LightBlog
মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন ২০২৪ - নদীর বিদ্রোহ (গল্প) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
Type Here to Get Search Results !

মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন ২০২৪ - নদীর বিদ্রোহ (গল্প) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন ২০২৪ - নদীর বিদ্রোহ (গল্প) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন ২০২৪ - নদীর বিদ্রোহ (গল্প) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়


নদীর বিদ্রোহ
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় 

(১) নিচের বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :

১.১ "আর বৃষ্টি হবে না, কি বল?" - কথাটি কে বলেছিল?

(ক) নতুন সহকারি

(খ) নদের চাঁদ

(গ) রেলের কর্মাধ্যক্ষ

(ঘ) রেলের টিকিট পরীক্ষক

উত্তর : (খ) নদেরচাঁদ

১.২ নদের চাঁদ লাইন ধরে যে দিকে হাঁটতে শুরু করেছিল তা হল -

(ক) স্টেশনের দিকে

(খ) বাড়ির দিকে

(গ) নদীর উপরের ব্রীজের দিকে

(ঘ) পরবর্তী স্টেশনের দিকে

উত্তর : (গ) নদীর উপরের ব্রীজের দিকে

১.৩ "ছেলে মানুষের মতো ঔৎসুক্য বোধ করিতে লাগিল" - এখানে কার সম্পর্কে এরকম কথা বলা হয়েছে?

(ক) ট্রেনের খালাসী

(খ) নদের চাঁদ

(গ) ট্রেনের চালক

(ঘ) নতুন সহকারি

উত্তর : (খ) নদের চাঁদ

১.৪ "এমন ভাবে পাগলা হওয়া কি তার সাজে?" - কিসের জন্য নদের চাঁদ পাগলা হয়েছিল?

(ক) অবিরত বৃষ্টির জন্য

(খ) নদীর জন্য

(গ) নদীর কথা মানুষকে জানানোর জন্য

(ঘ) নিজের পত্নীর জন্য

উত্তর : (খ) নদীর জন্য

১.৫ নদের চাঁদ প্রায় কেঁদে ফেলেছিল, কারণ -

(ক) নদীর ঢেউয়ের প্রভাবে ব্রিজ ভেঙে যাচ্ছিল

(খ) নদীতে বন্যা দেখা দিয়েছিল

(গ) তার প্রিয় নদীটি শুকিয়ে যাচ্ছিল

(ঘ) নদীতে ঢেউ উঠেছিল

উত্তর : (গ) তার প্রিয় নদীটি শুকিয়ে যাচ্ছিল

১.৬ নদের চাঁদ ব্রিজের মাঝামাঝি কোথায় এসে বসেছিল?

(ক) একটি কাঠের গুঁড়ির ওপর

(খ) একটি থামের উপর

(গ) ধারকস্তম্ভের শেষ প্রান্তে

(ঘ) একটি ইটের উপর

উত্তর : (গ) ধারক স্তম্ভের শেষ প্রান্তে

১.৭ "নদের চাঁদের ভারী আমোধ বোধ হইতে লাগিল" - এর কারণ কি ছিল?

(ক) ইচ্ছে করলেই হাত বাড়িয়ে নদীর জল স্পর্শ করতে পারবে বলে

(খ) নদীর পাড়ে বসতে পেরেছে বলে

(গ) নদীকে দেখতে পাচ্ছে বলে

(ঘ) ব্রিজের উপর বসতে পেরেছে বলে

উত্তর : (ক) ইচ্ছে করলেই হাত বাড়িয়ে নদীর জল স্পর্শ করতে পারবে বলে

১.৮ নদের চাঁদ নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছিল একটি -

(ক) বইয়ের পৃষ্ঠা

(খ) শুকনো পাতা

(গ) খাতার পৃষ্ঠা

(ঘ) একটি পুরনো চিঠি

উত্তর : (ঘ) একটি পুরনো চিঠি

১.৯ একটা বেদনাদায়ক চেতনা কিছুক্ষণের জন্য নদের চাঁদকে কি করেছিল?

(ক) রোমাঞ্চিত

(খ) দিশেহারা

(গ) আচ্ছন্ন

(ঘ) উন্মাদ

উত্তর : (খ) দিশেহারা

১.১০ "নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে।" - নদীর বিদ্রোহের কারণ কি?

(ক) অনাবৃষ্টি

(খ) লোহা ইট কাঠ কংক্রিট এর বন্ধন

(গ) বর্ষাকাল

(ঘ) অতিরিক্ত বৃষ্টি

উত্তর : (খ) লোহা ইট কাঠ কংক্রিট এর বন্ধন


(২) নিচের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :

২.১ "আমি চললাম হে!" - কে, কাকে একথা বলেছেন?

উত্তর : নদের চাঁদ তার সহকারীকে একথা বলেছিল।

২.২ স্টেশন থেকে নদীর উপর ব্রিজের দূরত্ব কত?

উত্তর : এক মাইল

২.৩ নদের চাঁদ কত দিন নদীকে দেখা হয়ে ওঠেনি?

উত্তর : পাঁচ দিন

২.৪ "না দেখিলে সে বাঁচিবে না।" - কে, কি না দেখলে বাঁচবে না?

উত্তর : নদীকে না দেখলে নদের চাঁদ বাঁচবেনা।

২.৫ " সে প্রায় কাঁদিয়া ফেলিয়াছিল।" - কে এবং কি কারণে কেঁদে ফেলেছিল?

উত্তর : ছোট বেলায় একবার অনাবৃষ্টিতে নদীর জল শুকিয়ে যাওয়ায় নদের চাঁদ প্রায় কেঁদে ফেলেছিল।

২.৬ "আজ যেন সেই নদী ক্ষেপিয়া গিয়াছি" - নদীর ক্ষেপে যাওয়ার কারন কি?

উত্তর : পাঁচদিন অনবরত বৃষ্টির জলে নদী ফুলে-ফেঁপে উঠেছিল যা নদীর ক্ষেপে যাওয়ার সঙ্গে তুলনা করা যায়।

২.৭ "আজও সে সেই খানে গিয়া বসিল।" - কে এবং কোথায় গিয়ে বসলো?

উত্তর : রেল স্টেশন থেকে প্রায় এক মাইল দূরে একটি ব্রীজের মাঝামাঝি স্থানে একটা ধারক স্তম্ভের শেষ প্রান্তে।

২.৮ "লোভটা সামলাইতে পারিল না" - এখানে কোন লোভের কথা বলা হয়েছে?

