মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক
দ্বাদশ শ্রেণি
বিষয় - ভূগোল
অধ্যায় : ভূমিরূপ প্রক্রিয়া
নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
১. অবরোহণ, আরোহণ ও পর্যায়নের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক নিরূপণ করো।
উত্তরঃ আবরোহণ, আরোহণ ও পর্যায়নের মধ্যে আন্তঃসম্পর্কগুলি হল -
প্রথমত, অবরোহণ ও আরোহণ প্রক্রিদুটির সম্মিলিত ক্ষয় ও সঞ্চয় কাজের মিলিত ফলাফল হল পর্যায়ন প্রক্রিয়া। অবরোহন ও আরোহন প্রক্রিয়া সৃষ্টি হওয়া উঁচু নীচু ভূভাগকে অর্থাৎ উপরিভাগে অনিয়মিত রূপরেখাকে একটি সাধারণ তল বা ক্ষয়ের শেষ সীমাতে নিয়ে আসাকে পর্যায়ন বলা হয়।
দ্বিতীয়ত, তিনটি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেই প্রধান অংশগ্রহণকারী এজেন্ট হল নদী। এছাড়া অন্যান্য এজেন্টগুলি বায়ু, হিমবহ, সমুদ্রতরঙ্গ।
তৃতীয়ত, ভূগোলে পর্যায়ন বা ক্রমায়ন বলতে বোঝায় অবরোহন ও আরোহন যথাক্রমে ভূমিভাগের উন্থান ও অবনমন ঘটে। তাই আমরা বলতে পারি পর্যায়ন দুটি প্রক্রিয়ার সংঘটিত হয়। যথা অবরোহন বা ক্ষয় এবং আরোহন বা সঞ্চয়।
২. ভৌমজলের নিয়ন্ত্রকগুলির বিবরণ দাও।
উত্তরঃ বৃষ্টির জল ও তিষারগলা জল হল ভৌমজলের প্রধান উৎস, জলের অনুস্রাবনের মাত্রা কতকগুলি নিয়ন্ত্রকের ওপর নির্ভর করে, এগুলি হল - বৃষ্টিপাতের পরিমান ও স্থায়িত্ব, শিলা বা মৃত্তিকার সচ্ছিদ্রতা ও প্রবেশ্যতা, ভূমিরঢাল, প্রবেশ্য ও অপ্রবেশ্য শিলার উপস্থিতি, বাষ্পীভবন, ভূমি ব্যবহারের প্রকৃতি, উদ্ভিদের অবস্থান প্রভৃতি।
(১) বৃষ্টিপাতের পরিমান ও স্থায়িত্ব ঃ
বৃষ্টিপাতের পরিমান ও বন্টনের প্রকৃতির ওপর ভৌমজলের পরিমান বহুলাংশে নির্ভর করে। যে অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমান যিত বেশি ও যত দিন যাবৎ বৃষ্টিপাত ঘটে থাকে, সে অঞ্চলে ভৌমজলের পরিমান তত বেশি হয়। বৃষ্টিপাতের পরিমান ও স্থায়িত্ব বেশি হলে অনুস্রাবনের সঙ্গে বেশি হয় ও ভূগর্ভে জলের পরিমান বৃদ্ধি পায়। ঋতুভেদে ভৌমজলের পরিমান বেড়ে যায়, আবার শুষ্ক ঋতুতে এর পরিমান কমে যায়।
(২) শিলা বা মৃত্তিকার সচ্ছিদ্রতা ও প্রবেশ্যতা ঃ ছোটো বড়ো নানারকম বর্ষা দিয়ে শিলা বা মৃত্তিকা গঠিত। এই কনাগুলি পরস্পর সংঘবদ্ধ ভাবে বিন্যস্ত থাকলেও তাদের মধ্যে যে ফাঁক বা শূন্যস্থান থেকে যায় সেগুলিকে ছিদ্র বা রন্ধ্র বলে। একটি নির্দিষ্ট পরিমান শিলা বা মৃত্তিকার মোট আয়তনের সাপেক্ষে ওই শিলা বা মৃত্তিকাস্থিত রন্ধ্রের মোট আয়তনের শতকরা অনুপাতকে শিলা বা মৃত্তিকার সচ্ছিদ্রতা বলে। রন্ধ্রের মাধ্যমে জলের চলাচল ক্ষমতাকে শিলা বা মৃত্তিকার প্রবেশ্যতা বলে। চুনাপাথর, ডলোমাইট, বেলেপাথর ইত্যাদি প্রবেশ্য শিলায় ভৌজল বেশি পরিমাণে সঞ্চিত থাকে।
(৩) ভূমির ঢাল ঃ ভূমির ঢাল বেশি হলে জল দ্রুত গড়িয়ে যায়, ফলে ভূ-অভ্যন্তরে জল বিশেষ প্রবেশ করতে পারে না।
(৪) বাষ্পীভবন ঃ বেশি উষ্ণ অঞ্চলে বাষ্পীভবনের মাত্রা বেশি হওয়ায় ভৌমজলের পরিমান কম।
(৫) প্রবেশ্য ও অপ্রব্যেশ্য শিলার উপস্থিতি ঃ প্রবেশ্য শিলার নীচে অপ্রবেশ্য শিলা থাকলে জলের নিম্নগতি বাধাপ্রাপ্ত হয়, তখন ওই প্রবেশ্য শিলায় সঞ্চিত জল ভূ-জল বা ভৌমজলরূপে গণ্য হয়।
৩. চিত্রসহ ভৌমজলের বিভিন্ন স্তরগুলির বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ ভৌমজল বা উপপৃষ্ঠীয় জল অভিকর্ষজ টানে নীচের দিকে অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের নীচে প্রবেশ্য শিলাস্তরে অবস্থান করে। প্রবেশ্য শিলাস্তরের ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত সমগ্র অংশ জুড়ে অ্যাকুইফার বা ভৌমজলবাহী স্তর অবস্থিত।
