LightBlog
ভারততীর্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | সপ্তম শ্রেণীর বাংলা | WB Class 7 Bengali
Type Here to Get Search Results !

ভারততীর্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | সপ্তম শ্রেণীর বাংলা | WB Class 7 Bengali

ভারততীর্থ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সপ্তম শ্রেণীর বাংলা

WB Class 7 Bengali


ভারততীর্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | সপ্তম শ্রেণীর বাংলা | WB Class 7 Bengali

ভারততীর্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | সপ্তম শ্রেণীর বাংলা | WB Class 7 Bengali

ভারততীর্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | সপ্তম শ্রেণীর বাংলা | WB Class 7 Bengali

ভারততীর্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | সপ্তম শ্রেণীর বাংলা | WB Class 7 Bengali

হাতে কলমে

ভারতর্তীথ প্রশ্ন ও উত্তর

নির্দেশ অনুসারে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ

(১) কবিতায় ভারতভূমিকে 'পূণ্যতীর্থ' বলা হয়েছে কেন?
উত্তরঃ কবিতায় ভারতভূমিকে 'পূণ্যতীর্থ' বলার কারণ হল - এই ভারতের পুণ্যভূমিতে সুপ্রাচীনকাল থেকে আর্য-অনার্য, দ্রাবিড়, চিন, শক, হুন, পাঠান, মোঘল এক দেহে লীন হয়ে গিয়েছে। সব বিভেদ ভুলে ভারতবাসী এক বিরাট হৃদয়ের অধিকারী হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া যুগে যুগে ভারতবর্ষের বুকে জন্ম নিয়েছেন গৌতম বুদ্ধ, মহাবীর জৈন, নানাক, চৈতন্যদেব প্রমুখ মহামানব। সবার কেবল মহান ভারতভূমিতেই সম্ভব। তাই এই ভারতভূমি পুণ্যতীর্থ।
(২) মহামানবের সাগরতীরে বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তরঃ নদী যেমন নানা উৎস থেকে এসে সাগরে মিশে যায়, তেমনই যুগ যুগ ধরে নানা ভাষা, নানা ধর্ম ও নানা বর্ণের মানুষ এবং বিভিন্ন শাসক সম্প্রদায় এদেশকে লুন্ঠন করতে বা শোষণ করতে এসে শেষে পর্যন্ত সমাজ-সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গিয়েছে। ভারতবর্ষ যেন এক সুবৃহৎ মহাসাগর। এই সাগরে এসে লীন হয়ে গিয়েছে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আসা নানা সংস্কৃতির মানুষ। তাই ভারতবর্ষকে মহামানবের সাগরতীর বলে মনে করেছেন কবি।
(৩) ভারতের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ধরা পড়েছে, কবিতা থেকে এমন একটি পঙক্তি উদ্ধৃত করো।
উত্তরঃ ভারতের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ধরা পড়েছে, এমন একটি পঙক্তিটি হল;
"ধ্যানগম্ভীর এই যে ভূধর, নদী-জপমালা-ধৃত প্রাম্ভর, 
হেথায় নিত্য হেরো পবিত্র ধরিত্রীরে
এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।"
(৪) ভারতবর্ষকে পদানত করতে কোন্‌ কোন্‌ বিদেশি শক্তি অতীতে এদেশে এসেছিল? তাদের পরিণতি কী ঘটল?
উত্তরঃ ভারতবর্ষকে পদানত করতে যুগ যুগ ধরে বহু বিদেশি শক্তি এদেশে এসেছিল। তাদের মধ্যে ছিল শক, হুন, পাঠান, মোঘল ও সর্বোপরি ইংরেজ।
