্তি। পক্ষে সেতুর অবস্থানকে বলা হয় পক্ষধর্মতা। উপরের উদাহরণে দ্বিতীয় বাক্যটি অর্থাৎ হেতুতে পক্ষধর্মতা দেখতে পাওয়া যায়। হেতু এবং সাধ্যের মধ্যে নিহত সহচর সম্পর্ককে বলা হয় ব্যপ্তি। সার্বিক বচন ছাড়া অনুমান সম্ভব নয়। আবার ব্যক্তি জ্ঞান ছাড়া সার্বিক বচন সম্ভব নয়। কাজেই অনুমানে ব্যপ্তি অবশ্যই প্রয়োজনীয়। ব্যাপ্তি দুই প্রকার, যথা - সমব্যপ্তি এবং অসমব্যপ্তি। যে ক্ষেত্রে হেতু এবং সাধ্যের ব্যাপকতা সমান তাকে বলে সমব্যপ্তি। যেমন - পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গের নাম মাউন্ট এভারেস্ট। আবার যখন হেতু ও সাধ্যের ব্যাপকতা সমান নয় তখন তাকে বলে অসমব্যপ্তি। যেমন - কোন কোন মানুষ হয় চোর। 

প্রশ্ন হলো ব্যাপ্তি জ্ঞান হয় কিভাবে? এর উত্তরে নৈয়ায়িকরা ছয়টি পথ নির্দেশ করেন, যথা -
  1. অন্বয়
  2. ব্যতিরেক
  3. উপাধি নিরাস
  4. ব্যভিচার আগ্রহ
  5. তর্ক
  6. সামান্য লক্ষণ

     ব্যাপ্তি বিশিষ্ট পক্ষধর্মতা জ্ঞানকে বলা হয় পরামর্শ। ন্যায় অনুমানের চতুর্থ বাক্যে এই পরামর্শ জ্ঞান বা লিঙ্গ পরামর্শ আছে। এই পরামর্শই হলো অনুমানের মূল ভিত্তি। এই জন্যই বলা হয় " পরামর্শ জন্যম জ্ঞানম অনুমতি"।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

LightBlog

Below Post Ad

LightBlog

AdsG

close