উত্তর : নদীর জলের সঙ্গে খেলা করার লোভকে নদের চাঁদ সামলাতে পারেনি।

২.৯ নদের চাঁদ কত বছর স্টেশনমাস্টারের দায়িত্ব পালন করেছে?

উত্তর : চার বছর

২.১০ কোন ট্রেনটি নদের চাঁদ কে পিষে দিয়ে চলে যায়?

উত্তর : সাত নম্বর ডাউন প্যাসেঞ্জার


(৩) নিচের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা মূলক প্রশ্ন গুলোর উত্তর দাও :

প্রশ্নঃ "ট্রেনটিকে রওনা করাইয়া দিয়া" – কোন্ ট্রেনটির কথা বলা হয়েছে? ট্রেনটিকে রওনা করানোর পর কী ঘটল?

উত্তরঃ 'নদীর বিদ্রোহ' গল্প থেকে উদ্ধৃত অংশে চারটে পঁয়তাল্লিশ মিনিটের প্যাসেঞ্জার ট্রেনটির কথা বলা হয়েছে। ট্রেন রওনা হওয়ার পরবর্তী ঘটনা ট্রেনটিকে রওনা করানোর পর স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদ তার নতুন সহকারীকে নিজের প্রস্থান করার কথা জানায়। তারপর আর হয়তো বৃষ্টি হবে না, এই অনুমান ব্যক্ত করে সহকারীর সমর্থন প্রত্যাশা করে। সহকারীও সহমত ব্যক্ত করলে সে নদীর দিকে রওনা হয়ে যায়।

প্রশ্নঃ 'নদীকে এভাবে ভালোবাসিবার একটা কৈফিয়ত নদেরচাদ দিতে পারে।' - কৈফিয়তটি কী? কৈফিয়ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়েছিল কেন?

উত্তরঃ 'নদীর বিদ্রোহ' গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র নদেরচাদের জন্ম, বেড়ে ওঠা সবই নদীকে ঘিরে। তার দেশের যে শীর্ণকায় ক্ষীণস্রোতা নদীটিকে কৈফিয়তটি বা সে বড়ো ভালোবাসত। সেইজন্য কর্মক্ষেত্রের নদীসহ যে কোনো নদীর প্রতিই তার অস্বাভাবিক মায়া ছিল। নদীকে এমন পাগলের মতো ভালোবাসার জন্য সে এমন কৈফিয়তই দিয়েছিল।

  রেল নিয়ন্ত্রণের মতো দায়িত্বপূর্ণ কাজে যুক্ত একজন প্রাপ্তবয়স্কের নদীকে নিয়ে এমন পাগলামো সকলে স্বাভাবিকভাবে নেবে না তাই নদেরচাদ নিজেই কৈফিয়ত দিয়েছিল ।

প্রশ্নঃ 'ব্রিজের দিকে হাঁটিতে লাগিল।' — কোন্ ব্রিজের কথা বলা হয়েছে? সেই ব্যক্তি ব্রিজের দিকে হাঁটতে লাগল কেন?

উত্তরঃ 'নদীর বিদ্রোহ' গল্প থেকে উদ্ধৃত অংশে নদেরচাঁদ যে স্টেশনের ব্রিজের স্টেশনমাস্টার, সেখান থেকে এক মাইল দূরে নদীর ওপরে নতুন তৈরি ব্রিজটির কথা বলা হয়েছে।

   নদেরচাঁদ ছিল প্রকৃতিপ্রেমিক। বিশেষত নদীর প্রতি তার ছিল অপরিসীম আকর্ষণ। সে প্রায় রোজই নদীর পাশে বসে সময় কাটায়। বিগত পাঁচদিন ধরে মুশলধারায় বৃষ্টির জন্য সে নদীকে দেখতে যেতে পারেনি। তাই কিছুক্ষণের জন্য বৃষ্টি থামতেই সে নদীকে দেখার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

প্রশ্নঃ 'ব্রিজের কাছাকাছি আসিয়া প্রথমবার নদীর দিকে দৃষ্টিপাত করিয়াই নদেরচাঁদ স্তম্ভিত হইয়া গেল।' - কোন্ ব্রিজের কথা বলা হয়েছে? সেখানে এসে নদেরচাঁদ কী দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেল?

উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'নদীর বিদ্রোহ' গল্পের মুখ্য চরিত্র গল্পে উদ্ধৃত ব্রিজের পরিচয়। নদেরচাদ যে অখ্যাত স্টেশনের স্টেশনমাস্টার ছিল সেখান থেকে মাইলখানেক দূরে নদীর ওপর যে নতুন ব্রিজটি তৈরি হয়েছিল এখানে তার কথা বলা হয়েছে। নদেরচাদের স্তম্ভিত একটানা পাঁচদিন বৃষ্টির পর নদেরচাদ নদীটিকে দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায়। কয় দিন আগে সে নদীর পঙ্কিল জলের যে উল্লাস ও চঞ্চলতা দেখে গিয়েছিল আজ অতিবৃষ্টির পর তা যেন পরিণত হয়ে ভয়ংকরভাবে ফুঁসছে।

প্রশ্নঃ 'নদের চাঁদ ছেলেমানুষের মতো ঔৎসুক্য বোধ করিতে লাগিল।' - 'ছেলেমানুষের মতো বলার কারণ কী? নদেরচাদের ঔৎসুক্য হয়েছিল কেন?

উত্তরঃ চঞ্চলমতি শিশুদের ধৈর্য খুবই কম। ছেলেমানুষের মতো ধৈর্যচ্যুতি ঘটে। নদেরচাঁদও একটানা পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বর্ষণের ফলে নদীকে দেখতে না পেয়ে অধৈর্য হয়ে পড়ে। বয়সের তুলনায় তার এই অধৈর্যকে লেখক ছেলেমানুষির সঙ্গে তুলনা করেছেন।

      শৈশব থেকেই নদীর সঙ্গে নদেরচাঁদের সখ্য। তাঁর কর্মস্থলের নদেরচাদের কাছাকাছি নদীটিকে প্রতিদিন দেখতে যেত। পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বর্ষণে যেতে না পারায় নদীটির চেহারা ঔৎসকোর কারণ কেমন হয়েছে তা দেখার জন্য সে উৎসুক হয়েছিল।

প্রশ্নঃ 'আজ যেন সেই নদী খেপিয়া গিয়াছে' - তার পূর্বরূপ ও পরবর্তী রূপ বর্ণনা করো।