     মহাকালের স্রোতের অমোঘ নিয়মে তাদের সকলকেই এদেশ থেকে চলে যেতে হয়েছে। তাদের সাম্রাজ্য চিরস্থায়ী হয়নি। সাময়িকভাবে প্রভুত্ব বিস্তার করলেও অনতিবিলম্বে তাদের এই দেশ থেকে বিদায় নিতে হয়েছে।
(৫) 'পশ্চিমে আজি খুলিয়াছে দ্বার' - উদ্ধৃতাংশে কোন্‌ পরিস্থিতির কথা বলা হয়েছে? এমন পরিস্থিতিতে কবির অন্বিষ্ট কী?
উত্তরঃ 'পশ্চিম' বলতে ইউরোপীয় সভ্যতা-সংস্কৃতির কথা বলা হয়েছে। ভারতে ইংরেজ শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হলে তার সূত্র ধরে ইউরোপের জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিল্প-প্রযুক্তির সাগনার সঙ্গে এদেশের মানুষ পরিচিত হবার সুযোগ পায়। এই পরিস্থিতির কথাই কবি বলতে চেয়েছেন।
     এই পরিস্থিতিতে কবির অভিপ্রায় হল, পশ্চিমি সভ্যতা-সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের ভাবের-ভাবনায় মিলন ঘটাতে হবে। দুই দেশের কৃষ্টি-সম্পদ দেওয়া-নেওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের জ্ঞানের প্রসারতা বাড়াতে সক্ষম হব।
(৬) 'আমার শোণীতে রয়েছে ধ্বনিতে তার বিচিত্র সুর।' - কোন্‌ সুরের কথা বলা হয়েছে? তাকে বিচিত্র বলার কারণ কী? কেনই বা সে-সুর কবির রক্তে ধ্বনিত হয়? 
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'ভারততীর্থ' কবিতা থেকে উদ্ধৃতা আশে ভারতবর্ষের মূল সংস্কৃতি যেসব বিভিন্ন সংস্কৃতির মিলনে গড়ে উঠেছে, সেগুলিকেই বিচিত্র সুর বলা হয়েছে।
    নানা জাতি-ধর্ম-বর্ণের মানুষ কখনও অত্যাচারী শাসক বা শোষকরূপে, কখনও বা এদেশের সভ্যতা-সংস্কৃতির মুগ্ধ পর্যটকরূপে এদেশে এসেছেন। কিন্তু এদেশে এসে তারা আর কেউই শেষাবধি ফিরে যাননি। এদেশের মাটি, সভ্যতা, সংস্কৃতি ও মানুষকে তাঁরা ভালোবেসে এদেশেই থেকে গিয়েছেন। তাই বিদেশ থেকে আগত প্রতিটি জাতিধর্মের মানুষের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির সুরটিও এদেশের মাটিতে কান পাতলে শোনা যায়। তাই কবি তাকে বিচিত্র বলেছেন।
     বিচিত্র জাতি-ধর্ম-বর্ণের মানুষের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গিয়ে এক সংস্কৃতির মহাসাগর হয়ে উঠেছে। তাই ভারতীয় সংস্কৃতি বলতে এখন সারা পৃথিবীর বহু মানুষের মিলিত সংস্কৃতিকেই বোঝায়। সেই সংস্কৃতিরই উত্তরসূরী আমরা। তাই কবির রক্তে সেই বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির সুর ধ্বনিত হয়।
(৭) "হে রুদ্রবীণা, বাজো বাজো বাজো ..." - রুদ্রবীণা কী? কবি তার বেজে ওঠার প্রত্যাশী কেন?
উত্তরঃ 'রুদ্রবীণা' হল মহাদেবের বীণা। যে-বাদ্যযন্ত্রের সুর সমস্ত কিছুকে সংহার করে দেয়, তাকে কবি বেজে উঠতে বলেছেন।
     বীণাধ্বনির ভিতরে রয়েছে মহামিলনের সুর - যা প্রকৃতপক্ষে ভারতবর্ষের মূল সুর। কবি জানেন, অনেক মানুষ এখনও সংকীর্ণ মানসিকতার গন্ডিতে বন্দি হয়ে ভারতবর্ষের একতার সঙ্গে, সংস্কৃতির মূল স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়নি। কিন্তু কবি মনে করেন, সবার অংশগ্রহণ ছাড়া ভারতের ঐক্যের সুর সম্পূর্ণ হবে না। তাই কবি ওই সব মানুষকে একত্রে গ্রথিত করার জন্যে রুদ্রবীণার মঙ্গল সুরের বেজে ওঠার প্রত্যার্শী হয়েছেন।
