LightBlog
উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস - তৃতীয় অধ্যায় - ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি : নিয়মিত ও অনিয়মিত সাম্রাজ্য - Higher Secondary History Suggestion 2021 WBCHSE
Type Here to Get Search Results !

উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস - তৃতীয় অধ্যায় - ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি : নিয়মিত ও অনিয়মিত সাম্রাজ্য - Higher Secondary History Suggestion 2021 WBCHSE

তৃতীয় অধ্যায়
ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি : নিয়মিত ও অনিয়মিত সাম্রাজ্য

সিরাজ উদ - দৌলার সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধ :
     ইংরেজ ও সিরাজের মধ্যে বিরোধের প্রধান কারণগুলো নিম্নরূপ -
(১) আনুগত্য প্রদর্শন দেরি
(২) ষড়যন্ত্রের খবর
(৩) কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দান
(৪) দুর্গ নির্মাণ
(৫) দস্তকের অপব্যবহার
(৬) নারায়ন দাসকে অপমান
(৭) নবাবের কলকাতা অভিযান
(৮) আলিনগরের সন্ধি

পলাশীর যুদ্ধের ফলাফল :
     ভারতের ইতিহাসে পলাশীর যুদ্ধের গুরুত্ব গুলি হল -
(১) নবাবী শাসনের পরোক্ষ পরিচালক
(২) পলাশীর লুণ্ঠন
(৩) অন্য অঞ্চলে আধিপত্য
(৪) ফরাসিদের বিতরণ
(৫) বাংলায় শূন্যতা ও রাজতন্ত্র জটিলতা
(৬) বাণিজ্যে একচেটিয়া প্রাধান্য
(৭) দেশীয় বাণিজ্য ধ্বংস
(৮) ভারতের নবজাগরণের সূচনা

অন্ধকূপ হত্যা :
     প্রচলিত আছে, সিরাজ কর্তৃক কলকাতা আক্রমণের পর তার নির্দেশে কলকাতায় বন্দি 146 জন ইংরেজ 18 ফুট লম্বা এবং 14 ফুট 10 ইঞ্চি চওড়া একটা ছোট ঘরে আটকে রাখা হয়। এর ফলস্বরূপ 123 জন মারা যায়। ভারতের ইতিহাসে এই ঘটনা 'অন্ধকূপ হত্যা' নামে পরিচিত।

বক্সারের যুদ্ধ :
     অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা, দিল্লির বাদশাহ দ্বিতীয় শাহ আলম এবং বাংলার নবাব মীর কাশিমের মিত্র বাহিনীর সঙ্গে ইংরেজদের 1764 খ্রিস্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। আর এই যুদ্ধে বাংলার নবাব, দিল্লির বাদশাহ এবং অযোধ্যা নবাবের চূড়ান্ত পরাজয় হয়েছিল।
গুরুত্ব : ভারতের ইতিহাসে বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব গুলি হল -
(১) ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি
(২) মীরজাফরের প্রত্যাবর্তন
(৩) ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার
(৪) অর্থনৈতিক আধিপত্য
(৫) দেওয়ানি লাভ

দেওয়ানি লাভ :
     1764 খ্রিস্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা বিহার ও উড়িষ্যা বিনাশুল্কে ব্যবসা-বাণিজ্য করার অর্থাৎ দেওয়ানি লাভ করেছিল। আর পর থেকে কোম্পানির আধিপত্য দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছিল।
গুরুত্ব : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব গুলি হল -
(১) আইনগত বৈধতা
(২) নবাবের ক্ষমতা হ্রাস
(৩) অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি
(৪) রাজস্ব আদায়ের অধিকার
(৫) কোম্পানির মর্যাদা বৃদ্ধি

দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা :
     ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে প্রকৃত ক্ষমতা থাকলেও তারা প্রশাসন পরিচালনা ও প্রশাসনিক ব্যয় বহনের দায়িত্ব এড়িয়ে যায়। এভাবে বাংলায় 1765 খ্রিস্টাব্দে থেকে 1772 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলার নবাব ক্ষমতাহীন দায়িত্ব এবং কোম্পানি দায়িত্বহীন ক্ষমতা লাভ করে। বাংলায় নবাব ও কোম্পানির এই দ্বিমুখী শাসন ইতিহাসে 'দ্বৈত শাসন' নামে পরিচিত।