উত্তরঃ একটানা পাঁচদিন পর নদীর দিকে প্রথমবার দৃপা করে নদীর পূর্ব ও পরবর্তী রূপ নদেরচাঁদ স্তম্ভিত হয়ে গেল। বর্ষার জল পেয়ে উচ্ছ্বসিত নদীর পঙ্কিল জলে সে যে উল্লাস ও চঞ্চলতা দেখে গিয়েছিল, একটানা বৃষ্টির পর সেই উল্লাস ও চঞ্চলতা যেন পরিণত হয়েছে ফুঁসতে থাকা ভয়ংকরতায়। আগের চঞ্চলতায় ছিল পরিপূর্ণতার উল্লাস; কিন্তু এখন নদী যেন খেপে উঠেছে। গাঢ় কালো পৰিকূল জল ফুলেফেঁপে তরঙ্গায়িত হয়ে ছুটে চলেছে।

প্রশ্নঃ 'কিছুক্ষণ নদীকে না দেখিলে সে বাঁচিবে না।' - কার না বাঁচার কথা বলা হয়েছে? নদীকে না দেখলে সে বাঁচবে না কেন?

উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত 'নদীর বিদ্রোহ' গল্পের মুখ্য চরিত্র যার না বাচার নদেরচাদ নদীকে না দেখলে বাঁচবে না বলা হয়েছে। নদেরচাঁদ জন্ম থেকেই নদীর পাশে বড়ো হয়েছে। নদী তার জীবনে শ্বাসপ্রশ্বাসের মতোই মূল্যবান। নদীকে ছেড়ে সে কখনও থাকেনি। এমনকি, বরাতজোরে তার কর্মক্ষেত্রে সে নদীকে পাশে পেয়েছে। তাই নদীর প্রতি তার আকর্ষণ যেন পাগলামিতে পরিণত হয়েছে। এই কারণে নদীকে না দেখলে সে বাঁচবে না।

প্রশ্নঃ 'তার চার বছরের চেনা এই নদীর মূর্তিকে তাই যেন আরও বেশি ভয়ংকর, আরও বেশি অপরিচিত মনে হইল' - চার বছরের চেনা 'বলার কারণ কী? আরও বেশি ভয়ংকর, আরও বেশি অপরিচিত মনে হল কেন?

উত্তরঃ চার বছর হল নদেরচাঁদ স্টেশনমাস্টারের দায়িত্বভার গ্রহণ 'চার বছরের চেনা' করে এই অঞ্চলে এসেছে। তাই নদীটির সঙ্গে তার বলার কারণ চার বছরের চেনা।

     নদেরচাদ তার কর্মস্থলের অনতিদূরে অবস্থিত বর্ষার জলে পৃষ্ট নদীটিতে পাঁচদিন আগে পঙ্কিল জলস্রোতে যে চাঞ্চল্য দেখে গিয়েছিল তাতে ছিল পরিপূর্ণতার আনন্দ। কিন্তু পাঁচদিন আরও বেশি অপরিচিত অবিশ্রান্ত বৃষ্টির পর সে চেনা নদীর রূপই প্রত্যক্ষ করবে ভেবেছিল, কিন্তু নদেরচাঁদ দেখল নদী আরও বেশি ভয়ংকর, আরও বেশি ভয়ংকর ও অপরিচিত হয়ে উঠেছে।

প্রশ্নঃ 'রেলের উঁচু বাঁধ ধরিয়া হাঁটিতে হাঁটিতে দু–পাশে চাহিয়া চাহিয়া নদেরচাদ নদীর বর্ষণপুষ্ট মূর্তি কল্পনা করিবার চেষ্টা করিতে লাগিল।' – দু–পাশে চেয়ে চেয়ে নদেরচাঁদ কী দেখছিল? সে নদীর বর্ষণপুষ্ট মূর্তি কেন কল্পনা করার চেষ্টা করছিল?

উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত 'নদীর বিদ্রোহ' গল্পে রেলের উঁচু বাঁধের দু–পাশের মাঠঘাট অতিবৃষ্টিতে জলে পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। নদেরচাঁদ তা দেখতে দেখতেই নদেরচাদ যা দেখেছিল। 

     নদীর প্রতি নদেরচাদের ছিল অপরিসীম আকর্ষণ। পাঁচদিনের টানা বৃষ্টির জন্য সে নদীকে দেখতে যেতে পারেনি। তাই সে নদীকে দেখার জন্য উন্মত্তপ্রায় হয়ে উঠেছিল। পাঁচদিনের অতিবৃষ্টি তার প্রতিদিনের চেনা ক্ষীণকায়া নদীটিকে কী মূর্তি দান করেছে, সে কথাই সে কল্পনা করছিল।

প্রশ্নঃ 'আজও সে সেইখানে গিয়া বসিল।' - সে কোথায় গিয়ে বসল? তার সেখানে বসার কারণ কী ছিল?

উত্তরঃ 'নদীর বিদ্রোহ' গল্প অনুসারে নদেরচাঁদ যে–স্টেশনের স্টেশনমাস্টার ছিল, তার এক মাইল দূরে নদীর ওপরে একটি নতুন রং করা ব্রিজ ছিল। সেই ব্রিজের মাঝামাঝি ইট, সুরকি আর সিমেন্ট গাঁথা ধারকস্তঙের কিনারায় বসে সে রোজ নদীকে দেখত। সেদিনও নদেরচাঁদ সেইখানেই গিয়ে বসল। ব্রিজের ধারকস্তম্ভের কিনারায় বসে নদীকে দেখলে নদীবক্ষের ওপর থেকে নদীর বিস্তারসহ সামগ্রিক রূপটাই দর্শকের চোখে ধরা পড়ে। তাই নদেরচাঁদ সেখানে বসত।

প্রশ্নঃ 'নিজের এই পাগলামিতে যেন আনন্দই উপভোগ করে।' - নদেরচাদের মনের এই আনন্দের স্বরূপ পরিস্ফুট করো।

উত্তরঃ গ্রামবাংলার ছেলে নদেরচাদের জন্ম, শৈশব, বেড়ে ওঠা, আশা–আকাঙ্ক্ষা সবই নদীকে কেন্দ্র করে। নদীর সঙ্গে তার আত্মিক সম্পর্ক। নদীর ক্ষীণধারা দেখে বর্ষণপষ্ট স্ফীতকায় নদী তার মনে পুলক জাগায়। নদীর প্রতি এইরূপ প্রেম তার যে সাজে না একথা সে বুঝলেও তার মনকে বোঝাতে পারে না। কোথাও যেন নিজের এই পাগলামিতে সে আনন্দ উপভোগ করে।