(৮) 'আছে সে ভাগ্য লিখা।' - ভাগ্যে কী লেখা আছে? সে লিখন পাঠ করে কবি তাঁর মনে কোন্‌ শপথ গ্রহণ করলেন?
উত্তরঃ ভারতবর্ষ বিভিন্ন ধর্মের মানুষের এক মহামিলনক্ষেত্র। বহু জাতি, বহু বর্ণের মানুষ এদেশে এসে অত্যাচারের রথচক্র চালিয়েছে। অনেক দুঃখকষ্ট সহ্য করেও এদেশের মানুষ ওইসব অত্যাচারী বিদেশি মানুষদের আপন করে নিয়েছে। এই দুঃখকষ্টই এদেশের মানুষের ভাগ্যে লেখা আছে।
     সেই বিধিলিপি পাঠ করে কবি মনে মনে শপথ নিয়েছেন যে, দুঃখকে তিনি মনের মধ্যে বহন করেই চলবেন। তার সঙ্গে সমস্ত লাজলজ্জা, অপমান দূরে সরিয়ে দুঃসহ ব্যথার অবসান ঘটাবেন। তাঁর স্থির বিশ্বাস, রাত্রির অন্ধকার দূর হবে। কবি অদৃষ্টের খোলসমুক্ত হয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন। তাই দুর্জয় সাহস, প্রবল আত্মশক্তি ও অদম্য মনোবল নিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে আত্মস্থ হয়ে তিনি ভাগ্যলিখনকে জয় করার শপথ গ্রহণ করেছেন।
(৯) 'পোহায় রজনী' - অন্ধকার রাত শেষে যে নতুন আশার আলোকোজ্জ্বল দিন আসবে তার চিত্রটি কীভাবে 'ভারততীর্থ' কবিতায় রূপায়িত হয়েছে?
উত্তরঃ কবি জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে আর্য-অনার্য, হিন্দু-মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টান সবাইকে আহ্বান করেছেন। সবার হাত ধরে পতিত-অবহেলিতদের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি চান, ভারতমায়ের নব আভিষেকে, সবার স্পর্শে ধৌত ধরণির ধূলি ধন্য হোক। সম্মিলিত শক্তির ওপর আস্থা রেখে দেশের এই অন্ধকারময় সময়কে অতিক্রম করতে পারলেই ভারত মায়ের অভিষেক ঘটানো সম্ভব হবে। এই আলোকোজ্জ্বল নতুন দিনের জন্যই কবি প্রতীক্ষারত।
(১০) 'মার অভিষেকে এসো এসো ত্বরা' - কবি কাদের ব্যাকুল আহ্বান জানিয়েছেন? কোন্‌ মায়ের কথা এখানে বলা হয়েছে? এ কোন্‌ অভিষেক? সে-অভিষেক কীভাবে সম্পন্ন ও সার্থক হবে?
উত্তরঃ কবি দেশের সব মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন। আর্য-অনার্য, হিন্দু-মুসলমান, ইংরেজ, শিখ-খ্রিস্টান, ব্রাহ্মণ, শুচি-অশুচি সকলকে একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে মায়ের অভিষেকে অংশ নিতে বলেছেন।
     কবি মা বলতে এখানে ভারতমায়ের কথা বলেছেন। 
     এখানে সমস্তরকম পরাধীনতা, শাসন-শোষণ-অপমান মুছে ফেলে নতুন দিনের অভিষেকের কথা বলা হয়েছে।
     জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সমস্ত মানুষের মিলনের মধ্য দিয়ে এই অভিষেক সম্পন্ন হবে। এদেশের মানুষ যখন তাদের সমস্ত বিভেদ ভুলে গিয়ে এক মহামিলনের ক্ষেত্র রচনা করবে, তখনই এই অভিষেক সার্থক হবে।
(১১) টীকা লেখোঃ
ওংকারধ্বনিঃ 'ওঁ' শব্দটি এসেছে সংস্কৃত 'অব' ধাতু থেকে। এর ভিন্ন ভিন্ন উনিশটি অর্থ আছে। শুধুমাত্র হিন্দুধর্মেই নয়; বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ ধর্মের ক্ষেত্রেও 'ওঁ' বা ওংকার ধ্বনি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তাই, 'ওংকার' ধ্বনি হল মহামন্ত্র ধ্বনি; যা আমাদের সকল মন্ত্রের মূল মন্ত্র। 'ওংকার' হল সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের নাম জপ করার মন্ত্র।
