ষষ্ঠ শ্রেণি
ইতিহাস সাজেশন
চতুর্থ অধ্যায়
ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ধারা
দ্বিতীয় পর্যায় : আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০-৬০০ অব্দ
সূচনা :
মানুষের কল্পনায় নানা গল্প গাথা তৈরি হলেও সেই কল্পকথার ইতিহাস বর্তমান। এরূপ গল্পকথার পরিচয় পাওয়া যায় বেদে। যা থেকে সেই সময়কার ভাষা, সাহিত্য, ধর্ম ও অর্থনীতি সম্পর্কে জানা যায়।
৪.১ ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার পরিবার :
বিভিন্ন শব্দের মধ্যে অন্তর্নিহিত মিল রয়েছে। যেমন Roaming ও রাম শব্দের মধ্যে অর্থে ও উচ্চারণে মিল রয়েছে। রাম শব্দের অর্থ যিনি ঘোরেন, Roaming শব্দের অর্থ ঘোরা। আবার বাংলায় মা, সংস্কৃতে মাত: বা মাতৃ, ইংরাজিতে Mother শব্দের অর্থ মা। বেশ কিছু শব্দের মধ্যে এমন মিল রয়েছে, উচ্চারণ অর্থের মিল নানা কারণে হয়। মানুষের মতো ভাষারও পরিবার আছে। এই রকম একটি ভাষা পরিবার হল 'ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার পরিবার' এখন প্রশ্ন এরা এল কোথা থেকে? ঐতিহাসিকদের মতে, এরা মধ্য এশিয়ার তৃণভূমি অঞ্চলের যাযাবর ছিল। খাদ্যের অভাব দেখা দিলে তারা ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চল, ইরানে ও ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। এইরকম আর এক ভাষা পরিবার হল ইন্দো-ইরানীয় ভাষা, এই ভাষা ক্রমশ বদলে সংস্কৃতের মতো ভাষা তৈরি হয়েছে। কোনো কারণে ইন্দো-ইরানীয় ভাষা গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ হয়েছিল ফলে তাদের একটি শাখা উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত হয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে পৌঁছেছিল। এদের ইন্দো-আর্য ভাষা গোষ্ঠী বলা হয়। আর্য একটি ভাষার নাম জাতি গোষ্ঠীর নাম নয়। বৈদিক সাহিত্য থেকেই ইন্দো-আর্যদের বসতি ও জীবনযাত্রা জানা যায়। তাই এই সভ্যতার নাম বৈদিক সভ্যতা।
৪.২ বৈদিক সভ্যতা ও বৈদিক সাহিত্য :
বেদ শব্দটি এসেছে বিদ অর্থাৎ জ্ঞান শব্দ থেকে। ঋক, সাম, যজুঃ ও অথর্ব হলো সংহিতা। বৈদিক সাহিত্য দুটি ভাগে বিভক্ত - আদি বৈদিক সাহিত্য ও পরবর্তী বৈদিক সাহিত্য। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ৬০০ অব্দের মধ্যে বৈদিক সাহিত্য রচিত হয়েছিল। এরমধ্যে খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ১০০০ অব্দকে আদি বৈদিক যুগ বলা হয়।
বেদের ভূগোল :
বৈদিক সাহিত্যে ঋকবেদে ভূগোল বিষয়ে অনেক আলোচনা রয়েছে। ঋকবেদে হিমালয় ও কাশ্মীরের মূজবন্ত শৃঙ্গের উল্লেখ আছে। ঋকবেদের গুরুত্বপূর্ণ নদী হলো সিন্ধু। সরস্বতী নদীর খোঁজ এখন আর পাওয়া যায় না। ঋকবেদের মানুষ গঙ্গা ও যমুনা নদীর এলাকার সঙ্গে বিশেষ পরিচিত ছিলেন না। সিন্ধু ও তার পূর্ব দিকের উপনদীগুলি দিয়ে ঘেরা অঞ্চলটিকে বলা হতো সপ্তসিন্ধু অঞ্চল।
মহাকাব্য :
পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যের আরেকটি অংশ হলো মহাকাব্য। মহাকাব্য কথার মানে মহৎ বা মহান কাব্য বা কবিতা। কোন বিশেষ ঘটনা, দেবতা বা বড় রাজবংশের শাসনকে নিয়েই মহাকাব্য লেখা হতো। তার সঙ্গে থাকত ভূগোল, গ্রহ - নক্ষত্র ও গ্রাম - নগরে কথা। সমাজ জীবনের নানা দিক, রাজনীতি, যুদ্ধ, উৎসবের কোথাও মহাকাব্যের মধ্যে মিশে থাকতো। সাতটি বা অন্তত আটটি সর্গ বা ভাগে ভাগ করা হতো মহাকাব্য। কবির, মূল ঘটনার বা কাব্যের প্রধান চরিত্র নামে মহাকাব্যের নাম দেওয়া হতো। প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে সবথেকে জনপ্রিয় মহাকাব্য ছিল রামায়ণ ও মহাভারত।
বৈদিক যুগ ও প্রত্নতত্ত্ব :
তামা ও ব্রোঞ্জের ব্যবহার বৈদিক যুগের স্পষ্ট ছিল। শেষদিকে রচনায় লোহার ব্যবহার এর ধারণা পাওয়া যায়। ঘোড়া ছিল অন্যতম পালিত পশু। পরবর্তী বৈদিক যুগের ধূসর রংয়ের মাটির পাত্রে খোঁজ মেলে হরিয়ানার ভগবানপুরায়। এছাড়া হস্তিনাপুর, অত্রঞ্জিখেরা, অহিচ্ছত্র, নোহ-তে।
৪.৩ বৈদিক রাজনীতি :
বৈদিক সাহিত্যে রাজনীতি বর্ণনা তেমন কিছু পাওয়া যায় না। একেকটি জনসমষ্টিকে গ্রাম বলা হয়েছে। আলাদা কয়েকটি পরিবার নিয়ে সম্ভবত গ্রাম তৈরি হতো। ঋকবেদে রাজা শব্দের বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার রয়েছে। রাজাকে বিশপতি অর্থাৎ বিশ গোষ্ঠীর প্রধান বলা হয়েছে। কোথাও তিনি গোপতি নামে পরিচিত। বিদথ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পাওয়া যায় রাজা বিশোর সদস্যরা বিথের সদস্য ছিলেন। যুদ্ধে লুট করা সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা করতেন রাজা। রাজাকে ভূপতি অর্থাৎ জমির মালিক বলা হত। নৃ শব্দের অর্থ নর অর্থাৎ নরপতি মানুষের রক্ষা করি, রাজাকে নরপতিও বলা হত। ধীরে ধীরে রাজা গোষ্ঠীর নেতা হয়ে উঠলেন। রাজা যে এলাকাটি শাসন করতেন তাকে রাজ্য বলা হত। কুরু, পাঞ্চাল এর উদাহরণ। একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের দখল থাকলে তবেই রাজা হওয়া যেত। রাজা এবং প্রজা পরস্পরের গভীর সম্পর্ক রাজা-প্রজার সমস্যা শুনবেন তা মিটাবেন, তার বিনিময় প্রজারা রাজাকে মেনে চলবে এটাই ছিল নিয়ম। নানাভাবে রাজা হওয়া যেত, যুদ্ধ জিতে, উত্তরাধিকারসূত্রে, কখনো বা রাজাকে মনোনীত করা হতো। নানারকম যজ্ঞ অনুষ্ঠান হতো। যেমন অশ্বমেধ, রাজসূয়, রাজপেয় যজ্ঞ। যুদ্ধে যাবার আগে যুদ্ধে জেতার পরে রাজারা যোগ্য করে নিজের ক্ষমতা জাহির করতেন। যারা শাসন কাজে সাহায্য করতেন তাদের রত্নিন বলা হত। পরবর্তী বৈদিক যুগের সভা ও সমিতির গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সভাতে বয়স্ক ব্যক্তি থাকতেন এবং গোষ্ঠীর সবাই সমিতিতে যোগ দিতেন।
দশ রাজার যুদ্ধ :
যুদ্ধের কথা ঋগ্বেদে অনেক আছে। তার মধ্যে বিখ্যাত হলো দশ রাজার যুদ্ধ। ভারত গোষ্ঠীর রাজা ছিলেন সুদাস। তার সঙ্গে অন্যান্য দশটি গোষ্ঠীর রাজাদের যুদ্ধ হয়েছিল। সুদাস দশ রাজার জোটকে হারিয়ে দিয়েছিলেন। এর ফলে ভরত গোষ্ঠীর রাজনৈতিক ক্ষমতা বেড়েছিল। নদীর উপর একটি বাঁধ ভেঙে দিয়েছিলেন সুদাস। হয়তো নদীর জলের উপর অধিকার বজায় রাখার জন্যই এমনটা করা হয়েছিল। এই যুদ্ধে সঙ্গে পরবর্তীকালে মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের কিছুটা মিল রয়েছে।
পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যের এক জায়গায় রাজা হওয়ার একটা গল্প আছে। দেবতা ঔষধের মধ্যে যুদ্ধের প্রতিবারই দেবতারা অসুরদের কাছে হেরে যেতেন। চিন্তায় পড়ে দেবতারা জেতার উপায় ঠিক করার জন্য বসেন আলোচনায়। বুঝা যায় কোন রাজা না থাকার জন্যই দেবতাদের এই পরিণতি। এবার দেবতারা রাজা খুঁজতে লাগলেন। সবাই একমত হয়ে দেবতাদের মধ্যে সেরা ইন্দ্রকেই রাজা বানালেন। ইন্দ্র দেখতেও বেশ ভাল ছিলেন। তাই সবাই তাকেই রাজা মেনে নিলেন। এবার কিন্তু দেবতারা ইন্দ্রের নেতৃত্বে জয়ী হতে থাকলেন।
এই সভ্যতার পশুপালনই ছিল প্রধান জীবিকা। পশুই ছিল প্রধান সম্পদ। ঘোড়ার চাহিদাও ছিল খুব বেশী। কারিগরি শিল্প তখন কম ছিল। চামড়ার ব্যবহার হতো তখন। সোনার গহনার ব্যবহার ছিল। কামার, জেলে, রাখাল, চিকিৎসক প্রভৃতি পেশার কথা জানা যায়। এই যুগে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রচলন প্রায়ই ছিলই না। তবে বিনিময় প্রথা ছিল। নিষ্ক, শতমান মুদ্রার ব্যবহার ছিল। ঋকবেদে গোড়ার দিকে বর্ণাশ্রম বা চতুর্বর্ণ প্রথার ছিল বলে জানা যায় না। ঋকবেদে বর্ণ বলতে গায়ের রংকেই বোঝাত। তবে শেষের দিকে বর্ণপ্রথা জাঁকিয়ে বসেছে শুরু করে। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র ছিল চারটি বর্ণ। গোষ্ঠীর গবাদি পশু রাখার জায়গাকে গোত্র বলা হত। বৈদিক সমাজে অনেক নারী শিক্ষা লাভ করতেন। এখানে পাশা খেলা ছিল খুবই জনপ্রিয়। রথ ও মহারাষ্ট্রের ঘোড়দৌড়ের প্রতিযোগিতা হত। সেই সময়ে মানুষ মাংস খেত তাও জানা যায়।
বেদের যুগে কর দেওয়া নেওয়া :
গোষ্ঠী জীবনে প্রথম দিকে জমির ওপর নেতার কোন অধিকার ছিল না। কিন্তু নেতৃত্ব চালানোর জন্য তার ধন সম্পদের দরকার ছিল। তা সম্ভবত কৃষি থেকেই পেয়েছেন শাসকরা। ঋক বৈদিক যুগে শাসকরা কর নিতেন। তবে জোর করে করের বোঝা প্রজাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হতো না। প্রজারা নিরাপদে থাকার জন্য স্বেচ্ছায় এক ধরনের কর রাজাকে দিত। ঋকবেদে এই করই বলি নামে পরিচিত। তবে পরবর্তী বৈদিক যুগে দলপতি সম্ভবত জোর করে বলি কর আদায় করতেন। অর্থাৎ পরবর্তী বৈদিক যুগে কর হয়ে উঠেছিল বাধ্যতামূলক। যুদ্ধে যারা হেরে যেত তাদের থেকেও রাজারা কর জোর করে আদায় করতেন।
সত্যকাম তার বাবার পরিচয় জানতোনা। পড়াশোনার জন্য গুরুর কাছে গেলে গুরু তার গোত্র জানতে চান। সত্যকাম তার মা জবালাকির কাছে নিজের গোত্র জানতে চাইলো। জবানা বললেন "আমি তা জানি না।" কেউ জিজ্ঞাসা করলে তুমি বলবে যে "তুমি সত্যকাম জাবাল।" সত্যকাম গুরু গৌতম এর কাছে গিয়ে বলল "আমি আমার গোত্র জানিনা। আমার মা বললেন আমার নাম সত্যকাম জাবাল।" গৌতম বললেন "তুমি সত্য কথা বলছো। তাই তোমাকে আমি শিক্ষাদান করব।"