প্রশ্নঃ 'কিন্তু সে চাঞ্চলা যেন ছিল পরিপূর্ণতার আনলের প্রকাশ।' – কোন চাঞ্চল্যের কথা বলা হয়েছে? 'পরিপূর্ণতার আনন্দ' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তরঃ পাঁচদিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টি হওয়ার আগে নদেরচাঁদ তার প্রিয় নদীটিকে বর্ষার জলে পরিপুষ্ট আর পাঁচটা সাধারণ নদীর মতো পরিপূর্ণতার আনন্দে চঞ্চল হয়ে উঠতে দেখেছিল। এখানে সেই চাঞ্চল্যের কথা বলা হয়েছে। 

     সারাবছরই নদীগুলি জলাভাবে অপুষ্ট থাকে। তাদের মধ্যেকার পূর্ণতার আনন্দ যেন অধরা থাকে। কিন্তু বর্ষার নব জলধারায় পুষ্ট হয়ে তাদের মধ্যে আসে পরিপূর্ণতার আনন্দ। তাদের প্রবাহে আসে উল্লাস, চলায় আসে ছন্দ, এসব কিছুকেই পরিপূর্ণতার আনন্দ বলা হয়েছে।

(৪) নিচের রচনাধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :

প্রশ্নঃ 'নদীকে এভাবে ভালোবাসিবার একটা কৈফিয়ত নদেরচাদ দিতে পারে।' - নদেরচাঁদ কে? নদীকে ভালোবাসার কী কৈফিয়ত সে দিয়েছিল? নদীকে খুব ভালোবাসার পরিণতি কী হয়েছিল?

উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'নদীর বিদ্রোহ' গল্পটি মনস্তাত্ত্বিক আঙ্গিকে লেখা। গল্পটি আধুনিক মানুষের পরিবেশচেতনার ইঙ্গিতবাহী। মানুষ নগরায়ণের জন্য দ্রুত বন কেটে মরুভূমিতে আহ্বান জানাচ্ছে, বাতাসে মেশাচ্ছে বিব। নদীর বুকে বাঁধ বেঁধে, ব্রিজ গড়ে সে বিদীর্ণ করছে নদীবক্ষ মানুষ বুঝতে পারছে না প্রকৃতি ও পরিবেশকে ধ্বংস করে যে মৃত্যুফাদ সে রচনা করছে সেখান থেকে তার বেরিয়ে আসা মুশকিল।

      পাঁচ দিনের অবিশ্রান্ত বর্ষণের ফলে, নদেরচাদের নদীর সঙ্গে দেখা হয়নি। পঞ্চম দিন বিকেলে বৃষ্টির ক্ষণিক বিরতি পেতেই সে বেরিয়ে পড়ে। নদীকে খুব কিন্তু ব্রিজের কাছাকাছি এসে নদীর দিকে দৃষ্টিপাত ভালোবাসার পরিণতি করেই সে স্তম্ভিত হয়ে যায়। উত্তাল ভয়ংকর এই নদীকে তার যেন অচেনা মনে হয়। অভ্যাসমতো ধারকস্তম্ভের শেষপ্রান্তে সে বসে। ক্রমে আবার বৃষ্টি শুরু হয়। নদীস্রোত আর বৃষ্টির মিলিত শব্দে তার ভয় হয়। মনে হয় বন্দিনি নদী আজ বিদ্রোহিনী হয়ে উঠেছে। খ্যাপা নদী ব্রিজকেও বুঝি ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। সে অন্ধকারে রেললাইন দিয়ে হেঁটে স্টেশনের দিকে ফিরে চলে। কিন্তু স্টেশনের পৌঁছোনোর আগেই তাকে ৭ নং ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি পিষে দিয়ে চলে যায়। এভাবেই প্রাণ দিয়ে নদীকে ভালোবাসার মূল্য চুকোয় নদেরচাঁদ।

প্রশ্নঃ 'নদেরচাদের ভারী আমোদ বোধ হইতে লাগিল।' এবং 'নদেরচাদের মন হইতে ছেলেমানুষি আমোদ মিলাইয়া গেল।' - মাত্র একটি অনুচ্ছেদের ব্যবধানে লেখকের এই দু–রকম বিবৃতির পিছনে যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ 'নদীর বিদ্রোহ' গল্পে নদেরচাদ নদীকে না দেখে একটি দিনও থাকতে পারে না। পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টির পর তাই সে নদীকে দেখার জন্য বেরিয়ে পড়ে। ব্রিজের কাছে এসে নদীকে দেখে সে স্তম্ভিত হয়ে যায়। বৃষ্টির পর নদী যেন খেপে গেছে। নদেরচাদ এতক্ষণ ক্ষীণস্রোতা নদীর কথা ভাবছিল, তাই চেনা নদীটির মূর্তি তার আরও বেশি ভয়ংকর ও অপরিচিত লাগছিল। প্রতিদিনের অভ্যাসমতো সে ধারবস্তত্ত্বের শেষ প্রান্তে বসে নদীকে দেখল। নদীর স্রোত সেই স্তস্তে আঘাত পেয়ে আবর্তাকারে ফেনায়িত হয়ে উপরের দিকে উঠে আসছে। তার মনে হল ইচ্ছা করলেই স্পর্শ করা যাবে। আমোদিত নদেরচাদ খেলার ছলে স্ত্রীকে লেখা চিঠি স্রোতের মধ্যে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলছিল। ঘণ্টা তিনেক পর আবার আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামল। সেই বৃষ্টির শব্দ আর নদীর জলের গর্জন মিলেমিশে তাকে আতঙ্কিত ও অবসন্ন করে তুলল, ক্রমে তার ছেলেমানুষি উধাও হয়ে গেল। তার মনে হল নদী যে কোনো সময় ব্রিজ ও বাঁধ ভেঙে নিজেকে মুক্ত করতে পারে। প্রকৃতির স্বাভাবিকতাকে নষ্ট করে মানবসভ্যতার যান্ত্রিক উন্নয়নকে নদী যেন ধ্বংস করতে চায়। সময়ের পরিবর্তনে পরিস্থিতির বদলের সম্ভাবনাকে সমর্থন করে; লেখক স্বল্প ব্যবধানে উক্তি দুটি করতে বাধ্য হয়েছেন।

প্রশ্নঃ 'নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে।' - নদীর বিদ্রোহের কারণ কী ছিল? 'সে' কীভাবে তা বুঝতে পেরেছিল?