ভৌমজলের স্তরবিন্যাস ঃ অ্যাকুইফারের মধ্যে ভৌমজল সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত স্তর সৃষ্টি করে। এজন্য সম্পৃক্ততার ভিত্তিতে জলবাহি স্তরকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় -
(১) ফ্রিয়োটিক জলস্তর ঃ ভূ-অভ্যন্তরে শিলা ও মৃত্তিকার যে অংশ জল দ্বারা সম্পৃক্ত অবস্থান থাকে তাকে ফ্রিয়েটিক জলস্তর বলে।
শ্রেণীবিভাগ ঃ
(ক) স্থায়ী সম্পৃক্ত স্তর ঃ যে জলপীঠের নীচে ক্রিয়েটিক জলস্তর সারা বছর সম্পৃক্ত থাকে, এমনকি শুষ্কতম ঋতুতেও জলপীঠের নীচে নামে না, নলকূপ ও কূপ খনন করলে সারা বছর জল পাওয়া যায় তাকে স্থায়ী সম্পৃক্ত স্তর বলে।
(খ) সামরিক সম্পৃক্ত স্তর ঃ বর্ষাকালে অনুস্রাবনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে ভৌমজলপীঠ উপরের দিকে উঠে আসে এবং শুষ্ক ঋতুতে কমে যায়। জলপীঠের এই ওঠা নামার মধ্যবর্তী অংশকে সামরিক সম্পৃক্ত স্তর বলা হয়।
(২) ভাদোস স্তর ঃ ভূ-অভ্যন্তরে শিলা ও মৃত্তিকার যে অংশটি জলের দ্বারা সম্পৃক্ত অবস্থান থাকে অর্থাৎ যাকে ফ্রিয়েটিক স্তর বলে তার উপরীতল থেকে ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত বিস্তৃত অসম্পৃক্ত ও বায়ুপূর্ণ স্তরকে ভাদোস স্তর বলে।
শ্রেণীবিভাগ ঃভাদোস স্তরকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায় -
(ক) মৃত্তিকা জল স্তর ঃ মৃত্তিকা জলস্তর ভাদোস স্তরের সবচেয়ে উপরের অংশ। গাছের শিকর মাটির গভীর যে পর্যন্ত প্রবেশ করে, সেই পর্যন্ত এই স্তর বিস্তৃত।
(খ) কৈশিক স্তর ঃ এটি সবচেয়ে নীচের স্তর। এই স্তরে অসংখ্য সরু সরু নলের মতো ছিদ্র থাকে। সম্পৃক্ত স্তরে জলের পরিমান বৃদ্ধি পেলে এই ছিদ্র পথে জল ওপরে উঠে আসে ও মৃত্তিকার প্রতিটি কণাকে সিক্ত করে।
(গ) মধ্যবর্তী ভাদোস স্তর ঃ সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন এই দুটি স্তরের মাঝখানে এই স্তরে জল ও মাটির মধ্যে বায়ু আবদ্ধ থাকে।
৪. মুক্ত জলবাহীস্তর ও আবদ্ধ জলবাহীস্তরের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করো।
উত্তরঃ মুক্ত জলবাহীস্তর ও আবদ্ধ জলবাহীস্তরের মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলি নীচে আলোচনা করা হল -
প্রথমত, মুক্ত জলবাহীস্তর কোনো অপ্রবেশ্য বা প্রায় অপ্রবেশ্য শিলা স্তরের উপরেই অবস্থান করে; আর আবদ্ধ জলবাহীস্তর দুটি অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের মধ্যে অবস্থান করে।
দ্বিতীয়ত, মুক্ত জলবাহীস্তর সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত স্তরে বিভক্ত; তবে আবদ্ধ জলবাহীস্তরের কেবলমাত্র একটি স্তর থাকে।
তৃতীয়ত, মুক্ত জলবাহীস্তর ডার্সির সুত্রানুযায়ী জলের একটি নির্দিষ্ট প্রবাহ থাকে, যদিও জল প্রবাহের গতিবেগ যতেষ্ট কম ; কিন্তু আবদ্ধ জলবাহীস্তরের জলের প্রবাহ বাঁধা পায়, ফলে জলের কোনো প্রবাহ নেই বললেই চলে।
চতুর্থত, মুক্ত জলবাহীস্তরে স্থায়ী সম্পৃক্ত স্তর পর্যন্ত কূপ বা নলকূপ বসানো হয় এবং প্রধানত যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জল সংগ্রহ করা হয় ; আর আর্টেজীয় কূপ খননের মাধ্যমে আবদ্ধ জলবাহীস্তরের জল সংগ্রহ করা হয়।
Other Model Activity Task : Model Activity Task 2022
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