প্রাপ্তম রাষ্ট্রপতি শ্রীপ্রণব মুখোপাধ্যায়ের জীবনী
আমাদের সকলের প্রিয় মহামহিম শ্রদ্ধেয় শ্রী্প্রণব কুমার মুখোপাধ্যায় (১৯৩৫ খ্রীঃ - ২০২০ খ্রীঃ) আমাদের মধ্যে আর নেই। তিনি ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা। ২০১২ সালের আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে শ্রীপ্রণব মুখোপাধ্যায় ভারতের অর্থমন্ত্রী এবং কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় সমস্যা-সমাধানী নেতা।
প্রণব মুখার্জী বিভিন্ন সময়ে ভারতের বিদেশ, যোগাযোগ, প্রতিরক্ষা, রাজস্ব ইত্যাদি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্ব পালনের বিরল কৃতিত্বের অধিকারী। ভারত-মার্কিন অসামরিক পরমাণু চুক্তি সাক্ষরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য।
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার কীর্ণাহার শহরের কাছে মিরাট গ্রামে। তাঁর বাবার নাম কামদাকিঙ্কর মুখোপাধ্যায় ও মায়ের নাম রাজলক্ষ্মী দেবী। তিনি সিউড়ির বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্র ছিলেন, যেটি সেই সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়েছিল।
প্রণব মুখোপাধ্যায় একজন কলেজের শিক্ষক রূপে তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। কিছুকাল পরে তিনি সাংবাদিকের কাজও করেছিলেন। ১৯৫৭ খ্রীস্টাব্দের ১৩ই জুলাই প্রণব মুখোপাধ্যায় পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন শুভ্রা দেবীর সঙ্গে। তাদের দুই ছেলে ও এক কন্যা আছে।
প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রায় পাঁচ দশক ধরে ভারতীয় সংসদের সদস্য রূপে কাজ করেছিলেন। ১৯৬৯ খ্রীস্টাব্দে তিনি প্রথমবারের জন্য কংগ্রেস দলের প্রতিনিধিরূপে রাজ্যসভায় নির্বাচিত হন। এরপর তিনি ১৯৭৩ খ্রীস্টাব্দে কেন্দ্রীয় শিল্পোন্নয়ন উপমন্ত্রী হিসাবে তিনি প্রথম ক্যাবিনেটে যোগদান করেছিলেন।
ইন্দ্রিরা গান্ধীর হত্যার পর গোষ্ঠীদ্বন্ধের ফলে তিনি কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৮৯ খ্রীস্টাব্দে রাজীব গান্ধীর সাথে মিটমাট করে নেওয়ার পর তিনি আবার কংগ্রেসে যোগ দেন। পরবর্তীকালে পি. ভি. নরসিমা রাওয়ের আমলে পরকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান পদে এবং পরে ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে তিনি রাওয়ের মন্ত্রিসভার বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
২০০৮ সালে ১০ই অক্টোবর প্রণব মুখোপাধ্যায়ও ইউএস সেক্রেটারি অব স্টেট কন্ডোলিজা রাইস সেকশনে ১২৩ টি চুক্তি সই করেন। তিনি আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার, বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও আফ্রিকান উন্নয়ন ব্যাংকের বোর্ড অব গভর্নসের সদস্য হয়েছিলেন। মনমোহন সিঙ্ঘের দ্বিতীয় বারের সরকারে প্রণব মুখোপাধ্যায় পুনরায় অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব পান। ২০০৯ সালের ৬ই জুলাই তিনি সরকারের একট বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক বাজেট পেশ করেছিলেন।
এনডিএ প্রার্থী লোকসভার সাবেক স্পিকার মেঘাকয়ের ভূমিপুত্র পিএন সাংসাকে ৭১ শতাংশের বেশি ভোটে হারিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে ইউপিএ প্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায় নির্বাচিত হন। প্রণব মুখার্জী পেয়েছিলেন ৫ লক্ষ ১৮ হাজার ৬৮৯ টি ভোট আর অন্যদিকে সাংমা পেয়েছিলেন ২ লক্ষ ৩২ হাজার ৫৫৮ টি ভোট। ২৫ শে জুলাই ২০১২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতি হিসাবে তিনি শপথ নেন।
২০২০ সালের ১০ই আগস্ট দিল্লীর সেনা হাসপাতালে ভর্তি হন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। হাসপাতালে ওনার করোনা রিপোর্টে পজেটিভ আসে। এরপর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরের কারণে ওনার এমারজেন্সি ব্রেন সার্জারি হয়। হাসপাতাল থেকে ওনাকে নিয়ে রোজই হেলথ বুলেটিক জারি করা হয়। অবশেষে ২০২০ সালের ৩১শে আগস্টে তিনি জীবন যুদ্ধে হেরে যান। অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় ওনার মৃত্যুর খবর টুইট করে দেশবাসীকে জানান।
দেশের দুর্নীতি বিষয়ে তাঁর বিখ্যাত উক্তিটি হল -
"দুর্নীতি একটি ইস্যু। আমাদের ইস্তাহারে এই প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গেই জানাচ্ছি যে কেলেংকারি কেবল কংগ্রেস বা কংগ্রেস সরকারের মধ্যেই আবদ্ধ নেই। অনেক কেলেংকারি রয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনেক নেতাই এই ধরনের কেলেংকারির সঙ্গে জড়িত। তাই কংগ্রেস সরকার দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত; এমন কথা বললে বিষয়টি লঘু করে দেখানো হবে।"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