উত্তরঃ 'নদীর বিদ্রোহ' গল্পে আমরা দেখি ছোটোবেলা থেকেই নদেরচাদের সমস্ত কিছু নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে। নদীর ভাষা সে বুঝবে এটাই স্বাভাবিক। বর্ষণপুষ্ট উত্তাল নদীকে সে ক্ষিপ্ত ও বিক্ষুব্ধ বলে চিনতে পেরেছিল। মানুষের তৈরি বাঁধ এবং ব্রিজ নদীকে শীর্ণকায় করে তোলায় নদী যে তাতে ক্ষুব্ধ, নদীর বিদ্রোহের, কারণ নদেরচাঁদ তার সংবেদনশীল মন দিয়ে তা উপলব্ধি করেছিল। মানুষের প্রযুক্তির কাছে অবদমিত প্রকৃতি যেন নদীর মাধ্যমে প্রতিশোধ নিতে চাইছে। নদেরচাঁদ বুঝেছিল, প্রকৃতির প্রতি মানুষের অবিচারই মানবসভ্যতাকে একদিন ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে। 

     নদেরচাঁদ সংবেদনশীল মানুষ। নদীকে নিয়ে তার কৌতূহল পাগলামির পর্যায়ের হলেও নদীকে নিয়ে তার অন্তর্দৃষ্টি তাকে অনন্যপূর্ব সিদ্ধান্তে উপনীত করে। প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের বলে বলীয়ান নদেরচাদ যেভাবে দাম্ভিক মানুষ প্রকৃতিকে বশে আনতে নদীর বুকে ব্রিজ বানিয়েছে, বাঁধ বেঁধেছে। এই অন্যায়ের প্রতিবাদ যেন ধ্বনিত হয় নদীর গর্জনে, সব কিছুকে ভেঙে ফেলার চেষ্টায়। নদীর এই কাজকে যেন সমর্থন করে চলে প্রকৃতির বৃষ্টি, মেঘ ও অন্ধকার। প্রকৃতির এইসব আয়োজনের দিকে লক্ষ রেখে নদীর বিদ্রোহকে নদেরচাঁদ অন্তরাত্মা দিয়ে অনুভব করেছে।


প্রশ্নঃ 'প্রথমবার নদীর দিকে দৃষ্টিপাত করিয়াই নদেরচাঁদ স্তম্ভিত হইয়া গেল।' - প্রথমবার নদীর দিকে দৃষ্টিপাত করে নদেরচাঁদ কী দেখেছিল? নদেরচাঁদের স্তম্ভিত হয়ে যাওয়ার কারণ কী?

উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'নদীর বিদ্রোহ' গল্পে পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টির পর নদীকে দেখার কথা বলতে গিয়ে লেখক 'প্রথমবার' শব্দটি ব্যবহার করেছেন। একটানা বৃষ্টির জন্য পাঁচ দিন নদীর সঙ্গে নদেরচাঁদের দেখা হয়নি। বৃষ্টি সাময়িকভাবে থামতে, সে উন্মত্তের মতো নদীকে দেখতে ছোটে। বর্ষার শুরুতে যে শীর্ণ নদীকে নদেরচাঁদ কল্লোলিত হয়ে উঠতে দেখেছিল, অতিবর্ষণের পর তার রূপটি কেমন দাঁড়িয়েছে তা দেখবার জন্য সে উৎসুক হয়ে পড়ে। কিন্তু নদীর ধারে গিয়ে সে স্তম্ভিত হয়ে যায়। পাঁচদিনের অতিবর্ষণে নদী এক ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছিল। নদীর জলস্ফীতি ব্রিজের ধারকস্তম্ভে আঘাত পেয়ে আবর্ত রচনা করে ফেনায়িত হয়ে অনেকটা ওপরে উঠে আসছিল । নদীর এই উন্মত্ত রুপ তাকে অবাক করেছিল।

    নদেরচাঁদ প্রথমবার নদীর বর্ষণপুস্টরূপ দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিল। পাঁচদিন আগেও বর্ষার জলে পরিপুষ্ট নদীর জলস্রোতে যে চাঞ্চল্য সে দেখে গিয়েছিল, সে চাঞ্চল্য ছিল পরিপূর্ণতার। আজ সেই নদী খেপে গিয়ে গাঢ় পঙ্কিল জল ফুলেফেঁপে ফেনায়িত হয়ে ছুটে চলেছে। তাই তার চার বছরের চেনা নদীর মূর্তিকে নদেরচাদের যেন আরও বেশি ভয়ংকর, আরও বেশি অপরিচিত বলে মনে হয়।

প্রশ্নঃ 'বড়ো ভয় করিতে লাগিল নদেরচাদের।' - নদেরচাঁদের ভয়ের স্বরূপ আলোচনা করো। 

উত্তরঃ 'নদীর বিদ্রোহ' গল্পে আমরা দেখি, নদীবক্ষে নির্মিত যে ব্রিজের ধারকস্তম্ভের প্রান্তে বসে নদেরচাদ ভয়ংকরী নদী জলরাশির উন্মাদনা লক্ষ করছিল, তার মাত্র কয়েক হাত নীচেই ছিল বিপুল বিস্ফারিত জলরাশি। এরপর প্রবল বৃষ্টি নামলে নদীর জল ও বৃষ্টিপাতের শব্দ মিলেমিশে যে চাপা গর্জন সৃষ্টি করে, তা নদেরচাদকে আতঙ্কে অবশ করে তোলে।

    নদেরচাঁদ এক অদ্ভূত অবসন্নতা আর বিবশতায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তার মন জানত, সেখান থেকে উঠে চলে যাওয়াই যথাযথ সিদ্ধান্ত। কিন্তু তার শরীর যেন কিছুতেই সায় দিচ্ছিল না। তার এই আতঙ্কের উৎস ছিল সংবেদনশীল মন, সে বুঝে গিয়েছিল নদীর এই ভয়াবহতার কারণ হল, মানবসভ্যতার বিরুদ্ধে প্রকৃতির যুদ্ধঘোষণা। মানুষ যুগ যুগ ধরে প্রকৃতিকে বশ মানাতে গিয়ে এভাবেই নিজের বিপদ ডেকে এনেছে। প্রকৃতিপ্রেমিক নদেরচাঁদ নদীর এই বিদ্রোহ অনুভব করেছিল। সে বুঝেছিল, এই ক্ষিপ্ত নদী প্রতিশোধ নিতে বাঁধ ও ব্রিজ ভেঙে নিজের পথ পরিষ্কার করে নেবে। আর সেই বিক্ষুব্ধ নদীর সামনে মানবসভ্যতার একমাত্র প্রতিনিধিরূপে নদেরচাঁদ সন্ত্রস্ত আর আতঙ্কিত বোধ করে।

