উচ্চ মাধ্যমিক
একাদশ শ্রেণি
দর্শন
একাদশ অধ্যায়
বৌদ্ধ দর্শন
বৌদ্ধ ধর্মের ধর্মগ্রন্থ হল ত্রিপিটক। বুদ্ধদেবের বাণী গুলি এই তিনটি পিটকে লিপি বদ্ধ ছিল। এই তিনটি পিটক হলো-সূত্র পিটক, বিনয় পিটক এবং অভিধর্ম পিটক বৌদ্ধ ধর্মের মূল কথা গুলি চারটি অর্থ সত্যে নিহিত ছিল। এই চারটি অর্থ সত্য হলো-
- দুঃখ আছে
- দুঃখের কারণ আছে
- দুঃখের নিরোধ আছে
- দুঃখ নিরোধ মার্গ আছে
এই চারটি অর্থ সত্যকে জানা হলে নির্বাণ বা মুক্তি সম্ভব। বৌদ্ধ মতে সবকিছুই ক্ষণিক, কোন কিছুই স্থায়ী নয়।সেহেতু বৌদ্ধরা অস্থায়ী আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। আক্তাও খনিক। স্থায়ী আত্মাকে আবিষ্কার করার জন্য আত্মা সর্গকিয় বৌদ্ধ মতবাদকে নৈরাত্ম্যবাদ বলা হয়।
বুদ্ধদেব মারা যাওয়ার পর দার্শনিক প্রশ্নে তাঁর শির্ষ্যরা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পরেন। কারণ বুদ্ধদেব দার্শনিক আলোচনা করেননী। বৌদ্ধ ধর্মের দার্শনিক প্রশ্নগুলি ছিল অব্যপ্তানি। তাঁর এই নিরবতা কে ভিত্তি করে শির্ষ্যরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। তথা হীমজান ও মহাজন। যারা বুদ্ধদেবকে অনুসরণ করে সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাস ধর্ম পালন করেন, তাদের বলা হয় হীমজান। আবার যারা সংসারে থেকেই বৌদ্ধ ধর্মের অনুসরণ গুলি মেনে চলেন, তাদের বলা হয় মহাজন। অর্থাৎ হীমজানিরা বস্তুবাদী এবং মহাজানিরা ভাববাদী।
মহাজন সম্প্রদায় কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা মাধ্যমিক ও যোগাচার। মাধ্যমিকা মোন বা বস্তু কোন কিছুকেই স্বীকার করেনা। এদের মতে সবকিছুই শূন্য। এজন্য এদের মোতবাদকে শূন্যবাদ বলা হয়।
যোগ আচরণকেই মুক্তির উপর বলে নির্দেশ করার জন্য এই দর্শনকে যোগাচার দর্শন বলা হয়। যোগাচার দর্শন ভাববাদ। এরা শুধু মাত্র মোন বা বিজ্ঞানকে স্বীকার করার জন্য এই মতোবাদকেই বিজ্ঞান বলা হয়।
হীমজান সম্প্রদায় দুই ভাগে বিভক্ত। যথা-সৌতান্ত্রিক ও বৈমানিক। এই দুটি দর্শনই মোন ও বস্তু উভয় কেই স্বিকার করে। এই জন্য এই দুটি দর্শনকেই মর্বাস্তিবাদী বলা হয়।
সূত্ত পিটককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বলে একে সৈতান্ত্রিক দর্শন বলা হয়। এরা মোন ও বস্তু অভয়কে স্বীকার করে, তবে এরা বলেন যে বস্তুকে আমরা সরাসরি প্রত্যক্ষ করতে পারিনা। বাজ্য বস্তুর ধারণা গুলিকে প্রত্যক্ষ করে আমরা বাজ্য বস্তুকে অনুমান করবো। এইজন্য এই মতোবাদকে বাহ্যানুমেও বাদ ও বলা হয়। এই মতোবাদের সঙ্গে পাশ্চাৎ দার্শনিক জন লকের প্রতিরূপী বস্তুবাদের স্বাদৃশ্য আছে।
অভিধর্ম পিটকের একটি ভাষ্য হলো বিভাষা। এই বিভাগে কেন্দ্র করে যে দর্শন করে ওঠে তাকে বলা হয় বৈভাষিক দর্শন। সৌতান্ত্রিক দের মতে বৈভাষিকরা সর্বাস্তিবাদী। এরাও মন ও বস্তু উভয়কে স্বীকার করে। কিন্তু এরা বলেন যে বাহ্য বস্তুকে আমরা সরাসরি প্রত্যক্ষ করতে পারি। এই জন্য এই মতবাদটিকে বাহ্য প্রত্যক্ষবাদীও বলা হয়। এই মতবাদের সঙ্গে পাশ্চাত্য দর্শনের সরল বস্তুবাদ এর সাদৃশ্য আছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