বাংলার উৎসব
যে কোনো উৎসবই মানুষের জীবনে বসন্ত। বাংলাদেশে উৎসবের যেমন প্রাবল্য, এমন আর কোথাও দেখা যায় না। বলা হয়, এখানে "বারো মাসে তেরো পার্বণ"। বাঙালি জীবনে অজস্র দুঃখকষ্ট, তবু তারই মধ্যে সে অফুরন্ত প্রাণপ্রাচুর্যের আনন্দে মেতে থাকে। কবি ঈশ্বরগুপ্ত ঠিকই বলেছেন, "এত ভঙ্গ বঙ্গদেস তবু রঙ্গে ভরা"।
উৎসবের প্রয়োজনীয়তা :
"আমার আনন্দে সকলের আনন্দ হউক, আমার শুভে সকলের শুভ হউক, আমি যাহা পাই, তাহা পাঁচজনের সহিত মিলিয়া উপভোগ করি - এই কল্যানী ইচ্ছাই উৎসবের প্রাণ।" মানবসমাজে উৎসবের মূল লক্ষ্য হল মানুষের সঙ্গে মানুষের আনন্দময় আত্মিক মিলন। উৎসব মানবজীবনকে পূর্ণতা দেয়, সংকীর্ণতা দূর করে, মূল্যবোধের প্রসার ঘটায়, তার মধ্যে মনুষ্যত্বের চেতনাকে জাগ্রত করে।
উৎসবের শ্রেণীবিভাগ :
বাঙালি জীবনের উৎসবকে মোট চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায় -
(১) ধর্মকেন্দ্রিক উৎসব।
(২) ঋতুপ্রধান উৎসব।
(৩) সামাজিক উৎসব।
(৪) রাষ্ট্রীয় উৎসব।
হিন্দু উৎসব :
বাঙালি জাতির মধ্যে অনেক ধর্মসম্প্রদায়ের মানুষ আছেন। এর মধ্যে হিন্দু, মুসলমান ও খ্রিস্টানের সংখ্যাই বেশি। তা ছাড়া, জৈন, বৌদ্ধ ও শিখ সম্প্রদায়ের মানুষও আছেন। সব ধর্মসম্প্রদায়ের মানুষই তাদের নিজের নিজের ধর্মানুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উৎসবের আয়োজন করে। বাঙালি হিন্দুর জীবনে শ্রেষ্ঠ উৎসব শারদীয়া উৎসব। বাঙালি তার প্রতিদিনের জীবনযন্ত্রণা ভুলে গিয়ে পাঁচটি দিনে হয়ে ওঠে আনন্দচঞ্চল। এ ছাড়া লক্ষ্মীপূজা, কালীপূজা, জগদ্ধাত্রী পূজা, অন্নপূর্ণা পূজা, রথযাত্রা, দোলযাত্রা, জন্মাষ্টমী, ঝুলনযাত্রা, সরস্বতী পূজা প্রভৃতিকে কেন্দ্র করে বাঙালি হিন্দুরা নানা উৎসবে মেতে ওঠে।
খ্রিস্টান-বৌদ্ধ-জৈন-শিখ উৎসব :
বাংলায় খ্রিস্টাব্দের ধর্মীয় উৎসবগুলির মধ্যে প্রধান হল - বড়োদিন, ইস্টার স্যাটারডে, গুডফ্রাইডে প্রভৃতি। তা ছাড়া, বুদ্ধপূর্ণিমাতে বৌদ্ধম্প্রদায়ের মানুষ ও মহাবীরের শুভ আবির্ভাব দিবস জৈনরা পালন করেন বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
ঋতু উৎসব :
প্রাচীনকালে ঋতু উৎসব খুবই জনপ্রিয় ছিল। বাংলার ঋতু উৎসবগুলির মধ্যে নবান্ন, পৌষপার্বণ, দোলযাত্রা, নববর্ষোৎসব, মাঘোৎসব ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। হেমন্ত ঋতুতে পল্লিবাংলায় শুধু হয় নবান্নের ঘটা।
সামাজিক উৎসব :
বাংলার সামাজিক ও পারিবারিক উৎসবও প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়। ব্যক্তিগত কিছু অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উদ্যাপিত হয় সামাজিক উৎসব। বাংলার সামাজিক উৎসবগুলির মধ্যে বিবাহ, অন্নপ্রাশন, উপনয়ন, জন্মদিন পালন, ভ্রাতৃদ্বিতীয়া, জামাইষষ্ঠী, শ্রাদ্ধানুষ্ঠান প্রভৃতিই হল প্রধান।
রাষ্ট্রীয় উৎসব :
১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবসটিকে আমরা রাষ্ট্রীয় উৎসবের মর্যাদা দিয়ে পালন করে থাকি। ২৬শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসটিও সারাদেশেই মর্যাদার সঙ্গে পালন করে থাকে। এ ছাড়া ২রা অক্টোবর গান্ধিজির জন্মদিনও সর্বভারতীয় রাষ্ট্রীয় উৎসবের মর্যাদার পালন করা হয়। ২৫শে বৈশাখ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের, ১১ই জৈ্যষ্ঠ নজরুলের ও ২৩শে জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্রের জন্মদিনও যথাযোগ্য মর্যাদায় উৎসব আকারে পালন করা হয়ে থাকে।
একের আনন্দ ও উৎসাহ বহুর মধ্যে সঞ্চারিত হওয়ার মধ্য দিয়েই বাঙালির উৎসব সার্থক হয়। কিন্তু আজ উৎসব তার সজীবতা হারিয়েছে, কমে গেছে হৃদয়ের উষ্ণতা; বেড়েছে হুজুগপ্রিয়তা, বেড়েছে পেশি-শক্তির আস্ফালন, বেড়েছে চাঁদার উৎপাত। আন্তরিকতা কমেছে, বেড়েছে কৃত্রিমতা।
Download : বাংলার উৎসব PDF
Super level er answer guru😊
উত্তরমুছুন