প্রশ্নঃ 'ত্রিশ বছর বয়সে নদীর জন্য নদেরচাঁদের এত বেশি মায়া একটু অস্বাভাবিক।' – মায়াকে 'অস্বাভাবিক' বলা হয়েছে কেন? এই অস্বাভাবিকত্বের পিছনে নদেরচাঁদ কী কৈফিয়ত পেশ করত।

উত্তরঃ 'নদীর বিদ্রোহ' গল্পের নায়ক নদেরচাদের নদীর প্রতি অতিরিক্ত মায়াকে 'অস্বাভাবিক' উন্মাদনা ছিল। একটা দিনও সে নদী অদর্শনে থাকতে পারত না। টানা পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টির জন্য নদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ না হওয়ায় সে প্রায় পাগল বলার কারণ হয়ে যায়। ত্রিশ বছর বয়সি নদেরচাঁদের এই আচরণ সাধারণ মানুষের কাছে ছেলেমানুষি বলে মনে হত। তা ছাড়া তার মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী ও প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির এমন আচরণ মোটেই স্বাভাবিক নয় বলেই, একথা বলা হয়েছে।

     নদীর প্রতি নদেরচাদের আকর্ষণ ও উন্মত্ততা যে অস্বাভাবিক তা নদেরচাঁদ নিজেও জানত। নিজের এই অস্বাভাবিকতা নিয়ে তার কোনো দুর্ভাবনা ছিল না, বরং সে তা নিয়ে আনন্দই অস্বাভাবিকত্বের উপভোগ করত। আর এই অস্বাভাবিক আচরণের কৈফিয়ত দেওয়ার তাগিদ সে নিজে থেকেই অনুভব করেছিল। কৈফিয়ত হিসেবে সে নিজের নদীর ধারে ও জন্মানো ও বেড়ে ওঠার কথা জানিয়েছে। নদীর সঙ্গে তার আন্তরিকতার কথাও সে বলেছে যে নদীটিকে ঘিরে সে বড়ো হয়েছে সেটি শীর্ণকায় হলেও নদেরচাঁদ অসুস্থ আত্মীয়ার মতো তাকে ভালোবেসেছে এবং মৃত্যুপথযাত্রী আত্মীয়ার জন্য কষ্ট পাওয়ার মতো অনাবৃষ্টিতে প্রায় শুকিয়ে যাওয়া নদীটিকে দেখে ব্যথিত হয়েছে। পরবর্তীকালে কর্মক্ষেত্রের পাশে নদীর উপস্থিতি তাকে আনন্দিত করেছিল। 

প্রশ্নঃ 'একটা বেদনাদায়ক চেতনা কিছুক্ষণের জন্য নদেরচাদকে দিশেহারা করিয়া রাখিল, তারপর সে অতিকষ্টে উঠিয়া দাঁড়াইল।' - নদেরচাদ দিশেহারা হয়ে পড়েছিল কেন? তার উঠে দাঁড়াতে কষ্ট হওয়ার কারণ কী ছিল?

উত্তরঃ পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টির পর নদীর রূপ দেখে নদেরচাঁদ প্রথমে আমোদিত হলেও, অল্পক্ষণ পরেই তার মন থেকে ছেলেমানুষি উধাও হয়ে গিয়েছিল। আবার বৃষ্টি শুরু হওয়ায় স্রোতপূর্ণ নদীর শব্দ ও বৃষ্টির আওয়াজ মিলেমিশে এমন একটা শব্দের সৃষ্টি করল, যা শুনে সে আতঙ্কিত ও আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। সেখান থেকে উঠে যাওয়ার ক্ষমতাটুকুও সে হারিয়ে ফেলল। প্রকৃতির রোষের কাছে মানুষ অসেরচাদের দিশেহারা যে কতটা অসহায় তার একটা ভীতিময় অনুভূতি হয়ে পড়ার কারণ নদেরচাদের চেতনা ও অবচেতন মনের মধ্যেকার ফারাক ঘুচিয়ে দিল। এমন সময় একটা ট্রেন চলে যাওয়ার আকস্মিক শব্দের মতন বেদনাদায়ক আঘাতে তার ঘোর ভাঙে। কিছুক্ষণের জন্য তার ভারাক্রান্ত মন তাকে দিশেহারা করে তোলে।

     মানুষ যখন আতঙ্কিত হয় তখন তার মধ্যে দু–ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। হয় সে অতিসক্রিয় হয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালায়, নয় সে স্থির ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে নদীর গর্জন এবং বৃষ্টির শব্দ তার মনে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছিল, তাতে সে হতভম্ব আর অবসন্ন হয়ে পড়েছিল। এইজন্য নদেরচাদ ব্রিজের ওপর থেকে উঠে যেতে চাইলেও তার শরীর মন তাতে সংগত করতে পারেনি। কিন্তু ট্রেন চলে যাওয়ার মতো কোনো একটি প্রচণ্ড শব্দে যখন তার সংবিৎ ফিরল, তখন সে অতিকষ্টে উঠে দাঁড়াল।

