পরিবেশ ও ইতিহাস
সপ্তম শ্রেণি
পূর্ণমান - ৫০
১. ক স্তম্ভের সাথে খ স্তম্ভ মেলাও :
উত্তরঃ
২. বেমানান শব্দটির নিচে দাগ দাও :
২.১ বিজয়ালয়, দন্তিদুর্গ, প্রথম রাজরাজ, প্রথম রাজেন্দ্র
উত্তরঃ বিজয়ালয়, দন্তিদুর্গ, প্রথম রাজরাজ, প্রথম রাজেন্দ্র
২.২ বরেন্দ্র, হরিকেল, কনৌজ, গৌড়
উত্তরঃ বরেন্দ্র, হরিকেল, কনৌজ, গৌড়
২.৩ হলায়ুধ, জয়দেব, গোবর্ধন, উমাপতিধর
উত্তরঃ হলায়ুধ, জয়দেব, গোবর্ধন, উমাপতিধর
২.৪ প্রতাপাদিত্য, কেদার রায়, ইশা খান, বৈরম খান।
উত্তরঃ বৈরম খান
৩. শূন্যস্থান পূরণ করো :
৩.১ বন্দেগান-ই-চেহেলগানের সদস্য ছিলেন সুলতান ___________।
উত্তর : গিয়াসউদ্দিন বলবন
৩.২ বাংলার প্রথম স্বাধীন সুলতান ছিলেন __________।
উত্তর : শামসউদ্দিন ইলিয়াস শাহ
৩.৩ পর্তুগিজ পর্যটক __________ বিজয়নগর পরিভ্রমণ করেন।
উত্তর :
৩.৪ বিজয়নগর পরাজিত হয়েছিল __________ যুদ্ধে।
উত্তর : পেজ
৪. সত্য বা মিথ্যা নির্ণয় করো :
৪.১ ‘দাগ’ ও ‘হুলিয়া’ ব্যবস্থা চালু রাখেন শেরশাহ।
উত্তর : সত্য
৪.২ ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে হলদিঘাটির যুদ্ধে আকবর রানা প্রতাপকে পরাজিত করেছিলেন।
উত্তর : সত্য
৪.৩ মনসবদারি ও জায়গিরদারি ব্যবস্থা বংশানুক্রমিক ছিল।
উত্তর : মিথ্যা
৪.৪ রাজিয়া তার মুদ্রায় নিজেকে 'সুলতান' বলে দাবি করেছেন।
উত্তরঃ সত্য
৫. দুই-তিনটি বাক্যে উত্তর দাও :
৫.১ ‘দীন-ই ইলাহি’ কী?
উত্তর - খ্রিস্টীয় ১৫৭০ - এর দশকে মুঘল সম্রাট আকবর ফতেপুর, সিকরিতে নানান ধর্মের গুরুদের ডেকে ধর্মীয় নানা বিষয়ে আলোচনা করতেন। এই সব আলোচনার ভিত্তিতে তিনি ‘ দীন – ই ইলাহি' নামে এক নতুন - মতাদর্শ চালু করেন ফারসি শব্দ ‘দীন – ই - ইলাহি '-র অর্থ হলো ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস, আবুল ফজল ও বদাউনি, এই ধর্মমতকে তৌহিদ – ই – ইলাহি বা ‘স্বগীয় একেশ্বরবাদ' বলে উল্লেখ করেছেন।
আকবর বিভিন্ন ধর্ম থেকে নিজের পছন্দ মতো কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য বেছে নিয়ে তার ওপর ভিত্তি করে দীন-ই ইলাহি তৈবি করেন। তিনি নিজের সভাসদদের মধ্যে এর প্রচলন করেছিলেন । বেশ কিছু অনুষ্ঠান ও রীতিনীতির মধ্যে দিয়ে তারা বাদশাহের প্রতি সম্পূর্ণ অনুগত থাকার শপথ নিত। এই হলো ‘দীন-ই-ইলাহি'।
৫.২ 'মনসব' কী?