শকঃ প্রাচীনকালে যেসমস্ত বহিরাগত জাতি ভারতবর্ষকে আক্রমণ করেছিল, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল - শক। এরা ছিল মধ্য এশিয়ার প্রাচীন জাতি। চিন সীমান্ত অতিক্রম করে এরা ভারতে প্রবেশ করে। এরা ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে সাম্রাজ্য স্থাপন করে মূলত দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতকে। গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত এই শকদের দমন করেন। এরা 'শালিবাহন' নামেই পরিচিত ছিল।
হুনঃ হুনদের বাসস্থান মধ্য এশিয়ায়। এরা মঙ্গল জাতির একটি শাখা। পঞ্চম শতাব্দীর মধ্যভাগে এরা ভারত আম্রমণ করে, কিন্তু স্কন্দগুপ্ত এদের প্রতিহত করে। পরবর্তীকালে হুনরা পুনরায় ভারত আক্রমণ করে এবং পাঞ্জাব ও মধ্যপ্রদেশের কিছু অংশ দখল করে। হুনরা ছিল সাংঘাতিক অত্যাচারপ্রবণ, অসভ্য জাতি। মালবের রাজা যশোবর্মন এই দুর্ধর্ষ হুন জাতিদের ধ্বংসসাধন করেন।
মোঘলঃ পাঠান সুলতান কুতুবউদ্দিনের পর ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে কাবুলের বাদশা বাবর পানিপথের যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদিকে পরাজিত করে ভারতে মোঘল সাম্রাজ্যের পত্তন করেন। বাবর যে মোঘল সাম্রাজ্য স্থাপন করেছিলেন, তা ঔরঙ্গজেব পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। মোঘলরা ছিল মঙ্গোলিয়ার অধিবাসী তাতার জাতির শাখাবিশেষ। মোঘল নেতা তৈমুর লঙ বহুবার ভারত আক্রমণ করে দিলি দখল ও লুন্ঠন করেচিলেন। বাবর ছিলেন তৈমুর লঙ-এর বংশধর।
দ্রাবিড়ঃ আনুমানিক ৩৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পশ্চিম এশিয়া থেকে দ্রাবিড় জাতির মানুষ ভারতবর্ষে আসেন। সম্ভবত ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর আদি বাসস্থান ছিল। দ্রাবিড় ভাষাভাষীর মানুষ মূলত দক্ষিণ ভারত, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কেরল ও কর্ণাটকে বসবাস করেন। সিংহলের তামিলরা দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।
ইংরেজঃ ভারতবর্ষে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়কে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগ বলা হয়। অবশ্য এর আগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতকে শাসন করত। ওই সময়ের পর রানি ভিক্টোরিয়া নিজহস্তে ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেন। মূলত, ভারতবর্ষে বাণিজ্য করতে এসে, তারা গোটা দেশের শাসন হয়ে ওঠে। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত স্বাধীন হওয়ার আগে পর্যন্ত ভারতসম্রাজ্ঞী ভিক্টোরিয়ার নেতৃত্বে ইংরেজরা এদেশে শাসন চালাত।
(১২) ভারতবর্ষের অতীত ইতিহাসের কথা কবিতায় কীভাবে বিবৃত হয়েছে?