প্রশ্নঃ 'দুদিন ধরিয়া বাহিরের অবিশ্রান্ত বর্ষণের সঙ্গে সুর মিলাইয়া নদেরচাদ বউকে প্রাণপণে একখানা পাঁচপৃষ্ঠাব্যাপী বিরহ–বেদনাপূর্ণ চিঠি লিখিয়াছে,' – 'অবিশ্রান্ত বর্ষণের সঙ্গে সুর মিলাইয়া'–র অর্থ কী? চিঠির পরিণতি যা হয়েছিল, তার পিছনের কারণটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ যুগে যুগে বর্ষার আবহের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক স্বীকৃত। এই ব্যাকুলতার আভাস মেলে কালিদাস, রবীন্দ্রনাথ কিংবা বৈষুব 'অবিভ্রান্ত বর্ষণের সঙ্গে সুর মিলাইয়া পদকর্তাদের লেখা কাব্যের ছত্রে ছত্রে।' মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'নদীর বিদ্রোহ' গল্পের নায়ক নদের চাঁদ দীর্ঘদিন কর্মসূত্রে ঘরছাড়া হওয়ার কারণে স্ত্রী বিচ্ছিন্ন। তাই পাঁচ দিন ধরে একটানা বৃষ্টি তার বিরহব্যথাকে আরও প্রবল করে তুলেছিল। বৃষ্টির সুরের কোমলতা মাখিয়ে সে স্ত্রীকে পাঁচ পৃষ্ঠার একটি চিঠি লিখেছিল। চিঠির পরিণতির পিছনে প্রকৃত কারণ বহু যত্নে ও আবেগে স্ত্রীকে লেখা চিঠি নদেরচাঁদ ছিঁড়ে ছিঁড়ে নদীর ফেনিল জলস্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছিল। এর কারণ এই নয় যে, সে চিঠিটি স্ত্রীর হাতে পৌঁছে দিতে উৎসাহী ছিল না। বরং এর কারণটি ছিল অত্যন্ত শিশুসুলভ। সে ভয়ংকরী নদীর উত্তাল জলরাশির সঙ্গে খেলায় মেতেছিল। খেলার অন্য কোনো সরঞ্জাম না–পেয়ে নদেরচাঁদ পকেট থেকে চিঠিটি বের করে ছিঁড়ে নদীর জলে ভাসাতে থাকে। নদী কীভাবে দ্রুততার সঙ্গে চিঠিগুলি ভাসিয়ে নিয়ে যায়, তাই দেখাই তার উদ্দেশ্য ছিল। এসবের পিছনেই ছিল নদেরচাঁদের নদী সম্পর্কে অস্বাভাবিক পাগলামি। মানুষের কাছে তার প্রিয়জন সবচেয়ে আপন। কিন্তু নদেরচাঁদের আচরণ বুঝিয়ে দেয় যে, তার কাছে নদীর চেয়ে বেশি আপনজন আর কেউ নেই। এখানে নদী আসলে তার প্রেয়সীতে রূপান্তরিত হয়।

প্রশ্নঃ নদেরচাদের চরিত্রটি আলোচনা করো।

উত্তরঃ 'নদীর বিদ্রোহ' গল্পটি নদীপ্রেমিক নদেরচাদের তীব্র আবেগ ও আকুলতাকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে। গল্পের নিয়ন্ত্রক বা কেন্দ্রীয় চরিত্র যে সে এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। 

   নদেরচাঁদের চরিত্রের যে–দিকটি সবচেয়ে প্রকট, তা হল নদীর প্রতি তার তীব্র আকর্ষণ। নদীর ধারে বড়ো হয়ে ওঠার দরুন নদীর প্রতি তার টান থাকা স্বাভাবিক। তার গ্রামের ক্ষীণকায়া মীর প্রতি তীব্র নদীটিকে সে ভালোবাসত এক অসুস্থ আত্মীয়ার আকর্ষণ মতোই। এমনকী তার কর্মস্থলের কাছের নদীটিকে প্রতিদিন না–দেখেও সে থাকতে পারত না। নদীর প্রতি তার এই টান যে অস্বাভাবিক, তা বুঝলেও এই পাগলামিটা সে উপভোগ করত। আকোপ্রবণতা অস্থিরতা নদেরচাদের নদীর প্রতি ভালোবাসা, বর্ষায় স্ত্রীর বিরহে কাতর হয়ে ওঠা এগুলি আবেগপ্রবণতার লক্ষণ। আবার বিরহে কাতর হয়ে স্ত্রীকে লেখা চিঠি খেলার ছলে নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দেয় নদেরচাঁদ। এ থেকে বোঝা যায়, তার মধ্যে কাজ করে চলে এক অস্থিরতা। তাই অবিশ্রান্ত বৃষ্টিতে পাঁচদিন নদীর কাছে যেতে না পেরে ছটফট করে সে। নদীই যেন নিঃসঙ্গ নদেরচাঁদের প্রেয়সীতে রূপান্তরিত হয়। 

    সংবেদনশীলতা নদেরচাঁদ নদীর ভাষা বুঝত। নদীর ভয়ংকরী রূপ দেখে সে বুঝতে পেরেছিল, সভ্যতার নামে প্রকৃতিকে পদানত করলে শেষপর্যন্ত তা ধ্বংসই ডেকে আনবে। তার এই উপলব্ধি প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা ও সংবেদনশীলতারই পরিচয়। তাই সে যে ব্রিজ নিয়ে গর্ব করেছিল, তার প্রয়োজনীয়তা বিষয়েই সংশয় প্রকাশ করে। নদেরচাঁদ যতই আবেগপ্রবণ হোক, নদীর প্রতি তার যতই টান থাকুক, তা কিন্তু কখনোই তার কর্তব্য পালনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। স্টেশনমাস্টার হিসেবে সে তার দায়িত্ববোধ দায়িত্ব যথাযথভাবেই পালন করে। এইসব মিলিয়ে নদেরচাঁদ একটি ব্যতিক্রমী চরিত্র হিসেবেই উপস্থাপিত হয়েছে। গল্পের শেষে তার নিয়তি–নির্দিষ্ট মৃত্যু যেন মানুষের নিজের তৈরি যন্ত্রসভ্যতার হাতে অসহায় ও করুণ পরিণতির এক আশ্চর্য ভাষ্য হয়ে ওঠে।

প্রশ্নঃ 'এই ভীষণ মধুর শব্দ শুনিতে শুনিতে সর্বাঙ্গ অবশ, অবসন্ন হইয়া আসিতেছে। - উক্ত শব্দকে 'ভীষণ মথুর' এই বৈপরীত্যসূচক বিশেষণে বিশেষিত করার কারণ কী? এই শব্দ শোনার সঙ্গে সর্বাঙ্গ অবশ, অবসন্ন হয়ে আসার সম্পর্ক কী?