উত্তরঃ মনসব একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ উচু স্থান, যেখানে কিছু রাখা যায়। এ শব্দটি মোঘল প্রশাসনে পদ বা সম্মান বা অফিস অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এ পদের অধিকারীকে মনসবদার বলা হয়। মোঘল সম্রাট আকবর মনসবদারকে সমস্ত সামরিক দায়িত্ব পালনের জন্য নিযুক্ত করেন। যুদ্ধকালে এবং রাষ্ট্রের প্রয়োজনে প্রত্যেক মনসবদার তার পদমর্যাদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যক সৈন্য, অশ্ব, হস্তী ইত্যাদি দ্বারা সামরিক সাহায্য প্রদানে বাধ্য থাকতেন।
৬. চার-পাঁচটি বাক্যে উত্তর দাও :
৬.১ পাল - সেন যুগে কেমন ভাবে কর আদায় করা হত?
উত্তরঃ পাল ও সেনযুগের রাজারা বিভিন্ন ধরনের কর সংগ্রহ করতেন। সেগুলি নীচে আলোচনা করা হলো -
(১) কৃষি করঃ রাজারা উৎপন্ন ফসলের ছয় ভাগের এক ভাগ কৃষকদের কাছ থেকে কর নিতেন। তাঁরা নিজেদের ভোগের জন্য ফুল, ফল, কাঠ ও প্রজাদের কাছ থেকে কর হিসাবে আদায় করতো।
(২) বাণিজ্য করঃ বণিকরা তাদের ব্যাবসাবাণিজ্য করার জন্য রাজাকে কর দিত।
(৩) অন্যান্য করঃ এছাড়াও প্রজারা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাজাকে কর দিত। সমগ্র গ্রামের উপরেও কর দিতে হতো গ্রামবাসীদের। হাট ও কেয়াঘাটের উপরে কর চাপানো হতো।
৬.২ সেন রাজারা কি সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন?
উত্তরঃ বাংলার সেন বংশের রাজা লক্ষ্মণ সেন ছিলেন সাহিত্যানুরাগী। অনেক কবি ও সাহিত্যিক তাঁর রাজসভা অলংকৃত করতেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন -
(১) কবি জয়দেবঃ লক্ষণ সেনের সভাপতি জয়দেব ছিলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক। তাঁর রচিত কাব্যের নাম হলো "গীতগোবিন্দ"। এই কাব্যের বিষয় ছিল রাধাকৃষ্ণের প্রেমের কাহিনি।
(২) ধোয়ীঃ তাঁর রাজসভার আর এক কবি ধোয়ী লিখেছিলেন 'পবনদূত" কাব্য।
(৩) পঞ্চরত্নঃ জয়দেব ও ধোয়ীসহ আরও তিনজন গোবর্ধন, উনাপতি ধর এবং শরণ লক্ষণ সেনের সভা অলংকৃত করেছিলেন। এই পাঁচজন কবিকে একত্রে "পঞ্চরত্ন" বলা হয়।
(৪) এছাড়াও লক্ষণ সেনের মন্ত্রী হলায়ুধ বৈদিক নিয়ম বিষয়ে "ব্রাহ্মণ সর্বস্ব" নামে একটি বই লিখেছিলেন। লক্ষণ সেন নিজেও পিতার অসমাপ্ত "অদ্ভুতসাগর" বইটি সমাপ্ত করেন।
৬.৩ ইক্তা ব্যবস্থা কি?
উত্তর : দিল্লির সুলতানরা যেসব রাজ্য জয় করতে সেগুলিকে এক একটি প্রদেশে ধরে নেওয়া হতো। এই পুরো দেশ গুলিকে বলা হতো ইকতা। ইকতা যাদের দেওয়া হত তাদের বলা হতো ইকতাদার। ইকতাদাররা নিজে নিজে এলাকায় সরকারের প্রাপ্ত রাজস্ব আদায় ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করতেন। ইকতাদাররা রাজস্বের একাংশ দিয়ে একদল সেনাবাহিনী পোষণ করতেন এবং জীবনের প্রয়োজনে তা সরবরাহ করতেন।
৬.৪ খলজি বিপ্লব বলতে কী বোঝো?
উত্তর : ১২৯০ খ্রিস্টাব্দে আলাউদ্দিন খলজী বলবনের বংশধরদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়ে সুলতান হন। এই ঘটনাকে 'খলজি বিপ্লব' বলা হয়। এর ফলে তুর্কি অভিজাতদের ক্ষমতা চলে যায়। তার বদলে খলজি তুর্কি হিন্দুস্তানিদের ক্ষমতা বেড়ে গিয়েছিল।
৬.৫ ‘দাক্ষিণাত্য ক্ষত’ বলতে কী বোঝো?
