উচ্চমাধ্যমিক
একাদশ শ্রেণী
দর্শন
নবম অধ্যায়
ভারতীয় দর্শন
কোন এক সুদূর অতীতে আর্যরা ভারতবর্ষে এসে বসবাস শুরু করেন। ক্রমে ক্রমে তাদের সংস্কৃতি ভারতীয় সংস্কৃতি এবং তাদের দর্শন ভারতীয় দর্শন অভিহিত হয়। মুনি ঋষিদের বাণী গুলি শিষ্য পরম্পরায় লোকমুখে প্রচারিত হতো। একেই বলা হয় বেদ। শুনে শুনে মনে রাখতে হতো বলে একে শ্রুতিও বলা হয়। এই বেদ কে কেন্দ্র করে ভারতীয় দর্শন গড়ে উঠেছে। যারা বেদকে অভ্রান্ত বলে মনে করেন তাদের বলা হয় আস্তিক দর্শন বা বৈদিক দর্শন। আবার যারা বেদকে অভ্রান্ত বলে মনে করেন না তাদের বলা হয় নাস্তিক দর্শন অবৈদিক দর্শন।
আস্তিক দর্শন ছয় প্রকার। এই জন্যই কি ষড়দর্শনও বলা হয়। এই দর্শন হলো - ন্যায় দর্শন, বৈশেষিক দর্শন, সাংখ্য দর্শন, যোগ দর্শন, মীমাংসা-দর্শন এবং বেদান্ত দর্শন।
ন্যায় দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি গৌতম। বৈশেষিক দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি কণাদ। যোগ দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন পতঞ্জলি। মীমাংসা দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা করেন জৈমিনি। এবং বেদান্ত দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন বাদরায়ন ব্যাস।
নাস্তিক দর্শন তিন প্রকার, যথা - চার্বাক দর্শন, বৌদ্ধ দর্শন ও জৈন দর্শন। এদের মধ্যে চার্বাকরা হলেন চরমপন্থী নাস্তিক এবং বৌদ্ধ ও জৈনরা হলেন নরম পন্থী নাস্তিক। এছাড়াও আরও এক প্রকার দর্শন আছে যার সঙ্গে বেদের কোন সম্পর্ক নেই। এগুলি হল - শৈব দর্শন, শাক্ত দর্শন ও বৈষ্ণব দর্শন।
ভারতীয় দর্শনের সাধারণ বৈশিষ্ট্য :
বিশাল বটবৃক্ষের মতো ভারতীয় দর্শনে অসংখ্য শাখা প্রশাখা। তবুও বট বৃক্ষে অসংখ্য শাখা-প্রশাখা থাকলেও এর মূল যেমন এক তেমনি ভারতীয় দর্শনে অসংখ্য শাখা-প্রশাখা থাকলেও এদের মধ্যে একটি মূল সুর আছে এদের মধ্যে কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায়, এগুলি হল -
প্রথমত, ভারতীয় দার্শনিকরা আধ্যাত্মবাদ। এরা বলেন এই পরিদৃশ্যমান জগতের পেছনে একটি অদৃশ্য শক্তি আছে যা আমাদেরকে পরিচালনা করে। এই জন্য ভারতীয় দর্শন কে আধ্যাত্মবাদী দর্শন বলা হয়।
দ্বিতীয়ত, ভারতীয় দর্শন ব্যবহারিক দর্শন। ভারতীয় দার্শনিকের মতে "সর্বম্ দুঃখম্ এই জীবন দুঃখময়"। সাংখ্যকার কপিল বলেন মানুষ তৃপ্ত তাপে দগ্ধ। আধিভৌতিক, আধিদৈবিক এবং আধ্যাত্মিক দুঃখ। এই দুঃখ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিভিন্ন উপায়ে নির্দেশ করে। কাজেই ভারতীয় দর্শন ব্যবহারিক দর্শন।
তৃতীয়ত, বারবার দুঃখের কথা বলার জন্য ভারতীয় দর্শনকে অনেকে দুঃখবাদী দর্শন নামে অভিহিত করেন। কিন্তু একথা ঠিক নয়। কারণ ভারতীয় দার্শনিকরা শুধু দুঃখের কথা বলেননি কিভাবে দুঃখ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তাই নিয়েও আলোচনা করেছেন। কাজেই ভারতীয় দর্শন দুঃখবাদী দর্শন নয় বরঞ্চ আশাবাদী দর্শন।
চতুর্থত, অনেকে ভারতীয় দর্শনকে হিন্দু দর্শন নামে অভিহিত করেন। কারণ দুঃখ শুধু হিন্দু নয় সমগ্র মানবজাতির সমস্যা। কাজেই ভারতীয় দর্শন শুধু হিন্দুর নয় বরং সমগ্র মানবজাতির দর্শন।
পঞ্চমত, ভারতীয় দার্শনিকদের মতে এই জগতে একটি নৈতিক রঙ্গমঞ্চ। এখানে যে যেমন কাজ করবে তার ঠিক তেমনি ফল লাভ হবে। ভালো কাজের ফল পূর্ণরূপে এবং খারাপ কাজের ফল পাওয়া রূপে সঞ্চিত হয়। যদি এ জন্মে ফল ভোগ না হয় তবে তা পরের জন্মে ফল ভোগ করা হয়।
ষষ্ঠত, এই প্রসঙ্গে আসে জন্মান্তর বা পুনর্জন্মের কথা। দার্শনিকরা মনে করেন আত্মা অমর। জীর্ণ বসন্ত করে যেমন আমরা নতুন বস্ত্র পরিধান করি ঠিক তেমনি জীর্ণ দেহত্যাগ করে আমরা নতুন দেহ ধারণ করি এবং পূর্ব জন্মের কর্মফল ভোগ করি।
সপ্তমত, ভারতীয় দার্শনিকরা চর্যা নয় চর্চায় বিশ্বাসের।
অষ্টমত, ভারতীয় দার্শনিকরা চারটি প্রমাণ স্বীকার করেন, যথা - প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শব্দ।
নবমত, ভারতীয় দার্শনিকরা চারটি পুরুষার্থ স্বীকার করেন, যথা - ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ। এদের মধ্যে মোক্ষ হলো পরম পুরুষার্থ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