চতুরাশ্রম :
পরবর্তী বৈদিক যুগে জীবনযাপনের চারটি ভাগ বা পর্যায় ছিল। ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বাণপ্রস্থ এবং সন্ন্যাস। ছাত্রাবস্থায় গুরুগৃহে থেকে শিক্ষা লাভ করা ছিল ব্রহ্মচর্যাশ্রম। শিক্ষা লাভের পর বিয়ে করে সংসার জীবন যাপনকে বলা হতো গার্হস্থ্যাশ্রম। বানপ্রস্থাশ্রম বলা হতো সংসার থেকে দূরে বনে কুঠির বানিয়ে ধর্ম চর্চা করাকে। সবকিছু ভুলে ঈশ্বরচিন্তা ইস এ জীবন কাটানো কে বলা হত সন্ন্যাস আশ্রম। এই চারটি পর্যায়েকে একসঙ্গে চতুরাশ্রম বলা হত। তবে শুদ্রদের এই জীবন যাপনের কোন অধিকার ছিলনা।
বৈদিক সমাজ ও ধর্ম :
বৈদিক যুগে মূর্তিপূজার প্রচলন ছিল না। ধর্মচর্চা মূলত যাগযজ্ঞ আচার কেন্দ্রিক ছিল। এইসময় ইন্দ্র, বরুণ, অগ্নি, সূর্য, মিত্র, সোম প্রমুখ দেব ও ঊষা, সরস্বতী, অদিতি, পৃথিবী প্রমুখ উল্লেখযোগ্য ছিলেন। পরবর্তীকালে রুদ্র ও বিষ্ণু গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। ফলে ধীরে ধীরে বৈদিক ধর্ম ব্রাহ্মণ্য ধর্মের রূপ নেয়।
বৈদিক যুগের শিক্ষা :
বৈদিক যুগের শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল গুরু প্রধান। পড়াশোনা হত মুখে মুখে। এযুগের লিপির কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। উপযুক্ত মনে হলে উপনয়ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু সেই ছাত্রকে মেনে নিতেন। মেয়েদেরও উপনয়ন হত। গুরুর কাছ থেকেই ছাত্ররা শিক্ষক এবং ছাত্রদের সম্পূর্ণ দায়িত্ব ছিল গুরুর উপর।
বৈদিক পড়াশোনা ও শ্রুতি :
বৈদিক সাহিত্য মূলত শুনে শুনে মনে রাখতে হত। তাই বেদের আরেক নাম শ্রুতি। ঋকবেদে ভেকস্তুতি বলে একটা অংশ আছে। সেখানে বলা আছে একটি ব্যাঙ ডাকলে অন্যান্য ব্যাং তার মতোই ডাকতে থাকে। ঠিক তেমনি ঋগ্বেদের সুক্তগুলি মনে করে গরু বা একজন শিক্ষার্থী আবৃত্তি করতো। বাকিরা শুনে শুনে মনে রেখে সেটাই নিখুঁতভাবে বলতো। সে কারণে নির্ভুল উচ্চারণ করে বৈদিক মন্ত্র গুলি বলার দক্ষতা অর্জন করতে হতো। তাই ছন্দ ও ব্যাকরণ বৈদিক শিক্ষার দুটি প্রধান বিষয় ছিল।
মহর্ষি আয়োদধৌম্য তার শিষ্য অরুণির গুরুভক্তি পরীক্ষা নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে উদ্দালক উপাধি দিয়েছিলেন। এই উদ্দালক পরবর্তীকালে বিখ্যাতগুরু হয়েছিলেন।
একলব্য :
সাহসী ও পরিশ্রমী ভিল বালক একলব্যকে গুরু দ্রোণাচার্য অস্ত্রচালনা শেখাতে অস্বীকার করলেও একলব্য নিজও নিজও পরিশ্রমে একা একাই তীর ছোড়া শিখেছিলেন। এখানে সাধারণত মহাভারতের একলব্য এর কথা বলা হয়েছে।
বৈদিক যুগে জামিতিক আকার আশ্রিত যোজ্ঞবেদি বানানোর জন্য মিস্ত্রি আর স্থাপতিদের গণিত চর্চা শিখতে হত। এছাড়াও যজ্ঞের জন্য জ্যোতিষ বিজ্ঞান ও অথর্ববেদে চিকিৎসাবিজ্ঞানও শেখানো হতো।
৪.৪ বৈদিক যুগে অন্যান্য সমাজ :