পিটের ভারত শাসন আইন :
     1784 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উয়িলিয়াম পিটের উদ্যোগে 'ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি অ্যাক্ট' নামে একটা আইন পাস হয়। এটি পিটের ভারত শাসন আইন নামে পরিচিত।
শর্ত : পিটের ভারত শাসন আইনের দ্বারা -
(১) অর্থসচিব, রাষ্ট্রসচিব এবং কাউন্সিলের 4 জন সদস্যকে নিয়ে বোর্ড অফ কন্ট্রোল গঠন করে।
(২) বোর্ড অফ কন্ট্রোলের সব তথ্য কোম্পানির কাছে পাঠানোর জন্য তিন জন সদস্য নিয়ে সিক্রেট কমিটি গঠিত হয়।
ত্রুটি : পিটের ভারত শাসন আইনের প্রধান ত্রুটি গুলি হল -
(১) পূর্বেকার বোর্ড থাকা সত্ত্বেও বোর্ড অফ কন্ট্রোল গঠন করা হয়।
(২) সিক্রেট কমিটির মাধ্যমে বোর্ড অফ কন্ট্রোল এর খবর ভারতে পৌঁছাতে প্রচুর সময় লেগে যেত।
সাফল্য : পিটের ভারত শাসন আইনের প্রধান গুরুত্ব গুলি হল -
(১) পিটের আইনের ধারা রেগুলেটিং অ্যাক্টের বহু ত্রুটি দূর করা সম্ভব হয়েছে।
(২) এই আইনের দ্বারা গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।

সনদ আইন বা চার্টার অ্যাক্ট :
     ভারতবর্ষে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক ব্যবস্থার উন্নতিকরনে জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্ট 1793 খ্রিস্টাব্দে থেকে প্রত্যেক কুড়ি বছর অন্তর চারটি আইন পাস করে। এগুলি সনদ আইন বা চার্টার অ্যাক্ট নামে পরিচিত।

কোড কর্নওয়ালিস :
     বড়লাট লর্ড কর্নওয়ালিস ভারতের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীদের দুর্নীতিমুক্ত ও তাদের দক্ষতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে 1793 খ্রিস্টাব্দে বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন করে। এই কর্মপদ্ধতিগুলিই কোড কর্নওয়ালিস নামে পরিচিত।

আমলাতন্ত্র :
     ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনকালে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল এ দেশে আধুনিক আমলাতন্ত্রের বিকাশ ঘটানো। 1786 খ্রিস্টাব্দে ভারতের বড়লাট নিযুক্ত হওয়ার পর লর্ড কর্নওয়ালিস ভারতবর্ষে আমলাতন্ত্র গড়ে তোলে।

ইজারাদারি ব্যবস্থা :
     ব্রিটিশ শাসনকালে রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে একটি কমিটি বিভিন্ন জেলায় ঘুরে দেখতো, যে জমিদার সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব দিতে রাজি হতো কমিটি তাকে জমির বন্দোবস্ত দিত, এটি ইজারাদারি ব্যবস্থা নামে পরিচিত।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত :
     বড়লাট লর্ড কর্নওয়ালিস 1793 খ্রিস্টাব্দে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করে।
শর্ত : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রধান শর্ত গুলি হল -
(১) জমিদাররা বংশপরম্পরায় জমি ভোগ দখল করতে পারবে।
(২) জমিদার ইচ্ছামত জমি দান, বিক্রি বা বন্ধক রাখতে পারবে।
(৩) খরা, বন্যা, মহামারী বা অন্য কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও জমিদারকে রাজস্ব মিটাতে হবে।
(৪) নির্ধারিত জমির রাজস্বের শতকরা 90 ভাগ সরকার ও 10 ভাগ জমিদার পাবে।

রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত :
     ক্যাপ্টেন আলেকজান্ডার রিড ও স্যার টমাস মনরোর উদ্যোগে ভারতের দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিম অংশে 1820 খিষ্টাব্দে রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত চালু করে।
বৈশিষ্ট্য : রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল -
(১) কৃষক ও সরকারের মধ্যে কোন স্বত্বভোগী শ্রেণীর অস্তিত্ব ছিলনা।
(২) জমির উপর কৃষকের কোন অধিকার ছিল না।

মহলওয়ারি বন্দোবস্ত :
     ভারতের ব্রিটিশ সরকার 1822 খ্রিস্টাব্দে গাঙ্গেয় উপত্যকা এবং মধ্য ভারতের কিছু অংশে মহলওয়ারি বন্দোবস্ত ব্যবস্থা চালু করে।
বৈশিষ্ট্য : ভারতে মহলওয়ারি ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল -
(১) মহলওয়ারি বন্দোবস্ত ব্যবস্থার কয়েকটি গ্রাম নিয়ে একটি মহল তৈরি করা হত এবং কুড়ি থেকে ত্রিশ বছরের জন্য তাদের জমি বন্দোবস্ত দেয়া হতো।
(২) রায়তওয়ারি  ব্যবস্থার মত এই ব্যবস্থাতেও কোনো মধ্যস্বত্বভোগীর অস্তিত্ব ছিলনা।

অবশিল্পায়ন :
     শিল্প বিপ্লবের ফলে ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের বাজার গুলি ইংল্যান্ডের শিল্প কারখানায় উৎপাদিত পণ্যে ছেয়ে দেশের কুটির শিল্প গুলি আস্তে আস্তে ধ্বংসের মুখে চলে যায়। এই ঘটনায় অবশিল্পায়ন নামে পরিচিত।

ভারতে রেলপথ স্থাপন :
     বড়লাট লর্ড ডালহৌসির আমলের গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলার রেল কোম্পানি ভারতে প্রথম 1853 খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই থেকে থানে পর্যন্ত প্রায় 21 রেল যোগাযোগ স্থাপিত করে।

চীনের ওপর অরপিত অসম চুক্তি :
     চীনের ওপর আরোপিত বিভিন্ন অসম চুক্তি গুলি হল নিম্নরূপ -
(১) নানকিং অসম চুক্তি
(২) বগ অসম চুক্তি
(৩) ওয়াংসিয়ার অসম চুক্তি
(৪) হোয়ামপেয়ার অসম চুক্তি
(৫) আইগুন সন্ধি
(৬) টিয়েনসিনের অসম চুক্তি
(৭) পিকিং সন্ধি
(৮) শিমোনোশেকি সন্ধি

ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথা :
     বিদেশী বণিকদের কাছে চীনের সব বন্দর উন্মুক্ত ছিল না। চিনা আদালত 1759 খ্রিস্টাব্দে এক নির্দেশনামার দ্বারা একমাত্র ক্যান্টন বন্দরকেই বিদেশি বাণিজ্যের জন্য খুলে দেয়। এভাবে ক্যান্টন বন্দরকে কেন্দ্র করে চিনে বিদেশিদের এক বন্দর কেন্দ্রিক যে বাণিজ্য প্রথার সূচনা হয় তা 'ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথা' নামে পরিচিত।
বৈশিষ্ট্য : ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথার প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল -
(১) ব্যক্তিগত মালিকানা ভিত্তিক বাণিজ্য
(২) প্রত্যক্ষ বাণিজ্য বাধা
(৩) মূল শহরে প্রবেশে বাধা
(৪) কো হং দের দুর্নীতি
(৫) রুদ্ধদ্বার নীতি
অবসান : ক্যান্টন বাণিজ্যের নানা ধরনের কঠোর শর্ত ও বিধি নিষেধের নীতি প্রয়োগ করে এই প্রথার অবসান ঘটানো হয়। যেমন -
(১) ব্যবসা বন্ধের হুমকি
(২) ইংল্যান্ডের দৌত্য
(৩) আফিম ব্যবসা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

LightBlog

Below Post Ad

LightBlog

AdsG

close