উত্তরঃ পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টির পর অভ্যাসবশত নদেরচাঁদ নদীর রূপ দেখতে যায়। ধারকস্তম্ভের শেষ প্রান্তে বসে নদীর রূপ দেখে সে বেশ 'ভীষ মধুর' – বৈপরীত্যসূচক ডিও বিশোষণ, আমোদিত বোধ করে। আবার আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে। সেই বৃষ্টির শব্দ আর নদীর জলের গর্জন মিলেমিশে তাকে বিবশ করে। নদীর উন্মত্ততা ও বৃষ্টির প্রাবল্য তার মনে আতঙ্কের সঞ্চার করে। ভয়ংকর জলতরঙ্গের চাপা গর্জন আর বৃষ্টির শব্দ মিলেমিশে যে–ঐক্যতান সৃষ্টি করেছিল, তা শ্রুতিমধুর হলেও ভয়ংকর এই শব্দের অভিঘাত নদেরচাঁদকে বিবশ ও আতঙ্কিত করে তুলেছিল। শব্দের এই দ্বিমুখী ক্রিয়ার জন্যই 'ভীষণ মধুর' বিশেষণটি ব্যবহৃত হয়েছে। 

      ভয় মানুষকে অতিসক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় করে দেয়। সক্রিয়তা তাকে বিপদস্থল থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় আর নিষ্ক্রিয়তা তাকে সেখানেই আতঙ্কের গভীরে নিমজ্জিত করে। নদীর ধ্বংসাত্মক ভয়াবহতা, তার রুষ্ট গর্জন ও বৃষ্টির প্রাবল্য সব কিছু মিলিয়ে যে–ভয় নদেরচাঁদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছিল, তা তাকে বিবশ ও অবসন্ন করে তুলেছিল। সে পরিস্থিতির প্রতিকূলতা উপলব্ধি করেও তাই সেখান থেকে উঠে যেতে পারেনি। কেন না তার মানসিক ও শারীরিক জোর সে মুহূর্তে ছিল না।


Madhyamik Bengali Suggestion 2024

     Madhyamik Bengali suggestion 2024 pdf. Madhyamik Bengali suggestion 2024 pdf download. Madhyamik Bengali question 2024. Madhyamik Bengali. Madhyamik Bengali meaning. Madhyamik Bengali syllabus 2024. Madhyamik Bengali syllabus 2024. Madhyamik Bengali syllabus. Madhyamik Bengali question 2024.


নদীর বিদ্রোহ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন প্রশ্ন ও উত্তর

     নদীর বিদ্রোহ গল্পের বিষয়বস্তু. নদীর বিদ্রোহ নামকরণের সার্থকতা. নদীর বিদ্রোহের কারণ কি. 


Madhyamik Suggestion 2024 pdf Free download

     মাধ্যমিক সাজেশন 2024 pdf. উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন 2024. মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন 2024 PDF. বাংলা ব্যাকরণ সাজেশন. উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন 2024. মাধ্যমিক বাংলা কারক. মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান সাজেশন 2024. পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক  বাংলা পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্ন উত্তর ও শেষ মুহূর্তের সাজেশন ডাউনলোড. মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য সমস্ত রকম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। মাধ্যমিক সাজেশন 2024 pdf. মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন 2024 pdf. মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন 2024 mcq. মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন 2024. মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্ন উত্তর 2024. 2024 এর মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্ন বাংলা.


নদীর বিদ্রোহ গল্পের প্রশ্ন উত্তর pdf

     নদীর বিদ্রোহ গল্পের বিষয়বস্তু. নদীর বিদ্রোহ বড় প্রশ্ন উত্তর. নদীর বিদ্রোহ নামকরণের সার্থকতা. নদীর বিদ্রোহের কারণ কি. নদীর বিদ্রোহ pdf. নদীর বিদ্রোহ উৎস. নদীর বিদ্রোহ গল্পের বিষয়বস্তু. নদীর বিদ্রোহের কারণ কি. নদীর বিদ্রোহ ছবি. নদীর বিদ্রোহ প্রশ্ন উত্তর. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে প্রশ্ন উত্তর. নদের চাঁদের পরিচয় দাও.


মাধ্যমিক সাজেশন 2024 pdf

     Madhyamik suggestion 2024 pdf. Madhyamik suggestion 2024 pdf download. Madhyamik suggestion 2024 pdf free download. ক্লাস 10 বাংলা প্রশ্ন উত্তর 2024. ক্লাস টেনের বাংলা সাজেশন. মাধ্যমিক সাজেশন 2024 pdf. মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন 2024 pdf. মাধ্যমিক পরীক্ষার সাজেশন 2024 বাংলা. উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন 2024. মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন 2024. মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন 2024 PDF. বাংলা ব্যাকরণ সাজেশন.


নদীর বিদ্রোহ গল্পের প্রশ্ন উত্তর 2024

     নদীর বিদ্রোহ বড় প্রশ্ন উত্তর. নদীর বিদ্রোহ উৎস. নদীর বিদ্রোহ গল্পের বিষয়বস্তু. নদীর বিদ্রোহ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়. নদীর বিদ্রোহের কারণ কি. নদীর বিদ্রোহ নামকরণের সার্থকতা. নদীর বিদ্রোহ ছবি. নদীর বিদ্রোহ গল্পের প্রশ্ন উত্তর. নদীর বিদ্রোহ গল্পের উৎস. নদীর বিদ্রোহ pdf. নদের চাঁদের পরিচয় দাও. নদীর বিদ্রোহের কারণ কি. নদীর বিদ্রোহ ছবি. নদীর বিদ্রোহ নামকরণের সার্থকতা. সে কাঁদিয়া গিয়াছে কোন প্রবন্ধের অংশ সে কেঁদেছিল কেন.


WBBSE Madhyamik bengali suggestion 2024

     WBBSE Madhyamik Bengali suggestion 2024 pdf download. Madhyamik Question Paper  Bengali. WBBSE Madhyamik Bengali suggestion 2024 pdf download in Bengali. WBBSE Madhyamik Bengali suggestion 2024 download pdf. West Bengal Madhyamik  Bengali Suggestion 2024 Download. WBBSE Madhyamik Bengali short question suggestion 2024. Madhyamik Bengali Suggestion 2024 download. WB Madhyamik 2024 Bengali suggestion and important questions. Madhyamik Suggestion 2024 pdf.


নদীর বিদ্রোহ বড় প্রশ্ন উত্তর

     নদীর বিদ্রোহ গল্পের সারাংশ. নদীর বিদ্রোহ বড় প্রশ্ন উত্তর. নদীর বিদ্রোহ উৎস. নদীর বিদ্রোহ pdf. নদীর বিদ্রোহ নামকরণের সার্থকতা. নদের চাঁদের পরিচয় দাও. নদীর বিদ্রোহের কারণ কি. নদীর বিদ্রোহ ছবি.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

LightBlog

AdsG

close