উত্তরঃ মানবসভ্যতার ইতিহাসে সুপ্ত হয়ে আছে কত অসংখ্য ঘটনা। সুদূরকাল থেকে কত সাম্রাজ্যের উন্থান-পতন ঘটেছে। শক্তির মদগর্বে গর্বিত বিজয়ীর দল, অশ্বক্ষুরধ্বনি তুলে পরাভূত জাতিকে পদদলিত করে চলে গিয়েছে। কিন্তু ইতিহাসের কালগর্ভে তারা সবাই বিস্মৃত-বিলীন হয়ে গিয়েছে। অথচ ভারতের অতীত ইতিহাসে দুর্ধর্য সেনানায়কদের রণোন্মত্ত বিজয় অভিযানের কথা আজও মানুষ বিভীষিকার কারণে স্মরণ করে। সাম্রাজ্যলোভী পাঠান, শক, হুন, মোঘলদের বিজয় অভিযান ছিল ভয়ংকর। তাদের জয়োদ্ধত গতি, প্রবল প্রতাপ ভারতকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করেছিল। মানবসমাজে বারবার ন্যায়ধর্ম ভূলুন্ঠিত হয়েছিল। ক্ষমতা ও লোভের উন্মাদনায় একশ্রেণির মানুষ অসংখ্য মানুষকে বঞ্চিত ও লাঞ্চিত করেছিল। আবার অতীত ভারতবর্ষে বারবার বৈদেশিক আক্রমণের পাশাপাশি সংস্কৃতির মেলবন্ধনও ঘটেছিল। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের এই মিলনের ফলেই ভারত চিরকাল সার্ভৌম থেকেছে। কত তপস্যার হোমাগ্নিতে, কত মানুষের আত্মাহুতিতে দুঃখের রক্তিম লেলিহান শিখা প্রজ্বলিত হয়েছে, তার হিসেবে কবি দিতে পারেন না। কবি সেইসবকে নিজের ভাগ্যলিখন বলে মেনে নিয়ে, সেই যন্ত্রণা বুকের মাঝে গোপন করেও এক বিশাল চেতনার আবির্ভাব কামনা করেছেন। যে-জননীর অপমান তাঁর বুকে বেদনা জাগায়, তিনি হলেন ভারতজননী, বিশ্বজননী। বিশ্বমানবতার যেখানে অপমান হয়, সেখানে মায়ের মুখ ম্লান হয়ে যায় সেই কলঙ্কিত অতীত ইতিহাসকে তিনি স্মরণ করতে চান না। বরং আমাগী দিনের স্বপ্নিল ইতিহাসকে তিনি তাঁর অন্তরে উদ্ভাসিত করতে চান।
(১৩) কবির দৃষ্টিতে ভবিষ্যৎ ভারতের যে-স্বপ্নিল ছবি ধরা পড়েছে, তার পরিচয় দাও।
উত্তরঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতবর্ষকে পুণ্য তীর্থ হিসেবে কল্পনা করেছেন। যেখানে দু-বাহু বাড়িয়ে তিনি নরদেবতাকে নমস্কার জানাবেন। বহু প্রাচীন এই দেশ - ভারতবর্ষ ঋষিমুনিদের তপস্যার স্থল। যুগযুগান্ত থেকে বহু আধ্যাত্মিক তাপসদের এই পবিত্রভূমিতে আবার মানবতার পবিত্র দীপশিখা প্রজ্বলিত হবে বলে কবি মনে করেন। ভারতবাসী জড়ত্ব। অলসতা ত্যাগ করে কূপমন্ডূকতা, আচারসর্বস্বতাকে দূরে সরিয়ে, সর্ববন্ধনমুক্ত সত্য প্রতিষ্ঠায় আবার নিয়োজিত হবে। সব ধর্মের, সব বর্ণের মানুষকে কবি তাই স্বপ্নের ভারতবর্ষ গড়তে আহ্বান জানিয়েছেন। সেজন্য সকল লাজ-লজ্জা, অপমান, দুঃসহ ব্যথা দূরে সরিয়ে এক বিশাল প্রাণের সন্ধান পেয়েছেন কবি। আসলে মানবমনের অতল সন্ধান পেয়েছেন কবি। আসলে মানবমনের অতল সন্ধানী কবি রূপসাগরে ডুব দিয়ে আসল মুক্তোটি সন্ধান করে এনেছেন, সেটি হল মানবতা। এ ছাড়াও তিনি অনুভব করেছিলেন, যাবতীয় ভালোমন্দ সবকিছুই আমাদের মধ্যে রয়েছে। তাই পশ্চিমের দরজা দিয়ে আসা যা-কিছু ভালো, তাকে আমাদের গ্রহণ করতে হবে। প্রকৃতি ও পুরুষ মিলে যে-জগতের উৎপত্তি, সেই জগতের সভায় কবি ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠত্ব দেখলে পেয়েছেন।
তাই কবি বলেন :
"পোহায় রজনী, জাগিয়ে জননী বিপুল নীড়ে
এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

4 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

LightBlog

AdsG

close