সিন্ধু ও গঙ্গা নদীর উপত্যকা অঞ্চলে বৈদিক বসতি গড়ে উঠেছিল। এই সময় অবশ্য প্রত্নতাত্ত্বিকরা অন্যরকম সংস্কৃতির খুঁজ পেয়েছেন। এই সংস্কৃতিতে মানুষ পাথর ও তামার অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করত। লাল ও কালো রঙের মাটির পাত্র তৈরি করত। মাটির তৈরি বাড়িও খুঁজে পাওয়া গেছে। পশ্চিমবঙ্গের মহিষাদলের এইরকম একটা সংস্কৃতির খোঁজ পাওয়া গেছে, তাদের সমাজ ছিল গ্রামীণ সমাজ। তারা মৃত দেহকে সমাধি দিত। এরকম ধরনের আরেকটি সংস্কৃতির খোঁজ মিলেছে মহারাষ্ট্রের ইনামগাঁওতে।
প্রাচীন যুগে বড় পাথরের সমাধিকে মেগালিথ বলা হত। সমাধি থেকে বহু জিনিস উদ্ধার করা গেছে। কাশ্মীরের বিখ্যাত বুরজাহোম, রাজস্থানের ভরতপুর ও মহারাষ্ট্রের ইনামগাঁও মেগালিথ কেন্দ্র। এখনো ছোটোনাগপুরে মেগালিথ ব্যবস্থা রয়েছে।
এক নজরে ইনামগাঁও :
- মহারাষ্ট্রের পুনে জেলায় একটি প্রত্নক্ষেত্র। একটি মেগালিথ কেন্দ্র।
- ভীমা নদী উপত্যকার এই কেন্দ্রে খ্রিস্টপূর্ব ১৪০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দ সময়কালের মানুষের বাস ছিল।
- কৃষি, পশুপালন ও মৎস্য শিকার ছিল তাদের প্রধান জীবিকা।
- আয়তো কার প্রায় ১৩৪ টি ঘরের খোঁজ পাওয়া গেছে।
- গম, যব, ডাল ও ধান ছিল প্রধান উৎপন্ন খাদ্য শস্য।
- বাড়িতে শস্য মজুদ রাখার জালা, আগুন জ্বালাবার গর্ত পাওয়া গেছে। বাড়ির লাগোয়া সমাধিক্ষেত্র পাওয়া গেছে।
- দামি পাথরের হার পড়া দু বছরের বাচ্চা মেয়ের সমাধি পাওয়া গেছে।
- পাত্রের গায়ে পাওয়া গেছে ষাঁড়ে টানা গাড়ির ছবি।
- মাথা সমেত ও মাথা ছাড়া দুটি দেবী মূর্তি পাওয়া গেছে।
- প্রতিটি বাড়িতেই মাটির প্রাচীল, মাংস ঝলসানার জন্য উনুন ছিল।
- শেষ পর্বে আয়তো কার বাড়ির বদলে ছোট গোলাকার কুঁড়ে তৈরি হতে থাকে।
- কাল ও লাল মাটির বাসনপত্র, লোহার জিনিস ইত্যাদি পাওয়া গেছে।
- পরের দিকে ঘোড়ার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
- পাঁচটি ঘরওয়ালা একটা বড় বাড়িতে উত্তরে মাথা করা একটা সমাধি পাওয়া গেছে। হয়তো এটা ছিল গোষ্ঠীপতির সমাধি।
অনুশীলনী
প্রশ্ন : বৈদিক সমাজে চারটি ভাগে কেন ভাগ হয়েছিল বলে তোমার মনে হয়?
প্রশ্ন : বেদ শুনে শুনে মনে রাখতে হতো। এর কারণ কি বলে তোমার মনে হয়?
প্রশ্ন : বেদের চারটি সংহিতা কি কি? তাদের সম্বন্ধে যা জানো লেখ।
প্রশ্ন : বৈদিক যুগে পড়াশোনায় গুরু ও শিষ্য সম্পর্ক কেমন ছিল বলে তোমার মনে হয়?
প্রশ্ন : চতুরাশ্রম সম্বন্ধে যা জানো লেখ।
প্রশ্ন : আদি বৈদিক ও পরবর্তী বৈদিক যুগের নারীর অবস্থার কি কোন পরিবর্তন হয়েছিল? পরিবর্তন হয়ে থাকলে কেন তাও হয়েছিল বলে তোমার মনে হয়?
প্রশ্ন : বৈদিক সাহিত্য বলতে কী বোঝায়?
প্রশ্ন : প্রাচীন কালের রাজাদের বিভিন্ন যজ্ঞ করার কারণ কি ছিল?
প্রশ্ন : বৈদিক যুগের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে যা জানো লেখ।
প্রশ্ন : রত্নিন, সভা ও সমিতি বলতে কী বোঝো?
প্রশ্ন : বৈদিক যুগ কয় ভাগে বিভক্ত ও কি কি?
সম্পূর্ণ সাজেশনটি পেতে ঃ এইখানে ক্লিক করুন
Bedoth nae kano?
উত্তরমুছুন