উত্তরঃ খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতকে ঔরঙ্গজেবের সময়ে মারাঠাদের শক্তি অনেক বেড়ে গিয়েছিল।ঔরঙ্গজেব ভেবেছিলেন যে দক্ষিণী রাজ্যগুলিকে জয় করতে পারলে সেখানে থেকে অনেক বেশি রাজস্ব আদায় করা যাবে। তার সঙ্গে মারাঠাদের দমন করাও সহজ হবে। ঔরঙ্গজেবের আমলে মুঘলরা বিজাপুর ও গোলকোণ্ডা দখল করেছিল। মুঘল সাম্রাজ্যের আয়তন এত বড়ো আগে কখনো হয়নি। কিন্তু বাদশাহ যা ভেবেছিলেন তা হলো না। তার বদলে বহু বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মুঘলদের অনেক আর্থিক ক্ষতি হলো। দাক্ষিণাত্য যুদ্ধের এই ক্ষত আর সারলো না। মারাঠা নেতা শিবাজীকেও স্বাধীন রাজা বলে মেনে নিতে হলো। ঔরঙ্গন্ধোন পেষে দা পঁচিশ বছর ধবে যুদ্ধ করে ঔরঙ্গজেব শেষে দাক্ষিণাত্যেই মারা গেলেন।
৭. আট-দশটি বাক্যে উত্তর দাও :
৭.১ বখতিয়ার খলজির বাংলা আক্রমণের পর বাংলাতে কি কি পরিবর্তন ঘটেছিল?
উত্তরঃ বখতিয়ার খলজি যার সম্পূর্ণ নাম হল ইখতিয়ার উদ্দিন মহম্মদ বখতিয়ার খলজি। ১২০৮ সালে মাত্র ১৭ জন অশ্ব আরোহী সেনা নিয়ে নদীয়ার রাজা লক্ষণ সেনকে পরাজিত করেন। নদীয়া জয়লাভের পর তিনি সেখানে মুসলিম শাসন সাম্রাজ্য স্থাপন করেন।
বখতিয়ার খলজি তিনদিন যাবৎ নদীয়া লুটপাট করেন। লক্ষণ সেনের বিপুল ধন-সম্পদ দখল করেন। এমনটি ভৃত্যবর্গ ও হস্তী তার হস্তগত হয়। প্রায় বিনা যুদ্ধেই বখতিয়ার খলজি বাংলার একাংশ অর্থাৎ নদীয়া দখল করেন। এরপর বখতিয়ার খলজি নদীয়া ছেড়ে লখনৌতি দখল করেন। সমকালীন ঐতিহাসিকরা নিজের রাজধানী স্থাপন করেন। সমকালীন ঐতিহাসিকরা এই রাজ্যের নাম লখনৌতি উল্লেখ করেন।
নব প্রতিষ্ঠিত রাজ্যে তিনি সুশাসনে ব্যবস্থা করেন। তার সাথে অত্তিয়াপের সময় ও পরবর্তী কালে যে সমস্ত তুর্কী মুসলমানরা বসবাসের জন্য সেখানে আসেন তাদের জন্য মসজিদ, মাদ্রাজা ও খানকাহ নির্মান করেন। তিনি জানতেন শুধুমাত্র সামরিক শক্তির উপর একটি রাজ্যে প্রতিরক্ষা নির্ভর করেন। পরিপূর্ণ শান্তির জন্য চাই অভ্যন্তরীন শৃঙ্খলা। আর তাই তার প্রতিষ্টিত মুসলিম রাজ্যের স্থায়ীত্বে সুষ্ট মুসলিম সমাজ গঠন করার প্রয়াস করেন। সেই জন্য তিনি কয়েকটি ভাগে ভাগ করে সেনাপতিদের তার রাজ্য শাসন ভার দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মর্দান খলজি বরসৌলে হুসাম উদ্দিন ইতজ খলজি গঙ্গাতবীর। বখতিয়ার খলজি বৌদ্ধ ও হিন্দুদের কাছে শুধু মাত্র একজন খুনী লুটেরা ছিল কিন্তু মুসলমানদের কাছে তিনি ছিলেন একজন বীর যোদ্ধা। তবে একথা সত্য যে ইতিহাসের একটি অংশের শেষ তার হাত ধরে শুরু হয়েছিল আবার অন্য একটি অংশের সূচনা ও হাত ধরে হয়েছিল। তার আমলে ব্যাপক পরিমান মানুষ মুসলিম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিল। বাংলাদেশের খ্যাতনামা কবি আল মাহমুত তার 'বখতিয়ারের ঘোড়া' কাব্যগ্রন্থে বখতিয়ারের প্রসংশা করেছেন। একজন বীর চরিত্র হিসাবে। ১২০৬ সালে মানসিক ও শারীরিক ভাবে বিপর্যত হয়ে তিনি মারাযান।
৭.২ কৃষ্ণদেব রায় কে কেন বিজয় নগরের শ্রেষ্ঠ শাসক বলা হয়?
উত্তর : তুলুভ বংশের বিজয়নগরের বিখ্যাত শাসক ছিলেন কৃষ্ণদেব রায়। তাপের শ্রেষ্ঠ শাসক বলার কারণ গুলি হল-
(১) তাঁর রাজত্বকালে বিজয়নগরের গৌরব সবচেয়ে বেড়েছিল এবং রাজ্যের সীমানাও বহুদূর বিস্তৃত হয়েছিল।
(২) তিনি অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়ে ছিলেন।
(৩) এছাড়াও শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত এবং দর্শন শাস্ত্রের উন্নতি তাঁর সময়ে লক্ষ্য করা যায়। কৃষ্ণদেব রায় নিজেও একজন সাহিত্যিক ছিলেন। তেলেগু ভাষায় লেখার মধ্যে তিনি রাজার কর্তব্যের কথা লিখেছেন।
৭.৩ শেরশাহের যে-কোনো দুটি প্রশাসনিক সংস্কার সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।
উত্তরঃ ভূমিকা - সম্রাট শের শাহ ছিলেন বিজেতা হিসেবে শ্রেষ্ঠ, আর শাসক হিসেবে শ্রেষ্ঠতম। দিল্লির শাসক হিসেবে তিনি মাত্র ৫ বছর (১৫৪০-১৫৪৫ খ্রি.) রাজত্ব করেছিলেন। কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যেই শাসনব্যবস্থার সর্বত্র তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন। তাঁর শাসনব্যবস্থার মধ্যে অনেক মানবিক চিন্তার পরিচয় পাওয়া যায়।
ভূমিরাজস্ব : ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার ক্ষেত্রে শেরশাহ অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি পাট্টা’ ও ‘কবুলিয়ত' ব্যবস্থা চালু করেন। শেরশাহ কৃষককে কৃষকের নাম, জমিতে কৃষকের অধিকার এবং তাকে কত রাজস্ব দিতে হবে তা লিখে যে দলিল দিতেন, তাকে পাট্টা বলা হত। পাট্টাপ্রাপ্ত কৃষকরা রাজস্ব দেওয়ার কথা স্বীকার বা কবুল করে সরকারকে যে দলিল সই করে দিত, তাকে কবুলিয়ত বলা হত।
যোগাযোগ ব্যবস্থা : যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সুদীর্ঘ ও প্রশস্ত রাজপথ নির্মাণ শেরশাহের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তিনি পূর্ববঙ্গের সোনারগাঁ থেকে পেশোয়ার পর্যন্ত ১৪০০ মাইল দীর্ঘ পথ নির্মাণ করেন, যা সড়ক-ই আজমস' বা গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড বা জি টি রোড নামে পরিচিত। তিনি আগ্রা থেকে বুরহানপুর ও আগ্রা থেকে যোধপুর পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ করেন। তিনি পথিক ও বণিকদের সুবিধার জন্য রাস্তার ধারে ধারে অনেক সরাইখানা নির্মাণ করেছিলেন। তিনিই প্রথম ঘোড়ার পিঠে ডাক আদানপ্রদানের ব্যবস্থা করেন।
মধ্যযুগে মাত্র ৫ বছর রাজত্ব করে শের শাহ উন্নত শাসনকাঠামো রচনা করেন। তাই তিনি আজও ভারত ইতিহাসে স্মরনীয় হয়ে আছেন। তিনি সেনাবাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে দাগ ও হুলিয়া ব্যবস্থা চালু রাখেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